#তোর_শহরে_প্রেম
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব -৭
চিৎকারের আওয়াজ শুনে তানিম, বের হয়ে আসলো, চিৎকারের আওয়াজটা অনুর কেবিন থেকেই এসেছে।
তানিম সেদিকেই যাচ্ছে।
ডক্টরের চেম্বার থেকে বের হয়ে তন্ময় অনুর কাছে আসলো, অনুকে এখন তার বিন্দু মাত্র সহ্য হচ্ছে না
অনুর হাতের স্যালাইনটা শেষের দিকে, সেটাকে টেনে খুলে ফেললো।
কিছু সময় পূর্বেই অনুর জ্ঞান ফিরেছে।কাতর স্বরে বললো, কি করছেন প্লিজ আমি ব্যথা পাবো! আমাকে একটু সময় দিন
কে শোনে কার কথা অনুকে কোলে তুলে নিয়ে বলে, তোমাকে আজ এক্ষুনি কাজি অফিসে নিয়ে বিয়ে করবো।এই তন্ময় হাসানের মুখের কথার কোন নড়চড় হয়না আর হবেও না।
– অনু চিৎকার করে বলে প্লিজ এমন করবেন না। আমি বললাম তো পুরো,ভার্সিটির সবার সামনে আপনার কাছে ক্ষমা চাইবো।
কিছু করতে হবে না তোকে! তুই সেদিন আমার গালে থাপ্পড় দিয়েছিলি আমার মুখে থুথু নিক্ষেপ করেছিস। তোকে আমি এমন শিক্ষা দেবো। তুই সারাজীবন মনে রাখবি। বলেই হাঁটা শুরু করলো।
হালিমা বেগম চোখের পানি মুছে পিছু ফিরে দেখেন সাজু মিয়া দাঁড়িয়ে আছে। নিম্ন স্বরে বলে, আপনি কখন আসলেন?
– এই যতক্ষণে তোমার মেয়ের চিন্তায় বিভোর ছিলে। তা তোমার এই চোখের পানির মূল্য তার কাছে আছে?
-এভাবে বলছো কেনো! তুমি জানো মেয়েটা আমাদের কত ভালোবাসে!
– ভালোবাসা এসব আমি বুঝিনা। যে মেয়ে বাপের অবাধ্য হয়ে শহরে চলে যায়। সে মেয়ে আর যা হোক ভালোবাসতে পারেনা।
– আপনে ভুল বুঝতাছেন মেয়েটারে। না জানি মেয়েটা আমার কি অবস্থায় আছে?
– হুনো হালিমা আজকে শাহীন মুন্সি কইলো,শহরে যেই মেয়েরা থাকে তাগোরে গ্রামে কেউ ভালা চোখে দেহেনা। বুঝবার পারছো কি কইতে চাইছে!
– এহন এসব কথা ভিত্তিহীন তা যে যাই বলুক আমার মেয়ের প্রতি আমার বিশ্বাস আছে।
– তোমার বিশ্বাস আর তোমার মেয়ে দু’টোর কোন কিছুই আমার বাড়িতে ঠাঁই পাবে না। আজ থেকে মনে করমু আমার কোন মেয়ো আছিলো না।
– হালিমা বেগম কেঁদে দিয়ে বলেন আপনার সংসারে আসার পর কোনদিন আপনার কথার অবাধ্য হই নাই তয় আজকে আপনের কথা আমার কলিজা ছিদ্র করে দিছে। মাইয়া না হয় ভুল করছে তাই বইলা এতো বড় কথা আপনি কইতে পারেন। আল্লাহ না করুক যদি মাইয়াডার কোন বিপদ হয়। আমি আপনারে মাফ করতে পারুম না।বলেই শাড়ির আঁচলে মুখ ঢেকে কাঁদতে লাগলো। সাজু বেপারি ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন। তার মনেও এখন আতংক বিরাজ করছে কি বলতে কি বলে ফেললেন। যদি সত্যি মেয়েটার কোন বিপদ হয়! মুখে যত যাই বলুক মেয়েটাকে যে তিনি নিজেও অনেক ভালোবাসে।
সারা দূর আকাশের পানে তাকিয়ে আছে, তার মনে যে আছে তাকে কি আদৌও মেনে নেবে তার পরিবার! চশমার কাঁচের উপর ল্যামপোস্টের আলো এসে পরছে চোখে জমা হয়েছে অযাচিত অশ্রু। যাকে কখন বলা হয়নি মনের কথা তার জন্য মনে কেন এমন ব্যথা। হঠাৎ চোখ গেলো নিচে, এইতো মানুষটা হয়তো কোন বাসা থেকে টিউশন করে পায়ে হেঁটে ফিরছে ঘামে ভেজা শার্টটা শরীরে লেপ্টে আছে, চোখের চশমাটা পুরোনো হয়ে গেছে। কে বলবে এই রাজপ্রাসাদের মতো বাড়িতে থেকে আপনার মতো একজন সাধারণ মানুষকে আমার পছন্দ হয়েছে। কি আছে আপনার মাঝে! একবার কি আপনার সাথে কথা বলে দেখবো। আপনি কি মেনে নেবেন আমায়! নাকি বলবেন এসব আমার আবেগের খামখেয়ালি। আপনি কি এই খামখেয়ালীর ভীরে আমার ভালোবাসাটুকু খুঁজে নেবেন রায়হান ভাই। শুধু একবার হাতটা ধরে দেখুন এ জীবনে সে হাত আর ছাড়বো না।
কি মনে করে রায়হান আজ উপরের দিকে চোখ তুলে তাকালো। সারার চোখ থেকে এক ফোঁটা অশ্রু রায়হানের গালে পরতেই রায়হান আরো ভালো করে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে মেয়েটা কি তাকে ইচ্ছে করে পানি ছিটিয়ে দিচ্ছে? না ভালো করে তাকিয়ে বুঝতে পারলো মেয়েটি কাঁদছে। নিচ তলা আর দোতলার দূরত্বের চেয়ে এ শহরে ধনি গরিবের দূরত্ব বেশি। একবার ডেকে জিজ্ঞেস করতে চাইলো তুমি কাঁদছো কেনো। পর মূহুর্তে নিজের মতো করে হেঁটে চলে গেলো। ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছে এই মেয়েকে। তার মা আগে এই বাড়িতেই কাজ করতো। সেই সুবাদে এই বাড়িতে অনেক আসা যাওয়া হয়েছে।
ইদানীং তার মায়ের শরীর ভালো না থাকায় এ বাসায় কাজ করতে আসা হয়না। নিজের টিউশনের টাকা দিয়ে কোনমতে তাদের সংসার চলে যায়। সংসার বলতে তো এই মা, ছেলে।কত কষ্ট করেতার মা তাকে এই পর্যন্ত নিয়ে এসেছে। নিজে খেয়ে না খেয়ে তাকে পড়া লেখা করিয়েছে। আনমনে হেঁটে যাচ্ছে রায়হান
কেউ যে তার চলে যাওয়ার পানে তাকিয়ে তার মনের রাজ্যে পৌঁছনোর রাস্তা খুঁজছে। সে বিষয়ে বেখবর।
রায়হান সারার দৃষ্টির আড়াল হতেই
সারা রুমে এসে দরজা জানালা সব বন্ধ করে দিলো।বালিশে মুখ গুজে কাঁদছে। আর ভাবছে। মানুষে, মানুষে কেনো এতো বৈষম্য। কেনো ধনী গরীবে প্রেম হতে পারেনা। কেনো সব কিছু টাকা দিয়ে বিচার হয়। কেনো মূল্য দেয়না কেউ হৃদয়ের সুপ্ত ভালোবাসাকে?
তন্ময় অনুকে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে অনু চিৎকার করছে কেউ তার আওয়াজ শুনতে পারছেনা। কাজী অফিসে এসে অনুকে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে নিজেও বসে পরলো, সাথে উপস্থিত তন্ময়ের বন্ধুরা। অনু কখন থেকে কেঁদে কেঁদে বলছে, প্লিজ আমার সাথে এরকম করবেন না।দরকার পরলে আমি চলে যাবো এ শহর ছেড়ে। কেনো করছেন এমন কেনো? তন্ময় অনুর মুখ চেপে ধরে বলে মনে করে দেখো সেদিনের কথা। অনু জোড়ে জোড়ে চিৎকার করছে প্লিজ আমাকে ছেড়েদিন প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন।
তন্ময় সবে মাত্র হসপিটালের ক্যান্টিন থেকে কফি নিয়েছিলো অনুর চিৎকার শুনে কফি ফেলে দৌঁড়ে চলে আসলো।
তন্ময়ের আগেই সেখানে তানিম উপস্থিত হয়।তানিম যেয়ে দেখে নার্স অনুকে বলছে ম্যাম আপনার কি হয়েছে?এভাবে কয়েকবার বলার পর অনু চোখ খুলে তাকায় কিছু সময় আশেপাশে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে সে কোথায়। হসপিটাল বুঝতে পেরে জোড়ে নিশ্বাস ছেড়ে বলে,আমি এখানে কেনো? আমার কি হয়েছিলো?
তানিম এগিয়ে এসে বলে মিস অনাহিতা আপনি অসুস্থ হয়ে পরেছিলেন তাই আপনাকে হসপিটালে আনা হয়েছে।
– আমি বাসায় যাবো।
– রিলাক্স আপনাকে আমি নিজে দিয়ে আসবো। আপনি যাস্ট ফাইভ মিনিট অপেক্ষা করুণ আমি ঔষধ নিয়ে আসছি!
– অনু মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।
তন্ময় তখনো দাঁড়িয়ে কেবিনে। তানিম চলে যেতেই। অনু একটু আগের ঘটনা ভেবে আঁতকে উঠল। ভাগ্যিস এটা স্বপ্ন ছিলো। কি ভয়ংকর স্বপ্ন।
তন্ময় বললো, তোমার প্রবলেম কি বলো তো? যেখানে যাও সেখানেই প্রবলেম ক্রিয়েট করো।তোমার নাম অনাহিতা না রেখে মিস প্রবলেম রাখা উচিৎ ছিলো!
যেদিন থেকে আমার লাইফে এন্ট্রি নিয়েছো সেদিন থেকে আমার লাইফের শান্তি টাটা বায় বায়।
– আমি কি করেছি সব দোষ তো ওই জেনি -না মেনি তার।
– আহারে কঁচি খুকি তার কোন দোষ নেই। খুঁজে খুঁজে তোমার জেনির সাথেই লাগতে হবে কেনো।
– সে অন্যায় করছিলো আমি প্রতিবাদ করেছি তাতে দোষটা আমার না তার?
– দেখো মেয়ে, অতো দোষ, গুন আমি জানতে চাইনা তুমি আমার সাথে যা করেছো তার শাস্তি হিসেবে তোমাকে দু’মাস এই তন্ময় হাসানের বউ হয়ে থাকতে হবে মানে হবেই!
তানিম পেছন থেকে বলে, আগে মেয়েটাকে সুস্থ হতে দে তারপর পর না তোর বউ হয়ে থাকবে।
তন্ময়ের চেহারা কেমন ফেঁকাসে হয়ে গেছে। সব শুনে ফেললো না তো তার ভাই!তাহলে তো এই বিয়ে কিছুতেই হতে দেবে না। যেই ন্যায়পরায়ণ মানুষ। থমথমে পরিবেশ দেখে তানিম বলে, কিরে মনে হচ্ছে সত্যিটা জেনে তোর মস্ত বড় কোন ক্ষতি কে ফেললাম!
#চলবে