প্রিয়ন্তিকা পর্ব -০৫

#প্রিয়ন্তিকা
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
#পর্ব – |৫|

নারীর জীবনে সবচেয়ে অমূল্য সম্পদ হচ্ছে তার ইজ্জত-আব্রু। নারী ভীষন যত্নে সেসব আগলে রাখে, প্রয়োজনে জীবন দিতে পরোয়া করে না। কিন্তু যখন সে আগলে রাখা সম্পদে কারো কু নজর লক্ষ্য করে, নারী গর্জে উঠে। বাঘিনীর ন্যায় হামলে পরে। তেমনটাই করেছে প্রিয়ন্তি। লিমনের মত পুরুষ নামক কলঙ্কের হাত থেকে বেঁচে ফিরে আসা নেহাৎ কম কথা নয়। তবে প্রিয়ন্তি পেরেছে। শয়তানের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে এসেছে বিপদস্থান হতে। প্রিয়ন্তির বুকের ভেতরটা শান্ত হচ্ছে না কিছুতেই। ভীষন অস্থির বোধ হচ্ছে। নিপা এবং দৃষ্টি প্রিয়ন্তিকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। প্রিয়ন্তির কান্না থেমেছে। কিন্তু হাপিয়ে যাচ্ছে অবিরাম।

এসময় মাহতিম এল। প্যান্টের পকেটে দুহাত গুঁজে এসে প্রিয়ন্তির সামনে দাঁড়াল। প্রিয়ন্তি দৃষ্টির কাধে মাথা রেখে চোখ বুজে আছে মাহতিমকে দেখেনি ও। নিপা এবং দৃষ্টি মাহতিমকে দেখে চোখ রাঙিয়ে চাইল। মাহতিম একপল প্রিয়ন্তিকে দেখে নিল। এলোমেলো, অস্থির, বিধ্বস্থ প্রিয়ন্তিকাকে দেখে তার বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠল। মাহতিম চোখের ইশারায় নিপাকে জিজ্ঞেস করল, প্রিয়ন্তির কি হয়েছে?

নিপা উত্তর দিল না। বরং দীর্ঘশ্বাস ফেলে প্রিয়ন্তির চুলে হাত বুলিয়ে দিল। মাহতিম হতাশ হল। দৃষ্টিকে জিজ্ঞেস করল। একই রকম নিরবতা দৃষ্টির পক্ষ হতেও পেল। মাহতিম ভারী অবাক হল। প্রিয়ন্তি মাহতিমকে পছন্দ করে না, সেটা যেমন সত্য! প্রিয়ন্তির বন্ধুরা মাহতিমকে বিশ্বাস করে, সাপোর্ট করে সেটাও তেমন সত্য। মাহতিমের কখনও প্রিয়ন্তির বিষয়ে কোনো খবর প্রয়োজন হলে নিপা এবং দৃষ্টি তাকে বরাবরই সাহায্য করে। তারাও চাও, মাহতিম এবং প্রিয়ন্তি এক হোক! প্রিয়ন্তি মাহতিমকে তার মত করেই ভালোবাসুক। এই নিয়ে তারা প্রিয়ন্তিকে সদা বুঝায়। প্রিয়ন্তি বুঝে না। নিপা এবং দৃষ্টির তাতে আফসোস হয়। অথচ আজ মাহতিমের দিকে তারা তাকাচ্ছে না, কথা বলছে না, দেখেও যেন দেখছে না। এ কেমন অবিচার? মাহতিম ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছেড়ে কথা তুলল,

‘ প্রিয়ন্তিকা? ‘

মৃদু, আবেগঘন কণ্ঠে কেপে উঠল প্রিয়ন্তি। দৃষ্টির কাধ থেকে মাথা তুলে আলগোছে চাইল মাহতিমের দিকে। মাহতিম চমকে উঠল। প্রিয়ন্তির গালে নখের আঁচড়, গায়ে বেমানান চাদর! বেনুনী করা চুলের বহর এলোমেলো, অবিন্যস্ত। কেমন যেন লাগছে তার প্রিয়ন্তিকাকে। এমন অসহায় অবস্থায় প্রিয়ন্তিকাকে দেখে মাহতিমের বুক নড়ে উঠে। মাহতিম দ্রুত প্রিয়ন্তির পায়ের কাছে হাঁটু গেরে বসল। প্রিয়ন্তির গালে নখের আঁচরের উপর আঙ্গুল ছুঁয়ে ব্যস্ত কণ্ঠে বলে,

‘ এটা কেমন করে হয়েছে? তুমি ব্যথা পেলে কেমন করে, প্রিয়ন্তিকা?’

প্রিয়ন্তির রাগ তরতর করে বেড়ে উঠতে লাগল। মাহতিমকে দেখে তার জেদ চাপল মনের মধ্যে। ও নিজের গালের উপর থেকে মাহতিমের হাত চট করে ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে পরল জায়গা থেকে। মাহতিমকে একপ্রকার উহ্য করে নিপা এবং দৃষ্টির দিকে চেয়ে কঠোর কণ্ঠে বলল,

‘ তোরা বসবি? না আমার সঙ্গে ক্লাসে যাবি? ‘

নিপা এবং দৃষ্টি মাহতিমের দিকে অসহায় চোখে চেয়ে দেখল। মাহতিমের দৃষ্টি প্রিয়ন্তির গালের উপর নখের আঁচড়ের দিকে। দু চোখ কুচকে সে আঁচড় দেখে যাচ্ছে অবিরাম। তার প্রিয়ন্তিকা ব্যথা পেয়েছে? কে ব্যথা দিয়েছে? মাহতিম উঠে দাঁড়াল। প্রিয়ন্তিকে কিছু বলার আগে প্রিয়ন্তি নিপা এবং দৃষ্টির দিকে চেয়ে কাটছাঁট কণ্ঠে বলল,

‘ উঠবি তোরা? না আমি একাই চলে যাব? ‘

নিপা, দৃষ্টি আর বসে থাকতে পারল না। বুঝতে পারল, প্রিয়ন্তির মাথায় এখন লাভা ফুটছে। মাহতিমের উপস্থিতি একদম সহ্য হচ্ছে না তার। আর বেশিক্ষণ এখানে থাকলে মাহতিমের গালে সেদিনের মত আরো দু চার ঘা পরবে। ভরা ক্যাম্পাসে আর কোনো সিনক্রিয়েট তারা চাইছে না। তাই প্রিয়ন্তির কথামত বসা থেকে উঠে পরল। প্রিয়ন্তি মাহতিমের দিকে একবারও তাকাচ্ছে না। আর এই অগ্রাহ্য করাই মাহতিমের বুকের ভেতর পুড়ছে। সে প্রিয়ন্তির অবহেলা সহ্য করতে পারে না। আর আজকে এ সময় তো আরো পারছে না। প্রিয়ন্তি চলে যেতে লাগল। তবে মাহতিম যেতে দিল না। চট করে পেছন থেকে প্রিয়ন্তির হাত আটকে ধরল। প্রিয়ন্তি রেগে গেল। আগুন চোখে প্রিয়ন্তি মাহতিমকে দেখল। মাহতিম বেশ শান্ত স্বরে বলল,

‘ কথা আছে তোমার সঙ্গে। দু মিনিট নেব জাস্ট,প্লিজ! ‘

প্রিয়ন্তির রাগে গা কাপতে লাগল। রাগে কতগুলো কটু কথা শুনাবে তার পূর্বেই পুরুষালি পুরু আঙ্গুল এসে পরল প্রিয়ন্তির ঠোঁটে। আটকে গেল প্রিয়ন্তির কথার দলা। মাহতিম মৃদু কন্ঠে বলল,

‘ মানা করবে না। জাস্ট দু মিনিট! ‘

মাহতিম যেমন করে অনুরোধ করছে, নিপা এবং দৃষ্টির চোখে জল চলে আসছে। ছেলেটা এত ভালোবাসে কেন প্রিয়ন্তিকে? এত ভালোবাসার ফলস্বরূপ কি পেল জীবনে? অবহেলা, অপমান আর থাপ্পড়? ইশ! কেউ যদি তাদেরকে এমন করে দুনিয়া তুচ্ছ করে ভালোবাসত! সম্পূর্ণ আত্মসম্মান, দুনিয়ার লোভ, কামনাকে তুচ্ছ করে তাদের ভালোবেসে সুখ পেত! ইশ! কেউ যদি এমন করত!
নিপা প্রিয়ন্তির কাধে হাত রাখল। মৃদু কন্ঠে বলল,

‘ দু মিনিটই তো চাইছে। মানা করিস না। ‘

প্রিয়ন্তি অনেকক্ষণ ভেবে অতঃপর মাথা দুলিয়ে রাজি হয়ে গেল। মাহতিমের ভীষন সুন্দর করে হেসে ফেলল। যেন সোনার রাজ্য জয় করে এসেছে সবে। প্রিয়ন্তির ঠোঁট থেকে আঙুল সরিয়ে নিল। প্রিয়ন্তির হাত ছেড়ে বলল,

‘ এসো আমার সঙ্গে। ‘

প্রিয়ন্তির পাশে একসঙ্গে হেঁটে চলল মাহতিম। মাহতিমের ইচ্ছে করছে প্রিয়ন্তির হাতের ফাঁকে হাত রাখতে। কিন্তু সে অধিকারবোধ নেই তার। কবে হবে? আদৌ হবে তো? শঙ্কাবোধ হল মাহতিমের। বুকের ভেতর গুন পোকার ন্যায় কুটকুট করে খেয়ে ফেলছে সবকিছু। যন্ত্রনা হচ্ছে ভীষন। ভালোবাসার বিনিময়ে ভালোবাসা না পাওয়ার যন্ত্রণা অসহ্য পীড়াদায়ক। সহ্য করা যায় না। বুক পুড়ে ছারখার হয়ে যায়।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here