#আজও_ভালোবাসি_তোমায়❤
#Writer_মাহিয়া_মিতু
#Part_6
🍁
🍁
এরই মধ্যে ফারহানের স্টাডি ও কমপ্লিট হয়ে গেছে। আর ও ওর বাবার কথামতো ওদের বিজনেস দেখা শোনা ও শুরু করে দিয়েছে।
কারণ ওর বাবা চায় ওর যেহেতু লেখা পড়া শেষ সো সবকিছু এবার ওকে বুঝিয়ে দিতে চায়।
আর ফারহান ও অমত করে নি, আজ না হোক কাল ওকে ই তো সব সামলাতে হবে, তাই আর দেরি করে কি লাভ।
আর তাছাড়া আর একটা কারণ ও আছে, ওর ধারণা ও যতো তাড়াতাড়ি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত আর যোগ্য করে তুলতে পারবে ততো তাড়াতাড়ি মিতুর
কথা ও বাড়ি জানাতে পারবে😇।
আগে নিজে স্বাবলম্বী না হয়ে তো আর বিয়ের কথা বলা যায় না☺।
ফারহান এখন মন প্রাণ দিয়ে চেষ্টা করছে নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করার আর ও সফল ও হয়েছে, খুব অল্প সময়ের মধ্যে ও একজন সফল বিজনেস ম্যান হয়ে উঠেছে।
ছেলের এতো সুন্দর কাজের গতি দেখে ওর বাবা তো খুব খুশি।
এতো কাজের মধ্যে ফারহান মিতুকে তেমন সময় দিতে পারছে না, এর জন্য মিতুর একটু অভিমান হলে ও ওকে বুঝতে দেয় না। কারণ ও নিজেও চায় ওর জন্য যেন ফারহানের কাজের উপর কোনো ইফেক্ট না পড়ে।
এরমধ্যে একদিন ফারহান অফিস থেকে ফিরে রাতে ওর বাবা মায়ের সাথে ডিনার করতে বসেছে, তখন ওর বাবা বললো
——- ফারহান, তোমার সাথে জরুরি কিছু কথা ছিলো।
——– বলো, কি কথা।
——– এখানে না, খাওয়া শেষ করে আমার রুমে এসো।
——— ওকে।
তারপর ওর খাওয়া শেষ করে ওর বাবার রুমে যায়
——– আব্বু আসবো।
——– হ্যা, এসো।
——– বলো কি বলবে।
——– দেখ তুমি লেখাপড়া শেষ করেছো, এখন আমার বিজনেস দেখাশোনা করছো, সব কিছু ঠিক ভাবেই চলছে। তাই আমি আর তোমার মা চায়ছিলাম এবার তোমার বিয়েটা দিয়ে দিতে।
——- হ্যা বাবা, তোর বাবা ঠিক ই বলছে, তুই রাজি হয়ে যা।
ফারহান তো মনে মনে সেই খুশি কিন্তু বাবা মায়ের সামনে তো সাথে সাথে রাজি আছি একথা বলা যায় না, তাই ও বললো
—— আচ্ছা, তোমরা যা ভালো মনে হয় তাই করো।
বলে ও ঘরে চলে আসলো। ও খুব খুশি মনে মিতুকে ও ফোন করে সব বললো।
মিতুও খুব খুশি হয় ফারহানের কথা শুনে। কিন্তু ওদের এই খুশি বেশিক্ষণ থাকে না।
সকালে নাস্তা করার সময় ওর বাবা ওকে বলে
—— ফারহান, আজকে তোমার অফিস যেতে হবে না।
——– কেন, আব্বু।
——— আজ তোমার লতিফ আংকেলের বাসায় যাবো, তোমার আপুকে ও আসতে বলেছি।
—— কিন্তু আব্বু হঠাৎ করে লতিফ আংকেলের বাসায় যাবো কেন তাও আবার সবাই একসাথে।
——- হুম, কারণ আমরা ওখানে লতিফের মেয়ে টিনার সাথে তোমার বিয়ের কথা পাকা করতে যাবো।
——- ওয়াট!!!!!! কি বলছো বাবা তুমি এসব। হঠাৎ করে এসব তুমি আমার কাছে একবার শোনার প্রয়োজন মনে করলে না।
তখন ওর মা বলে উঠলো
——- আরে বাবা, তুই তো কাল রাতেই মত দিয়ে দিলি।
——– আর টিনাকে ও আমাদের পছন্দ তাই আমরা চায়ছি ওর সাথে তোমার বিয়ে টা হোক।
—— কিন্তু বাবা আমি
—— আরে তুই এতো লজ্জা পাচ্ছিস কেন বলতো, রাজি হয়ে যা না বাবা, মায়ের কথা টা রাখ।
——- আরে আ
আর কিছু বলার আগেই কলিং বেল বেজে উঠলো ওর আর মিতুর কথা বলা হলো না, তাই ও ওর ঘরে চলে গেলো।
ওর মা গিয়ে দরজা খুলে দেখে ওর বোন এসেছে।
ওর বোন ফারহানা ভিতরে এসে নিচে ফারহান কে না দেখে ওর ঘরে যায়, যেয়ে দেখে ও মন খারাপ করে বসে আছে।
তাই ও ভিতরে ঢুকে বললো
—– কিরে এমন মন খারাপ করে বসে আছিস কেন, বিয়ে ঠিক হতে চলছে, তোর তো খুশি হওয়ার কথা রে ভাই কিন্তু তা না তুই মন খারাপ করে বসে আছিস।
—— আপু, তুই এসেছিস ভালোই হলো আব্বু আম্মু এসব কি শুরু করেছে বল তো, আরে আমার মতামতের কোনো গুরুত্ব নেই নাকি। বলা নেই কওয়া নেই হুট করে বিয়ে ঠিক করলেই হয়ে গেল!!!!
—— আরে আরে এতে কি তুই লজ্জা পাচ্ছিস না কি, ওলে বাবালে, থাক আর লজ্জা পেতে হবে ন😊
—– আপু, আমি কিন্তু সিরিয়া
—— মানে!!!!
——😶😶😶😶😶
—— ফারহান, এই। তোর কি এই বিয়েতে মত নেই।
—— না।
—— না!!!! তাহলে তুই কি কাউকে পছন্দ করিস।
——- হ্যা,আপু। কিন্তু মা বাবা তো আমার কথা শুনতেই চাচ্ছে না, আপু তুই প্লিজ আব্বু আম্মু কে বুঝিয়ে বল। কারণ আমি ওকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবো না, আমি ওকে ভিষণ ভালোবাসি।
——তুহ
—— এসব তুই কি বলছিস বাবা
ফারহানা কিছু বলার আগে পিছনে থেকে ওর মা বলে উঠলো।
—— মা, তুমি সবকিছু..
——- হ্যা, আমি তোদের সব কথায় শুনেছি 😐
——- তাহলে তুমি প্লিজ আব্বু কে বুঝিয়ে বলো, প্লিজ। আমার পক্ষে ওকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করা সম্ভব নয়।
——- ছোট বেলা থেকে তোদের কোনো ইচ্ছা আমরা অপূর্ণ রাখিনি তাই আজও জোর করবো না, তাই তুই যা চাস তাই হবে।
পিছনে থেকে কারো মুখে এ কথা শুনে ওরা পিছনে ফিরে দেখে ওর বাবা, ফারহান খুব অবাক হয় সাথে খুশিও হয়।
—– আব্বু তুমি!!!!
—— হ্যা বাবা আমি, তোর সব কথা শুনেছি, এবার বলতো মেয়েটি কে, আর কোথায় থাকে। আরে বিয়ের কথা বলতে হবে না!
—— আব্বু তুমি সত্যি বলছো 😊
——- হুম, মাই সান। আমার ছেলে আমার কাছে কিছু চাইবে আর আমি সেটা দেব না তা কি হতে পারে।
—থ্যাংক ইউ আব্বু।
তারপর ফারহান ওদের সবাই কে মিতুর সব কথা বলে, মিতুর ফ্যামেলি বাকগ্রাউন্ড শুনে ওর বাবার যদি ও তেমন একটা মত হয় নি মিডিলক্লাস ফ্যামেলি বলে। কিন্তু ছেলের কথা ভেবে আর কিছু বলেন নি।
ফারহানের বাবা সব কথা টিনার বাবাকে বলে, আর এটাও বলে যে উনি ছেলের অমতে কিছু করতে চান না, তার জন্য উনার কাছে ক্ষমা ও চেয়ে নেন।
টিনার বাবাও সব শুনে আর কিছু বলেন না, কারণ উনি ও চান না যে তার মেয়ে এমন কারো সাথে বিয়ে যে কোনোদিন হয়তো তার মেয়েকে ভালোই বাসতে পারবে না।
কিন্তু টিনা এটা কিছু তেই মেনে নিতে পারছে না, ও এবার আরো বড় প্ল্যান করে ওদের দুজন কে আলাদা করার।
টিনা পরদিন সকালে ফারহানদের অফিসে যায় ওর বাবার সাথে দেখা করতে, ও খুব সাবধানে ফারহানের বাবার কেবিনে যায়, কারণ ও চায় না ফারহান ওকে দেখে ফেলুক।
ও ওখানে যেয়ে
—– আসবো আংকেল।
——- আরে টিনা মামনি, এসো ভিতরে এসো।
—— কাল আপনাদের যাওয়ার কথা ছিলো, কিন্তু আপনারা তো যান নি তাই আমি ই এলাম আপনার সাথে দেখা করতে 🙂
——- আসলে মামনি আমি জানি তুমি ফারহান কে খুব ভালোবাসো, আমার ও তোমাকে বেশ পছন্দ, তোমার সাথে ওর বিয়ে টা হলে সবচেয়ে বেশি খুশি তো আমিই হতাম, কিন্তু ফারহান টা
——- আমি জানি আংকেল সবটা, আর আমি একটু ও কষ্ট পাই নি, আমি চায় ফারহান সুখে তাহলে আমি ও খুশি থাকবো। কিন্তু
—— কিন্তু কি মামনি।
——- আংকেল ফারহান ভুল করছে
—— মানে টা হলো, ফারহান নিশ্চয়ই আপনাকে বলেছে যে ওই মেয়েটা মিডিল ক্লাস ফ্যামেলির মেয়ে।
——- হ্যা, আর এজন্য তো আমার ও মত হচ্ছে না, কিন্তু কি করবো বলো।
——- সেটা সমস্যা নয় আংকেল কিন্তু
——- কিন্তু
——- আংকেল মেয়েটার চরিত্র ভালো না, ওর এরকম অনেকগুলো ছেলের সাথে সম্পর্ক আছে, ও এভাবে বড়লোক ছেলেদের ফাঁসিয়ে তাদের কাছ থেকে টাকা পয়সা লুট করে।
—— ওয়াট!!!
—— হ্যা আংকেল। আমি সত্যি বলছি, এএই দেখুন ওই মেয়েটার ছবি।
ছবিটা দেখে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন মেয়েটা কেমন, এই যে ছেলেটা এ ও অনেক বড়লোক, আর এর কাছ থেকে ও টাজা পয়সা সব নিয়ে এবার ফারহানের পিছনে পড়েছে। আমি ফারহান পাই বা না পাই কিন্তু সত্যি তো এটাই যে আমি ওকে খুব ভালোবাসি তাই আমি চায় না ওর সাথে খারাপ কিছু হোক।
—— ছি ছি!! শেষে আমার ছেলে এরকম একটা মেয়ের ফাঁদে পড়লো। না, এই বিয়ে আমি কিছু তেই হতে দেবো না, আর তোমাকেও আমি কথা দিচ্ছি যে ফারহানের বিয়ে তোমার সাথে ই হবে এই মেয়েটার সাথে নয়।
টিনা তো একথা শুনে খুব খুশি। সবকিছু ওর পরিকল্পনা অনুযায়ী হচ্ছে।
তারপর ও আবার বলে
—— কিন্তু আংকেল ফারহান কে এখুনি এসব কিছু বলবেন না, কারণ ওই মেয়ে ওকে এমন যাদু করে রেখেছে না, যে ও আপনার কোনো কথায় বিশ্বাস করবে না।
——- তাহলে কি করবো।
—— এমন কিছু করতে হবে যাতে ওই মেয়ে নিজেই ফারহানের জীবন থেকে চলে যায়। আর ফারহান ও ওই মেয়েকে ভুল বোঝে।
—— হুম, তুমি ঠিক বলেছো।
—— আচ্ছা আংকেল তাহলে আমি আজ আসি, আমাকে এখান থেকে আবার ভার্সিটি যেতে হবে।
—— আরে আমি৷ ও তো ওইদিকে যাবো, তাহলে চলো আমি তোমাকে ড্রপ করে দেয়।
—— ওকে চলুন🙂
তারপর টিনা উনার সাথে বেরিয়ে যায়। মাঝরাস্তায় জ্যামে ওরা আটকা পড়ে যায়। কিন্তু এই জ্যামের কারণে টিনার আইডিয়া যেন শতগুনে সফল হয়ে যায় কারণ হঠাৎ করে টিনার চোখ যায় রাস্তার ধারে যেখানে মিতু একটা ফুসকার দোখানের পাশে দাঁড়িয়ে আছে সাথে একটা ছেলে, একে টিনা চেনে দিনার বয়ফ্রেন্ড। তার ওপাশে দিনা ও দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু তাতে কি ফারহানের বাবাতো আর দিনা কে চেনে না।
হঠাৎ করে হাঁটতে যেয়ে মিতু কিছুতে বেঁধে পড়ে যেতে নিলে ওই ছেলেটা ওকে ধরে নেয়, টিনা এই সুযোগ টা কে কাজ লাগায়, কারণ দূর থেকে মনে হচ্ছে ওরা দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে আছে।
টিনা ফারহানের বাবাকে ডেকে এই দৃশ্য দেখায়, ওর বাবা এটা দেখে তো টিনার কথা পুরোপুরি বিশ্বাস করে নেয়। আর এটাও ঠিক করে ফেলে যে কিছুতেই এই মেয়ের সাথে ফারহানের বিয়ে হতে দেবে না
.
.
.
.
চলবে…………