#মেঘের আড়ালে চাঁদ ❤
#writer: মহসিনা মুক্তি
#পর্বঃ চোদ্দ
বিকট একটা আওয়াজে তুলতুল চোখ আরো খিঁচে বন্ধ করে রাফসানকে আরো জোরে খামচে ধরে। পরবর্তীতে কারো ধমক খেয়ে নড়েচড়ে ওঠে। আস্তে আস্তে চোখ খোলে। আগে একচোখ খুলে চারপাশ দেখতে গিয়ে রাফসানের মুখের ওপর চোখ পড়ে। দেখে রাফসান তার দিকে ঝুঁকে আছে। এটা দেখে সে চোখ বড় বড় করে তার সিটের দিকে চলে যায়। কিন্তু একি? রাফসান তার দিকে আরো ঝুঁকে পড়ছে। তুলতুল ভয়ে চোখ বন্ধ করে।
রাফসান প্রচুর বিরক্ত তুলতুলের কাজে। তাই ধমক দেয় একটা-
-” এই মেয়ে এই ছাড়ো। একদম জোকের মত আটকে আছে। এই কি হয়েছে কি? আর বার বার চোখ বন্ধ করছ কেন? হাত সরাও।”
তুলতুল এবার ভালোভাবে তাকায়। দেখে সে রাফসানের শার্ট দুইহাতে শক্ত করে ধরে আছে। এজন্য রাফসান তার দিকে ঝুঁকে আছে। সে চট করে হাত সরিয়ে পিছিয়ে গিয়ে গাড়ির কাচের সঙ্গে মাথায় বারি খায়। তুলতুল ব্যাথা পেয়ে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বোকার মতো রাফসানের দিকে তাকায়। রাফসানও তার দিকেই তাকিয়ে আছে তবে মুখে হালকা হাসির রেশ রয়েছে তুলতুলের মনে হলো। সে মাথায় বারি খেয়েছে এজন্য হয়তো হাসছে। সে কি করেছে এতক্ষণ এটা মনে করে তুলতুল একটু লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করলো।
পরমূহুর্তেই তার কিছুক্ষন আগের কথা মনে পড়ল। তাদের গাড়ির সামনে তো দুটো বড় গাড়ি ছিল। সেগুলো কোথায়? তার মানে সে বেঁচে গিয়েছে। তুলতুল ইয়েয়ে বলে একটা লাফ দিতে গিয়ে রাফসানের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দেখে থেমে যায়। তখন গাড়ি দুটো একটা আগে ওপরটি একটু পিছনে ছিল। কিন্তু তুলতুল গাড়ির ভিতর থেকে ভয়ের সাথে একনজর দেখায় তার মনে হয়েছে দুটো গাড়িই একসাথে আসছে। কিন্তু তেমনটা ছিল না। কিন্তু শব্দ কিসের ছিল তাহলে। তুলতুল এবার শব্দটা কোথা থেকে আসলো তা দেখার জন্য আশেপাশে তাকিয়ে কিছু না দেখে পেছনে তাকায়। দেখে একটা বাইক মাঝ রাস্তায় পড়ে আছে। চালক খুড়িয়ে খুড়িয়ে বাইকের কাছে যাচ্ছে। তুলতুল রাফসানের দিকে আড়চোখে তাকায়। এটা রাফসানের কাজ নয় তো।
-“তুমি যা ভাবছো তা নয়। রাফসান এতো কাঁচা কাজ করে না। রাফসান অলওয়েজ ফুল স্প্রিরিটেই গাড়ি চালায় দক্ষতার সাথে বুঝেছো।”
-“হ্যাঁ! বুঝেছি আপনি কত ভালো গাড়ি চালান। এজন্যই তো কিছুক্ষণ আগে মরতে বসে ছিলাম। ” শেষের কথাটা আস্তে বললো।
রাফসান সিটে হেলান দিয়ে দুহাত মাথার পেছনে নিয়ে বলে-”
-” আমার সাথে আজকে থাকার ইচ্ছা আছে নাকি।”
-” মানে?” তুলতুল বোকার মতো প্রশ্ন করলো
-” মানে হলো এখানেই থাকার ইচ্ছা আছে নাকি। থাকলেও আমি সেটা হতে দিচ্ছি না। গাড়ি থামিয়েছি কখন নামছো না কেন? এখানেতো তোমার ঐ কি যেন নাম? হ্যা রনি নেই। যার ভয়ে এখানে বসে থাকবে।”
-” আপনার গাড়িতে একটু সময়ের জন্য উঠেছি দেখে আমার মতো সরল একটা মেয়ের সাথে এমন করলেন। ভালো হবে না দেখবেন।” তুলতুল কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলে সিটবেল্ট খুললো। তুলতুল যখন বের হতে যাবে তখন রাফসান তার হাত ধরে ফেলে বলে
-” ওয়েট। এদিকে ঘুরো।”
তুলতুল ঘুরে দেখে রাফসানের দৃষ্টি তার গলার দিকে। রাফসান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তাই তুলতুল ওড়না টা গলার আরো ওপরের দিকে টেনে দিতে গেলে রাফসান হাত ধরে ফেলে। তুলতুল তার গলার দিকে তাকায় তার গলায় চেইনের সাথে থাকা লকেট বের হয়ে রয়েছে। তুলতুল হাত ছাড়িয়ে বিরক্তির সাথে বলে
-” কি? নিজেই নামতে বলে আবার আটকে রাখছেন কেন?”
রাফসান গাড়ি লক করে স্টিয়ারিং এ ঘুষি দেয়। তুলতুল ভয় পেয়ে ভীত ভাবে তাকায়। আবার কি হলো এই লোকের? হঠাৎ করে সাইকোগিরি শুরু করলো কেন? রাফসান তুলতুলের দিকে রেগে তাকায়। আবার নিজের চুল খামচে টানতে লাগে তো আবার উদ্ভ্রান্তর মতো কাজ করে। রাফসান তুলতুলের দিকে এগিয়ে এসে তুলতুলের চোয়াল শক্ত করে চেপে ধরে চিৎকার করে বলে
-” এই লকেট তোমার কাছে এলো কি করে? কেন পরেছ এটা? ”
-” এটা আমার তাই আমি পরেছি। তাতে আপনার কি?”
-” না এটা তোমার না। তুমি মিথ্যা বলছো।”
-” আমি মিথ্যা বলবো কেন? এটা আমার দাদু আমাকে দিয়েছে। আমাদের বংশের সব মেয়েদেরই একই রকম লকেট দেয়া হয় জন্মের পর। আপনি কোথায় দেখেছেন?” তুলতুল ভয়ে ভয়ে বললো। তার গালে ব্যাথা লাগছে। রাফসানের হাত সরানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না।
রাফসান একটু সময়ের জন্য ছেড়ে দিয়ে আবার চেপে ধরে বললো -” কে তুমি? নাম কি তোমার?”
-” আমি তু.. তুলতুল।”
-“পুরো নাম কি? ”
-” হু?” তুলতুল হাবার মতো চেয়ে রইল। নিজের পুরো নামও ভুলে গিয়েছে ভয়ে? কি বিশ্রী ব্যাপার। তুলতুলের থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে রাফসান আবার বলতে শুরু করল
-” তোমার চেহারাই কি যথেষ্ট ছিল না আমাকে জ্বালাতে। এখন আবার এটা দিয়ে আমার যন্ত্রণা গুলো গুলো আবার বাড়িয়ে দিয়েছো। পুরনো ক্ষত তাজা করে দিয়েছ। কেন? সমস্যা কি তোমার।”
-” আপনার কি কোথাও কেটে গিয়েছে? কিন্তু আমি তো শুধু খামচি দিয়ে ধরেছি তাও ভয়ে এতে তো লকেট লাগে নি। তাহলে কিভাবে কাটবে?” তুলতুল না বুঝেই বোকার মত প্রশ্ন করলো।
-” ইউ ডাফার।” রাফসান আর কিছু বলতে গিয়েও বললো না। তাকে দেখতে ভয়ানক লাগছে এখন। চোখ গুলো লাল হয়ে আছে, যেন এখুনি রক্ত ঝরবে। শার্টের ওপরের কিছু বোতাম টেনে ছিড়ে ফেলেছে। মাথার চুলগুলো এলোমেলো হয়ে কপালের উপর পড়ে আছে। গাড়িতে এসি চালু থাকা অবস্থায় ও ঘেমে গিয়েছে। ঘুষি দেওয়ার কারনে হাত লাল হয়ে রয়েছে। হঠাৎ রাফসান নিজের ফোনটা নিয়ে গাড়ির পেছনে জোরে ছুড়ে মারে। এতে পেছনের কাচে লেগে কাচ ফেটে জোরে শব্দ হয়। তুলতুল পেছনে তাকায়, কাচ ভাঙেনি কিন্তু ফেটে খারাপ অবস্থা হয়ে রয়েছে। তুলতুল ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে। রাফসান গাড়ির লক খুলে তুলতুলকে শান্ত ভাবে বলে
-” গেট আউট।” তুলতুল তখনও ঝিম ধরে রাফসানের দিকে তাকিয়ে আছে। রাফসান এবার জোরে বলে
-“কথা কানে যায় নি? বের হও এখন থেকে। নাকি থাপ্পড় দেয়া লাগবে?”
এই কথা শুনে তুলতুল দ্রুত বের হয়ে দাঁড়ায়। রাফসান গাড়ির ডোর টেনে ঠাস করে বন্ধ করে দেয় ভেতর থেকেই।তুলতুলে কানে তালা লেগে গিয়েছে এতো শব্দে। সে কিছু একটা ভাবে। তারপর গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। তুলতুল মনে হয় রাফসানকে একটা ধন্যবাদ দেওয়া দরকার। তাকে রনির হাত থেকে তো বাঁচিয়েছে, যতই তার ওপর চিল্লাক আর রাগ করুক। তুলতুল এগিয়ে গিয়ে ড্রাইভিং সিটের উইন্ডোর কাচে টোকা দেয়। একবার, দুইবার, তিনবার টোকা দেওয়ার পরও কাচ না নামালে তুলতুল একটু জোরে টোকা দেয়। এতে রাফসান রাগী ভাবে গাড়ির কাচ নামিয়ে বলে
-“হোয়াট দা হেল! আবার কি চাই? ”
-” না মানে আপনাকে ধন্যবাদ দেওয়ার ছিল।”
-” কেনো থাপ্পড় দেওয়ার জন্য? ওকে আসো আরেকটা দিয়ে দেই। তাহলে থ্যাংকস ফুল হতে হবে না। কাম হেয়ার।”
-” আপনি বেশি বোঝেন। আমি কখন এটা বললাম। আমি তো ধন্যবাদ দিলাম এজন্য যে আপনার গাড়ির জন্য রনির হাত থেকে বেঁচে গিয়েছি তাই।” পরক্ষনেই তুলতুল কিছু একটা ভেবে জলদি ভাবে বললো
-” ধন্যবাদ। আপনি কি জানেন আপনার গাল গুলো অনেক কিউট। দেখলে টেনে দিতে মন চায়। এটা আমার এক বান্ধবী বলেছিল। আপনার ফ্যান। তাই ওর কথা চিন্তা করে এই কাজটা আমিই করলাম।”
বলে তুলতুল তাড়াতাড়ি দুইহাত দিয়ে রাফসানের গাল জোরে টেনে দিয়ে দৌড় দেয়। রাফসান এতোক্ষণ হা করে কথাগুলো শুনছিল। কিন্তু গাল টেনে দেওয়ার হুঁশ আসে। সে প্রচন্ড রেগে মাথা বের করে তুলতুলকে চিল্লিয়ে বলে
-” তোমাকে দেখে নেব। ইউ স্টুপিড।”
দৌড়রত অবস্থায় তুলতুল এই কথা শুনে খিলখিল করে হেসে উঠলো। তার কেনো জানি কথাটায় হাসি পেয়ে গেলো। সে এই ভয়ানক কাজটা কিভাবে করলো? পেছেন ফিরে দেখে রাফসান গাড়ি নিয়ে চলে যাচ্ছে। লোকটা রহস্যময়। তুলতুল কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে সামনের দিকে আগায়।
.
দিয়া তুলতুলদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সে আজকে প্রাইভেটে এ যায়নি। দিয়া জানে তুলতুল কিছুসময়ের মধ্যে চলে আসবে। কিন্তু ও তুলতুলকে দেখতে আসেনি। আজ কেন জানি হঠাৎ করে তিয়াস কে খুব দেখতে ইচ্ছা করছিল। তাই কোনোকিছু না ভেবেই চলে এসেছে। কিন্তু এখন বাড়িতে ঢুকতে ভয় লাগছে যদি তিয়াস রাগ করে থাপ্পড় দেয়? ধুর দিয়া সব ভয়ডর কে সাইডে রেখে মনের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিতে বাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। বাড়ির মেইন গেট খোলা। দিয়া বাড়িতে ঢুকে তুলতুলের মা আফসা বেগমের সামনে পড়লো। দিয়া তাকে দেখে সালাম দেয়। আফসা বেগম জিজ্ঞেস করেন
-” কিরে দিয়া তুই একা কেন? তুলতুল কই? নাকি প্রাইভেট শেষে তোকে রেখেই দোকানে দৌড় দিয়েছে?”
-” না আন্টি তুলতুল প্রাইভেটেই গেছে। আমি আজ যাইনি, ভালো লাগছিল না। তাই তুলতুলের সাথে দেখা করতে এসেছি।”
-” ও তা ভালোই করেছিস। তুই তুলতুলের ঘরে গিয়ে বস। আজকে থাকবি এখানে।”
-“আন্টি বাসায় থাকার কথা বলে আসিনি পরে এসে থাকবো। আজকে দেখা করে চলে যাবো।”
-” না তা শুনছিনা। আজকে এখানেই থাকবি। বাড়িতে ফোন করে বলে দিবি। তোকে তো এবাড়িতে দেখাই যায় না। আর তুলতুলের তো এতক্ষণে ছুটি হয়ে যাওয়ার কথা। কি যে করে মেয়েটা, বলেছি ছুটি হলে সোজা বাসায় আসবি তা না করে এখানে সেখানে ঘুরে বেড়ায়। বড় হয়েছে তারপরও আমার টেনশনে করা লাগে আর পারি না বাপু। যাকগে,ও চলে আসবে তুই রুমে গিয়ে বস। আমি রান্না বসাই গিয়ে। ”
দিয়া মাথা নেড়ে তুলতুলের রুমের দিকে এগোয়। এবাড়ির সবাই তাকে ভালোবাসে শুধু তিয়াস ছাড়া। হুহ। ও যাকে ভালবাসে সেই ওকে ভালবাসে না। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুমে ঢুকে বিছানায় বসলো দিয়া। কিন্তু বিছানার অবস্থা দেখে ওর চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গিয়েছে। বিছানায় বালিশ, কাথা,বই সব একসাথে ছড়ানো ছিটানো। নিশ্চয়ই সকালে দেরি করে ওঠে তাড়াতাড়ি চলে গিয়েছে। দিয়া উঠে বিছানা গুছিয়ে বইগুলো টেবিলে সব ঠিক করে রাখে। তখন তার চোখে একটা ডায়রির দিকে পড়ে। একটা বইয়ের নিচে রাখা, ডায়েরির কিছু অংশ বের হয়ে রয়েছে। তুলতুলের তো ডায়রি লেখার অভ্যাস নেই। ও ডায়রিটা নিতে যায় তখনই দরজায় শব্দ হয় পেছনে তাকিয়ে দেখে তিয়াস ওকে দেখে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে। দিয়া ভয় পেল এখন আবার না বকাবকি করে। দিয়া সরে গিয়ে বিছানার পাশে দাঁড়ালো। তিয়াস এগিয়ে আসতে আসতে স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন করলো
-” তুই এখানে কি করছিস?”
-” দে.. দেখা করতে এসেছি। ”
-” দেখা করতে এসেছিস মানে? কার সাথে দেখা করতে এসেছিস?
-” তুলতুলের সাথে দেখা করতে এসেছি। এমন ভাবে তাকিয়ে আছেন যেনো আপনার সাথে দেখা করতে এসেছি। হুহ।”
-” আমার তো তাই মনে হচ্ছে। যাইহোক, তুই প্রাইভেটে না গিয়ে ওর সাথে দেখা করতে এসেছিস কেন? প্রাইভেটে গেলেই তো দেখা হয়ে যেত। দিনদিন এত ফাঁকিবাজ হচ্ছিস।”
-“আমি মোটেও ফাঁকিবাজ নই। মাথা ব্যাথা করছিল তাই যাইনি। আর আমি না গেলে আপনার কি?” দিয়া মুখ ফুলিয়ে বললো। তিয়াস একদম দিয়ার কাছাকাছি চলে এসেছে। দিয়া ভড়কে গিয়ে বিছানায় বসে পড়ে। কিন্তু তিয়াস ভাবলেশহীন ভাবে তাকিয়ে আছে। পকেটে হাত ঢুকিয়ে। দিয়া তিয়াসের দিকে তাকায়। তিয়াস গাঢ় সবুজ কালার একটা টি-শার্ট আর ব্লাক কালার থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পড়ে আছে। দিয়া তাকিয়ে থাকা সময়ই কখন যে তিয়াস চেয়ার টেনে সামনে বসেছে সেটা খেয়াল করে নি। তিয়াস সামনে হাত নাড়ালে খেয়াল হয়। দিয়া লজ্জা পায়। হাবলার মতো তাকিয়ে দেখছিল এতোক্ষণ। তিয়াস দিয়াকে জিজ্ঞেস করে -” তোদের দুইজনের কিছুদিন পর পর কি হয়? তুলতুল হঠাৎ হঠাৎ চুপ হয়ে যায়। কারো সাথে কথা বলে না। আর তুই ভয়ে ভয়ে থাকিস। কি হয়েছে সত্যি করে বল। ঐ দিন পালিয়ে বেঁচে গিয়েছিস না বলে। আজকে তা হচ্ছে না।”
-” কই কি হবে কিছুই হয়নি তো।” দিয়া জোর করে হাসার চেষ্টা করলো। সে ফেঁসে গিয়েছে। কিছু বললে তুলতুল ওকে ভর্তা বানাবে।
-” এক থাপ্পড় মারবো মিথ্যা বললে। তোরা ওইদিন কলেজের নামে বেরিয়েছিলি। কিন্তু আমি খোঁজ নিয়েছি কলেজ বন্ধ ছিল ওদিন। এখন কাহিনি কি সেটা বল। তুলতুলকে জিজ্ঞেস করলে তো মুখ খুলবে না। তুই বল।”
-” না মানে আমরা জানতাম না কলেজ বন্ধ ছিল তাই গিয়েছিলাম। আর আসার সময় বৃষ্টি ছিল তাই বড় একটা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে ছিলাম তুলতুল ওখানে ভয় পেয়েছে। ভূতের ভয়। তুলতুলতো অনেক ভয় পায় তাই। হেহেহে।” দিয়া কোনো রকমে মিথ্যা বললো। কিন্তু তিয়াসের মুখ দেখে মনে হলো না ও বিশ্বাস করেছে এ কথা। তিয়াস দিয়ার মুখের সামনে ঝুঁকে জিজ্ঞাস করে-” সত্যি বলছিস তো তুই? পড়ে যদি আমি অন্য কিছু জানতে পারি তো কি হবে বুঝতে পারছিস? ” দিয়ার মনে হচ্ছে তার হার্টবিট অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে গিয়েছে। যার শব্দ তিয়াস শুনতে পারছে। দিয়া কথা না বলে কোনোরকমে মাথা নাড়ায়। তিয়াস একবার দিয়ার দিকে তাকিয়ে উঠে বের হয়ে যায়। দিয়া বড় করে নিঃশ্বাস ফেলে। তার মনে হচ্ছিল এতক্ষণ নিঃশ্বাস আটকে ছিল। তাওহী দৌড়ে রুমে ঢুকে বলে-
“তুতু তু তুতু তারা,
দিয়া মনি খাইছে ধরা।”
দিয়া রাগী ভাবে তাকিয়ে বললো এই তুই কি বললি। আবার বল। তাওহী বলে
-” কোথায় কি বললাম? আমি তো গান শুনে আসলাম সেটাই গাইছিলাম।
“তুতু তু তুতু তারা,
মর্জিনার বাপ খাইছে ধরা।”
হিহিহি
-“ভাই – বোন সবকটাই সেই লেভেলের ফাজিল ” দিয়া বিরবির করতে করতে ওভাবেই বিছানায় শুয়ে পড়ে।
চলবে…
।