#বিবাহ_বন্ধন
#পর্ব_২ ও ৩
#লেখক_দিগন্ত
বৃষ্টি মাথায় একহাত ঘোমটা দিয়ে সালমা আক্তারের সামনে গিয়ে বলে,
-“কি হয়েছে শাশুমা?”
সালমা রাগী গলায় বলেন,
-“তুমি থাকতে আমার ছেলে কেন রান্না করছে? আমার ছেলে কি এসব রান্নাবান্না পারে নাকি? তুমি কোন সাহসে আমার ছেলেকে রান্নাঘরে পাঠিয়েছ?”
বৃষ্টি থতমত খেয়ে বলে,
-“আমিও তো রান্না করতে পারিনা শাশুমা।আপনি তো জানেন আমার মা নেই।কে আমায় রান্না শেখাবে বলুন? আপনার ছেলেকে নিয়ে আপনার এত চিন্তা অথচ আমার কথা ভাবছেন না।কারণ আমি আপনার মেয়ে নই তাইতো? আর তাছাড়া আমি আপনার ছেলেকে রান্না করতে পাঠাইনি ও নিজেই রান্না করতে চেয়েছে।তাইনা?”
সূর্যর দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করে তাকে হ্যাঁ বলতে বলে বৃষ্টি।সূর্য সেই ইশারা বুঝতে পেরে তার মাকে বলে,
-“জ্বি,আম্মু।বৃষ্টি রান্না করতে পারে না জন্য আমি নিজেই চেয়েছি রান্না করে দিতে।ওর কোন দোষ নেই।”
সালমা আক্তার কিছুটা নরম হন।তিনি বৃষ্টিকে বেশ নমনীয়ভাবে বলেন,
-“তুমি যে রান্না করতে পারো না সেটা আগে বললেই হতো।আচ্ছা চলো আমি তোমায় সাহায্য করছি।সূর্য তুই ঘরে যা।আমি বৌমাকে দেখিয়ে দিচ্ছি সব।”
মায়ের কথা শুনে সূর্য নিশ্চিত হয়ে নিজের রুমের দিকে চলে যায়।
________________
সূর্য বৃষ্টির বৌভাত উপলক্ষে আজ বাড়িতে খুশির আমেজ।সূর্যর বাবা আলামীন ইসলাম নিজের বন্ধুর মেয়েকে বউ করে আনতে পেরে খুবই খুশি।বৃষ্টির বাবা বরকত হোসেনের সাথে তার সেই কতদিনের বন্ধুত্ব।
কিন্তু যাদেরকে নিয়ে এত আনন্দ সেই সূর্য-বৃষ্টির কাছেই এই আনন্দের কোন মূল্য নেই।এই বিবাহবন্ধনকে যে তারা ছেলেখেলা মনে করে।
বৃষ্টি আপনমনে বসে তার বান্ধবী চিত্রার সাথে ফোনে কথা বলছিল।চিত্রার খুব ইচ্ছে ছিল বৃষ্টির বিয়েতে আসার।কিন্তু বৃষ্টির বিয়ের দিন শহরের বাইরে থাকায় সে আসতে পারেনি।তাই আজ বৌভাতে চিত্রার সাথে দেখা করতে আসছে।কিভাবে সেজে আসবে সেই নিয়েই দুই বান্ধবী ৩০ মিনিট ধরে কথা বলছে।
একপর্যায়ে চিত্রা বৃষ্টির উদ্দ্যেশ্যে বলে,
-“শেষপর্যন্ত একটা যৌথ পরিবারেরই বউ হয়ে গেলি।এখন বুঝবি ঠেলা।শ্বশুর,শাশুড়ী,বর,ননদ,জা সবার অত্যাচারে অতীষ্ঠ হয়ে যাবি।”
বৃষ্টি মুখ বাকিয়ে বলে,
-“আমাকে চিনিস না তুই? আমি অন্য মেয়েদের মতো না।আমার সাথে কেউ লাগতে আসলে তাকে একদম ক্রসফা*য়ার করে দেব।”
-“তাই?”
-“হ্যাঁ।আচ্ছা তুই তাড়াতাড়ি চলে আয়।আমার এখনো সুন্দর করে মেকআপ করা হয়নি।বাই।”
অন্যদিকে সূর্য ব্যস্ত আছে তার গার্লফ্রেন্ড প্রিয়ার সাথে কথা বলায়।প্রিয়ার মন খুব খারাপ সূর্যর বিয়ের কথা শুনে।সে সূর্যর উপর রাগ করে আছে।সূর্য সেই সকাল থেকে প্রিয়ার রাগ ভাঙানোর কত চেষ্টাই করছে কিন্তু পারছে না।
বৃষ্টি সূর্যর রুমে এসে সূর্যকে এভাবে ফোনে কারো সাথে আকুতি মিনতি করে কথা বলতে দেখে আন্দাজ করে নেয়, সূর্যর গার্লফ্রেন্ডের সাথেই হয়তো কথা বলছে। বৃষ্টি মিনমিন স্বরে সূর্যকে বলে,
-“আমার হেল্প লাগলে বলুন।আমি আবার মানুষকে সাহায্য করতে খুব ভালোবাসি।”
সূর্য বৃষ্টিকে রাগ দেখিয়ে বলে,
-“আপনি কি সাহায্য করবেন? আপনার জন্যই তো যত সমস্যা।”
সূর্যর মুখে এরকম কথা শুনে বৃষ্টি রেগে গিয়ে সূর্যর কান টেনে বলে,
-“বে*য়াদব! স্ত্রীর সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় জানেন না।আমার সাথে বেশি উঁচু গলায় কথা বলার চেষ্টা করবেন না।নাহলে একদম জিন্দা লা*শ বানিয়ে রেখে দেব।”
ভয়ে সূর্যর গলা শুকিয়ে আসে।বৃষ্টি সূর্যর কাছ থেকে জোরপূর্বক ফোনটা কেড়ে নিয়ে বলে,
-“হ্যালো মিস গার্লফেন্ড।আমি তোমার বয়ফ্রেন্ডের বউ।আমাদের বিয়েটাতে আমরা কেউই খুশি নই।খুব শীঘ্রই আমরা এই মিথ্যা বিবাহবন্ধন থেকে মুক্ত হবো।তারপর আমি নিজে সূর্যকে তোমার হাতে তুলে দেব।এবার খুশি তো?”
প্রিয়া বৃষ্টির কথা শুনে পুরোপুরি অবাক হয়ে যায়।কিছুক্ষণ থেমে তারপর বলে,
-“এরকম কথা প্রথম প্রথম সবাই বলে।তারপর দেখা যায় যেই লাউ সেই কদু।আপনাকে আমি বিশ্বাস করব কিভাবে?”
-“এই শুনুন আপনার এই গাধামার্কা বয়ফ্রেন্ডের উপর আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই।আমি কারো মাঝে থার্ড পার্সন সিংগুলার নাম্বারও হতে চাইনা।আমার সো কলড স্বামী আমায় ২০ লক্ষ টাকা দিয়ে দিলেই আমি চলে যাব।তারপর আপনারা দুজন এক হয়ে যাবেন।ওকে বাই আমার আবার বেশি কথা বললে মুখে ব্যাথা করে।পেপসুডেন্ট দিয়ে ব্রাশ করি কিনা।”
কথা বলা শেষ করে সূর্যর হাতে ফোন তুলে দিয়ে কোমড় দুলিয়ে চলে যায় বৃষ্টি।সূর্য তো পুরো হা হয়ে যায়।এই মেয়েকে যত দেখছে ততই অবাক হচ্ছে।
_____________
বৃষ্টির দাদি মর্জিনা বেগম ও বাবা বরকত হোসেন সূর্যদের বাড়িতে এসে পড়েছে।আলামিন ইসলাম তাদের সাথে বসে কথা বলছে।সালমা বেগম আর আরশি ব্যস্ত নানা কাজে।নিজের বাবা আর দাদির আসার কথা শুনে বৃষ্টিও চলে আসে বসার ঘরে।বৃষ্টি এসেই মর্জিনা বেগমকে জড়িয়ে ধরে।তারপর নিজের বাবার দিকটা তাকিয়ে অভিমানী সুরে বলে,
-“কেমন আছো আব্বু? তোমার মুখটা এরকম লাগছে কেন? নিশ্চয়ই শরীরের যত্ন নেওনা।আমি একদিন হলো এই বাড়িতে এসেছি তাতেই অনিয়ম শুরু করে দিয়েছ।”
বরকত হোসেন হালকা হেসে বলেন,
-“পাগলী মেয়ে! আমি তো একদম ফিট আছি।তুই আসার পর বাড়িটা কেমন খালি খালি লাগে।তুই ভালো আছিস তো মা?”
বৃষ্টি কিছু বলার আগেই আলামিন ইসলাম বলেন,
-“কি বলছিস তুই বরকত? তোর মেয়ে তো আমারও মেয়ে।আমি বেঁচে থাকতে এই বাড়িতে ওকে খারাপ থাকতে দেবোনা ইনশাআল্লাহ।কি সালমা বলো?”
সালমা আক্তার কাজে ব্যস্ত ছিলেন।একবার পেছনে তাকিয়ে মুখে গাম্ভীর্য বজায় রেখে বলেন,
-“আপনার মেয়ে এখন আমাদের বাড়ির বউ।ও এখন আমাদের দায়িত্ব।ওকে আমরা যথাসম্ভব ভালো রাখার চেষ্টা করব।”
তাদের কথা শুনে বরকত হোসেন নিশ্চিত হলেও মর্জিনা বেগম খুব একটা স্বস্তি পাননা।তার কেন জানিনা মনে হচ্ছিল কোথাও একটা গড়বড় আছেই।
সূর্যও ততক্ষণে বসার ঘরে চলে আসে।আলামিন ইসলাম সূর্যকে বলে,
-“এভাবে দাড়িয়ে না থেকে ওনাদের সাথে সালাম বিনিময় করো।”
সূর্য তখন তাই করে।মর্জিনা বেগম বসা থেকে উঠে গিয়ে বৃষ্টিকে জিজ্ঞাসা করেন,
-“তুই সত্যি ঠিক আছিস তো?”
বৃষ্টি হাসিমুখে বলে,
-“কি যে বলো তুমি দাদি আমি ঠিক থাকবো না কেন? আমি তো যথেষ্ট ভালোই আছি।”
-“ভালো থাকলেই ভালো।”
সূর্য বৃষ্টির কানে এসে ফিসফিস করে বলে,
-“আপনি নিজের দাদিকে কি বলেছেন? উনি এভাবে আমার দিকে দেখছেন কেন?”
বৃষ্টি মুচকি হেসে বলে,
-“দাদি নিশ্চয়ই আপনার উপজেলা ক্রাশ খেয়েছে।তাই এভাবে দেখছে।”
তাদেরকে এভাবে কথা বলতে দেখে মর্জিনা বেগম জিজ্ঞাসা করেন,
-“টোনাটুনির মধ্যে কি এত কথা হচ্ছে?”
বৃষ্টি বলে ওঠে,
-“আমরা রোম্যান্টিক কথা বলছি দাদি।কিভাবে রোম্যান্স করা যায় সেই নিয়েই গবেষণা করছি।”
বৃষ্টির কথা শুনে সেখানে উপস্থিত সবাই বিব্রতবোধ করে।লজ্জায় সূর্যর মুখ নিচু হয়ে যায়।সূর্য অদ্ভুতভাবে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে লজ্জা পেয়ে দ্রুত সেখান থেকে চলে যায়।
সূর্য চলে যাওয়ার পর সবাই একসাথে হেসে দেয়।বরকত হোসেন মেয়েকে ধমকানোর সুরে বলে,
-“এটা কিন্তু তুই ঠিক করলি না।এতগুলো মানুষের সামনে আমার বেচারা জামাইটাকে লজ্জায় ফেলে দিলি।”
বৃষ্টিও বলে দেয়,
-“লজ্জার তো সবে শুরু।বৃষ্টির সাথে থাকলে আরো কত কি যে সহ্য করতে হবে।তাই এখন থেকেই প্রাকটিস করা ভালো।”
(চলবে)
#বিবাহ_বন্ধন
#পর্ব_৩
#লেখক_দিগন্ত
বৃষ্টি সূর্যর পিছন পিছন তার রুমে চলে যায়।সূর্য বৃষ্টিকে আসতে দেখে বলে,
-“আপনার কি একটুও লজ্জা নেই? সবার সামনে কিসব বলছিলেন?”
বৃষ্টি গুটি গুটি পায়ে সূর্যর কাছে চলে যায়।সূর্যর হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়।বৃষ্টি সূর্যর এইরকম অবস্থা দেখে হেসেই ফেলে।বৃষ্টি মুখে হাসি বজায় রেখেই বলে,
-“আমার মুখ বন্দু*কের গু*লির থেকেও বেশি ভয়ানক।যখন আমার মুখ থেকে কথা বের হয় সেটা আশেপাশের পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।তাই ভালো হবে আপনি আমাকে দিয়ে যত কম কথা বলাবেন।”
সূর্যর উত্তরের কোন অপেক্ষা না করে বৃষ্টি চলে যায় নিজের মতো।সূর্য একপলক বৃষ্টির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
-“এই মেয়েটাকে যত তাড়াতাড়ি বিদায় করতে পারবো আমার জন্য সেটা ততই ভালো।”
____________________
বৃষ্টি নিজের রুমে বসে তার বান্ধবী চিত্রার সাথে কথা বলছিল।একটা মানুষ তার পরিবারের কাছে যেই বিষয়টা বলতে পারে না বন্ধুদের কাছে খুব সহজেই সেটা প্রকাশ করে ফেলে।বৃষ্টিও ব্যতিক্রম নয়।চিত্রাকে বৃষ্টি তার আর সূর্যর ব্যাপারে সব কথাই বলে।
সব শুনে বৃষ্টি মাথায় হাত দিয়ে বলে,
-“কি হবে তাহলে এবার? তোর বর অন্য একটা মেয়েকে ভালোবাসে।তাহলে তোর কপালে অনেক দুঃখ আছে।”
চিত্রার কথা শুনে বৃষ্টি হেসেই দেয়।চিত্রা বৃষ্টিকে অকারণে এভাবে হাসতে দেখে ভ্রু কুচকে বলে,
-“আমি কিন্তু সিরিয়াস।তুই এভাবে হাসছিল কেন?”
-“আরে ধুর আমি ঐ হাবাগোবা সূর্যকে নিয়ে কিছু ভাবছি না।আমি তো ডিভোর্স নিয়েই ভাবছি।ডিভোর্স নিয়েই বিদেশে ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছে আছে আমার।”
-“কিন্তু তাও আমার মনে একটা কথা শুধু বারবার উঁকি দিচ্ছে।”
-“কি কথা?”
-“আচ্ছা ঐ প্রিয়া মেয়েটা এমন কি সুন্দর যে তোর মতো একটা সুন্দরী বউ থাকতেও সূর্য তাকে নিয়ে পড়ে আছে।”
-“সত্যিই তো।আমি তো ব্যাপারটা ভেবে দেখিনি।স্কুল,কলেজ,ভার্সিটিতে আমি সব ছেলেদের ক্রাশ ছিলাম।সেখানে এই ছেলে আমাকে বউ হিসেবে পেয়েও নিজের প্রেমিকার কথা ভাবছে।তাহলে ওর প্রেমিকা কি আমার থেকেও সুন্দর? আমার তো দেখতেই হচ্ছে এই প্রিয়াকে।”
-“আমিও আছি তোর সাথে।আমরা দুজনে মিলে প্রিয়ার সাথে দেখা করবো চল।”
-“আচ্ছা দাড়া আগে আমি ঐ প্রিয়ার ঠিকানাটা জোগাড় করি।”
_______________
বৃষ্টি আর চিত্রা অনেকক্ষণ ধরে একটি রেস্টুরেন্টে এসে বসে আছে।বৃষ্টি বসে বসে নিজের বুদ্ধির প্রশংসা করছে কিভাবে বাবার সাথে কথা বলার ছলে সূর্যর ফোনটা নিয়ে প্রিয়ার নাম্বার যোগাযোগ করে নিল সে।তারপর প্রিয়াকে ফোন করে তার সাথে দেখা করতে চাইল।
কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের সামনে একটি মেয়ে এসে দাঁড়ায়।মেয়েটির পরনে সালোয়ার কামিজ, গায়ের রঙ উজ্জ্বল শ্যামলা, দেখতে খুব একটা সুন্দরী বলা যায়না তবে উচ্চতায় সে বৃষ্টির থেকে কিছুটা লম্বা।মেয়েটি তাদের টেবিলের সামনে এসে বলে,
-“তোমাদের মধ্যে কারো নাম কি বৃষ্টি?”
বৃষ্টি মাথা নাড়িয়ে বলে,
-“হ্যাঁ আমার নাম বৃষ্টি।”
মেয়েটি বিরক্তি ভাব নিয়ে বলে,
-“আমি প্রিয়া।সূর্যর গার্লফ্রেন্ড।”
-“ও তুমি সেই প্রিইইইইয়া।এসো আমার পাশে বসো।”
-“কি চাও তুমি? আমাকে নিশ্চয়ই টাকা দিতে চাও।তারপর টাকা দিয়ে বলবে তোমার স্বামীর জীবন থেকে যেন দূরে সরে যাই।শোন আমি কিন্তু,,,,”
-“আরে দাড়াও দাড়াও।আমি কোন দুঃখে তোমাকে টাকা দেব? পারলে তুমি আমায় টাকা দাও তোমার বয়ফ্রেন্ডকে তোমার হাতে তুলে দেওয়ার জন্য।২০ লাখ টাকা দিলেই আমি চলে যাব।”
বৃষ্টির কথাটা শুনে প্রিয়া বিষম খায়।সে তো ভেবে রেখেছিল বৃষ্টির কাছ থেকে টাকা নিয়ে চলে যাবে।সূর্যর চেয়ে আরো কত ভালো ছেলে পেয়ে যাবে।অন্তত একটা বিয়ে করা সেকেন্ড হ্যান্ড ছেলের সাথে সে সংসার করতে চায়না।আর এই মেয়ে তো তার কাছেই টাকা চাইছে।
চিত্রা বৃষ্টির কানে ফিসফিস করে বলে,
-“এই মেয়েটাকে তো কোন দিক থেকেই তোর থেকে বেশি সুন্দরী মনে হচ্ছেনা।সূর্য কি দেখে ওকে পছন্দ করল?”
-“দাড়া আমি খুটিয়ে খুটিয়ে দেখি।”
বৃষ্টি উঠে গিয়ে প্রিয়াকে বলে,
-“এই মেয়ে দেখি তোমার নাকটা কেমন।”
প্রিয়া বৃষ্টির কথা শুনে থতমত খেয়ে বলে,
-“কি বলসো এসব?”
-“আরে বইন তোমার নাক,চোখ,মুখ,কান সব দেখব।তোমার কানে তো ময়লা,নাকটাও বোচা,চোখও তো গরুর মতো বড়সড়।মুখটা হাসের মতো চ্যাপ্টা।সূর্য কি দেখে তোমায় পছন্দ করল?”
বৃষ্টির মুখে এসব কথা শুনে প্রিয়া অপমানিত বোধ করে।বৃষ্টির মুখে পানি ছুড়ে বলে,
-“এই মেয়ে তোমার এত সাহস আমায় ডেকে এনে অপমান করো।”
বৃষ্টিও এটা ভালোভাবে নেয়না।সেও প্রিয়ার মুখে এক জগ পানি ছোড়ে।প্রিয়া রাগে গজগজ করতে করতেই এগিয়ে আসে।দুজন একে অপরের চুল ধরে টানাটানি করতে থাকে।রেস্টুরেন্টের সব লোকেরা দাড়িয়ে থেকে তাদের এইসব কাণ্ড দেখতে থাকে।কয়েকজন তো ভিডিও করতেও শুরু করে।বৃষ্টি আর প্রিয়ার সেদিকে কোন হুশ নেই তারা ঝগড়া মা*রামারি চালিয়ে যায়।প্রিয়া বলে,
-“এই মেয়ে তুই কি নিজেকে বিশ্বসুন্দরী ভাবছিস।ধলা বিলাই একটা।”
বৃষ্টিও বলে,
-“তুই কি? তোকে তো দেখে ফ*কিন্নি মনে হয়।”
চিত্রা এগিয়ে এসে তাদের ঝগড়া থামানোর বৃথা চেষ্টা করে।বৃষ্টি চিত্রাকে সতর্কবার্তা দিয়ে বলে,
-“এই মেয়ে আমার সৌন্দর্যর দিকে আঙুল তুলেছে।একে আমি ছাড়ব না।”
রেস্টুরেন্টের মালিক এসে তাদের দুজনকে বের হয়ে যেতে বলে।বৃষ্টি আর প্রিয়া বাইরে এসেও ঝগড়া চালিয়ে যায়।
চিত্রা বাধ্য হয়ে বৃষ্টিকে একপ্রকার টেনে নিয়ে যায় সেখান থেকে।বৃষ্টিকে নিয়ে সূর্যদের বাড়িতে যায় চিত্রা।
সালমা আক্তার বৃষ্টির দিকে একনজর তাকিয়ে ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলেন,
-“তোমার এই অবস্থা কিভাবে হলো বৌমা? চুলগুলো কেমন উসকোখুসকো,শাড়িটাও এলোমেলো,হাতে আ*চড়ের দাগ।এই অবস্থা কি করে হলো?”
বৃষ্টি জানে যা ঘটনা ঘটলো তাতে প্রিয়া নিশ্চয়ই সূর্যকে সব জানাবে।তখন সূর্য যাতে তাকে কিছু বলতে না পারে তাই আগেভাগেই বলে,
-“আমার বান্ধবীদের সাথে ঝামেলা।আপনার ছেলেকে ডাকলাম সাহায্যের জন্য সে তো গেলোই না।”
সালমা আক্তার রাগ দেখিয়ে বলেন,
-“সূর্যর এই গা-ছাড়া ভাব আমার একদম ভালো লাগে না।এখন বিয়ে হয়ে গেছে কোথায় নিজের স্ত্রীকে বাঁচাতে যাবে তা না ঘরে বসে আছে।আমি দেখছি দাড়াও।আজ ওর একদিন কি আমার একদিন।”
সালমা আক্তার সূর্যর ঘরের দিকে ছুটে যান।
সূর্য তখন প্রিয়ার সাথে ফোনে কথা বলছিল।প্রিয়া ন্যাকাকান্না করে বলছিল,
-“তোমার বউ আজ আমায় রেস্টুরেন্টে সবার সামনে মে*রেছে।আমায় কত অপমান করল।বলল তোমার জীবন থেকে সরে যেতে।তুমি কিছু বলবে না?”
-“কি বললে? আমি দেখছি দাড়াও।আমি আগেই বুঝতে পারছিলাম সব বৃষ্টির অভিনয়।আসলে ও আমার সাথে সংসার করতে চায়।”
সালম আক্তার সূর্যর ঘরে এসে বলে,
-“ছি সূর্য ছি! তোর বউকে তার বান্ধবীরা মে*রে বাজে অবস্থা করে দিচ্ছে আর তুই অভিনয় বলছিস।তোর বাবা এসব শুনলে কি হবে ভেবে দেখেছিস? চল এক্ষুনি নিচে চল তোর বউকে সামলা।”
সূর্য বুঝতে পারে বৃষ্টি আবার তার চাল চেলেছে।সূর্য বিড়বিড় করে বলে,
-“এই মেয়েটা তো দেখছি খুব ভালো অভিনেত্রী।একে তো অস্কার দেওয়া উচিত।”
বৃষ্টি নিচে চিত্রাকে বলছিল,
-“জানিস চিত্রা আমি তো ভাবছি বিদেশে গিয়ে হলিউড মুভিতে কাজ করব।যা ভালো অভিনয় করি না।”
চিত্রাও তাল মিলিয়ে বলে,
-“সত্যি বৃষ্টি আজ তুই পুরো ফা*টিয়ে দিয়েছিস।”
সূর্য নিচে এসে বলে,
-“তার মানে সব আপনার নাটক? আপনি আমার স্ত্রী হয়ে থাকতে চান।তাহলে এত নাটক করছিলেন কেন?”
বৃষ্টি মুখ বাকিয়ে বলে,
-“আপনার সাথে সংসার করতে আমার বয়েই গেছে।কিন্তু সংসার না করলেও আপনাকে জ্ব*লাতে আমার কিন্তু ভালোই লাগে।”
(চলবে)