#সন্ধ্যে_নামার_পরে 🔞
ফাতেমা তুজ জোহরা
পর্ব-২৭
দোলনকে নিয়ে বাড়ি ফেরা হয়। খুব কষ্টে দোলনকে আনার জন্য গাড়ি ম্যানেজ করতে হয়েছে। তার আগে ম্যানেজ করতে হয়েছে কফিনের। কারণ স্বাভাবিক ভাবে দোলনকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব না। এটা আবার লোক চক্ষুতে পড়লে নানান কথা উঠে আসবে। শেষে আরেক কেলেঙ্কারি হতে পারে। গাড়ির ব্যবস্থা অবশ্য আলাল সাহেবই করে দিয়েছে। তিনজন মানুষ এখন বড্ড ক্লান্ত। দেহ যেন এগোতেই চায় না। যথা দ্রুত সম্ভব দোলনের কবরের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। দেহ প্রতি সেকেন্ডেই যেন বেশি থেকে বেশি দুর্গন্ধ ছড়ানোর প্রতিযোগিতা করছে। এই অবস্থায় দ্রুত কবর দিতে না পারলে যাচ্ছেতাই একটা অবস্থা হয়ে যাবে। আজ সব টাকার খেলা হচ্ছে। সব কাজেই টাকা ঢালতে হচ্ছে হাত খুলে। এই সব খরচই করছেন আলাল সাহেব। নিজের সন্তান বা আত্মীয় না হলেও মন থেকে মেনে নেয়া সন্তান তুল্য ছেলে-মেয়ে দুটোর জন্য হাত খুলে উজার করছেন যখন যা লাগছে। মাঝেমধ্যে রক্তের সম্পর্কে সম্পর্কিত না হয়েও কিছু মানুষ খুব কাছের হয়। তাদেরকে ভালোবাসতে মনে কোনো কৃপণতা আসে না। এটা হয় আত্মার সাথে সম্পর্কিত। তাদের ভালোমন্দে অনায়াসে নিজেকে বিলিয়ে দেয়া যায়। রেশমি-আলাল দম্পতি ঠিক এই কাজটাই করছেন।
সিয়ামের নিকটাত্মীয় বলতে কেউ নেই। তাই আহাজারি করার মতো বাড়তি কোনো লোক নেই। যারা আছে তারা হলো এই আলাল সাহেবের পরিবার আর ফাইজার পরিবার। ইতোমধ্যে ফাইজার আসল বাবা-মা, দাদা-দাদি এসে হাজির হয়েছে আলাল সাহেবের বাসায়। দোলনকে গোসল করানোর জন্য কাউকে পাওয়া যাচ্ছিলো না। বিশ্রী গন্ধের জন্য কেউ কাছে যেতে চাইছিলো না। বেশি টাকা অফার করলে প্রথমে রাজি হলে শেষে গিয়ে নাকোচ করে দিচ্ছে। ফাইজা আর তার দুই মা রেশমি এবং মিনা মিলে দোলনকে গোসল করানোর প্রস্তাব করলে সিয়াম তাতে বাধ সাধে। সিয়াম চায় না তাদের এই কষ্টে ফেলতে। কিন্তু কোনো উপায়ও আর ছিল না। শেষমেশ সিয়াম রাজি হয়। অতঃপর দোলনের শেষ কার্য সম্পন্ন করা হয়।
__________
মামা যেই পথ ধরে এগিয়েছে তার প্রতিটা কদমে ফোঁটা ফোঁটা রক্তবিন্দু ছিল। এ দ্বারা সহজেই বুঝা যায় যে মামা কোন দিকে গিয়েছে। পলক তার সাথে বাড়ি এবং আশেপাশের আরো কয়েকজন নিয়ে সেই পথ ধরে এগোতে থাকে। কারো হাতে হারিকেন, কারো হাতে ছোট টর্চ লাইট আবার কেউবা মশাল জ্বালিয়ে নিয়েছে সাথে করে। রাতের অন্ধকারে এত মানুষ এভাবে বের হলে যে কেউই ভয় পেয়ে যাবে। তবে পাড়াতে যেন এত রাতের বেলাতেই হৈচৈ পড়ে গেলো।
মামা ডাক্তারকে দোকানে না পেয়ে রওনা করে ডাক্তারের বাড়ির দিকে। ডাক্তারের বাড়িতে গিয়ে দরজায় টোকা দিকে ডাক্তারের ঘরের সবাই ভয় পেয়ে গেলো। প্রায় মধ্য রাত হতে চলল। চারদিক নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। এমন সময় সবাই গভীর ঘুমে। এখন যেহেতু কেউ এসে দরজায় টোকা দিয়েছে, তার মানে সে ডাকাত। এত রাতে ডাকাতি করতে এসেছে। ডাকাতের ভয়ে দরজা খুলতে চাইছিলো না। মামা বারবার নিজের পরিচয় দেয়ার এক পর্যায়ে ডাক্তার বিছানা থেকে নেমে এসে দরজা খুলে দেয়। দরজা খোলার পর হারিকেনের আলোয় মামার অবস্থা দেখে ডাক্তার অবাক হলেন। মামাতো ডাক্তারকে বেশ অনুনয় বিনয় করছিলো যাতে তার এই বিশেষ অঙ্গ এখনই সেলাই করে দেয়। ডাক্তার পড়লো বিপাকে। এই মুহুর্তে এই কাজ করা সম্ভব না। সেলাইয়ের কাজে যা অস্ত্র এবং ওষুধ ব্যবহার করা হবে তা সবইতো বাজারে দোকানে। বাড়িতে বসে কিছুই করা যাবে না।
ডাক্তার তাকে নিয়ে বাজারের দিকে পা বাড়াতেই বাড়ির উঠানে চলে আসে এক দল যুবক-বুড়ো। এদের আসতে দেখে ডাক্তার কিছুটা ঘাবড়ে যায়।
ডাক্তার মনের কথা মুখে ফুটিয়ে বলেই ফেলল, “কি রে মানিক, তোর পিছে পিছে এত মানুষ আসলো কেন ? আর তোর এই অবস্থা কিভাবে হইছে ? নিশ্চই কোনো ঘাপলা আছে। নয়তো এত মানুষ কেন আসবো ?”
মামাকে সবাই যাচ্ছেতাই গালাগালি করলো। তারপর গণধোলাই দিয়ে নিয়ে যাওয়া হলো বাজারে। সারারাত বাজারে বেঁধে রেখেছে। ভোরের আলো ফুটতেই এলাকার চেয়ারম্যান-মেম্বার ও অন্যান্য গুনি ব্যক্তিবর্গ সহ গ্রামের প্রায় সবাই উপস্থিত হতে থাকে। মহিলারা নিজ গৃহেই অবস্থান করে। এদিকে মাম্মাকে কোনো চিকিৎসাও দেয়া হয়নি। রক্তক্ষরণ হতে হতে মামার অবস্থা নাজেহাল। বেলা বাড়তেই শুরু হলো বিচারকার্য। তার অর্ধেক কেটে যাওয়া বিশেষ অঙ্গের সাথে বেঁধে দেয়া হয় এক টুকরো ইট। তার সাথে বেঁধে দেয়া হয় দুটো শিং মাছ। মাথার চুল এলোমেলো করে কেটে মুখে কালি মাখিয়ে দেয়া হয়। গলায় পড়িয়ে দেয়া হয় জুতার মালা। তারপর তিন গ্রাম তাকে হাঁটিয়ে হাঁটিয়ে নেয়া হয়। হাঁটতে হাঁটতে নিজের কুকর্মের জন্য মাফ চাইতে হয়েছে প্রতি মুহুর্তে। হাঁটতে নিলেই শিং মাছের শিঙের গুঁতা খাওয়াতো ফ্রি।
মামাকে এমন শাস্তি দেয়া হয়েছে যা দেখে গ্রামের কেউই এমন সাহস করা তো দূরে থাক, কেউ প্রেমও করেনি। সুমাইয়াকে তার সাহসীকতার জন্য চেক সহ আর্থিক পুরুষ্কারও দেয়া হয় সরকার থেকে।
___________
দুদিন যাবত পানির ট্যাংকে পানি তোলার কিছুক্ষণ পরেই পালটে যাচ্ছে পানির স্বাদ। ফ্লাটের অনেকেই ইতোমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আরিফের কিছুটা পেটে ব্যথা হচ্ছে। তবুও ডিউটির তাগিদে থানায় উপস্থিত হলো সে। আয়মান দেখলো আরিফ চেয়ারে পেট চেপে ধরে কাচুমাচু হয়ে বসে আছে। ঘনঘন নিশ্বাসের সাথে বেরিয়ে আসছে মৃদু ব্যথাতুর আওয়াজ। আয়মান এগিয়ে গিয়ে আরিফের অবস্থা জানতে চাইলে আরিফ পেট ব্যথার কথা জানালো। আয়মান একজন কনস্টেবলকে ডেকে আরিফের জন্য ওষুধ আনালো। আরিফ তার সন্দেহের কথা জানালো যে, ট্যাংকের পানি দুর্গন্ধ হওয়ার জন্য বোধহয় এমন হচ্ছে।
আয়মান আরিফের কথায় মৃদু হেসে বলল, “ট্যাংক বোধহয় পরিষ্কার করো না। এখন গন্ধওয়ালা পানি খেয়ে পেট ব্যথা হলে এটা কার দোষ বলো ?”
আরিফ ধীরে বলল, “সপ্তাহখানেক আগেই ট্যাংক পরিষ্কার করা হয়েছে। আমি নিজেই পরিষ্কার করেছি। বাড়িওয়ালাতো এসবে খোঁজ রাখে না। ওনার শুধু ভাড়ার টাকা পেলেই শান্তি।”
আয়মান বলল, “অদ্ভুত ব্যপার। কিছুদিন আগেই ধোয়া হলে পানি এখনই গন্ধ হবে কেন ? শুধু এক সপ্তাহই বা কেন ? প্রায় বছরখানেক না ধুলেও তো গন্ধ হয় না। নিশ্চয় ট্যাংকে কিছু পড়েছে। দেখো তো টিকটিকি মরে পড়ে রইলো নাকি।”
আরিফ বমি ভাব করে বলল, “ওয়ায়ায়াক… টিকটিকি ! আমি আর ওই ট্যাংকের পানি খাবো না। আজই গিয়ে চেক করবো।”
বিকেল হবার আগেই আরিফ ছুটি নিয়ে বাসায় চলে আসলো। বাসার দারওয়ান ও সাথে আরো দুজন মানুষ যারা এখানেই থাকে, তাদেরকে নিয়ে পানির ট্যাংক চেক করতে গেলো। ট্যাংকের পানি সব নিংড়ে শেষ করে তারপর ট্যাংকের ঢাকনা খুলতেই নাকে বিশ্রী গন্ধ এসে আঘাত করলো। টর্চ জ্বালিয়ে ভেতরে আলো ফেললে দেখলো একটা মাঝারি সাইজের বস্তা এবং এর ভেতরে কিছু একটা আছে। ট্যাংকটা বেশ বড় হওয়ায় দারওয়ান মই বেয়ে ট্যাংকের ভেতর ঢুকে বস্তাটা বের করে আনলো। দুর্গন্ধের জন্য সবাই ডাবল করে মাস্ক পড়ছে। কিন্তু এতে তেমন লাভ হলো না। বস্তার মুখে বাঁধা দঁড়িটা খুলে বস্তাটা মেলে ধরতেই একেকজন বস্তা হতে কয়েক হাত দূরে সরে যায়। একজনতো বমিই করে ফেললো। রুম নম্বর ১০৩ কক্ষের মহিলা এই বস্তায়। মাথাটা শুরু আস্ত রাখা। আর বাকি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সব টুকরো করে রেখে দিয়েছে। উপস্থিত কারো ধারনাই ছিল না যে এমন হতে পারে।
আরিফের পেট ভিষণ জোরে মোচড় দিয়ে উঠলো। কি খেয়েছে সে এতদিন, এসব ভেবেই গা গুলিয়ে বমি পাচ্ছে তার। আরিফ পেটে চেপে ধরে এক দৌড়ে নিজেদের ঘরে চলে যায়। দ্রুত ডায়াল করে আয়মানের নম্বরে। কোনরকমে সে এখানকার অবস্থা বলতে পারলো। বলা শেষ হওয়ার আগ মুহুর্তেই আরিফ অজ্ঞান হয়ে পড়ে। আরিফের বউ তখন বাহিরে ছিল। ঘরে এসে আরিফকে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে বেশ ঘাবড়ে যায়।
আয়মান পুলিশ ফোর্স নিয়ে রওনা দেয় আরিফদের বাসার উদ্দেশ্যে। সাথে করে এম্বুলেন্স নিতেও ভুলেনি। আয়মান বুঝতে পারছে সেখানকার অবস্থা। সবাইকে হাসপাতালে এডমিড হওয়া প্রয়োজন। চোখের সামনে এটা যারা দেখেছে, তাদের অবস্থা শোচনীয় পর্যায়ে চলে গিয়েছে।
চলবে…#সন্ধ্যে_নামার_পরে 🔞
ফাতেমা তুজ জোহরা
পর্ব-২৮
সারাদিন সব কাজ শেষ করে রাতে ফাইজা তার ল্যাপটপ নিয়ে বসলো। ফোন কভার খুলে সেখান থেকে ওই ক্যামেরা থেকে পাওয়া মেমোরি কার্ডটা বের করে ল্যাপটপে সেট আপ করে নিলো। ফাইজার ভয়টা ধীরে ধীরে বেড়ে যাচ্ছে। ভিডিও অন করে কি দৃশ্য দেখতে চলেছে এই ভেবে। একপর্যায়ে শুরু হলো ভিডিও। দোলনের সাথে ঘটতে থাকা ঘটনার দৃশ্যাবলি ফাইজার নিজের অতীতের কথা মনে করিয়ে দিলো। ফাইজার যেন সহ্য হচ্ছিলো না। চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়েই যাচ্ছিলো। তবুও দেখা বন্ধ করলো না। প্রতিটা ছেলের চেহারা ভালো করে বোঝার চেষ্টা করলো ফাইজা। ভিডিও যতই শেষের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো, ফাইজার ততই নিশ্বাস ঘন হয়ে আসছিল। নিশ্বাসের দৈর্ঘ্য হয়ে আসে ছোট। দোলনের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা চরম পর্যায়ের কষ্টের। ফাইজার দম বন্ধ হবার উপক্রম হলো। টেনে টেনে নিশ্বাস নেওয়া শুরু করলো এক পর্যায়ে। বিছানার কিনারায় বসে ছিল সে। সেখান থেকে মাটিতে পড়ে গিয়ে গড়াগড়ি শুরু করে। চোখের সামনে দোলন আর তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো যেন এক হয়ে ছুটাছুটি করছে।
রেশমি বেগম কোনো কারণে ফাইজার ঘরে এসেছিলেন। এসে ফাইজাকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখে তিনি বেশ জোরেই এক চিৎকার করলেন। ছুটে গিয়ে ফাইজার সামনে বসে পড়ে। তারপর ফাইজাকে তুলে বসিয়ে তার মাথা সযত্নে নিজ বুকে ধরেন। ফাইজাকে এই মুহুর্তে রেশমি কিছুই জিজ্ঞেস করলেন না। ফাইজার অবস্থা দেখে খাটের উপর রাখা ল্যাপটপের দিকে নজর পড়তেই রেশমি যা বুঝার বুঝে নিলেন। একে একে ঘরে সবাই ফাইজার ঘরে উপস্থিত হয়। ল্যাপটপে ভিডিও তখনো চলছিল। ফাইজাকে ধরে রাখার কারণে রেশমি ভিডিও অফ করতেও পারছিলো না। ঘরে এসে সবাই ফাইজার অবস্থা দেখে বেশ চিন্তিত হয়ে পড়লো। আলাল সাহেব তখনই এম্বুলেন্স খবর দিলেন। জীবনে একবার বড় ধরনের দূর্ঘটনার সম্মুখীন হয়ে ফাইজা বেশ অনেকদিন শকে ছিল। হুট করে এখন আবার কেন এমন হলো হুট করে কেউ বুঝলো না। ল্যাপটপ থেকে আর্তনাদের আওয়াজ ভেসে আসছে। পরিচিত এক কণ্ঠস্বর। সিয়াম এগিয়ে গেলো ল্যাপটপের দিকে।
রেশমি সিয়ামকে এগোতে দেখে দ্রুত বলে উঠলো, “দেখো না ওটা। ও তোমার বোন, দোলন। চোখ রেখো না ওদিকে। ওকে খুবলে খাওয়ার দৃশ্য। তোমার সহ্য হবে না। এমনিতেও, এটা দেখা তোমার অনুচিত।”
এই কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। ফাইজার পরিবারের সবাই তখনো এ বাসায় থেকে গিয়েছিল। উপস্থিত সবার বুঝতে বাকি রইলো না যে, ফাইজার কেন এমন হলো। সিয়ামের মনে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। এটা ফাইজা পেলো কোথায় ? প্রমাণ সূত্র যদি পেয়েও থাকে তাহলে আর কাউকে জানালো না কেন ? রেশমি বেগম ফাইজার আসল মা মিনাকে বলল ফাইজাকে আঁকড়ে ধরার জন্য। মিনা এগিয়ে গিয়ে ফাইজাকে জড়িয়ে ধরলে রেশমি দ্রুত উঠে গিয়ে ল্যাপটপটা অফ করে দিলো। তারপর ল্যাপটপটা নিজের ঘরে নিয়ে গেলো। আলমারিতে ল্যাপটপ রেখে তালাবদ্ধ করে দিলো। যাতে অন্য কেউ এখন এটাতে হাত দিতে না পারে। কিছু সময়ের মধ্যে এম্বুলেন্স এসে হাজির হয়। ফাইজাকে এডমিড করানো হয় হাসপাতালে।
_________
আয়মান আরিফদের বাসায় পৌঁছে দেখলো প্রায় হৈচৈ অবস্থা। এতটুকু সময়ে খবর প্রচার হয়ে গিয়েছে পুরো এলাকায়। বাসার সামনে মানুষের সমাগম। বাসার ভেতরে গিয়ে দেখলো বেশ কয়েকজন বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে যারা পানির ট্যাংক থেকে টুকরো করা ডেড বডি তুলতে দেখেছে। আমাদের মানব পাকস্থলী বড়ই অদ্ভুত। না দেখে আমরা জঘন্য জিনিসও খেয়ে হজম করে ফেলতে পারি। এতে অসুস্থতার কোনো ছিটেফোঁটাও আমাদের ছোঁয় না। আবার এই জঘন্যের তালিকার কিছু না খেলেও, শুধু দেখলেও নানান অসুস্থতা শুরু হয়ে যায়। এখানকার অবস্থা এখন এমন। অসুস্থদের দ্রুত হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হলো।
১০৩ নম্বর কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে আয়মান দারওয়ানের সাথে কথা বলছিল। আয়মান আর দাওয়ানের মধ্যে কথোপকথন এমন ছিল,
– এই ঘরে কি ভদ্রমহিলা একাই থাকতেন নাকি ফ্যামিলিও থাকতো ?
– একা থাকতো না। স্বামী-স্ত্রী থাকতো। ওনার স্বামীর নাম সুজন হাওলাদার। আমি খালি ওনার স্বামীর নামই জানি। ওনার নাম জানিনা।
– সুজন কোথায় আছে এখন ? শেষ কখন দেখেছিলেন তাকে ?
– আজকে সকালেই তো দেখলাম। বরাবরের মতোই স্বাভাবিক ভাবে আমারে হাসি দিয়া ভালো মন্দ জিগাইয়া বাইর হইয়া গেলো।
– কোনো সন্দেহজনক কি কিছুই চোখে পড়েনি ?
– না স্যার, ওইরকম কিছুই চোখে পড়ে নাই।
– সুজনের স্ত্রী কি সবসময় ঘরেই থাকতো নাকি সেও কাজে যেতো ?
– হ্যা স্যার, সেও কাজে যাইতো।
– ইদানীং তাকে বের হতে না দেখে কি কোনো সন্দেহ জাগেনি আপনার মনে ?
– সন্দেহ বলতে স্যার, তেমন কোনো ভাবনা আসে নাই মাথায়। ওনার স্ত্রীর কথা একবার জিগাইছিলাম, উনি কইলো উনার স্ত্রী নাকি অসুস্থ। সেই জন্য ঘর থাইকা বের হয় না। এরপর আর তেমন কিছু জিগাই নাই।
– সুজন প্রতিদিন অফিস থেকে বাসায় ফেরে কখন ?
– এইতো স্যার, রাত আটটা নাগাদ।
– ঠিক আছে, এখন বাড়িওয়ালাকে এখন একটু ডেকে দিন।
– ঠিক আছে।
দারওয়ান চলে গেলো বাড়িওয়ালাকে ডাকতে। মিনিট কয়েকের মধ্যেই বাড়িওয়ালা ১০৩ নম্বর কক্ষের ডুপ্লিকেট চাবি সহ হাজির হোন। আয়মান বাড়িওয়ালাকে জিজ্ঞেসের মধ্যে শুধু এটাই বলল যে, সুজনরা কতদিন যাবত এই ফ্লাটে রয়েছে ? বাড়িওয়ালা জানালেন যে, ওরা মাসখানেক যাবত আছে এখানে। এক মাসের মধ্যে কি এমন হতে পারে, যে কারণে এভাবে একজন মানুষকে মেরে নিশ্চিহ্ন করে দিতে হবে ?
আয়মান চাবি খুলে ঘরে প্রবেশ করলো। সাথে কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা ও শুধু বাড়িওয়ালাকে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হলো। এমনিতেও এখন তেমন কেউ নেই। বাসার সবাই এখন হাসপাতালে। বাহিরের জনসাধারণ বাহিরেই আছে। দারওয়ানকে দিয়ে গেইটে তালা লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। ঘরে প্রবেশ করতেই কড়া স্মেল আসলো নাকে। সুজন হয়তো প্রচুর পরিমাণে রুম স্প্রে করে রেখেছে। কিছুটা কাঁচা রঙের ঘ্রাণও পাওয়া যাচ্ছিলো। বদ্ধ ঘরে গন্ধটা এখন মাথা ধরে যাচ্ছে। অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো না। পর্যাপ্ত সীমার মধ্যে সবকিছুই সুন্দর।
ঘরে বাড়িওয়ালা বলে বলে দিচ্ছিলো কোন দিকে কি আছে। মানে কোন দিকে কোন কক্ষ আরকি। হাইডেন কোনো প্লেস আছে কিনা ইত্যাদি। এসব বলা শেষ হলে বাড়িওয়ালাকে চলে যেতে বলা হয়। এও বলা হয় যে, সে যেন বাড়ি থেকে বের না হয়। বাড়িওয়ালার সাথে একজন কনস্টেবলকে দেয়া হয় নজর রাখার জন্য। ঘরে সবাই আনাচে কানাচে সব খানে খোজাখুজি করছে কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ার জন্য। ডেডবডি কোথায় বসে টুকরো করেছে সে, ঘরের ভেতর নাকি বাথরুমে ? এই কাজের সময় অবশ্যই কোথাও না কোথাও বিন্দু পরিমাণ হলেও রক্তের ফোঁটা থাকার কথা। কিন্তু কোথায় আছে এটা ? সবাই খুব মনোযোগ সহকারে প্রতিটা জিনিস, দরজা, জানালা এবং দেয়ালগুলো ভালো করে চোখ বুলিয়ে যাচ্ছিলো। হঠাৎ একজনের চোখে দরজার ছিটকিনির নিচের দিকে লালচে কিছু চোখে পড়ে। ফরেনসিক বিভাগের লোকজন ওই মহিলার টুকরো নিয়ে ঘাটাঘাটি করছিলো। আয়মান আর্জেন্ট খবর পাঠালে তারা এখানে চলে আসে। ফরেনসিকের একজন কর্মকর্তা ছিটকিনি থেকে লাল রঙের বস্তুটাকে সংগ্রহ করে এবং কিছুক্ষণ সময় নিয়ে পরীক্ষা করে জানায় যে এটা রক্ত। তার মানে সুজন পাষবিক কাজটা একাই এখানে করেছে।
আয়মান দেয়ার পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ছিল। হুট করেই দেয়ালে হাত লাগলে হাতে রঙ লেগে গেলো। রঙগুলো সদ্য লাগানো তা বুঝাই যাচ্ছিলো। নিশ্চই দেয়ালে আরো রক্তের ছাপ আছে। এই রক্তের ছাপ মোছার জন্য রঙ করেছে। কিন্তু সুজন একা এত কিছু কিভাবে করলো ? আয়মানের মাথায় এখন অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। বাড়িওয়ালাকে আয়মানের কিছুটা সন্দেহ হলো। কেননা, পুরো বাসার মানুষ যেখানে অসুস্থ হয়ে গিয়েছে সেখানে বাড়িওয়ালা মনির কিভাবে সুস্থ আছে এখনো ? সেতো সবসময় বাসাতেই অবস্থান করে। তাহলে সে কি এই ট্যাংকের পানি খায়নি ? ওদিকে সুজনও অফিসে গিয়েছে বলল দারওয়ান। তারমানে সেও সুস্থ স্বাভাবিক আছে। কোথাও এদের যোগসূত্র আছে বলে মনে হচ্ছে আয়মানের।
চলবে…#সন্ধ্যে_নামার_পরে 🔞
ফাতেমা তুজ জোহরা
পর্ব-২৯
ফাইজা এখন অনেকটাই সুস্থ। যেরকম অবস্থা হয়েছিল, তা দেখে সবাই ভয় পেয়ে গিয়েছিল। এখন ফাইজার স্বাভাবিকতায় সবার মনে স্বস্তি ফিরে আসে। সকালে ফাইজাকে বাড়ি ফিরিয়ে আনা হয়। ফাইজার আসল বাবা-মা, দাদা-দাদি ওনারা নিজেদের বাড়ি ফিরে যান। মিদুলও চলে যায়। সিয়াম নিজ বাড়ি চলে না গিয়ে থেকে গেলো। থেকে গেলো কারণ আলাল সাহেবই যেতে দেননি। সদ্য প্রিয়জন হারা ছেলেটা একা থাকলে আরো বেশি শূন্যতায় ভূগবে। যাতে সে শূন্যতায় না ভুগে, মানসিক কষ্ট নিয়ে দিনাতিপাত না করে সেজন্য আলাল সাহেব সিয়ামকে যেতে দিলেন না। থেকে গেলো সিয়াম। ফাইজা ঘরে একা ছিল। সিয়াম ফাইজার ঘরে গেলো। ফাইজা তখন আধশোয়া অবস্থায় ছিল। সিয়াম একটা টুল নিয়ে ফাইজার বিছানার পাশে বসলো। ফাইজা ইশারায় সিয়ামকে জিজ্ঞেস করলো যে, সে কিছু বলতে চাচ্ছে কিনা ?
সিয়াম ধীর কণ্ঠে বলল, “তুমি দোলনের ফুটেজ পেয়েছ সেটা আমাদের কাউকেই জানালে না কেন ?”
ফাইজা সিয়ামের দিকে না তাকিয়েই বলল, “তেমন কিছু না। আমি নিজেও প্রথমে শিওর ছিলাম না যে এটা কিসের ফুটেজ। তাই নিজে একাই দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এমনিতেই তুমি দোলনের শেষ কার্য নিয়ে ব্যস্ত ছিলে প্লাস তুমি সহ বাসার সবারই মন ভালো ছিল না। তাই এই বাড়তি চিন্তা কারো মাথায় দিতে চাইনি।”
সিয়াম বলল, “তুমি আমাকে না জানালে। অন্তত রেশমি আন্টিকে জানাতে।”
ফাইজা বলল, “এই যে মাত্রই তো বললাম, কাউকে চিন্তায় জড়াতে চাইনি।”
সিয়াম বলল, “যখন ফ্লোরে পড়ে ছিলে, ওই মুহুর্তে আন্টি ঘরে না আসলে তুমি কি আজ এখন এইখানে বসে থাকতে ? আমারতো তা মনে হয় না। ফাইজা, জানলাম তুমি শিওর ছিলে না যে এই ফুটেজ কিসের ছিল। কিন্তু আমি এটা মনে করি যে, তুমি আন্দাজ করতে পেরেছিলে এটা কিসের ফুটেজ হতে পারে। এক দূর্ঘটনার রেশ কাটাতে তোমাকে কতটা স্ট্রাগল করতে হয়েছে তা তুমি জানো ফাইজা। এই ফুটেজ দেখে তোমার মানসিক অবস্থার সাথে সাথে তোমার শারীরিক অবস্থাও খারাপ হয়েছে গিয়েছিল। বুঝতে পারছো ফাইজা যে, আমরা কতটা চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। আমি হয়তো ঠিক বুঝাতে পারছি না।”
ফাইজা বলল, “চিন্তায় ফেলার জন্য দুঃখিত। আমি কালপ্রিটদের ছবি সংগ্রহ করে তারপর তোমাকে জানাতে চেয়েছিলাম। কারণ সোহেলের ফোনের চ্যাটগ্রুপ থেকে ওদের আইডি চেক করেছিলাম। কারো কোনো ছবি ছিল না।”
সিয়াম বলল, “আগে তুমি সুস্থ হও ফাইজা। আমি বলিনি যে, তুমি এভাবে নিজের কথা না ভেবে আমাকে আমার বোনের খুনিদের বিচার পাইয়ে দিতে উঠে পড়ে লেগে যাও। নিজের খেয়াল কেন রাখো না তুমি ?”
ফাইজা বলল, “এভাবে কেন বলছো ? আমার বিপদে তুমি ঝাপিয়ে পড়তে পারলে, আমি কেন তোমার বিপদে কিছু করতে পারবো না ?”
সিয়াম উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল, “ফাইজা, আমি চাইনা তুমি আর কোনো নতুন বিপদে পড়ে যাও। প্লিজ, আগে নিজের খেয়াল রেখো। বাকিটা আমি সামলে নেবো।”
এই কথা বলে সিয়াম ঘর হতে বের হয়ে গেলো। ফাইজা সিয়ামের যাওয়ার দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। “মায়া” বেশ মারাত্মক একটা জিনিস। একবার যার উপর মায়া পড়ে যায়, সহজে সেই মানুষটার থেকে মায়া কাটানো যায় না। সিয়ামের উপর এখন ফাইজার তেমন মায়া সৃষ্টি হচ্ছে। এই মায়া কাটাবে নাকি আরো গভীর ভাবে জড়িয়ে যাবে তা নিয়ে দ্বিধায় আছে ফাইজা। রেশমি বেগম এক গ্লাস কুসুম গরম দুধ নিয়ে হাজির হলেন ফাইজার ঘরে।
ফাইজা রেশমির হাতে দুধের গ্লাস দেখে নাক ছিটকে বলল, “ইশ আম্মু, তুমি জানো এইটা আমি পছন্দ করিনা। তবুও গ্লাস ভর্তি করে নিয়ে এসেছো। আচ্ছা আমার ল্যাপটপটা কোথায় ?”
রেশমি ফাইজার হাতে জোর করে দুধের গ্লাস ধরিয়ে দিয়ে বলল, “ওটা যথাস্থানে হেফাজতে আছে। তোমাকে এখন অন্য কিছু নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।”
ফাইজা জবাবে কিছু বলতে চেয়েছিল। কিন্তু রেশমি থামিয়ে দিয়ে বলল, “কথা যদি না শুনো তবে, যেমন ল্যাপটপ কিনে দিয়েছি তেমন আছড়ে ভেঙে ফেলবো। আশা করছি বুঝতে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তোমার।”
ফাইজা শুধু হালকা মাথা নাড়ালো। রেশমি চলে গেলো ফাইজার ঘর থেকে। ফাইজা মুচকি হাসলো। রেশমি আপন মা না হয়েও আপন মায়ের থেকে কম আদর, স্নেহ, শাসন করছে না। এ যেন নিজেরই মা। অন্য দিকে ফাইজার বেষ্ট ফ্রেন্ড তোহা তার সৎ মায়ের থেকে কষ্ট ব্যতীত অন্য কিছু পায়নি। জোর করে বিয়েও দিয়ে দিয়েছে। কত অদ্ভুত চারপাশ তাই না !
_________
আয়মান দারওয়ানকে আবার ডেকে আনলো। তারপর জিজ্ঞেস করলো,
– আচ্ছা চাচা, বাড়িওয়ালা মনির কেমন মানুষ ?
– তা আর কি বলবো। এখনো তো খারাপ কিছু চোখে পড়ে নাই।
– ওনার তো বউ আছে, তাই না ? তা ওনার বউ কোথায় জানেন ?
– ওহ, উনিতো শুনছিলাম বাপের বাড়ি গেছে। এই সপ্তাহখানেক হবে।
– ঠিক আছে। আচ্ছা কাউকে কি এই দুই একদিনে কোনো রঙ কিনে আনতে দেখেছেন ? মানে দেয়ালে যেই রঙ ব্যবহার করা হয় আরকি।
– উম… হ্যা দেখেছি। বাড়িওয়ালা আনছে রঙ। কোন দেওয়ালে নাকি রঙ উঠে গেছে। ওই কারণে আনছে।
– কোন দেয়ালে উঠেছে রঙ, বলেছে কিছু ?
– না, ওইটা তো বলে নাই কিছু।
– কোনো রংমিস্ত্রি কি এখানে এসেছিল ?
– উহু, এরকমতো কাউকে দেখি নাই। আমিতো ভাবছি, হয়তো এখন রঙ করে নাই তাই রংমিস্ত্রি আসে নাই।
– ঠিক আছে বুঝতে পেরেছি। আপনি এখন যেতে পারেন।
দারওয়ান চলে গেলো। আয়মান যেই কনস্টেবলকে মনিরকে পাহারা দেয়ার জন্য পাঠিয়েছিল তাকে ফোন করে মনির সহ আসতে বলল। কিছুক্ষণের মধ্যেই দুজন এসে হাজির হয়।
আয়মান বাড়িওয়ালাকে প্রশ্ন করে,
– মনির সাহেব, রঙ এনে কোন দেয়ালে লাগিয়েছেন বলুন তো।
– ওহ রঙ ! কে বলল আপনাকে ?
– উত্তর না দিয়ে উলটে প্রশ্ন করা মোটেও ভালো লক্ষণ নয়। আমার প্রশ্নের উত্তর দিন।
– এই ১০৩ নম্বর ঘরের দেয়ালেই লাগানো হয়েছে। কেন বলুন তো। আমার বাড়ির দেয়াল কি আমি রঙ করতে পারবো না। রঙ খারাপ হয়ে গিয়েছিল তাই নতুন করে লাগিয়ে দিয়েছি।
– তাই নাকি ? তা একটা ঘরের সাধারণ দেয়াল যেখানে কাজ করা হয় না, পানির স্পর্শ পায় না, রান্নাবান্নার কোনো তেল মশলাও লাগে না সেখানের দেয়ালের কিভাবে রঙ নষ্ট হয় আমাকে বলতে পারবেন ?
– নষ্ট হয় মানে হয়। কিভাবে এখন এখানে হয়েছে সেটা আমি জানিনা।
– এটা কেমন কথা, আপনার ভাড়াটিয়া আপনার দেয়াল শুধু শুধু নষ্ট করেছে আর আপনি সেটার জবাবদিহি চাইবেন না তার কাছে ?
– দেখুন, আমি সাদাসিধে মানুষ। আমি ভাড়াটিয়াদের সাথে কখনো খারাপ ব্যবহার করি না।
– বাহ বেশ ভালো। তা সাদাসিধে মনির সাহেব, আপনি এখনো সুস্থ আছেন কিভাবে ?
– এটা কেমন অদ্ভুত প্রশ্ন ? আমি সুস্থ আছি বলে কি আপনি অখুশি ?
– অখুশিই বটে। এই ট্যাংকের পানি খেয়ে যেখানে সবাই অসুস্থ সেখানে আপনি একদম তরতাজা আছে। ব্যাপারটা কি সোজা মনে হচ্ছে আপনার কাছে ?
– ওই যে বললাম, আমি সাদাসিধে মানুষ। আমার কাছে সবই সোজাসাপ্টা।
– পানির ট্যাংকের মূল পাইপের সাথে দেখলাম আরেকটা পাইপ সংযোগ করা। যেটা দিয়ে পানি ডিরেক্ট আপনার ঘরে আসে। এখানে এই সিস্টেম কেন ? ট্যাংকের পানি আপনার ব্যবহার করতে অসুবিধা কোথায় ?
– আমার ইচ্ছা তাই। সমস্যা কোথায় এখানে ?
– সমস্যা কোথায় জানতে চান ?
– হ্যা অবশ্যই। তখন থেকে যাচ্ছেতাই প্রশ্ন করে যাচ্ছেন।
– ওকে, কু….র বাচ্চা তুই জানতে চাস সমস্যা কোথায়….
আয়মান হুট করেই মনিরকে থাপ্পড় দিয়ে বসে। পরপর বেশ কয়েকটা চর-থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। মনির বুঝার আগেই সব ঘটে গেলো। এতগুলো থাপ্পড় খেয়ে মাথা চক্কর দিতে শুরু করলো মনিরের। কনস্টেবলকে বলল মনিরকে এখনই থানায় নিয়ে যেতে। আয়মানের এখন ভিষণ রাগ হচ্ছে। মনির এমন ভাবসাব দেখাচ্ছে যে, সে কিছুই জানে না বা করেনি। কিন্তু স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছে যে, সে এর সাথে কোনো না কোনো ভাবে যুক্ত আছে। এখন এটা কিভাবে করলো এবং কেনই বা করলো সেটাই বের করতে হবে। সোজা ভাবে না হলে বাঁকা ভাবে। এখন সুজনকে পাকড়াও করার অপেক্ষা।
চলবে….
গল্পটা আর বেশি বড় করবো না ভাবছি। আর হয়তো দুই তিন পর্ব হতে পারে।