মেঘের আড়ালে চাঁদ পর্ব ৪৫

#মেঘের আড়ালে চাঁদ ❤
#writer: মহসিনা মুক্তি
#পর্বঃ পয়তাল্লিশ

অর্ধ ঘুমন্ত আর অর্ধ জাগ্রত অবস্থায় তুলতুল বুঝতে পারলো তার গায়ের ওপর অনেক ভারী কিছু আছে। প্রচন্ড ভাবে তাকে জাপ্টে ধরে আছে মনে হচ্ছে। তুলতুলের ঘুম আস্তে আস্তে কেটে যেতে লাগলো। সে নড়াচড়া করতে পারছে না। এমনকি নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। তুলতুল চোখ মেলে তাকালো। চারপাশে অন্ধকার, সে বুঝতে চেষ্টা করছে কি হয়েছে কিন্তু এতো ভারের জন্য সে কিছু ভাবতেও পারছে না। অস্থির লাগছে যেনো এখনি এই ভার তার ওপর থেকে না সরলে সে মরে যাবে। তুলতুল হাত পা নাড়ানোর চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না। চট করেই তার মনে পড়ে গেলো সে দাদীর রুম থেকে আসছিল এর মধ্যেই মাথা ঘুরে উঠে আর কিছু মনে নেই। তুলতুল মুখের ওপরে হাত দিল কাপড় টাইপের বা এমন কিছুই মনে হচ্ছিল তার ওপরে। এটা কি কাঁথা নাকি কম্বল? এত ভারি তো হওয়ার কথা না। তাহলে? তুলতুলের মনে ভয় ঢুকলো তাকে কি বস্তায় ভরে কোথাও ফেলে তার ওপর কিছু চাপা দিয়ে রেখেছে? পড়ে আবার ভাবলো সে তো দাদীর রুমে ছিল এমন কেউ করবে না। তাহলে কি তার গায়ে কম্বল আর তার ওপর কিছু চাপা দেওয়া? কোন প্রাণী নয়তো? বা ভূত? তুলতুল ভয় পেল, ভয়ে হাত পা কাঁপতে লাগলো। সে জোরে একটা চিৎকার দিল

-” ও মায়ায়ায়ায়া, ও মায়ায়ায়া আমারে বাচাও!” চিৎকার দেওয়ার সাথে সাথে ভারি কিছু তার ওপর থেকে সরে গেলো কিন্তু সে চিৎকার থামালো না। ও মায়ায়া করে চিৎকার করছে চোখ বন্ধ করে কম্বল না সরিয়ে।

রাফসান ধড়ফড় করে উঠে বসেছে। চোখ থেকে এখনো ঘুম যায় নি দেরি করে ঘুমানোর ফলে। কারো চিৎকারে সে উঠে গিয়েছে। কি হয়েছে কিছু বুঝতে না পেরে চোখ ডলে এদিক ওদিক তাকালো। এখনো ভালো করে সকাল হয়নি। আবছা অন্ধকার রয়েছে। রাফসানের মেজাজ খারাপ হলো। কেউ মা বলে চিৎকার করছে। আশেপাশে কিছু দেখা যাচ্ছে না ভালো করে, কে কোথায় এমন চিৎকার করছে রুমের ভেতর না রুমের বাইরে! রাগের চোটে সেও একটা চিৎকার দিল। তাতে সেই চিৎকারের শব্দ একটু থেমে আবার আরো জোরে চিৎকার করে উঠলো। রাফসানের এবার যা মেজাজ খারাপ হলো বলার বাইরে, সে রুমের লাইট অন করলো। বিছানার দিকে তাকাতে সে বিস্মিত হলো। আওয়াজ কম্বলের দিক থেকে আসছে। রাফসান ওভাবেই এগিয়ে গিয়ে কম্বল টান দিল কিন্তু টান দিয়ে সরিয়ে দেওয়ার পর সে বিস্ফারিত ভাবে তাকিয়ে রইলো। তুলতুল গায়ের ওপর থেকে কম্বল সরে যাওয়ায় তাকিয়ে রাফসানকে দেখে সে হাবার মতো তাকিয়ে রইলো। আর রাফসান ভাবছে এটা তার কল্পনা বা স্বপ্ন দেখছে তাই হাত দিয়ে তুলতুলের গাল স্পর্শ করলো। সে বুঝতে পারলো সে স্বপ্ন দেখছে না। তাই তুলতুলের দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বললো

-” ব্যাপার কি? তুমি এখানে কি করছো? আমি তো ভাবলাম তোমাকে দাদী বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। নাকি বরের সাথে থাকবে তা ঠিক করে ফেলেছো? আমাকে মিস করছিলে বুঝি?” রাফসান দুষ্ট হাসি দিয়ে বলে তুলতুলের পাশে বসলো। তুলতুল উঠে বসে সরে গিয়ে রাফসানের দিকে চোখ মুখ কুঁচকে তাকিয়ে বললো

-” আমার বয়েই গেছে আপনার সাথে থাকতে। হুহ্!

-” তাই নাকি? তো আপনি এভাবে গলা ফাটিয়ে ওমা ওমা করছিলেন কেন?” রাফসান ভ্রু উঁচু করে বললো।আর তুলতুল মুখ ফুলিয়ে বললো

-” মনে হচ্ছিল আমার গায়ের ওপর অনেক ভারী কিছু ছিল। আমি শ্বাস নিতে পারছিলাম না।” একথায় রাফসান বুঝলো কেন তুলতুল চিৎকার করছিল। আবার রেগে যায় যদি তাই আর বললো না যে তার ভারের জন্যই শ্বাস নিতে পারছিল না। রাফসান জিজ্ঞেস করলো

-” তাওহী কোথায়?” রাফসানের কথায় তুলতুলের তাওহীর কথা মনে পড়লো। তাওহী কোথায় সে জানে না। এখন তো সকাল হতে চললো। এতক্ষণ পযন্ত তাওহী কোথায় আছে? সে তো দাদীর রুমে ছিল তখন তার খোঁজ করে নি। তুলতুল ভীতু ভাবে রাফসানের দিকে তাকিয়ে বললো

-” আমি দাদীর রুমে ছিলাম। এরপর আসার সময় মাথা ঘুরে উঠে পরে আর কিছু মনে নেই।” রাফসান তা শুনে তুলতুলের কাছে এসে তার কপালে হাত দেয়।

-” জ্বর তো নেই। সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিলে কেন? ভয় পেয়েছিলে কিছুতে?” তুলতুল না বললো।

-” চিন্তা করো না তাওহী ঠিক আছে।” বলে সে ফোন দিল দাদীকে। কারন তার দাদী এতক্ষণে নিশ্চয়ই নামাজ পড়ে নিয়েছে। জেগেই আছে উনি তাই রাফসান ফোন দেয়। ফোন দিয়ে দাদীর কাছে সব জিজ্ঞেস করতে তিনি সব বলেন আর তাওহী তার রুমে আছে ঘুমিয়ে তা বলে। ফোন রেখে রাফসান তুলতুলের দিকে রাগী ভাবে তাকায়।

-” তাওহী দাদীর কাছে আছে। আর তুমি খাবার খাওনা কেন? সমস্যা কি? এই বয়সেই প্রেশার লো। কেন এমন হবে? হ্যাঁ, আর কিসের এতো টেনশন করো?” রাফসান ধমকে বলে। তুলতুল মুখ ফুলিয়ে বলে

-” আমি বাড়ি যাবো।”

-” চুপচাপ ফ্রেশ হয়ে এসে এখানে বস। একপাও বাইরে বের হবে না।” বলে সে রুমের বাইরে চলে গেলো। তুলতুল মন খারাপ করে ওয়াশরুমের দিকে গেলো ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় বসলো। এরমধ্যেই রাফসান হাতে প্লেট নিয়ে চলে আসলো। প্লেট টা তুলতুলের হাতে দিয়ে খাবার খেতে বললো। তুলতুলের এমন সময় একদম খেতে ইচ্ছে করছে না। তাই রাফসানকে বললো খাবে না। রাফসান ধমক দিয়ে বললো
-” এখনি শেষ করো। বেশি কথা বলবে না। না খেয়ে থাকে আর একটুতেই কাত হয়ে পড়ে।” রাফসানের ধমক শুনে তুলতুল চুপচাপ খেতে লাগলো। কান্না আসছে তার। লোকটা খালি তাকে বকে। কিন্তু সে কান্না আঁটকে খেতে লাগলো। রাফসান তুলতুলকে দেখতে লাগলো। চোখে টলটলে জল নিয়ে খাবার মুখে পুরছে। রাগ করতে চাইছিল না কিন্তু ভালোভাবে বললে সে কখনো খেত না উল্টো জেদ করতো। তাই ধমক দিয়েছে। সে নিজেই তুলতুলকে খায়িয়ে দিত যদি পারতো। কিন্তু কখনো কাউকে খায়িয়ে দেয়নি তার ধারণা খায়িয়ে দিতে গেলে একটুও মুখে যাবে না সব পড়ে যাবে তাই দেয়নি। পড়ে একসময় চেষ্টা করে দেখবে তুলতুলকে খাওয়ানোর কিন্তু আজকে নয়। তুলতুল অনেক কষ্টে অর্ধেকটা শেষ করে বললো আর খাবে না। রাফসানও আর জোর করলো না। তাকে পানি এগিয়ে দিয়ে প্লেট টেবিলে রেখে ঢেকে রাখলো। তুলতুলের পানি খাওয়া শেষ হলে সে গ্লাস রেখে তুলতুলের পাশে বসে তাকে জড়িয়ে ধরে। তুলতুলের মাথা রাফসানের বুকের সাথে লেগে আছে। তার কেন জানি কান্না করতে ইচ্ছে করছে খুব। একফোঁটা দুফোঁটা করে চোখের দিয়ে পানি পড়তে লাগলো।

-” সরি, আর বকবো না। রাগ করে না আমার তুলু মনি। তুলু মনি অনেক ভালো তো। আচ্ছা চিন্তা করো তো তুমি সারাদিন এদিক ওদিক দৌড়ে বেড়াও। এখানে সেন্সলেস না হয়ে যদি অন্য কোনো খানে হতে তখন কি হতো? তুমি বলবে এখন যে মানুষ তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসতো ঠিকানা বের করে বা পুলিশ কে বলতো। কিন্তু সবাই কি ভালো হয় বলো? আর তোমার পিছনে শত্রুও কম না। যদি তোমাকে তারা আঁটকে রাখতো বা খারাপ কিছু করার চেষ্টা করতো তখন কি হতো বুঝতে পারছো? কেন এমন করো হুম? খাবার না খেয়ে, টেনশন করে কেন নিজেকে এমন কষ্ট দেও হুম? আমি তো মনে হয় তোমার টেনশন করতে করতেই একদিন হার্ট অ্যাটাক করে বসবো।” রাফসান আদুরে কন্ঠে বলে। এতে তুলতুল ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। রাফসান তুলতুলের মাথায় হাত বুলায়। কিছুক্ষণ পরে রাফসান বালিশ ঠিক করে দিয়ে শুয়ে পড়তে বলে। তুলতুল চুপচাপ বসে থাকে। রাফসান লাইট নিভিয়ে বিছানায় বসে। তারপর তুলতুলকে বলে

-” এখন ঘুমাও। এমনিতেও অনেক দূর্বল। তাওহীও এখনো উঠে নি। সকাল হলে আমি দুজনকে বাড়ি দিয়ে আসবো।” কিন্তু তারপরও তুলতুল মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে আছে। রাফসান শুয়ে পড়ে তুলতুলকে টান দিয়ে বালিশে শুয়ায়। দুজনের ওপরই কম্বল টেনে দেয়। তুলতুল অস্বস্তিতে কাঠ হয়ে থাকে। তার কেমন যেনো লাগছে। বুকের ভেতর ধুকপুক ধুকপুক করছে। হার্ট এতো জোরে বিট করছে কেন? ইশশ, মনে হয় বেরই হয়ে আসবে। অস্থির লাগছে তার রাফসানের পাশে এভাবে থাকতে। সাথে লজ্জা লাগছে। সে ধীরে ধীরে রাফসানের দিকে তাকালো, দেখে রাফসান তার দিকে চেয়ে আছে। তুলতুল চোখ খিঁচে বন্ধ করে রাখে। রাফসান তা দেখে হেসে বলে

-” হয়েছে এবার ঘুমাও।” কিন্তু তুলতুলের ভেতর ঘুমানোর কোন লক্ষণ নেই। রাফসান এবার বলে

-” বুঝেছি এভাবে ঘুম আসবে না। কাছে আসো। আমার বুকে মাথা দিয়ে শুলে ঘুম এসে যাবে। আমি তো ভাবলাম তুমি অস্বস্তিতে পড়বে তাই নেই নি। কিন্তু তোমার মনে হয় আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে ইচ্ছা করছে তাই এভাবে আছো। বললেই পারতে যে, বর মশাই আমি আপনার বুকে ঘুমাবো। আসো আসো ফাস্ট!” রাফসানের কথা শুনে তুলতুল হতভম্ব হয়ে চোখ বড় বড় করে তাকালো তার দিকে। রাফসান মিটমিট করে হাসছে। বোঝা যাচ্ছে মজা নিচ্ছে। কি খারাপ লোক। ইচ্ছা করে তাকে অস্বস্তিতে ফেলছে। রাফসান তুলতুলের গায়ে কম্বলটা আরেকটু টেনে দিয়ে কম্বলের ওপর দিয়ে একহাত রাখলো তার ওপর। তারপর তুলতুলকে ঘুমাতে বললো। তুলতুলও আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতে কখন ঘুম এসে গিয়েছে।

.

এলা আর রাফসান রেস্টুরেন্টে বসে আছে। এলা খাবার খাচ্ছে আর বকবক করছে। রাফসানের এখন এলাকে প্রচুর বিরক্ত লাগছে। মনে হচ্ছে মুখটা সেলাই করে দিক বা গুলি মাথায় ঠুকে দিক। মাথা খেয়ে ফেলছে তার। এমনিতেও মাথা ব্যাথা করছে। রাতে ঘুম হয়নি তার বেশি। সকালেও ঘুমায় নি। তুলতুলের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল। তার ঘুমন্ত মুখ দেখেই তো সে ঠাস করে পিছলে পড়েছিল তার প্রতি। কতটা মায়া ভরা ছিল সে মুখ। সে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। একদম মায়ায় ঘিরে ফেলেছে যেন রাফসানকে। কখন সময় কেটে গেছে তা সে বুঝতে পারে নি। ঘুম আর তার হয়নি। তুলতুল উঠলে তাকে আর তাওহীকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে অফিসে গিয়েছিল। সারাদিন সেখানেই কেটেছে। এখন প্রায় বিকেল হয়ে গেছে। এলা অফিসে গিয়ে বায়না ধরে রাফসানকে বলে রেস্টুরেন্টে যাবে। না চাইতেও এলাকে নিয়ে তার আসতে হয়। আর এসেই বকবক করা শুরু করেছে। রাফসান ওয়েটার কে কফি দিতে বলে। কফি দিয়ে গেলে তাতে চুমুক দিয়ে এলার দিকে তাকায়। তারপর বলে

-” বেবি অনেক তো হলো চলো এবার বিয়ে করে ফেলি।” একথায় যেনো এলা আকাশের চাঁদ হাতে পেল মনে হলো। সে উৎফুল্ল হয়ে বলে

-” সত্যি বলছো? বিয়ে করবো আমরা?”

-” বিয়ে করবো না কেন? ভালোবাসো না আমাকে তুমি?”

-” অনেক ভালোবাসি আমি তোমায় বেবি।” এলা আহ্লাদি স্বরে বলে

-” তাহলে আঙ্কেলকে আসতে বলো মানে তোমার ড্যাড কে। তিনি এসে দাদীর সাথে কথা বলে তারিখ ঠিক করুক। মেয়ের বিয়ে দেবেন অথচ আসবে না? সেই চারবছর আগে লন্ডন গিয়েছে। একবারও আসেনি আর। তুমি আসতে বললে নিশ্চয়ই আসবে। আমিও ওয়েট করছি।” শেষ কথাটা একটু আস্তে বলে রাফসান রহস্যময় ভাবে হাসে। আর এলা খুশি হয়ে বললো

-” আমি আজই ড্যাডকে ফোন করে দেশে আসতে বলবো। তুমি আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছ শুনে ড্যাড খুশি হবে অনেক।” এলা হাসি নিয়ে বললো। রাফসান কফি শেষ করে আরো কিছুক্ষণ এলার সাথে টুকটাক কথা বললো। তারপর রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে এলো। এলা ঘুরার কথা বললে রাফসান বুঝায় যে তার কাজ আছে। আর বিয়ের জন্য তো ফ্রি থাকা দরকার। তো কাজগুলো কমপ্লিট করতে হবে। এলা আর কিছু বলে নি খুশি মনেই চলে গিয়েছে।

.

তুলতুলদের বাসার ড্রয়িং রুমে বসে আছে রাফসান। এলাকে বিদায় জানিয়ে গাড়ি নিয়ে সে এখানে এসেছে। শশুর বাড়ি এসেছে সাথে অনেক কিছু নিয়ে এসেছে সে। মিষ্টি, ফলমূল, সবার জন্য গিফট আরো অনেক কিছু। সে আসবে সেটা শুধু তফিজ আহমেদ জানতেন। রাফসানকে দেখে তিয়াস রেগে ওপরে চলে যায়। তফিজ আহমেদ আফসা বেগমকে আগের কিছু নিয়ে কোন কথা বলতে মানা করেন। স্বাভাবিক আচরণ করতে বলে রাফসানের সাথে। আফসা বেগমও মেনে নিয়ে তাই করেন। রাফসান আজকে তার কাছে ক্ষমা চেয়েছে। তিনিও সব ভুলে নতুন ভাবে শুরু করতে বলে। যদিও তার জন্য এসব একটু কষ্টকর। সাধ্যমতো যথেষ্ট আপ্যায়ন করেন তিনি মেয়ে জামাইকে। যদিও তিনি জানতেন না রাফসান আসবে জানলে একটা আলাদা প্রস্তুতি নিত। যতই হোক সে এবাড়ির জামাই এখন। পুরনো কথা মনে করে কষ্ট পেয়ে লাভ নেই। আর তার ছোটমেয়ের ভবিষ্যতও জড়িত। তফিজ আহমেদ তুলতুলের ব্যাপারে কথা বলেন। তিনি বলেন তুলতুলের অনার্স শেষ হলে তারপর অনুষ্ঠান করে উঠিয়ে দেবেন। এতো তাড়াতাড়ি মেয়েকে তুলে দিতে চাইছেন না। মেয়ে ছোট তার, সংসার ধর্ম এখনি বুঝবে না। তাছাড়া কম বয়সে মেয়ের ওপরেও সংসার চাপিয়ে দেওয়ার মতো হবে এখন তুলে দিলে। তাই রাফসানের সাথে এ ব্যাপারে কথা বললেন। সুবিধা অসুবিধা বোঝায় তাকে। রাফসানও সায় দেয়। কথার একপর্যায়ে তাওহী দৌড়ে এসে রাফসানের কোলে বসে। এতে তফিজ আহমেদ বলে

-” তাওহী এটা কি হলো?। বড়রা কথা বলছে এর ভেতর ডিস্টার্ব করা কিন্তু ঠিক না।” রাফসান হালকা হেসে বলে

-” থাক সমস্যা নেই।” তাওহী রাফসানের সাথে গল্প জুড়ে দেয়। কালকে তার সাথে একদম ফ্রী হয়ে গিয়েছে তাওহী। দুজনের ভালো ভাব জমেছে। তফিজ আহমেদ মুচকি হেসে তাকিয়ে আছে। একদমই ভুল করেনি হয়তো তুলতুলের সাথে রাফসানের বিয়ে দিয়ে। সে মূহুর্তে তুলতুল নিচে নেমে বলে

-” বাবা আমি একটু বাগানে যাচ্ছি।” রাফসান তাকালো একবার তুলতুলের দিকে। পরমূহুর্তেই তাওহীর সাথে কথা বলায় ব্যাস্ত হয়ে পড়লো। তফিজ আহমেদ বললো

-” যদি বাগানে যাও তাহলে ঠিকাছে কিন্তু বাইরে যেতে চাইলে এখন যেতে পারবে না।”

-” ঠিকাছে, বাগানেই যাচ্ছি।” বলে রাফসানের দিকে তাকিয়ে সে বাইরে চলে আসে। বাইরে এসে জুতা পড়ার সময় রাফসানের জুতার দিকে নজর পড়ে তার। সে নিজের জুতা হাতে নিয়ে রাফসানের জুতাটা পায় দেয়। তার পায়ের থেকে অনেক বড়। একটু এদিক ওদিক হলেই উষ্ঠা খাবে। তারপরও তার ভালো লাগছে। সে রাফসানের জুতা পড়ে আস্তে আস্তে বাগানের দিকে গেলো।
তাওহী রাফসানের সাথে কথা বলতে বলতে বায়না ধরে তার সাথে বাইরে যাবে। বাবাকেও যেতে বলে। রাফসান আর তফিজ আহমেদ রাজি হয়। জামাই শশুর মিলে না হয় একটু হেটে আসুক বাইরে থেকে এই ভেবে তফিজ আহমেদ উঠে দাঁড়ায়। রাফসান আর তাওহী হাত ধরে আগে আগে যায়। কিন্তু বের হওয়ার সময় বিপাকে পড়ে। রাফসান তার জুতা খুঁজে পায় না। জুতার অস্তিত্বও নেই। তফিজ আহমেদ ওদের দাঁড়িয়ে থাকার কারন জিজ্ঞেস করে। আর তাওহী বলে

-” বাবা ভাইয়া জুতা পাচ্ছে না।”

-” এদিকেই কোথাও থাকবে হয়তো তুই খুঁজে দেখ তো।”

-” খুঁজেছি তো, কোথাও নেই। ” বলে তাওহী দাঁড়িয়ে রইল চোখ মুখ কুঁচকে। তফিজ আহমেদ অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। জামাই বাড়িতে এলো আর তার বাড়ি থেকে জুতা চুরি হয়ে গেলো? কে করলো এমন কাজ। তুলতুল তো একটু আগে গেলো ও পড়লে তো ওর নিজের জুতা থাকতো এখানে তারমানে তুলতুল পড়ে নি। আর জুতা চুরি হলো জামাইয়ের এতোকিছু রেখে। তিনি রাফসানের সামনে অস্বস্তিতে পড়লো। আর তাওহী বললো

-” যে জুতা নিছে তারে যদি পাই তো জুতায় থুথু লাগিয়ে মারবো। কতবড় সাহস আপুর জামাই আর আমার ভাইয়ার জুতা চুরি করে। মনে হয় জুতা নিয়ে দুইরাতে বাড়ি বানিয়ে ফেলবে। উফফ! আমি বাইরে ঘুরবো।” বলে তাওহী কাঁদো কাঁদো মুখ করলো। আর রাফসান অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। সত্যিই তার জুতা চুরি হয়েছে? চোর আর কিছু পেলো না এত বড় বাড়ি থেকে! এ কোন ধরনের চোর!

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here