#ভালোবাসি_প্রিয় (১৭)
#অপরাজিতা_রহমান (লেখনীতে)
ডিসেম্বর মাসে শায়ান ভাইয়ার পরীক্ষার কথা শুনে আমি অনেক টা অবাক হয়ে গেলাম।কারন অক্টোবর /নভেম্বর/ডিসেম্বর এর মধ্যে তো বিসিএস এর লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তাহলে কি শায়ান ভাইয়ার বিসিএস পরীক্ষার এক ধাপ শেষ হয়ে গিয়েছে জামিয়া?
আমি জানি না দোস্ত। আসলে বিসিএস সম্পর্কে আমার তেমন কোন ধারণা নেই।
মূলত বিসিএস পরীক্ষা পর্যায়ক্রমে তিনটি ধাপে অনুষ্ঠিত হয়। প্রিলিমিনারি পরীক্ষা(এমসিকিউ) লিখিত পরীক্ষা, এবং মৌলিক পরীক্ষা (ইন্টারভিউ)। পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ থেকে শুরু করে চুড়ান্ত ফলাফল পর্যন্ত সমগ্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে দেড় থেকে দুই বছর সময় লাগে।
প্রথম ধাপ: প্রিলিমিনারি পরীক্ষা
এটি বিসিএস পরীক্ষার প্রাথমিক যোগ্যতা বাছাই পর্ব। প্রতি বছর সাধারণত এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষার এক মাস আগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় এবং পরীক্ষার প্রায় এক থেকে দেড় মাস পর ফলাফল প্রকাশিত হয়।
প্রিলিমিনারি পরীক্ষা ২০০ মার্কের হয়ে থাকে।এর মধ্যে
১.বাংলা ভাষা ও সাহিত্য থেকে – ৩৫ মার্ক
২.ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ এবং লেকচার থেকে- ৩৫
৩.বাংলাদেশ বিষয়াবলী- ৩
৪.আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী-২০
৫.সাধারন বিজ্ঞান-১৫
৬.কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি -১৫
৭.গানিতিক চুক্তি_১৫
৮.মানসিক দক্ষতা- ১৫
৯.ভূগোল ,পরিবেশ ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা – ১০
১০.নৈতিকতা , মূল্যবোধ ও সুশাসন – ১০
প্রিলিমিনারি শুধু টিকার পরীক্ষা। প্রার্থী কমানোর জন্য এই পরীক্ষার মাধ্যমে কিছু প্রার্থী বাছাই করা হয়। এ যাবত কালের ইতিহাসে ১২০ বা এর একটু কম-বেশি যারা পেয়েছেন তারা সবাই প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় পাশ করেছেন।
দ্বিতীয় ধাপ:লিখিত পরীক্ষা
এটি বিসিএস এর প্রধান পরীক্ষা। সাধারণত প্রতি বছরের অক্টোবর/নভেম্বর/ডিসেম্বর মাসে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় এক মাস আগে পরীক্ষার জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় এবং পরীক্ষার প্রায় ২ থেকে ৩ মাস পর সাধারণত ফলাফল প্রকাশিত হয়।
লিখিত পরীক্ষা ৯০০ মার্কের হয়ে থাকে।
১.বাংলা – ২০০ সময় – ৪ ঘন্টা
২.ইংরেজি – ২০০ সময় -৪ ঘন্টা
৩.বাংলাদেশ বিষয়াবলী _ ২০০ সময় – ৪ ঘন্টা
৪.আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী -১০০ সময়-৩ ঘন্টা
৫.গানিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা-১০০ সময় _৩ ঘন্টা।
৬.বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি_১০০ সময় -৩ ঘন্টা
লিখিত পরীক্ষা ৯০০ নাম্বরের মধ্যে পাস নম্বর ৫০% অর্থাৎ ৪৫০ নম্বর পেলেই ভাইভা দেওয়া যায়। অর্থাৎ মোট ৪৫০ পেলেই হবে।তবে কোন বিষয়ে ৩০% এর কম নম্বর পেলে সে বিষয়ে কোন নম্বর পাই নি বলে বিবেচিত হয়।মানে ৩০% এর নিচের নম্বর গুলো যোগ হবে না।
তৃতীয় ধাপ: মৌখিক পরীক্ষা
লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। মৌখিক পরীক্ষার দেড় থেকে দুই মাস পর বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত হয়। মৌখিক পরীক্ষা ২০০ মার্কের হয়ে থাকে। লিখিত পরীক্ষায় পাশ করলে ভাইভার জন্য ডাকা হয়।ভাইভায় পাশ হচ্ছে ১০০ নম্বর। ভাইভা পাশ করলে তখন লিখিত ও ভাইভা নম্বর যোগ করে মেধাক্রম করা হয়। মেধাক্রম ও চয়েজ যদি ব্যাটে বলে মিলে যায় তাহলে ক্যাডার আর না হলে নন ক্যাডার।
আচ্ছা বুঝলাম । কিন্তু কুয়াশা আমরা কি বিসিএসে আবেদন করতে পারব?
উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর চার বছরের অনার্স পাশ হলেও বিসিএস পরীক্ষায় আবেদন করা যায়।কেউ যদি তিন বছরের অনার্স বা ডিগ্ৰী পাস কোর্সে পড়ে থাকে তাহলে তাকে অবশ্যই মাস্টার্স পাশ হতে হবে। শিক্ষা জীবনে একের অধিক তৃতীয় শ্রেণী বা 3rd Division থাকলে বিসিএস পরীক্ষায় আবেদনের অযোগ্য বলে বিবেচিত হয়।
বাহ্ কুয়াশা ! তোর তো বিসিএস সম্পর্কে অনেক ধারণা আছে।
আসলে শাফিনের সাথে রিলেশন থাকাকালীন ওর মুখে বিসিএস এর গল্প শুনতে শুনতে আমার মুখস্থ হয়ে গেছে।
এখন ও ভালোবাসিস শাফিন কে?
না।
তাহলে রাজ কে ভালোবাসিস?
হুম , অনেক।
তাহলে রাজ কে বলছিস না কেন #ভালোবাসি_প্রিয় ।যার জন্য নিজেকে এতো পরিবর্তন করলি, টিকটকার থেকে একজন সাধারণ মেয়ে হয়ে গেলি, নামাজ পড়া শুরু করলি, বোরকা হিজাব পরতে শুরু করলি ।আর তাকেই তোর মনের কথা টা বলতে পারলি না।
আচ্ছা জামিয়া, শায়ান ভাইয়া কি অনেক সুন্দর?
আমার চোখে দেখা সব থেকে সুন্দর ,স্মার্ট,শিক্ষিত সুদর্শন, আধুনিক পুরুষ।
জামিয়া তুই তো রাজকে দেখিস নি।রাজ যদি শায়ান ভাইয়ার থেকে ও সুন্দর হয় , তখন কি আবার রাজের প্রেমে ও পড়ে যাবি?
তুই এই কথাটা বলতে পারলি কুয়াশা? আমি রাজ কে দেখি নি তবে যথেষ্ট সম্মান করি। সে হাজার সুন্দর হোক তবু ও তার প্রেমে পড়ার কোন প্রশ্নই উঠে না। তুই বিশ্বাস কর কুয়াশা আমি ও শায়ান ভাইয়ার মতো এক পুরুষে আসক্ত হয়ে গেছি। এখন অন্য পুরুষের প্রতি আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই।তবে হিং*সা হচ্ছে সেই ভাগ্যবান মেয়েটার প্রতি যার প্রতি শায়ান ভাইয়া আসক্ত। একটা পুরুষ ঠিক কতোটা ভালোবাসলে বলতে পারে আমি এক নারীতে আসক্ত।
কিন্তু শায়ান ভাইয়া তো অন্য কাউকে ভালোবাসে। তোকে কি শায়ান ভাইয়া মেনে নিবে?
মেনে নিবে না জেনে ও আমি তাকে ভালোবেসেছি । প্রয়োজনে আমি তার পায়ে পরব , আমাকে তার বুকে একটু ঠাঁই দেওয়ার জন্য।
বাদ দে জামিয়া।চল একটু শপিং এ যাবো।
হুম চল। আমার ও কিছু কেনাকাটা করতে হবে।
অবশেষে দুই তিন টা দোকান ঘুরে আমার একটা বোরকা পছন্দ হল। আমার জন্য একটা বোরকা হিজাব নিলাম। আম্মার জন্য একটা জামদানি শাড়ি বাবার জন্য একটা পাঞ্জাবি নিলাম। মার্কেট থেকে বের হবো এমন সময় ডলের গায়ে একটা রয়েল ব্লু কালারের পাঞ্জাবি দেখে চোখ আটকে গেল। রাজের গায়ে এই কালার টা খুব ভালো মানাবে। কোন কিছু না ভেবেই রাজের জন্য পাঞ্জাবি টা নিয়ে নিলাম। বাসায় ফিরে কলিং বেল দিতেই আম্মা দরজা খুলে দিল। দরজা খুলতেই আম্মা বললেন, পরীক্ষা কেমন হলো মা?
আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো হয়েছে আম্মা।এই বার আমার ফাস্ট ক্লাস কেউ ঠেকাতে পারবে না।
আলহামদুলিল্লাহ খুবই ভালো। অনেক ক্লান্ত দেখাচ্ছে তোমাকে। তুমি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি তোমার জন্য ঠান্ডা শরবত করে দিচ্ছি। আম্মা শরবত করতে গেলে আমি আম্মাকে পিছন থেকে জ*ড়ি*য়ে ধরলাম।
কি হয়েছে মা? তোমাকে তো ফ্রেশ হতে বললাম।
আম্মা আমি একটা ভুল করেছি আমাকে কি বকা দিবেন?
পা*গ*লী মেয়ে বকা কেন দিব? মায়েদের কাছে সন্তানেরা হাজার টাকা ভুল করলে ও ভুল মনে হয় হয় না। তুমি যখন মা হবে তখন বুঝতে পারবে। তোমাদের বিয়ের তো অনেক দিন হয়ে গেল , এখন ও একটা নাতি নাতনি আনছো না কেন? সন্তান ছাড়া সংসার পরিপূর্ণ হয় না মা। কিছুদিন পরেই তোমার বাবা অবসরে যাবেন । তখন দুই বুড়ো বুড়ি মিলে নাতি নাতনির সাথে মজা ,হাসি ঠাট্টা , খেলাধুলা করব কতো মজা হবে ভাবতেই শান্তি লাগে।
বাহ্ যেমন ছেলে তেমন মা। ছেলে কথায় কথায় লজ্জায় ফেলবে আবার এই দিকে মা ও লজ্জায় ফেলছে। তিনি নাতি নাতনির স্বপ্ন দেখা শুরু করেছে। অথচ তার ছেলে ন্যাকা কিছুই বোঝে না। আমি তাড়াতাড়ি করে নাতি নাতনির টপিক চেন্জ করে আম্মার হাতে শাড়ির প্যাকেট টা ধরিয়ে দিয়ে রুমে চলে আসলাম। রুমে এসে দেখি রাজ এই অবেলায় শুয়ে রয়েছে। কিন্তু ওর তো এখন বাসায় থাকার কথা নয়।
আপনি এখন বাসায়?
কেন আসতে পারি না?
আমি ঐ ভাবে কিছু মিন করি নি। আপনার তো এখন মাদ্রাসায় থাকার কথা।এই অসময়ে বাসায় এসেছেন, তাই বললাম আর কি।
ঘরে এতো সুন্দরী বউ থাকতে মাদ্রাসায় কি মন বসে বল?তাই তো চার দিনের ছুটি নিয়েছি মাদ্রাসা থেকে। কিন্তু বউ তো আর পাত্তা দেয় না। শুধু শুধু ছুটি নিয়েছি। এখন ভাবছি ছুটি বাতিল করে দিব।
আপনি কি অসুস্থ? এখন শুয়ে রয়েছেন কেন?
একটু মাথা ব্যথা করছে তাই।
চা করে এনে দিব।
এই মাথা ব্যথা চা খেয়ে কমবে না।
তাহলে কিভাবে কমবে?ঔষধ এনে দিব মাথা ব্যথার?
এই ব্যাথা ঔষধে কমার নয় কুয়াশা।কবি বলেছিল,”হে বিবাহিত বৎস তোমার যদি কখনো মাথা ব্যথা হয় একমাত্র তোমার বউয়ের নরম হাতের ছোঁয়ায় পারবে সেই মাথা ব্যথা কমাতে”। কিন্তু আমি বিবাহিত সিঙ্গেল আমার তো আর সেই সৌভাগ্য নেই। এজন্যই তো দ্বিতীয় বিয়ে
রাজকে আর কিছু বলতে না দিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে শুরু করলাম।
আহ্ খুব ভালো লাগছে কুয়াশা। তোমার হাতের ছোঁয়া পেয়ে একদম মাথা ব্যথা কমে গেছে। আজকের পরীক্ষা কেমন হয়েছে ?পাস করবে তো ? নাকি খাতায় বড় বড় ডিম পাবে?
অনেক ভালো হয়েছে। শুধু পাস নয় দেখেন ফাস্ট ক্লাস পাবো। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ । আপনার জন্যই এবার এতো ভালো পরীক্ষা দিয়েছি। আপনার জন্য একটা গিফট আছে।
কি গিফট দাও দেখি?
আমার লজ্জা করছে । আপনি চোখ বন্ধ করুন।
চলবে ইনশাআল্লাহ…
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।