#ভালোবাসি_প্রিয়( ১৮)
#অপরাজিতা_রহমান (লেখনীতে)
কি গিফট দাও দেখি?
আমার লজ্জা করছে আপনি চোখ বন্ধ করুন। বেচারা রাজ আমার পরীক্ষার জন্য কতো কষ্ট করেছে , আমাকে এদিক ওদিক থেকে নোটস সংগ্ৰহ করে দিয়েছে,আমার সাথে সাথে নিজেও নির্ঘুমে রাত কাটিয়েছে,রাত বেরাতে চা বানিয়ে দিয়েছে, মনে হয়েছে পরীক্ষা আমি আমি না সে দিচ্ছে। মাঝে মাঝে ওর এই কেয়ার করা ,এই দুষ্টু মিষ্টি ঝ*গ*ড়া আমার বেশ ভালো লাগে। নিজেকে ভাগ্যবতী মনে হয়।বাবা সেদিন ঠিকই বলেছিল রাজ পেরেছে আমার হাসিমুখের কারন হতে। রাজ আমার জন্য এতোটা করল আর তাকে একটা দামি গিফট না দিলে হয় নাকি?
কি হলো চোখ বন্ধ করুন। নাকি আপনার গিফট নেওয়ার কোন ইচ্ছে নেই? অবশ্য গিফট টা কিন্তু আপনার জন্য স্পেশাল।
বউ প্রথম গিফট দেবে বলে কথা । নিব না মানে কি বল?এই যে আমি চোখ বন্ধ করেছি।
রাজ চোখ বন্ধ করতেই আমি ঠাস করে রাজের দুই গালে দুইটা চু*মু দিয়ে আর এক মূহুর্ত না দাঁড়িয়ে দিলাম এক দৌড়। ফলস্বরূপ শাড়িতে বেঁধে ঠাস করে পরে গেলাম। ছিঃ ছিঃ এক লজ্জা থেকে বাঁ*চ*তে গিয়ে আবার ও সেই লজ্জার সম্মুখীন হতে হল। রাজ আমাকে পরে যেতে আমাকে না তু*লে হো হো করে রাজহাঁসের মতো হাসতে লাগলো।
আপনার মধ্যে কোন মানবতা বোধ নেই দেখছি। দেখছেন আমি পরে গিয়েছি , তবু ও আমাকে না তুলে উল্টো রাজহাঁসের মতো হো হো করে হাসছেন।
সরি। আসলে সেই ছোটবেলার অভ্যাস । কাউকে পড়ে যেতে দেখলে হাসি কন্ট্রোল করতে পারি না। কিন্তু তুমি
পরলে কিভাবে?দেখে চলতে পার না? স্বাদে কি আর তোমাকে শাকসবজি বেশি বেশি খেতে বলি।দিন দিন কানা হয়ে যাচ্ছো তুমি। আমি কিন্তু কানা বউ নিয়ে সংসার করতে পারব না।
তা পারবেন কেন? এখন তো আর আমাকে ভালো লাগবে না , পুরাতন হয়ে গেছি যে। নতুন নতুন সব জিনিসপত্রের কদর থাকে , কিন্তু পুরাতন হলেই ছুড়ে ফেলে দেয়।
আশ্চর্য! তুমি বউয়ের সাথে জিনিসপত্রের তুলনা করছ?বউ হচ্ছে আ”দ”র সোহাগের জন্য। ছুড়ে ফেলে দেওয়ার জন্য নয়।
সেইটা তো দেখতেই পাচ্ছি। দিনের মধ্যে একশত বার দ্বিতীয় বিয়ে করার কথা বলেন।আবার আপনি ই একদিন বলেছিলেন সব পুরুষ একাধিক নারীর তে আসক্ত হয় না। সবাই তো আর শায়ান ভাইয়া নয় যে, বলবে আমি এক নারী তে আসক্ত। না জানি শায়ান ভাইয়ার সেই আসক্ত নারী টা কতো ভাগ্যবান। ভাগ্যবান না হলে কি লাইফে এমন একজন পুরুষ পায়?
এই শায়ানের মধ্যে পেয়েছ টা কি তুমি? সবসময় শায়ান শায়ান করে মাথা খারাপ করে দাও। শায়ান কি আমার থেকে ও সুন্দর বেশি? আর সুন্দর হলেও আমার সামনে শায়ানের কথা কেন বলবে? আজকের পর থেকে তোমার মুখে যেন আর শায়ানের নাম না শুনি।
আপনি যদি দ্বিতীয় বিয়ে করার কথা বলতে পারেন , আমি কেন শায়ান ভাইয়ার কথা বলতে পারব না? আমি একশত বার বলব।
না ! তুমি বলবে না।
বললে কি করবেন?
কুয়াশা! আমি বারন করছি তুমি বলবে না। তাহলে কিন্তু আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।
কেন? মারবেন নাকি?
কুয়াশা তুমি আমাদের মধ্যে থার্ড পারসন কে কেন ইস্যু করছ? শুধু শুধু অন্য লোকের জন্য নিজেদের মধ্যে ঝ*গ*ড়া করার কোন মানে হয় না।আর শাড়িতে তোমার সমস্যা হলে শাড়ি পরার কোন প্রয়োজন নেই। থ্রিপিস পরতে পারো।
ঠিক আছে। এই নিন এইটা আপনার জন্য।
কি আছে প্যাকেটের মধ্যে?
খুলে দেখুন।
পাঞ্জাবি।
পছন্দ হয়েছে আপনার।
বউ পছন্দ করে কিনেছে ,না পছন্দ হওয়ার কোন উপায় আছে। ভাবছি তোমার দেওয়া পাঞ্জাবি টা পড়েই দ্বিতীয় বিয়ে করতে যাবো।হা ,হা, হা কি বল?
আর একবার যদি আপনার মুখে বিয়ের কথা শুনি আমি আপনাকে খু”ন করে ফেলব। তারপর শায়ান ভাইয়া কে পটিয়ে বিয়ে করে নিব। লাইফে একটা বিসিএস ক্যাডার বর থাকা মানে অনেক কিছু।রাজ কিছু বলতে যাবে তার আগেই রাজের ফোন বেজে উঠল।
আসসালামুয়ালাইকুম বাবা।
ওয়ালাইকুমুস সালাম। কেমন আছো ?
আলহামদুলিল্লাহ ভালো । আপনি কেমন আছেন?
কিছুদিন থেকে আমার শরীর টা ভালো যাচ্ছে না বাবা। বাড়ি টা একদম নিরব , নিস্তব্ধ হয়ে গিয়েছে।মনে হচ্ছে আমার জীবন থেকে অনেক দামি কিছু হারিয়ে ফেলেছি।কুয়াশা কে কিছুদিনের জন্য আমার কাছে নিয়ে আসতে চাচ্ছিলাম। তোমার কি কোন আপত্তি আছে?
না বাবা। কুয়াশা যদি যেতে চায় যাক আমার কোন আপত্তি নেই। আপনি বরং কুয়াশার সাথে কথা বলে নিন।
ঠিক আছে ,দাও।
আসসালামুয়ালাইকুম বাবা।
ওয়ালাইকুমুস সালাম।মারে কিছু দিন থেকে শরীর টা ভালো না। শীতল ও আমাকে ছেড়ে চলে গেল। বাসাটা কেমন জানি ফাঁকা ফাঁকা লাগে। বড্ড মিস করছি তোদের। শীতল তো ওমরাহ হজ্বে গেছে ও তো চাইলে ও এখন আসতে পারবে না। তুই কি কিছু দিনের জন্য আমার কাছে এসে থাকবি মা?
ধ্যাত রাজের চার দিনের ছুটি ছিল ।কই ভাবছিলাম রাজের সাথে একটু সময় কাটাতে পারব। কিন্তু বাবার জন্য তো দেখছি কিছুই হবে না।[মনে মনে বললাম]
বলছিলাম কি বাবা তিন চার দিন পরে গেলে হয় না?
কেন মা? এখন আসতে কি তোর কোন সমস্যা?
না বাবা কোন সমস্যা নেই। আমি আসব।
ঠিক আছে রাখছি মা।
আচ্ছা বাবা।
বরকে ছেড়ে যেতে বুঝি খুব কষ্ট হচ্ছে কুয়াশা? বুঝি না অন্য মেয়েরা যেইখানে বাবার বাড়ি যাওয়ার জন্য দিন রাত বরের সাথে ঝ*গ”ড়া করে সেইখানে তুমি আমাকে ছেড়ে যেতেই চাও না। আবার যদি যাও বিকালের মধ্যেই একা একা চলে আসো। তোমার যদি বেশি কষ্ট হয়, তাহলে বাবার বাড়ি যাওয়ার কোন দরকার নেই। আমি বরং বাবাকে আমাদের এইখানে নিয়ে আসব কিছুদিনের জন্য।
মোটেই না । আমার কষ্ট হবে কেন? আমার আরো ভালো লাগছে। তিন চারদিন আপনার মতো থার্ড ক্লাস লোকের মুখ দেখতে হবে না, ঝ*গ*ড়া করতে হবে না, একই সাথে একই বিছানায় থাকতে তো হবে না। কথা টা বলতে গিয়ে গলা ধরে এলো আমার।কারন রাজ খুব ভালো করেই জানে তার বু*কে ছাড়া আমার ঘুম আসবে না। এইটা জানার পরেও রাজ আমাকে বাবার বাড়ি পাঠাতে চাইছে। ঠিক আছে আমি ও যাবো।রাজ যদি আমাকে ছাড়া থাকতে পারে আমি কেন পারব না।
রাজের প্রতি এক রাশ অভিমান নিয়ে রেডি হতে চলে গেলাম। বোরকা পড়ে রেডি হয়ে বের হবো এমন সময় দেখি রুমের মধ্যে একটা কিউট বিড়াল ছানা মিও মিও করছে। বিড়াল ছানা আমার অনেক পছন্দের।যেই বিড়াল ছানা কে ধরতে যাবো তার আগেই দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। খুঁজতে খুঁজতে এসে দেখি রাজের পড়ার টেবিলের উপর বসে রয়েছে।বই খাতা এদিকে ওদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।বই খাতা গুছিয়ে রাখতে গিয়ে একটা ফাইল দেখতে পেলাম। ফাইলের মধ্যে সবই সার্টিফিকেট আর কাগজ পত্র। বুঝতে পারলাম এইগুলো রাজের সার্টিফিকেট । কিন্তু তাড়াহুড়ার জন্য ভালো করে দেখতে পারলাম না। হঠাৎ মনে হল আহনাফ আহমদ নামের কিছু একটা দেখতে পেলাম রাজের ফাইলের মধ্যে। ভালো করে দেখতে যাবো তার আগেই…
চলবে ইনশাআল্লাহ…
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।