প্রহর শেষে আলোয় রাঙা পর্ব -০৮

#পর্ব_৮
#প্রহর_শেষে_আলোয়_রাঙা
লেখিকাঃ #নুুরুন্নাহার_তিথী
এক বয়স্কা জীর্ণশীর্ণ মহিলা মেইন গেইট দিয়ে ভিতরে আসলেন। আলো ব্যাপারটার কিছু না বুঝে প্রহরের মুখপানে উত্তরের আশায় চেয়ে আছে। মহিলাটি এসে দাঁড়ালে প্রহর সহাস্যে সালাম দিয়ে বলে,

“দাঁড়িয়ে কেনো বসুন।”

“না বাবা। তোমরা বসো। আমি বরং মাটিতে বসি।”

প্রহর আচমকা বিরক্ত হলো। বিরক্তিতে বলে,
“মাটিতে বসবেন কেনো? এখানে খালি চেয়ারটি দেখতে পারছেন না?”

মহিলাটি মলিন হেসে বলেন,
“আমার কি ওখানে বসা সাঁজে! আমি হইলাম গরীব মানুষ। দিনে আনি দিনে খাই। আমার কি এসব মানায় বলেন?”

প্রহর হতবাক হয়ে চেয়ে রইল। আলো মিষ্টি হেসে বলে,
“আপনি আমার পাশেই বসবেন। নিচে বসার কোনো দরকার নেই। আপনি আমার মায়ের মতোই তো।”

মহিলাটির আঁখিযুগল ভিজে উঠল। আঁচল দিয়ে নয়নযুগল মুছে নেন। প্রহর এসব দেখে নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলে।

“আপনি আজ থেকে এখানেই থাকবেন। আমি যতো সময় বাড়িতে থাকব না তখন আলোর খেয়াল রাখবেন। বড্ড কেয়ারলেস এই মেয়েটা। আলো আপনাকে আপনার থাকার রুম দেখিয়ে দিবে। আমাকে এখন বেরোতে হবে। আসতে আসতে রাত হবে। সাবধানে থেকো।”

বলে আলোর ললাটে ভালোবাসার স্পর্শ দিয়ে বেরিয়ে যায়। আলো মহিলাটিকে নিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে। আলো বলে,
“আপনি নিচতলায় পূর্ব দিকের ঘরটাতে থাকবেন। নিচতলায় থাকা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই তো?”

“কি যে বলেন বউরানী! আমি তো ওই ঘরেই থাকতাম!”

মহিলাটির হঠাৎ বেফাঁস কথায় আলো সন্দিহান দৃষ্টিতে ভ্রুঁ কুঁচকে তাকায়।
“কী বললেন আপনি?”

মহিলাটাটি নিজের বোকামি বুঝতে পেরে তড়িঘড়ি করে বলে,
“কিছু না মা। আপনারে আমি ভুলে আগে যেখানে কাজ করতাম সেই বউরানীর মতো বউরানী বইলা ফেলছি। ওখানেও আমি নিচতলায় থাকতাম। মাফ করবেন। আর বলমু না।”

আলোর কেমন সন্দেহ হয়। তাও বৃদ্ধা মহিলাটির একাকিত্ব জীবনে মানুষের বাড়ি কাজ করে বেরানোটা উপলব্ধি করে থেমে যায়।
“আপনি যেয়ে রেস্ট করুন। সন্ধ্যার আজান হবে একটু পর। আমি তারপর নাস্তা বানাব।”

“আপনের বানানো লাগব না। আমিই বানাব।”

“না। আমার রান্না করতে ভালো লাগে। সারাদিন একা থাকি কেউ নেই। সবকিছু একা একা লাগে তাই রান্নাঘরটা আমার বন্ধু হয়ে গেছে। নতুন নতুন রেসিপি ট্রাই করে প্রহরকে দিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে ভালো লাগে। তাই রান্নাঘরের দায়িত্বটা আমার।”

মহিলাটি মিষ্টি হাসে। আলো নিজের ঘরের দিকে যায়। মহিলাটি দেয়ালে টাঙানো প্রহরের বড়ো হাস্যজ্জল ছবিটার দিকে নির্নিমেষ তাকিয়ে থাকে। ছবিটার পাশে প্রহর ও আলোর বড়ো একটা ছবি টাঙানো আছে কিন্তু মহিলার দৃষ্টি সেই ছবিটাতেই। আঁচলে চোখ মুছে ঘরের ভেতরে চলে যান।

_____________
“মনে হচ্ছে পাশ্ববর্তী দেশ মায়ানমারেও ওদের আস্তানা আছে। সেন্টমার্টিনে নাকি পানিপথে ড্রা*গ সাপ্লাই হয়।”

প্রহর মনোযোগী হয়ে শুনছে। তার হিসাব মিলছে না। প্রহর বলে,
“সেন্টমার্টিনে ড্রা*গ সাপ্লাই সেটার সাথে আপনি এই ইনভেস্টিগেশন কেনো মিলাচ্ছেন? সেটা সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা ঘটনা।”

“না প্রহর। সেখানে ড্রাগ সাপ্লাইয়ের একটা জাহাজ ধরতে পেরেছে। সেখানে একটা কোড ছিল। সেই কোড নাম্বার থেকে তিনদিন আগে আমাদের সার্ভারে একটা বার্তা আসে আমিরকে ছেড়ে দিতে। বুঝতে পারছ তুমি?”

প্রহর হতবাক হয়ে বলে,
“আপনি তো আমাকে এটা আগে জানাননি। বার্তাটা দেখান তো। আর আমির কোথায়?”

প্রহরের দিকে ছবি তুলে রাখা বার্তাটা দেখায় আর বলেন,
“আমিরকে সাত দিনের রি*মান্ডে নেওয়া হয়েছে। ও কিছু তো জানে। স্বিকার করছে না। আমিরের দুর্বলতা ধরতে হবে।”

প্রহর চিন্তিত হয়ে বলে,
“চার মাস যাবত যে আমির আমাদের হুম*কি-ধা*মকি দিচ্ছিল সেটা তাহলে কেনো? এখন আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে, জাহাজটাও ইচ্ছে করে ধরা পরেছে!”

কমান্ডার অফিসার খালেক অবাক হয়ে বলে,
“তুমি কি বলতে চাইছ প্রহর? আমরা অনেকদিন ধরেই ওই চক্রটা ধরার চেষ্টায় ছিলাম।”

“আপনিই দেখুন, তিনদিন আগে যেটা থেকে বার্তা পাঠানো হয়েছে সেই কোডসহ জাহাজ থেকে ড্রা*গ ধরা পরেছে। অন্য কোডও তো হতে পারত। কিছুতো ষড়যন্ত্র চলছে। ওরা আসলে কি চাইছে সেটা ধরতে হবে। নাকি সব আমাদের গুমরাহ করার ষড়যন্ত্র!”

_________
সন্ধ্যার পরপরই দারোয়ান বাড়ির টেলিফোনে ফোন করে জানায় মেইন গেইটে চয়নিকা এসেছে। আলো প্রথমে অবাক হয়। এই ভর সন্ধ্যায় চয়নিকা কেনো আসবে? তাছাড়া প্রহর তো জানায়নি চয়নিকা আসবে বলে তেমন কিছু। চয়নিকার হঠাৎ আসার কারণ আলোর বোধগম্য হলো না।

“এই চয়নিকা মাইয়াডা আবার কেডা গো? এই রাইতের বেলায় কেনো আইলো?”

আলো হতাশস্বরে বলে,
“জানিনা রঞ্জনা খালা। হয়তো কোনো কাজ আছে।”

“তুমি যাইয়ো না বুঝলা। আমি যাইতেছি।”

এই বলে রঞ্জনা খালা বাড়ির দরজা খুলতে যান। দরজার বাহিরে চয়নিকা অধীর আগ্রহে দাঁড়িয়ে আছে। রঞ্জনা খালা দরজা খুললে চয়নিকা সন্দিহান দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে বলে,

“আপনি কে?”

“আমার নাম রঞ্জনা।”

“আমি আপনার নাম জানতে চাইনি। আপনি এই বাড়িতে কী করেন? আলো কোথায়?”

“আমি এই বাড়িতে কাম করি। আলো বউরানী বসার ঘরে আছেন।”

চয়নিকা অবাক হয়ে বলল,
“এই বাড়িতে কাজ করেন মানে? আগে তো দেখিনি তাছাড়া প্রহর ও আলো কোনো কাজের লোক রেখেছে বলে তো জানতাম না।”

রঞ্জনা খালা অদ্ভুত হেসে বলেন,
“সবসময় কি সময় একরকম থাকে? সময় তো বদলায়। আমাগোরেও বদলান লাগে। এত্ত বড়ো বাড়িতে সাহেবের অনুপুস্থিতিতে অঘটন ঘটতে কতোক্ষণ লাগবো কন?”

চয়নিকা থতমত খেয়ে যায়। চয়নিকার মুখের অবস্থা দেখে রঞ্জনা খালা বলেন,
“ভিতরে আইবেন না? নাকি আমারে দেইখা দুয়ার থেকেই চইলা যাইবেন? আইছেন যখন চা-নাস্তা খাইয়া যান।”

চয়নিকা বিরক্তিতে বলে,
“নিজের সীমানাতে থাকেন। কাজের লোক কিন্তু মুখে কথার ছড়ি ফুটেছে।”

এই বলে রঞ্জনা খালাকে ঠেলে ভিতরে ঢোকে। রঞ্জনা খালা অদ্ভুত হেসে দুয়ার লাগিয়ে বসার ঘরে গিয়ে দেখে চয়নিকা আলোকে জড়িয়ে ধরে আছে! কী সাংঘাতিক! রঞ্জনা খালা আলোর মুখের হতবাকতা দেখে মুখ ফসকে বলেই ফেলেন,

“দিনের বেলা তারা দেখলা বউরানী?”

উনার খোঁটা দেওয়া কথায় চয়নিকা আলোকে ছেড়ে উনাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“আপনার জবান প্রথমদিনেই একটু বেশি চলছে বলে মনে হচ্ছে না?”

“কী যে কন আফামনি। আমি মূর্খ মানুষ। তাইতো দিন-রাতের পার্থক্য করতে ভুল হইছে। এহন তো রাইতের বেলা তয় রাইতে সূর্য দেখা হইব!”

আলো রঞ্জনা খালাকে থামাতে বলে,
“খালা আপনি একটু রান্নাঘরে গিয়ে মালাই চা বানাতে পারবেন? সাথে ডিফ ফ্রিজ থেকে ফ্রোজেন করা সমুচা কিছু ভেজে দিন।”

রঞ্জনা খালা সম্মতি দিয়ে চলে গেলে চয়নিকা আলোর হাত ধরে সোফায় বসিয়ে করুণ কণ্ঠে বলে,
“আমাকে মাফ করে দাও আলো। আমি তোমাকে বিনাদোষে অনেক কিছু শুনিয়েছি। খারাপ ব্যাবহার করেছি। আমি অনুতপ্ত।”

আলো অবাক হয়ে কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। চয়নিকা আবারও বলে,
“তোমার সাথে বন্ধুত্ব করতে চাই। তাই কয়েকদিন থাকার জন্য চলে এলাম। করবে না বন্ধুত্ব?”

আলো কিছু বলার আগে পেছোন থেকে রঞ্জনা খালা বলে উঠেন,
“কয়দিন থাকবেন? আপনার সাথে তো কোনো সুটকেস কিছু দেখলাম না। এক জামা-কাপড়ে থাকবেন নাকি? কিছুই তো আনেন নাই।”

চয়নিকা দাঁতে দাঁত চেপে রাগ সংবরণ করে। আলো একটু কেশে বলে,
“খালা নাস্তা রেডি?”

“না গো বউরানী। জিগাইতে আইলাম চায়ে ওই বড়ো বড়ো কালা এলাচ দিমুনি? সুন্দর গন্ধ আইব চায়ের থিকা। আমার তো গন্ধটা অনেক ভালা লাগে। আমি তিন-চারটা চায়ের মধ্যেই দিয়া দেই।”

কালো এলাচের কথা শোনা মাত্রই চয়নিকার অক্ষিগোলক বৃহতাকার ধারণ করল। আলো তড়িঘড়ি করে বলে,
“না না খালা। বড়ো কালো এলাচ একটাও দিবেন না। চয়নিকা আপুর এলার্জি আছে। আপনি যান আমি আসছি চা বানাতে।”

“আমিই পারমু বউরানী। তুমি তোমার নতুন সইয়ের সাথে আলাপ করো।”

রঞ্জনা খালা চলে গেলে চয়নিকা হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। সে বলে,
“প্রহরকে বলে কাজের লোক বদলে নাও। এই মহিলা প্রয়োজনের ব্যাতিরিক অতিরিক্ত কথা বলে।”

আলো হালকা হেসে বলে,
“উনি কিন্তু খুব ভালো আপু। বিকেলে এসেছেন আর আমার সাথে তার সখ্যতা হয়ে গেছে। উনার কেউ নেই পৃথিবীতে। আমারও একজন সঙ্গী হলো।”

চয়নিকা জোরপূর্বক হাসে তারপর আলোর সাথে ভাব জমাতে ব্যাস্ত হয়ে গেলো।

চলবে ইনশাআল্লাহ্‌,
দুইদিন সত্যি অনেকটা প্রেশারে ছিলাম। আজ কিছুটা মুক্তি পেয়েছি। এখনও মাথাব্যথা ও দাঁতে ব্যাথায় ভুগছি। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ। রেসপন্স করার অনুরোধ রইল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here