ভালোবাসি প্রিয় ২ পর্ব -০৮

#ভালোবাসি_প্রিয়_২ (০৮)

#লেখিকা_অপরাজিতা_রহমান

-“অভি কিচেনে নিজের জন্য খিচুরি রান্না করছে।যদিও এর আগে কখনো অভি রান্না করে নি। কিন্তু আজ হঠাৎ করে অভির গ্ৰামের বাড়ি মাগুরা থেকে খবর আসে তার বাবার বাল্যকালের বন্ধু খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েছে।তাকে দেখার উদ্দেশ্যে অভির বাবা ,মা,বোন মাগুরা চলে গিয়েছে। তাড়াহুড়ো করে চলে যাওয়ার কারনে অভির জন্য রান্না করে রেখে যেতে পারে নি। অভির এক সমস্যা বাইরের খাবার খেতে পারে না। পেটের ক্ষুধা নিবারণের জন্য বাধ্য হয়ে অভিকেই রান্না করতে হচ্ছে। অভি আজ রান্না করতে গিয়ে একটা ব‌উয়ের অভাব হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।অভি খিচুড়ি রান্না শেষ করে ডিম ভাজি করার জন্য মরিচ পেঁয়াজ কুচি করছে এমন সময় কলিংবেল বেজে ওঠে।
অভি গিয়ে দরজা খুলতেই দেখে বৃত্ত এসেছে। বৃত্তকে দেখে অভি কিছু টা অবাক হয়ে বলে,একি বৃত্ত তুই এই সময়ে?”

-“বৃত্ত কিছুটা চড়া মেজাজে বললো,কেন অভি তোর বাসায় আসতে গেলে কি আমার পারমিশন নিয়ে আসতে হবে?”

-” কি হয়েছে বৃত্ত?সামথিং রং? মেজাজ এতো চড়া লাগছে কেন?

-“আরে ইয়ার আর বলিস না।মমের মাথায় আমার বিয়ের ভুত চেপেছে। কোথাকার কোন মেয়ে দেখেছে এখন আমার তাকে বিয়ে করতে হবে। আমার কি এখন বিয়ের বয়স হয়েছে বল অভি?”

আন্টি খারাপ তো কিছু বলে নি বৃত্ত। অনেক দিন কোন বিয়ে টিয়ে খাই না এই সুযোগে যদি তোর বিয়েটা খাওয়া যাই দারুন মজা হবে কিন্তু।প্লিজ বৃত্ত বন্ধুদের কথা ভেবে অন্তত বিয়ে টা করে নে। শুনেছি বিয়েতে শুধু খাওন আর খাওন।”

-“সেম টু ইউ অভি। তুই ও তো চাইলে আমাদের কে এমন একটা বিয়ে খাওনের ব্যবস্থা করে দিতে পারিস।”

-“খুব শ্রীঘ্রই হবে ইনশাআল্লাহ । এতো দিন ধরে আমি যার অপেক্ষায় পথ চেয়ে বসে ছিলাম,এক নারীতে আসক্ত হবো বলে এ পর্যন্ত প্রেম করা তো দূরের কথা মেয়েদের দিকে প্রেমের দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখি নি।যার জন্য আমি আমার সমস্ত অনুভূতি পুষে রেখেছি , আমি সেই মেয়ের দেখা পেয়ে গেছি বৃত্ত। আমার অনুভূতি প্রকাশের সুযোগ এসেছে বৃত্ত।তবে আমি তাকে হারাম ভাবে চাইবো না। পবিত্র কালেমা পাঠ করে তাকে আমার নিজের করে নিবো।”

-“তুই তো একেবারে গেছিস রে অভি।যেই অভির জন্য ভার্সিটির মেয়েরা হাজার খানেক প্রেমপত্র লিখেছে,কতো শত মেয়ে ক্রাশ খেয়েছে ,তার একটু এটেনশন পাওয়ার জন্য কতোরকম সাজুগুজু করে এসেছে অথচ অভি নামক নির্দয় ব্যক্তির পাত্তা পায় নি,সেই অভি কি না ললনার মায়ায় ফেঁসে গিয়েছে?আই কান্ট বিলিভ দিস।বলা নেই কওয়া নেই হুট করে প্রেমে পড়ে গেলি অভি?”

-“প্রেম , ভালোবাসা কখনো বলে কয়ে আসে না বৃত্ত,হুট করেই হয়ে যায়। তুই যখন কাউকে মন থেকে ভালোবাসবি তখন বুঝতে ও পারবি না কখন কোথায় কিভাবে তাকে ভালোবেসে ফেলবি। দেখবি তাকে ছাড়া জীবন টা লবণ ছাড়া তরকারির মতো মনে হবে।”

-“বাব্বা এতো দেখি বোবার মুখে বুলি ফুটেছে।তো জানতে পারি কে সেই ললনা যে কি না আমার নিরামিষ বন্ধুর মনে আমিষের সঞ্চার করে দিলো?

-“ইটস্ সারপ্রাইজ!আগে মনের রানী কে ঘরের রানী করি তারপর না হয় দেখিস।”

-“ঠিক হে। তুই থাক আসছি তাহলে।”

-“নো ডেয়ার, তুই আজ যেতে পারবি না। বাসায় কেউ নেই। আজ প্রথম বার আমি নিজে খাতে খিচুড়ি রান্না করেছি, দুইজনে খেয়ে জমিয়ে আড্ডা দিবো।”

-“খিচুড়ি খাওয়ার উপযুক্ত হয়েছো তো?”নাকি আজ উপোস থাকতে হবে?”

-“জানি না কেমন হয়েছে?তবে এখন থেকে আমি রান্না শিখবো আমার ঘরের রানীর জন্য।যাতে বিয়ের পরে রানী সাহেবার সাথে কোন কারনে অভিমান হলে তাকে হুটহাট রান্না করে সারপ্রাইজ দিতে পারি।”

-“ওমা গো ট্রুরু লাভ! বিয়ের আগেই ব‌উয়ের জন্য এতো ভালোবাসা? ইটস্ অনলি পেয়ার ,অনলি পেয়ার।”

-“হা হা হা হা।তুই পারিস ও বটে বৃত্ত। এখন কিচেনে চল‌। আমার ডিম ভাজতে হবে মরিচ ভর্তা করতে হবে। তাছাড়া তোর সাথে আমার অনেক গল্প জমে আছে। তুই কি আমাকে একটু হেল্প করবি। তাহলে তাড়াতাড়ি আড্ডা দিতে পারতাম।”

-“শিওর।কি করতে হবে আমাকে তাই বল।যদিও আমি পারি না তবুও আই উইল ট্রাই মাই বেস্ট।”

-“আমি ডিম ভাজি করছি তুই বরং এই মরিচ ভর্তা টা কর।”

-“ঠিক আছে।”





দোয়া সিমরানের সাথে কথা বলা শেষ করে ইতিহাস ব‌ইটা পড়ছে এমন সময় ছোঁয়া এসে বললো ,আপু আমি হিসাববিজ্ঞানের একটা বিষয় বুঝতে পারছি না।আসলে তিন দিন প্রাইভেটে যাই নি তো তাই অনেক পিছিয়ে গিয়েছি। তুমি তো হিসাববিজ্ঞান ভালো বুঝো তাই তোমাকে জিজ্ঞেস করতে আসলাম।”

-” হ্যাঁ টিয়া পাখি বল কোথায় সমস্যা হচ্ছে?

-” আপু রেওয়ামিলে কোন কোন বিষয় গুলো অন্তর্ভুক্ত হবে না , এইটা বুঝতে পারছি না।”

-“এইটা তো খুবই সহজ বিষয় পাখি। “প্রা – টাকা স- বস্তু রেওয়ামিলের শত্রু”।

-“মানে কি আপু? তোমার কথা আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। একটু ক্লিয়ার করে বলো না।”

-” প্রা টাকা বলতে প্রারম্ভিক টাকা আর স বস্তু বলতে সমাপনী বস্তু বোঝায় ।আর রেওয়ামিলের শত্রু বলতে এগুলো রেওয়ামিলে আসে না।”

-“যেমন * প্রারম্ভিক হাতে নগদ
‌‌ *প্রারম্ভিক নগদ তহবিল
*প্রারম্ভিক ব্যাংক জমা
*সমাপনী মজুদ পন্য
*সমাপনী মনিহারী
এগুলো রেওয়ামিলে অন্তর্ভুক্ত হয় না।”

-“কিন্তু আপু আমি প্রারম্ভিক আর সমাপনী কিভাবে বুঝতে পারবো?”

-“প্রারম্ভিক বলতে যে লেনদেন গুলো বছরের শুরুতে সংগঠিত হয়।যেমন (০১.০১.২০২২)।

আর সমাপনী বলতে যে লেনদেন গুলো বছরের শেষে সংগঠিত হয় ।যেমন (৩১.১২.২০২২)।”

-“জ্বি আপু, বুঝতে পেরেছি । লাভ ইউ।”

-” লাউ ইউ অফুরন্ত টিয়া‌ পাখি।”

-“দোয়া ছোঁয়া তাদের পড়া শেষ করে দুজনে মিলে নামাজ পড়ে খাওয়া দাওয়া শেষ করে দশ টা বাজে ঘুমিয়ে গেল।”

-“ফজরের আযান শুনে দোয়ার ঘুম ভেঙ্গে গেল। দোয়া তাড়াতাড়ি করে ছোঁয়া কে ও নামাজ পড়ার জন্য ডেকে নিলো।দোয়ার প্রতিদিনের অভ্যাস ফজরের নামাজ শেষ করে কিছুক্ষন কোরআন তেলাওয়াত করা।আজ ও তার ব্যতিক্রম হলো না। কোরআন তেলাওয়াতে আলাদা এক প্রশান্তি লাভ করা যায়। সহিহ বুখারির ৫০২৭ নং আয়াতে বলা হয়েছে
তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সেই ব্যক্তি, যে নিজে কোরআন শিক্ষা করে ও অপরকে শিক্ষা দেয় ।

সৃষ্টির উপর স্রষ্টার মর্যাদা যেমন সব বাণীর ওপর কুরআনের মর্যাদাও তেমন, কোরআন তেলাওয়াতের ফজিলত ও মর্যাদা অনেক বেশি, এতে রয়েছে অনেক সাওয়াব, কোরআন তেলাওয়াতকারীর মর্যাদাও অনেক বেশি ।

কেয়ামতের ভয়াবহ অবস্থার সময় কোরআন তেলাওয়াতকারীর পক্ষে সুপারিশ করবে,
এটা বিরাট সৌভাগ্যের বিষয় ।
হজরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূল (সাঃ) বলেছেন, তোমরা কোরআন তেলাওয়াত করো, কারণঃ- কোরআন কেয়ামতের দিন তেলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করবে ।
(সহিহ মুসলিমঃ- ১৯১০)

-“দোয়া কোরআন তেলাওয়াত শেষ করে ছাদে গেল তার গাছের পরিচর্যা করার জন্য।গাছ দোয়ার খুব পছন্দের।ছাদকে বিভিন্ন ফুল ফলের গাছ দ্বারা ছোট খাটো বাগানে পরিনত করেছে দোয়া ছোঁয়া মিলে। অবশ্য এই কাজে দোয়ার আব্বা আম্মা ও তাদের কে সহযোগিতা করছে। দোয়ার মাঝে মাঝে নিজেকে অনেক ভাগ্যবতী মনে হয় এমন আব্বা আম্মা বোন পেয়ে। দোয়া প্রায় দুই ঘণ্টা গাছের পরিচর্যা করে নিচে এসে নাস্তা সেরে ভার্সিটি যাওয়ার জন্য রেডি হতে গেল। দোয়া বোরকা হিজাব পরিধান করে বাসার সবাইকে বিদায় জানিয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়লো। দোয়ার ভার্সিটি যেতে বেশ সময় লাগে।আর এই সময় টা দোয়া ফেইসবুকে ইসলামী গল্পগুলো পড়ে । কারন এই গল্প থেকে দোয়া অনেক কিছু শিখতে পারে। দোয়া ফেইসবুকে অপরাজিতা রহমানের লেখা ইসলামী গল্প ভালোবাসি প্রিয় ২ পড়ছিলো এমন সময় দেখে সিমরান কল করেছে।কল রিসিভ করতেই সিমরান সালাম দিয়ে বললো, দোয়া ক‌ই তুমি? ভার্সিটিতে পৌঁছাতে আর কতো সময় লাগবে। আমি ভার্সিটির সামনে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।”

-“ওয়ালাইকুমুস সালাম।এই তো সিমরান আর পাঁচ মিনিট লাগবে। তুমি আর একটু অপেক্ষা করো।”

-“ঠিক আছে। তাড়াতাড়ি এসো।”

-“ভার্সিটির সামনে অনেক অটো, রিকশা , মানুষের আনাগোনা। দোয়া অটো থেকে নেমে দেখে সিমরান সত্যি সত্যিই তার জন্য ভার্সিটির সামনে অপেক্ষা করছে। দোয়া রাস্তা ক্রস করতে যাবে হঠাৎ এমন সময় চলন্ত বাইক থেকে হুডি পড়া একটা লোক দোয়ার গলা বরাবর ছু”রি চালিয়ে দেয়। মূহুর্তের মধ্যে দোয়ার নিথর দেহ রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে।সাথে সাথে তাজা র”ক্তে ভেসে যায় ঘটনাস্থল।

চলবে ইনশাআল্লাহ।।

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here