#চাঁদোয়া_মহল
পর্বঃ২১
#অত্রি_আকাঙ্ক্ষা
-‘তুমি কি আমাকে সন্দেহ করছো!কিন্তু কেন?সত্যি বলছি তো,আমি বড় মায়ের সম্বন্ধে এসব কিছুই জানতাম না।আমি তো ভেবেছিলাম বড়মা চন্দ্ররেখার বাবাকে ভালোবাসে।গোপনে তাদের বিয়ে হয়েছে।এখন তো দেখি পুরো কেসটাই উল্টো।তার নাকি জমজ বোনও আছে।সে যাইহোক,অবশেষে চন্দ্ররেখার জন্য ভালোই হলো….বল?’
নওশিনের কথায় আরিফ কেবল মাথা নাড়ালো।তার দৃষ্টি ফোনের মাঝে নিবন্ধ।শারাফ মেসেজ পাঠিয়েছে।আরিফ বেজায় বিরক্ত হলো।কতো বছর হয়ে গেছে,সে এখন নিধি মির্জাকে খুঁজবে কোথা থেকে?আদোও বেঁচে আছে কি না,কে জানে?উফফ!ভাইয়ের মাথায় কখন যে কি চলে।কোথায় ভেবেছে নওশিনকে নিয়ে হানিমুনে যাবে।তা না,এখন দুয়ারে ঘুরে ঘুরে ইনভেস্টিগেশন করো।ধ্যাত!’
——-
-‘রেখা ভাবি তো বড় মায়ের মাইয়া হয়।তাইলে সম্পর্কে তো তিনি শারাফ ভাইয়ের বোন লাগে…..ঠিক কিইছি না আমি চাচিআম্মা?’
মোহিনী মির্জা ও তৃণা মির্জা লাইলির কথায় থতমত খেয়ে গেলেন।একে অপরের দিকে তাকালেন।তারা এতো গভীর ভাবে ভেবে দেখেন নি।আসলেই তো!শারাফ আর চন্দ্ররেখা মামাতো ফুপাতো ভাইবোন।কিন্তু লাইলি যেভাবে বলছে মনে হচ্ছে আপন ভাই বোন।একই মায়ের পেটে জন্ম তাদের।ছি,ছি!কেমন বাজে শোনাচ্ছে।মোহিনী মির্জার চট করেই রাগ উঠে গেল।হাতে খুন্তি নিয়ে তেড়ে গেলেন লাইলির দিকে।
-‘তুই যদি এই মূহুর্তে চুপ না করিস,তাহলে কাজি ডেকে ইউসুফের সাথে তোর বিয়ে দিয়ে দিবো।’
লাইলির মুখ চুপসে গেল।দু’হাত দিয়ে নিজের মুখ চেপে ধরলো।মোহিনী মির্জা লাইলির দিকে কটমট করে তাকিয়ে, নিজের কাজে মনোনিবেশ করলেন।তৃণা মির্জা লাইলির দিকে তাকিয়ে ব্যস্ত কন্ঠে বললেন,
-‘নে ধর! ট্রেটা জলদি শারাফের ঘরে দিয়ে আয়।সকাল থেকে রেখা না খাওয়া।আর সাবধান!কোনো ধরনের উদভ্রট কথাবার্তা শারাফের সামনে একদমই উচ্চারণ করবি না।’
লাইলি মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।সে সারাজীবন বোবা হয়ে থাকতে রাজি তবুও ইউসুফকে বিয়ে করবে না।
——-
-‘এভাবে বেহায়াদের মতো হাসছো কেন?সবার মন খারাপ। সেটা কি তোমার নজরে পড়ছে না!এমন সিচুয়েশনে কি করে হাসতে পারো তুমি?’
-‘সবার জন্য আমারও মন খারাপ হচ্ছে, কিন্তু সেটা মনে মনে।আর হাসছি কারণ তোমার আর আমার খুব শীঘ্রই বিয়ে হবে।’
-‘হোয়াট?আর ইউ ইনসেন্স?ইউ লস্ট ইউর মাইন্ড!
চিৎকার করে উঠলো সিমি।বড় বড় চোখ করে মাসুকের দিকে তাকিয়ে আছে সে।
-‘আস্তে সোনা!এভাবে চিৎকার করছো কেন?শারাফ ভাই আর রেখা ভাবি মামাতো ফুপাতো ভাইবোন হয়ে যদি বিয়ে করতে পারে,তাহলে আমরাও পারবো।বরং আমাদের জন্য আরো বেশি সহজ হয়ে গেল।’
মাসুক উচ্চস্বরে হেঁসে উঠলো।সিমি দাঁত কিড়মিড় দিয়ে বলল,
-‘আমি কি বিয়ের জন্য সম্মতি দিয়েছি!তোমাকে বিয়ে করতে আমার বয়েই গেছে।ফাজিল ছেলে কোথাকার।’
-“কোথাকার আবার!শুধুই তোমার,সোনা।”
সিমি মুুখে থাকা কঠোরতার প্রলেপ ধীরে ধীরে গলে যেতে লাগলো।মাসুকের হাসি হাসি মুখের দিকে কয়েক সেকেন্ডে তাকিয়ে রইল।তারপর নিজের ঘরের দিকে এগিয়ে গেল।মাসুক বরাবরের মতোই নির্বিকার।
——–
-‘কেন এমন করছেন,চন্দ্রপ্সরা?’
-‘আমি কারো চন্দ্রপ্সরা নই।আমি কেবলই চন্দ্ররেখা।আমার বাবার চন্দ্ররেখা।’
-‘কি সমস্যা আপনার?হোয়াই আর ইউ আর বিহেভিয়ারিং লাইক এ চাইল্ড?”
-‘আমার সমস্যা আপনি এবং আপনার পরিবার।’
শারাফের গাম্ভীর্য ভরা মুখে কাঠিন্য ভর করলো।চন্দ্ররেখার মুখ পানে তার আবেশহীন দৃষ্টি।রেখা ভ্রুক্ষেপহীন।শারাফ দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।হার মেনে নেওয়ার ভঙ্গিতে বলল,
-‘আমি আপনাকে সকাল থেকে এক কথা বারবার বোঝাতে বোঝাতে ক্লান্ত।আমি এসবের কিছুই জানতাম না।ইভেন আমি দশবছর দেশেই ছিলাম না।দু’বছর পূর্বে যখন এলাম তখন ফুপু মায়ের কাছে আপনার ছবি……’
-‘অন্তত এটা তো জানতেন যে আপনার ফুপু মায়ের সাথে আমার একটা কানেকশান আছে!জানতেন না বলুন?এসব জেনে কেন আমাকে বিয়ে করেছেন কেন?দয়া দেখাতে নাকি আপনার পরিবারের করা অন্যায়ের দ্বায় মেটাতে!’
-‘আমার পরিবার কোনো অন্যায় করে নি।’
-”অলবৎ করেছে!আমার বাবা দোষ না করেও আপনাদের কাছে দোষী হয়েছে।আপনার ফুপুমা না হয় পরিস্থিতির স্বীকার কিন্তু আপনার বাবার!আমার প্রতি তার কি কোনো দায়িত্ব ছিলো না!সে কি করেছিলো?মুখ ফিরিয়ে চলে এসেছিলো।এতো বছর ধরে আমার বাবাকে প্রতারক সাব্যস্ত করে এসেছে সে।”
চন্দ্ররেখার চিৎকার করে উঠলো।তাকে ভীষণ বিধ্বস্ত লাগে।শাড়িটি কুঁচি আধখোলা।চুলের অবস্থা উসকোখুসকো।হালকা গোলাপি বর্ণের ঠোঁট কেমন বিবর্ণ হয়ে আছে।অতিরিক্ত কান্নার ফলে চোখের কোটর লালচে বর্ণ ধারণ করেছে।নয়ন জোড়া থেকে যেন আগুন ঝরছে!শারাফ হতভম্ব চোখে তাকিয়ে রইল।সে তার অপ্সরার এমন রূপের সাথে পরিচিত নয়।একেবারেই না।শারাফের বুকটা ধকধক করছে।সামনে থাকা মানবীটি চন্দ্ররেখা!তার চন্দ্রপ্সরা নয়!একে আঁটকে রাখা ক্ষমতা যে শারাফের নেই।চন্দ্ররেখা দু’হাতে নিজের মাথার চুল টেনে ধরলো। আহাজারি করতে লাগলো।এসব সে মেনে নিতে পারছে না।মাথায় যে অসহনীয় পীড়া হচ্ছে!সব শোনার পর থেকে বুকটা ঝাঁজড়া হয়ে গেছে।এ যাতনা যে অদৃশ্য!কি করে কাউকে দেখাবে?বাবাকে থাকলে তো সব বুঝে যেত,কিছু বলার প্রয়োজনই তো না!সব ছেড়ে ছুঁড়ে পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে রেখার।এই মূহুর্তে শারাফকেও সহ্য হচ্ছে না।সবাই স্বার্থান্ধ। সবচেয়ে বেশি স্বার্থান্বেষী হলো নিধি মির্জা।তার প্রতি ঘৃণাও হচ্ছে ন।ঘৃণার করার মতো জায়গাটুকুও যে হৃদয়ে অবশিষ্ট নেই!চন্দ্ররেখা তো তারই অংশ।আর সেই লোকটার কথাই বা কি বলবে?নিজের ভাইকে কি করে ঠকাতে পারলো! ভাইয়ের স্ত্রীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক করতে কি একবারও বিবেকে বাঁধলো না!হঠাৎ করেই চন্দ্ররেখার সমস্ত শরীর ঘিন ঘিন করে উঠলো।নিজের সারা শরীরে এলোপাতাড়ি আঁচড় কাটতে লাগলো।নিজের হাতেই কামড় বসিয়ে দিলো।শারাফ তড়িঘড়ি করে এগিয়ে এলো। ঝাপটে ধরলো তার অপ্সরাকে।রেখার এই অবস্থার জন্য নিজেকে দ্বায়ী মনে হচ্ছে।মেয়েটি এতো নাজুক হয়ে পড়বে আগে কেন বুঝতে পারলো না সে?কি দরকার ছিলো সবকিছু সবার সামনে আনার!ঠিকঠাকই তো চলছিলো সব!এখন নিজের ওপর মেজাজ গরম হচ্ছে। এদিকে চন্দ্ররেখার যেন হুশ জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে।শারাফকে সকালের মতো পুনরায় এলোপাতাড়ি ভাবে আঘাত করতে লাগলো।শারাফের ধৈর্যের ভেঙে গেল।চোয়াল শক্ত হয়ে গেল।বিছানায় ছিঁটকে ফেললো চন্দ্ররেখাকে।নিজের সম্পূর্ণ ভর দিয়ে চন্দ্ররেখার ওপর চড়ে বসলো।বিবর্ণ চঞ্চুজোড়ায় নিজের ফ্যাসফ্যাসে ওষ্ঠ চেপে ধরলো।মিনিট খানেক পরই সরে এল।চন্দ্ররেখা বিস্ফোরিত দৃষ্টি তাকিয়ে রইল।চোখ মুখে এখন বিস্ময়!খানিক পূর্বের অস্থিরতা কেটে গেছে।শারাফ রেখাকে শক্ত করে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরলো।তারা উভয়ের জুড়ে জুড়ে শ্বাস নিচ্ছে।খানিক সময় চুপ রইল শারাফ।নিস্তব্ধতা ভেঙে এক সাগর সমান আকুলতা মাখিয়ে বলল,
-‘আমৃত্যু আপনাকে চাই।আপনি আমার একান্ত অনুরাগ।যা করেছি,সবই আপনাকে কাছে পেতে।ভীষণ ভালোবাসি আপনাকে।আপনার এই ঔদ্ধত্য আচরণে কষ্ট হচ্ছে আমার,নিদারুণ কষ্ট।’
শান্ত হয়ে গেল চন্দ্ররেখার।ভালোবাসি শব্দটা তার কানে পৌঁছুতেই,উত্তাল হৃদয় নীরব হয়ে গেছে।তার ছোট ছোট হাত দ্বারা শারাফ সুঠাম দেহ আঁকড়ে ধরলো।নিজ থেকে শারাফের পিঠে হাত রাখলো।বলিষ্ঠ বক্ষে মুখ গুঁজে পড়ে রইলো।
———
সকালের সেই ঘটনার পর থেকে হামিদ মির্জা কেমন মিইয়ে গেছেন।সন্ধ্যা হয়ে এসেছে।এখন অবদি এক ফোঁটা পানিও মুখে তুলেন নি।কাউকে কিছু বলছেনও না।স্বামীর এরূপ অবস্থা দেখে মোহিনী মির্জা ভীষণ অস্থির হয়ে আছেন।সবার ওপরে অযথা রেগে যাওয়া মানুষটা কেমন চুপসে গেছে।উপায় না পেয়ে মোহিনী মির্জা সুধা মির্জাকে ডেকে আনলেন।সুধা মির্জা কক্ষে প্রবেশ করতেই,দরজা ভিড়িয়ে মোহিনী মির্জা বেরিয়ে গেলেন।ভাইবোনের একান্তে থাকাটা জরুরি।এদের মাঝে নিজেরই থাকাটা অহেতুক!সুধা মির্জা ধীরে সুস্থে ভাইয়ের পাশে যেয়ে বসলেন।বোনের মুখের দিকে পলক বিহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন হামিদ মির্জা।সুধা মির্জাও বিমূঢ়।কোথা থেকে শুরু করবেন ভেবে পেলেন না!হামিদ মির্জাই নিজ থেকেই প্রথমে বলে উঠলেন।তার গলার স্বর ভঙ্গুর।
-‘নিধি কি করে পারলো?আমাদের মধ্যে তো সবচেয়ে বেশি বেপরোয়া ছিলি তুই।যেমন বেপরোয়া তেমন কঠিন!উড়নচণ্ডী ছিলো তোর চালচলন।সবসময় কোথাও না কোথাও অঘটন ঘটিয়ে ফেলতি।ছোট থেকে তোর স্বভাবে আমরা অসন্তোষ হলেও, বাবা বেশ খুশিই ছিলেন।সেজন্য তো চাঁদোয়া মহল তৈরি থেকে শুরু করে ইন্ডাস্ট্রির দায়িত্ব তোর ওপরে ন্যস্ত করেছিলেন।ভেবেছিলাম নিধি নিষ্পাপ,অবুঝ।না বুঝেই ভুল করেছে। তাজওয়ারের কথায় পালিয়ে যাওয়ার মতো অপরাধ করেছে।কিন্তু বাবার মৃত্যুর বিষয়টি মেনে নিতে পারি নি।রাগ হয়েছিলো ভীষণ।রাগ মিটতেই তো ছয়বছর পর ছুটে গিয়েছিলাম,ফিরিয়ে আনতে।তাজওয়ারের প্রতি ক্ষোভ থাকায় তার সব কথাই আমার কাছে অবিশ্বাস্য ঠেকেছিল সেদিন।খোঁজ খবর না নিয়ে মনের মাঝে ভুল ধারণা পুষে রেখেছিলাম এতোদিন।”
সুধা মির্জা হামিদ মির্জার হাতের উপর আলতো করে নিজের হাত রাখলেন।কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন,
-‘ভাইজান থাক এসব।যা হওয়ার তো হয়েই গেছে।’
-‘ঠিকি বলেছিস,যা হওয়ার হয়েই গেছে। কিন্তু সেই সাথে মেয়েটার প্রতি যে অন্যায়ও হয়ে গেলো!তুই সব জেনে কি করে চুপ থাকলি সুধা?একবারও তো বলতে পারতিস?এতোটাই ভরসার অযোগ্য আমি!মা তোকে কি দিয়ে,কি বলেছিলো তাই মেনে নিলি?নিজের গর্ভের সন্তানকে কি করে দূরে রাখলি এতো বছর?সত্যি বল তো,আর কি কি আড়ালে রেখেছিস?’
সুধা মির্জা চুপ করে রইলেন।যতোই মনে মনে কথা সাজাচ্ছেন ততোই এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।অস্বাভাবিকভাবে ঘামছেন তিনি।জোরে শ্বাস ছাড়লেন।
-‘ভাইজান,যা হয়েছে সব ভুলে যান।আমি চন্দ্ররেখার আর চাঁদোয়া মহলের সম্মানের কথা ভেবে এতোদিন আড়াল করে রেখেছিলাম।এখন চন্দ্ররেখাকে এ বাড়ির বউ হয়েই থাকবে,এতে আর কারো কোনোরূপ সমস্যা হবে না।আপনি নিজেই একবার ভাবুন আমার কাছে চন্দ্ররেখাকে নিয়ে এলে,ওর শৈশবটা কেমন করে অতিবাহিত হতো?বরং নিঃসঙ্গতা আমার মেয়েকে শক্ত হতে শিখিয়েছে।আমার একটাই অনুরোধ আপনি শুধু একবার আমার মেয়েটার সাথে কথা বলুন।এতেই সব ঠিক হয়ে যাবে।”
হামিদ মির্জা মাথা নাড়ালেন।মুখে বললেন,
-‘শুধু চন্দ্ররেখার সাথে না,তাজওয়ারের সাথেও আমার কথা বলা প্রয়োজন।সেদিনের ব্যবহারের জন্য আমি অনুতপ্ত।’
সুধা মির্জার বুক কেঁপে উঠলো।চোখ থেকে দুফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো। চোখের সামনে ভেসে উঠলো শয্যাশায়ী মানুষটার নির্মল চেহারা।তাজওয়ারের বর্তমান অবস্থার কথা কেন যেন বলতে ইচ্ছে হলো না।হামিদ মির্জা বোনের গালে লেগে থাকা অশ্রু নিজ হাতে মুছে দিলেন।ভাই হিসেবে তিনি সত্যি অধম!এতোকাল কাছে থেকেও বোনকে বুঝতে পারলেন না।মনের ভেতরটা আফসোসে পুড়ছে।সুধা মির্জা ফ্যালফ্যাল করে ভাইয়ের মলিন মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন।মানুষগুলোকে কি তিনি আবার ঠকাচ্ছেন?
——
আবছা অন্ধকার একটি কক্ষ।কক্ষের এক কোনায় ছোটখাট একটা ওয়াশরুম।খিড়কির চিহ্নটুকুও নেই।দিন না রাত বোঝা দ্বায়।মেঝেতে পুরনো,আধ ছেড়া চাদর বিছানো।সেই চাদরের ওপরে এলোমেলো হয়ে এক মহিলা শুয়ে আছে।পরনের পোশাকে ময়লা লেগে আছে। সেই সাথে হাত,পা,মুখের আশেপাশে ক্ষত হয়ে আছে।চুলে জট বেঁধে আছে,দেখে মনে হচ্ছে অনেক বছর চিরুনির ছোঁয়া পড়ে নি।দেখতেই অপ্রকৃতস্থ মনে হচ্ছে।মহিলাটির মাথার ওপরের দেয়ালে হলদে বর্ণের ক্ষীণ আলোর একটা টিউব লাইট জ্বলছে।হুট করেই কক্ষের উত্তর পাশের একটি দেয়াল অল্প একটু সরে গেল।অতিশয় দীর্ঘ পালোয়ান গোছের শরীরটাকে,দেয়ালের ফাঁকা দিয়ে কোনোরকমে ঠেলে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো একজন মানুষ।তার হাতে খাবারের প্লেট।মাক্স থাকার পরেও মৃদু ঝাঁঝালো গন্ধ তার নাকে এসে ধাক্কা মারছে।কারো পায়ের শব্দ পেয়ে মহিলাটি ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো।চোখ বোঝা অবস্থায় পাগলের মতো মাথা চুলকালো।তারপর অস্পষ্ট গলায় গুঙিয়ে গুঙিয়ে বলল,
-‘নিধি, নি…….ধি এসেছিস?দয়া করে আমাকে নিয়ে যা নিধি।নিয়ে যা!’
লোকটি খাবারের প্লেটটি মহিলাটির দিকে এগিয়ে দিলো। তারপর মাক্স থুতনিতে এনে বলল,
-‘নিধি মরে গেছে।তুমি মেরে ফেলেছ নিধিকে।’
কথাটি শুনে মহিলাটি হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো।চোখ থেকে এক ফোঁটা পানিও বের হলো না।কিছু সময় পরই কান্না থামিয়ে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো।তার মুখের ভাবভঙ্গি ভয়ংকর হয়ে উঠেছে।দাঁত কিড়মিড় দিয়ে বলল,
-“বেশ করেছি মেরে ফেলেছি।শান্তি লাগছে ভীষণ।একেবারে গোড়া থেকে ছেঁটে দিতে পারলে আরো শান্তি লাগতো।”
পালোয়ান সেই লোকটি কিছু বলল না। খাবারের প্লেটটি মেঝেতে রেখে বেরিয়ে গেলো।
চলবে
ভুল ত্রুটি থাকলে অবশ্যই জানাবেন।আজকের পর্ব বেশ বড় করেই দিয়েছি কিন্তু!সময়মতো রহস্য উম্মোচন করা হবে,আশা করি ধৈর্য সহকারেই পড়বেন।পরের পর্ব ইনশাআল্লাহ রবিবার দিবো।