#হিয়ার_মাঝে
#পর্বঃ১৯
#আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি
৪১,
বাসে বসে আছে রাদ আর রায়া। তাদের পিছনে এক সাড়ি হয়ে বসেছে, নাতাশা,হিয়া,তাইবা,ইহসাস। উদ্দেশ্য চট্টগ্রাম। প্রথমে রাদের বাবা ভেবেছিলো, রাজশাহী থেকে সোজা ঢাকা গিয়ে ফ্লাইটে চট্টগ্রাম চলে যাবে৷ কিন্তু পরে মিসেস কল্পনার পরামর্শে ইহসাস আর তাইবাকে সময় কাটানোর রাস্তা হিসেবে দুজনকেও ঘুরতে পাঠিয়ে দিতে চায় রাদদের সাথে। ইহসাস প্রথমে তাইবার কথা শুনে যেতে আপত্তি করলেও পরে হিয়াকে দেখতে তো পাবে!এই আশায় সে রাজী হয়। সারাদিনের সব ব্যস্ততা, গোছগাছ সেড়ে কিছুক্ষণ আগে তারা রওনা দেয়। সময়টা সন্ধ্যা সাতটা। দূরত্ব প্রায় ১৩ঘন্টার। সকালে গিয়ে পৌছাবে তারা চট্টগ্রামে। একসাথে অনেকগুলো জায়গা ঘোরার কথা থাকলেও হিয়ার মন্তব্য একসাথেই সব ঘুরে শেষ করে ফেললে পরে আর কি ঘুরবে! সেজন্য আপাতত চট্টগ্রামে যা যা ঘোরার মতো জায়গা আছে, ঘুরে যাবে। রায়া বাসের জানালার ধারে সীট টায় বসেছে। জানালায় দুহাত ভাজ করে রেখে মাথা দিয়ে সে সন্ধ্যার প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখতে ব্যস্ত সে। তার পাশে রাদ বসে কানে এয়ারফোন ঢুকিয়ে গান শুনছে। পিছনে হিয়া আর নাতাশা। দুজনে ঘুরতে গিয়ে কি করবে না করবে এসব নিয়ে আলোচনা করছে। তাদের পিছনে ইহসাস আর তাইবা। ইহসাসও নিজের মনে ইয়ারফোন কানে গুজে গান শুনছে আর নেট স্ক্রল করছে। তাইবা একাই মনমরা হয়ে সীটে গা এলিয়ে বসে আছে। ইহসাসের সাথে সে কথা বলার চেষ্টা করেছে, কিন্তু ইহসাস এড়িয়ে গেছে। নাতাশাও একই রকম আচরণ করে। তাইবা বুঝে না এই দুই ভাই বোনের তাকে নিয়ে সমস্যা কি! রাদ তবুও যাই হোক একটু ভালো ভাবে কথা বলে তার সাথে। তাইবা চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করে। ইহসাস এই সুযোগেরই অপেক্ষায় ছিলো। সে নিজের সীট ছেড়ে উঠে দাড়ায়। সামনে বসা বোন নাতাশার মাথায় টোকা দেয়। নাতাশা বিরক্ত হয়ে পিছন দিকে তাকায়। তাকাতেই দেখে ইহসাস দাঁত কেলিয়ে তাকিয়ে আছে। হিয়া নাতাশার দৃষ্টি অনুসরণ করে ইহসাসের দিকে তাকায়। ইহসাস তৎক্ষনাৎ নিজের মুখ বন্ধ করে। সে অন্তত তার বাঁকা দাত দেখাতে চায় না হিয়াকে। হিয়া ইহসাসকে দেখে চুপ হয়ে সীটে মাথা এলিয়ে দেয়। নাতাশা রা’গী স্বরে জিগাসা করে,
“তোর সমস্যা কি ভাইয়া? এরকম টোকাটুকি শুরু করেছিস কেনো?”
ইহসাস মুখ কাচুমাচু করে বাচ্চাদের মতো তাকায়। ছোটো বাচ্চার মতো ঠোট উল্টে বলে,
“তুই আমার বোন৷ শুধু সমস্যা হলেই বোনকে ডাকা যায় বুঝি? এছাড়া ঢাকা যায় না?”
“সেজন্য মাথায় টোকা দিতে হবে! এমনিতে ডাকা যায় না?”
“তুই একটু উঠে দাড়াবি?”
নাতাশা অবাক হয় ভাইয়ের কথায়। সে বললো কি! আর ইহসাস উত্তর দিলো কি! নাতাশা বলে,
“কেনো?”
“আরে দাড়া না বইন?”
“আচ্ছা দাড়ালাম না।”
“দাড়াতে বলছি তোরে?”
“দাড়াতে বলিস, মানাও করিস। মাথাটা গেছে?”
ইহসাস এবার একটু তেতেছে। নাতাশা তা দেখে মুচকি মুচকি হাসছে মুখে হাত দিয়ে। হিয়া পাশে বসে ওদের ভাইবোনের কান্ড দেখছে। মজাই লাগছে তার ভাইবোনের এমন খুনশুটি দেখে। কিন্তু হিয়া নিজের আনন্দ গুলো নিজের মাঝেই চেপে রাখে। ইহসাস নাতাশাকে বলে,
“কথা আছে তোর সঙ্গে। উঠে দাড়া।”
“বসেই তো বলা যায় ভাইয়া। বল তুই আমি শুনছি।”
“এটা কান কথা। উঠে দাড়া।”
“আরে ভাই আপনাদের ব্যক্তিগত কথা থাকে তো বাস থেকে নেমে বলুন। অযথা অন্য যাত্রীদের ঘুমের সমস্যা কেনো করছেন এরকম তর্কাতর্কি করে?”
ইহসাস আর নাতাশার কথার মাঝে অপরপাশে আসা একজন যাত্রী সামান্য চেচিয়ে কথাটা বলে। ইহসাস উনার কথা শুনে স্যরি বলে দেয়। এরপর নাতাশাকে বলে,
“একবারে কথা শুনলেই এমন অন্য যাত্রীর বকা শুনতে হতো না।”
৪১,
নাতাশা এবার তর্ক করলো না। সে এক কথায় উঠে দাড়ালো। ইহসাস বোনের কানে কানে কিছু কথা বলতেই। নাতাশা হালকা স্বরে বলে,
“পাশে তোর উড বি বউ বসে আছে। তাকে নিয়ে জার্নি টা উপভোগ কর। একদম উল্টাপাল্টা কথা মাথায় আনবি না।”
“নাতাশা প্লিজ।”
ইহসাস খানিকটা কাতর স্বরে নাতাশাকে অনুরোধ করে তাকায়। নাতাশা দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়, বসে পরে সীটে। হিয়ার মনের মধ্যে এক প্রকার দ্বিধাদ্বন্দের ঝ’ড় চলছে। নাতাশার মুখে ইহসাসের হবু বউ শব্দটা শুনে সে একেবারে নিস্তেজ হয়ে গেছে ভেতর থেকে৷ শেষ অব্দি তার মন এমন একজনের প্রতি দুর্বল হলো, যে কিনা আগে থেকেই অন্য কারোর বাগদত্তা। হিয়া নিজেই নিজেকে ধি”ক্কার দেয় মনে মনে। এ কেমন পরিস্থিতি আসলো তার জীবনে! সে তো এমন টা চায়নি। ইহসাসের প্রতি দুর্বল বা কোনো রকম ভালো লাগার অনুভূতি সৃষ্টি হোক, সে একটুও চায়নি। কিন্তু মন তো চাওয়া পাওয়ার বারণ শুনেনা। সে নিজের নিয়মে চলে৷ কখন কি ভালো লেগে যায় বা ঘৃ”ণার সৃষ্টি হয় সেটা মনের ধারাতেই চলে। সেই ধারায় জোয়ার বইয়ে দেয় বিবেক নামক শব্দটা। এরপর শুরু হয়ে যায় মন আর বিবেকের দ্ব”ন্দ। মাঝখান থেকে হারিয়ে যায় মানসিক শান্তি নাম জিনিসটা, অনুভূতিটা। হিয়া চোখ বন্ধ করে সীটে গা এলিয়ে দেয় ভালো ভাবে৷ জানালা দিয়ে মৃদু-ম’ন্দ বাতাস আসছে। সে নিজের শরীরে ওরনা টা ভালো ভাবে জড়িয়ে নেয়৷ ঘুমানোর চেষ্টায় ব্যস্ত হয়ে পরে। মনে ইহসাসের জন্য অভিমান টা আরও গাড়ো হয় হিয়ার।
নাতাশা আনমনে ভাইয়ের বলা কথাগুলো চিন্তা করলো! ভাইয়ের কথা শুনবে! নাকি শুনবেনা! সেও একপ্রকার দ্বিধায় পরে গেলো। এরপরে রাদ তো বুঝতে পারবেই! শেষে কোন ঝা”মেলা আবার সৃষ্টি হয়! ভেবেই চিন্তা ভাবনা সব ঝেড়ে ফে”লে দিলো।
রায়া সীটে গা এলিয়ে ঘুমিয়ে পরেছে। রাদ তাকে নিষ্পলক চাহনীতে দেখেই চলেছে। আশপাশের ধ্যান তার মাঝে নেই। মনে হচ্ছে সময়টা তার আর রায়ার মাঝেই আবদ্ধ হয়ে গিয়েছে। অপ্রতিভ একটা শান্তি বিরাজ করছে তার মনের মাঝে৷ কিন্তু যখনই তার মনে এলো, রায়া এই বিয়েতে সম্মত ছিলো না। সে ভেতর থেকে একটু মিইয়ে যায়। তার উচিত ছিলো, বিয়ের আগে একবার রায়াকে জিগাসা করে নেওয়া বা কথা বলা। কিন্তু সে কি করবে! বাবা হঠাৎই বললো বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে, ক’দিন পরই বিয়ে৷ আত্মীয় স্বজন দাওয়াত করা থেকে শুরু করে ডেকোরেশন, আয়োজন সব রাদকেই সামলাতে হয়েছে। ভাইকে ব্যবসার দায়িত্ব টা দিয়ে সে এসবে বুদ হয়েছিলো। যার বিয়ে সে-ই এসবে ব্যস্ত ছিলো রায়াকে আর জিগ্যেস করে কখন! ভেবেছিলো, বিয়ে যেহেতু হচ্ছে, মেয়ের অমতে তো আর হচ্ছেনা৷ বিষয়টা সে বড়োদের উপরউ ন্যস্ত করে দিয়েছিলো। বাবা, চাচা দুজনই মধ্যবয়স্ক মানুষ, উনারা এতোদিক ছুটতে পারেননি। যতোটা সম্ভব করেছেন, বাকিটা রাদকেই দেখতে হয়েছে। কাজের এতো প্রেশার আর ব্যবসা ক্ষেত্রে নতুন একটা ডিল আসায় তার নিজের বড়ো ভাই-ই যেখানে বিয়েতে উপস্থিত থাকতে পারেনি! সেখানে বিয়ের সব আয়োজন করা! যেনো মরীচিকা। কিন্তু সব শেষে হলেও একবার রায়াকে অন্তত জিগ্যেস করা উচিত ছিলো তার৷ এতে অন্তত মেয়েটাকে এতো কাঁদতে হতো না। বাবার কাছে রায়ার ছবি দেখেই পছন্দ হয়েছে যে ভীষণ, বাবা মতামত জানতে আসলে তাকেই প্রশ্ন করেছিলো মেয়ের মত আছে কিনা! তার বাবা হ্যাঁ বলেছিলো। সেজন্য তো সে গভীর ভাবে বিষয়টা খতিয়ে দেখেনি। যার ফলে আজ এই অবস্থা। নিজের মনের মাঝে আফসোসে পু’ড়ে ছাই হচ্ছে রাদ। অনুশোচনার গ্লানি হঠাৎ তার মস্তিষ্ক মন গ্রাস করে নিলো৷ রায়ার দিকে তাকিয়ে থাকা অবস্থাতেই অস্থিরতায় সব শান্তি উধাও হয়ে গেলো যেনো। মনের মধ্যে দম আ”টকা অনুভূতিরা জাগ্রত হয়ে প্রবল ভাবে তাকে ঘিরে ফেললো৷ রাদ বার কয়েক জোড়ে বড়ো করে নিশ্বাস নেয়। তার ভালোবাসা অন্য কাউকে ভালোবাসে, বুঝতে পেরেই যেনো বুকের ভেতরটা পেয়েও না পাওয়ার ব্য’থায় হাসফাস করে উঠে। পুরোটা না হলেও একটু অনুভব করে রায়ার মনের অবস্থা। ঠিক করে নেয় রায়াকে সে জোড় করবেনা কিছুতেই। রায়া সম্পর্ক টাকে সুযোগ দিলে সে আগলে রাখবে, নতুবা মুক্ত করে দিবে দূর আকাশে যেমন পাখিকে উড়িয়ে দেওয়া হয়, ঠিক তেমন। যদি ফিরে আসে, তবে সে যত্ন, ভালোবাসা, সম্মান দিয়েই আগলে রাখবে। ঠিক সেভাবেই আগলে রাখবে, যতোটা যত্নে মানুষ দামী জিনিস টাকে রাখে৷ সেখানে তো রায়া তার দামী মানুষ। জীবনে ভালোবাসা শব্দটা বুঝতে শিখার পর সবটুকুই যে জমিয়ে রেখেছিলো, বউ নামক মানুষটির জন্য। সেজন্যই তো সে জমিয়ে রাখা ভালোবাসা গুলো মানুষটিকে পাওয়ার পরপরই নিজের সবটুকু উজার করেই ভালোবাসছে৷ কিন্তু আফসোস ভালোবাসা গুলো হয়তো তার মানুষটা বুঝতে পারবেনা, আবার হয়তো পারবে।
৪১
রাদ নিজের চিন্তা ভাবনা দেখে নিজেই স্মিত হাসে৷ বিরবির করে রায়াকে বলে,
“আপনি যেটা চাইবেন, সেরকমই সব করবো রায়া। জোড় করবোনা এই সম্পর্ক নিয়ে, কিন্তু আ’ঘাত দিয়েন না। আপনি যতোটা স্ট্রং, আমি ততটাই ভেতর থেকে দুর্বল।”
“আ”ঘাত দিলে আ’ঘাত ফিরে পেতে হয় মিঃ রাদ। সেখানে আমি তো এমন মানসিকতার মেয়ে যে আ”ঘাত দেয়, তাকে ভেতর থেকে গু”ড়িয়ে দেই।”
হঠাৎ করেই রায়া চোখ খুলে কথাগুলো বলায় রাদ চমকে উঠলো। সে থতমত খেয়ে বলে উঠে,
” আপনি ঘুমাননি?”
“চোখ বন্ধ করে ছিলাম।”
রায়া সীটে ভালোভাবে বসে ফের চোখ বন্ধ করে উত্তর দেয়। রাদ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আস্তে করে বলে,
“ওহহ।”
“আমার বাবা আমার সাথে যে অ”ন্যায় টা করেছে, সেজন্য মাফটুকু জীবনে পাবেন না উনি৷ সেখানে আপনি তো না জেনেশুনেই বিয়ে করে জীবনের মোড় ঘুরিয়ে ফেলেছেন আমার৷”
“আপনি কি কোনো ভুল করেননি রায়া?”
রাদ ধীরস্বরে আস্তে করেই প্রশ্নটা করে। রায়া নিজের পা দুটোকে সীটে উঠিয়ে বসে। হাতের বাধনে ব’দ্ধ করে নেয়। সে মাথা হেলিয়ে উত্তর দেয়,
“অবশ্যই করেছি। জেনেশুনে অন্য ধর্মের ছেলেকে ভালোবেসেছি। তার আগে নিজের পরিবার কেমন, এটা ভাবিনি।”
“তাহলে আর কি! তার মাশুল দিচ্ছি তাকে হারিয়ে। মাঝখান দিয়ে শুধু নির্দোষ ছেলেটা কষ্ট পাচ্ছে।”
“সে নির্দোষ কি করে হয় রায়া?”
“কি বুঝাতে চাইলেন প্রশ্নটা করে?”
“সে জানতো আপনার ধর্ম আলাদা৷ তারপরও কেনো ভালোবাসলো?”
“আপনি আমায় কেনো ভালোবাসেন?”
রাদ হকচকিয়ে যায় রায়ার এই প্রশ্নে৷ সে ঘাবরে গিয়ে উত্তর দেয়,
“ভালোবাসতে কোনো কারণ লাগেনা বলে জানি।”
“সেও আমায় ভালোবাসতে কোনো কারণ পায়নি। এই একটা সম্পর্ক সৃষ্টি হতে সম্পর্কে জড়ানো প্রতিটা মানুষের কিছু না কিছু ভুল আছে। সেই ভুল বিচার করতে বসলে আ”সামীর কাঠগড়ায় দাড়াবে আমার বাবা,এরপর আমি,এরপর লুইস, তারপর আপনি।”
“সবার শেষে আমি কেনো?”
রাদ রায়ার কথা শুনে প্রশ্ন টা করে। রায়া মৃদু হেসে উত্তর দেয়,
” আমার বাবা সব জেনেও বিয়েটা দিয়ে আপনার জীবন টা ন’ষ্ট করার পাশাপাশি আমারও করেছে,লুইসেরও৷ তিনটা জীবন ন”ষ্টের গড়ায় আমার বাবা। উনি তো প্রধান ভুল কারী হবেনই। এরপর রইলাম আমি, লুইসকে ভালোবেসেছি। আর বিয়ে করলাম আপনাকে, আমার জন্য দুটো মানুষের ভালোবাসা ন’ষ্ট। ভালোবাসা টা ভুল নয়, ভুল মানুষকে ভালোবাসা ভুল। তৃতীয়ত লুইস, তাকে আমি সম্পর্কের শুরুতে সব বলেছিলাম, গতকালই আপনাকে সেটা জানিয়েছি। সে আশ্বাস দিয়ে সম্পর্কের সূচনা করেছিলো।সব সামলে নিলেও শেষে এসে ভেস্তে গেলো সব বাবা আর আপনার জন্য। সেজন্য সব শেষে আপনিই দায়ী৷ বিয়ের আগে অন্তত খোজ নিতে পারতেন!”
রায়া একদমে কথাগুলো বলে থামলো। রাদ মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শুনলো। এরপর ফের প্রশ্ন করলো,
” সব বুঝলাম কিন্তু দুটো মানুষের ভালোবাসা নষ্ট বলতে?”
“প্রথমত, একজন জান প্রাণ দিয়েও ভালোবেসে পেলো না, দ্বিতীয়ত আপনি, আমায় ভালোবেসে যাচ্ছেন, আমি সেটা গ্রহণ করতে পারছিনা। একদিন হয়তো মানিয়ে নিবো। কিন্তু মনের যে স্থানে লুইস আছে। সে স্থানে আপনাকে বসাতে পারবোনা৷ আপনি পৌছে গেলেও দেয়াল হয়ে দাড়িয়ে থাকবে সেই ঘোলা চোখের অধিকারী লুইস বয়েলভিন। যাকে আমি আজও জোড় গলায় আপনার সামনে বলতে পারি ভালোবাসি৷”
রায়ার উত্তরে রাদের ভেতরটা উলোটপালোট হতে লাগলো। এ কেমন য’ন্ত্রণা ইশ! ভালোবাসা বুঝি এমনই হয়! হিয়া পেছনের সীটে বসে থাকা অবস্থায় বোন আর দুলাভাইয়ের আস্তে ধীরে বলা কথাগুলো সবই শুনতে পায়। নাতাশার দিকে তাকায়। নাতাশা ঘুমে বুদ৷ পেছনে একবার উকি দেয়, ইহসাস আর তাইবাও সেই একই, ঘুমে ডুবে আছে। পুরো বাসের যাত্রী ঘুমিয়ে আছে। ঘুম নেই শুধু তাদের তিনজনের চোখে আর ড্রাইভার কন্টাক্টরের চোখে৷ হিয়া সব কথার শেষে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। মায়ের মুখে শুনেছিলো, ‘জীবনের নাটকের থেকেও নাটকীয়।’ কথাটা বুঝিয়ে সত্যিই। হিয়া জানালায় দিয়ে দূর আকাশে দৃষ্টি ফেলে৷ জীবনের কোন অধ্যায় এসে উপস্থিত হলো! যে অধ্যায় মানসিক শান্তি হারায়, সেই অধ্যায়ে বুঝি! হিয়ার মনের মধ্যে তো’লপা’র বয়ে চলছে। কিন্তু কি কারণে সেটা বুঝতে পারছেনা, ইহসাসের জন্য! নাকি বোন আর দুলাভাইয়ের জন্য! হিয়া চোখ বন্ধ করে নেয়। অজান্তেই কয়েকটা অশ্রু গড়িয়ে পরে চোখ দিয়ে। সে এসবে অভ্যস্ত নয় যে! জীবন তাকে কোন মোড়ে এনে দাড় করালো!
চ#হিয়ার_মাঝে
#পর্বঃ২০
#আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি
৪৩,
চট্টগ্রামের বাসস্ট্যান্ডে এসে নামলো রাদ, রায়া, ইহসাস, তাইবা, হিয়া আর নাতাশা৷ সকাল আটটা বাজে এখন। আবহাওয়া মোটামুটি এখন ঠান্ডা ঠান্ডা। শরৎ পেরিয়ে শেষের দিকে। সকাল সকাল শীতের আগমনী বার্তা হিসেবে হালকা শিশির পরে মাটি ভিজা ভিজা। বাস থেকে নামার পর রাদ ফোন ঘাটছিলো। এখান থেকে সোজা পতেঙ্গা সী বীচে যাবে তারা। একঘন্টার মতো লাগবে, রাদের বাবা পতেঙ্গা সী বীচের কাছাকাছি বাটারফ্লাই রিসোর্টের রুম বুক করে রেখেছেন। কিন্তু যাওয়ার জন্য কীসে যাওয়া যায় এটাই মোটামুটি চিন্তার বিষয়। রায়া, হিয়া নাতাশা ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে চোখেমুখে পানি ছিটা দিচ্ছে। তাইবা দাড়িয়ে ফোনে কিছু একটা করছে। ইহসাস মূর্তির মতো দাড়িয়ে তাদের দেখছে। সে রাদের পাশে দাড়িয়ে জিগাসা করে,
“ভাইয়া! কি করবি? প্রথমে কোথায় যাবি? ভাবলি কিছু?”
“বাবা হঠাৎ করেই সব ঠিক করে ফেলেছে। কি যে করবো! কোথা থেকে শুরু করবো বুঝতে পারছিনা৷”
“তো সেটা ডিসাইড করা বাদ দিয়ে তুই ফোন ঘাটছিস?”
“দেখলাম কিছু ইনফরমেশন। কি করবো ভাবছি।”
“তুই ভাবতেই থাক।”
“তুই তো এসব আগে ঘুরে গেছিস ইহসাস। আইডিয়া দে কিছু।”
“আমি ঘুরে গেছি, চট্টগ্রাম না কক্সবাজার। আমি চট্টগ্রামে থাকিনি, তাই আই হ্যাভ নো আইডিয়া৷ তুই আমায় আনবিনা জেনেই তো কিছু প্ল্যান করিনি।”
“আমিও কিছুই ভাবিনি।”
“আপনাদের কিছু ভাবতে হবে না। যা ভাবার আমি আর নাতাশা আপু ভেবে নিয়েছি।”
টিস্যু দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে রাদ আর ইহসাসের উদ্দ্যেশ্যে কথা গুলো বললো হিয়া। রায়া এগিয়ে এসে বললো,
“কি ভেবেছিস?”
উত্তরে নাতাশা বললো,
“প্রথমে আমরা এখান থেকে চট্টগ্রামের বিখ্যাত হোটেল জামান এ যাবো। সকালের খাবার খাবো। এরপর ওখান থেকে সিএনজি বা লোকাল বাস যেগুলো পতেঙ্গা সী-বীচের উদ্দেশ্যে যায়, তাতে উঠে পরবো। এরপর সী-বীচে সূর্যাস্ত দেখবো, ভোরে সূর্যদয় দেখবো। স্ট্রিট ফুড খাবো, কেনাকাটা করবো কিছু ঐতিহ্যবাহী জিনিসপত্র। এরপর ওখান থেকে আনোয়ারা পারকি চরে যাবো,ঘুরবো। ওখানে ঘোরা শেষে আগ্রাবাদে আসবো। একরাত থেকে পরদিন আগ্রাবাদ শিশুপার্ক, চট্টগ্রামের জাম্বুরী পার্ক দেখে রাতে রাঙ্গামাটির জন্য রওনা দিবো। রাঙামাটি ঝুলন্ত ব্রিজ দেখে আমরা বাড়ি ফিরবো।”
“বাহ দারুণ প্ল্যান।”
তাইবা এগিয়ে এসে বললো। রাদ নাতাশার কথার উত্তরে বললো,
“জামান হোটেলের তো অনেক শাখা আছে। কোনটায় যাবি?ভেবেছিস?”
“চকবাজার যেটা, ওখানে চলো৷”
নাতায়া উত্তর দেয়। ইহসাস নাতাশার চুল টেনে বলে,
“আমার পে’ত্নী বোনের মাথায় তো দারুণ বুদ্ধি।”
“তুই রা”ক্ষস, উ”জবুক একটা। পাবনা থেকে পালানো পাগল৷”
নাতাশার কথা শুনে হিয়া হালকা হেসে উঠে। ইহসাস মুখ ভেঙচিয়ে হিয়াকে বলে,
“বেয়াইন সাহেব, শুনেছি আপনার একটা বড়ো ভাই আছে। তাকেও বুঝি আপনি এসব বলেন? যার ফলে আমায় বলায় আপনি আনন্দ পাচ্ছেন?”
“আমাদের ভাইবোনের সম্পর্কের ধারা আলাদা। এরকম নয়।”
“তাহলে কি রকম?”
রাদ প্রশ্ন করে। রায়া এবার উত্তর দেয়,
“আমাদের তিন ভাইবোনের সম্পর্ক কিছুটা অগোছালো, যত্নে আগলানো। কখনও একসাথে বসে খাওয়া, কখনও একসাথে ঘুরতে যাওয়া। কখনও আছি জেনেও নিজের মতো একাকিত্ব উপভোগ করা, কখনও বা তিনজনে বসে তুমুল আড্ডা দেওয়া। আমরা ভিন্ন রকম, কেউ কারোর মতো নই। ভাইবোনের খুনশুটি কি আমরা জানিনা। আমরা কখনও মুখ ফুটে একে অন্যকে ভালোবাসি বলিনা। কিন্তু আমরা জানি আমরা এক, আমরা একশক্তি, একে অপরের দুর্বলতা, একে অপরের ভালোবাসা। আমরা মানেই ভিন্ন কিছু, যে সম্পর্কের অস্তিত্ব আছে, যত্ন আছে। শুধু গুছিয়ে রাখার তাড়া নেই। আমরা জানি, আমরা আছি, কিন্তু আমরা নই একে-অপরের কাছাকাছি। আমরা কেউ অসুস্থ হলে গিয়ে মাথায় হাত রেখে দেখিনা তাপমাত্রা কতো। আমরা দেখি সে সুস্থ কিভাবে হবে! আমাদের সম্পর্কটাই আলাদা। রায়া, অন্তর এবং হিয়া মানেই ভিন্ন কিছু, ছন্নছাড়া, বাধনহারা।”
৪৪,
রাদ মুগ্ধ হয়ে রায়ার কথা শুনছিলো। হিয়া এগিয়ে এসে পেছন থেকে বোনের কাধে মাথা রেখে একহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে। নাতাশা রায়ার কথার উত্তরে বলে,
” বাহ ভাবী! তুমি তো দারুণ ভাবে কথা বলতে পারো।”
তাইবা বললো,
“সত্যিই ভীষণ সুন্দর লাগলো শুনতে।”
তাদের কথার পর ইহসাস বললো,
“তা না হয় বুঝলাম। কিন্তু এখন কি খাবার দাবারের জন্য হোটেলে যাবে? নাকি এখানে দাড়িয়েই দিন শেষ করে ফেলবে? হোটেলে যাওয়ার জন্য গাড়ি তো ঠিক করতে হবে!”
রাদ বললো,
“হ্যাঁ সেটাও ঠিক৷ কীসে যাওয়া যায়! চকবাজার কতদূর! সেটা তো জানিনা।”
“স্থানীয় লোকজন আছে কি করতে! চলো জিগাসা করি?”
“আচ্ছা কর।”
রাদ উত্তর দেয়। ইহসাস ২-৩জনকে জিগাসা করে এসে বললো,
“মিনিবাস, বড়ো বাস দুটোতে করেই যাওয়া যাবে। সিএনজিও যাবে। কিন্তু বাস আসতে লেট করবে। কি করবো? সিএনজিতে তো পাচজনের সীট, আমরা আছি ছ’জন।”
“এতো চিন্তা ভাবনার কি আছে। সিএনজি নাও। এমনিতেও আমি আর হিয়া চিকন মানুষ। আমাদের এটে যাবে।”
রায়া ইহসাসের কথার উত্তর দেয়। রাদ দুজনকে দেখে ভ্রুতে স্লাইড করতে করতে বলে,
“সে তো ঠিক আছে। কিন্তু তোমরা আদৌও চিকন!”
“মানে কি বলতে চান? আমরা মোটু?”
“তা কখন বললাম। কিন্তু তোমাদের স্বাস্থ্যকে চিকন নয়, মিডিয়াম স্বাস্থ্য বলে। তুমি যদি চিকন হও, তাহলে আমার বোন নাতাশা বাতাসে উড়ে।”
রায়া ঠোট বাকিয়ে অন্য দিকে তাকায়। নাতাশা গাল ফুলিয়ে রাদকে বলে,
“ভাইয়া! আমি যথেষ্ট ভালো স্বাস্থ্যের অধিকারী।”
ইহসাস শব্দ করে হাসে। হাসতে হাসতেই বলে,
“হ্যাঁ তুই বাতাসে উড়িস। সেটা ভাইয়াও বললো।”
“আপনারা কি এখানেই গবেষণা করবেন? যাবেন না? সাড়ে আটটা বেজে গেছে অলরেডি। ক্ষুধা লাগছে।”
তাইবা কথার মাঝে ফোড়ন কে’টে বলে। হিয়াও তাল মেলায় তার কথার সাথে। ইহসাস তখন আনমনে নিজেই নিজেকে বলে,
“বাহ দুই সতিনের কি মিল। একজনের কথার সাথে অন্যজনের মত মিলে। ভালোই হবে! ত্রিকোণ প্রেমের গল্প রচনা করবো। তাইবা ভালোবাসে আমাকে, আমি ভালোবাসি হিয়াকে। হিয়া কাকে বাসে জানিনা। জানলে ফোর পিপলের গল্প রচনা করে ফেলবো। দারুণ হবে।”
“এই আপনি কি বিরবির করছেন?”
হিয়া ইহসাসকে বিরবির করতে দেখে প্রশ্নটা করে। ইহসাস বোকা বোকা চাহনীতে উত্তর দেয়,
“কই কিছু না তো।”
“তোমাদের কথা শেষ! এবার যাওয়া যাক। আমরা মানুষ নাকি এলিয়েন কে জানে! কিছু নিয়ে আলোচনা শুরু করলে ওখানেই দিনশেষ।”
নাতাশা কথাটা বলে। তখুনি রাদ বলে,
“হ্যাঁ, হ্যাঁ চলো চলো। যাওয়া যাক।”
রাদ তাড়া দেয়। সবাই নিজেদের ব্যাকপ্যাক কাঁধে নিয়ে বাসস্ট্যান্ডের আশেপাশে সিএনজি খুজতে ধরে। তখনই তাদের সামনে একটি প্রাইভেট কার এসে দাড়ায়। রাদ আর ইহসাস একে অপরের মুখের দিকে তাকায়। গাড়িটা চেনা চেনা লাগছে কিন্তু এই গাড়ি এখানে! এই মুহুর্তে কি করে সম্ভব! নাতাশা গাড়ি দেখে বলে,
“বড়ো ভাইয়ার গাড়ি! এখানে কি করে? গাড়ি থেকে তো কেউ বেরও হয়না।”
নাতাশার কথা ফুরোতেই সাথে সাথে গাড়ি থেকে ফারহাদ বেরিয়ে আসে। রাদ বড়ো ভাইকে এতোদিন পর ইমোশনাল হয়ে ওখানেই জড়িয়ে ধরে। ফারহাদও ভাইকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে৷ হিয়া, রায়া কিছু বুঝতে না পেরে থম মে’রে দাড়িয়ে আছে। নাতাশা আর ইহসাস প্রচুর আনন্দে উত্তেজিত হয়ে পরেছে। তারা দুজন দুপাশ থেকে ফারহাদ আর রাদকে একসাথে ধরে বলে,
“বাহ দুই আমে দুধে মিলে গিয়ে আমাদের দুই ভাইবোনকে আটির মতো গড়াগড়ি খাওয়াচ্ছো!”
ফারহাদ হাসে, সেই হাসিতে ভাই-বোনদের কাছে পাওয়ার আনন্দ প্রকাশ পায়। রায়া বুঝতে পারে এটা তার ভাসুর। হিয়া মুগ্ধ হয়ে ওদের ভাইবোনদের আনন্দ দেখছে। ভালোই লাগছে, অন্তরকে মিস করছে সে এই মুহূর্তে। কয়দিন হলো খোজও নেওয়া হয়না। রিসোর্টে গিয়ে ফোন করবে বলে ভেবে নেয়৷ এদিকে ফারহাদ রাদ, ইহসাস আর নাতাশাকে ছাড়িয়ে বলে,
” কি জড়িয়ে ধরেই এখানেই দিন পাত করে দিবি নাকি তোরা?”
রাদ ফারহাদের কথার উত্তরে বলে,
“না ভাইয়া! কিন্তু তোমায় অনেকদিন পর দেখলাম। কিন্তু তুমি হঠাৎ এখানে? তাও এভাবে! কিছু বুঝলাম না ভাইয়া!”
“বাবা ফোন দিয়েছিলো। সবই বললো, তোরা আসবি। আর আমারও কাজ প্রায় শেষ। আজ রাতেই বাড়ি ফিরবো। তাই ভাবলাম, তোদের ঘোরাফেরার সুবিধার জন্য গাড়ি দিয়ে যাই।”
“কিন্তু এটা ড্রাইভ কে করবে!”
“ইহসাস, তুই, নাতাশা তিনজনই ড্রাইভিং পারিস। লাইসেন্সও আছে। তাহলে সমস্যা কোথায়!”
“সমস্যা সেটা নয় ভাইয়া। কিন্তু এতোদূরের পথ, ফেরার পথেটানা তেরো ঘন্টা কে ড্রাইভ করবে! আর তুমি ফিরবে কিভাবে?
” তোরা যেভাবে এসেছিস, সেভাবে।”
“মানে বাসে?”
নাতাশা কথাটা বললো। ফারহাদ হেসে বলে,
” হ্যাঁ।”
ইহসাস এবার প্রশ্ন করে,
“কিন্তু তুমি জানলে কিভাবে আমরা এসে পৌঁছেছি!”
“বাবা ফোন দিয়ে বললো। আর কাজের জন্য এখানেই ছিলাম, সেজন্য আসলাম। এমনিতেও আসার সময় ড্রাইভ করে এসে যথেষ্ট শিক্ষা পেয়েছি। তোরা তিন ড্রাইভার আছিস। টাইম ভাগ করে নিবি। এখন কথা কম বল। তোরা চলে যা, খিদে তো একেকটা চোখমুখ শুকিয়ে ফেলছিস।”
“হ্যাঁ ভাইয়া যাচ্ছি।”
বলেই রাদ গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে রায়াকে ডাক দেয়। ফারহাদ রায়াকে দেখে বলে,
“এটা নিশ্চয় আমার আরেকটা বোন!”
রায়া ফারহাদের কথায় তাকে সালাম দেয়। ফারহাদ সালাম নিয়ে রায়ার মাথায় হাত রেখে বলে,
“সাবধানে ঘোরাঘুরি করো। নিজেদের খেয়াল রেখো।”
রায়া মাথা এদিক ওদিক করে বুঝায় খেয়াল রাখবে।এরপর ফারহাদ হিয়ার সাথেও পরিচিত হয়। তাইবার সাথে ভালোমন্দ খোজখবর নিয়ে কথা বলে। সবাই গাড়িতে উঠে বসে। রাদ আর ইহসাস সামনে বসে পরে। বসার পর গাড়ির জানালা খুলে ফারহাদকে বলে,
” তুমিও আমাদের সাথে চলো ভাইয়া। অনেক তো কাজ করলে, একটু ঘোরাঘুরি করো এবার।”
“তোরা ঘুরে আয়, এরপর তোদের ভাবীর সাথে আমি ঘুরবো। যা, আর রাস্তাঘাট তো চিনবিনা সেভাবে। জিপিএস ভালোভাবে খেয়াল করিস, আর আশেপাশে লোকজনকেও জিগাসা করে নিস৷”
রাদ আর জোড় করলোনা। ভাইকে বিদায় জানিয়ে গাড়ি স্টার্ট করলো। প্রায় পয়তাল্লিশ মিনিটের মাথায় তারা চট্টেশ্বেরী রোড,চকবাজারের জামান হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টের শাখায় পৌছে যায়। এক সময়ে চট্টগ্রামে ভালো মানে রেস্টুরেন্ট বলতে সবার আগে হোটেল জামানের কথা মাথায় আসতো। বর্তমান সময় অব্দি সেই ঐতিহ্য ধরে রেখেছে তারা। রাদ সহ বাকিরা হোটেলে ঢুকে বসে পরে। ওয়েটার এসে দাড়ায় অর্ডার নেওয়ার জন্য। মেন্যুকার দেখতে দেখতে রাদ সকলের মুখের দিকে তাকিয়ে জিগাস করে,
” কে কি কি খাবে বলো!”
হিয়া ধীর স্বরে বলে উঠে,
“নেটে দেখেছি চট্টগ্রামের মেজাবানির মাংশ খুব জনপ্রিয়। সাদা ভাত আর এটাই আপাতত খাবো।”
“আমিও এটাই খাবো। কিন্তু তার আগে চা আর পরোটা খাবো। এই হোটেলের যাত্রা এই চা আর পরোটা দিয়ে হয়েছে। খুব মজার হয়।”
নাতাশা খুশি হয়ে কথাটা বলে। ইহসাস,রায়া আর তাইবার দিকে তাকিয়ে রাদ জিগাসা করে,
“তোমরা কি খাবে?”
” খেলেই হলো, দিয়ে দাও মন মতো অর্ডার।”
চট্টগ্রামের ঐতিহ্য বাহী খাবার মেজবানির মাংশ যেটাকে চট্টগ্রামের ভাষায় বলা হয় মেজ্জান, সেই মেজ্জানও হোটেল জামানে বিশেষ আর্কষণ।তার বিশেষ বাবুর্চির মাধ্যমে এটি বানিয়ে থাকে। যেটা দেখে অন্যান্য জায়গাতেও বানানো হয়। রাদ সবার জন্য আগে এক কাপ করে চা, সাথে পরোটা, পরোটার সাথে হোটেল জামানের মিক্সড সবজি সেটা আর সাদাভাত, মেজবানির মাংশ অর্ডার করে দেয়। ওয়েটার অর্ডার নিয়ে চলে গেলে সবাই নিজেদের মাঝে গল্পগুজবে ব্যস্ত হয়ে পরে। সবার কথার মাঝেই রায়া বললো,
“একটা কথা বলতাম!”
রাদ তা শুনে জিগাসা করে,
” কি কথা?”
চলবে?