প্রণয়ের সূচনা পর্ব – ৪৮

#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#পর্ব_৪৮
_____________________________
–‘ভাবীর কি হয়েছে ভাইয়া?

চিন্তিত মুখে প্রণয়কে জিজ্ঞেস করলো ইরা।বন্ধ দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে তারা।ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে বসে আছে সূচনা।বাইরে থেকে সবাইকে তাড়া দিয়ে নিয়ে এসেছে সে।কেউ যেনো না বুঝে সে জন্য বাহানা দিয়েছিলো শরীর খারাপের।কিন্তু বাসায় এসে সেই যে রুমে গিয়েছে তো গিয়েছে।প্রণয় কিছু বলবে বলবে করেও বলছে না।সেও রীতিমতো অবাক হয়েছে।ইরার প্রশ্নের জবাবে ছোট্ট করে বললো-

–‘আমি দেখছি।তুই ফ্রেশ হ গিয়ে।

ইরাও কিছু বলতে চেয়েও বললো না।অগত্যা নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালো।প্রণয় সেখান থেকে সরে আসলো।মিনিট দুয়েক পর স্টাডি রুম থেকে নিজের ঘরের আরেকটি চাবি এনে শব্দহীন ভাবে দরজা খুললো।ভেতরে ঢুকতেই বেডে বসে থাকা মানবীর দিকে চোখ আটকালো।হাতে ফোন নিয়ে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সূচনা।প্রণয় এগিয়ে গেলো।সূচনার পাশ থেকে ভেজা টাওয়াল নিয়ে বেলকনিতে মেলে দিলো।মৃদু পায়ে হেঁটে সূচনার সন্নিকটে এলো।নিঃসংকোচে সূচনার পাশ ঘেঁষে বসলো প্রণয়।সূচনা নড়েচড়ে পাশ ফিরে প্রণয়ের দিকে তাকায়।দৃষ্টি সরিয়ে পুনরায় স্থির করলো ফ্লোরে।সূচনার নত মুখশ্রীতে চোখ বুলিয়ে নরম স্বরে জিজ্ঞেস করলো প্রণয়-

–‘কি হয়েছে প্রণয়ী?

সূচনা নিচু স্বরে বললো-

–‘কিছুনা।

–‘তাহলে তখন এভাবে চলে এলে কেনো?আর ফিরে এসেই বা রুমে ঘাপটি মেরে বসে আছো কেনো?

উত্তর দিলো না সূচনা।দ্রুত পায়ে উঠে জানালার কাছে যেয়ে দাড়ালো।বাতাসের উথাল পাতাল কল্লোধ্বনিতে সূচনার অম্বর জুড়ে খোলা চুল উড়ে বেড়াচ্ছে।সিক্ত চোখ জোড়া নিষ্ঠুর অশ্রুতে ক্লান্ত হয়ে নিভু নিভু হয়ে যাচ্ছে।প্রণয় উঠে যেয়ে দাড়ালো সূচনার নিকট।প্রণয় চোখ বন্ধ করে পুনর্বার চোখ মেললো।সূচনার নত মুখশ্রীতে বিচরণ করছে তার অশান্ত চোখ জোড়া।মৃদু সুরে বললো প্রণয়-

–‘কান্না থামাও,প্লিজ।

সূচনা বারণ তো শুনলোই না।বরং এ পর্যায়ে কান্নার শব্দ প্রণয়ের কানে গেলো।প্রণয় চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস টানলো।স্বাভাবিক স্বরে আবারো বললো-

–‘কান্না থামাতে বলেছি।

সূচনার হেলদোল না হওয়ায় যেনো ক্ষি প্ত হলো প্রণয়।দাঁতে দাঁত চেপে স্বগতোক্তি কন্ঠে ধমকে উঠলো-

–‘সূচনা?

সূচনা কিঞ্চিত কেঁপে উঠলো।দৃষ্টি জোড়া আর উপরে তুললোনা।প্রণয়ের মৃদু ধমকে বোধ হয় অভিমান হলো।জানালার কাছে থেকে সরে আসতে চাইলো।তবে ততক্ষণে প্রণয় নিজের বাহুডোরে আঁটকে ফেলেছে সূচনাকে।প্রবল ভাবে মিশিয়ে নিয়েছে নিজের কাছে।সূচনা অভিমানে সরতে চাইলো।তবে এতে ছাড়া তো পেলোই না।বরং প্রণয়ের তীব্র আলিঙ্গনে বাঁধা পেলো।হার মানলো সূচনা।প্রণয়ের পৃষ্ঠদেশ দু হাতে আকড়ে ধরে শব্দ করে কেঁদে ফেললো।বুকের ভেতর অস/হ্য গ্লানি টুকু আ/টকে রেখে ধীর গলায় বললো সূচনা-

–‘আ…আপনাকে কিছু বলতে চাই।

প্রণয় ‘হুশশ’ আওয়াজে থামিয়ে দিলো সূচনাকে।মৃদু গলায় বললো-

–‘উহুম।কিছু বলতে হবেনা।আমি কিছু শুনতে চাইনা।

সূচনা মু/চড়ে উঠলো।প্রণয়ের পরনের টি শার্ট খানিকটা হাতের মুঠোতে চেপে বললো-

–‘আপনাকে শুনতে হবে প্রণয়।বলতে দিন আমাকে।আমার অতীত আপনাকে শুনতে হবে।প্লিজ।

–‘কোনো কথা শুনবো না আমি।তোমার অতীত জানবার বিন্দু পরিমাণ ও ইচ্ছে বা আগ্রহ নেই।আমি তোমার অতীত নই।আমি তোমার বর্তমান,ভবিষ্যত।

সূচনা প্রণয়ের বুক থেকে মাথা তুলে প্রণয়ের দিকে তাকালো।অন্ধকারে আচ্ছন্ন ঘরে সূচনার ফোলা ফোলা মুখশ্রী চক্ষুশূল হলো প্রণয়ের।হাত বাড়িয়ে বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে চোখ মুছে প্রতিবাদী কন্ঠে বললো-

–‘কেনো কাঁদছো প্রণয়ী?আমি থাকতেও তোমার চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়বে কেনো?আমি কি তোমায় সুখে রাখতে ব্যর্থ?

প্রণয়ের খসখসে ওষ্ঠে নিজের চিকন চিকন আঙুল রাখলো সূচনা।ফুপিয়ে উঠে অস্পষ্ট গলায় তড়িঘড়ি করে বললো-

–‘না না।আপনি আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে সেরা পুরুষ।আপনার দ্বারা কেউ কখনো কষ্ট পেতেই পারেনা।কিন্তু আমি?আমি আপনার যোগ্যই না প্রণয়।আমার অতীত টা খুব একটা সুন্দর নয়।শুনতে হবে প্রণয়।আমার কথা শুনতেই হবে।প্লিজ।

–‘আমার কাছে কোনো অতীত নেই।কোনো ভবিষ্যত ও নেই।আমার বর্তমানে তুমি আছো।আমার সবকিছু জুড়ে শুধু তুমি।

সূচনা পুনশ্চ প্রণয়ের বক্ষস্থলে সন্তপর্ণে মুখ গুঁজে দিলো।পিঠের উপর শুভ্র শার্টের খামচে ধরলো।কান্নামিশ্রিত কন্ঠে অনুরোধ করলো-

–‘একটাবার শুনে নিন।প্লিজ প্রণয় প্লিজ।

তৎক্ষনাত চোখ বন্ধ করলো প্রণয়।সূচনার মৃদু কম্পিত শরীর আগলে নিলো।ভয়াবহ ঠান্ডা হয়ে আছে তার শরীর।প্রণয় এক হাতে সূচনাকে জড়িয়ে রেখে অন্য হাতে পাশের চেয়ারে রাখা জ্যাকেটে জড়িয়ে নিলো সূচনাকে।সূচনার মাথাটা বুকে চেপে হার মেনে নেওয়ার শ্বাস ফেলে কানের কাছে মুখ নিয়ে মৃদু স্বরে বললো-

–‘বলো প্রণয়ী।

সূচনা লম্বা শ্বাস টানলো,শ্বাস নিতে কষ্ট হলো বটে,যেন ভারী কিছু চেপেছে বুকে। বক্ষস্থল হতে মুখ উঠালো,জানালা ভেদ করে নিভু নিভু দৃষ্টি রাখলো বাইরে।চাপা কণ্ঠে বলা শুরু করলো-

–‘তখন দশম শ্রেণিতে পড়ি। ফ্রেন্ড বলতে তেমন কেউ ছিল না। একজন ছিল স্নেহা, ওর সাথে মোটামুটি ভালো সম্পর্ক ছিল আর সেটাই ছিল সবচেয়ে বড় ভুল। স্নেহার কাজিন ছিল রিয়াদ, ওদের বিল্ডিং এই সে থাকত, কোনো দরকারে ঢাকা এসেছিল ক’মাসের জন্য। দেখতে কম ছিল না কোনো অংশে। তাকে কোনো মেয়ের অপছন্দ হওয়ার কথা না।সব ভালোই চলছিল। একদিন স্কুল থেকে ফিরছিলাম আমি আর স্নেহা। স্কুলের গেইটের সামনে দেখলাম একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। তখন অতকিছু ভাবিনি, না তাকে চিনতাম।কিন্তু তার পরের দিন ও স্কুলে যাওয়া ও আসার সময় একই জায়গা দেখলাম তাকে দাঁড়ানো। সেইদিন যাওয়ার পথে স্নেহা জিজ্ঞেস করল-

–‘ ওই ছেলেটাকে দেখেছিস? আমার কাজিন হয়।

ছোট্ট করে শুধু জবাব দিলাম-

–‘ও।

–‘এখানে দাঁড়িয়ে থাকে, তোর জন্য।

স্নেহার কথা শুনে ভাবলাম মজা করেছে,মজা ভেবে উড়িয়ে দিয়েছিলাম কিন্তু সে পরে এমন ভাবে বলল মেনে নিলাম সব সত্যি।তবে তখনও তার দিকে ভালো করে তাকাইনি পর্যন্ত।ঐভাবেই চলছিল,রোজ তাকে যাওয়ার পথে এবং আসার পথে দেখতাম আড় চোখে।সে অবশ্য কোনোদিন আমার সাথে কথা বলার বা যোগাযোগ করার চেষ্টা করেনি।এর মাঝে শুরু হলো করোনার তা/ন্ডব। সারা দেশের মানুষ লকডাউনের ভেতর চলে গেল,ঘরবন্দী হয়ে পড়লাম,খুব একা লাগত,খারাপ লাগত অনেক, দমবন্ধ লাগত,

কেমন যেন কিছুর অভাববোধ করছিলাম, মনে হতো কিছু নেই। চলছিল ঐভাবেই। ভেতরে ভেতরে কা/তরাচ্ছিলাম,পুড়ছিলাম, কিশোরী মনের অতল হতে অজ্ঞাত কন্ঠ জানান দিল- তাকে মিস করছি, তার প্রতিদিন আমার জন্য দাড়িয়ে থাকা, দু’জন দু’জনকে আড়চোখে দেখা সেসব কে মিস করছি।অভ্যস্ত হয়ে গেছি সেগুলোতে তার জন্য কিছু অনুভূতি জাগ্রত হয়েছে, নামহীন অনুভূতি। মাস কে/টে গেল,অস্থিরতা বাড়লো,শুধু মনে হচ্ছিল তাকে এক নজর দেখতে পারলেই বেচে যাব।সময় কা/টলো,তখন এসএসসি পরীক্ষার্থী,করোনার কারণে বারবা পরীক্ষা পিছিয়ে যাচ্ছিল।লকডাউন উঠে গেছে তখন একটু একটু করে সবকিছু সচল হয়ে গেছে সবাই।পড়ালেখা ও শুরু করে দিয়েছি,স্নেহা আর আমি আলাদা আলাদা কোচিং এ পড়তাম।আবারও তার দেখা মেলল,কোচিং এর সামনে দাড়িয়ে থাকত।অস্থিরতা কমেছিল কিন্তু চোখের তৃষ্ণা মেটেনি।মন ভরে দেখতে পারিনি, আগের মতো আড়চোখে ই দেখেছিলাম। একদিন কোচিং থেকে আসার সময় এলাকার এক আঙ্কেল, আব্বুর পরিচিত সে।উনি মাঝ রাস্তায় দাড় করালেন। বা কা চোখে তাকিয়ে তীক্ষ্ণ গলায় বললেন-

–‘তোমার বাবা তো ভালো মানুষ,তুমি এমন কেন?ভালো হয়ে যাও এসব ছেলেদের কারবার ছাড়ো সময় আছে এখনও।ঔ ছেলে এমন দাড়িয়ে থাকে কেন? মান সম্মান শেষ করো না,তোমাদের মতো কয়েকটা মেয়ের জন্য এলাকার বাকি মেয়ে গুলোর নাম নষ্ট হয়।ভালো হয়ে যাও।

অবাক হলাম, রাগ ও হলো খুব কিছু না করেও এত কথা শুনতে হলো,চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন উঠলো?উল্টো হাটা ধরলাম,বলা হয়নি স্নেহাদের বাসা রেখে আমাদের বাসায়যেতে হয়,দশ মিনিটের মতো লাগে।তখন স্নেহার সাথে যোগাযোগ তেমন হত না।তাই স্নেহা হুট করে আমাকে তার বাসায় দেখে অবাক হয়েছিল।পরোয়া না করে ক্ষিপ্ত গলায় আমি সোজা যেয়ে জিজ্ঞেস করলাম-

–‘তোর ভাই কোথায়?

স্নেহা অবাক হলেও জবাব দিল-

–‘পাশের রুমে।

রাগের পরিমান এতই বেশি ছিল যে কিছু না ভেবে সোজা তার রুমে চলে যাই। সেদিন কড়া কণ্ঠে অনেক অনেক কথা শুনিয়েছিলাম তাকে।কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে সে জবাবে কিছু বলেনি,আমাকে কড়া কথা ও শোনায়নি। শুধু নরম স্বরে বলেছিল-

–‘পেছনেই তো ঘুরি সামনে তো ঘুরঘুর করি না।সূচনা বেশি না শুধু ছয়মাসের জন্য আমাকে একটু ভালোবাসা দাও তাহলেই হবে। আর কিছু চাইনা।

তার চুপ থাকার চেয়ে তার এই কথায় অবাক হয়েছি সাথে বিস্ময় ও ঘিরে ধরে।আরও কয়েকটা কড়া কথা শুনিয়ে দিয়ে চলে আসলাম সেখান থেকে।আসার আগে স্নেহা কেও বলে আসলাম –

–‘তোর ভাইকে বলবি যেন না দাড়ায়,এসব নাটক বন্ধ করতে বলবি।

তারপর আরও কয়দিন গেল।একদিন স্নেহা আর আমি মিলে প্ল্যান করলাম শাড়ী পড়ব একসাথে।প্ল্যান অনুযায়ী বিকেলে শাড়ী পড়ে,হালকা মেকআপ,ঠোটে নুড কালার লিপ্সটিক আর চোখে গাঢ় করে কাজল দিয়ে স্নেহাদের বাসায় গেলাম।আন্টিকে জিজ্ঞেস করলাম বললো-‘স্নেহা ওয়াশরুমে।ও বাসায় আগে ও গিয়েছি আমি তাই চেনা জানা আছে, ওর অপেক্ষা না করে আমি নিজেই ছাদে উঠে গেলাম।কিন্তু ছাদে যেয়েই দেখলাম ছাদের রেলিং ধরে রিয়াদ দাড়িয়ে আছে। বুক ধ্বক করে উঠলো,ঢিপঢিপানি শুরু হলো, না নামতে পারছিলাম না এগোতে পারছিলাম যেন অসাড় হয়ে গিয়েছিল সারা শরীর।মনে প্রাণে দোয়া ও করছিলাম যেন সে টের না পায়,পেছনে না ফেরে বা স্নেহা এসে পড়ে।কিন্তু আসলো না।সে পেছনে ঘুরলো নজরে পড়লাম আমি,অপলক তাকিয়ে রইলো কতক্ষণ। তারপর এগিয়ে আসলো,তার এগোনে দেখে ভয় ঢুকে গেল মনে।সে থামলো যথা দূরত্ব রেখে।ট্রাউজার আর দৃষ্টি নত ছিল আমার কিন্তু বুঝতে পারছিলাম তখনো তার দৃষ্টি আমার মুখশ্রী তে বিচরণ করছে।শাড়ীর আচল নিয়ে নাড়াচাড়া করছিলাম।হঠাৎ তার স্বর কানে এলো।

–‘শাড়ীতে অপরূপা নারী তুমি।তোমার চোখ জোড়া..উফফ চোখে কাজল দেয়া সবচেয়ে সুন্দর মেয়ে তুমি।

কী সুন্দর মনোমুগ্ধকর কণ্ঠ,তার ঔ কথাগুলো মন কেড়ে ছিল, ছোট্ট মনে ভালো-লাগা সৃষ্টি হয়েছিল আরেকদফা।সে ততক্ষণে ছাদ থেকে চলে গেছে। স্নেহার সাথে টুকটাক কথা বলে সেদিন চলে এসেছিলাম।আরও কিছু দিন কাটলো ততদিনে তাকে ভসলো লাগা শুরু হয়েছে।এমনি এক দিন কোচিং থেকে ফিরছিলাম হটাৎ করে সে কোথা থেকে যেন এসে পাশে দাড়ালো আমার,চমকে গিয়েছিলাম।পাশে দাড়িয়ে কানের সামনে মুখ এনে বললো-

–‘আর কতদিন পেছন পেছন ঘুরব এবার তো পাশে দাড়ানোর অধিকার দাও।

যেমন চমকে দিয়ে এসেছিল তেমনি চমকে দিয়ে চলে গেল কিছু বুঝে ওঠার আগেই।তার এমন ছোট ছোট কান্ডে ভালো লাগা বাড়তে লাগলো,বুঝতে পারলাম ভালো লাগা ছাড়াও কিছু অন্যরকম অনুভূতি ও আছে।এসএসসি পরীক্ষা শেষ হলো,রেজাল্ট বের হলো।খুব ইচ্ছে ছিল ভালো একটা কলেজে ভর্তি হব কিন্তু সেবার প্রথম আব্বু আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কিছু করলো।আমাকে জিজ্ঞেস না করেই আমাদের এলাকার একটা কলেজে ভর্তি করিয়ে দিল।খুব রাগ হয়েছিল কিন্তু মেনে নিলাম।আব্বু করিয়েছেন যেহেতু নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে।কলেজের ক্লাস শুরু হয়নি তখনও,বাসা থেকে বেরোতে ও পারতাম না আর না তার দেখা পেতাম।খবর নেয়ার ও রাস্তা ছিল না।স্বেহাকে জিজ্ঞেস করতে ও পারছিলাম না।কী করব বা করব যখন এই দোটানায় ছিলাম তখনই কল আসলো স্নেহার।রিসিভ করে কানে দিতেই তড়িঘড়ি করে স্নেহা বললো-

–‘সূচি তাড়াতাড়ি আমাদের বাসায় আয় প্লিজ।

স্নেহার কণ্ঠ শুনে মনে হচ্ছিল বড় কোনো বিপদে পড়েছে, তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে পড়লাম।কিন্তু আমি বুঝিনি নিজেই দৌড়ে যাচ্ছি বিপদের কাছে।দুপুরের সময় তখন রাস্তা ঘাট একদম ফাকা ছিল।স্নেহাদের বাসায় যেয়ে দেখলাম সদর দরজা পুরোো খোলা,কখনে এমন খোলা রাখা হয়না দরজা কিন্তু সেদিন অমন দেখে অবাক হলাম।পা টিপে টিপে ভেতরে গেলাম।অতঃপর যা বুঝলাম পুরো বাসা ফাকা।ভয় পেলাম,বেরিয়ে আসতে গেলেই পথরোধ করলো কেউ,হাতে জোরে টান পড়লো,চোখ সম্মুখে নিতেই দেখলাম পুরুষালি বাহুতে আটকে গেছি,তার দৃষ্টি আর মুখ ভঙ্গি দেখে বুঝতে বাকি রইলো না কিছু। ধরে নিলাম সব শেষ হয়ে গেছে।আর বুঝি ফেরা হবে না সাদা মনে,খারাপ কিছু হবে?

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here