আমি সেই তনু পর্ব -১০

#আমি_সেই_তনু
#দশম_পর্ব
#জান্নাত_উল_ফেরদৌস

আকাশ: চা টা নেওয়ার সময় আস্তে আস্তে বললো আমি চায়ের থেকে ও মিষ্টি কিছু খাব আর ইচ্ছা যখন হয়েছে তখন তো খেতে ই হবে… বলে চা টা নিলো।
যদিও আকাশ কখনো কারোর সাথে প্রয়োজনের বাইরে কোনো কথা বলে না, কিন্তু তনুর সাথে ই শুধু এমন করে।
তনু চা টা আকাশের হাতে দিয়ে নিজের রুমে চলে যায় , আকাশ চায়ে চুমুক দিতে দিতে তনুর চলে যাওয়া দেখছে।
রোহিত আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলছে, আমার পাগল ছেলে টা পুরোপুরি মরেছে তনু তে।

সকালে তনু আবার শুরু করেছে, খালামনি ও খালামনি আমার ফিজিক্স বই কোথায় ? ব্যাগ কোথায় ? লতিফা রান্না ঘর থেকে শুনতে পাচ্ছে না। আকাশ অফিস এর জন্য বের হচ্ছে শার্ট এর হাতা ঘোচাতে ঘোচাতে, তনুর ডাকা ডাকি শুনে আকাশ তনুর ঘরের দিকে গেলো।
তনু উল্টা দিকে ঘুরে চুল বাঁধছে, আকাশের চোখ পড়লো টেবিল এর এক কোনায় ফিজিস্ক বই রাখা। ব্যাগ নিচে পড়ে আছে, মেয়ে মানুষ নাকি এমন অগোছালো হয় !!
আকাশ: ভ্রু কুচকে, তনু!?
তনুর মুখে চুলের ক্লিপ হতে চুল ধরে বাঁধছে, সেই অবস্থায় ফিরে তাকালো। ওড়না না থাকায় এবার ঘুরে গেলো।
তনু : কিছু দরকার ভাইয়া?
আকাশ: দেখলো তনুর ওড়না ও নিচে পড়ে আছে!! সেই বাচ্চাদের মত ই রয়ে গেছে।
আকাশ বই গুলো ব্যাগে ভরে, ওড়না টা হতে নিয়ে তনু কে ঘুরিয়ে ওড়না পরিয়ে দিয়ে নিজে ই চুলে বেনি করে দিচ্ছে….
তনুর বেশ ভালো ই লাগছে ব্যাপার টা কিন্তু মুখে কিছু বলছে না।
আকাশ: একটু তাড়াতাড়ি রেডি হতে পারিস না? তোর জন্য প্রতিদিন আমার অফিস এ লেট হয়!!
তনু : মাথা নিচু করে ,আর হবে না ভাইয়া।
আকাশ: নে এবার চল!? রাগী সুরে।
তনু ব্যাগ নিয়ে আকাশের পিছু পিছু যাচ্ছে…

আকাশ তনুকে ড্রপ করে দিয়ে অফিস এ গেলো, কালকের মিটিং টা ক্যানসেল হওয়া তে ডিলাররা এগ্রিমেন্ট গুলো তে সাইন করে নি তাই আজ তাদের সাথে কথা বলে প্রোডাক্ট গুলো অর্ডার কনফার্ম করতে হবে।
তাই অনেক কাজের চাপ আকাশের।

তনু স্কুল এ ক্লাস শেষ করে কোচিং এ গিয়েছে, ইরফান স্যার কে আজ অন্যরকম লাগছে কেমন যেনো বার বার তনুর দিকে তাকাচ্ছে….

কোচিং শেষে সবাই যাচ্ছে এমন সময় ইরফান তনু কে ডাক দেয়…
তনু একটু শোনো?
তনু জ্বি স্যার কিছু বলবেন?

আকাশ তনুর স্কুল এর কাছাকাছি চলে এসেছে, আকাশ আজ বড্ডো ক্লান্ত ।
ইরফান: তনু তোমাকে কিছু বলার ছিল জানিনা কিভাবে নিবে তুমি!?
তনু: কি বলবেন স্যার?
ইরফান: আমি জানি তুমি আমার ছাত্রী ব্যাপার টা তুমি কিভাবে নিবে আমি বুঝতে পারছি না।
তনু: কি এমন কথা সার?
ইরফান একটা গোলাপ নিয়ে তনুর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো…..
ছাত্রঃ ছাত্রী গুলো উকি দিয়ে জানালা দিয়ে দেখছে।
আকাশ তনু কে না দেখে ভেতরের দিকে যাচ্ছে,জানালার কাছে এত ভিড় দেখে দরজার সামনে গিয়ে দেখে ইরফান তনুর সামনে ফুল নিয়ে বসে আছে….
তনু ভয়ে শক্ত হয়ে গেছে!!
আকাশের রাগে র*ক্ত গরম হয়ে গেছে !! সাথে সাথে ই গিয়ে ইরফানের শার্ট এর কলার ধরে উচু করে একটা ঘুষি দিলো !! ইরফানের নাক বেয়ে রক্ত পড়ছে।
আকাশ: তোর সাহস কীকরে হয়? পড়াতে এসে এসব করিস মেয়েদের সাথে?
ইরফান কিছু বলতে পারছে না কারণ ইরফান এতক্ষন নিজের হুসে ছিল না। নিজের কাছে ই অপমান বোধ হচ্ছে ।
আকাশ ইরফান কে ছেড়ে দিয়ে তনুর হাত ধরে টানতে টানতে গাড়িতে নিয়ে আসে।
তনু ভয়ে চুপ চাপ হয়ে গেছে, গাড়িতে গুটিসুটি হয়ে গেছে ।
বাসায় ঢুকে ই তনু কে সামনে দাড় করিয়ে। তোর সাহস কি করে হয়? কোন সাহসে তুই ওই ছেলের কাছে থেকে ফুল নিচ্ছিলি!?
লতিফা এসে দেখে তনু মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে,আর কান্না করছে।
লতিফা তনু কে জড়িয়ে ধরে, কি হয়েছে তনু? কেনো বকছিস তনু কে আকাশ!?
আকাশ: তোমার তনু কোচিং টিচার এর কাছ থেকে ফুল নিচ্ছিল। কোথায় তুই এত সাহস পেয়েছিস!? কে দিয়েছে তোকে এত সাহস!? বলে তনু কে মারতে গিয়ে আবার হাত নামিয়ে ফেলে।
আকাশ কক্ষনো এত রেগে যায় নি। এই প্রথম তনু আকাশ কে এত রাগ করতে দেখলো।
তনু লতিফার কোলে মুখ লুকিয়ে , বিশ্বাস করো খালামনি আমি ফুল নেই নি উনিই আমাকে ফুল দিচ্ছিল । কান্নার সুরে…
লতিফা: আমি জানি, আমার তনু খক্ষণও এমন ভুল কাজ করতে ই পারে না।
আকাশ একটু শান্ত হয়েছে।
লতিফা: তনু তুই ঘরে যা মা , কি হয়েছে আমি শুনছি।
তনু চুপচাপ মাথা নিচু করে ঘরে চলে গেলো,কারণ এই মুহূর্তে আকাশের সামনে দাড়িয়ে থাকার সাহস তনুর নেই।

লতিফা: কি হয়ে ছিল আকাশ?
আকাশ: কোনো উত্তর না দিয়ে, মা তুমি চাও না আমি বিয়ে করি!?
লতিফা: হা চাইতো বাবা।
আকাশ : আমি বিয়ে করবো আর সেটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।
লতিফা: তোর কি কোনো পছন্দ আছে বাবা?
আকাশ: আমি তনু কে বিয়ে করবো।
লতিফা: কিন্তু! তনু তো এখনও ছোটো ।
আকাশ: আমি অত কিছু জানি না যত দ্রুত সম্ভব বিয়ের বেবস্থা করো।
লতিফা ও বেশ খুশি হলো, কারণ তনু কে যে সে খুব ভালোবাসে, তনু অন্যের ঘরে যাবে এই ভেবে ই মণ খারাপ হতো লতিফার।
লতিফা:আচ্ছা তোর বাবার সাথে কথা বলে একটা ভালো তারিখ দেখে বিয়ে ঠিক করবো।
আকাশ যা যা ফর্মালিটি আছে দ্রুত শেষ করো, আমি 2দিন সময় দিলাম বলে ই ওপরে চলে গেলো।
তনু এপাশ থেকে সব কথা শুনেছে, আকাশ কে মনে মনে ভালোবাসলে ও বিয়ের জন্য মোটেও প্রস্তুত না !!
লতিফা রোহিত কে বলতে ই সম্মতি দিয়ে দিল, কাল থেকে ই বিয়ের আয়োজন করতে বললো লতিফকে।

আকাশ রুমে শুয়ে শুয়ে ভাবছে, না বুঝে ই বেশি রাগারাগি করে ফেলেছে তনু কে।

হঠাৎ মনে পড়ল অফিস থেকে ফেরার সময় আকাশ তনুর জন্য চকোলেট কিনেছিল।

আকাশ চকোলেট গুলো নিয়ে তনুর ঘরে গেলো। গিয়ে দেখে খাটের ওপর হাঁটুতে মাথা গুঁজে বসে আছে।
আকাশ: তনু?
তনু মুখ তুলে দেখলো আকাশ ভাইয়া, মাথা নিচু করে নড়েচড়ে বসলো ।
আকাশ তনুর সামনে বসে, ভয় পেয়েছিস?
তনু নিশ্চুপ।
আকাশ: কিরে বল?
তনু : ওপর নিচে মাথা নাড়ল।
আকাশ মুচকি হাসলো। তনুর থুতনি ধরে, আচ্ছা আর কখনো এভাবে বলবো না, আমাকে কি ক্ষমা করা যাবে?
আকাশের কথা শুনে তনু মুচকি হাসলো।
আকাশ: তোর জন্য গিফট আছে।
তনু: কি গিফট ভাইয়া?
আকাশ: চোখ বন্ধ কর।
তনু একটু রাগ দেখিয়ে চোখ বন্ধ করলো।
আকাশ চকোলেট গুলো দিলো, তনু চকোলেট গুলো পেয়ে অনেক খুশি হলো , তার পর একটা চকলেট ছিঁড়ে খেতে খেতে…. আপনি খুব ভালো ভাইয়া।
আকাশ মৃদু হাসলো, চকোলেট খেতে খেতে তনুর মুখে চকোলেট লেগে গেছে।
তনু: আপনিও একটু খান না ভাইয়া, বলে চকোলেট এগিয়ে দিল।
আকাশ: এভাবে না।
তনু: তাহলে কিভাবে?
আকাশ তনুর মুখ দুই হাতে ধরলো, তনু আকাশের ভাব গতি বুঝতে পড়ছে না তবে তনু এটা বুঝতে পারছে আকাশ ভাইয়া কিছু একটা করবে তনুর ভাবনার ঘোর ভেঙে আকাশ তনুর ঠোঁটে ঠোঁট ডুবলো…..

কিছুক্ষন পর তনু চোখ বন্ধ করে মাথা নিচু করে আছে…..
আকাশ তনুর দিকে তাকিয়ে আছে , এই তনু কে হাজার বছর দেখলেও জে তনু কে দেখার স্বাদ মিটবে না আকাশের।
আকাশ তনুর থুতনি উচুঁ করে ফিস ফিস করে বললো, বলেছিলাম না আমি চায়ের থেকে ও মিষ্টি কিছু খাব।
তনুর লজ্জায় ইচ্ছা করছে আকাশের সামনে থেকে উধাও হয়ে যেতে ।
চুপ চাপ শুধু শুনছে।
আকাশ কাল তোকে মার্কেটে নিয়ে যাবো যা যা পছন্দ নিয়ে নিবি।
তনু: মাথা নিচু করে,আচ্ছা।
আকাশ: আর কতক্ষন চোখ বন্ধ রাখবি ?
তনু : জানিনা।
আকাশ : মুচকি হেসে, আচ্ছা ঘুমিয়ে পড় । আমিও আসি….
চলবে?

(কেমন হচ্ছে লিখে জানাবেন নেক্সট না লিখে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here