হিয়ার মাঝে পর্ব -০৭

#হিয়ার_মাঝে
#পর্বঃ৭
#আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি

১৩,
পরেরদিন সকালবেলায়,
সবে সকালের নাস্তা শেষ করে ছাঁদে জমা হয়েছে রাদ,রায়া,ইহসাস,হিয়া,আফরা,আফরার বড় ভাই আরাফাত,হিয়ার ছোটো মামার ছেলে রায়হান। নাতাশা তার মামাতো বোনদের স্বামীদের বাড়ি ছে’ড়ে রাখতে গেছে। উনারা দেরি করতে চাননি বিধায় সকালের খাবার খেয়েই চলে যেতে চান। রায়ার মা জিদ করেও উনাদের রাখতে পারেননি। রাদদের আনা নিজস্ব গাড়িতেই তাদের বাড়িতে রাখতে বেরিয়েছে নাতাশা। তার নিজেরও কিছু দরকার আছে বলে গেলো সবাইকে। সে আবার আসবে রায়াদের নিতে। হিয়ার দুই মামা, তাদের দুজনেরই এক ছেলে এক মেয়ে করে সন্তান রয়েছে। আরাফাত, আফরা তার বড় মামার ছেলেমেয়ে, রায়হান আর রিমা তার ছোটো মামার ছেলে মেয়ে। রিমা রায়হানের বড়, তার বিয়ে হয়ে গিয়েছে, বিয়ের সময় দুদিন এসে সে থেকে চলে গেছে। সেজন্য আপাতত সে এখানে উপস্থিত নেই। আপাতত সবাই ইহসাসের দিকে বিরক্তিকর চাহনীতে তাকিয়ে আছে। হিয়া তো ইতিমধ্যে ইহসাসের উপর চরম ক্ষুব্ধ হয়ে আছে। এমনি সে নিজের টেনশনে পারছেনা কান্না করতে, সেখানে এই লোক সবাইকে ছাদে ডেকে নিজে মুর্তির মতো ছাদের রেলিং ঘেষে দাড়িয়ে নখ কা’মড়ে যাচ্ছে। এই বা’জে অভ্যাস তো হিয়ার, যখন হিয়া অতিরিক্ত টেনশনে পরে তখন সে নখ কা’মড়ায়। তাহলে কি ইহসাস কিছু নিয়ে টেনশনে আছে। কিন্তু এই লোকের কি টেনশন থাকতে পারে! দেখে তো মনে হয় সারাক্ষণ গায়ে হাওয়া লাগিয়ে টইটই করে। হিয়া এবার কোমড়ে হাত দিয়ে দাড়িয়ে গম্ভীর দৃষ্টিতে ইহসাসকে দেখছে। রায়া এতোক্ষণ একবার ইহসাসকে তো একবার হিয়াকে দেখছিলো। তার বোনের উপর তার এককাঠিও ভরসা নেই, কে জানে সে গতকাল রাতে ইহসাসকে কোন বি’পদে ফেলেছে! যার জন্য ইহসাস এখন সবাইকে এখানে দাড় করিয়ে রেখেছে। হিয়াকে কোমড়ে হাত দিয়ে দাড়াতে দেখে রায়া সব নিরবতা ভে’ঙে বলে,

” হিয়া! তুই এমন শা”কচু’ন্নির মতো কোমড়ে হাত দিয়ে দাড়ালি কেনো?”

রায়ার এমন কথায় হকচকিয়ে যায় হিয়া, তার বোন তাকে শা’কচু’ন্নি বললো! হিয়া এমন ভাবে রায়ার দিকে তাকালো, যেনো তাতে বোঝালো, ‘লাইক সিরিয়াসলি! সে শা’কচু’ন্নির মতো দাড়িয়েছে?’ হিয়া বোনের উদ্দেশ্যে বলে,

” সিরিয়াসলি আপু? তুই কি শা’কচু’ন্নি দেখেছিস? যে তারা এভাবে দাড়ায়? ”

” তোরে কোনদিক দিয়াও তো ভালো মানুষ মনে হয় না। ”

গা ছাড়া ভাবে কথাটা বলে আরাফাত। সে যে সবসময়ই হিয়াকে রা’গাতে পিছে লেগে থাকে, ভালো মতোই জানে হিয়া। সে কিছু বলতে আরাফাতের সামনে গিয়া আঙুল উচিয়ে মুখ খুলতেই, আফরা তাদের মাঝখানে দাড়িয়ে দুহাত উচু করে বলে,

” স্টপ, স্টপ,স্টপ ইট গাইস। তোমরা দয়া করে মুখ খুলিও না৷ খুললেই যে কানের পোকা সব ম’রে যাবে এটা জানি। আর আমাদের নিজেদের কানের প্রতি যথেষ্ট মায়া আছে। তাই এখানে ফুলস্টপ দিয়ে দাও। ”

আফরা কথাটা বলতেই হিয়া আফরাকে দাত কি’ড়মি’ড়িয়ে রাগী চোখে দেখে যেভাবে এসেছিলো, সেভাবেই গিয়ে সরে দাড়ালো। রায়হান তা দেখে এমন ভাব করলো, যেনো বড় একটা বি’পদ হতে গিয়েও হলো না। সে রসিকতার স্বরে বলে,

” বাঁচালি রে আপু৷ নয়তো এখনই কান যেতো এদের ঝ’গড়ার শব্দে। গাছে বসে থাকা কাকও পালাতো। ”

” তুই আমার বড় না ছোটো রায়হান? ”

হিয়া চোখ দুটো ছোটো ছোটো করে প্রশ্ন টা করে। রায়হান উত্তর দেয়,

” অবশ্যই আমি তোর ছোটো হিয়া আপুউউ। মাত্র একমাসের ছোটো আমি তোর। ”

” একমাস বা এক সেকেন্ড হোক, হলেও আমি তোর বড়। তাই গিভ মি সাম সম্মান ওকে। এমনে অসম্মান করে কথা বললে, তোরে বি’চুটি পাতা ঘষে দিবো। ”

” তুই বি’চুটিপাতা চিনিস হিয়া?”

আরাফাত এবার মুখ খুললো। হিয়া চিন্তিত স্বরে বললো,

” সত্যিই তো বি’চুটি পাতা দেখতে কেমন? আমি তো শুধু তোদের সবার মুখে নাম শুনেছি আর এর কাজ জানি। কিন্তু দেখিনি ।”

হিয়ার উত্তরে এবার রাদ সহ হেসে ফেলে। রায়ার সব কিছু অতিমাত্রায় অ’সহ্য লাগছে। যার ফলে সে যথেষ্ট ধৈর্য নিয়েই এখানে দাড়িয়ে রয়েছে। নয়তো তার রা’গের ফলে সবার আনন্দ টাই নষ্ট হবে।

১৪,
রায়ার আম্মু তার দুইমামার বড়, তার খালা নেই। সব ভাইবোনদের বড় রায়া, এরপর আরাফাত,অন্তর, রিমা, হিয়া, আফরা, রায়হান। রায়া আর আরাফাত সেম ক্লাস,দুজন দুদেশে মাস্টার্স করতেছে, অন্তর আর রিমা দুজনেই অনার্স ৩য় বর্ষে। রিমা বিয়ের পরও পড়াশোনা কন্টিনিউ করছে, রিমা ছোটো হয়েও রায়ার আগেই বিয়ে হয়ে গেছে। দেশে থাকলে হয়তো রায়া এতোদিনে বাচ্চার মা হয়ে যেতো। আফরা, হিয়া আর রায়হান একই বয়সী প্রায়। এরা একজন আরেকজনের দুইমাস আর একমাসের ছোটো। আফরা হিয়ার দুমাসের বড়, আর হিয়া রায়হানের একমাসের বড়। আফরা আর রায়হান একই ভার্সিটিতে অনার্স ১ম বর্ষে, আর হিয়া তো কানাডায় সেইম ক্লাসেই পড়াশোনা করতেছে। আপাতত সামার ভ্যাকেশন পরায় তাদের দেশে আসা। আর এসেই একদম সব উলোটপালট। একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে রায়া। হিয়া,আরাফাত,রায়হান আর আফরা নিজেদের মাঝে ঝ’গড়া করেই চলেছে। কাজিন রা সব একসাথে থাকলে যা হয় আর কি। রাদ বুকে হাত বেধে বউয়ের পাশে দাড়িয়ে আছে। সে রায়াকে বিরক্তি আর গরমে হাসফাস করতে দেখে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে উঠে,

” আপনার কি সমস্যা হচ্ছে এখানে? হলে আপনি ঘরে চলুন হয়!”

” থাক আপনার আমার প্রতি এতো কেয়ারিং দেখাতে হবে না। এতো দরদ থাকলে দয়া করে আপনার ভাইকে এভাবে খাম্বার মতো দাড়িয়ে থাকতে না বলে কি জন্য ডেকেছে সেই কারণ বলতে বলুন! আমার বোনে উপর আমার একটুও ভরসা নেই। আমি নিশ্চিত ও ইহসাসকে কোনো প্যাচে ফেলেছে, নয়তো ইহসাস সবাইকে এখানে ডাকতো না।”

রায়া রাদের কথার উত্তরে রাদের মতোই ফিসফিস করে একদমে কথাগুলো বলে। রাদ তা শুনে রায়ার কথামতোই ইহসাসের কাছে যায়। এরপর বলে,

” ইহসাস? কি বলবি, বলা রেখে এভাবে সবার ধৈর্যের পরিক্ষা নিচ্ছিস কেনো? ”

তাতেও ইহসাসের হুঁশ নেই, সে তার আপন কাজে নখ কা’মড়াতে আর ছাদের ফ্লোরে পায়ে বুড়ো আঙুল খুঁটতেই ব্যস্ত। সে যে কিছু মানুষকে ডেকে দাড় করিয়ে রেখেছে, সেটা যেনো ভুলে বসেছে৷ ভাইয়ের কথা তার কানে যাচ্ছে না, এমন কি চারপাশে কি হচ্ছে সেটাতেও তার হুশ নেই। রাদ এবার একটু জোড়ে ইহসাসের কাধে হাত দিয়ে ঝাকিয়ে ডেকে উঠে। তাতে ইহসাস চমকে বলে,

” হ্যাঁ ভাইয়া! কি হয়েছে, কি হয়েছে?”

” কি হয়েছে সেটা তো তুই বলবি! সবাইকে ডেকে নিজে চুপচাপ নিজের চিন্তায় মগ্ন হয়ে বসে আছিস। ”

রাদের কথায় এবার সবার ধ্যানজ্ঞান হকচকিয়ে দাড়িয়ে থাকা ইহসাসের দিকে যায়। ইহসাস এবার হিয়ার দিকে দৃষ্টি ফেলে ভাইকে বলে,

” আমার নতুন বেয়াইন, মানে তোমার শ্যালিকা আমার কাছে একটা আবদার করেছে। কিন্তু আমার একার সাধ্য নেই তা পূরণ করার৷ এজন্য তোমাদের ডেকেছি৷ কিন্তু কথাটা কিভাবে বলবো! চিন্তা করে কূল পাচ্ছিলাম না৷ ”

ইহসাসের কথা শেষ হতেই রায়া এবার দুকদম এগিয়ে রাদের সাথে দাড়ায়। এরপর বলে,

” কাল তোমাদের একসাথে ছাদে থাকার ঘটনা জেনেই বুঝেছি হিয়া কিছু একটা খিচুড়ি পাকিয়েছে৷ এবার বুঝলাম। কিন্তু আবদার টা কি শুনি? ”

” ভাবী আপনার বোন বাংলাদেশে ঘোরার মতো জায়গা গুলোয় ঘুরাতে হবে। সাথে সবাইকে থাকতে হবে। তাই সবাইকেই ডাকা।”

ইহসাসের কথা শুনে সবার চক্ষু চড়কগাছ। আরাফাত লাফিয়ে বলে উঠে,

“অসম্ভব, সামনে আমার পরিক্ষা। এমনিই এই রায়ার বিয়ের চক্করে পড়াশোনা ব’রবাদ। এরমাঝে আবার ঘোরাঘুরি। বাবা জু’তা মা”রবে সোজা। ”

” ভাইয়ার সাথে আমরাও একমত৷”

আফরা আর রায়হান আরাফাতের কথা শেষে ইহসাসের দিকে তাকিয়ে বলে। ইহসাস অসহায় চাহনীতে সবাইকে রিকুয়েষ্ট করে। সবাই ইহসাসের মতোই মাথা এদিক ওদিক ঝাঁকিয়ে ফের না বুঝায়। রায়া তো হিয়ার দিকে গ’রম চক্ষুতে তাকিয়ে আছে৷ হিয়া চো”রের মতো ছাদ থেকে যাওয়ার জন্য সুযোগ খুজছে। কারণ এখন রায়া ধু’পধাপ তাকে মে”রে বসতেও পারে। বড় বোনের মনে শোকের তা’প আর সে ঘুরতে যেতে আবদার করেছে। পুরাই আ”গুনে ঘি ঢালার মতো। রাদ তো পুরোই অবাক। হিয়া চঞ্চল এটা জানে, কিন্তু এতোটা যে হবে কল্পনা করেনি, যে পুরোই দুদিনের পরিচয়ে ইহসাসকে এমন কথা বলে বসবে। আর ইহসাসকেও চিনে সে, বিনাকারণে তো হিয়ার কথায় সম্মতি দিবে না। কিছু তো ঘা’পলা আছে। কিন্তু কি সেটা! এরা আবার একে অপরের প্রেমে পরে যায় নি তো? হিয়া যথেষ্ট সুন্দর আর স্মার্ট মেয়ে, পছন্দ না হওয়ার কারণ নেই। বরং অপছন্দ হলেই কারণ বলতে হবে কেনো হলো না! হিয়া আর ইহসাস কি তাহলেই একে-অপরের প্রেমে পরেছে! নাকি সে একটু বেশিই ভাবছে। চোখ ঘুলিয়ে উঠে রাদের৷ না এটা সম্ভব না! হিয়া আর ইহসাস একসাথে! চোখের সামনে ভাবলেই তো এদের দুদিনের একজনের পিছে অন্যজনের রা’গানোর প্রতিযোগীতা ৩য় বি”শ্বযুদ্ধের জানান দেয়। মানে গৃহযুদ্ধ আর কি৷ রাদ এবার ইহসাসকে ঝাঁকিয়ে প্রশ্ন করে,

” তুই ঠিক বলছিস তো?”

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here