#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো
#পর্বঃ৪
#jhorna_islam
গ্রামের পরিবেশ টা শহর থেকে সবসময়ই আলাদা।বাতাসে মুক্ত ভাবে স্বাস নেওয়া যায়।শহুরে জীবনযাত্রার মতো হয়তো এতো আধুনিকতার ছোঁয়া নেই।কিন্তু মুক্ত বাতাস,,,,নিরিবিলি পরিবেশ,,, বাতাসে অন্য রকম ছোয়া রয়েছে।
সোহার বাবা পাবন মিয়া গ্রামের একজন সহজ সরল লোক।গ্রামে উনাকে তার সরলতা,ও পরোপকারী মনোভাবের জন্য সবাই পছন্দ করেন। গ্রামের অল্প শিক্ষিত লোক হলেও উনার কথা বলার ধরণ, চালচলণে একটা আভিজাত্যের ছাপ রয়েছে।খুবই রুচিসম্মত মানুষ।নিজের বাড়িটাও রুচিসম্মত ভাবে তৈরি করেছেন।মেয়ে গুলোকে শিক্ষিত করেছেন।যদিও বড় মেয়েকে বেশি পড়ানো হয়নি।মাত্র দশম শ্রেণি পর্যন্ত পরিয়েছিলেন।
বড় মেয়ে নোহাটার সে কি শখ ছিল পড়াশোনা করে কিছু একটা করার।কিন্তু পাবন মিয়া তখন কি যে হয়েছিল।নোহার শশুর ও গ্রামের কিছু মানুষের প্ররো’চনায় পড়ে জীবনের বড় ভুলটা করলেন।প্রথমে নোহার শশুর গনি মেম্বার আর স্বামী ওমি ভালো রূপ দেখিয়ে বিয়ে করে। এখন মেয়ের সাথে অশান্তি করে।মা’রধর করে। এই অত্যাচার মুখ ব’ন্ধ করে হজম করে নেয় নোহা।বাবার উপর বিয়ে দেওয়া নিয়ে প্রথম থেকেই রাগ।তাই জেদ ধরে ওখানে পরে আছে।
পাবন মিয়ার সাথে কথাও বলেনা ভালো করে।অথচ দুই মেয়ে বাবা ছাড়া কিছুই বুঝতোনা।
এসবই বাড়ির পাশের বটগাছের নিচে বসে বসে ভাবতেছিলেন পাবন মিয়া।সোহার মা রমিলা সোহার বাবাকে খুজতে খুজতে এসে দেখেন,,, পাবন মিয়া সামনের দিকে তাকিয়ে কি যেনো ভাবছেন। অবশ্য রমিলার বুঝতে বাকি নেই উনি কি ভাবছেন।
” কি গো এখানে এই ভরদুপুর বেলা বসে আছো কেনো? খাওয়া দাওয়া বলে যে একটা কিছু আছে মাথায় আছে?”
মিলা পাশে একটু বসো।
সোহার মা কথা বাড়ায় না চুপচাপ পাশে বসে পাবন মিয়ার কাঁধে হাত রাখে।
মেয়েদের কথা ভাবছো?
ফোন করলেইতো পারো।সোহাটার সাথে কথা বলিয়ে দেওনা।মেয়েটা নতুন পরিবেশে গেছে মানিয়ে নিতে পেরেছে কিনা কে জানে? তাও যে চঞ্চল স্বভাবের ওরে নিয়া ব’ড্ড ভ’য়। আমার নোহাটা যেমন শান্ত শিষ্ট। সোহাটা তেমনই চঞ্চল।
“আমি কি আবারো আমার ছোটো মেয়ের সাথে একই ভুল করলাম নোহার মা?”
এসব তুমি কি বলতেছো?
এসব আজে’বা’জে ভাবনা মাথায় আইনো নাতো। বাড়ি চলো।তুমি দেইখো আমাদের দুই মেয়েই একদিন অনেক সুখি হবে।বাবা মার দোয়া বিফলে যাবে না।এখন বাড়ি চলো খাবে।পরে দুই মেয়েকেই ফোন দিয়ে কথা বলবে।মনটা হালকা লাগবে।
হুম চলো! একটা দীর্ঘস্বাস ফেলে উঠে দাড়ান দু-জনেই।
———————————
দুপুরের খাবার খেয়ে দায়ান নিজের রুমে কাজ করতেছিল।এমন টাইমে রুশের কল আসে।
হ্যা রুশ বল।বাসায় পৌঁছেছিস?
– হুম স্যার থু’রি দোস্ত!কিছুক্ষন আগেই। এসে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে,,, এখন তোকে কল দিলাম।
-ওহ আচ্ছা। কাল তর অফিসে আসা লাগবোনা।একদিন রেস্ট নে।
– কিন্তু অনেক কাজ জমে গেছে,,,,,,,আর কিছু বলার আগেই দায়ান বলল।
-চুপ থাক বেটা একদিন রেস্ট নে।
– আচ্ছা তুই যা ভালো মনে করিস।
– হুম।আর শুন একটা কথা!
– হ্যা বল।
– ভালো একটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের খোঁজ নিয়ে আমাকে জানা।
– তুই কি আবার পড়াশোনা করবি নাকি?বুইড়া বয়সে তর আবার পড়তে মন চাইলো দোস্ত? কোথায় এই বয়সে বা’চ্চা পয়’দা করবি।তাদের ভর্তি করবি তা না,,,,,,মজার ছলে বলে রুশ।
-শাট-আপ ইডিয়ট। মজা করবিনা একদম।আমি মজার মোডে নাই।সোহার জন্য বলছি।
– ওহ তাই বল। ভাবিকে ট্রান্সফার করবি?ভাবির সাথে মিট করতে পারলামনা। তর বাসায় দাওয়াত দে তাড়াতাড়ি। ভাবির হাতে রান্না খাবো।
– এসব বাদ দে।তুই জানিস বিয়ে টা কি পরিস্থিতি তে করতে হয়েছে আমায়। আমি চাই মেয়েটা নিজের পায়ে দাড়াক।এবং নিজের লাইফটা গুছিয়ে নেক।আমার কাছে থাকলে লাইফটা ন’ষ্ট হয়ে যাবে। আমি এই জীবনে আর কাউকে জায়গা দিতে চাইনা।
– নিজের লাইফ কে একটা সুযোগ তো দে।দেখবি ঠ’কবি না।আর সবাইতো এক না।লাইফে বেঁচে থাকার জন্য কেউ একজন দরকার।একা কখনো বেঁচে থাকা যায় না।লাইফটা তোকে সে সুযোগ করে দিয়েছে।হেলায় হারাস না।আর ও গ্রামের সহজ সরল মেয়ে।এতো কুটিলতা নেই।নাহয় নিজের মনের মতো গড়ে নিবি। তর চাচার প্রতি আমি কৃ’তজ্ঞ। উনি একদম ঠিক করেছেন।আর উনি অনেক বুঝদার মানুষ।হয়তো কিছু আ’চ করতে পেরেই তোকে তাড়াতাড়ি বিয়ে করিয়েছে।তর চাচি যেই কু’টিল মহিলা।আমি সিউর কিছু খিচুড়ি পাকিয়েছিলো। সাথে তার ঐ নে’কি মেয়ে তো আছেই।
অফ যা ভাই।এসব পে’রা ভালো লাগে না। তোরে যা বলছি তা কর। নয়তো পড়ে লেট হয়ে যাবে।এমনিতেই এই মেয়ে পড়া চো*র যা বোঝলাম।
আহারে ভাবির নামে এসব বলিস না দোস্ত।
ঠিকই বলছি।এই মেয়ে কি বলে জানিস? বলে কিনা ভেবেছে বিয়ে হয়ে গেছে বলে আর পড়তে হবে না।আর এতো পড়াশোনা করে কি হবে? বাচ্চা মানুষ করার জন্য যতটুকু দরকার তার আছেই।বুঝতে পারছিস কেমন পাকা?
রুশ এসব কথা শুনে হো হো করে হেসে দিল।দোস্ত ভাবিতো সুপার ফাস্ট। বসে আছিস কেনো? প্লে’নিং শুরু করে দে।আহা চাচচু ডাক শোনার জন্য মনটা আমার আকু’পাকু করছে।
দায়ান দাঁত কির’মির করে বললো ফাইজলামি করিস?
না দোস্ত মাফ চাই।আমার ভুল হয়ে গেছে।
আর আমি ভার্সিটির খোঁজ নিবো।
হুম বায়।টেক কেয়ার।
বায়।
রুশ ফোন রেখে বলল,,,,,তুমি বুঝতে পারছোনা বন্ধু একদিন এই মেয়ের মায়ার অতলে তুমি তলিয়ে যাবে।শুধু সময়ের অপেক্ষা।
————————-
জানালার ধারে দাঁড়িয়ে একমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে নোহা।জী’বন্ত লা/শ হয়ে বেঁ’চে আছে।ভিতরটা
র/ক্তাক্ত। জীবন টা কোনো রকম ব’য়ে বেড়াচ্ছে।
নিজের আদরের ছোট বোনের বিয়েতেও উপস্থিত থাকতে পারেনি।এই ন*র’পি/শাচ দের জন্য।
আল্লাহ তুমি আর যাই করো, আমার বোনরে আমার মতো ক’পাল পু/ড়ি হত’ভা’গি করো না।ও যেনো অন্তত সুখি হয়।আমার এইটাই চাওয়া।
তখনই পিছন থেকে কারো কথা শুনে বা’স্তবে ফিরে আসে।
কিরে জমি’দাররের বে’টি। তর বাপ কি তর জন্য দা*সী নিযু’ক্ত করে দিয়ে গেছে? তুই যেনো পায়ের উপর পা তুলে বসে থাকতে পারিস? সারাদিন তো বসে বসে আমার ছেলের টাকায় গি’লিস।তুই বুঝবি কি?
কি দেখে যে এই মেয়েরে বাপ ছেলে পছন্দ করে ঘরে তুলল।
না আছে রূপ,,,না আছে গুণ।আমার সা*ধের সংসারটার উট’কো ঝা’মেলা একটা।
নোহা কথা বাড়ালোনা। কোনো উত্তর ও করলোনা।এসব নিত্য দিনই চলছে অ’ভ্যাস হয়ে গেছে। এখন আর খারাপ লাগে না।৷৷ মেয়েদের আসল ভরসার জায়গা হচ্ছে তার স্বামী। সে যখন পাশে থাকে শশুর বাড়ির লোক যেমনই হোক,,যতো কথাই বলোক গায়ে লাগে না।অন্তত দিন শেষে মানুষটার বু’কে মাথা তো রাখা যায় শান্তিতে। তখন সব কষ্ট আর গায়ে লাগে না। কিন্তু নোহার তো একটাও নেই সে যে জনম দুঃখী। তাই চুপচাপ কাজ করতে চলে গেলো।
এখনতো শাশুড়ী খালি কথার বা/ণ ছুড়েছে।রাতে তার থেকেও বেশি কিছু অপেক্ষা করছে।স্বামী নামক ব্যাক্তি টা নোহার কাছে আ’তংক। এমন কোনো অ’ত্যা’চার নাই শরীরটার উপর করেনি। প্রতিদিন নতুন নতুন শা’স্তি আহা জীবন।
বাবার উপর খুব অভিমান জমে আছে নোহার।সে তো এতো তাড়াতাড়ি সংসার জীবনে ঢুকতে চায়নি।পড়াশোনা করতে চেয়েছিল।পড়াশোনায় অনেক ভালো ছিল।কিন্ত বাবা বিয়ে দিয়ে দিল।বাবার সাথে অভিমান করে ভালো করে কথাও বলে না।মা-বাবা এদের এমন সব কাজের কথা জেনে নিয়ে যেতে চেয়েছিল।যায়নি নোহা।অভিমানের পাল্লা টা একটু বেশিই ভা’রি।
তাছাড়া বাড়িতে একটা বোন রয়েছে।তাকে তো কথা শুনাবেই।বোনটাকেও তার জন্য ভো’গতে হতো।নানান জনের নানান কথা।নিজের শরীরেতো সয়ে গেছে।বোনটার কোমল মন সইতে পারতোনা। বোনটা যে যেমন চ’ঞ্চল তেমনই নরম মনের। মানুষের কথার বি/ষ অনেক। তাই এসব সহ্য করে পড়ে আছে।দেখা যাক কতোদিন টিকতে পারে।
——————————
সোহা গুন গুন করে গান গাইছে,আর চুলে চিরুনি চালাচ্ছে।
উফ মা কই তুমি? দেখো তোমার মেয়ে তোমার সাধের চুলের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে এই কয়দিনে। আমি কি এসবের যত্ন নিতে জানি নাকি।অসহ্য! আহারে আমার অসহায় চুল গুলা রাগ করিস নারে।
আহারে বিয়ের আগে মা যখন বলতো চুলের যত্ন নে।এখন না হয় আমি করে দিচ্ছি বিয়ের পর কে করে দিবে? তখন আমি কতোইনা বড় মুখ করে বলতাম,,,,এখন এই চুলের দায়িত্ব তুমি নেও।বিয়ের পর তোমার মেয়ের জামাই নিবে।
এজন্যই পাশের বাসার দাদি বলতো, এতো স্বপ্ন দেখিস না’লো ছু’রি।জামাইর হাতের যখন কি’ল ঘু*সি পড়বো তহন বোঝবা’লো কি মজা! সব রঙ ঢ’ঙের পিরিত উইড়া যাইবো।এসব ভাবতেই মনটা দুঃখী হয়ে গেলো সোহার।শ*য়তান বু’ড়ি মনে হয় অভিশাপ দিছে।
এসব ভাবনার মাঝেই বিছানায় রাখা ফোনটা বেজে ওঠে। চ’মকে ফোনের দিকে তাকিয়ে এগিয়ে গিয়ে ফোনটা হাতে নেয়।তখনই দেখতে পায়,,,,,,,,,,,,,,,
#চলবে#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো
#পর্বঃ৫
#Jhorna_Islam
গ্রামের খোলামেলা পরিবেশে যাদের থেকে অভ্যাস।তারা বুঝে শহুরে চার দেয়ালে ব’ন্ধি জীবন কাটানো কতোটা ক’ষ্টের।
সোহা ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে, সোহার বাবা কল করেছে।
সোহাকে আর পায় কে? খুশিতে লু’ঙ্গি ডা’ন্স দিতে ইচ্ছে করতেছে।
তাড়াতাড়ি ফোনটা রিসিভ করে।ঐপাশ থেকে কিছু বলার আগেই,,,,, হ্যালো আব্বু ভালো আছো? আম্মু কেমন আছে?আপু কি আমায় ভুলে গেছে? তোমাদের কতো মিস করেছি আমি।আমার গ্রামটাকে মিস করছি খুব।ঠোঁট উল্টে ধরা গলায় বলে সোহা।
ছোটো আম্মা আ’স্তে । এতো কথা একবারে কেউ জানতে চায়? কোনটা রেখে কোনটার উত্তর দিবো? ধীরে ধীরে বলো সব উত্তর দিবো।আমিতো পালিয়ে যাইতেছিনা।
পাশে বসে সোহার মা মেয়ের এতো কিছু একবারে জি’জ্ঞেস করা দেখে মিটমিটিয়ে হাসে। মেয়েটা তার অবুঝ ই রয়ে গেলো।
“বাবার কথা শুনে সোহা মাথায় টোকা মারে।”
এবার আপনার সব উত্তর দিতেছি।আমি ভালো আছি।আপনার আম্মা ও ভালো আছে।আমি আর আপনার আম্মা একসাথেই বসে আছি।আর আপনার সব কথাই শুনতে পাচ্ছে। আমরাও আপনাকে অনেক অনেক মিস করতেছি। বলেই দ’ম নেয় পাবন মিয়া।
হু।খাইছো তোমরা?
হ্যা ছোটো আম্মা খেয়েই আপনাকে কল করলাম।
আপনি খাইছেন?
খেয়েছি।মায়ের হাতের রান্না করা খাবার খুব মিস করি।
এবার সোহার মা বলে।এখন একটু আধটু মিস করবিই।ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে। আর বাড়িতে আসলে তর সব পছন্দের খাবার রান্না করে খাওয়াবো।ঠিক আছে?
হুম।ছোটো করে উত্তর দেয় সোহা।
পাবন মিয়া এবার একটু সিরিয়াস ভাবে জানতে চায়,,,,,ছোটো আম্মা আপনি ভালো আছেন তো? জামাই বাবা আপনাকে কোনো কষ্ট দেয় না তো? সব ঠিকঠাক?
সোহা এবার একটা শুকনো ঢু’ক গিলে। বাবাকে এখন এসব কিছু বলা যাবেনা।দায়ান যে তাকে মেনে নেয়নি।এমনিতেই বড় আপু কে নিয়ে বাবা সারাক্ষণ টেনশন করেন।আপু যে বাবার উপর বিয়ে নিয়ে অভিমান করে আছে এটা সোহা জানে।কিন্তু নোহাকে যে ঐ বাড়িতে অত্যা’চার করা হয় সে জানে না।জানলে হয়তো নোহার স্বা’মী কে মে’রেই ফেলতো।
না আব্বা। আমি খুব ভালো আছি।উনি খুব ভালো মানুষ। আমার অনেক খেয়াল রাখে।
পাবন মিয়া এবার হাফ ছাড়ে।যাক তার ছোট মেয়ে ভালো আছে।ছোট মেয়েকে নিয়ে এবার নিশ্চি’ন্ত তিনি।
যানো বাবা উনি নাকি আমাকে এখানকার ভার্সিটিতে ভর্তি করে দিবে।
এটাতো খুব ভালো খবর ছোটো আম্মা।
আর ভালো! পে’রা মিনমিনিয়ে বলে সোহা।
সোহা মা ভালো ভাবে ভালো মেয়ে হয়ে থাকবি।জামাই বাবার য’ত্ন নিবি। জামাইকে কষ্ট দিবি না।মনে রাখবি মা-বাবার পর সে তর একা’ন্ত আপন মানুষ।তর নিজের মানুষ। আর ঠান্ডা লাগাবিনা কোনো ভাবে।তর স্বা’সক’ষ্টের সমস্যার কথা ভুলে যাস না যেনো।ইনহেলারটা হাতের কাছেই রাখিস। বলেেই রমিলা বেগম থামেন।
ছোটো আম্মা এবার রাখি? আবার কল দিবো কেমন?আর একটা কথা,,,,,,,
আমি আপুর সাথে কথা বলে নিবো।টেন’শন নিও না তোমরা।আচ্ছা ঠিক আছে রাখো এবার। ভালো থেকো তোমরা।আর আমায় নিয়ে এতো টেনশনের কিছু নেই।
আল্লাহ হাফেজ।
হুম।আল্লাহ হাফেজ।
এবার সোহা নোহা কে ফোন লাগায়,,,,
———————-
নোহা সকল কাজ সেরে মাত্রই শুকনো কাপড় নিয়ে ঘরে এসেছে।গুছিয়ে আলমারিতে রাখার জন্য। এমন টাইমে ফোনটা বেজে উঠে। এমন টাইমে কে কল করতে পারে?
ভাবতে ভাবতেই ফোনটা হাতে নেয় নোহা।
ফোনের স্ক্রি’নে বনু নামটা দেখেই মুখে হাসি ফোটে উঠে। তাড়াতাড়ি রিসিভ করে।হ্যালো বলার আগেই ঐপাশ থেকে অভিযোগের বাহার সাজিয়ে বসে সোহা।
আপু,,,,,, তুই আমায় একটুও ভালোবাসিস না? আমার কথা তোর মনেও পরে না? তুই কতো পাষাণ হয়ে গেছিস রে আপু।
বোনের অভিযোগ শুনে গলাটা ধরে আসে নোহার।নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে,,,,,
বনু আমার তর বোন তোকে অনেক ভালোবাসে। তুই ভাবতেও পারবিনা কতো ভালোবাসি।কেমন আছিস বোন আমার?
আমি ভালো আছি আপু।তুই কেমন আছিস? তুই আমার একমাত্র বোন হয়েও আমার বিয়েতে আসলিনা।জানিস আমার কতো কষ্ট হয়েছে।তর সাথে আড়ি!
নোহা মনে মনে বলে কেন যে যেতে পারিনি তোকে যদি বলতে পারতামরে বোন।আমি তো যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এই পা/ষাণ গুলো দেয়নিরে।আটকে রেখেছিলো।
বোন আমার রাগ করিস না। একদিন সব তোকে বলবো ঠিক আছে? আর কিছু বলার আগেই বাইরে ওমির গলার আওয়াজ শুনতে পায়।
তাই তড়িঘড়ি করে বলে বোন এখন রাখি? একটু কাজ করতেছিতো।পরে আবার কথা বলবো রাগ করিস না।
আচ্ছা ঠিক আছে।ভালো থেকো।
হুম। বলেই নোহা কল কেটে রুমের বাইরে হাটা দেয়।মা ছেলের নাটক শুরু হয়ে গেছে মনে হয়।
—————————-
সোহার মেজা’জ টা এখন ফুর’ফুরে হয়ে গেছে।তাই চুল গুলো খোঁ’পা করে ছাদের দিকে এগিয়ে যায়।খোলা আকাশের নিচে দাড়িয়ে বাতাস উপভোগ করার জন্য।
ছাদের কিনারায় গিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চারপাশটায় চোখ বোলাচ্ছিল সোহা। বাড়ি থেকে একটু দূরেই একটা মাঠ রয়েছে।ঐখানে নানান বয়সের ছেলে মেয়েরা একেকজন একেক রকম খেলা খেলছে।সোহার ও ইচ্ছে করতেছে দৌড়ে গিয়ে ওদের সাথে খেলতে। তা তো স’ম্ভব না। ধূর,,,,,ভাল্লাগে না।
দায়ান সোহাকেই খুঁ’জতেছে। রুশ ফোন করেছিলো।সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে ভর্তির।এখন কাগজপত্র আর টি.সি লাগবে।বাড়িতে যেনো বলে রাখে ফোন করে সব ব্যবস্থা করে রাখার জন্য। যেনো গিয়ে ড্রাইভার নিয়ে আসতে পারে।
আর এইদিকে দেখো এই মেয়ের কোনো খবর নাই। হাওয়া হয়ে গেলো নাকি? এই মেয়েটাতো জা’লিয়ে মারতেছে।
কোথাও খুঁজ না পেয়ে এইবার ছাদের দিকে হাটা দেয় দায়ান।”
হঠাৎ করে বাতাসের বেগ কিছুটা বেড়ে যায়।সোহা চোখ ব’ন্ধ করে ফেলে।চোখ ব’ন্ধ করে নিজেকে স্বাভাবিক করে তোলার আগেই ওড়না উড়ে গিয়ে ছাদের রেলিঙ এর ওপর পাশে কিছুর সাথে একটুখানি আটকে আছে।আরেকটু জোড়ে বাতাস আসলেই উড়ে যাবে।
এই উড়নাটা সোহার খুব পছন্দের। অনেক দামাদামি করে দোকানদারের সাথে তারপর কিনেছে।ভাবতেই তাড়াতাড়ি করে উঠাতে যায় নিচু হয়ে রেলিং এর উপর ভর দিয়ে কিন্তু নাগাল পায়না।আরেকটু এগুলে সোহা নিজেই ছাদের নিচে ধপাস করে পড়ে যাবে সেদিকে খেয়াল নেই।
দায়ান ছাদের দরজার পাশে এসে এদিক ঐদিকে চোখ বুলিয়ে সোহাকে খোঁজার চেষ্টা করে। হঠাৎ এক জায়গায় গিয়ে চোখ আটকে যায়।
এই মেয়ে ঐ কিনারায় কি করে? সুই/সাইড করবে না তো?
ভাবতেই আতকে উঠে দায়ান।তাড়াতাড়ি এগিয়ে গিয়ে সোহাকে হেঁ’চকা টান দিয়ে নিজের পাশে এনে দাড় করায়।
হঠাৎ করে হাতে টান পড়ায় ভয় পেয়ে চোখ ব’ন্ধ করে ফেলে সোহা।
কি করতে চাইতেছিলে,,,,,মরতে চাইতেছিলে? আমাকে ফাঁসানোর জন্য?
বলে কি এই লোক? চোখ বড় বড় করে ভাবে সোহা।তারপর নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে,,,,,,, আমি মরতে চাইবো কেনো? আমার এখনো নানি-দাদি হওয়া বাকি আছে।
এই মেয়েটা সব সময় সিরিয়াস টাইমেও মজার মোডে থাকে কিভাবে? এর মধ্যে কোনো সিরিয়াসনেসের “স” ও দেখতে পায়না দায়ান।হাফ পা*গল মেয়ে কোথাকার।
দায়ান সোহার দিক থেকে চোখ সরিয়ে আশে পাশে তাকাতেই রাগে কপালের র’গ ফোলে ওঠে।পাশের বাড়ির ছাদ থেকে একটা ছেলে সোহার দিকেই তাকিয়ে আছে।
দায়ান এইবার সোহার দিকে পূ’র্ণ দৃষ্টিতে তাকায়। এইবার রাগটা যেনো আরো বেড়ে যায়। শরীরে ওড়না না দেখে।
দাঁতে দাঁত পি*ষে বলে তা কি করতে ছিলেন। ঐ ছেলেটার দিকে আঙুল তা’ক করে বলে,,,, নিজের রূপ দেখিয়ে মানুষের চক্ষু শীতল করতেছিলেন?
সোহা দায়ানের আঙুল বরাবর তাকায়।তাকিয়ে দেখে ছেলেটা তার দিকেই তাকিয়ে আছে। এবার নিজের দিকে খেয়াল হয়।তাড়াতাড়ি দুই হাত দিয়ে নিজেকে ঢাকার চেষ্টা করে।
দায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে বিশ্বাস করুন।আমি ঐ লোকটা কে এতোক্ষন দেখি নি।মাত্রই দেখলাম।আমার ওড়নাটা আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলে,,,ঐখানে আটকে আছে।হঠাৎ করে বাতাস এসে উড়ে গেছে।
গো টু হে*ল ইউ এন্ড ইউর সো কলড ওড়না।রুমে যাও রাইট নাও।
আমার ওড়নাটা আমি উঠিয়েই চলে যাবো বিশ্বাস করুন।একটুও বেশি সময় নিবো না।আমার অনেক সাধের ওড়না এটা।নিতে দেন না প্লিজ। নয়তো আপনার তো অনেক বড় হাত।আপনি একটু উঠিয়ে দিন না।আমার হাত দিয়ে না’গাল পাইতেছিনা। ঠোঁট উল্টে বলে।
একেইতো সোহা দায়ানের সামনে এই রূপে দাড়িয়ে আছে। তার উপর এই মেয়র ঠোঁট উ’ল্টানো দেখে। দায়ানের মাথা কাজ করা ব’ন্ধ করে দিতেছে।নিজেকে কন’ট্রোল করার জন্য চোখ ব’ন্ধ করে। কয়েকবার জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে এদিক ওদিক মাথা ঘুরিয়ে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে নিজেকে।
তারপর চোখ খোলে আস্তে করে বলে রুমে যাও।
চলে যাবো তো।ওড়না টা নিয়েই চলে যাবো।
ওড়না লাগবে না? এরকম আরো একশোটা এনে দিবো।
খুশি? এইবার রুমে যাও।
ঐগুলাতো আর এইটা হবে না।এইটার মতো হবে।
রুমে যেতে বলছি আমি।গো ফাস্ট।
কি- কিন্তু আমার ওড়,,,,,,,,বাকিটা আর শেষ করতে পারে না। দায়ানের রাগে লাল হয়ে যাওয়া চোখ দেখে।
ঐ ছেলেটার দিকে রাগি লোক নিয়ে তাকায়। যার মানে বেটা তরে একবার সামনে পাই খালি। মজা বোঝাবো।তর চোখ খুলে আমি মার্বেল খেলবো। তর জন্য আমার জামাইরে আমারে ধমকাইছে।আমার এতো সাধের একশো পঞ্চাশ টাকা দামের কিনে আনা ওড়নাটা। বাতাসে পতাকার মতো উড়তেছে।রাগি লোক নিয়ে তাকাতে তাকাতে নিচে যাওয়ার জন্য হাটা দেয়।
ছেলেটাও সোহার চাহনি দেখে তাড়াতাড়ি কে’টে পরে।
আরেকদিন যদি ছাদে দেখি তো,,,,তোমাকে আর তোমার ঠ্যাং দুটোই ভে’ঙে পার্সেল করে বাড়িতে পাঠিয়ে দিবো। কেয়ারলেস মেয়ে একটা।
#চলবে