#চাঁদোয়া_মহল
পর্বঃ২৬
#অত্রি_আকাঙ্ক্ষা
ফুসকা স্টলের ঠিক পাশে রাধাচূড়া গাছটি মাথা উঁচু করে গর্বের সাথে দাঁড়িয়ে আছে।সবুজ কিশলয়ের ফাঁকে ফাঁকে লুকিয়ে আছে অল্প সংখ্যক কুসুমরাজি।বাতাসের ঝাপটায় একটু পর পর হেলে দুলে আড়াল থেকে বেরিয়ে আসছে।মা মেয়ের খুনসুটিতে যেন তারাও সামিল হয়েছে।সুধা মির্জা পর পর দু প্লেট ফুসকা সাবাড় করে ফেলেছেন সেখানে দুটো ফুসকা মুখে দিয়ে চন্দ্ররেখার অবস্থা বেহাল।মুখ লাল হয়ে গেছে।চোখ থেকে পানি পড়ছে।মেয়েটা একেবারেই ঝাল খেতে পারে।হুবহু বাবার কার্বন কপি!সুধা মির্জা বিষন্ন চোখে মেয়ের দিকে তাকালেন।প্রেগন্যান্সির ৮ মাসের কিছু স্মৃতি,মগজ ঠিকরে আঁখিজোড়ার মাঝে ভেসে উঠতে চাচ্ছে। আশকারা দিলেন না।চোখ বুঁজে একবার মাথা ঝাঁকালেন।বুক ফুঁড়ে চাপা শ্বাস বেরিয়ে আসলো।চন্দ্ররেখার দিকে এগিয়ে গেলেন।গম্ভীর গলায় বললেন,
-“অনেক হয়েছে,আর খেতে হবে না।এবার অন্য কোথায়ও যাওয়া যাক।”
চন্দ্ররেখা ঠোঁট ফুলালো।মায়ের হাত থেকে পানির বোতল নিয়ে ঢকঢক করে পানি খেয়ে নিলো।সুধা মির্জা শাড়ির আঁচল দিয়ে চন্দ্ররেখার মুখ মুছে দিলেন।অতঃপর গাড়ির ড্রাইভিং সিটে যেয়ে বসে পড়েলেন।আচমকা রেখার বুকটা হাহাকার করে উঠলো।মা’য়ের ভালোবাসা বুঝি এমনই!একটুখানি স্পর্শে কি অদ্ভুত প্রশান্তি!জীবনের উনিশটা বছর এই ভালোবাসা, যত্ন,স্নেহ,আহ্লাদের জন্য কতোই না তড়পেছে সে!রেখার হুট করে নিজের মাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করলো।ইচ্ছে করলো নিজের সত্তার মাঝে মাকে মিশিয়ে নিতে।কি মনে করে নিজেকে সামলে নিলো সে।
বেশ দক্ষ হাতে গাড়ি চালাচ্ছেন সুধা মির্জা।পরনে লাইট গোল্ডেন রঙের বালুচরী শাড়ি।সাদা রঙের ব্লাউজের কারণের শাড়ির উজ্জ্বলতা যেন দ্বিগুণ বেড়ে গেছে।মাথায় সাদা রঙের হিজাব। চোখে ব্লু গ্রাডিয়েন্ট রঙের রে-ব্যানের রোদ চশমা।মুখে ভরাট গাম্ভীর্যের প্রতিফলন। সব মিলিয়ে বেশ দৃষ্টিকর্ষী লাগছে।রেখার বিমোহিত চোখে তাকিয়ে রইল তার মায়ের দিকে।সে ভেবে অবাক হয় কি করে,সবার আড়ালে তাকে জন্ম দিয়ে এক বছর আগলে রেখেছে তার মা!এছাড়া মির্জা ইন্ডাস্ট্রির বর্তমান সফলতার সম্পূর্ণ ক্রেডিটও তার মায়ের।একজন নারী কতোটা স্ট্রং হলে,মনের মাঝে পীড়াদায়ক স্মৃতি রেখে সাফল্য অর্জন করতে পারে!!চন্দ্ররেখার কাছে তার মা, রাশিয়ান লাস্ট এমপ্রেস ক্যাথরিন দ্যা গ্রেটের তুলনায় কোনো অংশে কম নয়।মনে মনে বেশ গর্ববোধ করলো।পর মূহুর্তে ভাবলো তার বাবা ভুল একজন মানুষকে ভালো না বাসলেও কি হতো?তাদের জীবনটা কি সুন্দর হতে পারতো না?
-ম্যাক্সিকান ফুড কখনো ট্রাই করেছো?
চন্দ্ররেখা নিজের ভাবনা থেকে বের হয়ে মাথা নাড়ালো। সুধা মির্জা মৃদু হেঁসে বললেন,
-“ঝিল্লিপুরে রিসেন্টলি একটা নতুন ফুড কর্ণার ওপেন হয়েছে।শুনেছি তাদের কোয়ালিটি বেশ ভালো।আমরা ওইখানেই যাচ্ছি।”
রেখা কেবল মুচকি হাসলো।সুধা মির্জা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লেন।চন্দ্ররেখার সাথে স্বাভাবিক মায়েদের মতো আচরণ করতে না পারার ব্যর্থতা তাকে ভীষণ কষ্ট দেয়।
সন্তান বড় হয়ে গেলে এমনিতেই মা-বাবার সাথে দূরত্ব বেড়ে যায়।সেখানে দীর্ঘ উনিশ বছর ধরে অল্প অল্প করে জমতে থাকা দূরত্ব!যা এখন পাহাড় সমান। চাইলেই কি সহজেই জড়তা কাটিয়ে উঠা যায়।তিনি তো প্রথম ভেবেই নিয়েছিলেন রেখা তাকে ভুল বুঝবে।অথচ তার ভাবনা বদলে কতো নির্দ্বিধায় মেনে নিলো!এদিকে তিনি বেশ সৌভাগ্য বহন করেন।যদিও সবকিছুর কৃতিত্ব একমাত্র শারাফের। সুধা মির্জা ছেলেটির কাছে আজীবন ঋণী।চন্দ্ররেখার জন্য আজকাল একদমই চিন্তা হয় না।শারাফের কাছে মেয়েটি সবচেয়ে বেশি সুরক্ষিত।আপাদমস্তক দায়িত্বশীল একজন ছেলে।বিশেষত চন্দ্ররেখার প্রতি।
————
-“টু সিজার সালাদ,টু ম্যাক্সি কান চিকেন টাকোস,ওয়ান মাইল্ড স্পাইসি নাচোস।”
-“ওকে ম্যাম।খাবার আসার পর্যন্ত আপনি আমাদের ওয়েলকাম ড্রিংস এনজয় করুন। ”
-“সিউর।”
ওয়েটারকে বিদায় দিয়ে সুধা মির্জা চন্দ্ররেখার দিকে তাকালেন।শিশুসুলভ মায়াবী চেহারার মাঝে কি অদ্ভুত ধরনের শান্তি!রেখা আশপাশের মানুষদের অবলোকন করছে।দূরের একটা টেবিলে তার চোখ আঁটকে গেল।একজোড়া কাপল। ছেলেটি যত্নসহকারে মেয়েটির মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে!শারাফের রাশভারী চেহারা ও ভালোবাসা পূর্ণ নিস্প্রাণ চোখ দুটি রেখার চোখের সামনে ভেসে উঠলো।তার নিজস্ব পুরুষটি বিগত দেড়মাসে কতশত বার এভাবে মুখে তুলে খাইয়ে দিয়েছে!মানুষটা এতোই আপন হয়ে গেলে যে দিনরাত মস্তিষ্কে বিরাজিত।
-“শারাফকে ফোন দিয়ে আসতে বলবো?”
রেখার গাল ক্রমশ লাল হয়ে উঠলো।মনে মনে প্রবোধ গুনলো।ইসস,মা বুঝে গিয়েছে!সেকেন্ডে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিলো চন্দ্ররেখা।চওড়া হাসি দিয়ে বলল,
-“কোনো দরকার নেই….. মা।টুডে ইজ আওয়ার ডে।আমাদের মাঝে কেউ এলাউ না।”
সুধা মির্জা চুপ রইলেন।তার মেয়েটা যে শারাফের প্রতি দূর্বল হয়ে পড়েছে বুঝতে পারলেন তিনি।মনে মনে দুজনের জন্য অজস্র দোয়া করলেন।
——–
“ঝিল্লিপুর মহিলা কল্যাণ পরিষদ” গাড়িতে বসে থেকে সাইনবোর্ডের লেখাটি মনে মনে কয়েবার আওড়ালো।গেইটের বাহিরে এক পাশে গাড়ি পার্ক করলেন সুধা মির্জা। গটগট শব্দ করে ভেতরে প্রবেশ করলেন।চন্দ্ররেখা তার পাঁচ ফুট তিন ইঞ্চির শরীর নিয়ে মায়ের পেছন পেছন হাঁটা ধরলো।তাদের দেখে বজলু তার অতিশয় দেহ এগিয়ে এলো।
আধপাকা ঘর।বেশ লম্বা, অনেকটা স্কুলের ন্যায়। হাঁটা চলার রাস্তা মাঝে। উভয় পাশে সারি সারি কক্ষ।রেখার চোখ ডান পাশের একটা কক্ষ ওপরে আটকালো।দরজার বাহিরের দেয়ালে লেখা অফিস রুম।সুধা মির্জা চন্দ্ররেখার হাত ধরে বাম পাশের প্রথম কক্ষে প্রবেশ করলেন।হলরুমে ন্যায় বেশ বড় কামরা।সেখানে পৌঁছে চন্দ্ররেখার মনে হলো সে একটা ফুলবাগানে ঢুকে পড়েছে।ছোট ছোট বাচ্চাগুলো এক একটা ভিন্ন ভিন্ন ধরনের ফুলগাছ।এদের অধিকাংশের বয়স আনুমানিক ছয় থেকে বারো।কথায় কথায় জানতে পারলো এদের প্রায় সকলেই পথ শিশু,আর গুটি কয়েকজনের অভিভাবক নিরুদ্দেশ!এদের সকলের আক্ষরিক শিক্ষার পাশাপাশি থাকা,খাওয়াসহ সমস্ত মৌলিক অধিকারের দায়িত্ব সুধা মির্জার।পরপর তিনটি কক্ষে মোট ত্রিশজন শিশু রয়েছে।শেষের দিকের কক্ষগুলোতে বিবধা,ডিভোর্সি মহিলাদের জন্য প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা রয়েছে।হস্তশিল্প, কুটিরশিল্প, সেলাইয়ের পাশাপাশি গৃহপালিত পশুপালনের ট্রেনিংও দেওয়া হয়।প্রায় দেড়শত জন নারী এই পরিষদের সদস্য। সভাপতি হিসেবে সুধা মির্জা এসব অসহায় নারীদের তৈরিকৃত পণ্য শহরের বিভিন্ন শো-রুমেে বাজারজাত করার সম্পূর্ণ দায়িত্বের পাশাপাশি ন্যায্যমূল্য আদায়ের দিকটিও খেয়াল রাখেন তিনি।তার হয়ে সব কাজ করে বজলু।সুধা মির্জার অবর্তমানে সবকিছুর দায়িত্ব বজলুর।
উপস্থিত মহিলারা চন্দ্ররেখাকে দেখে এক প্রকার আবিভূত।মসৃণ তকতকে মায়াবী চেহারার মেয়েটি দেখে কয়জনের চোখ জ্বলে উঠলো।কাজলকালো চোখ দুটির অন্তর্ভেদী চাহনি!সবার ভেতরটা যেন পড়ে ফেলছে!সুধা মির্জার পরে চন্দ্ররেখা দ্বিতীয় নারী যার ব্যক্তিত্বে তারা আকৃষ্ট হয়েছে।চন্দ্ররেখাকে সুধা মির্জা বাড়ির বড় বউ বলে সকলের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন।কয়েকদিন আগের সেই ত্রিশ বছর বয়সী মহিলাটি এগিয়ে এলেন।মহিলাটির নাম আসমা।চন্দ্ররেখার হাত ধরে ছলছল কন্ঠে বললেন,
-“বড়মা,আমগো সবার লইগা অনেক কিছু জন্য কিছু করছে।নতুন বউ তুমি!তোমারে দেওয়ায় মতো আমাগো কাছে কিছুই নাই।সবার হইয়া আমি তোমারে দো’আ দিলাম।তোমার স্বামী নিয়ে সুখে থাকো।আল্লাহ তোমার হেফাজত করুন।”
চন্দ্ররেখার অন্তরিন্দ্রিয় দর্পে ফুুলে ফেপে উঠলো।এমন একজন নারীর সন্তান সে!চিত্তে আলাদা এক সুখ শিরশিরিয়ে উঠলো।
—–
সবার সাথে পরিচয় করিয়ে চন্দ্ররেখার নিয়ে অফিস কক্ষের দিকে গেলেন।এই রুমে সুধা মির্জা ও বজলু ছাড়া পারমিশন ব্যতিত সকলের আশা নিষেধ।ভেতরে ঢুকে থমকে গেলেন সুধা মির্জা।পুুরো অফিস কক্ষ এলোমেলো হয়ে আছে।জায়গায় জায়গায় কাগজের ছড়াছড়ি!এক কোনায় থাকা আলামারি স্যাট করে খোলা।সেটার অবস্থা আরো করুণ।সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে আছেন ইন্সপেক্টর মশিউর রহমান।তার পাশে সাব- ইন্সপেক্টর আকরাম অসহায় চোখে তাকিয়ে আছেন।আরেকজন হাবিলদার সুধা মির্জার লেপটপে চেক করতে মত্ত। মশিউর রহমানের হাতে নীল রঙের একটা ফাইল।সুধা মির্জার ভেতরটা হালকা কেঁপে উঠলো।তিনি পেছনে ঘুরলেন।রেখা এখনো ভেতরে প্রবেশ করে নি।চন্দ্ররেখার গালে হাত রেখে নরম স্বরে বললেন,
-“তুমি বাহিরের বাগানে অপেক্ষা করো…কেমন?এখানে অনেক দূর্গন্ধ।আমি পরিষ্কার করে আসছি।”
সুধা মির্জা শেষ কথাটি মশিউর রহমানের কানে যেতে তিনি চট করে উঠে দাঁড়ালেন।কথাটি যে তার উদ্দেশ্য বলা তিনি বুঝতে পারলেন।হাত মুঠ করে রাগ আয়ত্তে আনার চেষ্টা করলেন।
সুধা মির্জার কথার প্রেক্ষিতে চন্দ্ররেখা কিন্তু বলতে চাইলো।সুধা মির্জা বজলুকে চোখ দিয়ে ইশারা করলেন।বজলু চন্দ্ররেখার দিকে তাকিয়ে উৎফুল্ল কন্ঠে বলল,
-“নতুন বউ চলেন।আপনারে নিয়ে বাচ্চাদের নিজস্ব পার্কে ঘুরিয়ে আনি।আমার নিজ হাতে সাজাইছি।দেইখা বলবেন কেমন হয়েছে।”
চন্দ্ররেখার তার দ্বিগুণ বয়সী একজন মানুষকে মুখের ওপর না করতে পারলো না।সুধা মির্জার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেঁসে বজলুর পেছন পেছন হাঁটা ধরলো।চন্দ্ররেখা প্রস্থান করতে সুধা মির্জার মুখে যথারীতি গাম্ভীর্য ভর করলো।
——-
-“বাহ!বাড়ির বউয়ের জন্য এতো মহব্বত?মনে হচ্ছে আপনার নিজের সন্তান।ওপপস….সরি আপনি যে অবিবাহিতা ভুলেই গিয়েছিলাম।নাকি আপনার……”
ইন্সপেক্টরের সূক্ষ্ম নোংরা ইঙ্গিত বুঝতে পেরে সুধা মির্জার চোখের কোণা লাল হয়ে এলো।ঠিক এই ভয়ে তিনি চন্দ্ররেখাকে এতোদিন সবার আড়ালে রেখেছন।সুধা মির্জা হিমশীতল চোখে তাকিয়ে রইলেন।মশিউর রহমান যেন আশকারা পেয়েই বসলেন।নীল রঙের সেই ফাইলটি সুধা মির্জা মুখের সামনে ধরে বললেন,
–“ঝিল্লিপুরে বিগত দশ বছরের নিরুদ্দেশ পঁচিশ জনের মধ্যে বিশজনের নামসহ বিভিন্ন ডিটেইলস এই ফাইলে এলো কি করে?লিস্ট বানিয়ে গুম করেছেন,নাকি গুম করে লিস্ট বানিয়েছেন?”
সুধা মির্জা নির্লিপ্ত রইলেন।মশিউর রহমানের মুখে স্পষ্ট পরিহাস।ভ্রু নাচিয়ে প্রশ্ন করলেন,
-“সত্যি করে বলুন তো ম্যাডাম কি করেছেন তাদের সাথে?দেশের বাহিরে তাদের অর্গান সাপ্লাই করেছেন?”
-“অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এই পরিষদ গড়ে তোলা হয়েছে।নিরুদ্দেশ মানুষের বেশির ভাগই কর্মক্ষম ছিলো।আপনি আমাদের ওপরে বিনা প্রমাণে এভাবে কোনো মিথ্যা আরোপ দিতে পারেন না।জানি না, কার কথায় আপনারা এমন করছেন!এই পরিষদের কোনো বেড রেকর্ড নেই। আমি আমার চিন্তা করি না।সব চিন্তা এখানকার মানুষদের নিয়ে।অবশ্য আপনি কিছু করলে এখানকার একজনও চুপ থাকবে না।আশা করি, যা করার বুঝে শুনেই করবেন।
এতোক্ষণে মুখ খুললেন সুধা মির্জা।প্রথমে নমনীয় স্বরে কথা বললেও,শেষ কথাটা বেশ রহস্যময় ভঙ্গিতে বললেন। মশিউর রহমান কিছুটা দমে গেলেন।তারপর সময় নিয়ে দাঁত চেপে বললেন,
-“আপনি বেশ ধুরন্ধর মহিলা।মানুষকে খুব সহজে নিজের জ্বালে ফাঁসাতে পারেন।আপনাকে আমি অতি শীঘ্রই দেখে নিবো।এই পরিষদ বন্ধ করেই আমি দম নিবো।”
আচমকা অফিস রুমে দশ বারোজন মহিলা এসে উপস্থিত হলো।তাদের সবার হাতে একটি করে জুতা।এরা সকলেই এই পরিষদের সদস্য। এর মধ্যে দীর্ঘকায় স্বাস্থ্যবান পয়ত্রিশ বছর বয়সী মহিলা একজন মহিলা চিৎকার করে উঠলো,
-“বড় মায়ের নামের আর একটা কথা বললে জীভ ছিড়ে ফেলবো। মেয়ে মানুষ ভেবে দমিয়ে রাখতে চান আমাদের?আমাদের জীবন দিয়ে দিবো,তবুও এই সমিতির কিছুই হতে দিবো না।নারীদের সাফল্য আপনাদের সহ্য হয় না?বহুত হয়েছে,অনেক বলেছেন আমাদের বড় মায়ের নামে। সাহস থাকলে আমাদের দমিয়ে দেখান।”
–“হে, হে দমিয়ে দেখান।’
আরো পাঁচ ছয় জন মহিলা চিৎকার করে উঠলো।মশিউর রহমান হতভম্ব হয়ে গেলেন।তার চোখজোড়া চঞ্চল হয়ে উঠলো।যা বোঝার বুঝে গেলেন।যে করেই হোক এই সুধা মির্জাকে হাতে নাতে ধরতে হবে। কিছু না বলে,তিনি তাৎক্ষণাৎ বেরিয়ে গেলেন।সুধা মির্জার ঠোঁটে তীর্যক হাসি খেলে গেল।কোথায় কি করতে হয়,তার খুব ভালো করে জানা আছে।সব জায়গায় সেন্টিমেন্টাল হওয়া চলে না।কিছু কিছু বিষয় শান্তভাবেও হ্যান্ডেল করা যায়।
—–
-“আপনার জন্য আমার বেশ কষ্ট হয়…..নতুন বউ।সামনে অনেক বড় বিপদ আসতে চলছে।একটু সতর্ক থাকবেন।”
বজলু রেখার দিকে একটা গোলাপ এগিয়ে দিতে দিতে বললেন।এমন ঠান্ডা নিষ্প্রাণ হুমকির কন্ঠে চন্দ্ররেখার হৃদয় অজানা আতংকে শিরশির করে উঠলো।মুখ রক্ত শূন্য হয়ে গেল।বুকের ভেতরটা ধড়ফড় করলে উঠলো।একটু আগেই সে বজলু গাছ থেকে একটা গোলাপ তুলে দিতে বলেছিলো।সেই গোলাপটিকে তার বিষপূর্ণ মনে হতে লাগলো।যেন একবার স্পর্শ করলেই সে চিরকালের জন্য বিষাক্রান্ত হয়ে পড়বে।রেখার মনে হলো বজলু ঠোঁটের ওপরে থাকা গোঁফগুলো যেন জলজ্যান্ত সাপ।পাঞ্জাবি পড়া,গুন্ডাগোছের এই লোককে দেখে রেখার ভীষণ ভয় হতে লাগলো।
চলবে
পরের পর্ব ইনশাআল্লাহ বৃহস্পতিবার দিবো।ভুল-ত্রুটি অবশ্যই তুলে ধরবেন।