#তমসার_জল
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
।। পর্ব২।।
(কার্টেসী ব্যতীত কপি নিষেধ)
ক্লাসের জন্য বের হচ্ছিলো জল।সদর দরজা খুলতেই মা-ছেলেকে দেখে অবাক হয়ে যায় জল।সেদিন এভাবে রেগে-মেগে বের হয়ে গেলো মহিলা আজ সকাল সকাল ছেলেকে নিয়ে মহিলা হাজির!অবাক করার মতো ব্যাপার।
জল ভদ্রতার খাতিরে মহিলাকে সালাম দেয়।
” আসসালামু আলাইকুম আন্টি।কেমন আছেন?”
” ওয়ালাইকুম আস সালাম।ভালো আছি মা।তুমি কেমন আছো?”
জলকে মা বলে সম্বোধন করায় জলের মনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়।মহিলার আচার-আচরণ মোটেও সুবিধার লাগছে না জলের।
” তোমার বাবা কোথায়?”
” জ্বী,আব্বু বাসায়ই আছেন।কিছু দরকার?”
” হু,জরুরি দরকার।”
” তাহলে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?ভিতরে আসুন।”
বর্ষণ আর ওর মা ভেতরে ঢোকে।জল জলের মা কে ডাক দেয়।জলের মা এলে জল ক্লাসের উদ্দেশ্যে বের হতে নিলে পেছন থেকে মহিলা বলেন,,,
” কোথায় যাও?”
” ক্যাম্পাসে আন্টি।ক্লাস আছে তো!”
” খুব ইম্পর্টেন্ট ক্লাস?”
” জ্বী আন্টি।”
” আচ্ছা তাহলে যাও।সাবধানে যেও।”
জল কিছু না বলে বেরিয়ে যায়।জলে মা জলের বাবাকে ঘর থেকে ডেকে দিয়ে রান্নাঘরে যান নাস্তা বানানোর জন্য।জলের বাবা বর্ষণের মা আর বর্ষণকে বসার অনুরোধ করেন।
” আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখীত সেদিন আমার মেয়ের ব্যবহারের জন্য।”
” না না।ঠিক আছে।ও তো ভুল কিছু বলে নি।
জলের বাবার কথার জবাবে বলেন বর্ষণের মা।জলের মা নাস্তা নিয়ে আসেন।বর্ষণের মা জলের মাকে বসার অনুরোধ করেন।
” আপা বসুন।কথা আছে।”
জলের মা জলের বাবার পাশে বসেন।
” সেদিন একটু ভুল বোঝাবুঝির জন্য আমরা সাধারণ কথায় ক্ষিপ্ত হয়ে বেরিয়ে গিয়েছি।প্রথমেই তারজন্য আন্তরিক ভাবে ক্ষমা চাচ্ছি।”
মহিলার আকষ্মিক কথার মানে খুঁজে পায় না জলের বাবা-মা।বর্ষণের মা কিঞ্চিৎ হাসেন।
” আমরা এতদিন ভেবে দেখলাম যে আপনাদের মেয়েই আমার ছেলের জন্য যোগ্য।তাই আমরা সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছি।”
জলের বাবা-মা কি বলবে ভেবে পান না।অবাক দৃষ্টিতে একেঅপরের দিকে তাকান।মহিলা আবার হেসে বলেন,,,
” ভাইজান আমাদের কোনো দাবিদাওয়া নেই।আপনারা আপনাদের মেয়েকে দিলেই আমরা ধন্য হবো।”
” আপনি কি ভেবে চিনতে বলছেন?”
জলের বাবা প্রশ্ন ছুড়ে মারে।মহিলা মুচকি হেসে বলে,,,,
” এতদিন পরে যখন এসেছে তাহলে বলতে পারেন ভেবেই বলছি।আমরা অনেক আশা নিয়ে এসেছি।আশা করছি নিরাশ করবেন না আমাদের।”
” দেখেন সংসারটা তো আমি আপনি কেউ করবো না।করবে আপনার ছেলে আর আমাদের মেয়ে।এদের মত ছাড়া কিছু বলা যায় না।”
” আমার ছেলে রাজি।বলতে গেলে ওর জোরাজুরিতেই এখানে আসা।বাকীটা আপনাদের মেয়ের হাতে।”
_____________°_°
রাতের খাবার শেষে নিজের ঘরে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছিলো জল।হঠাৎই জলের ঘরে জলের বাবার আগমন ঘটে।
” কিছু বলবে বাবা?”
জলের বাবা জলের বিছানায় এসে বসেন।বাম হাত দিয়ে চশমাটা খুলে বিছানায় রাখেন।
” আজ সকালে বর্ষণ আর বর্ষণের মা এসেছিলো।”
” হু তা তো জানি।আমি থাকতেই উনারা এসেছিলো।”
” উনারা বিয়ের ব্যপারে কথা বলতে এসেছিলো।”
” দরকার নাই। তুমি আমায়ও দিবে তাদের কাছে আবার কারি কারি জিনিস দেবে।দুনিয়ায় তো আর ছেলের অভাব পরে নি!”
” তাদের কোনো দাবিদাওয়া নেই।তারা শুধু তোকে চাইছে।তোর কি মত?”
” তোমরা যা ভালো বুঝো তাই ই করো।নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস আমি তোমাদের করি।তোমরা যদি ভাবো ওইখানে আমি ভালো থাকবো তাহলে আমার কোনো আপত্তি নেই।”
” খোঁজ খবর নিয়ে তো দেখেছি ছেলে ফ্যামিলি ভালো।তাহলে হ্যাঁ বলে দিলাম।”
জল সম্মতি সূচক মাথা নাড়ায়।জলের বাবা ওর ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
_______________°_°
জল বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান।বর্ষণও ওর বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে।বেশ ঘটা করে বড় পরিসরে বিয়ের আয়োজন করা হয়।কোনো কিছুর কমতি ছিলো না। বিয়ের এত আয়োজনের মধ্যেও আর পাঁচটা মেয়ের মতো জলেরও মনে জমেছিলো হাজার জল্পনা কল্পনা। যে পরিবারে যাচ্ছে সে পরিবারের মানুষজন আদোও কেমন হবে?বাবা-মা কে ছেড়ে যে নতুন দুনিয়ায় জল যাচ্ছে সে দুনিয়ায় কি জল ভালো হবে? এইসব কারণেই মূলত মেয়েরা বিয়ে জিনিসটাকে যমের মতো ভয় পায়।
সব ছেলেরাই শ্বশুর বাড়িতে এসে জামাই আদর পায়।মেয়েদের ক্ষেত্রে বিষয়টা পুরোই উলটো।বাংলাদেশের শতকরা নিরানব্বই শতাংশ মেয়েই শ্বশুরবাড়িতে দিন রাত খেটেও শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের মন পায় না।আদর-আপ্যায়ন তো দূরেই থাক। শতে বা হাজারে একটা মেয়ে শ্বশুরবাড়িতে ভালো থাকে।কিন্তু এই একজন মেয়েই অনেক সময় এর কদর করতে জানে না।
প্রেগন্যান্সি জিনিসটা মেয়েদের জন্য খুবই সেন্সিটিভ একটা ব্যপার।সাথে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মুহুর্ত বা ধাপ।এই সময়টায় মেয়েদের এক্সট্রা কেয়ারের প্রয়োজন হয়।জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বংশের ধারাকে বজায় রাখতে নিজেদের ভেতর আরেকটা প্রাণকে ধারণ করে। এই সময়টাতে সব মেয়েরাই একটু খাতির যত্নের আশায় থাকে।এক কথায় বলতে গেলে এক্সট্রা কেয়ার সব মেয়েদের প্রাপ্ত।কিন্তু ক’জনের কপালে সে সুযোগটুকু জুটে?
বর্ষণদের বাড়িতে যাওয়ার যাত্রাকালে বর্ষণের সাথে জলের খানিকটা কথা হয়।বর্ষণ বেশির ভাগ সময়ই কেমন চুপচাপ হয়ে থাকে।থাকতেই পারে।অনেক মানুষই আছে কথা কম বলে।তবে বাবা-মাকে ছেড়ে আসার মুহুর্তটায় জল বর্ষণের সাপোর্ট আশা করেছিলো।তবে বর্ষা যথেষ্ট ভালো মনমানসিকতার আছে।বিয়ে পড়ানোর পর বর্ষা জলকে যথেষ্ট কোম্পানি দেয়।জল টিস্যু পেপার দিয়ে চোখ মুছে ড্রাইভারের পাশের সীটে বসে থাকা বর্ষার দিকে তাকায়।ক্লান্ত হয়ে তন্দ্রার অতল সাগরে ডুব দিয়েছে।জলেরও বেশ ঘুম পেয়েছে।কিন্তু সে ঘুমাতে পারবে না।পার্লার থেকে সেজেছে জল।কন্টাক্ট লেন্স পরিয়ে দিয়েছে বিউটিশিয়ানরা।যার কারণেব সে চোখ বুঝতে পারবে না। বর্ষণের দিকে তাকায় জল।লোকটার চোখ দুটো কেমন যেন অস্বাভাবিক লাগে জলের।গোল গোল চোখ দুটো একটু বেশিই ভয়ানক লাগে জলের। জল বর্ষণের থেকে চোখ সরিয়ে নেয়। অলস সময় কাটাতে ফেসবুকে ঢোকে জল।সাজেশনে আসা বিভিন্ন ভিডিও দেখতে লাগে। ফেসবুকে ভিডিও দেখা জলের কাছে নেশার মতো।বন্ধুবান্ধব কম থাকায় এই ফেসবুকের ভিডিও গুলো দেখেই জলের অলস সময় কাটে।
বধুবরণে বর্ষণের মাকে জল শ্বাশুড়ি হিসেবে বেশ বন্ধুসুলভ পায়।কিন্তু তারপরও জলের নতুন জগত নিয়ে ভয় যাচ্ছে না।
বর্ষা জলকে নিয়ে যায় ফুল দিয়ে সাজানো বর্ষণের ঘরে।জল আর পাঁচটা বাঙালি বধুর মতো এক হাত লম্বা ঘোমটা টেনে বর্ষণের জন্য অপেক্ষার প্রহর গোনে।
অবশেষে জলের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে বর্ষণ আসে।জলের মা বলেছিলো বাসর ঘরে স্বামীর পা ছুঁয়ে সালাম করতে।জল খাট থেকে নেমে বর্ষণকে সালাম করে।বর্ষণ কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না।আপাদমস্তক ভালো করে দেখে নেয় জলকে সে।জল কিছু বুঝে ওঠার আগেই জলকে ধাক্কা দেয় বর্ষণ।জল টাল সামলাতে না পেরে খাটে পরে যায় এবং মাথায় বেশ শক্ত আঘাত পায়। ব্যাথায় “আহ” বলে ওঠে জল।কার্ণিশ বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পরে জলের।জল কিছু বুঝে ওঠার আগেই বর্ষণ ক্ষুধার্ত হিংস্র হায়নার মতো জলের ওপর ঝাঁপিয়ে পরে। বিয়ের প্রথম রাতে স্বামীর এমন রূপ দেখে জলের আর বুঝতে বাকী থাকে না যে বর্ষণ মানসিক রোগী।জল পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু পুরুষ শক্তির কাছে সে পেরে ওঠে না।
চলবে,,,ইনশাআল্লাহ
[