তমসার জল পর্ব -০৪

#তমসার_জল
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
।।পর্ব৪।।
(কার্টেসী ব্যতীত কপি নিষেধ)

বর্তমানে ফ্যামিলি এমন একটা জিনিস যেখানে সবাই আমাদের ভালো চায় কিন্তু তারা কেউ আমাদের বুঝে না।জানার চেষ্টা করে না কোথায় আছে আমাদের ভালো থাকা।জলের ক্ষেত্রে ঠিক তেমনটাই হয়েছে।টাকাই কি সব?টাকাই কি এনে দিতে পারে সুখ শান্তি ভালো থাকা?
প্রতিদিন রাতে বর্ষণের নির্যাতন আর জলের সহ্য হচ্ছে না।রাতের বেলা বেডরুমটা জলের কাছে এক টুকরো নরক ছাড়া কিছুই নয়।

সকাল সকাল দরজায় কড়া নাড়া আওয়াজ শুনে দরজা খুলে নিজের মেয়েকে দেখতে পায় জলের মা।মেয়ের চোখে মুখে তীব্র আতঙ্ক আর ভয়।

” তুই হঠাৎ করে!বর্ষণ কই?”

জল কোনো কথা বলে না।নিজের ঘরে গিয়ে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দেয়।মেয়ের এমন অস্বাভাবিক আচরণে চিন্তিত হয়ে পড়েন জলের মা।হঠাৎ করে কি এমন হলো জলের।কেন-ই বা এমন অস্বাভাবিক আচরণ করছে?মেয়ের ঘরের দরজায় কড়া নাড়তে থাকেন জলের মা।জলের বাবা ডায়াবেটিসের রোগী। সকালে হাঁটতে গেছেন।শ্বশুর বাড়ি থেকে এসে এভাবে ঘরে ঢুকে মেয়ের দরজা লাগিয়ে দেওয়াটাকে স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারে না জলের মা।দরজায় কড়া নাড়তে থাকেন।কিন্তু জল দরজা খোলে না।অনেকক্ষণ কড়া নাড়ার পর দরজা খোলে জল।কান্না করায় চোখ মুখ ফুলে গেছে।

” বর্ষণের কাছে কিছু হয়েছে তোর?”

জল নাক টেনে বলে,,,

” ভেতরে এসো।”

জলের মা ঘরের ভেতরে ঢোকে।জল ঘরের জানালা সব লাগিয়ে দেয়।কাপড় দিয়ে আড়াল করে রাখা শরীরে নির্যাতনের কালো দাগগুলো উন্মুক্ত করে মায়ের সামনে। শ্যামবর্ণ গায়ে অসংখ্য দাগ।পেটের বা পাশটায় অসংখ্য সিগারেটের পো!ড়া দাগ।ডানপাশটায় বিরাট আঁচড়ের দাগে রক্ত জমাট বেঁধে কালো হয়ে আছে।

” এরপরও আমায় জিজ্ঞেস করবে আমি কেন কাঁদছি?”

জলের মা উঠে জলকে কষিয়ে চড় মা-রেন।চড় খেয়ে জল মায়ের দিকে অশ্রুসিক্ত চোখে তাকায়।

” লজ্জা করে না?মাকে এসব দেখাতে?এই শিক্ষা দিয়েছি তোকে?নির্লজ্জ কোথাকার।”

মায়ের কাছে নিজের ওপর চলা নির্যাতনে কথা জানানো লজ্জার কথা তা জলের জানা ছিলো না।

” তুমি কি চাও আম্মু তোমার মেয়ে কি মরে যাক?”

অশ্রুসিক্ত নয়নে মায়ের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে মারে জল।জলের মা কড়া গলায় বলেন,,,

” নিজেদের মধ্যকার ঘটনা যে মেয়ে সমাজকে বলিয়ে বেড়ায় তার মরে যাওয়াই শ্রেয়।”

জল তাচ্ছিল্যের হাসি দেয়।

” ট্রাস্ট মি আম্মু।আ!ত্মহত্যা যদি মহাপাপ না হতো তাহলে আমার লা*শ ই আসতো আমি আসতাম না।”

জলের মা তীব্র ঘৃণা নিয়ে মেয়ের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন।জলের মা বেরিয়ে যায়।যাওয়ার আগে মেয়েমে কড়া করে বলে দেন যেন এগুলো কাক পক্ষীতেও টের না পায়।মেয়ে হয়ে জন্মিয়েছো মানিয়ে নিতে শিখো।
জলের মায়ের যাওয়ার পানে দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে।সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা ড্রেসিন টেবিলটার সামনে যায় জল।কাপড়টা সড়িয়ে দেখে আয়নাটা ঝাপসা।বেশ মোটা স্তরের ধুলো পরেছে।হাত দিয়ে আয়নাটা পরিষ্কার করে কামিজ তুলে পেটে সিগারেটের ছ্যাঁকা গুলোকে আয়নায় দেখতে লাগে।দগদগে ঘা হয়ে রয়েছে।
একটা মানুষ এতটা হিংস্র হয় কিভাবে?স্ত্রী কি শুধুই ভো*গের বস্তু?সে মানুষ নয়? পুরুষ জাতটা কি অদ্ভুত।এই জাতের কাছেই নারী সবচে বেশি সুরক্ষিত আবার এই জাতের কাছেই নারী সবচে বেশি নির্যাতিত। বিয়ের আগে এই জাতটার প্রতি জলের মনে অনেক শ্রদ্ধা ছিলো।অথচ আজ এই জাতটার প্রতিই জলের তীব্র ঘৃণা।বিয়ের আগে জলের বাবা জলকে আগলে রেখে এখন যে এক জানো-য়ারের হাতে তুলে দিয়েছে তা কি আদোও জলের বাবা জানতে পারবে?চারটা মাসে জলের পুরো জীবনটাই বদলে গেছে।দিনে বর্ষণ আর পাঁচটা স্বাভাবিক মানুষের মতোই থাকে।বর্ষাকে বলার পর প্রতিদিন অফিস থেকে ফেরার পথে বর্ষণ জলের জন্য চকলেট আনতো।কিন্তু রাতেই কেমন বর্ষণ বদলে যেত যৌ*ন ক্ষুধা বর্ষণের মাঝে লুকিয়ে থাকা পশুত্বকে জাগিয়ে তুলতো।এমনকি বিশেষ দিন গুলোতেও জল রক্ষা পেত না।তলপেটে তীব্র ব্যথা,ব্যাকপেইন একদিকে জলকে আঘাত করছে আরেক দিকে গভীর রাত্রিতে সেই হিংস্রতার ভয়।
শারিরীক মানসিক দুইভাবেই জল অসুস্থ হয়ে পরে।কান্না করে যে একটু হাল্কা হবে তারও সুযোগ নেই।বলতে মানা,কাঁদতে মানা সবকিছুতে না না।এত না এর সমাধান একবারে শুরুতে করলেই তো হতো।মেয়েদের পৃথিবীতে জন্মাতে মানা।

বিকালেই জলের মা বর্ষণকে ফোন করে বুঝিয়ে দেন জলকে বর্ষণের হাতে।জলের বাবা জলের হঠাৎ আসার কারণ জানতে চাইলে জলের মা ছোটখাটো ঝগড়ারর কথা বলেন।বর্ষণ অফিস থেকে এসে যখন জলের মা-বাবার সাথে হাসিমুখে কথা বলছিলো তখন জলের মনেই হচ্ছিলো না যে এই মানুষটা রাতেই হিংস্র হয়ে ওঠবে। জলকে নিয়ে যাওয়ার সময় বর্ষণ যখন জলের হাত ধরেছিলো তখন জল একরাশ তীব্র বিরতি নিয়ে বর্ষণের হাতের দিকে তাকায়।অথচ এই তাকানোতে থাকার কথা ছিলো আস্থা আর ভালোবাসা।

শ্বশুরবাড়িতে ঢুকতেই শ্বাশুড়ির কুরুচিপূর্ণ প্রশ্নের সম্মুখীন হয় জল।

” ভোর রাতে কোথায় হাওয়া হয়ে গিয়েছিলে?কোনো ছেলের সাথে সম্পর্কে আছো নাকি?”

জলের শ্বাশুড়ি মুখের ওপর বলে দিতে ইচ্ছে করছিলো, “নিজের ছেলেকে আগে ঠিক করুন।তারপরে না হয় অন্যের দিকে আঙুল তুলবেন!”

জল টু শব্দ পর্যন্ত না করে ঘরে চলে যায়।বর্ষণও পেছন পেছন যেতে নিচ্ছিলো হঠাৎ ওর মা পেছন থেকে বলে,,,

” বাবু শোন।”

” হ্যাঁ,বলো মা।”

” বেশি বাড়াবাড়ি করিস না।বাইরে জানাজানি হলে থানাপুলিশ হয়ে যাবে কিন্তু।এর আগে কাজের মেয়েটার সাথে করেছিলো।গরীব মানুষ টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেছিলাম।”

” মা বিয়ে তো সে জন্যই করিয়েছো যাতে আমি আর বাইরের মেয়েদের সাথে না করি।সত্যি বলতে কি মা!সুন্দর গড়নের মেয়ে দেখলে আমি নিজেকে কন্ট্রোলে রাখতে পারি না।”

” তাই বলে…..”

থেমে যায় বর্ষণের মা।খানিকটা সময় পরে বলেন,,,

” যা করবি রয়ে শয়ে করবি।পাড়া-প্রতিবেশি জানলে বিপদ।আদিবার লা-শটা এখনো বাগানে মাটিতে মিশে আছে।সব গুলোকে মে*রে ফেললে কে তোকে মেয়ে দেবে?দুনিয়ার সব মেয়ে তোমার জন্য নয় কিন্তু।”

বর্ষণ কিছু বলে না।চুপচাপ নিজের ঘরে চলে যায়।ঘরে গিয়ে দেখে জল ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে।বর্ষণ গিয়ে জলের কোমর শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।জল বর্ষণের উপস্থিতি বুঝতে পেরে বর্ষণকে তীব্র বিরক্তি আর ঘৃণা নিয়ে দূরে ঠেলে দেয়।

” প্লিজ আমার কাছে আসবে না তুমি।”

মিনতি করে বলে জল।বর্ষণের তাতে কোনো ভ্রুক্ষেপই নেই।সে নেশালো চোখে জলের দিকে তাকায়।দুজনের চোখাচোখি হতেই জল তীব্র ঘৃণা নিয়ে বর্ষণের চোখ থেকে নিজের চোখ সরিয়ে নেয়।

বর্ষণ জলের ঠোঁট মুখ চেপে ধরে।জল ব্যথায় কুঁকড়ে ওঠে।

” খুব সাহস হয়েছে না?ভোর রাত্রিতে একা একা বাপের বাড়ি চলে গিয়েছো।বাপের বাড়ির আশা বাদ দাও।তোমায় বিয়ে করেছি।আমার কথায়ই তোমায় চলতে হবে।”

জল কষিয়ে চড় মারে বর্ষণকে।

” বিয়ে।বিয়ের মানে জানো তুমি আদোও?একটা মেয়েকে বিয়ে করে পার্মানেন্ট আর লিগালি যৌ*ন দাসী হিসেবে পেয়ে গেছো।দ্যাটস ইট!সে কি মানুষ না?কখনো কি জানতে চেয়েছো আমি কি চাই? প্রথম দিন থেকে নিজের চাহিদাটাকেই তুমি প্রাধান্য দিয়ে আসছো।সারাদিন তোমার মায়ের ফাইফরমাশ খেটেও আমি তার চোখে সারাদিন শুয়ে বসে থাকি।শরীর খারাপ হলে বিশ্রামের সুযোগটুকু পাই না আমি।না দিনে না রাতে।দিনে মায়ের ফাইফরমাশ খেটে কথা শুনবো আর রাতে ছেলের চাহিদা!বাপের বাড়ি গেলাম ভেবেছিলাম বাবা-মা কে পাশে পাবো।কিন্তু সে আর ভাগ্যে কই! মায়ের কথা মেনে নাও মানিয়ে নাও।আর বাবা জানতেই পারলো না তার মেয়েটা প্রতিদিন একটু একটু করে মারা যাচ্ছে।”

কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে জল কান্নায় ভেঙে পরে।বর্ষণ তীব্র বিরক্তি নিয়ে কিছুক্ষণ জলের দিকে তাকিয়ে থাকে।ঘরের দরজা লাগিয়ে এসে জলের চুলের মুঠে ধরে জলকে ধাক্কা দেয়।টাল সামলাতে না পেরে খাটের কোনের সাথে জল ঠোঁটে আঘাত পায়। মুহুর্তেই সেই কাটা স্থান থেকে ফিকনি দিয়ে রক্ত ঝড়তে লাগে।বর্ষণ আবার জলের চুলের মুঠি ধরে।জল তাল সামলাতে উঠে দাঁড়ায়।জলের ঠোঁটের কাটা অংশে ঘষা দিয়ে বলে,,

” একদম ঢং করবি না।মনে রাখিস তুই আমার বিয়ে করা বউ।”

চলবে,,,ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here