#বিবাহ_বন্ধন
#পর্ব_৮
#লেখক_দিগন্ত
বৃষ্টি সালমা আক্তারের কথাটা শুনে ভীষণ অবাক হয়।সালমা আক্তারও বুঝতে পারেন আবেগের বশে একটা ভুল কথা বলে ফেলেছেন তিনি।বৃষ্টি কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞাসা করে,
-“কি এমন হয়েছিল যে আপনার মেয়ে স্বর্ণা আজ আপনাদের এতটা পর হয়ে গেছে?”
সালমা আক্তার কিছু বলার আগেই আলামিন ইসলাম সেখানে চলে আসেন।যার কারণে সালমা আক্তার কিছু বলতে পারেন না।আলামিন ইসলাম বৃষ্টিকে বলেন,
-“তুমি এখন নিজের রুমে যাও বৃষ্টি।অনেক রাত হয়েছে তোমার ঘুমানো প্রয়োজন।”
বৃষ্টি চুপচাপ নিজের রুমের দিকে চলে যায়।আলামিন ইসলাম সালমা আক্তারকে সতর্ক করে বলেন,
-“এরপর থেকে ভেবেচিন্তে কথা বলবে।আমি চাইনা ভয়ঙ্কর অতীত আবার সামনে আসুক।”
বৃষ্টি আনমনে শোফায় বসে সালমা আক্তারের কথাই ভাবছিল।এরমধ্যে সূর্য রুমে চলে আসে।সূর্যকে দেখে বৃষ্টি জিজ্ঞাসা করে,
-“আপনার নাকি একটা বোনও আছে।আপনার বোন স্বর্ণার ব্যাপারে আমি জানতে চাই।”
-“এত কৌতুহলী হওয়া ভালো না।এই বাড়িতে স্বর্ণাও নাম নেওয়াও মানা।আশা করি আপনি আর কখনো আমাকে এই বিষয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করবেন না।”
বৃষ্টি কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়।তার মনে হয় এখন চুপ থাকাটাই শ্রেয়।তবে বৃষ্টি ঠিক করে নিয়েছে যে করেই হোক সে স্বর্ণার সম্পর্কে সব খোঁজখবর নিয়েই ছাড়বে।
______________________
সকাল সকাল আকরাম হোসেনের চিৎকারে আরশি ড্রইং রুমে চলে আসে।আরশিকে দেখে আকরাম হোসেনের সব রাগ গিয়ে পড়ে আরশির উপর।আরশির গালে সজোরে একটা চ*ড় বসিয়ে তিনি বলেন,
-“কি এটা? ডিভোর্স পেপারস! আমি কাল তোমায় হঠাৎ করে আসতে দেখেই সন্দেহ করেছিলাম নিশ্চয়ই কোন সমস্যা করে এসেছ।আমার ভাবনাই তাহলে সত্য হলো।তোমার সাহস কি করে হলো কাউকে কিছু না জানিয়ে ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নেওয়ার।”
আরশি কিছুই বলতে পারেনা।আরশিকে এভাবে চুপ থাকতে দেখে আকরাম হোসেন আরো রেগে যান।
-“চুপ করে আছ কেন উত্তর দাও।তোমার স্বামী তোমায় ডিভোর্স পেপারস কেন পাঠিয়েছে? কি করেছ তুমি?”
-“সবসময় সবকিছুর জন্য মেয়েদেরকে দোষী ভাবা ঠিক নয়।আরশি কোন কিছুই করেনি।সব সোহেলের দোষ।সে বিবাহিত হয়ে পর’কিয়ায় লিপ্ত ছিল।”
আরশির বড় ভাই আদনানের কথা শুনে আকরাম হোসেন বলেন,
-“তুমি কখন এলে?”
-“আমি এক্ষুনি এসেছি।না এসে কোন উপায় ছিল না আব্বু।কাল রাতে আম্মু ফোনে আমায় সবকিছু বলেছে যে আরশির সাথে কি কি হয়েছে।এসব শুনে আমি আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারিনি তাই চলে এলাম।”
আকরাম হোসেন গাম্ভীর্য বজায় রেখে বললেন,
-“এসব ব্যাপারে তোমার জড়ানোর কোন প্রয়োজন নেই।আমি সবকিছু সামলে নিতে পারব।পুরুষ মানুষদের এরকম সামান্য কিছু দো’ষ থাকতেই পারে তারজন্য ডিভোর্স কোন সমাধান নয়।আরশির উচিৎ ছিল সোহেলের মন জুগিয়ে চলা।আরশিরও এখানে খামতি আছে কোন নারী ভালো হলে তার স্বামী কখনো অন্য নারীর দিকে চোখ দেয়না।”
নিজের বাবার কথা শুনে আরশির চোখে জল চলে আসে।বাবারা যেখানে সন্তানের ভরসাস্থল সেখানে নিজের বাবার মুখের এমন কথা আরশির ব্যথিত হৃদয়কে আরো ভেঙে দিচ্ছে।আদনান তার বাবার কথায় প্রতিবাদ জানিয়ে বলে,
-“তুমি এমন কথা কিভাবে বলতে পারলে আব্বু? আরশি তো তোমার নিজের মেয়ে।”
-“নিজের মেয়ে জন্যই বলছি।ডিভোর্সি মেয়েদের সমাজে কিরকম পরিস্থিতিতে পড়তে হয় সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি।দো*ষ যারই হোক মানুষ তো আরশিকেই কথা শোনাবে।আমাদেরকেও ওর জন্য অনেক কথা শুনতে হবে।আমাদের তো সমাজের সাথে মানিয়ে চলতে হয়।”
-“সমাজের জন্য নিজের মেয়েকে তুমি আবার ঐ কা*পুরুষের সাথে সংসার করতে বলবে।”
আকরাম হোসেন এবার আদনানের উপরেও রেগে যান।তিনি বলেন,
-“আমার মুখের উপর আর একটাও কথা বলবে না।আমি এখনই সোহেলকে ফোন করছি ও এসে নিয়ে যাক আরশিকে।আমি কোন ডিভোর্সি মেয়ের দায়িত্ব নিতে পারব না।”
-“আপনাকে কারো দায়িত্ব নিতে হবে না আমার মেয়ের দায়িত্ব আমি নেব।”
নিজের স্ত্রীর মুখে এরকম কথা শুনে আকরাম হোসেন ভীষণই অবাক হন।এত বছরের বিবাহিত জীবনে সাহেরা তার মুখের উপর কোন কথা বলেনি আর আজ কিনা সেই এত বড় কথাটা কত অনায়াসেই বলে ফেলল।কথাটা তার ঠিক হজম হয়না।তিনি তা*চ্ছিল্যের স্বরে বলেন,
-“তুমি কিভাবে দায়িত্ব নেবে? কি ক্ষমতা আছে তোমার?”
-“একজন মা তার সন্তানের খুশির জন্য নিজের জীবন পর্যন্ত বাজি রাখতে পারে।এটাই একজন মায়ের ক্ষমতা।”
কারো হাত তালির আওয়াজে সবাই চমকে যায়।আরশি দরজার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলে,
-“বৃষ্টি তুমি!”
বৃষ্টি বলে,
-“হ্যাঁ আমি।তোমার খোঁজ নিতে শাশুমার সাথে তোমার বাড়িতে এলাম।নাহলে তো এতকিছু জানতেই পারতাম না।একদম ঠিক সময়ে এসেছি।”
সালমা আক্তার সাহেরার হাত ধরে কেঁদেই ফেলে,
-“ক্ষমা করিস আমায় সাহেরা।আমি তোর মেয়েকে সুখী রাখতে পারিনি।”
আকরাম হোসেন সালমা আক্তারকে বলেন,
-“ভালো হয়েছে আপনারা এসেছেন।আপনাদের বাড়ির বউকে ফিরিয়ে নিয়ে যান।আমি চাইনা আমার মেয়ের গায়ে ডিভোর্সি মেয়ের তকমা লাগুক এতে আমার সম্মানহানি হবে।”
আরশি এতক্ষণে মুখ খোলে,
-“আমি আর ঐ বাড়িতে ফিরে যাবোনা।সোহেলের সাথে সংসার করার কোন ইচ্ছে এমনিতেও আমার ছিলনা।এখন ও যখন ডিভোর্স পেপারস পাঠিয়েছে তখন তো এই সম্পর্কের শেষটা নিশ্চিত হয়েই গেছে।আমি এখন শান্তিতে বাকিটা জীবন কা*টাতে চাই।আমার আর কারো প্রয়োজন নেই।”
বৃষ্টি বলে,
-“তুমি একদম ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছ আরশি ভাবি।তোমায় কারো কথা ভাবতে হবে না তুমি শুধু নিজের কথা ভাবো।”
-“আমি বুঝতে পেরেছি তোর ছোট জাই তোর মাথায় এসব কুবুদ্ধি দিয়েছে।নাহলে এতদিন তো কোন সমস্যা ছিলনা আজ হঠাৎ এই মেয়ের আসার পর তুই কেন ডিভোর্স দিতে চাইছিস।শোন আরশি অন্যের কথায় নিজের জীবনটা নষ্ট করবি না।”
আকরাম হোসেনের কথাটা শুনে আরশি মুচকি হেসে বলে,
-“আরশি আমার জীবন নষ্ট করেনি বরং আমায় জীবনে এগিয়ে যাওয়ার সঠিক পথ দেখিয়েছে।আর আমিও এখন এই পথে চলব।”
বৃষ্টি আরশিকে আশ্বাস দিয়ে বলে,
-“তুমি চলো আমার বাবার বাড়িতে।এই বাড়িতে তোমায় এত অপমান সহ্য করে থাকতে হবে না।আমি আমার বাবাকে চিনি তিনি তোমাকে নিজের মেয়ের মতো আগলে রাখবে।”
আরশি বৃষ্টির দিকে কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকায়।বৃষ্টির কথায় আকরাম হোসেন ক্ষে*পে গিয়ে বলেন,
-“আমার মেয়েকে তুমি এভাবে নিয়ে যেতে পারো না।”
বৃষ্টি হেসে বলে,
-“যেই বাবা নিজের মেয়ের দুঃসময়ে ভরসা হতে পারে না সে বাবা হওয়ার যোগ্য না।জন্ম দিলেই যে বাবা হওয়া যায়না সেটা আপনাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে।”
বৃষ্টি আরশিকে বলে তার সাথে যেতে।আরশি তার মা-ভাইয়ের কাছ থেকে বিদায় নিতে বৃষ্টি আর সালমা আক্তারের সাথে চলে আসে।
বৃষ্টি আরশিকে নিয়ে তার বাবার বাড়িতে যায়।বৃষ্টি তার বাবা বরকত হোসেনকে বলে,
-“আমি চলে যাওয়ায় তুমি খুব আফসোস করছিলে না।এই নাও তোমাকে আরেকটা মেয়ে এনে দিলাম।আরশি ভাবির যাওয়ার আর কোন যায়গা নেই।তুমি মেয়েটাকে একটু আশ্রয় দিতে পারবে।”
বরকত হোসেন মেয়ের এমন কথায় হেসে ফেলেন।তিনি বলেন,
-“কি যে বলিস না তুই।আমি কেন পারবোনা? আরশিকে নিজের মেয়ের মতো আগলে রাখবে।ও যতদিন থাকতে চায় এখানে থাকুক।”
আরশি বৃষ্টিকে বলে,
-“তুমি আমার জন্য যা করলে তাতে ধন্যবাদ দিয়ে তোমাকে ছোট করতে চাইনা।আমি আজীবন তোমার উপর কৃতজ্ঞ থাকব।”
-“এসব কি বলছ তুমি? আমরা কিন্তু এখন থেকে বন্ধু।বন্ধুরাই তো বন্ধুদের সাহায্য করবে।আর একটা কথা মনে রেখো তোমাকে আত্মনির্ভরশীল হতে হবে।তুমি আবার ভার্সিটিতে পড়া শুরু করে দাও।তোমাকে নিজের পায়ে দাড়াতে হবে।”
____________________
আরশিকে নিজের বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে বৃষ্টি সালমা আক্তারকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিল।রাস্তায় জ্যামে তাদের গাড়ি আটকে যায়।ড্রাইভার বলে,
-“সামনে কারা যেন মা*রামারি করছে।”
বৃষ্টি গাড়ি থেকে নামে।একজন মেয়ে একা কয়েকজন গু*ণ্ডার সাথে মা*রামারি করছিল।আর তাদের উদ্দ্যেশ্যে বলছিল,
-“আর নিবি সাধারণ মানুষের থেকে চাঁদা? তোদের চাঁদাবাজির কারণে মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে গেছে।তোদের সবাইকে আজ আমি এমন শিক্ষা দেব যে ভবিষ্যতে আর এমন কিছু করবি না।”
বৃষ্টি তো পুরো অবাক হয়ে যায় একটা মেয়েকে এভাবে এতগুলো ছেলের সাথে মা*রামারি করতে দেখে।সালমা আক্তারও গাড়ি থেকে নেমে এসে বলেন,
-“বৌমা এভাবে দাঁড়িয়ে আছ কেন কি হয়েছে?”
-“সামনে দেখুন শাশুমা একটা মেয়ে কতগুলো ছেলের সাথে লড়ছে।”
সালমা আক্তারের চোখ যায় মেয়েটার দিকে।তাকে দেখেই সালমা আক্তারের চোখে জল চলে আসে।তিনি বলে ওঠেন,
-“স্বর্ণা….”
(
#বিবাহ_বন্ধন
#পর্ব_৯
#লেখক_দিগন্ত
বৃষ্টি সালমা আক্তারের মুখে আবার সেই নামটা শুনে অবাক হয়।সেই মেয়েটিও মা*রপিট থামিয়ে সালমা আক্তারের দিকে তাকায়।সেই মুহুর্তে গু*ন্ডারা মেয়েটির মাথায় আঘাত করে।মেয়েটি মুহুর্তেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।সালমা আক্তার আরো জোরে চিৎকার করে বলেন,
-“স্বর্ণা ওঠ।”
স্বর্ণা উঠে দাঁড়ায় তারপর সব গু*ণ্ডাদের মে*রে কচুকা*টা করে।স্বর্ণার এই রকম মা*রপিটের স্টাইল দেখে বৃষ্টি তো খুবই ইমপ্রেস হয়।সাথে তার মনে এটাও প্রশ্ন জাগে তার শাশুড়ী মেয়েটাকে স্বর্ণা নামে ডাকল কেন? তাহলে এটাই কি তার ননদ স্বর্ণা?
স্বর্ণা গু*ণ্ডাদের শায়ে*স্তা করে ফিরে যেতে ধরছিল।সালমা আক্তার দৌড়ে চলে যায় স্বর্ণার কাছে।গিয়ে বলেন,
-“তুই কেমন আছিস স্বর্ণা? আজ কতদিন পর তোকে দেখলাম।কতটা শুকিয়ে গেছিস।নিজের যত্ন নিসনা? কোথায় আছিস এখন? আমার কথা কি তোর মনে পড়েনা?”
স্বর্ণা সালমা আক্তারকে দেখে অপরিচিত হওয়ার ভান করে বলে,
-“আপনি কে আর আমার সাথে এভাবে কথা বলছেন কেন? আমি তো আপনাকে চিনি না।”
-“এমন করছিস কেন আমার সাথে? আজ কতদিন পর তোকে দেখলাম।একটু দুচোখ ভরে দেখে নিতে দে।মায়ের উপর এত রাগ কেন তোর?”
-“আপনার উপর রাগ করতে যাবো কেন? রাগ করার জন্য একটা সম্পর্ক থাকা প্রয়োজন।এই পৃথিবীর সবার সাথে তো সম্পর্ক চুকিয়েই নিয়েছি।”
শেষের কথাটা চাপা স্বরে বলে স্বর্ণা চলে যায় নিজের গন্তব্যে।সালমা আক্তার ফ্যালফ্যাল করে সেদিকে তাকিয়ে থাকে।বৃষ্টি তার কাছে এসে বলে,
-“এই কি আপনার মেয়ে বৃষ্টি? ও আপনার সাথে এরকম ব্যবহার করল কেন যেন আপনাকে চেনেই না?”
-“আমার বোধহয় বুঝতে ভুল হয়েছে।চলো এখন।”
সালমা আক্তার যে মিথ্যা বলছেন বৃষ্টি খুব সহজেই সেটা বুঝে যায়।কিন্তু সে এটাও বুঝতে পারে তিনি তাকে সত্যটা বলতে চান না।তাই আর অযথা কোন প্রশ্ন করে না বৃষ্টি।তবে সে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে স্বর্ণার ব্যাপারে সব সত্য সে জেনেই ছাড়বে।
___________________
বৃষ্টি সোফায় বসে কি যেন ভাবছিল আর গান শুনছিল।সূর্য রুমে চলে আসে আর বৃষ্টিকে এভাবে দেখে স্থির দৃষ্টিতে বৃষ্টির দিকে তাকায়।বৃষ্টি সূর্যকে এভাবে নাকি থাকতে দেখে থতমত খেয়ে বলে,
-“এভাবে কি দেখছেন আপনি? আমার প্রেমে টেমে পড়লেন না-কি?”
সূর্য টালবাহানা করে বলে,
-“আপনার প্রেমে পড়ব আমি? এটা পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য হবে।”
-“আমারও আপনার প্রেমিকা হওয়ার কোন ইচ্ছা নেই।বাই দা ওয়ে আমি একটা ব্যাপারে জানতে চাই,,,,”
-“স্বর্ণা ছাড়া অন্য যেকনো ব্যাপারে প্রশ্ন করতে পারেন।”
বৃষ্টি বিরক্ত হয়ে বলেই দেয়,
-“আমি আপনার সাথে কথাই বলতে চাইনা।আপনি আসলে কোন কাজেরই না।”
সূর্যর ফোনে হঠাৎ কল আছে।সূর্য অদ্ভুতভাবে বৃষ্টির দিকে তাকায়।সূর্যকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বৃষ্টি আন্দাজ করে ফেলে নিশ্চয়ই প্রিয়া কল করেছে।বৃষ্টি তাই রুম থেকে চলে যেতে ধরে।সূর্য তাকে আটকে বলে,
-“আপনি দাঁড়ান আপনার সাথে কিছু জরুরি কথা আছে।”
বৃষ্টি দাড়িয়ে ভ্রু কুচকে তাকায় সূর্যর দিকে।সূর্য ফোনটা রিসিভ করে বলে,
-“হ্যাঁ প্রিয়া বলো।”
-“সূর্য আমরা কতদিন থেকে ঘুরতে যাইনা।চলো না আজ আমরা কোথাও ঘুরতে যাই।”
-“আমি এখন ব্যস্ত আছি।”
-“আমার কাছেই তোমার যত ব্যস্ততা।ধুর আমি রাখছি।”
প্রিয়া ফোনটা কে*টে দিতেই সূর্য স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।তারপর বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলে,
-“ঘুরতে যাবেন আমার সাথে?”
সূর্যর কথাটা শুনে বৃষ্টির তো নিজের কানকেই বিশ্বাস হচ্ছিল না।বৃষ্টি সূর্যর কপালে হাত দিয়া বলে,
-“আপনি ঠিক আছেন তো? নাকি আমার কানটাই খারাপ হয়ে গেছে।সূর্য ইসলাম আমাকে বলছে ঘুরতে যাওয়ার কথা।”
-“কেন আমি কি খুব ভুল বলে ফেললাম?”
-“না ভুল বলেল নি।বরং একটা অসম্ভব কথা বলেছেন।আমার কোন ইচ্ছে নেই আপনার সাথে ঘুরতে যাওয়ার।ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছে হলে আপনি নিজের গার্লফ্রেন্ড প্রিয়াকে নিয়ে যান।”
-“আমি তো আপনার কথা মতো আপনার বাবার বাড়িতে গিয়েছিলাম।এখন আমি একটা কথা বলছি আর আপনি শুনবেন না!”
সূর্যর কথাটা ছিল আবেগঘন এবং অভিমানী।যা বৃষ্টির অবাক হওয়ার পরিমাণটা আরো বৃদ্ধি করে।বৃষ্টি কিছুক্ষণ থেকে তারপর বলে,
-“আপনি মোটেই জাননি আমায় ফন্দি করে আপনাকে নিয়ে যেতে হয়েছিল।”
-“আপনি কি চান আমিও একইভাবে ফন্দি করে আপনাকে নিয়ে যাই?”
বৃষ্টি বুঝতে পারে সূর্য আজ যে করেই হোক তাকে ঘুরতে নিয়ে যাবেই।তাই আর বেশি কথা না বলে চুপচাপ রাজি হয়ে যায়।
সূর্য বৃষ্টিকে নিয়ে হাতিরঝিলে ঘুরতে যায়।চারিপাশে অনেক মানুষের সমাহার।তন্মধ্যে অনেক দম্পতি,প্রেমিক-প্রেমিকার মেলা।সবার মধ্যে সূর্যর পাশাপাশি হাটতে বৃষ্টির অস্বস্তি লাগছিল।বৃষ্টির অস্বস্তিটা আরো বাড়ানোর জন্যই যেন সূর্য তার হাতটা ধরে হাটতে থাকে।বৃষ্টি চোখ বড়বড় করে সূর্যর দিকে তাকায়।
লোকটা আজ হঠাৎ এরকম অদ্ভুত ব্যবহার কেন করছে বৃষ্টির তা বোধগম্য হচ্ছে না।বৃষ্টি মিনমিনে স্বরে বলে,
-“কি করছেন আমার হাত ছাড়ুন সবাই দেখছে।”
সূর্য বৃষ্টির কথা শুনে তার হাতটা আরো শক্ত করে ধরে বলে,
-“ছাড়ার জন্য তো হাতটা ধরিনি।”
বৃষ্টি আর কিছু বলে না চুপচাপ সূর্যর সাথে হেটে আশেপাশের মনোমুগ্ধকর পরিবেশ উপভোগ করতে থাকে।আর কিছুক্ষণ পরেই সূর্যাস্ত হবে।সূর্য বৃষ্টিকে বলে,
-“আমার খুব ইচ্ছে জানেন একদিন কুয়াকাটায় গিয়ে সূর্যদয় আর সূর্যাস্ত দেখা।”
বৃষ্টি অবাক হয়ে বলে,
-“কেন আপনি কখনো কুয়াকাটায় যাননি?”
-“একা একা কিভাবে যাব? যাওয়ার জন্য কোন সঙ্গী তো ছিলনা।”
-“কেন প্রিয়া তো ছিলই।”
বৃষ্টির মুখে প্রিয়ার নাম শুনে সূর্যর চেহারায় যেন গ্রহণ লাগে।বৃষ্টি সূর্যর চুপসে যাওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবে,
-“কি হলো লোকটার? কাল অব্দি তো প্রেমিকা প্রেমিকা করত।আজ তাহলে হঠাৎ আমার পেছনে এভাবে ঘুরছে কেন? ব্যাপারটা তো সুবিধার লাগছে না।”
-“সবসময় যা চোখে দেখা যায় সেটা সত্য হয়না।সত্যটা হয়তো মাইক্রোস্কোপ দিয়েও দেখা যায়না।”
সূর্যর এই কথাটার কোন মানে খুঁজে পায়না বৃষ্টি।এরমধ্যে বৃষ্টির চোখ যায় রাস্তার বিপরীত দিকে।একটি মেয়ে দাড়িয়ে ফোনে কারো সাথে কথা বলছে।মেয়েটা আর কেউ নয় স্বর্ণা।স্বর্ণাকে দেখে বৃষ্টি দৌড়ে ছুটে যায় রাস্তার বিপরীত পাশে।
স্বর্ণার কাছে গিয়ে বৃষ্টি বলে,
-“তুমি স্বর্ণা তাইনা?”
স্বর্ণা বৃষ্টিকে বেশ কড়াভাবে বলে,
-“হ্যাঁ আমি স্বর্ণা।এর থেকে বেশি কিছু জানার চেষ্টা করবেন না।আমি কিন্তু ভদ্রলোক নই।তাই কখন কি করে ফেলি তার কোন গ্যারান্টি নেই।”
সূর্যও বৃষ্টির পিছু পিছু চলে আসে।সূর্যকে দেখে স্বর্ণা রাগী কন্ঠে বলে,
-“নিজের স্ত্রীকে সামলে রাখুন।আমাকে আমার মতো থাকতে দিন।আমি তো নিজেকে নিয়ে খুব ভালোই আছি।আমার কারো প্রয়োজন নেই।নিজের পরিচয় আমি যত ভুলে যেতে চাই ততই যেন মনে পড়ে।অতীত আমায় ভালো থাকতে দেয়না।”
সূর্য স্বর্ণাকে আশ্বাস দিয়ে বলে,
-“আপনার অতীত আর আপনাকে কষ্ট দেবে না।আপনি চলে যান নিজের রাস্তায়।আপনাকে আমরা কেউ আর নিজেদের সাথে জড়াতে চাইবোনা।”
স্বর্ণা চলে যেতে নেয়।তখন সূর্য পেছন থেকে চাপা গলায় বলে,
-“ভালো থাকিস বোন।”
সূর্যর কথাটা শুনে স্বর্ণা ঘুরে সূর্যর দিকে তাকায়।চোখের ভাষাতেই যেন কথা বলে দুইজন।স্বর্ণার খুব ইচ্ছে করছিল ঠিক আগের মতো ছুটে এসে নিজের ভাইকে জড়িয়ে ধরতে।কিন্তু সে এখন আর কোন পিছুটান রাখতে চায়না।তাই নিজের অবাধ্য মনকে বাধ্য করে চলে যায় নিজের গন্তব্যে।
(চলবে)