বৃষ্টি ভেজা কাঠ গোলাপ পর্ব -০৬

#বৃষ্টি_ভেজা_কাঠ_গোলাপ
#পর্ব_৬
#লেখনীতে_সাবীহা_সুলতানা_মহিমা

নেহার মাঝে কোনো হুশ সেই সম্পূর্ণ গোলাপ গাছ তুল তে গিয়ে হাত কেটে ক্ষত বিক্ষত হয়ে গেছে।গল গল করে র*ক্ত পরছে।
নিদ্র কি করবে বুঝতে পারছে না। দিশেহারা হয়েগেছে। এদিকে বাড়িতে নোমান মারিয়ার রিসিপশনের সবাই প্রায় চলে এসেছে। একটু পড়ে হয়তো সবাই মেয়েকে নিয়ে চলে যাবে।
অতিরিক্ত র*ক্ত পড়ায় নেহা জ্ঞান হারিয়ে সেখানেই ডলে পড়ে।
নিদ্র আখিকে সরিয়ে দিয়ে দ্রুত নেহাকে পাজাকোলা করে কোলে নিয়ে মেইন গেটের দিকে এগিয়ে যায়। আখি নিজেও বোকা হয়ে গেছে। সে বুঝতে পারেনি মেয়েটা এতটা গাছ পাগল। তাহলে সে এমন ভুল করতো না। আবার নেহার উপর রাগও হচ্ছে কারন একটা ফুলের জন্য। মানুষ এমন পাগলামি করে, আর সে তো নিদ্র থেকে উত্তরও পেলো না। কি বিরক্তি কর অবস্থা।
নিদ্র নেহাকে কোলে নিয়ে বাগান পেরুতেই সামনে স্টেজ। যেখান থেকে সব কিছু দেখা যায়।
নোমানের নজর যায় নিদ্র হন্তদন্ত হয়ে নেহাকে কোলে নিয়ে কোথাও যাচ্ছে।
নোমান মারিয়াকে বলে একটু অপেক্ষা করো আমি আসছি বলে সেও এগিয়ে যায় নিদ্র নেহার দিকে।
কাছে গিয়ে যখন দেখে নেহা জ্ঞান হারিয়েছে, তখন নোমান নিদ্র কে বলে কি হয়েছে। নিদ্র চোখের ইশারায় হাত দেখালে সেটা দেখে নোমান শিউরে ওঠে।
এখন কথা বলার সময় নেই, নিজের প্রিয় বোনের অবস্থা দেখে ভুলে গেছে সে সদ্য বিবাহিত।
দ্রুত গাড়ি বের করে ছোটে হসপিটালের দিকে। মারিয়াও নোমানের ছুটে আসা দেখে ছুটে আসে। বাড়ির সবাই যখন এসে দেখে এই অবস্থা তখন নিদ্র কারো কোনো কথা না শুনে নোমান কে ড্রাইভিং করতে বলে মারিয়াকে নিয়ে পিছনের ছিটে বসে পড়ে।
নোমানের এখন পাগল পাগল অবস্থা। তার একমাত্র বোন নেহা কিছু হলে সে বাচবে কি নিয়ে।
হসপিটালে পৌঁছান আগেই নোমান বেড বুকিং দেয় নিজের হসপিটালে আর মারিয়া ফাস্ট এইড বক্স থেকে বেন্ডেজ করে দেয় হাত।
তারপরেও র*ক্ত পড়া কমছে না।
হসপিটালে গিয়ে ডক্টর নিয়ে যায় নেহাকে। হাতের ভিতরে থাকা কাটা বের করে জানায় র*ক্ত লাগবে এক ব্যাগের মতো। ইতিমধ্যেই অনেক ব্লিডিং হয়েছে।
আখি নিজেকে অপরাধী মনে করছে, তার জন্য মেয়েটার আজ এই দশা।
বাড়ির সবাই হসপিটালে। আখি মাথা নিচু করে এসে দাড়ায় সবার সামনে। যেই নোমান কে ছরি বলতে যাবে ওমনি নিদ্র এসে দুই গালে দুইটা থা*প্প*ড় দিয়ে বলে তোমার জন্য শুধু তোমার জন্য আজকে নেহার এই দশা। ওর যদি কিছু হয় আমি তোমাকে ছারবো না।
আখি অপরাধী মতো মাথা নিচু করে দাড়িয়ে থাকে।
নোমান সবি শুনেছে তাই আখি কে বলে ওর সাইকোলজিক্যাল কিছু সমস্যা আছে। ও গাছ লাগাতে, বই পড়তে, আর্ট করতে খুব ভালো বাসে। খুব বললেও বোধয় ভুল হবে ভিষন রকমের ভালোবাসে।
কিন্তু কেউ যদি ভুল করেও ওর বাগান বা বই কিংবা ছবিতে হাত দেয় তাহলে ও খুব রেগে যায়। যার কারনে আমরা বাড়ির কেউ কখনো ওকে এই সব বিষয়ে রাগাই না। কিন্তু তুমি তো ওর বিষয়ে কিছু জানো না তাই এমনটা করেছো। আমিই ছরি তোমার জানা ছিলো না এতে তোমার কোনো দোষ নেই। দোয়া করো আমার বোনটা যেনো সুস্থ হয়ে যায়।

***********************★***************************

একটা গুদাম ঘরে বসে আছে কয়েকটা লোক। তারা বসে আছে কারো অপেক্ষায়। মহাজন এখনো আসেনা কেন। এই মাসে মাইয়া পাঠানো হইবোএকশো জন। এখনো দশটা মাইয়া বাকি।তাদের কথার মাঝেই সেখানে উপস্থিতি হয় কালো মুখোশ পড়া একটা তরুন ছেলে।
তাকে দেখে সবাই উঠে দাড়িয়ে সম্মান জানায়। ইশারায় সবাই কে বসতে বলে সে।
অগ্যাত ব্যাক্তি বলে ওঠে, তোমারা সবাই জানো আগামী মাসের দশ তারিখের মধ্যে মুম্বাই একশো মেয়ে পাঠানো হবে আমাদের দেশ থেকে। তার মধ্যে এখনো দশটা মেয়ে বাকি। তোমাদের কাজ হলো নয়টা মেয়ে কালেক্ট করা। আর একটা মেয়ে আমার হাতে আছে যাকে আমি আনবো। সো সবাই কেয়ার ফুল।বাংলাদেশের যেখান থেকে পারো এই নয়টা মেয়ে কালেক্ট করবে। আর তোমারা খুব ভালো করে শুনে রাখো নিদ্র ইজ ব্যাক। সো খুব সাবধানে কাজ করতে হবে। নিদ্র যাতে আমাদের ধরতে না পারে। ও ধরার আগেই এই একশো মেয়েকে আমাদের মুম্বাই পাঠাতে হবে।
বলেই সে চলে যেতে নেয়।তখন সবাই উঠে আবার সালাম দিয়ে যার যার যায়গায় চলে যায়।
মুখোশ পড়া লোকটা রহস্য ময় হাসি দিয়ে বলে নিদ্র এবার তোমার পতন হবে। আমার নেক্সট টার্গেট তোমার সবচাইতে বড় দুর্বলতা। তোমার মেন্ট ইমোশন নেহা। হা হা হা হা হা। এবার তুমিও নেহাকে আমার হাত থেকে বাচাতে পারবে না। আগের বার তুমি আর নোমান মিলে আমার বাবার হাত থেকে পিচ্চি নেহাকে বাচিয়ে নিয়েছিলে। কিন্তু আমি তো এতো কাচা খেলোয়ার না। নেহা নিজে এসে ধরা দেবে আমার হাতে।

নিদ্রর জরুরি কল আসায় সে বের হয়ে যায় হসপিটাল থেকে। আখি সব শুনে নিজের করা কাজের জন্য আবারো মাফ চায়।

নিদ্র দাড়িয়ে আছে তার বসের সামনে।
নিদ্র শোনো এবার আমাদের খুব সাবধানে এগুতে হবে। কারন আমাদের চারদিকে শত্রু। ওদের টার্গেট হচ্ছে নেহা। আর আমি জানি তুমি নেহাকে কতটা বেশি ভালোবাসো। তাই বলবো তুমি হেরে গেলে নেহাকে হারাতে হবে।
জি স্যার আমি জানি, তাই নেহাকে শিকার হিসেবে বেছে নিয়েছে ওরা। স্যার মনে আছে আমি নেহার ঘুমন্ত মুখ দেখে এক মুগ্ধতায় ছেয়ে গিয়েছিলো আমার মনে। সেই পিচ্চি নেহা কত বড় হয়ে গেছে।
হুমম সেইটাই তো। তোমার ভালোবাসাটা এবার পরিক্ষা হবে। যদি তুমি জিতে যাও তাহলে শুধু তুমিই নও বাংলাদেশের হাজারো নারী শিশু বেচে যাবে। আর যদি হেরে যাও তাহলে শুধু তুমি নও পুরো বাংলাদেশই হেরে যাবে।
জি স্যার আমি জানি, তাইতো আমি এতো রিক্স থাকা স্বত্তেও নেহাকে টোপ হিসেবে ব্যাবহার করছি।
নোমান জানে এই বিষয়ে।
জি স্যার জানে। ওর পুরো সমর্থন আছে।
ওহ্ নিদ্র তোমাকে তো একটা বিষয় জানানো হয়নি, জানো তো এবার কত মেয়ে পাঠাবে ওরা মুম্বাই এ।
স্যার প্রায় একশো মেয়ে। আমি জানতে পেরিছি এখনো দশটা মেয়ে বাকি আছে। আর তার মধ্যে নেহা একজন।
ইও আর টেলে- ন্টেট বয়, আমি জানি তুমি পারবে। তোমার একটু অসতর্কতা হারাবে একশোটা মেয়ে। সো বি কেয়ারফুল।
ইয়েছ স্যার।
এরপর মুচকি হাসি দিয়ে নিদ্র বের হয়ে আসে তার বসের সামনে থেকে। আর বলে, এই তো আর কয়েকটা দিন তারপরেই তোদের মুখোশ খুলে দিবো আমি। আর নেহাকেউ আমার করে নিবো।
নিদ্র ইজ ব্যাক। পারবেনা এবার আর চোখে ধুলো দিয়ে পালাতে।

মিরাজ আখির হাত ধরে বসে বলছে, আপু তুই এটা কি করছিস, তোকে বলে রাখছি আমি নেহাকে প্রথম দেখায়ই ভালোবেসে ফেলেছি। তাই ভুলেও আর ওর সাথে খারাপ ব্যাবহার করবি না।
আমিও তো নিদ্র কে ভালোবাসি, কেবলি নিদ্র কে বলেছি আর ও কিনা সেখানে এসে সামান্য একটা ফুলের জন্য আমাকে ধমক দেয়।
তাই তো রেগে আমি ওকে আঘাত করে ছিলাম। আমি কি জানতাম ওর এরকম কোনো সমস্যা আছে। তাহলে তো এমনটা করতাম না।
কি কি সমস্যা আপু?
এরপর আখি সব খুলে বলে মিরাজ কে। মিরাজ সব শুনে মনটা খারাপ হয়ে যায়। সে চুপচাপর রুম থেকে বের হয়ে যায়।

নেহাকে বেডে সিফ্ট করা হয়েছে, সেই থেকে নিদ্র নেহার বেডের সামনে বসে আছে। অনেকবার বলেও কেউ নিদ্র কে সরাতে পারে নি।
অবমেষে ক্লান্ত হয়ে সবাই যার যার মতো বের হয়ে গেছে। নিদ্রর এক কথা যত খন নেহার জ্ঞান না ফিরবে তখন সে এখান থেকে নরবেনা ।
নেহার জ্ঞান থাকলে হয়তো আবেগে নিদ্রকে জরিয়ে ধরতো এই পাগলামি দেখে।
সরি রে পিচ্চি পরী আমি তোকে সেইফ রাখতে পারি নি। সব দোষ আমার। আমার ভাবা উচিত চিলো তুই আমার পাশে কাউকে সহ্য করতে পারবি না।
হঠাৎ নেহার কন্ঠে শুনতে পায় নিদ্র ভাই আপনি এমন কেন, আমি আপনাকে ভিষন ভালোবাসি,, এরপর আবার জ্ঞান হারায় নেহা৷
নিদ্র কিছু সময় সেখানে বসে থেকে উঠে দাড়িয়ে বাইরে বের হয়ে আসে আর নোমান কে ভেতরে থাকতে বলে।

নিদ্র এক কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে,,,,,,,

চলবে,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here