#এখানেই_শেষ_নয়( ০২)
#অপরাজিতা_রহমান (লেখনীতে)
বাবা মা মা*রা যাওয়ার পর আমাকে নিলামে উঠানো হয় কার কাছে আমি থাকব এই নিয়ে।চাচাদের কাছে আমার ঠাঁই মেলে না। কারন তারা আগে থেকেই আমাদের ফ্যামিলিকে সহ্য করতে পারত না।বারবার আমার বাবার উপর অ্যাটাক করত তাকে মে”রে ফেলার জন্য। মাঝে মাঝে আমার নিজের কাছে নিজেই প্রশ্ন করি আসলেই কি আমার বাবা মায়ের এক্সিডেন্টে মৃ”ত্যু হয়েছিল নাকি পরিকল্পিত খু”ন ছিল? অবশেষে আমার মামা সিন্ধান্ত নেয় তার কাছ রাখার জন্য।মামা আমাকে খুব ভালোবাসত। কিন্তু মামি আমাকে দুচোখে সহ্য করতে পারত না।তার ছেলেমেয়েদের সাথে মিশতে দিতো না।প্রায় সময় দেখতাম মামা মামির মধ্যে আমাকে নিয়ে ঝ”গ”ড়া লাগতে।মামা ব্যবসায়ের কাজে বেশিরভাগ সময় বাইরে থাকত।আর এ সময় টাই মামি কাজে লাগাতেন। সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্ম হয়েছিল আমার। অথচ মামির সংসারে এসে ঘর মোছা থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ আমার করতে হতো। আমি আসার পর থেকে কাজের মহিলা কে ছাঁটাই করে দিয়েছিল। সারাদিন কাজ করার জন্য বই পড়ার সময় পেতাম না। রাতে যখন সবাই ঘুমিয়ে যেত তখন সারা গায়ে ব্যথা যন্ত্রণা নিয়ে বই পড়তাম। সারারাত জেগে ফজরের দিকে যখন একটু ঘুমিয়ে পড়েছি চোখে মুখে পানির ছিটা পেয়ে তড়িঘড়ি করে উঠে দেখি মামি অগ্নি চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
কি নবাবের বেটি বেলা কয়টা বাজে সে খেয়াল আছে আপনার?পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছেন বাসার কাজগুলো কে করবে শুনি?তোর মা এসে করে দিয়ে যাবে?তোর মা বাবার সাথে তুই ও ম”র”লি না কেন? আর ম”র”লি না যখন তখন আমার ঘাড়ে এসে জুটলি কেন? সারাদিন কোন কাজ করবে না শুধু শুধু আমার অন্ন ধংস করবে।
আমি মোটেই বসে বসে আপনার অন্ন ধংস করি না মামি। সারাদিন গাধার মতো খেটে ম*রি,অথচ একটা কাজের লোকের যে মর্যাদা সেই মর্যাদা টুকু ও পাই না আমি।একটা কাজের মহিলা ও তিন বেলা পেটপুরে খেতে পায়,মাস গেলে হাত খরচার টাকা পায়, কোন অনুষ্ঠানে নতুন কাপড় পায়। অথচ আমি নিজেদের লোক হয়েও এর কিছুই পাই না।
তোকে যে এই বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছি এইটা বা কম কিসে?
আপনি ভুলে যাবেন না মামার যত সম্পত্তি জমিজমা এমনকি এই বাড়ির এক তৃতীয়াংশ আমার মায়ের। মায়ের অবর্তমানে তার উত্তরসূরী আমি। অথচ আপনারা জমি থেকে ফসল উৎপাদন করে হাজার হাজার টাকা ইনকাম করছেন যার এক কানাকড়িও আমি পাই না। সেই হিসেবে আমি আমার টা খাচ্ছি আপনার বা মামার কারো অন্নই ধংস করছি না।
কি বললি তুই?যত বড় মুখ নয় তত বড় কথা।আজ তোর এমন অবস্থা করব যাতে তুই আমার মুখের উপর কথা বলতে না পারিস। একথা বলেই মামি কিচেনে গিয়ে খুন্তি গরম করে নিয়ে এসে আমার মুখে চেপে ধরে। যন্ত্রণায় মনে হচ্ছিল আমার দেহ থেকে প্রাণ বেড়িয়ে যাচ্ছে। তখন মনে হচ্ছিল কেন বাবা মায়ের সাথে আমার ও মৃ*ত্যু হলো না।নিজের অতীত ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতে পারি নি। ম্যামের ডাকে ঘুম ভেঙ্গে গেল। উঠে দেখি চারিদিকে ফজরের আযান হচ্ছে। ম্যাম বললেন, কুয়াশা তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে নে।
ঠিক আছে ম্যাম।
এখনো ম্যাম বলবি? আমি না হয় স্কুলে তোর সিনিয়র,স্কুলের হেড ম্যাম , তুই আমার কলিগ।তাই বলে কি বাড়িতে ও আমি তোর ম্যাম?আর যেন তোর মুখে ম্যাম ডাক না শুনি। রাতে কি বলেছিলাম ভুলে গেছিস? তুই সামিরার মতো আমার আরো একটা মেয়ে। মেয়ে হয়ে মাকে ম্যাম ডাকবে এইটা ভালো দেখায় না।
ঠিক আছে আম্মু।
এইতো আমার লক্ষী মেয়ে। এইবার চল তো তাড়াতাড়ি নামাজ পড়ে নি।
বাসায় আর কেউ পড়ে না নামাজ?
সামিরা পড়ে।আর বাকি দুইজন তাদের নাকি এখন ও নামাজ পড়ার সময় হয় নি। অথচ তারা এইটা বোঝে না মৃ”ত্যু যখন আসবে তখন তাদের জন্য তওবা করার সময় টুকু ও দেবে না।
আমি আর আম্মু নামাজ শেষে কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম।বেশ ভালো মানের মানুষ ম্যাম। অথচ তারই ছেলে একটা অমানুষ।আম্মু আমি সবার জন্য চা করি?
ঠিক আছে কর। তবে সাবধানে করিস।
আম্মু তুমি চিন্তা করো না তো। এই সব রান্নাবান্না করতে করতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি আমি।
কিচেনে এসে সবেমাত্র চুলায় পানি বসিয়েছি , এমন সময় পেটে গরম কিছু অনুভব করলাম।মনে হচ্ছে কেউ সিগারেটের আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছে। পেছনে ফিরতেই দেখি শায়ান ।
কি সিনিয়র বেবি ! খুব জ্বলছে তাই না? আমার এর থেকে বেশি জ্বলেছিল,যখন তোমাকে আমার বিয়ে করতে হয়েছিল, তোমার জন্য মম আমার গায়ে হাত তুলেছিল। আমি তো এতো সহজে তোমাকে ছেড়ে দিব না সিনিয়র বেবি। তোমার খুব শখ ছিল এই শ্রেয়াস আবরার শায়ানের বউ হওয়ার তাই না?এর ফল তুমি হাড়ে হাড়ে টের পাবে।
আমার ধৈর্য্যর পরীক্ষা নিতে আসবেন না মিস্টার শ্রেয়াস আবরার শায়ান। আপনি হয়তো জানেন না আমি একজন শিক্ষিকা।আর ধৈর্য না থাকলে কেউ শিক্ষকতার মতো এমন মহান পেশায় আসতে পারে না। এরকম সিগারেটের গরম ছ্যাঁকা, খুন্তির গরম ছ্যাঁকা খাওয়ার অভ্যাস আছে আমার।বাবা মা ম”রা মেয়ে কি না। সুযোগ পেলে কেউ আঘাত করতে ছাড়ে না।তাই বলে আমাকে অবলা নারী ভাববেন না মিস্টার।”অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সয়ে দুইজনেই সমান অপরাধী।” আমি কখনোই আপনার অন্যায় মেনে নেব না বলেই গরম পানি শায়ানের বুকে ছুড়ে দিলাম।
ইউ ব্লাডি গার্ল।কি করলে এইটা তুমি?
“ইট মারলে পাটকেল খেতে হয়” এইটা নিশ্চয় জানেন? আপনি আমাকে আঘাত করবেন আর আমি সেই আঘাত মুখ বুজে সহ্য করে যাব? কখনোই না। আপনি একটা দিলে আমি দশটা দিব। আপনি আমাকে যতটুকু সম্মান দিবেন,ঠিক আমার থেকে ততটুকুই সম্মান পাবেন।সো নেক্সট টাইম আমার সাথে লাগতে আসবেন না।আমি চা করে কিচেন থেকে বেড়িয়ে আসলাম। কিন্তু শায়ান সেইখানে ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইল।হয়তো আমার থেকে এমন পাল্টা জবাব আশা করে নি।
তোকে তো আমি পরে দেখে নেব সিনিয়র বেবি।
কেন রে? এতোক্ষণ দেখে তোর ক”লি”জা ভরে নি?আর আমাকে দেখবি কেন?তোর লেখিকা গার্লফ্রেন্ড কি তোর শোকে ম”রে পাথর হয়ে গিয়েছে?
একদম আমার গার্লফ্রেন্ড নিয়ে বাজে মন্তব্য করবেন না। আপনি লেখালেখির কি বোঝেন হ্যাঁ। লেখালেখি করতে গেলে ও যোগ্যতা লাগে,যা আপনার মতো মেয়ের নেই।
আমার যোগ্যতা সম্পর্কে আপনার কোন আইডিয়া ও নেই মিস্টার।আর হ্যাঁ আমার সম্পর্কে বেশি জানতে আসবেন না ,দেখা গেল সিনিয়র সম্পর্কে জানতে এসে সিনিয়রের প্রেমেই হাবুডুবু খেলেন। শায়ান কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আমি উপরে চলে আসলাম। রুমে এসে দেখি আম্মু ল্যাপটপ নিয়ে কিসের কাজ করছেন।এই যে আম্মু তোমার চা।
এইখানে বোস।তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে।
ততক্ষণে চা তো ঠান্ডা হয়ে যাবে ,আগে আঙ্কেলের চা টা দিয়ে আসি।
ঠিক আছে যা।
আসসালামুয়ালাইকুম ভেতরে আসতে পারি আঙ্কেল?
তুমি এইখানে কেন এসেছ? আমাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে মনোমালিন্য সৃষ্টি করে এখন আবার ভালো সাজতে এসেছ?আর কি করার বাকি আছে তোমার?
আপনার জন্য চা নিয়ে এসেছিলাম। চায়ের কথা বলতেই আঙ্কেল এসে আমার হাত থেকে চায়ের কাপ নিয়ে মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বললেন,আর কখনো যেন তোমাকে আমার আশেপাশে না দেখি। এক্ষুনি বের হও আমার রুম থেকে।
আমি লজ্জায় অপমানে রুম থেকে বের হতেই বলিষ্ঠ হাতের বাঁধনে আটকা পড়ে গেলাম। পেছনে ফিরতেই দেখি
চলবে ইনশাআল্লাহ
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
(আসসালামুয়ালাইকুম। গল্প সম্পর্কে কিছু না বললেই নয়।আশা করি এইটুকু লেখা পড়বে সবাই। আমি গল্পে নায়ক নায়িকার ভিন্ন নাম দিয়েছিলাম, কিন্তু সবাই এমন ভাব করছে যেন আমি অশ্লীল কিছু লিখে ফেলেছি। তোমরা পাঠক,আর গল্প তোমাদের জন্যই লেখা। তোমরা মন্তব্য করতেই পারো। কিন্তু কোন রাইটারের মনে আঘাত দিয়ে মন্তব্য করার রাইট তোমাদের নেই। তোমরা এক বার ও ভেবে দেখ না তোমাদের ছোট্ট একটা মন্তব্য অন্যজনের মনে ঠিক কতটা দাগ কা”ট”তে পারে।সে কতটা কষ্ট পেতে পারে।একটা কথা মনে রেখ বড় কথা বললেই বড় মানুষ হওয়া যায় না। আবার দেখি একজন কমেন্ট করেছে কিছু দিন পরে নায়িকাদের নাম গু হবে হাগা হবে।এইসব কি ভাই? সত্যি তোমাদের মানসিকতাকে স্যালুট জানাতে হয়।তোমরা আমাকে বললেই পারতে ,আপু নাম টা ভালো হয় নি , পরিবর্তন করে দাও। আমি দিয়ে দিতাম। তোমরা তা করো নি । উল্টো আমাকে নিয়ে ট্রল করেছ।এমনকি রিভিউ গ্ৰুপে ও আমাকে নিয়ে মন্তব্য করতে ছাড় দাও নি।আর মজার ব্যাপার হলো বাজে কমেন্ট করা পাবলিক সব মেয়ে।যাক গে পরিশেষে বলব যাদের ভালো না লাগে প্লিজ আমার গল্প ইগনোর কর। তবুও বাজে মন্তব্য করো না।এতে লেখার প্রতি আগ্ৰহ হারিয়ে যায়। আমার কথায় যদি কষ্ট পেয়ে থাক সত্যিই আমি দুঃখিত। কারন কাউকে হার্ট করে কথা বলার অভ্যাস আমার নেই)