#ডেঞ্জারাস_লাভারস
#পর্ব_২
#লেখক_দিগন্ত
মাহিন একটি চিঠি তার এক বন্ধুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
—এই চিঠিটা ঐ নতুন মেয়ে যাকে আমি থা°প্প°ড় দিয়েছিলাম তাকে গিয়ে দিবি। আর শোন একটা কথা এমনভাবে দিবি যাতে কেউ না দেখতে পায়। বুঝতে পেরেছিস নিশ্চয়ই আমি কি বলতে চাচ্ছি।
—হ্যা বুঝতে পারছি। আমি তাহলে যাচ্ছি।
মাহিন শয়তানি হাসি হেসে বলে,
—এবার বিরাট বুঝবে মাহিনের সাথে পাঙা নেওয়ার ফল কি হতে পারে।
•
পিহু ক্যান্টিনে লিপির সাথে বসে ছিল। লিপির সাথে ভার্সিটির ব্যাপারে বিভিন্ন গল্প করছিল। একপর্যায়ে লিপি বলে,
—এই বছরের মধ্যেই কিন্তু আমাদের বয়ফ্রেন্ড জোগাড় করতে হইবে। নাইলে সিঙ্গেল হয়েই কা°টা°তে হবে।
পিহুর লিপির কথায় কোন মনযোগ নেই৷ সে নিজের মধ্যেই কি যেন ভেবে চলেছে। এরমধ্যে হঠাৎ আস্কারা এসে তাদের সামনে বসে। আস্কারাকে দেখেই লিপি সালাম দেয়। পিহু ড্যাবড্যাব করে আস্কারার দিকে তাকায়। অতিরিক্ত মেকআপ করায় তাকে ভূতের মতো লাগছিল। আস্কারা পিহুকে নিজের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে,
—জানি, আমি অনেক সুন্দরী। তারমানে এই না যে, একটা মেয়ে আমার উপর ক্রাশ খাবে। আমি কিন্তু ওরকম টাইপ নই।
আস্কারার কথায় বিষম খায় পিহু। আর একমুহূর্ত বসে না থেকে উঠে ক্লাসের দিকে চলে আসে।
ক্লাসে এসে নিজের নোটের মধ্যে একটা চিরকুট পায়। কৌতুহলবশত চিরকুটটা খুলে। চিরকুটটা পড়তেই পিহুর অবাকের সীমা ছাড়িয়ে যায়। কারণ সেখানে লেখা,
—আজ বিকেলে ভার্সিটির ছাদে দেখা করবা। ইটস মাই অর্ডার।
পিহু চিরকুটটা পড়ে রেগে যায়। বলে,
—এত বড় সাহস আমাকে অর্ডার করে। পিহু কি জিনিস আজকে বুঝিয়ে দেব। আমার আসল রূপ এখনো কাউকে দেখাই নি। এবার দেখবে এই গ্রামের মেয়ে পিহু কি করতে পারে।
লিপিও পিহুর পিছন পিছন ক্লাসরুমে আসে। পিহুকে চিরকুট হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে খুশিতে গদগদ হয়ে বলে,
—এইটা কি লাভ লেটার? তারমানে তুই খুব শীঘ্রই মিঙ্গেল হইতে চলছিল। আমার যে কি আনন্দ হইচ্ছে বলি বোঝাইতে পারমু না পিহু।
লিপির কথায় পিহু রেগে যায়। বেশ রাগী গলায় বলে,
—এটা কোন লাভ লেটার নয়। আমাকে অর্ডার করেছে। আমাকে মনে হয় এখনো চেনে না। কোন ব্যাপার না আজ খুব ভালোভাবেই চিনিয়ে দেব। পিহুর সাথে পাঙা নেওয়ার ফল ভালো হবে না।
লিপি পিহুর এই তেজি রূপ দেখে ভয় পেয়ে যায়। বলে,
—শান্ত হ পিহু। মাথা গরম করিস না। চাচি কি বলত মনে নাই? রাগ মানুষের দুশমন।
—তুই আমাকে জ্ঞান দিতে আসিস না লিপি। আমি গ্রামের মেয়ে জন্য সবাই কি আমাকে ফেলনা ভেবেছে নাকি? আজ আমার ডেঞ্জারাস রূপ যদি এই ভার্সিটির সবাইকে না দেখাই তাহলে আমার নাম পিহু নয়। মাইন্ড ইট।
_________________________
চিরকুটের ভাষ্যমতে, পিহু বিকেলে ভার্সিটির ছাদে চলে যায়। ছাদে গিয়ে দেখতে পায় একটি ছেলে, দেখতে বেশ সুদর্শন। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি যেন ভাবছে। পিহু বিড়বিড় করে বলে,
—এই ছেলেই মনে হয় আমাকে ডেকে পাঠিয়েছে। দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা।
পিহু কোন কিছু না ভেবে ছেলেটির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। ছেলেটি ছিল বিরাট। বিরাট পিহুকে এভাবে নিজের সামনে এসে দাঁড়াতে দেখে বিরক্তিমাখা কন্ঠে বলে,
—কি চাই?
—কি চাই মানে? নাটক করছেন আমার সাথে? একটা মেয়েকে চিরকুট দিয়ে ছাদে ডেকে এনে এখন বলছেন কি চাই। আপনার মতো ছেলেদের জন্য মেয়েরা আজ নিরাপদ নয়।
বিরাটের রাগ উঠে যায় পিহুর কথা শুনে। একপ্রকার রেগে গিয়ে বলে,
—এই, হু দা হেল আর ইউ? আমাকে এসব বলার তুমি কে? কে তোমাকে চিরকুট দিয়ে এখানে ডেকেছে? ভালো চাইলে এক্ষুনি আমার সামনে থেকে দূর হয়ে যাও। নাহলে কিন্তু ভালো হবে না।
পিহু চিরকুটটা বের করে বিরাটের হাতে দিয়ে বলে,
—ভালো করে দেখুন চিরকুটটা। এটা দেখে নিশ্চয়ই চিনতে পারছেন।
পিহুর সামনেই চিরকুটটা ছি°ড়ে ফে*লে দেয় বিরাট। তারপর পিহুর হাত শক্ত করে বলে,
—এসব ট্রিকস আমার উপর কাজ করবে না। অনেক মেয়েই আমাকে এভাবে ফাঁ°সা°নো°র চেষ্টা করেছে। কিন্তু কেউ সফল হয়নি।
পিহু নিজের হাত ছাড়িয়ে নিতে যায়৷ যার ফলশ্রুতিতে তাল সামলাতে না পেরে বিরাট পিহুর উপরে পড়ে যায়। পিহু ওমাগো বলে চিৎকার করে ওঠে। মাহিনরা এই সুযোগেরই অপেক্ষায় ছিল। তারা এই ঘটনার ভিডিও করে নেয়।
মাহিন এবার তার বন্ধুদের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
—তোরা শুধু দেখে যা এবার কি কি হয়।
মাহিন ফেসবুকে ভিডিওটি আপলোড করে বলে,
—তোরা সবাই এই ভিডিও শেয়ার কর। তারপর দেখবি এই বিরাটের মান-সম্মান কিভাবে ধুলোয় মিশিয়ে যায়।
মাহিনের এক বন্ধু বলে,
—কিন্তু বস ঐ মেয়েটার কি হবে? এসব ব্যাপারে মেয়েদের সমস্যা তো বেশি হবে। ঐ মেয়ে তো সমাজে মুখ দেখাতে পারবে না।
মাহিন মেজাজ দেখিয়ে বলে,
—মেয়েটা কি তোর বোন লাগে? ওর সাথে যা হয় হোক। সেটা নিয়ে আমাদের ভাবার দরকার নেই। আমাদের মূল উদ্দ্যেশ্য হলো বিরাটকে একটা শিক্ষা দেওয়া। দ্যাটস ইট।
___________________
পিহু হলরুমে এসে বসে আছে। এই রুমটায় সে, লিপি ও আস্কারা থাকে। আস্কারার সাথে থেকে পিহু ও লিপি বুঝে গেছে, সে খুব বোকাসোকা। তবে মানুষ হিসেবে সে খারাপ না।
আস্কারা ফেসবুকে নিজের নিউজফিড স্ক্রল করছিল। হঠাৎ একটি ভিডিও দেখে সে চিৎকার করে ওঠে। লিপি জিজ্ঞাসা করে,
—চেচাচ্ছেন কেন আপা?
আস্কারা লিপিকে ভিডিওটা দেখায়। লিপিও সমস্বরে চেচিয়ে বলে,
—পিহু এবার তোর কি হইবে? তোর ভিডিও যে ভাইরাল হয়া গেল।
পিহু নিজেও ভিডিওটা দেখে। ভিডিওটা দেখেই কেঁদে ওঠে সে। লিপিকে জড়িয়ে বলতে থাকে,
—আব্বা যদি জানতে পারে আমাকে মে°রেই ফেলবে। এমনিতেই আমাকে শহরে আসতে দিতে চাচ্ছিল না। এখন আমি কি করব লিপি?
আস্কারা পিহুকে এসে বলে,
—আগে থেকে এই বিষয়ে সাবধান থাকতে পারো নি। আমি জানি বিরাট এই ধরনের ছেলেই না। তোমাকেও খারাপ মেয়ে মনে হয়না। সত্যি করে বলো তো কি হয়েছে?
পিহু আস্কারাকে সব ঘটনা খুলে বলে। সব শুনে আস্কারা বলে,
—আমার মনে হয় এর পেছনে অন্য কারো হাত আছে। আমি বিরাটকে অনেকদিন থেকে চিনি। বিরাট আজ অব্দি কোন মেয়ের সাথে খারাপ আচরণ করে নি। ও এমন করতেই পারে না।
পিহু বিরাটের প্রতি আস্কারার এই অন্ধবিশ্বাস দেখে রেগে যায়। বলে,
—আমি জানি ঐ লোকটাই যা করার করেছে। আমরা গ্রামের মেয়ে হতে পারি কিন্তু নিজেদের সম্মানে আঘাত লাগলে আমরাও কাউকে ছাড় দিতে রাজি নই। ঐ বিরাটকে আমি ছাড়ব না।
আস্কারা পিহুকে কিছু বলার আগেই পিহু দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসে। পিহু কিছু বুঝে ওঠার আগেই কয়েকজন মেয়ে এসে তাকে ঘিরে ধরে। বলতে থাকে,
—এতো একটা দু°শ্চ°রি°ত্রা মেয়ে। একে এক্ষুনি হল থেকে বের করে দেও।
পিহুকে আরো নানান কুরুচিপূর্ণ কথা বলতে থাকে। পিহু কিছুতেই সেসব কথা হজম করতে পারছিল না। তাই বলে ওঠে,
—থামুন আপনারা সবাই। নিজেরা মেয়ে হয়ে অন্য একটা মেয়েকে এভাবে অপমান করতে আপনাদের বিবেক কি আপনাদের বাধা দিচ্ছে না? কেমন মেয়ে আপনারা?
আস্কারাও পিহুর পক্ষে কথা বলে। সে বলে,
—ঠিকই তো বলেছে ও। আমাদের মেয়েদেরই উচিৎ বিপদে একে অপরের পাশে দাঁড়ানো। সেটা না করে তোমরা কি করছ?
কয়েকজন মেয়ে মাথা নামিয়ে নিলেও একটা মেয়ে বলে,
—এইরকম মেয়ের পাশে কে দাঁড়ায়? যে নিজের সম্মান বেঁচে ভাত খায়।
পিহু কিছু বলতে যাবে তার আগেই….
(চলবে)