#অবেলায়_ভালোবাসি
#লেখনিতে_সাবরিন_জাহান
#পর্ব_০৬
আয়ানদের ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আছে আয়ুশী!ওদের বাড়িটা ওর বেশ লেগেছে!মূলত বেলাল আহমেদকে দেখবে বলেই স্বপরিবারে এখানে আসা।নাহার বেগম নাস্তা বানাচ্ছেন আর মরিয়ম সাহায্য করছে!আর বেলাল আহমেদ নিজের রুমে। মোশাররফও সেখানেই।মাঝখানে বাদ পড়লো আয়ুশী!সে যেখানেই যাচ্ছে হয় বসে থাকা লাগছে নয় তাদের গল্প শুনা লাগছে।বাবা আর আঙ্কেল নিজেদের আড্ডায় ব্যাস্ত।মা আর আন্টিও সাংসারিক আলাপে।এখানে ওর কোনো অস্তিত্ব যে আছে সেটাই মনে হয় কেউ টের পাচ্ছে না।এর আগেও এখানে একবার এসেছিল।কিন্তু তখন আয়ান ছিল না।দেশের বাইরে ছিল ও।আগেরবারের অভিজ্ঞতা থেকে এরপর যতবারই ওর মা বাবা এসেছে ,ও আসেনি!কারণ ওর গিয়ে কোনো লাভই নেই।এবার আসার কারণ এক মাত্র আয়ান!সামনে পরীক্ষা!তাই ভার্সিটি অফ।তিনদিন পর এক্সাম! আয়ানকে দেখার লোভে চলে আসলো ও।নিজের কর্মকাণ্ডে নিজেই বিরক্ত ও।আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখছে।যদি পেয়ে যায় আয়ানকে।কিন্তু ফলাফল শূন্য।হয়তো বাসায় নেই।এভাবে আর কতক্ষন বসে থাকা যায়?উঠে রান্নাঘরে গেলো। মা আর অন্টি এখনও নিজেদের আলাপ নিয়ে ব্যাস্ত।ওর উপস্থিতি যেনো টেরই পাচ্ছে না।গলা ঝেড়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইলেও ব্যর্থ হলো।রাগ উঠলো ওর।আরে মেয়েকে যে এনেছে সেই খেয়াল কি নেই?
“আম্মু,আমি বাসায় গেলাম!”
আয়ুশীর কথায় দুইজনার দৃষ্টি ওর উপর পড়লো।
“কেনো?”
“সামনে পরীক্ষা!অন্তত পড়তে হবে…”
“তো আসলি কেনো আমাদের সাথে?”
ভ্রু কুঁচকে নিলো আয়ুশী।মাঝে মাঝে ভেবে পায় না,এই আম্মু কি বুঝে না একা একা ওদের আড্ডা দেখার চেয়ে বাসায় বসে ওর বিছানায় গড়াগড়ি খাওয়া বেশ ভালো। নিহাত একটু আজগুবি ভাবনার জন্য চলে এসেছে।তাই বলে এভাবে বলবে?
“তো কি করবো?এমনিতে বাসাতেও কাজ নেই। এখানে এসে ভাবলাম মজা হবে।কিন্তু তোমরা তোমাদের নিয়েই ব্যাস্ত। এর চেয়ে ভালো বাসায় গিয়ে পড়ি!”
নাহার হাসলেন।আয়ুশীর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,”ইস,মেয়েটার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম!আচ্ছা কিছু খাবে তুমি?”
আয়ুশী অসহায় চোখে তাকালো। ও কি খাওয়ার জন্য পাত্তা খুঁজতেছে?
“দাড়াও আমি এই কফিটা দিয়ে আসি,তারপর তোমাকে কিছু দিচ্ছি!”
“আণ্টি!আমার কিছু লাগবে না।এমনেই বোর হচ্ছিলাম!”
মরিয়ম ফট করে বলে উঠলেন।
“তো কাজ কর,এই কফি দিয়ে আয়।”
“আরে না ও কেন যাবে?”(নাহার)
“আরে ভাবি বোর হচ্ছে তো , একটু কাজ করলে কেঁটে যাবে!তাই না আয়ু!”
আয়ুশী হতভম্ভ, এখানেও কিভাবে কাজে লাগানো যায় ভেবে নিলো ওর মা!এখন তেজও দেখাতে পারবে না!যতই হোক,এভাবে বে’য়া’দ’বে’র মতো না করতে পারবে না।
“হ্যাঁ আণ্টি,আমি পারবো।আমায় দেও।”
অপেক্ষা না করেই কফির ট্রে হাতে নিলো ও।
“আঙ্কেল কফি খায়,জানতাম না তো!”
“এটা তো তোমার আঙ্কেলের জন্য না!”
“বাবাও তো খায় না!”
মাঝে মরিয়ম বলে উঠলেন,”আরে বাবা এটা আয়ান এর জন্য,ওকে দিয়ে আয় যা!”
চোখ বড় বড় করে তাকালো ও।নাহার ওকে আয়ান এর রুম দেখিয়ে দিলো। ঘোরের মাঝেই ট্রে হাতে বের হলো ও।দোতলা বাড়ি।নিচে কর্নারে একটা ঘর,আর একটা স্টোর রুম! ডাইনিং, ড্রয়িং একসাথে!
উপরে তিনটা রুম ,তার মাঝে দ্বিতীয় রুমটা আয়ানের।সব শেষে উপরে ছাদ।আয়ুশীর ছোট থেকেই স্বপ্ন এমন একটা বাড়ি হবে ওদেরও।কিন্তু অনেক সময় স্বপ্ন থাকলেও,সেটা পূরণ হয় না।বাবা বেসরকারি অফিসে কাজ করে।কখনো অভাব বুঝতে না দিলেও,এত সামর্থ্য ওদের হবে না। সিড়ির কাছে এসে ঘোর ভাঙলো ওর।হৃদ স্পন্দন অস্বাভাবিক ভাবে বেড়েই চলছে।কিছুটা ভয়,কিছুটা কোনো কিছু পাওয়ার আকাঙ্খায়!ধীরে ধীরে উপরে গেলো ও।আয়ানের রুমের সামনে দাড়াতেই দেখলো দরজা আবজানো।তাও বিনা অনুমতিতে কারো ঘরে ঢুকা ঠিক হবে না।বেশ কয়েকবার নক করেও রেসপন্স পেলো না ও।কি করবে ভেবে না পেয়ে আবার নিচে চলে এলো।
“রুমে তো কেউ নেই মনে হয়!”
“সেকি! আয়ান আছে তো!”(নাহার)
“দরজা আবাজানো ছিল।নক করেছি! নো রেসপন্স!”
“ও মনে হয় গোসলে! তুমি রেখে আসো!দাড়াও!”
বলেই একটা মিনি পিরিচ দিয়ে কফি ঢেকে দিল।
“ওর রুমে ঢুকে বেড সাইড টেবিলে রেখে দিও!”
“বিনা অনুমতিতে ঢোকা ঠিক হবে?”
“আমি তো দিলাম ই অনুমতি!”
আয়ুশী মাথা নেড়ে চলে গেলো।নাহার হেসে বললো,”আপনার মেয়ের স্বভাব তো দারুন!”
মরিয়ম হাসলো।এই নিয়ে আরেক গল্প শুরু হলো ওদের।
আয়ুশী আবারও দরজায় টোকা দিল।যদি বের হয়…কিন্তু নো রেসপন্স!তাই ভিতরে ঢুকে গেলো ও।বেড সাইড টেবিলে কফি রেখে বেরিয়ে যেতে নিলেও একটু রুম ঘুরে দেখার শখ জাগলো ওর।বেশ সুন্দর করেই সাজানো রুম! ব্যালকনিতে চলে গেলো ও। গ্রীল বিহীন ব্যালকনি ওর অনেক ভাল্লাগে। কিন্তু ওদের ভাড়া বাসায় এমন ব্যালকনি নেই।কিন্তু অতটাও খারাপ না! এখান থেকে নিচে ওদের করা ছোট বাগান দেখা যায়।ইস কি দারুন দেখতে সব!লম্বা শ্বাস নিলো ও।ডান পাশেই আরেক রুমের ব্যালকনি দেখা যায়!আয়ুশী খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব দেখতে লাগলো।আগে এখানে একবার এসেছিল।এভাবে ঘুরে দেখা হয়নি!না,এবার যাওয়া উচিত ভেবেই ব্যালকনির দরজার কাছে এসেই চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। আয়ান সবে মাত্র বেরিয়েছে।পরনে শুধু টাওয়াল। হাত দিয়ে মাথা ঝারছিল,কিন্তু আয়ুশীকে দেখে থমকে গেলো।একবার নিজের দিকে তো একবার ওর দিকে তাকালো।দুইজনার কেউই এই পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত ছিল না!আয়ুশী কুল কিনারা না পেয়ে চিৎকার দিতে যাবে তার আগেই আয়ান ফট করে এসে ওর মুখ চেপে ধরলো!
“মিস ঝা’মে’লা!ঝা’মে’লা না লাগালে কি তোমার শান্তি হয় না?”
আয়ুশী ভ্রু কুঁচকালো।ওকে ঝা’মেলা বললো? ও ঝা’মেলা লাগায় নাকি?
“চিৎকার করতে যাচ্ছিলে কেনো?বুঝতে পারছো এভাবে চিৎকার করলে সবাই কি ভাববে?দেখো মুখ ছাড়ছি তোমার,ডোন্ট শাউট!”
আয়ুশী চোখ দিয়ে আশ্বস্ত করলো। আয়ান ওর মুখ ছেড়ে দিতেই ও উল্টো ঘুরে তাকালো!
“তুমি এখানে কি করছো?”
“আণ্টি বললো আপনাকে কফি দিয়ে আসতে!”
“আণ্টি কে?”
“আপনার মা!”
“তো তুমি এই বাড়িতে কি করছো?”
“বেড়াতে…”
বলতে বলতে ঘুরে তাকালেও আবারও উল্টো ঘুরে চোখে হাত দিল।
“আঙ্কেলকে দেখতে এসেছিলাম!আমি বাইরে যাবো!আপনি সরুন সামনে থেকে!”
“তো যাও ,আমি কি তোমার পথ আটকে রেখেছি নাকি!”
আয়ুশী আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে একটু দেখে বললো,”আপনি আবার ওয়াশরুমে যান!লজ্জা করে না?একটা মেয়ের সামনে এভাবে দাড়িয়ে আছেন?”
এতক্ষণে বুঝলো আয়ুশীর সমস্যা , সরে যেতে নিয়েও ভাবলো আরেকটু মজা নেয়া যাক।এই ভেবে আয়ুশীর দিকে এগিয়ে গেলো।এদিকে আঙ্গুলের ফাঁকে আয়ান কে এভাবে আসতে দেখে লাফ দিয়ে দুই কদম পিছিয়ে গেলো ও।কান্না কান্না ভাব করে বললো,”আমি নিচে যাবো!”
আয়ান হাসি চেপে রেখে বললো,”যাও মানা কে করেছে?”
বলেই আরেকটু এগিয়ে আসলো।আয়ুশী এবার আর কুল কিনারা পেলো না।মুখে হাত দিয়ে চোখ মুখ ঢেকে রাখলো। আয়ান ওর কাজে মুচকি হেসে রশিতে শুকাতে দেয়া টিশার্ট নিয়ে পড়ে নিল।
“তো মিস ঝা’মে’লা!এখানেই থাকার প্ল্যান করছো নাকি!”
আস্তে আস্তে হাত সরিয়ে দেখলো আয়ান সামনে নেই। কোথায় আছে এত দেখার ইচ্ছা জাগলেও পাত্তা না দিয়ে এক দৌড়ে বেরিয়ে এলো।ওর কাণ্ডে আয়ান শব্দ করে হাসলো!
এদিকে এক দৌড়ে সোফায় এসে বসলো আয়ুশী।ভয় ,লজ্জা সব মিলিয়ে পরিস্থিতি হাতের বাইরে।আরেকটু থাকলেই হার্ট অ্যাটাক করতো।উঠে গিয়ে আবার টেবিল থেকে পানি নিলো।এক নিঃশ্বাসে পুরো এক গ্লাস পানি শেষ করলো।এখন কিছুটা শান্ত।একটু আগের কথা মনে পড়তেই বেশ লজ্জা লাগলো ওর।মনে মনে আয়ানকে নি’র্ল’জ্জ খেতাব দিতে ভুল হলো না ওর।উঠে আবার রান্নাঘরে গেলো।মরিয়ম নাহার কে হাতে হাতে সাহায্য করছে আর গল্প তো আছেই।মরিয়ম আয়ুশীকে দেখে বললো,
“এতক্ষণ লাগে কফি দিতে?”
“আসলে ঐ বারান্দা দিয়ে নিচের বাগান দেখতে ভালো লাগছিলো। তাই একটু দেখছিলাম!”
“তোমার গাছ ভালো লাগে?”(নাহার)
আয়ুশী উপর নিচ মাথা নাড়লো।
“তাহলে ছাদে যাও,দেখবে আরো ভালো লাগবে!”(নাহার)
“দরকার কি ভাবি,আয়ু তুই বস গিয়ে ।”
“আহ ভাবি,থাক না।একা একা আর কি করবে!তুমি যাও!”
আয়ুশী হাসি মুখে আবার উপরে গেলো। আয়ানের রুমের কাছে আসতেই বুঝতে পারলো কারো সাথে কথা বলছে।মনে মনে বির বির করলো,”আমাকে ঝা’মে’লা বলা?নিজে কি?মিস্টার খা’রু’শ!”
বলেই ভেং’চি কেঁটে ছাদে গেলো।ছাদে যেতেই ওর চোখ ছানাবড়া।পুরো একটা মিনি বাগানের মত করে সাজানো। ছাদের চারপাশের ভিন্ন ভিন্ন ফুলের গাছ।ঠিক মধ্যখান বরাবর ভিন্ন ভিন্ন গোলাপ গাছ।বেশ সুন্দর করেই সাজানো।আয়ুশীর ভীষণ মনে ধরলো।কবে যে সেও নিজের বাড়িতে এরকম একটা রূপ দিবে…..
আয়ান নিচে নামলো।খালি কফির মগ রান্নাঘরে রাখতে গেলো।মরিয়ম কে দেখে সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করলো।কিছুক্ষণ কথা বলার মাঝেই নাহার বলে উঠলেন,”আয়ান,আয়ুশীকে আমাদের বাগানটা দেখিয়ে নিয়ে এসো তো।”
“আয়ুশী?”
“হ্যাঁ,তোমার মরিয়ম আন্টির মেয়ে ও!”
এতক্ষণে ওর খেয়াল হলো। ও তো ভুলেই যাচ্ছিলো আয়ুশী কেনো এ বাড়িতে।
“কোথায় ও?”
“ছাদে!”
আয়ান ছাদে গেলো।যদিও ইচ্ছে নেই,তবে মায়ের কথা ফেলার সাধ্য ওর নেই।ছাদের দরজায় দাড়িয়ে আয়ুশীর কাণ্ড দেখছে ও।আয়ুশী শত চেষ্টা করছে ফুল গুলো নিয়ে সুন্দর পোজে ছবি তোলার কিন্তু পারছে না।কেউ তুলে দিলে হয়তো সুন্দর হতো।এদিকে আয়ুশীর মুখভঙ্গি দেখে আয়ান ঠোঁট চেপে হাসলো।অতঃপর নিজেকে সামলে ভিতরে গেলো। আয়ানকে দেখে আয়ুশী ছবি তুলা বাদ দিয়ে শটান হয় দাড়ালো।
“দেও আমি হেল্প করে দিচ্ছি!”
“না লাগব না!”
“ওকে!”
আয়ুশী অবাক হলো।ভাবলো যদি আরো দুই তিনবার বলে তাহলে হ্যাঁ বলবে।কিন্তু এ দেখি একবার বলেই মুখ ঘুরিয়ে নিল।
“কিছু বলবে?”
“মানুষ ভদ্রতার খাতিরে না বলে,তাই বলে একটু জোর করবেন না?”
“সরি,আমার মাঝে এত ফর্মালিটি নেই।”
বলেই ফোন ঘাটতে লাগলো।আয়ুশী মুখ ভার করে রইলো।আরো কয়েকবার চেষ্টা করেও পারলো না।উপায় না পেয়ে আয়ানের কাছে গেলো।
“স্যার!”
আয়ান ভ্রু কুঁচকে তাকালো।আয়ুশী ইনোসেন্ট ফেস করে বললো,”তুলে দিন না!”
“তুমি ই তো বললে লাগবে না!”
“এখন তো বলছি লাগবে!”
“বাট আমি পারবো না।”
আয়ুশীর মন খারাপ হলো।ফোন হাতে চলে নিবে তখন আয়ান ওর ফোন নিয়ে নিল।
“যাও দাড়াও!”
হাসি ফুটলো ওর মুখে। চট জলদি পোজ নিয়ে দাড়িয়ে গেলো ।ওর খুশি দেখে আয়ান হালকা হাসলো।অতঃপর বেশ কিছু ছবি তুলে দিলো। হটাৎ ই আয়ান ছবি তুলা বাদ দিয়ে একটা কাঠগোলাপ গাছ থেকে সাদা কাঠগোলাপ ছিঁড়ে আয়ুশীর কানে গুঁজে দিলো।মুহূর্তেই আয়ুশীর শরীরে কারেন্ট বয়ে গেলো মনে হয়।
“নাও ইউ লুক পারফেক্ট!”
আয়ান আয়ুশীকে পোজ দিতে বললেও আয়ুশীর হেলদোল নেই।কানে গুঁজে থাকা ফুলে হাত দিয়ে,লজ্জা মাখা চেহারায় নিচে তাকিয়ে রইলো ও।এদিকে আয়ান এটাকেই পোজ ভেবে ছবি তুলে নিলো।আয়ানের চোখ আটকে গেলো ছবিটির দিকে,কালো গোল কামিজ পরিহিত ,খোলা চুলে কাঠগোলাপ গুঁজে রাখা রমণীর লজ্জামাখা মুখশ্রী ওর মনে কিসের যেনো ঝড় তুললো।তখনই নিচে ডাক পড়ে আয়ুশীর।ফোনের কথা বেমালুম ভুলে ছুট লাগালো নিচে।এদিকে আয়ান তখনও দাড়িয়ে ।কি ভেবে যেনো ছবিটা নিজের ফোনে নিয়ে নিলো।কারণটা ওর অজানা!একদমই অজানা….
#চলবে# অবেলায় ভালোবাসি
# লেখনিতে সাবরিন জাহান
#পর্ব-৭
মধ্যরাত! চারদিক শুনশান। ঘুমন্ত পুরী এই শহরে যারা জেগে আছে তাদের মধ্যে একজন আয়ান। ঘুম যেনো এর চোখে আসবে না বলে পণ করে রেখেছে। চোখ বন্ধ করলেই আয়ুশীর মুখশ্রী ভেসে ওঠে। আয়শীর লজ্জ মাখা মুখ বারবার মনে পড়ছে। ভেবে পাচ্ছে। না, এমন কেনো হচ্ছে বুঝতে পারছে না ও। সব মিলিয়ে অসহ্য লাগছে ওর, গ্যালারিতে গিয়ে কাঙ্খিত ব্যাক্তির ছবি বের করলো। নিজে নিজেই বললো,
” কেন এমন হচ্ছে ইহরা? আমার তো শুধু তোমাকে নিয়ে ভাবা উচিত। তাহলে কেনো এমন অনুভূতি হচ্ছে ?”
আয়ান আবার নিশ্চুপ। আবার বলতে লাগলো, “আমি এ কোন ঝড়ে উড়ছি? বড্ড অসহায় লাগছে নিজেকে।”
আবারও নিরবতা, অতঃপর চোখমুখ শক্ত করে বললো, “উহু, আমি
ভাববো না ওকে। আমার লাইফ জুড়ে শুধু তুমি থাকবে ইহরা! শুধুই তুমি।”
পরদিন রেস্টুরেন্টে বসে আছে ইভা। মুখে তার রাজ্যের বিরক্তি। মায়ের কথা রাখতে এখানে এলেও, ওর মূল উদ্দেশ্য বিয়ে ভাঙা। কিছুক্ষণ বাদেই এলো কাঙ্খিত ব্যাক্তি। ঘর্মাক্ত মুখশ্রীর মাঝে মুচকি হাসিটা বেশ নজর কাড়া, যেকোন মেয়েই এই মুহুর্তে প্রেমে পড়তো, কিন্তু ইভা কোনোভাবেই সেইটা চাইছে না বলে চোখ সরিয়ে নিলো।
” মিস ইভা?”
“জি।”
“ওহ সরি ফর লেট।” বলেই সৌজন্যমূলক হাসলো।
ইভা বিরক্ত হলো, এখন কি ভালো সাজা হচ্ছে। অথচ যৌতুক চায় কি সহজে!ইভাকে চুপ দেখে লোকটি বললো,
“কি অর্ডার দিবো ?”
” কিছু না..”, ইভার সোজা সাপ্টা উত্তর.
“রেস্টুরেন্টে আছি, কিছু না অর্ডার দিলে কেমন হবে?”
“আপনি দিন না আপনার অর্ডার।”
” আমি একা বসে বসে খাবো, আর আপনি নজর দিবেন তা কেমন দেখায় না?”
“কি বললেন আপনি?”
” অর্ডার প্লিজ । ”
ইভা কটমট করে তাকালো মেনু কার্ড হাতে নিয়ে একটা জুস অর্ডার দিলো ওর দেখাদেখি লোকটিও জুসই অর্ডার করলো।
” আমার নাম জানেন ?”
“কেনো আপনি কি সেলিব্রেটি নাকি যে আপনার নাম জানবো?”
লোকটি থতমত খেলো মেয়ে তো নয় যেনো লাল মরিচের গুঁড়ো। আবার গরম তেলও বলা যায়। পানি পড়লে যেমন তেল হ্যাত ছ্যাত করে উঠে।এমন হাজারো নাম দিয়ে হেসে বললো,
“আমি জুনাইদ, জুনাইদ নীরব …..”
আর কিছু বলার আগেই ইভা বলে উঠলো,
” আপনি সরকারি চাকরি, করেন, বড় বাড়ি আছে। আপনি বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। আর কিছু?”
“সব জানেন, তাহলে …”
ওকে আবার থামিয়ে ইভা বললো বললো,
“আমি কি একবারও বলেছি, কিছু জানিনা?”
ছেলেটা এবার বেশ বিরক্ত হলো।বির বির করে বললো, “ধানিলঙ্কা একটা।”
” কিছু বললেন ?’
“আমি সোজাসাপ্টা কথা পছন্দ করি।”
“তো?”
“অবুঝের মতো না বিহেভ করে বলে ফেলুন আপনার আমাকে পছন্দ না..”
“বেশ, আপনায় আমার পছন্দ না!”
“কারণ ? ”
“আর যাই হোক, সেখানে যৌতুকের কথা বিয়ে ঠিক করার আগে হয়, সেখানে আমি যেতে চাই না।”
” যৌতুক ?”
“এমন এ ভাব করছেন যেনো জানেনই না কিছু ..”
“সিরিয়াসলি, আপনার কথা বুঝতে পারছি না আমি।”
“বেশ, আমি বলছি। মেয়ে দেখার আগেই আপনার ফ্যামিলি আগেই দেনার হিসেব কষলেন। এক কথায় যৌতুক। ”
জুনাইদ এখন সম্পূর্ণটা বুঝতে পারলো। মুচকি হেসে বললো,
“আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে।”
“মোটেও না।”
যৌতুকের কথা উঠেছিল ঠিকই, কিন্তু সেটা আমার ফুঁফি বলেছে। আমার মা-বাবা না। ইনফ্যাক্ট ওরা বাসায় ফুফিকে বুঝিয়েছে এই ব্যাপারে। ভেবেছিল বিয়ে ঠিক হয়ে গেলে ওরা এমনেই মানা করে দিবে এই ব্যাপারে…. ইভা হতভম্ভ।
” কি আপনি সত্যি বলছেন তো?’
জুনাইদ হেসে বললো, “সত্যি!”
ইভার অনুশোচনা হলো লোকটির ব্যবহারই বলে দিচ্ছে সে মিথ্যে নয়। জুনাইদ ওর অবস্থা বুঝতে পেরে বললো, ” সব সরকারি চাকুরীজীবীরা খারাপ হয় না।”
” আই এম সরি! না জেনে এভাবে বলাটা আমার উচিত হয়নি।”
জুনাইদ আবার নিজের মন ভোলানো হাসি উপহার দিলো ।সামনে দুটো টিকিট মেলার রেখে বললো, ” এবার মত দিন।”
“মানে ?”
“মানে আমায় পছন্দ হলে এখন মেলায় যাবে।। আর না হলে বাসায়! এখন আপনি টিকিট তুলবেন, না বাসায় যাবেন, ডিপেন্ডস অন ইউ..”
ইভা বেশ কিছুক্ষণ ভাবলো। জুস শেষ করে অতঃপর মুচকি হেসে বললো,
” মেলায় যাওয়া বেটার ”
জুনাইদত্ত বিনিময়ে মুচকি হাসি উপহার দিলো ।
পরীক্ষা প্রায় শেষের দিকে। পরীক্ষার এই কয়দিন আয়ুশীর সাথে আয়ানের একবারও দেখা হয়নি। ইদানীং আয়ুশী কেমন মনমরা হয়ে থাকে। ব্যাপারটা ইভা, সীমা বেশ ভালোই বুঝতে পারে। কিন্তু ওদেরই বা কি করার। ইভার আর জুনাইদের প্রেম ভালোই চলছে। সব কিছুই ঠিকঠাক, কিন্তু আয়ুশীর মনে মেঘের ছায়া। আজ শেষ পরীক্ষা। পরীক্ষা শেষে তিনজন আলাপ করতে করতে বের হচ্ছে । তখনই আয়ানের দেখা পেলো ওরা আয়ান কিছু কাগজ দেখতে দেখতে আসছে। আয়ুশীর মুখে এতদিনে হাসি ফুটলো। সামনে এগিয়ে যাবে তার আগেই নিচ ভালোমতো দেখে নিলো, না হোচট খাওয়ার বা স্লিপ খাওয়ার কোনো চান্সই নেই। তাই দেখে সীমা বাঁকা হাসলো। আয়ুশী এগিয়ে যেতে নিলেই সীমা এক পা ওর সামনে দিলো। ফলাফল ল্যাং খেয়ে আয়ুশী পড়ে যেতে নিলো। এদিকে আয়ান আয়ুশীকে এভাবে পড়ে যেতে দেখে কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে হাতের কাগজ সব ফেলে দিলো। কিন্তু আয়ুশী নিজেকে ততক্ষণে সামলে নিয়েছে। আয়ান অসহায় চোখে তাকালো।
“মিস ঝামেলা! সারাদিন হোঁচট খাওয়া ছাড়া আসলেই কি তোমার কাজ নেই?তোমার সাথে দেখা হলেই আমার সাথে কিছু না কিছু হয়…”
“স্যার কে যেনো ল্যাং…”, বলে পিছে তাকাতেই দেখলো সীমা মুচকি মুচকি হাসছে। আর কিছু বোঝার বাকি নেই ওর। রাগী চোখে সীমাকে হুমকি দিয়ে আয়ানকে বললো,”সরি, স্যার।”
আয়ান কিছু না বলে কাগজগুলো উঠাতে লাগলো, আয়ুশীও সাহায্য করলো অতঃপর আয়ান কিছু না বলেই চলে গেলো। আয়ুশী তার যাওয়ার পথে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। সীমার দিকে খেয়ে ফেলা টাই টাইপ লুক দিলো। তাই দেখে সীমা মেকি হাসলো।
ফুচকার দোকানে গালে হাত দিয়ে মুখ ফুলিয়ে বসে আসে সীমা, আয়ুশীর থা’প্প’ড়ে’র ইফেক্ট আরকি। ভাবলো শেষ পরীক্ষা। একটু চিল করা যাক। তাই ফুচকার দোকানে আসা। কিন্তু সিটে বসার আগেই আয়ুশী ওকে ল্যাং মা’রা’র প্রতিশোধ নিয়েই নিলো ..ফুচকা আসতেই আয়ুশী বললো,
“প্র’তি’ব’ন্ধী’র মতো বসে না থেকে গিল।”
“তুই আমাকে এভাবে মা’র ‘লি আয়ু? ”
” ল্যাং মা’রা’র আগে ভাবা উচিত ছিলো?
“তোর ভালোর জন্যই তো দিলাম। ”
” এতে আমার কি ভালো শুনি?”, ভ্রু কুঁচকে আয়ুশী জিজ্ঞেস করলো।
“যাহ বাবা! আরে তোকে ল্যাং না মা’র’লে স্যার ও পাশ কেটে চলে যেতো আর তুই আড়চোখে দেখতি ৷ না হতো কথা, না হতো ঠিকমতো দেখা। তোর তো আমাকে থ্যাঙ্কস বলা উচিত।”
আয়ুশী ভেবে দেখলো আসলেই মন্দ বলেনি, কিন্তু এখন পল্টি খাওয়া যাবে না…তাই বললো,” আর উনি যে আমাকে কথা শুনালো ওগুলো ?”
সীমা দাত কেলিয়ে বললো, “পেয়ার কি জাঙ্গ মে,এছি ছোটি ছোটি বাতে সুন্নি পাড়তিহে, বেবী। ”
আয়ুশী ওর পায়ে লাথি দিলো, এতে সীমা ব্যাথা পেয়ে একটু আর্তনাদ করলো আর এই সব দেখে ইভা ফিক করে হেসে দিলো।
দিন যেনো চোখের পলকেই কেঁটে যাচ্ছে। কোনভাবে যে এক মাস কেটে গেলো। বেলাল সাহেব এখন সুস্থ হলেও যেহেতু এই ইয়ারের আর কয়েকমাস বাকি তাই আয়ানকেই পড়াতে বলেছেন। এই বছর শেষে উনিও অবসরে যাবেন। আয়ানের ছোট খাটো বিজনেস, এতেই চলে যাবে দিব্বি সংসার।আর নিজেরও কিছু জমা তো আছেই। আজ আয়ুশীদের বাসায় আয়ানরা। মোশাররফ আর বেলাল বাল্যকালের বন্ধু । সেই বন্ধুত্ব আজও আছে। ওদের মাধ্যমে মরিয়ম আর নাহারেরও সখ্যতা। মাঝে আয়ান ক্লাস সেভেনেই চলে যায় দেশের বাইরে। নাহারের ইচ্ছেতেই হয়েছে এমন। উনি চাইতেন ছেলে হায়ার স্টাডি করুক। তাই আয়ুশীর সাথে কখনোই দেখা হয়নি ওর। বেলাল বিয়ের পর থেকেই শহরে থাকে। সেই হিসেবে আয়ুশীরা মাত্র কয়েকবছর হলো আছে। আজকে এখানে আসার মূল কারণ আয়ান । আয়ুশী যখন খুব ছোট তখন একবার এসেছিলো, মরিয়মের রান্না তার খুব পছন্দের,তাই আজ রেঁধে বেড়ে খাওয়াতেই এই আয়োজন। যদিও আয়ান আসতে চায়নি, কিন্তু এভাবে না করাটাও ভালো হবে না। সব দিক বিবেচনা করেই ওর আসা। মরিয়মদের ভাড়ার বাড়ি, দুই রুম আর ডাইনিং। আলাদা কোনো ড্রয়িং রুম নেই বিধায় মরিয়মদের রুমেই সবাই বসেছে। মরিয়ম রান্না শেষে গোসলে ঢুকেছে। ওরা কথা বলার মাঝেই নাহার লক্ষ করলেন ছেলে কেমন হাসফাস করছে।
“কি হয়েছে আয়ান ?”
“একটু ফ্রেশ হওয়ার দরকার ছিলো মা।”
আয়ানের কথা শুনে মোশাররফ বলে উঠলেন, ” তুমি আয়ুশীর রুমে চলে যাও তাহলে।”
আয়ুশীর রুম শুনে আয়ান নাকোচ করলো।
“আরে যাও । ওর রুমে কেউ নেই। আয়ুশীও ভার্সিটিতে।”
কেউ নেই বলেই আয়ান গেলো। অন্যদিকে সবে মাত্র বাসায় এলো আয়ুশী। পড়ায় এখন প্রচুর ব্যস্ত সে। তার উপর কয়েকদিন পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ওখানে এজ এ স্টুডেন্ট ওকে বক্তৃতা দিতে হবে। মেয়ের ব্যস্ততা দেখে মরিয়ম জানায়নি আজ আয়ানরা আসবে। ক্লান্ত শরীর নিয়ে রুমে ঢুকলো ও। ওড়না টা পাশে রেখে হাত পা ছড়িয়ে বিছানায় চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলো ও। ভীষণ ঘুম পাচ্ছে ওর। সেই মুহুর্তে ওয়াশরুমের দরজা খোলার আওয়াজে চোখ মেললো ও। আয়ানকে দেখে একবার নিজেকে পরখ করতেই চোখ বড় বড় হয়ে গেলো ওর। ফট করে উঠেই ওড়না পেঁচিয়ে নিলো ও। বিস্মিত কণ্ঠে বলে উঠলো,
“আপনি?”
এদিকে আয়ান আয়ুশীর সামনে আসবে না আসবে না করেও বার বার এসে পড়ছে। কি অদ্ভুত যেটা চায় না। নিয়তি বার বার তার কাছেই নিয়ে যায়।বিরবির করে বললো, “হায়রে কপাল।”
#চলবে