#ক্যাসিনো
#পর্ব_৫৩
©লেখিকা_মায়া
আদালতে এসে সবাই উপস্থিত হয়েছেন। কিন্তু এখনো আসামি অনিত কে উপস্থিত করা হয়নি।
১৫মিনিট পর পুলিশ কমিশনার অনিত কে নিয়ে উপস্থিত হয়।
অনিতের চেহারা যেন সেই ২৬_২৭ এই থমকে রয়ে গেছে। নিশান ১০বছর আগেও যেমন দেখেছে তার কিছু টা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে তার চেহারায় । অনিত আগে প্রবেশ করে আর তার পিছনে কমিশনার। মনে হচ্ছে অনিত কোন ভি আই পি পার্টিতে হাজির হয়েছে।
কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে অনিত বাঁকা হাসলো। নিশান আর শিরীনের দিকে তাকিয়ে। আর ক্ষোভ ভরা দৃষ্টিতে তাকালো মরিয়মের দিকে। মরিয়ম নিজের মুখের ভাবাবেগ পরিবর্তন করে কাঠিন্যতার ভর করালো চোখে মুখে।
যেন চোখ দিয়েই অনিত কে খুন করছে মরিয়ম। এই একটা মানুষের কারনে কত পরিবারের ধ্বংস হয়েছে। আর তাকে দেখলে মনেই হবে না মানুষ রুপি পিশাচ সে।
আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অনিতের বিরুদ্ধে আনিত তথ্য প্রমানের ভিত্তিতে তাকে যাবত জীবন কারাদণ্ড পেশ করা হলো। তার আগে তাকে ৬দিনের রিমান্ডে নেওয়ার ও আদেশ জারি করা হলো।
যাবত জীবন কারাদণ্ডের কথা শুনে অনিত গলা ফাটিয়ে কিছু ক্ষন হাসলো। যেন কোন মজার কথা বলা হয়েছে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে না তার এমন শাস্তির কথায় সে ভয় কিংবা ভরকেছে।
মেহমেত আর শিরীন বাকি সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। কিন্তু মরিয়ম আর নিশান কে সন্তুষ্ট দেখা গেল না। মরিয়ম নিশ্চিত জানে যে অনিত কয়েক দিনের মধ্যেই জেল থেকে বের হয়ে যাবে। মরিয়মের পরিবার এখন মূহুর্তে মূহুর্তে ঝুঁকির মুখে পড়বে।
অনিতা কে জেল হাজতে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশে রওনা দেয় কমিশনার।
তখন অনিত মরিয়মের কাছে আসে। বাঁকা হেসে বলে, congratulations 👏
আমার ১০বছরের মেহনত এ ১০দিনে পানি ঢেলে দিয়েছো। মানতেই হয় ব্রিলিয়ান্ট তুমি!! আই লাইক ইট। খুবই সুন্দর তুমি??
অনিতের মুখে নিজের তারিফ শুনতে মরিয়মের শরীর রিরি করছে।
চোখে মুখে কাঠিন্যতার ছাপ টেনে বলে,,আমি যে সুন্দর এটা আমার স্বামীর মুখ থেকেই শুনতে ভালো লাগে আমার। কোন পরপুরুষের মুখ থেকে এই সমস্ত কথা শুনতে আমার ভালো লাগে না। তাই দ্বিতীয় বার সাবধান!!
অনিত দাঁত বের করে হাসলো। তার পর নিশানের দিকে তাকিয়ে বলে,, কখনো ভাবিনি সাধারণ কোনো কীট আমার রাস্তার কাটা হবে। নিশান নিজের মুখের ভাবাবেগ পরিবর্তন না করেই বলে,, বিশাল দেহী হাতি কে সাধারণ পিপিলিকাই জব্দ করতে পারে। তাই ছোট কিংবা বড় ফ্যাক্ট নয়!
বুদ্ধি থাকলে সব সম্ভব ।
দারুন!! আফজাল শরীফ কে নিজের হাতেই মেরে ফেলা উচিত ছিল। শুধু শুধু হসপিটালে এডমিট করেছিলাম। মেরে ফেললেই আজ এতো গুলো প্রমান তোমাদের কাছে পৌঁছাতে পারতো না।
এনি ওয়ে,, তোমার বোন টা কোথায়?? দারুন ছিল তার শরীরের সুঘ্রাণ!! আজো নাকের কাছে ঘ্রান টা যেন পাই। নিশানের রাগ তরতর করে উঠে অনিতের এমন কু্ৎসিত কথায়। পুলিশের সামনেই অনিতের নাক বরাবর একটা ঘুষি মারে,,তার পর তার শার্টের কলার চেপে ধরে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে,একটা খারাপ কথা যদি আমার বোনের নাম আর এক বার বলিস তো জানে মেরে দিবো তোকে।
অনিত হো হো করে হাসছে। মেহমেত নিশান কে দুরে সরিয়ে নিয়ে আসে। কি করছিস কি ?? মাথা ঠাণ্ডা কর।
মরিয়ম কমিশনার কে বলে,,অনিত কে এখান থেকে নিয়ে যেতে। কমিশনার অনিত কে নিয়ে যাওয়া জন্য উদ্ধৃত হলে,অনিত তখন ব্যঙ্গ গলায় বলে,,অনিত কে আটকিয়ে রাখার মতো এখনো কোনো জেল হাজত তৈরি হয়নি। আমি আসবো, শিঘ্রই তার পর সবার জীবন জাহান্নাম বানাবো।
অনিত হনহন করে চলে যায়।
নিশান রাগে গজগজ করতে করতে মরিয়মের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,, কেন করলে এটা তুমি?? ওর মত ক্রিমিনাল কে তো ক্রোস ফায়ার করে মেরে ফেলা উচিত। আর যাবত জীবন কারাদণ্ড পেশ করা হয়েছে। ও জেল হাজত থেকে মুক্তি পাবে,,ওর মত লোক কে আইন ছেড়ে দিবে। দুই দিন ও তাকে জেল হাজতে থাকতে হবে না। নিদোর্ষদের সাজা হয় জেল হাজতে। দোষীদের নয়!
মরিয়ম গম্ভির গলায় বলে,,গেম তো এটাই ভাইয়া!
মানে?? কিসের গেম??
আপনি ও জানেন আমি ও জানি, এমনকি সকলেই জানে,যে অনিতের শাস্তি হবে না। সে জেল হাজত থেকে মুক্তি পাবে,সেটা প্রকাশ্য কিংবা অপ্রকাশ্য ভাবে। কিন্তু সে বের হবেই। আর তখনই,,শাস্তি আপনি নিজের হাতে দিবেন। শুধু মাত্র গর্ত থেকে সাপ টা কে বের করার জন্যই পুলিশের হাতে তাকে তুলে দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু এটা সিওর হচ্ছো কি করে তুমি?? যে সে জেল হাজত থেকে বের হয়ে পালিয়ে যাবে না?? আপনার কি মনে হয় ভাইয়া! অনিত আমাদের ছেড়ে দিবে?? সে অবশ্যই আমাদের খুন করার চেষ্টা করবে। আর আমাদের শেষ না করা অব্দি সে খান্ত হবে না। তাই এই সিওরিটি আমি দিতে পারছি যে সাপ নিজেই আমাদের কাছে আসবে ছবল মারতে তাই নিশ্চিত থাকেন। ভালো কিছু পেতে গেলে একটু সবুর তো করতেই হবে। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
নিশান কিছু ক্ষন ভাবলো আসলেই তো অনিত কে খোঁজে পাওয়া টা দুস্কর ছিল। মরিয়মের কথায় দম আছে। তাই নিশান চুপ হয়ে গেল। এখন শুধু সময়ের সৎ ব্যাবহার টাই ঠিক মতো বজায় রাখতে হবে।
🥀________________🥀
এক মাস কেটে যায়,,
সব কিছুই ঠিক ঠাক আছে, মরিয়ম কোন কিছুর রিস্ক নিবে না তাই সবাইকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে। এরি মধ্যে আরিফার বিয়ের তরজর শুরু হয়ে যায়।
তিন দিন পর আরিফার বিয়ে,গ্রামের বাড়িতেই বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে। সবাই সেখানেই আছে। শুধু নিশান,নির্জনী আর মরিয়ম মেহমেত রয়ে গেছে। আজ রাতেই তারাও গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিবে। মরিয়ম রাতের খাবার তৈরি করছে। নির্জনী টুকটাক মরিয়ম কে সাহায্য করছে। মরিয়ম নির্জনীর দিকে আড়চোখে বার কয়েক তাকালো। মেয়ে টা এক মাস হয়েছে এখানে আছে কিন্তু এখনো অব্দি তার সাথে মরিয়ম ঠিক মত ভাব জমাতে পারেনি। সব সময় গম্ভির মুখ করে থাকে। এই এক মাসে নির্জনী কে মন খুলে হাসতে দেখেনি মরিয়ম। নিশান আপ্রান চেষ্টা করছে তাকে স্বাভাবিক করার জন্য কিন্তু তার গুমোট ভাবটা যেন কিছু তেই কাটানো যাচ্ছে না। মরিয়ম তরকারি কষতে দিয়ে নির্জনীর দিকে ঘুরে তাকালো। আনমনে কি যেন ভাবছে নির্জনী বাইরের জানালার দিকে তাকিয়ে। মরিয়ম নিজেও বাইরে তাকালো নির্জনী কি এতো ধ্যানমগ্ন হয়ে দেখছে তা দেখার জন্য। বাইরে বড় কাঁঠাল গাছের ডালে দুইটা পাখি বসে ভাব বিনিময় করছে।
মরিয়ম স্বাভাবিক আচারন করার জন্য গলা খাকারি দিলো। নির্জনীর ধ্যানে সুতোয় টান পরে । সে মরিয়মের দিকে তাকিয়ে অপ্রস্তত হয়ে পড়লো।
কিছু কি ভাবছো তুমি? নির্জনী চোখ লুকিয়ে বলে,নাহ তেমন কিছু না এমনি!!
মরিয়ম মুচকি হাসলো তার পর বলল। আমি তোমার মনের অশান্তি সম্পর্কে অবগত আছি। আমার কাছে কিছু লুকাতে হবে না। আমি জানি তুমি তোমার অন্ধকার গলির জীবন টা নিয়ে চিন্তিত। নির্জনী ছলছল দৃষ্টিতে তাকালো মরিয়মের দিকে। আপনি অনেক কিছু করেছেন আমাদের জন্য। আমরা আপনার কাছে অনেক ঋণী।
কথা ঘুরানোর চেষ্টা কেন করছো বোন??
আর এই আপনি বলতে বারণ করেছি আমি। বড় বোন না আমি তোমার?? বড় বোন কে কি মানুষ আপনি বলে ?? আপু বলে তুমি করে ডাকতে পারো!!
নির্জনী শুকনো হেসে বলল,,মাফ করো আপু।
মরিয়ম মুচকি হাসি দিলো। বড় আপু যখন মেনে নিয়েছো। তো এখন কি আপু কে মনের কথা টা বলা যাবে না??
আমাকে বলো তুমি কি নিয়ে চিন্তিত তুমি??
নির্জনী আমতা আমতা করে বলে,,আমি তো পতিতাপল্লীর এক জন হয়ে গেছি,,এই সমাজ কি আমাকে মেনে নিবে?? আমার যথাযথ সম্মান কি তারা আমায় দিবে??
জানো আপু আমি অন্ধকার গলিতে নতুন নতুন যখন ছিলাম, বিশ্বাস করবে না জানি না,,আমি শখানেক বার আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছি। আমার কাছে এই জীবন কে নরক ছাড়া কিছুই মনে হয়নি। মা বাবা ভাই কে ছাড়া আমার জীবনের ১০টা বছর ধরে শুধু
ধিক্কার দিয়ে গেছে। প্রতি টা রাত যে যন্ত্রনা কষ্ট সহ্য করেছি। তা আমি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভুলবো না।
মরিয়ম নির্জনীর দুই হাত নিজের মুষ্টিবদ্ধে আবদ্ধ করে বলে,,সমাজ আমাদের কখনো ভালো কাজে উৎসাহ দেয়না,,সমাজ শুধু দোষ খোঁজায় ব্যস্ত। জীবন টা তোমার তুমি ভালো পথে আছো কি না সেটা বড় কথা। তুমি খারাপ কাজের সাথে জড়িয়ে গেছিলে সেটা ছিল পরিস্থিতি। এখন তোমার পরিবর্তনে কেউ কিছু বললে সেটা তার মানসিকতা।
আর আমাদের রব তার বান্দা কে সব সময় পরিক্ষা করেন, কখনো অর্থ দিয়ে,, কখনো অর্থের অভাব দিয়ে, অসুস্থতা, দূর্ভোগ, সমস্যা। এমন অনেক কিছু দিয়ে তিনি তার বান্দাদের পরিক্ষা করে থাকেন। আর যার সহ্য করার ক্ষমতা যতটুকু আল্লাহ তাকে ততটুকুই সমস্যা দেয়। এর বেশি তিনি দেন না।
কখনো কাউকে অতিরিক্ত কিছুই তিনি চাপিয়ে দেন না। তোমার সেই সব কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা ছিল বলেই আল্লাহ তোমায় ততখানি কষ্ট দিয়ে তোমায় পরিক্ষা করেছেন।
এখন শুধু তাওবা করে আল্লাহর পথে চলো। আল্লাহ নিজে তোমাকে রাহা দেখাবে।
মনে রেখো অন্যায় কখনো করবে না।
তুমি সত্যর পথে রওনা দাও, সমাজ পিছনে নিন্দা করে মরে যাক।
বুঝেছো আমার কথা??
নির্জনী মরিয়ম কে জরিয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে। আমি আল্লাহর রাস্তায় চলবো আপু। কিন্তু একটা কাজ শেষ করার পর। আপু একটা কথা বলবো, মরিয়ম খুশি হয়ে বলে হুমম নিশ্চয়ই!!
অনেক দিন পর মায়ের গায়ের গন্ধ পাচ্ছি আমি তোমার শরীর থেকে। মরিয়ম ফিক করে হেসে উঠে। তার নির্জনী কে জরিয়ে ধরেই বলে,মনমরা হয়ে থাকবে না আর। হাসি খুশি থাকবে। জীবনে অনেক সমস্যা আসবে সে সব নিয়ে পড়ে থাকলে চলবে না। একটা বড় সমস্যা মানেই আমাদের জীবন থেমে যাওয়া নয়। আমাদের জীবনে নির্দিষ্ট একটা পরিসমাপ্তি আছে,,সেই পরিসমাপ্তি না আসার আগে আমাদের জীবন কে আমাদের চালনা করতেই হবে। তো আর এক দম মন খারাপ নয় হুঁ??
মরিয়ম নির্জনীর চোখের পানি মুছে দেয়। সে ছোট বাচ্চাদের মত মাথা নাড়ায়।
আরিফার বিয়ে টা গ্রামের বাড়িতেই খুব সাদামাটা ভাবেই চলছে,, গায়ে হলুদের কিছু রীতিনীতি নিয়ে মরিয়ম বেশ খেপেছে। গীত বাজনা সে মানা করে দিয়েছে। এবং আরো কিছু রীতিনীতি রয়েছে তা হলো বর কিংবা কনে কে গোসল দিয়ে দেওয়া নিয়ে, মরিয়ম ঘোর মানা করেছে, এমন কি আরিফা কেও একা গোসল করতে পাঠিয়েছে সে। তার মতে সারাজীবন যখন তারা একা গোসল করে আসতে পেরেছে তাহলে আজকের দিনেও তারা একাই গোসল করে আসতে পারবে।
কোন মেয়ে মানুষ বরং কে গোসল করে দিবে না। মরিয়মের চাচাতো ভাইয়ের সাথে আরিফার বিয়ে।
গ্রামের বড় বড় দাদী ভাবী গুলো মরিয়মের রেগে আছে। তাতে মরিয়মের তোয়াক্কা নেই।
বিয়ের দিন ঘটলো আর এক কারবার
বর কে রিসিভ করার জন্য তো শালীরা আরো অনেক মেয়েরা রকমারি মিষ্টি,সরবত নিয়ে রেডি। এখানে ও মরিয়ম মেয়েদের রিসিভ করতে যাওয়ার জন্য বাঁধা দেয়।
বাড়ির ছেলেরা যাবে বর কে রিসিভ করতে।
কোন মেয়ে কে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
বাড়ির ছেলেরা কি নেই যে মেয়েদের রংঢং করে গেইটে গিয়ে বর কে রিসিভ করতে যেতে হবে। এসব পুরোনো নিয়ম কানুন সব সময় মেনে চলার প্রয়োজন নেই।
সবাই মরিয়মের উপর ভিষন চটে গেছে। কিন্তু কেউ কিছু বলার সাহস পেল না।
ভালোই ভালোই বিয়ে টা হয়ে গেছে। আরিফা কে অনেক খুশি দেখাচ্ছে।
বউভাতের অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য সবাই রেডি,, কিন্তু মরিয়ম কে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মেহমেত বার বার ফোন দিচ্ছে মরিয়ম কে কিন্তু ফোন রিসিভ করার কোন নাম নেই।
আশেপাশে সব জায়গায় মরিয়ম কে খোঁজা হয়েছে কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি। মেহমেতের বুকের ভিতর ভয় বাসা বাঁধছে ক্ষনে ক্ষনে।
নিশান নিশ্চিত বুঝতে পারছে, মরিয়মের কোন বিপদ হয়েছে।
সব জায়গায় খুঁজেও যখন কিছু করা যাচ্ছিল না তখন তারা পুলিশ স্টেশনে যায় মিসিং ডাইরি করতে। কিন্তু পুলিশ ২৪ ঘন্টার আগে মিসিং কেইস নিবে না। মেহমেত রাগে পুলিশের কলার চেপে ধরে। পাগল প্রায় অবস্থা তার। নিশান মেহমেত কে ধরে বাসায় নিয়ে আসে। রাত হয়ে যায়। বিয়ে বাড়ীর উৎসবে শোকের ছায়া পড়ে গেছে। মিহি মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য কাঁদছে।
মেহমেত কিছু বুঝতে পারছে না কি করবে সে। হঠাৎ নিশানের ফোনে একটা মেসেজ আসে,,একটা লোকেশন ,, তার পর আর একটা মেসেজ আসে। নিশানের ভয় এবার সারা শরীরে বয়ে যাচ্ছে। সাথে রাগে দপদপ করছে তার কপালের রগ।
#ক্যাসিনো
#পর্ব_৫৪
©লেখিকা_মায়া
নিশান মেহমেত কে নিয়ে পাগলের মত গাড়ি ড্রাইভ করছে। মেহমেত বার বার জিজ্ঞেস করছে তারা কোথায় যাচ্ছে কিন্তু নিশানের কোন উত্তর নেই। মেহমেত এবার রেগে জিজ্ঞেস করে কোথায় যাচ্ছি আমরা??
নিশান নিজের পকেটে থেকে ফোন বের মেহমেতের হাতে দেয়। তার পর মেসেজ অপশনে যেতে বলে।
মেহমেত দেখে একটা লোকেশন,আর ছোট করে একটা মেসেজ, মরিয়ম কে বাঁচাতে চাইলে, জলদি এসে পর, শিরীন,নির্জনী মেহমেত কে নিয়ে।
মেহমেত নিশানের দিকে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,,অনিত???
নিশান শান্ত স্বরে উত্তর দেয় হ্যাঁ,, মরিয়ম ঠিকি বলেছিল,মেহমেত ভয়ে কুকড়ে যায়,,আমতা আমতা করে বলে, মরিয়মের কোন ক্ষতি করেনি তো ?? নিশান কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা… তার নিজের ভিতরে ও তো এই ভয় ক্ষনে ক্ষনে বাসা বাঁধছে,এতো ক্ষনে মরিয়মের কোন ক্ষতি যদি সে করে তো কি হবে?? জীবনে ও নিজেকে মাফ করতে পারবে না নিশান।
মেহমেত চঞ্চল গলায় বলে,,আমরা শিরীন আর নির্জনী কে নিয়ে আসিনি??
আমরা নিজেরাই ওখানে সেফ থাকবো না। বাড়তি ওদের বিপদে ফেলতে চাচ্ছি না।
নিশান আর মেহমেতের গাড়ির পিছনে যে আরো একটা গাড়ি ফলো করে আসছে তা তারা জানে না।
লোকেশন মোতাবেক তারা চলে এসেছে,,১০বছর আগে যেই জায়গা থেকে তাদের জীবনের বিপর্যয় নেমে এসেছিল,সেই জায়গায় আবার নিশান কে কখন ও আসতে হতে পারে তা সে কল্পনাও করেনি।
সেই পুরনো বাড়ি, যেখানে তারা বন্দি ছিল। যেখানে শাহানা তার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিল।
নিশানের ক্ষত,ক্ষোভ, প্রতিশোধ দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে,, চোয়াল শক্ত হয়ে যায়,,হাত দুটো মুষ্টিবদ্ধ করে নিজের রাগ সংবরন করার বৃথা চেষ্টা করছে সে।
মরিয়মের বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হয়েছেন নূর মোহাম্মদ এবং পুলিশ অফিসার। যেই কেইস নিয়ে গত কয়েক মাস নির্ঘুম রাত পার করেছেন নূর মোহাম্মদ। তার আজ অন্তিম মুহূর্ত এসে গেছে। আসল কিলার আর কেউ নয় নিশান। যারা খুন হয়েছিল তাদের সাথে দেখা শুধু মেহমেত করতে যায়নি,, তাদের সাথে আসল কথা তো হয়েছে নিশানের। টাকা আদান প্রদান নিশান নিজেই করেছে। আর ঐ জুতার ছাপের মাপ নিশানের জুতার ছাপের মাপের সাথে মিলেছে। নিশান কে নিয়ে AHK কম্পানির দঙ্গলে নূর মোহাম্মদের খটকা লেগেছিল। সমস্ত সম্পত্তি জুয়ায় হেরেছিল মেহমেত, চাইলে সে আদালতে গিয়ে কোন পদক্ষেপ নিতে পারতো অথচ তারা কিছুই করেছিল না। ভালো করে আবার খোঁজ খবর নিয়ে পরিশেষে এটাই উঠে আসে , নিশান মেহমেতের বন্ধু ছিল। আর ক্লাবে দপ্তর মেহমেত কে দেখে ভয়ে পালায়নি আসলে সে নিশান কে দেখে ভয় পেয়েছিল। সব ঝট যখন খুলে যাচ্ছিল। ঠিক তখনই দেশের ব্রেকিং নিউজ, নিশান কে নিয়ে যে সে নির্দোষ ছিল। তার পর কেইস টা আবার করে নূর মোহাম্মদ ঘেঁটে দেখে। আসলে নিশানের প্রতিশোধের খাতিরে সবাইকে মেরেছিল। হ্যাঁ তারা সাধারণ মানুষের মুখোশ পড়া একেক জন কালো ব্যাবসার সাথে জড়িত ছিল কিন্তু
এদের সাথে নিশানের কি শত্রুতা ছিল??
পরিশেষে আগামীকাল AHK কম্পানি তে নূর মোহাম্মদ যায় ঐ জুতার ছাপের কম্পানির নাম তো এটাই ছিল। তাহলে অবশ্যই জানা যাবে নিশানের পায়ের জুতার মাপ কতো। আর এখন সব কিছু ক্লিয়ার। এখন শুধু নিশানের মুখের স্বীকারোক্তি বাকি। হ্যাঁ তার সাথে অন্যায় হয়েছিল কিন্তু নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়া অপরাধ। আর অপরাধের শাস্তি অবশ্যই পেতে হবে। নিশানের খোঁজে মেহমেত দের বাসায় যায় কিন্তু গিয়ে জানতে পারে তারা মেহমেতের বোনের বিয়ের জন্য গ্রামে এসেছে। তাই নূর মোহাম্মদ দেরি না করে চলে আসে।
নূর মোহাম্মদ বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে দেখে বড়দের কান্নার রোল পড়ে গেছে। নূর মোহাম্মদ নিজেও পরিচয় দিয়ে জিজ্ঞেস করে নিশান কোথায় আর কি হয়েছে এখানে??
মরিয়মের বাবা চোখ মুছে সব বলে। যে মরিয়ম কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আর তখন নিশান আর মেহমেত হন্তদন্ত হয়ে ছুটে চলে যায়। নূর মোহাম্মদ চিন্তায় পড়ে গেলেন। জিজ্ঞেস করলেন কোথায় গেছে তারা কিছু বলেছে কি?? হামিদ খান জানাই,,তারা কারো কথার জবাব না দিয়েই চলে গেছে। তারা কোথায় গেছে কেউ জানে না!!
নূর মোহাম্মদ কিছু ক্ষন ভাবলো তার পর বলল মেহমেত কিংবা নিশানের নাম্বার টা দিতে।
হামিদ খান মেহমেতের নাম্বার দেয়। নূর মোহাম্মদ অফিসার কে মেহমেতের নাম্বার
ট্র্যাক করতে বলে!!!
নিশান আর মেহমেত সেই পুরনো বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে। সদর দরজা খোলায় ছিল। তারা ভিতরে প্রবেশ করেই, সামনে দেখে মরিয়ম কে চেয়ারের সাথে হাত পা মুখ বেধে রেখেছে। মরিয়মের চেহারা দেখে বুঝা যাচ্ছে,,,তাকে চরম ভাবে মারা হয়েছে। নিজের মাথার হিজাব এলোমেলো হয়ে আছে। গুটি কয়েক চুল মুখের আশেপাশে লেপ্টে আছে।
মেহমেত দৌড়ে মরিয়মের কাছে যেতে নিলে। মরিয়মের সামনে এসে দুই জন লোক দাঁড়িয়ে যায়। অনিত তখন বেরিয়ে আসে সাথে আরো তিন জন লোক!! অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে অনিত তাঁর পর বলে,,
welcome welcome!! অনেক তারাতারি চলে এসেছো!! ভাবতে পারিনি এতো তারাতারি চলে আসবে তোমারা।
মেহমেত মরিয়মের কাছে যেতে চায়। কিন্তু লোক গুলো মেহমেত কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছে। মেহমেত অসহায় কন্ঠে মরিয়ম কে ডাকে! মরিয়ম,, মরিয়ম উঠো! তাকাও আমার দিকে দেখো এসেছি আমি..
লোক গুলো বার বার যখন মেহমেত কে ধাক্কা তে থাকে তখন মেহমেতের রাগ এবার মাথা তে উঠে যায়। সে লোক দুটোর মাঝে একটা লোকের পেটে লাথি মারে আর একটা লোকের নাকের ঘুষি মারে। তখন অন্য তিন জন লোক এসে মেহমেত কে ধরে মারতে থাকে। মরিয়মের কোন জ্ঞান নেই।
নিশান দ্রুত পায়ে এসে ঐ লোক গুলোর কাছে থেকে মেহমেত কে ছাড়ানোর চেষ্টা করে। লোক গুলো কে নিশান মারতে থাকে। একটা হাত ছাড়া পেতে না পেতেই মেহমেত নিজেও মারপিট শুরু করে।
আর এই দিকে অনিতের লোক দের এমন মারতে দেখে সে মরিয়মের মাথায় রিভলভার ধরে তাদের থামতে বলে।
রাগে গজগজ করতে করতে অনিত উচ্চ গলায় বলে,,
এখনি তোরা থামবি নাকি? আমি একে শেষ করে দিবো!!
নিশান আর মেহমেত লোক গুলো কে ছেড়ে দেয়। নিশান মিনতির স্বরে বলে,, তোমার শত্রুতা আমাদের সাথে নাই মেহমেত আর মরিয়মের সাথে। প্লিজ ওদের ছেড়ে দাও তোমার যা করার আমার সাথে করো কিন্তু ওদের ছেড়ে দাও প্লিজ অনিত!!
অনিত দাঁতে দাঁত চেপে বলে,, প্রথমত আমি এদের ছাড়বো না কখনো না!! আমার এতো বছরের মেহনতে গড়া আমার সাম্রাজ্য কে মাত্র ১০দিনে শেষ করেছে আমার সকল পাওয়ার সব শেষ করে ফেলেছে। নিজের জমানো অর্থ দিয়ে আমাকে জেল থেকে বের হতে হয়েছে। আর দ্বিতীয় তো শাহানার মা আর তোর বোন কে নিয়ে আসিসনি। এটার জন্য আবার আমায় আলাদা আগুন পোহাতে হবে। আমি ছাড়বো না কাউকে ছাড়বো না। কিছু তেই ছাড়বো না। শেষ করে দিবো সবাইকে। অনিত নিশানের কাছে গিয়ে তার পেটে একটা লাথি মারে। সাথে মেহমেত কেও।
এলোপাতাড়ি ভাবে নিশান আর মেহমেত কে মারছে সবাই। অনিত , মরিয়মের কাছে যায়,,এক গ্লাস পানি মরিয়মের মুখে ছুড়ে মারে। মরিয়ম পিট পিট চোখ মেলে তাকায়।
সামনের দিকে মরিয়ম তাকাই সব কিছু ঝাপসা লাগছে। শুধু অস্ফুট আওয়াজে কারো চিৎকার মরিয়মের কানে আসছে।
কয়েক ঘণ্টা আগে,, মরিয়ম অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে। হঠাৎ জানালা দিয়ে দুই জন লোক আসে মরিয়ম তাদের এমন ভাবে দেখে তাদের কে কিছু বলতে যাবে তার আগেই তারা এসে মরিয়মের মুখ চেপে ধরে। তাদের সাথে মরিয়ম ধস্তাধস্তি করতে থাকে তখন অন্য জন মরিয়ম কষে কয়েক টা থাপ্পর মারে। আর তখন মরিয়মের নাকের কাছে একটা শিশি বোতল ধরে,, মরিয়ম নাকে সেই শিশির ভিতরের দ্রব্যের ঘ্রান আসতেই ধীরে ধীরে মরিয়মের চোখ দুটো ঝাপসা হতে থাকে এবং এক সময় জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
বর্তমান মরিয়মের চোখের ঝাপসা ভাব কাটতেই দেখে মেহমেত আর নিশান কে লোক গুলো মারছে। মরিয়ম হুংকার দিয়ে অনিত কে ওয়ারনিং দেয়। নিশান আর মেহমেত কে ছেড়ে দিতে নয়লে ফল ভালো হবে না। অনিত তখন মরিয়মের কাছে আসে তাকে থাপ্পর দিতে দিতে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে,কি করবি তুই?? এখনি তোদের সবাইকে মেরে ফেলবো আমি! এখানেই পুঁতে রাখবো।
মরিয়মের বাধন খুলে মুক্ত করে মরিয়মের মাথায় রিভলভার ধরে তাকে দাড় করায়। তার পর তাকে পিছন থেকে ধরে রাখে। মরিয়মের সারা শরীর ঘিনঘিন করে। মরিয়মের ইচ্ছে হচ্ছে এখনি অনিতের হাত দুটো কেটে ফেলতে।
অনিত ঘৃণিত ভাবে মরিয়মের শরীরের ঘ্রাণ নিচ্ছে । মেহমেতের রক্ত গরম হয়ে যায়।
অনিত সদর দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে,,আজ আমি তোর বউ এর এই সুন্দর দেহে আমার নোংরা স্পর্শের দাগ বসিয়ে দিবো। তার আগে তোদের কে মেরে ফেলবো।
অনিত রিভলবার প্রথমে মেহমেতের দিকে তাক করে এক হাতে। আর অন্য হাতে মরিয়মের গলায় ছুরি ধরে থাকে। যেই অনিত গুলি ছুড়তে যাবে তার আগেই , পিছন থেকে কেউ রাম দা দিয়ে অনিতের গলায় আঘাত করে!!!
চলবে _______?????