#মন_গহীনে
#পর্বঃ২৫(বোনাস)
#দোলন_আফরোজ
অনেক বেলা করেই ঘুম ভাংগে কাব্যর। আজ মাথাটা বড্ড বেশি যন্ত্রণা করছে। দুহাতে মাথা চেপে ধরে বুঝার চেষ্টা করছে কোথায় আছে সে। কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারে ছাদের চিলে কোঠার ঘরটাতে আছে সে। অনেক কষ্টে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে গিয়েও ব্যার্থ হয়। আবারো বসে পরে খাটে। হুম ছাদের চিলে কোঠার ঘরে একটা খাট আর একটা শেল্ফ আছে। শেল্ফ এ প্রয়োজনীয় সব কিছুই পাওয়া যায়। ছাদের এই ঘরটা সেলিম সাহেব শখ করেই বানান। মাঝে মাঝে শাহানারা বেগম কে নিয়ে চন্দ্র বিলাস করতে আসতেন উনি। এখন আর সেসব হয়ে উঠে না। সময় টাই হয়না যে।
কাব্য দুহাত খাটে রেখে পা ঝুলিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে বসে আছে। বুকের ভিতর টা এখনো ফাঁকা ফাঁকা ই লাগছে। কাল তিথীকে কফি শপে ছেলেটার সাথে দেখার পর কয়েক ধাপ মদ গিলেছে। তাই বাড়ি ফিরেছে সবাই শুয়ে পড়ার পর।এসে আবারো ছাদে বসে মদ গিলতে থাকে। তখনই ওখানে মেধা আসে। কারণ মেধা দেখেছিলো কাব্য ঢুলতে ঢুলতে বাসায় এসেই ছাদে চলে গেছে। তাই সেই পিছু নেয় কাব্যর। মেধা যখন কাব্যর কাছে যায় তখন সে হুস প্রায় হারিয়েই ফেলে, আর এই সুযোগ টাই নেয় সে।
কিরে ঘুম ভাংলো?
মেধার হাতে লেবু পানি আর কড়া লিকারের রঙ চা।
কথা বলতে ইচ্ছে করছে না কাব্যর।
মেধা এগুলো বিছানায় রেখেই কাব্যর মাথায় হাত দিতে দিতে জিজ্ঞেস করে এখনো মাথা যন্ত্রণা করছে।?
হাত ধরে ফেলে কাব্য। কি করছিস কি? হুট হাট গায়ে হাত দিস কেনো? রাগত্ব স্বরে।
থমকে যায় মেধা। লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে তার। ছলছল চোখে শুধু এটুকু বলে, এভাবে বলতে পারলি আমায়?
উঠে দাঁড়িয়ে, তোর বুঝা উচিৎ, নাউ আই এম এ ম্যারিড পার্সন,উই শোড কিপ ম্যান্টেইন আওয়ার ডিসটেন্স। বলেই নিচে চলে যায়।
কাব্য যখন ফ্রেশ হয়ে নিচে ডাইনিং এ যায় তখন দেখে আজ সবাই বাসায়। কায়েস, সেলিম আহমেদ। চুপচাপ নিজের নাস্তা করছে সে। আর মনে মনে তিথীকে খুজছে। আজ তো তিথীর এক্সাম ও নেই, তবে কোথায় গেলো? রুমেও তো ছিলো না। আর আজ তো ফ্রাইডে ও না, ভাইয়া বাবা বাসায় কেনো? এসব ই ভাবছে কাব্য। তখন শেফালী কে জিজ্ঞেস করে, তোর ছোট ভাবি কই রে?
অর্না অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে কাব্যর দিকে। হেনা বেগম আর হিয়া ও তাদের বিস্ময় কাটিয়ে উঠতে পারেনি। সেলিম সাহেব বিরক্ত হয়ে বলেন, শাহানা তোমার ছেলেকে ন্যাকামো করতে মানা করো। মেজাজ বিগড়ে যাচ্ছে আমার। শাহানারা বেগম এবার কেঁদেই দেন।
কিছুই বুঝতে পারে না কাব্য। সবাই এমন রিএক্ট করছে কেনো।
কি ব্যাপার বলছিস না কেনো?
কাব্যর ধমকে শেফালী প্রায় কেঁদে দিয়ে বলে ভাবি তো চইলা গেছে।
কাব্য শুধু ছোট করে বলে, চলে গেছে? সত্যিই আমার পুতুল বউ চলে গেছে আমাকে ছেড়ে?
সেলিম সাহেব রেগে বলেন, কি নাটক করছিস? তোর মেধাকেই পছন্দ, তুই কেনো শুধু শুধু তিথীর জীবন টা নষ্ট করলি?
পাগল হয়ে গেছো তুমি বাবা?( আজ অনেক বছর পর বাবা ডাকলো কাব্য) মেধাকে আমার কোনোদিন ও বউ হিসেবে পছন্দ না এটা সবাই জানো। তবে কেনো সব আজগুবি কথা বলছো।
তখন শাহানারা বেগম বলেন কাল রাতে তিথী মেধা আর কাব্য কে কি অবস্থায় দেখেছে আর তাদের কথোপকথন, আর কাব্যর তিথীকে বলা সব কথা গুলো।
মেয়েটা কাল শুধু তোর জন্যই সেজেগুজে বসে ছিলো। নিজের ভালোবাসাকে কনফেজ করতে চেয়েছিলো কাল। আর তুই কিনা…
মাথায় হাত দিয়ে বসে পরে কাব্য।
তখন মেধা বলে কাব্য তিথীকে বিয়ে করা টা ওর জীবনে করা সব চেয়ে বড় ভুল। ও যখন ওর ভুল টা শুধরাতে চাইছে তাতে তো তোমাদের আপত্তি থাকার কথা না।
এবার রেগে যায় কাব্য। এই মেয়ে তোর মাথা ঠিক আছে? আমি তিথীর জন্য কতোটা পাগল সবটা জানার পর ও তুই কি করে এই কথা বলছিস?
রাগিস না প্লিজ, আমি বুঝতে পারছি তোর কষ্ট টা। তিথী তো বাচ্চা মেয়ে, তোর মন বুঝে না। তাই তুই মানিয়ে নিতে পারছিস না। তোর জীবন ম্যাচিউর কাউকে দরকার যে তোকে আগলে রাখবে।
বাহ মেধা বাহ, এগুলা বলেই তুই তিথীর মাথাটাকে বিগড়ে দিয়েছিস। তুই আমাকে ছোট বেলা থেকে জানিস। তোকে আমি বন্ধু হিসেবে সবার উপরে প্রাধান্য দেই কারণ আমাকে ডিপ্রেশন থেকে এক সময় তুই ই বের করেছিলি। আর সেই সুযোগ টাই নিলি তুই।
ভুল বুঝছিস তুই আমাকে। আমি তো তোর কষ্ট দেখেই কথা গুলো বললাম।তুই জানিস আমি তোর ব্যাপারে কতোটা পজেসিব।তোর সামান্য পরিমাণ কষ্ট আমার সহ্য হয় না।
হিয়াঃ প্লিজ মেধা আপু, আর ব্রেইন ওয়াশ করো না ভাইয়ার। এতোদিন কাউকে যা বলিনি, আজ ও যে ছেড়ে দিবো তোমায় তা কিন্তু ভেবো না।ভাবিকে কি বলেছো ভাবি আর কাউকে না বললেও কিন্তু আমাকে ঠিক ই বলেছে।
মেধাঃ চোখ রাংগিয়ে, তুই কিন্তু বেশি করছিস হিয়া।
কাব্য ঃ কি বলতে চাস ঠিক করে বল। কি বকেছে তিথীকে ও? চোখ গরম করে।
হিয়া বলতে যাবে তখনই চিৎকার করে উঠে মেধা।কি বলবি তুই? হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ, ভালোবাসি আমি কাব্য কে। একদিনে আমি এই জায়গায় আসিনি। কাব্য আমার অনেক বছরের সাধনা। একটু একটু করে ওর মনে জায়গা করেছি আমি। কেনো ঐ মেয়েটা হুট করে এসে আমার কাব্য জীবনে জুড়ে বসবে। আর তা আমি হতে দিবোই কেনো? দিবো না আমি কাব্যর ভাগ কাউকে। বলে কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরে বসে পরে মেধা।
ওর কথা শুনে নিজের জায়গা থেকে দু কদম পিছিয়ে যায় কাব্য। নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছে না ও। সব ঘটনায় যেনো স্বপ্নের মতো লাগছে। এতো বছরের চেনা মানুষ টা আজ কি করে এমন অচেনা কথা বলতে পারে বিশ্বাস হচ্ছে না তার।পাশে থাকা চেয়ারটায় বসে পরে কাব্য।
শাহানারা বেগম সেলিম সাহেব কে বলেন, আমি তোমাকে ৬/৭ বছর যাবৎ ই বলে যাচ্ছি এ কথা। কোনোদিন কানে নাউনি আমার কথা। আমি মেয়ে, বুঝি একটা মেয়ের মনে কি চলে। আর তোমার ছেলেকেও চিনি আমি, পৃথিবীর যেই প্রান্তেই থাক তার পুতুল বউ কে সে খুঁজে বের করবেই তাই বলেছিলাম দুজনকে আলাদা রাখতে। শুনলে না আমার কথা।
কাব্য বলে, বিশ্বাস কর, আমি কোনো দিন তোকে সে নজরে দেখিনি, আর তোর সাথে এমন কোনো বিহেইভ ও করিনি যে তুই এসব ভাবতে পারিস। আর সবচেয়ে বড় কথা পুতুল বউ কে নিয়ে প্রতিটা অনুভূতির কথা তোর সাথেই আমি শেয়ার করতাম। তারপর ও কি করে ভাবতে পারলি তুই এসব?
মেধা ছুটে এসে কাব্যর পায়ের কাছে বসে বলে, না তোর কোনো দোষ নেই, আমিই এসব ভেবে নিয়েছি। আজ যখন জানলি প্লিজ আমায় ফিরিয়ে দিস না কাব্য। আমি তোকে সহ্য করতে পারি না ঐ তিথীর সাথে। তুই ও সুখী হবি না ওর সাথে। বিশ্বাস কর, আমার সবটা দিয়ে চেষ্টা করবো তোকে সুখে রাখার।
ফট করে উঠে মেধার থেকে দূরে সরে গিয়ে,প্লিজ মেধা আমাকে আর ছোট করিস না। আমারি ভুল ছিলো, জীবনে কোনো মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকায়নি পর্যন্ত, তবে কেনো তোর সাথে বন্ধুত্ব করতে গেলাম, কেনো তোকে এতো প্রশ্রয় দিতে গেলাম। ছিহঃ
এভাবে বলিস না কাব্য, দেখিস আমরা এক সাথে অনেক সুখি হবো।
তুই এতো বছরে কেনো বুঝতে পারছিস না তিথীতেই আমার সুখ।
এবার ঝাঝালো কন্ঠে বলে মেধা, এই কিসের সুখ রে? বিয়ের প্রায় ১ বছর হতে চল্লো, এতোদিনেও কি ফিজিক্যাল হতে পারছিস তুই তিথীর সাথে? ওই মেয়ে কিচ্ছু বুঝবে না তোর। তোর শক, আহ্লাদ, চাহিদা কিচ্ছুনা।
তুই পাগল হয়ে গেছিস মেধা, তুই পাগল হয়ে গেছিস। কোথায় কি বলছিস কিচ্ছু বুঝতে পারছিস না।
কাব্যর দুহাত চেপে ধরে, হ্যাঁ তুই যেদিন বিয়ে করেছিস সেদিন থেকেই আমি পাগল হয়ে গেছি। তোর জন্য পাগল হয়ে গেছি। তোর এই পাগল টাকে নিজের করে নে না।
লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে নিজেকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে কাব্য। মেধার দু বাহুতে হাত রেখে বলে, দেখ আমি ভালোবাসাকে সম্মান করি। আর বন্ধু হিসেবে তোকেও যথেষ্ট সম্মান করি। নিজেকে বেহায়া বানিয়ে ফেলিস না। আর আমার জীবনে ছোট থেকেই একটা নারীর ই অস্তিত্ব। আর আমি নিজেও যদি চাই সেখানে আর কাউকে বসাতে পারবো না। আশা করি বুঝাতে পেরেছি তোকে।
এমন করিস না কাব্য প্লিজ।
বন্ধু হিসেবে যদি আমাকে কোনো দিন এতোটুকুও ভালোবেসে থাকিস, তবে আর কখনো আসিস না আমার সামনে। বলে শাহানারা বেগম কে বলে, মা আমি তিথীকে আনতে যাচ্ছি। বলেই বেড়িয়ে যায় কাব্য।
মেধার জন্য সবার খারাপ লাগলেও এখন মেধাকে কাব্য তিথীর জন্য বিপদজনক ই মনে হচ্ছে সবার।
সেলিম সাহেব বলেন, আমিই তোমাকে প্রায় ১৫ বছর আগে এ বাড়িতে এনেছিলাম তাই বের করে দিতে পারবো না এখন। শুধু অনুরোধ করবো আমার ছেলে ছেলে বউ আসার আগে চলে যাও মা।
মেধা বুঝতে পেরে যায় কাব্যর জীবনে কখনো তার জায়গা ছিলো না আর ভবিষ্যতেও হবে না।
।
।
।#মন_গহীনে
#পর্বঃ২৬
#দোলন_আফরোজ
এক ঘন্টা যাবৎ কাব্য তারেক রহমান এর ড্রয়িং রুমে বসে আছে। কিছুক্ষণ আগে পর্যন্ত তিথী এখানে ছিলো। মায়ের কোমড় জড়িয়ে শুয়ে ছিলো ড্রয়িং রুমের সোফায়। কলিং বেল বাজলে তানিয়া বেগম দরজা খুলে দেয়ার পর যখন কাব্য বাড়ির ভিতর আসে কাব্য কে দেখেই তিথী নিজের রুমে গিয়ে দরজা আটকে দেয়।
একনজর তিথীকে দেখে কাব্যর বুকের ভিতর টা ধুক করে উঠে। ফর্সা মুখটা লাল হয়ে আছে কেঁদে। চোখ দুটো ও অসম্ভব রকম ফোলা।
কাব্য এগিয়ে যেতেই কাব্যর মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দেয়। অনেকবার ডাকার পর ও খুলেনি।
তারেক রহমান অফিস থেকে ফিরেছেন কিছুক্ষণ আগে। সেই দুপুর থেকে ঘরে দরজা আটকে বসে আছে তিথী। দুপুরে খাওয়া হয়নি কারো। তারেক রহমান এসে সব শুনে হতাশ হন।
মেয়েকে ডাকে অনেকবার। শুধু একবার সাড়া দিয়েছে। বেঁচে আছি আব্বু, মনে যায়নি আমি। প্লিজ যাও এখান থেকে।
এমন ভাবে বলে না মা, দরজাটা খোলো একবার। দেখো ছেলেটা সেই দুপুর থেকে এসে বসে আছে কিচ্ছুটি খায়নি পর্যন্ত। প্লিজ মা খোলো দরজাটা।
ছেলে ছেলে ছেলে, মাথা খারাপ করে দিচ্ছো আমার। যদি তোমাদের ছেলেরি দরকার পরে তবে আমাকে হারাবে বলে দিচ্ছি আব্বু। ও যদি এ বাড়িতে আর কিছুক্ষণ ও থাকে আমি কিন্তু বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো।
প্লিজ তিথী, একবার দরজাটা খোলো, আমাকে কিছু বলার সুযোগ টা তো দাও। আর কষ্ট দিও না আমায়। কেনো আমার ভালোবাসাটা বুঝার চেষ্টা করছো না। মানছি আমার দোষ, তবু দরজাটা খুলে অন্তত আমার কথাটা শুনো।
খট করে দরজা খুলে দেয় তিথী। দরজা খোলার সাথে সাথেই কাব্য এগিয়ে যেতেই এক হাত সামনে এগিয়ে দিয়ে কাব্য কে থামার ইংগিত দেয় তিথী। সবাই তিথীর দিকে তাকিয়ে আছে। বাবা মা কে উদ্দেশ্য করে বলে, ছেলে চাই তোমাদের?
চুপ আছেন উনারা। কাব্য ও চুপ।তিথী কি করতে চাইছে কিছুই বুঝতে পারছে না তারা।
নিরবতা ভেঙে তানিয়া বেগম বলেন কি বলতে চাইছিস তুই?
আমি শুধু এটাই বলতে চাইছি যদি তোমরা ওকে চাও( এক আংগুল কাব্যর দিকে তাক করে) তবে আমাকে সারাজীবনের জন্য হারাবে।
হা হয়ে আছে কাব্য। তারেক রহমান বলে, এসব কি বলছো মা?
যা শুনেছো তাই বলেছি আব্বু। উনি যদি এক্ষুনি এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে না যায় আর উনাকে যদি এই বাড়িতে আমি কক্ষনো দেখেছি তবে এই মূহুর্তে এভাবেই আমি বেরিয়ে যাবো বলে দিচ্ছি।
আমার কথা টা শুনো প্লিজ। আমি আর এক মুহুর্ত পারবো না তোমার থেকে দূরে থাকতে। প্লিজ তিথী নিজের হয়ে একটু সাফাই দেয়ার সুযোগ দাও আমায়।
দুকানে দু হাত দিয়ে চেপে ধরে চিৎকার করে বলে, আম্মু প্লিজ, যাবে কি উনি নাকি আমি যাবো। বলেই মেইন দরজার দিকে পা বাড়ায়।
গম্ভীর গলায় কাব্য বলে, চাচী তোমার মেয়েকে কোথাও যেতে নিষেধ করো। আমিই চলে যাচ্ছি। বলে বাইরে বেড়িয়ে যায় সে।
তিথী ও কান্না করতে করতে সোফাতে গিয়ে বসে পড়ে। তারেক রহমান চুপ করে আরেক সোফাতে বসে আছেন।তানিয়া বেগম তিথীকে বকাঝকা শুরু করেছে।
কোনোদিন তুই ছেলেটাকে বুঝলি না, সব সময় নিজের জেদ ই রাখলি। একবার তো সুযোগ দিতি কথা বলার।
কিচ্ছুটি বলছে না তিথী।
ছেলেটা খেয়ে পর্যন্ত যায়নি। সেই দুপুর থেকে এসেছে, তবুও খায়নি।
এবার আর থাকতে পারেনি তিথী, নিজের ঘরে চলে যায়।
রাত ৯ টার কাছাকাছি বাজে। তানিয়া বেগম তিথীকে ডাকতে যায় খাওয়ার জন্য। রাতেও খায়নি সে। তানিয়া বেগম ও আর জোর করেননি। কারণ মেয়ের উপর উনার চাপা রাগ আছে।
ঘুমাতে যাওয়ার আগে মেইন দরজা একবার চেক করতে যায় তানিয়া বেগম। দরজা খুলে বাইরে একবার তাকাতে দেখে বাড়ির কিছুটা দূরে ল্যাম্পপোস্টের নিচে বাইকে হেলান দিয়ে দুহাত বুকে গুজে দাঁড়িয়ে আছে কাব্য। কাব্য কে দেখে চোখ দুটো বড় বড় করে ফেলে তানিয়া বেগম। তারমানে তখন যায়নি কাব্য? এখন রাত ১১ টা বাজে। ও তো ৭ টার কিছুটা পরেই বেরিয়ে গেছিলো। খায় ও নি ছেলেটা।
তানিয়া বেগম ওখানে গিয়ে কাব্যর হাত ধরে বলে, চল ভিতরে। কাব্য পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে। নড়েওনি
প্লিজ চল বাবা, তুই ও জেদ করিস না। আমি আর নিতে পারছি না তোদের এসব।
ওভাবে দাঁড়িয়েই শুধু মুখটা তুলে তানিয়া বেগম কে বলে, জেদ কি শুধু তোমার মেয়ের ই আছে?
তোমার ছেলে কতোটা জেদি তা তুমি ভালো করেই জানো। ও আমাকে বাড়ির ভিতর যেতে না করেছে, কিন্তু এখানে থাকতে তো সমস্যা নেই না?
তিথী কে না নিয়ে আমি কোথাও যাচ্ছি না। এখানে এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকবো যতক্ষণ পর্যন্ত না ও এসে আমার কথা গুলো শুনবে। প্লিজ চাচী, যাও তুমি।
আরো কিছুক্ষণ জোরাজোরি করে ব্যার্থ হয়ে তানিয়া বেগম ফিরে যান। গিয়ে আবারো তিথীর দরজায় নক করে বলে, দাঁড়িয়ে আছে ছেলেটা, একটাবার কথাটা শোন ওর।
ঝাঝালো কন্ঠে বলে, শুনেছিলো তোমার ছেলে আমার কথা? আরেক মেয়ের কাঁধে মাথা রেখে শুয়ে ছিলো। মুক্তি দিয়েছে আমাকে, তাই না? আসলে উনি নিজেই মুক্তি পেতে চেয়েছিলেন আমার থেকে। দিয়েছিতো মুক্তি, কেনো তবে নাটক করছে এখন?
পস্তাতে হবে তোর দেখিস।
প্লিজ আম্মু ঘুমাতে দাও আমাকে, ঘুম পাচ্ছে খুব। বলেই শুয়ে পরে সে।
তানিয়া বেগম রাগে গজগজ করতে করতে বেরিয়ে যায়।
মনে মাঝে যে তার শান্তি আছে তাও কিন্তু না। কাব্য কে কষ্ট দিয়ে সেও যে তার চেয়ে অনেক বেশি কষ্ট পাচ্ছে।
তানিয়া বেগম চলে যাওয়ার পর তিথী উঠে গিয়ে জানালার পাশে দাঁড়ায়। পর্দাটা একটু ফাঁক করে দেখে কাব্য ওভাবেই বুকে হাত গুজে বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
ইচ্ছে করছে এক্ষুনি ছুট্টে গিয়ে কাব্যর কলার চেপে ধরে জিজ্ঞেস করতে কেনো এমন টা করলো সে। কেনো মেধার সাথে এতো মাখামাখি তার?
কিন্তু না, করবে না সে। মুক্তি দিয়েছে না? নতুন আকাশ খুঁজতে বলেছে?
হুহ সবাইকে নিজের মতো ভাবে। বলেই আবারো রাগ হয় তিথীর। পর্দাটা লাগিয়ে দিয়ে আবার গিয়ে শুয়ে পরে। ঘুমানোর চেষ্টা করছে খুব, কিন্তু দুচোখের পাতায় যে আজ ঘুম নেই। তাই বিছানায় ছটফট করছে সে।
হেমন্তের রাত, এমনিতেই হালকা ঠান্ডা পড়ে শেষ রাতের দিকে, তার উপর মাঝ রাত থেকেই ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়। লাফিয়ে উঠে তানিয়া বেগম আর তারেক রহমান। কাব্য কি এখনো এভাবেই দাঁড়িয়ে আছে? তানিয়া বেগম আর তারেক রহমান দ্রুত উঠে যান।দরজা খুলে দেখে কাব্য এখনো ওভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। তারেক রহমান একটা ছাতা নিয়ে গিয়ে খুব জোর করেন ভিতরে আসতে। আসে না কাব্য। এবার আবারো তানিয়া বেগম যায়। তবুও আসেনা কাব্য। তানিয়া বেগম ও ওর সাথে বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে থাকলে কাব্য বলে প্লিজ চাচী চলে যাও তুমি।
তোকে না নিয়ে যাবো না কোথাও।
প্লিজ চাচী তুমি ভালো করেই জানো তোমার মেয়ে না আসা পর্যন্ত আমি এখান থেকে এক পা ও নড়বো না।
প্লিজ বাবা আর জেদ করিস না। চল প্লিজ।
তুমি চাচা, তোমরা যদি এখন ভিতরে না যাও আমি কিন্তু খুব খারাপ কিছু করে ফেলবো। যদি আমার ভালো চাও তবে চলে যাও চাচী।
কাব্যর এরকম গম্ভীর গলার কথা কতোটা ভয়ংকর হয় তা তানিয়া বেগম ভালো করেই জানেন। তাই উনিও আর কথা না বাড়িয়ে তারেক রহমান কে নিয়ে চলে যান বাড়ির ভিতর।
সবটাই দেখছিলো জানালার পাশে দাঁড়িয়ে তিথী। খুব কষ্ট হচ্ছে ভিতরটায়। কিন্তু তখনকার বলা কাব্যর কথা গুলো তার কানে বাজতে থাকে। সুখে থাকতে চায় সে মেধার সাথে। এটা ভেবেই সে নিজেকে শক্ত করে রাখে।
এদিকে দুচোখের পাতা এক করতে পারছে না তারেক রহমান তানিয়া বেগম। কি করবেন কিছুই বুঝতে পারছে না। শাহানারা বেগম কে বলবেন? তাতেও যে কোনো কাজ হবে না তা ভালো করেই জানেন।কোনো উপায় না পেয়ে এই রাতেই ফোন দেয় আবিরকে।
বৃষ্টির কারণে আবিরের আসতে ফরজ পার হয়ে যায়। আবির এসে দেখে কাব্য এখনো ওভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। চোখ দুটো অসম্ভব রকম লাল হয়ে আছে। গা বেয়ে পানি পরছে। শরীর টাও যেনো আর দিচ্ছে না।আবির এসে ধরতেই আবিরের গায়ের উপর লুটিয়ে পড়ে কাব্য। তারেক রহমান তানিয়া বেগম আর আবির ধরাধরি করে গাড়িতে তোলে তাকে। গাড়ি করে সোজা কাব্যর বাড়ি নিয়ে যায়। সাথে তারেক রহমান ও তানিয়া বেগম ও যায়। কাব্য তখন সেন্সলেস। বাড়ির সবাই তো সবটা জেনে পুরাই অবাক। শাহানারা বেগম বিলাপ পেরে কান্না করছে। তোদের দুজনের জেদাজেদির কারণে তোরা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি করছিস।
কিছুক্ষণের মাঝেই ডাক্তার আসে। প্রচন্ড জ্বর এসে যায় কাব্যর। প্রায় ১০৫ জ্বর। আর এ কারণেই সেন্সলেস হয়ে গেছে। ডাক্তার ইঞ্জেকশন দিয়ে যায়, আর শরীর গরম রাখতে বলে। তাই শাহানারা বেগম আর হেনা বেগম তেল গরম করে হাতে পায়ে মালিশ করতে থাকে।
সারারাত জেগে থেকে শেষ রাতের দিকে তিথী জানালার গ্রীল ধরেই ঘুমিয়ে যায়। ঘুম ভাংগে অনেকটা বেলা করেই। ঘুম থেকে উঠে দেখে বাসায় কেউ নেই। পুরো বাসা ফাঁকা আর বাড়ির মেইন দরজা ও বাইরে থেকে লক।কিছুই বুঝতে পারছে না সে।
দুপুরের দিকে বাড়ি ফিরেন উনারা।
আব্বু তুমি আজ অফিসে যাওনি?
কোনো কথা বলছে না কেউ। উনারা ফ্রেশ হতে চলে যায়।দুপুরের খাবার রেডি করে তানিয়া বেগম রাগত স্বরে বলে খেয়ে নাও খাবার দেয়া আছে টেবিলে।
কিছুই বুঝতে পারছে না তিথী কি হচ্ছে এসব। ঘুম থেকে উঠে কাব্য কেউ আর দেখেনি। হয়তো চলে গেছে।
আচ্ছা সত্যিই কি চলে গেছে? জিজ্ঞেস করবো কি আম্মুর কাছে? নাহ জিজ্ঞেস ও করেনি আর।
বিকেলের দিকেও তারেক রহমান তানিয়া বেগম বেড়িয়ে যায়, ফিরেও অনেক রাত করে।
তিথীর বুকের ভিতর টা খচখচ করতে থাকে। ফিরে এসেও তেমন কথা বলেনি আব্বু আম্মু। কাব্য খবর কিভাবে নিবে তাই ভাবতে থাকে সে। এর মাঝেই তমা ফোন করে অনেক কড়া কথা শুনায়। কেঁদেই দেয় তিথী।
তমা বলে কাব্য ভাইয়া যে তোকে কতোটা ভালোবাসে তা যদি তুই বুঝতিস রে পাগলি। নেহাৎ ই আমাদের হাত পা বাধা, নয়তো অনেক আগেই তোকে সবটা বলতাম।
কি লুকাচ্ছো আপুটি?বলো না প্লিজ।
আপাতত কি লুকাচ্ছি তা না জানতে চেয়ে কাব্য ভাইয়া কেমন আছে তার খোঁজ টা নে একটু।কাল সারাটা রাত বৃষ্টিতে ভিজেছে।কথা গুলো বলেই ফোন রেখে দেয় তমা।
রাত প্রায় ১২ টা বাজতে চল্লো। কার কাছ থেকে খোঁজ নিবে সে। ফোনটাও তো রাগ করে আনেনি। তমার সাথে বাসার ল্যান্ডলাইনে কথা বলেছে। বড্ড অস্থিরতায় কেটেছে তিথীর রাত টা।সারাটা রাত কেঁদে কেঁদে বালিশ ভিজিয়েছে। কেনো করলো কাব্য এমনটা? ঐ মেধাকে কানো এতো প্রায়োরিটি দিতে হলো।
সকাল হতেই আম্মুর ফোন নিয়ে হিয়াকে ফোন দেয়। কাব্যর কথা জিজ্ঞেস করতে বলে, ভাবি তুমি সত্যিই কিছু জানো না?
তিথীর সারা শরীর কেমন কেঁপে উঠে। কি জানবো আমি?
ভাইয়া তো কাল থেকেই জ্বর। ১০৪ ১০৫ এ উঠা নামা করছে জ্বর। সেন্সলেস ও হয়ে গেছিলো। জ্বরের ঘোরেই খালি তোমার নাম জপছিলো। মামি ফোন করতে চেয়েছিলো তোমাকে। তোমার মা ই ফোন করতে
দেয়নি।
তারমানে আব্বু আম্মু ওবাড়ি গেছিলো কাল? অবাক হয়ে।
হুম উনারা তো এখানেই ছিলেন কাল।
আরো কিছু কথা বলে রেখে দেয় ফোন।
তানিয়া বেগম তারেক রহমান রেডি হচ্ছে ওবাড়ি যাওয়ার জন্য । কাব্যর নাকি আজ পুরোপুরি জ্ঞান এসেছে।
তিথী এসে জিজ্ঞেস করে কোথায় যাচ্ছো আম্মু.?
তা তোমার না জানলেও চলবে।খাবার দেয়া আছে খেয়ে নিও তুমি।
মাথাটা নিচু করে বলে আম্মু আমি ওবাড়ি যাবো।
কেনো যাবে ওখানে? সব ছেড়ে যখন চলেই এসেছো, ছেলেটাকে এতোটা কষ্ট দিয়েছো তারপর ও কেনো যেতে চাইছো ওখানে?যাওয়া হবে না তোমার ওখানে।
এবার তিথী সোজা মায়ের পায়ে পড়ে যায়। প্লিজ আম্মু, আমায় ক্ষমা করে দাও। আর কক্ষনো এতো জেদ করবো না। প্লিজ নিয়ে যাও আম্মু, ও খুব অসুস্থ। আমি দেখবো ওকে।
আমার কাছে ক্ষমা চেয়ে কি হবে, তুমি যার অপরাধী তার কাছে ক্ষমা চাইবে। সে যদি ক্ষমা করে তবেই ক্ষমা পাবে। এটুকু বলে তারেক রহমান কে ডেকে বেরিয়ে যান উনি। তিথী ও উনাদের পিছু পিছু যায়।
আজ কাব্য মোটামুটি ভালো, জ্বরটাও কম। কিন্তু শরীর এখনো খুব দূর্বল। খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে কাব্য। শাহানারা বেগম মুখের সামনে গরম সুপের বাটি ধরে রেখেছে। অনেক না না করেও ২ চামচ খেয়ে রেখে দিয়েছে সে।বাড়ির লোকের সাথে আরো যোগ আছে পিয়াস, আশিক, আবির আর তমা।
তানিয়া বেগম আর তারেক রহমান ও এসে উপস্থিত হন। উনাদের পিছনেই চোরের মতো এসে দাঁড়ায় তিথী। তিথীকে দেখে সেলিম সাহেব শাহানারা বেগম সহ খুশী হয় সবাই। শাহানারা বেগম রা জানতেন ই তিথী নিজ থেকেই আসার কথা বলবে, এই জন্য ই তানিয়া বেগম নিষেধ করেছিলেন সবাইকে, তিথীকে যেনো আগ বাড়িয়ে কেউ কিছু না বলে।
তিথী কে দেখে কাব্য থমথমে গলায় বলে, চাচী তোমার মেয়ে কেনো এসেছে এখানে? মরেছি কিনা তা দেখতে?
এবার তিথী ঠোঁট উলটে হো হো করে কেঁদে উঠে। শাহানারা বেগম তিথীর কাছে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে দেন। হয়েছে, জেদ তোমাদের কারো থেকে কারো কম না। কেউ নাম নিজেদের মাঝে কথা না বলে যে যার মন মতো কাহিনী বানিয়ে নিয়ে দূরে সরে গেছো। এখন আবার সবাই মিলে আমার মেয়েটাকেই কোণঠাসা করে দিচ্ছো।
সেলিম সাহেব ও বলেন, কাব্য এখন মোটামুটি বেটার ফিল করছে, সবাই চলো ও একটু রেস্ট নেক এখন।
উনার কথার মানে বুঝতে পেরে সবাই একে একে বেরিয়ে যায় রুম থেকে। তিথী ও বেরুতে নিলে কাব্য আবারো গম্ভীর গলায় বলে তুমি কোথায় যাচ্ছো?
মিনমিনে গলায় তিথী বলে, বাবা বল্লো সবাইকে চলে যেতে। এবার কাব্য কপালে এক হাত ডলে বিরক্তি ভংগী করে বলে, এই মেয়ে সত্যিই আমার জান নিয়ে নিবে একদিন। এই তুমি কি সত্যিই কিছু বুঝো না নাকি বুঝার চেষ্টা করো না।
কোনো কথা না বলে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে তিথী। সে ভুল কি বল্লো তাই বুঝার চেষ্টা করছে।
সবাইকে যেতে বলেছে বলে কি তোমাকেও যেতে বলেছে?
এবার বাচ্চাদের মতো মুখ করে বলে, আমাকে বলেনি?
কাব্যর এবার বেশ হাসি পাচ্ছে। অনেক কষ্টে হাসি চেপে রেখে আবারো কন্ঠে গাম্ভীর্য ভাব এনে বলে ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে?
তিথী চুপচাপ এসে কাব্যর সামনেই খাটের এক কোণে বসে পরে।
গম্ভীর গলায় কাব্য বলে, কাছে এসো। একটু এগিয়ে আসে তিথী।
আরো।
আরেকটু আগায়।
আরো কাছে।
আরেকটু আগায়।
আরো কাছে। কাব্যর গম্ভীর কন্ঠটা অন্যরকম নেশালো লাগছে তিথীর কাছে। আরেকটু আগায় সে।
আরো কাছে।
এভার এগিয়ে এসে কাব্যর একদম মুখোমুখি হয় তিথী। ক্লান্ত বিদ্ধস্ত চেহারা, চুল গুলো উসকোখুসকো, রক্তলাল চক্ষুদ্বয়। ওষ্ঠ জোড়া শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে।রক্তলাল চোখদুটোতে যেনো নেশা ধরে আছে। শুকনো ঠোঁট জোড়ায় হাজার বছরের তৃষ্ণা। কাব্যর এই চেহারার সাথে তিথী অপরিচিত। কেমন যেনো কমনীয় লাগছে আজ ওকে। ভয়ে তিথীর গলা শুকিয়ে আসছে। তিরতির করে কাঁপতে ঠোঁট জোড়া। যেনো কিছু বলতে চাইছে সে। কিন্তু গলা দিয়ে কথা বেরুচ্ছে না। কিন্তু তার যে ক্ষমা চাইতেই হবে।শুকনো একটা ঢুক গিলে সে। তিরতির করে কাঁপা ঠোঁট জোড়া দিয়ে কিছু বলতে যাবে তাই ঠোঁট জোড়া ঈষৎ ফাঁক করে সে।কিন্তু কই, কথা তো বেরুচ্ছে না।
নাহ, কাব্য আর পারছে না নিজেকে ধরে রাখতে। এতোগুলো মাস নিজেকে বহু কষ্টে কন্ট্রোল করেও আজ যেনো তা অসম্ভব হয়ে পরছে। আজ তার পুতুল বউ কে তাই চাই ই চাই। খুব আপন করে চাই তার। আচমকাই একহাতে তিথীর কোমড় জড়িয়ে ধরে আরেক মাথায় পিছনে দিয়ে তিথীর নরম কোমল ঠোঁটে নিজের এতোদিনের পিপাসিত শুকনো ঠোঁট জোড়া ডুবিয়ে দেয়।আচকমায় এমন টা হওয়াতে তিথী শুরুতে কিছুই বুঝে উঠতে পারেনি। যখন বুঝতে পারে চোখ দুটো বড় বড় করে ফেলে সে। এতে কাব্যর কোনো ভাবলেশ নেই। সে তার এতোদিনের জমানো তৃষ্ণা যেনো আজ ই মিটিয়ে নিবে। এদিকে তিথীর দম যেনো আটকে আসছে। কাব্য দিব্যি দম নিতে পারছে, ভাবছে কি করে পারছে মানুষ টা। প্রায় ৭ /৮ মিনিট পর ছেড়ে দেয় কাব্য। ছাড়া পেয়ে বুকে হাত দিয়ে বড় বড় করে দম নেয় তিথী। এদিকে কব্য খাটের সাথে মাথা এলিয়ে দিয়ে দুচোখ বন্ধ করে লম্বা একটা নিশ্বাস নেয়। পরম শান্তির নিশ্বাস।
এটা কি করলেন?
কথাটা শুনে চোখ মেলে তাকায় কাব্য। আবারো একি ভাবে কোমড় জড়িয়ে ধরে তিথীর।
আবার চোখ বড় বড় করে ফেলে তিথী। ভয়ে পর পর দুটো ঢুক গিলে।মনে মনে বলে আবারো এমন করবে নাকি?
মায়াভরা কন্ঠে কাব্য বলে, এ চোখে তুমি ছাড়া আর কাউকে দেখেছো কখনো?
দুদিকে মাথা নাড়ে তিথী।
এক মুহূর্তের জন্য দূরে যেও না, মরে যাবো আমি।
এবার তিথী কেঁদে উঠে। আমি দূরে যাইনি, আপনি তাড়িয়ে দিয়েছিলেন।আপনি ঐ মেধা….
আবারো ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়, কয়েক সেকেন্ড এর জন্য। উহুম, আমার জীবনে শুধু তিথীর ই অস্তিত্ব আছে। আমার পুতুল বউ, যাকে ছাড়া কাব্যর ই কোনো অস্তিত্ব নেই। কক্ষনো ভুল বুঝোনা আমায়।
পুতুল বউ?
কপালে চুমু দিয়ে, হুম পুতুল বউ। আমার পুতুল বউ। যাকে ১৫ বছর মন গহীনে লুকিয়ে রেখে কল্পনার রঙে সাজিয়েছি।
ভ্রু কুঁচকায় তিথী।
সব জানবে পাগলি, সময় হয়েই গেছে। বলেই তিথীর মাথাটা ওর বুকে চেপে ধরে। চোখ বুজে আছে কাব্য। আজ নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হচ্ছে।
তিথী ও চোখ বন্ধ করে কাব্যর হৃদপিণ্ডর আওয়াজ শুনছে। বুঝার চেষ্টা করছে এই আওয়াজের ভাষা।
হঠাৎ কি মনে হলো মুখ তুলে তিথী জিজ্ঞেস করে আগে ক বার?
অবাক হয়ে তাকায় কাব্য। কি আগে ক বার?
এই যে এই কিস?
এবার হু হু করে হেসে দেয়। এটাই ফার্স্ট টাইম।
ভ্রু কুঁচকায় তিথী। ফার্স্ট টাইম ই এতো ভালো?
ওয়াও সার্টিফিকেট পেয়ে গেলাম। তারমানে ভালো হয়েছে বলছো?
বাই দ্যা ওয়ে, তুমি কি করে জানলে ভালো হলো নাকি খারাপ? এক ভ্রু উচিয়ে।
তিথী মাথা নিচু করে বলে, আমার ফ্রেন্ড অনু বলেছে।
ম্যারেড ও?
উহু।
তো? ও কি করে জানলো?
বয়ফ্রেন্ড আছে ওর। ওকেই কিস করেছে।
কপালে হাত দিয়ে কাব্য বলে, হাইরে কপাল, মানুষের ও কপাল আর আমারো। মানুষ গার্লফ্রেন্ড কে কিস পর্যন্ত করে ফেলে, আর আমি বিয়ের প্রায় ৯ মাস পর বউকে কিস করতে পারলাম।যাই হোক, কিস ব্যাপারে ধারণা ছিলো তবে আমার বউ এর। আমি তো ভেবেছিলাম আমার বউ টা পিচ্চি, কিচ্ছু বুঝে না। আদুরে গলায় কোমড় জড়িয়ে। আর কি কি শিখেছে আমার বউটা তার ফ্রেন্ড এর থেকে?
এবার তিথী লজ্জা পেয়ে কাব্যর বুকে মুখ লুকিয়ে ফেলে। মাথা নাড়িয়ে বলে আর কিচ্ছু শিখিনি।
হাসে কাব্য। চুলে বিলি কাটতে কাটতে বলে, আচ্ছাপ বাকি টা আমি শিখিয়ে দিবো।
আবারো মুখ তুলে বড় বড় চোখ করে তাকায় তিথী।
তিথীর এই ভয় পাওয়া মুখ দেখে কাব্য বলে এভাবে তাকিয়ো না, অসুস্থ অবস্থায় ও যে নিজেকে কন্ট্রোল করতে কষ্ট হচ্ছে।
।
।
।
।
চলবে….
(আর একটা পর্বের মাঝে শেষ চান নাকি কাহিনী বাড়াবো)
।
চলবে…
( আগামী পর্বে মিল করিয়ে দিবো, আর শেষ ও করার চেষ্টা করবো তারাতাড়ি)