বৃষ্টি ভেজা কাঠ গোলাপ পর্ব -০৪

#বৃষ্টি_ভেজা_কাঠ_গোলাপ
#পর্ব_৪
#লেখনীতে_সাবীহা_সুলতানা_মহিমা
কই কি বলছি, কিছু না।
ইরা নিদ্রর দিকে তাকিয়ে বলে বাহ্ রে নিদ্র ভাই আর নেহার ড্রেসের কালার তো দেখি মিলে গেছে।
ইরার কথায় নেহা আর ইশা দুজনেই নিদ্রের দিকে তাকায়।
নেহা তাকিয়ে দেখে নিদ্র তার দিকেই তাকিয়ে আছো।
চোখাচোখি হতেই দুজন চোখ শরিয়ে অন্য দিকে তাকায়।
লুচু বেডা কেমনে তাই রইছে।
নিদ্রঃএই তোদের প্যানপ্যান বন্ধ হবে না কখনো। চল তারাতাড়ি বাড়িতে গিয়ে তো বড় যাত্রী যেতে হবে নাকি।
আমরা তিন জন বাইকের পিছনে উঠে বাড়িতে এসে দেখি সবাই রেডি হয়ে বসে আছে। শুধু আমরা লেট!
এতো সময় লাগে নাকি মেয়ে মানুষের সাজতে, ভাই বিয়ের সাধ মিটে গেছে আমার। (মুগ্ধ)
এই তোরা থাম, এমনি লেট হইছে এখন আবার লেট করতেছে। ছোট চাচুর ধমকে সবাই চুপ হয়ে গেছে।
সবাই সবার মতো করে বাসে বসে পড়ে।
যেহেতু আমি নোমান ভাইয়ার বোন তাই আমি নিদ্র ভাই আর নোমান ভাইয়া গিয়ে কারে বসি।

মেয়ের বাড়ি পৌছানোর পর গেইটে টাকা নিয়ে একটু খুন সুটি হয় দুই পক্ষের মধ্যে। আমার একটু খারাপ লাগছে, কারন সকালে হালকা কিছু খেয়ে ছিলাম।
চুপ চাপ খাবার টেবিলে বসে পড়ি আমি। আর নিরা ইশা আর বাকি কাজিন ভাইয়ার সাথে বসেছে। নিদ্র ভাইও বসার কথা ছিলো কিন্তু হঠাৎ দেখি সে আমার পাশে বসে আছে।
ওমা আপনি আমার পাশে কেন নিদ্র ভাই!
কেন তোর পাশে কি কোনো মহারাজা বসবে নাকি, যে আমার বসা যাবে না।
না আমি সেভাবে বলি নি, আপনি তো ভাইয়া বেষ্ট ফেন্ড, তো সেই অনুযায়ী আপনার তো ভাইয়ার সাথে থাকার কথা।
হুমম তোর কথা ঠিক আছে, বাট বাট আমার এখানে খুবই খুবই স্পেশ্যাল একজন আছে তো তাই তাকে দেখে রাখার জন্য আমি এখানে। এবার বুঝলি।
নিদ্র ভাইয়ের কথা আগা মাথা আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না।
আচ্ছা নিদ্র ভাই কি কাউকে পছন্দ করে।
কি এতো ভাবছিসন,খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
হুম খাচ্ছি তো।
খাবার সার্ভ করছে মিরাজ নামের ছেলেটা। সে আমাকে দেখেই এগিয়ে এসে কয়েক পিস গরুর মাংস দিলেন, কিন্তু এতে আমার এলার্জি আছে।
আরে কি করেন আমি এতো খেতে পারবো না।
আরে বেয়াইন সাব আপনি হচ্ছেন আমার বোনের এক মাত্র ননদী, আপনাকে দেবো না তো কাকে দেবো বলেন।
নিদ্র ভাই একবার মিরাজের দিকে তাকিয়ে দেখলেন শুধু।
তার প্লেট আমাকে দিয়ে আমার প্লেট তিনি নিয়ে খাওয়া শুরু করেদিছে।
আরে ভাই আপনি ওর প্লেট নিলেন কেন, আমি তো দিতামই।
ওর এলার্জি আছে। আর ওর কি লাগবে সেটা আমি দেখবো।
নিদ্র ভাইয়ের কথায় মিরাজের মুখটা কালো হয়ে গেলো।
সে আর কথা না বাড়িয়ে অন্য দিকে চলে গেলো।

এদিকে খাওয়া শেষ হলে যখন বর বউকে এক সাথে করা হলো তখন আমি নিদ্র ভাইয়ের পাশেেই দাড়িয়ে ছিলাম।
হঠাৎ কোথা থেকে একটা মেয়ে এসে নিদ্র ভাইকে পেছন থেকে পিঠে ধাক্কা দিলে নিদ্র ভাই পিছনে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায় সাথে মেয়েটাও।
আরে তুমি! (নিদ্র)
তুমি এখানে নিদ্র, আমি ভাবতেও পারছিনা কতটা লাকি আমি বোনের বিয়েতে এসে যে তোমায় পাবো।
আমি নিদ্র আর মেয়েটার দিকে ডেবডেব করে তাকিয়ে আছি। কিছুই বুঝতে পারছি না।
নিদ্র ভাই বিষয়টা বুঝতে পেরে বললেন নেহা মিট কর আমার ফেন্ড আখি। আমরা আমেরিকার তে এক সাথে স্টাডি করেছি। আখি ও আমার একমাত্র বেষ্ট ফেন্ডের একমাত্র বোন।
আখি আপু সৌজন্য হেসে বললেন ওহ্ তুমিই সেই নেহা। যারকথা বলতে বলতে নিদ্র পাগল হয়ে যায়।
আমার আখি আপুকে তেমন ভালো লাগলো না। কেমন নিদ্র ভাইয়ের সাথে চিপকে আছে।
আমি আমার ভাবনায় নিজেই অবাক, নিদ্র ভাইয়ের জন্য আমার খারাপ লাগছে।
আবার ভাবলাম আরে আমি এসব ভাবছি কেন। সে যার সাথে মনে হয় তার সাথে থাকুক তাতে আমার কি।
হয়তো এইটাই তার স্পেশ্যাল মানুষ।
আমি নিদ্র ভাইকে পাশ কাটিয়ে ইরা ইশার পাশে গিয়ে দাড়ালাম। ভাবি মনিকে কবুল বলতে বলা হচ্ছে, কিন্তু সে চুপ করে আছে।
আমি ভাবলাম একদিন আমাকেউ এভাবে বাবা মা কে ছেরে কারো হাত ধরতে হবে। কত কঠিন একটা মেয়ের জন্য এই সময়টা।
সে আদোও জানে না সামনের দিন গুলো কেমন কাটবে।
সবার কথার শব্দে আমার ধ্যান ভাঙ্গে।
ভাবি কবুল বলে দিয়েছে।
এবার নোমান ভাইয়ার পালা, ভাইয়াকে কবুল বলার সাথে সাথেই ভাইয়া কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে কবুল বলে দেয়।
এটা নিয়ে বিয়ের আসরে একটা হাসির রোল পড়ে যায়।
এরপর বাকি সব নিয়ম পালন করে সবাই।
কন্যা বিদায়ের সময় পরিবেশটা কেমন নিস্তব্ধ হয়ে গিয়েছে।
মারিয়া ভাবি তার মাকে জরিয়ে ধরে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছে।
ভাবির বাবা দুর থেকে চোখ মুছে এসে নোমান ভাইয়ার হাতে ভাবির হাত তুলে দিয়ে বললেন, বাবা আমার অনেক আদরের একমাত্র মেয়ে, আদরের দুলালি। তোমার উপর ভরসা করে তোমার হাতে তুলে দিচ্ছি কখনো কষ্ট দিওনা আমার মেয়েকে। আমি তোমার উপর বিশ্বাস করি, আমি জানি তুমি আমার মেয়ের কখনো অমর্যাদা করবে না।
আর যদি কখনো মনে হয় আমার মেয়ে বেয়াদবি করেছে তবে তার গায়ে হাত না তুলে ভালোবাসা দিয়ে বুঝিয়ে বলো। আশা করি আমার মেয়ে বুঝবে।
নোমান ভাইয়া আঙ্কেলের হাত চেপে ধরে বললেন বাবা আজ থেকে আপনার মেয়ের সব দায়িত্ব আমার। ওকে কখনো কষ্ট দিবো না। তার সুখ দুঃখের সঙ্গি আমি। আমার উপর ভরসা করেছেন আমি আপনার ভরসার কখনো অমর্যাদা করবো না।
মারিয়া ভাবি তার বাবাকে জরিয়ে ধরে কিছু সময় কাদলেন।
কেনো জানি আমার এই দৃশ্য দেখে নিজেকে আটকাতে পারলাম না। চোখ দিয়ে নিজের অজান্তেই পানি চলে এসেছে৷

আমাকে কাদতে দেখে নিদ্র ভাই এগিয়ে এসে বললেন কাদছিস কেন পাগলি, এটা নিয়ম। এই নিয়মের বাইরে যে কেউ যেতে পারবে না।
তোরেও বিয়ে দিবো একটা রিকশা ওয়ালার সাথে ভালো হবে না।

সব ঠিক ছিলো কিন্তু ওনার এই কথা শুনে আমার অনেক রাগ হচ্ছে। তাই বললাম তাহলে আপনাকে একটা কাজেের বেটির সাথে বিয়ে দিবো। সব সময় আমার পিছু না নিলে চলে না না।

নারে চলে না।
আমাদের কথাম মাঝেই দেখি নোমান ভাই আর ভাবি গাড়িতে উঠে বসেছে। মেয়ের সাথে আখি আপুও যাচ্ছে।
আমি আর নিদ্র ভাইয়ের সাথে কথা না বাড়িয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম।
যদিও আমার ইচ্ছা ছিলো বাসে সবার সাথে মজা করতে করতে যাবো, কিন্তু নিদ্র ভাইয়ের এক ধমকে সেই আশায় গুড়ে বালি।

গাড়িতে সারা রাস্তা চুপকরে ছিলাম। নোমান ভাইয়া বার বার ভাবিকে শান্ত না দেয়ার চেষ্টা করছে।
এভাবেই পুরা রাস্তা আসার পড় বাড়ির সামনে এসে আবার নিয়ম পালক করে নিয়ে ভাবিকে বসানো হলো ডয়িং রুমে। মা তার গলার চেন খুলে পড়িয়ে দিলেন।বড়রা নানা রকম উপদেশ দিচ্ছে দেখলাম।
আমি আর সেখানে না থেকে রুমে এসে ড্রেস বদলে নিলাম।
কারন একটু পরে শুরে হবে বাসর ঘরে বউ রেখে টাকা আদায়।
একটা সুতি জামা আর প্লাজু পড়ে গিয়ে ভাইয়ার রুম আমি আগেই তালা দিয়ে দিলাম চাবি রাখলাম আমার ওড়নার গিটে।
এদিকে মুগ্ধ ভাই আরিয়ান, ইরা, ইশা ওরা এসে দেখে কাজ শেষ করতে গিয়ে আকাম করেছি।
ইশা বলে আরে বইন বউরে বাইরে রেখে তালা দিসোস কেন।
আমি জ্বিবায় কামড় দিয়ে বলি চল ভাবি কে নিয়ে আসি।
নিচ থেকে ভাবিকে এনে আবার তালা মেরে দেই।
নোমান ভাইয়া এসে বলে কিরে তোরা এখানে কি করছিস। আমরা সবাই একসাথে বলি টাকা দাও চাবি নাউ।
নিদ্র ভাই এসে বলে কি হচ্ছে এখানে, চাবি দাাও।
আমি বলে উঠি,
এহ্ আইছে বন্ধুর হয়ে সাফাই গাইতে। আপনার বিয়ে তেও না আমি দরজা আটকাবো।
নিজের বিয়েতে নিজে কেমনে তালা মারবা।
নিজের বিয়ে মানে।
ও তুমি বুঝবানা।
এতো বোঝার দরকারও নাই। ভাইয়া টাকা দাও নইলে আজ তোমার বাসর হবে না।
অবশেষে অনেক জোরাজোরি করে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে ভাইয়া বাসর ঘরের চাবি উদ্ধার করে।
আমরা ভাই আর ভাবিকে ঘরে রেখে এসে সবাই রুমে যাই।
রুমে গিয়ে আমার চোখ কপালে। এমা আমারর সাথে নাকি আখি আপু থাকবে।
সৌজন্যের কারনে কিছু বলতে পারি না।
তাই চুপ চাপ খাটে শুয়ে পড়ি। কিন্তু আমার ঘুম আসছে না। তাই ভাবি সাদে যাই একটু।
যেই ভাবা সেই কাজ। উড়না ভালো করে জড়িয়ে সাদের দিকে চলে যাই। কিন্তু সাদে গিয়ে যে এমন কিছু দেখবো কখনো আশাও করি নি,,,
চলবে,,,,

(সরি দেরি করে পোষ্ট করার জন্য।সারাদিন ল্যাব করে অনেক ক্লান্ত ছিলাম ।। সবাই নেক্ট নাইচ না লিখে গঠন মুলক মন্তব্য করলে লেখতে সুবিধা হয় । কারন আপনাদের মন্তব্য আমাকে অনুপ্রেরণা দেয়। আর আপনাদের চাওয়া গুলো বুঝতে হায়তা করে। ভুল ক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here