প্রকৃতিতে বর্ষা ঋতুর আগমন ঘটছে, ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টির মাধ্যমে নিজের আসার আগমন জানাচ্ছে। পরিবেশ থেকে থেকে নিকষ কালো আঁধারে ছেয়ে যায়। বজ্রপাতের অত্যধিক শব্দে যেন কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার উপক্রম। আবার এভাবে কিছুক্ষণ যেতেই পরিবেশ পূর্বের ন্যায় হয়ে উঠে আলোকিত।
স্কুল ব্যাগ কাধে বাড়ির পথ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে নবম শ্রেণীতে পড়ুয়া দুজন ছেলে মেয়ে। হাল্কা হাল্কা বৃষ্টির পানিতে অনেকটাই ভিজে গেছে দুজন। তবুও সেদিকে তাদের খেয়াল নেই। তারা থেকে থেকে রাস্তায় জমে থাকা পানিতে লাফালাফি করছে তো একজন একজনকে দৌড়াচ্ছে। বৃষ্টির পানি হাতে নিয়ে একজন একজনের দিকে ছুঁড়ে মারছে। যেন দুটি প্রজাপতি বাধাহীন উড়ে বেড়াচ্ছে। খুনসুঁটি করতে করতেই বাড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দুজন।
কিছুটা সামনে যেতেই মেয়েটা দাড়িয়ে গেল।
মেয়েটিকে দাড়িয়ে পরতে দেখে ছেলেটি দাড়িয়ে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
“নুজু কি বাচ্চি দাড়িয়ে পড়লি কেন? বৃষ্টি জোরে চলে আসবে পরে সর্দি কাশি হলে আন্টি সেই মারবে তোকে।”
নুজু বলে ডাকা মেয়েটি ছেলেটিকে চোখ দিয়ে ইশারায় সামনে তাকাতে বললো।
ছেলেটি সামনে তাকাতেই হাসি মুখটা যেন কিছুটা মলিন হয়ে গেল। তবে বুঝতে দিলো না মেয়েটিকে। মেয়েটির দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বলে উঠলো,
“আরেহ ওটাতো পূর্ণ। ছেলেটা বৃষ্টি মাথায় দাড়িয়ে আছে। দেখিস আজ মনে হয় তোকে প্রপোজ করবে।”
নুজু ছেলেটির হাত ধরে হাসি মুখে বলে উঠলো,
“সত্যি বলছিস আবিদ। কিন্তু আমার কেন তা মনে হচ্ছে নাহ্। যদি না করে প্রপোজ।”
আবিদ চেয়েও নিজের হাসি মুখ ধরে রাখতে পারছে নাহ্। তবুও মলিন হাসি ঠোঁটের কোনে এনে বলে উঠলো,
“তুই সবসময় নেগেটিভ চিন্তা বেশী করিস। দেখিস নাই এতদিন পূর্ণ তোকে ফলো করতো। তাকিয়ে দেখ হাতে কিছু একটা আছে। আজ শিউর তোকে প্রপোজ করবে। যদি করে তুই রাজি হবি?”
নুজু হাসতে হাসতে বলে উঠলো,
“যদি করে অবশ্যই রাজি হবো। তুই তো জানিস আমারও তাকে পছন্দ।”
নুজুর বলা কথাটি শুনে হাসি মুখ একদমই বিলীন হয়ে গেল আবিদের। মেয়েটিকি তাকে কখনোই বুঝবেনা। আবিদ কিছু বলে নাহ কারণ এই বয়সটা সব ছেলে মেয়েদেরই আবেগের বয়স। তাছাড়া বলে দিলে যদি বন্ধুত্বের সম্পর্ক নষ্ট করে দেয়। সেই ভয়েও বলে নাহ্।
তার ভাবনার মাঝেই পূর্ণ নামের ছেলেটি তাদের সামনে এসে দাঁড়ালো।
“হায় কেমন আছো তোমরা।”
আবিদ হাসি মুখেই বলে উঠলো,
“এইতো ভালো তুমি কেমন আছো?”
“হুম ভালো। আসলে আবিদ ,,,,,একটু দূরে যাবে কিছু কথা ছিল নুজহাত এর সাথে।”
“হ্যা কেন নয়। তোমরা কথা বলো। নুজু বেষ্ট অফ লাক।”
নুজহাত জোরপূর্বক হাসলো। আসলে সে এই মুহুর্তে ভীষণ আগ্রহীপূর্ণ হয়ে আছে। তার এই মূহুর্তে সম্পূর্ণ নজর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পুর্ণের উপর।
আবিদ চলে যেতেই পূর্ণ নুজহাতের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
“নুজহাত……”
“হুম্।”
পূর্ণ তার হাতে থাকা বক্সটি খুললো। বক্সটি খুলতেই এক মুঠো কাঁচের চুড়ি দেখতে পেল নুজহাত। তার কাছে চুড়ি খুব পছন্দ। ছেলেটি কীভাবে জানলো। ইসস ছেলেটি তার পছন্দ অপছন্দও জেনে নিয়েছে তার মানি।
পূর্ণ নুজহাতের দিকে নিজের হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে উঠলো,
“আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রমণীর নাকি চুড়ি খুব পছন্দ। তাই আর দেরি করলাম না। রমণীর হাতগুলো চুড়ি পড়িয়ে দেখার ইচ্ছেটা আর দমিয়ে রাখতে পারলাম না।নুজহাত আমায় কি দিবে তোমার হাতে চুড়ি পড়িয়ে দেওয়ার অধিকার!”
নুজহাত অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে পুর্ণের দিকে। সে ভাবে নি এভাবে প্রপোজ করবে। তার কল্পনার বাহিরে ছিলো এরকমটা। কিছুটা লজ্জাও পেলো।
“কি হল কিছু বলছোনা যে ।”
নুজহাত কিছু না বলে বাম হাত বাড়িয়ে দিল ।
পূর্ণ হেসে চুড়িগুলো নিজের হাতে নুজহাতের হাতে পরিয়ে দিলো।
“আসলেই চুড়িতে তোমার হাতগুলো আরো সুন্দর লাগে। পছন্দ হয়েছে চুড়িগুলো তোমার?”
“হুম।”
“ওহহ আমিতো আরো ভয়ে ছিলাম যে আমার জানের পছন্দ হয় কিনা।”
এইভাবে জান বলায় নুজহাত যেন আরো লজ্জা পেলো। কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারছে না। ভেবেছিল কতকিছু বলবে আর এখন দেখো, মুখ দিয়ে কোনো কথাই বের হচ্ছে নাহ। নিজেকেই যেন নিজে চিনতে পারছে না। তার আচরণের সাথে লজ্জা যেন একদম যায়না।
পূর্ণ নুজহাতের দিকে তাকালো। মেয়েটাকি লজ্জা পাচ্ছে। নাহলে এমন চুপচাপ কেন। তার জানা মতে তো মেয়েটা চুপচাপ থাকার কথা নাহ।
“আচ্ছা তুমি কি লজ্জা পাচ্ছো….. থাক বলতে হবে নাহ্। চলো এগিয়ে দিয়ে আসি তোমায়।”
“আব.. আবিদ আছে তার সাথে যেতে পারবো।”
“আবিদ আগে ছিলো এখন আমি। আবিদ একা যেতে পারবে ওকি মেয়ে নাকি বলো। ওয়েট…… এই আবিদ….”
আবিদ এতক্ষন পলকহীন সবটাই দেখছিল। তার প্রেয়সী তার সামনেই অন্য কারো হয়ে গেল। কিছুই করার নেই যে তার। বন্ধুকে ভালোবাসলে হয়তো এরকম পরিস্থিতিতেই পরতে হয়। না পারে বলতে না পারে সহ্য করতে।
পুর্ণের ডাকে নিজের ভাবনার ইতি টানলো।
“হ্যা বলো।”
“আমি নুজহাত কে নিয়ে যাই। তুমি বাসায় চলে যাও।”
আবিদের হটাৎ রাগ হলো তবে সেটা প্রকাশ করলো নাহ্।
“আচ্ছা ঠিক আছে।”
এই বলে আবিদ দ্রুত সেখান থেকে চলে গেল।
নুজহাত এবং পূর্ণও বাড়ির পথে হাটা ধরলো। নুজহাত বারংবার নিজের হাতের দিকে তাকাচ্ছে। আসলেই চুড়ি গুলো তার ভীষণ পছন্দ হয়েছে। এমনিতেই চুড়ি পাগলি বলে আবিদ সবসময় তাকে ডাকে। তার কাছে থাকা বেশিরভাগ চুড়িগুলো আবিদের দেওয়া। আজ থেকে পূর্ণও দিবে। এই ভেবে যেন কিশোরীর মনে আনন্দের শেষ নেই।
আয়েশা নুজহাত, বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে। ছোটো একটি ভাইও আছে। বাবা একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করে এবং মা স্কুল টিচার।
দেওয়ান আবিদ। বাবা মায়ের আদরের একমাত্র ছেলে। বাবা এনজিও তে চাকরি করে। নুজহাত এবং তার ছোটো বেলা থেকেই বন্ধুত্ব। তবে নুজহাত তাকে প্রিয় বন্ধু ভাবলেও সে নুজহাতকে অন্য দৃষ্টিতেই দেখে এসেছে। কখনো বুঝতে দেয় নি । বন্ধুত্ব ভেঙে যাওয়ার ভয়ে নিজেও কখনো বলে নি।
ইশতিয়াক আহমেদ পূর্ণ। মাত্র ইন্টার প্রথম বর্ষে পড়ছে। বাবা একজন উকিল। বড় দুটো বোন আছে তবে তাঁদের বিয়ে হয়ে গেছে।
আজ কয়েকমাস ধরেই নুজহাতকে ফলো করছিল। তার মতে সে নুজহাতকে ভালোবাসে। সে নুজহাতের থেকে দুই বছরের সিনিয়র। অনেকটা সাহস সঞ্চয় করে আজ প্রপোজ করেই দিলো।
*
#রংধনুর_মিল
#পর্বঃ০১ (সূচনা)
#মাহিয়া_মুন
“আসসালামু ওয়ালাইকুম ❤️ নিয়ে আসলাম নতুন আরো একটি গল্প আমার পাঠক পাঠিকাগণের মাঝে। কেমন হয়েছে জানাবেন। আর সবার কমেন্ট করা যেন দিন দিন বিলুপ্তির পথে 🙂😒😒😒)