#অবেলায়_ভালোবাসি
#লেখনিতে_সাবরিন_জাহান
#পর্ব_১২
বাইরে মৃদু বাতাস বইছে।বৃষ্টি শুরুর আগে যেই মিষ্টি ঘ্রাণ আসে, তা গাড়ির জানালার পাশে বসে টের পাচ্ছে আয়ুশী।পাশেই বেলাল সাহেব।ড্রাইভিং সিটে ফাহিন আর আয়ান তার পাশে।সেন্স ফেরার পর আয়ুশীকে হসপিটালে কিছু টেস্ট করিয়ে আনলো ওরা।আয়ুশী কিছু বলেনি!বলার মন মানসিকতা বা শক্তি কোনোটাই অবশিষ্ট নেই। আয়ানের বাড়ির সামনে গাড়ি থামতেই কিছুটা অবাক হলো।বেলাল সাহেব আয়ুশীকে নামতে বললেন…
“আমাকে এখানে কেনো আনলেন?”
“আজ থেকে তুমি এখানে থাকবে!”
আয়ুশী মলিন চোখে তাকালো।
“আপনিও দয়া দেখাচ্ছেন আঙ্কেল!”
বেলাল সাহেব মন ক্ষুণ্ণ হলেন।
“এসব কি বলছো মামনি!”
“নাহলে এভাবে দয়া দেখাতেন না আমায়!”
আয়ান বলে উঠলো,”তুমি ভুল ভাবছো!”
আয়ুশী তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,”অনাথ মেয়েটাকে নিজের বাড়িতে আশ্রিতা হিসেবে রাখতে চাচ্ছেন স্যার?”
“কে বলেছে তুমি অনাথ?”,বলতে বলতেই নাহার বেরিয়ে এলো।আয়ুশীর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,”আমি তো তোমার আরেক মায়ের মত!”
“কিন্তু…”
“কোনো কিন্তু না,ভিতরে এসো!”
এক প্রকার টেনেই নিয়ে গেলো ওকে।বেলাল সাহেব আগেই বলে রেখেছে উনাকে!নাহার ওকে নিজের ঘরে নিয়ে বসিয়ে দিলেন! ফাহিন এসে নাহারকে ওর ওষুধ বুঝিয়ে দিতে লাগলো।তখনই প্রবেশ করলো আরেক মেয়ে।
“তুমি আয়ুশী,রাইট?”
আয়ুশী বিস্মিত চোখে তাকালো। কটি সহ কুর্তা,সাথে জিন্স পরিহিত মেয়েটির ঘন কালো কেশ তার কোমর অব্দি বিরাজ মান!ওর নিজের চুলও কোমর অব্দি!কিন্তু মেয়েটির এমন অপরূপ সৌন্দর্যে যে কেউ বিমোহিত হবে।ফর্সা হাতে কালো বেল্টের ঘড়িটা যেনো আরেক রূপ এনে দিয়েছে।মেয়ে হয়ে আয়ুশী নিজেও এক প্রকার মুগ্ধ হলো।
“কোথায় হারালে?”
“হুঁ?”
“তুমি আয়ুশী তো?”
“হুমম!”
“আমি ইহরা!এইযে এই মহিলাকে দেখছো(নাহারকে উদ্দেশ্য করে)ইনি আমার জ’ল্লা’দ মা লাগে!”
সাথে সাথেই নাহার ওর কান টেনে ধরলো।
“আহ,মামনি লাগছে!”
“আমি জ’ল্লা’দ?”
“না না,তুমি তো আমার কিউট মামনি!”
নাহার ওর কান ছেড়ে দিয়ে আয়ুশীকে ওষুধ দিলো।আয়ুশী অবাক হয়ে দেখছে।ওর জানা মতে আয়ানের কোনো বোন নেই!তাহলে এ কে?নাহার ওর চোখের ভাষা বুঝতে পেরে বললো,”ও আমার ছোট বোনের মেয়ে!”
আর কিছু বলার আগেই ইহরা বলে উঠলো,”আসলে কি বলোতো,ছোট বেলায় মা বাবা আকাশের তারা হয়ে গেছে।তখন থেকে এখানেই বড় হয়েছি।আমি যখন ক্লাস ফাইভে পড়ি তখন আয়ানের সাথে আমিও বিদেশ চলে যাই!আয়ানের পড়াশোনা শেষ হলে ও ফিরে আসে।কিন্তু আমার শেষ হয়নি,তাই তখনও ওখানে!আর কিছু জানার নেই।নেও আমি সব বলে দিলাম!”
ফাহিন মাঝে বলে উঠলো,”আরেকটা জিনিস বলতে ভুলে গেছো!আয়ানের হবু বউ হও সেটা তো বললে না!”
ইহরা আড়চোখে তাকালো।আয়ুশী এবার অবাকের চরমের পর্যায়!
“হবু বউ?”
নাহার হেসে বললো,”হুমম।আর কিছুদিন পর এ বাড়ির বউ করে ওকে ঘরে তুলবো!শুধু আয়ানের একটু সেটেল হওয়ার অপেক্ষা!”
ইহরা মাথা নিচু করে বসে আছে।আয়ুশীর এখন সব শূন্য শূন্য লাগছে।আর কত জখম সহ্য করবে ও।
“আচ্ছা, আন্টি আমি আসি!হসপিটালে কাজ আছে !”
“আচ্ছা,সময় করে এসো কিন্তু আবার!”
ফাহিন মাথা নেড়ে সম্মতি দিয়ে বের হয়ে গেলো।তার পিছু পিছু ইহরা বের হলো!
“সব সময় আয়ানের হবু বউ বলে খোচান কেনো আমায়?”
ফাহিন ভ্রু কুঁচকে বললো,”আমি আবার কিভাবে খোচালাম?”
“কথাটা আপনি খোঁচা মে’রেই বলেছেন!”
“আমি জাস্ট সত্যটা বলেছি!”
ইহরা হন হন করে চলে গেলো।তাই দেখে ফাহিন তাচ্ছিল্যের হাসি দিল।
“আয়ু মা!”
“জি আন্টি!”
“এসব আন্টি বান্টি বাদ দে!ছোট আম্মু ডাকবি আমায়!আমি কিন্তু কাউকে তুই করে বলি না!তোকে বলছি…তোর আম্মুও তো এভাবে ডাকে তাই না?এখন থেকে আমিও তোর আম্মু হওয়ার সব রকম চেষ্টা করবো! কিরে মেনে নিবি তো?”
আয়ুশীর চোখে পানি এলো।
“এসব দয়া না আয়ু,জানিস তুই তখন খুব ছোট!আমরা শহরে থাকতাম আর তোরা গ্রামে।তোর তখন ভীষণ জ্বর। অত রাতে কোনো ডাক্তার ছিল না তখন গ্রামে!শহরে এত রাতে কিভাবে আসবে ভেবে পাচ্ছিল না।তখন তোর আঙ্কেল ডাক্তার নিয়ে তোদের বাড়ি গিয়েছিল।তখনের পর থেকে তারা আরো ভালো বন্ধু হলো।জানিস যখন তোর আঙ্কেল চলে আসছিল,তোর বাবা অশ্রুসিক্ত চোখে বলেছিল,’কখনো আমি না থাকলে বা আমরা না থাকলে আমার মেয়েটাকে একটু আগলে রাখিস!’,তখন তোর আঙ্কেল বলেছিল,’এটা আবার বলা লাগে? ও তো আমার আরেক মেয়ে।তোরা থাকলেও বা না থাকলেও ওকে আগলে রাখার দায়িত্ব আমার!’,আর সেই থেকে তোকেই নিজের আরেক মেয়ে ভাবতো!তার ভালোবাসাকে দয়া বলে অপমান করিস না রে মা!”
কয়েক ফোঁটা পানি চোখ থেকে গড়িয়ে পড়লো। ও নিজেও জানে বেলাল আঙ্কেল ওকে অনেক বেশি ই ভালোবাসে।আর কিছু বলার পেলো না ও!রাতে খাবার খেতে সবাই বসলেও আয়ুশী এলো না। আয়ান উসখুস করছে ওর খবর নেয়ার জন্য।কিন্তু এভাবে সবার সামনে কিভাবে নিবে?তখনই ইহরা বলে উঠলো,”আয়ুশী কই?”
নাহার বলে উঠলেন,”ওকে খাইয়ে ঘুমাতে দিয়ে এসেছি।ঘুমিয়েও পড়েছে হয়তো!”
আয়ান আর কিছু না ভেবে খেয়ে উঠে গেলো।
রাত বারোটা!সবাই গভীর ঘুমে থাকলেও আয়ুশী ছাদে!আগে রাতে একা একা ছাদে আসতেও ভয় পেতো!আর এখন? যার জীবনের এখন কোনো মাইনে রাখে না,তার আবার ভয়!প্রিয় মানুষগুলোকে তো হারালোই!সেই সাথে প্রথম ভালোবাসার মানুষকেও পেলো না।আর বাঁচার আশাই রাখে না।কিন্তু সৃষ্টিকর্তার দেয়া এই সুন্দর জীবন নিজের হাতে নষ্ট করতে পারে না ও।নাহার আর বেলালের জন্য হলেও নতুন করে বাঁচবে ও।চোখ বন্ধ করে হালকা বাতাস অনুভব করছিল ও।তখনই কারোর পায়ের আওয়াজে ঘুরে দরজার দিকে তাকালো। আয়ানকে দেখে বুক মোচড় দিয়ে উঠলো ওর। আয়ান আয়ুশীকে দেখে অবাক হলো।
“তুমি এখানে?”
“ঘুম আসছিলো না তাই আরকি!”
বলেই যেতে নিলে আয়ান ডাকলো!
“কোথায় যাচ্ছো?”
“রুমে!”
“কেনো আমি এসেছি বলে?”
আয়ুশী নিরুত্তর।
“কিছু কথা ছিল তোমার সাথে!”
আয়ুশী আবার নিজের জায়গায় দাড়ালো! ও চাইলেও এভাবে চলে গিয়ে আয়ানের অপমান করত পারে না।
আয়ান বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,”সরি!”
আয়ুশী নিষ্প্রাণ চোখে তাকালো!
“আই এম রিয়েলি সরি!আসলে আমি রাগ উঠল কন্ট্রোল করতে পারি না।একমাত্র মা ছাড়া কারোর কথা তখন শুনি না!নিজে কি করি তখন হুশে থাকি না!আমি তোমাকে চাইলেই বুঝিয়ে বলতেই পারতাম,কিন্তু আমার রাগ ওরকম অস্বাভাবিক আচরণ করতে বাধ্য করলো।আমি এই রকম আচরণের জন্য নিজের উপর ভীষণ বিরক্ত!আমি বুঝি না এমনটা কেনো করি!আমি সত্যি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত!”
“আমি কিছু মনে করিনি!”
আয়ান তাকালো।
“আমারই ভুল ছিল আপনার দায়িত্ব , মানবিকতাকে অন্য চোখে দেখা!আসলে নারীদের মন ভীষণ আবেগী।হয়তো আপনার এই দায়িত্ব,মানবিকতাকে ওই আবেগী মন অন্য কিছু ভেবে নিয়েছে।আর তাছাড়া আমি এমন ভাবে আপনাকে ডেকেছি আপনার রাগ হওয়াটা স্বাভাবিক!আর আমারও উচিত ছিল আপনার সম্পর্কে জানার!যদি জানতাম আপনার উড বি আছে তাহলে হয়তো এমন কিছুই হতো না!”
“যাই হোক,আমার এভাবে হাত তোলা উচিত হয়নি!”
“ইটস ওকে স্যার!”
বলে চলে আসতে নিলেই,
“আয়ুশী!”
“জি!”
“যা হয়েছে সব ভুলে আমরা আগের মত স্বাভাবিক হতে পারি না?”
“স্বাভাবিক হয়েছি স্যার!আপনি চিন্তা করবেন না!সব আগের মতোই চলবে!”
আয়ান আর কিছু বলল না!আয়ুশী চলে গেলো।
__________________________________
নিজের রুমের বারান্দায় দাড়িয়ে সিগারেট টানছে ফাহিন। হাতে তার সেই মায়াবতীর ছবি!
“কেনো তোমাকে দেখলেই আমার সব ওলোট পালোট লাগে মায়াবতী!তোমার চাহুনি,মায়াবী মুখখানা আমার হৃদয়টাকে যে ক্ষত বিক্ষত করে মায়াবতী!তোমার মায়া কাটানো যে আমার জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে অসাধ্য জিনিস!জানি না এই দহনে আর কত দিন জ্বলবো আমি!তবুও ভালোবাসি মায়াবতী!ভীষণ ভীষণ ভালোবাসি!আমার অস্তিত্ব জুড়ে কেবল তুমি!অবেলায় ভালোবাসি!”
#চলবে#অবেলায়_ভালোবাসি
#লেখনিতে_সাবরিন_জাহান
#পর্ব_১৩
নিজের রুম ঘুরে ঘুরে দেখছে আয়ুশী,কালকে গেস্ট রুমে ছিল।আজ সকালেই এখানে শিফট হয়েছে। আয়ানের বাম পাশের রুম ওর!আর ডান পাশেরটা ইহরার!রুমটাতে বেশিরভাগ জিনিস ওর বাবা মায়ের!আর কিছুটা ওর।বেলাল সাহেব ওদের জিনিস গুলো দিয়েই ওর রুম সাজিয়েছেন!এতে ও ভীষণ খুশি!তখনই ইহরা রুমে এলো ।
“রুম সাজানো কেমন হয়েছে?”
“দারুন!”
“আমি তো বলেছিলাম নতুন ফার্নিচার আনতে,কিন্তু আয়ানের কড়া নির্দেশ তোমার রুম ও ই সাজাবে!”
“স্যার?”
“হুমম,তোমার স্যার!বাবা রে! সক্কাল সক্কাল সব গুছিয়েছে ও!”
আয়ুশী নিশ্চুপ!
“যাই হোক,তোমার আর আমার কি মিল দেখো?তোমারও মা বাবা নেই,আমারও নেই!এক অর্থে দুইজনই এই বাড়ির আশ্রিতা!”
আয়ুশী মাথা নিচু করে নিলো।
“আরে আরে,আমি তোমাকে ছোট করে বলিনি!তুমি তো আমার বোনের মতো!তাই শেয়ার করছি…কাউকে বলো না কিন্তু!”
আয়ুশী হাসলো।মেয়েটা বড্ড মিশুক! ইহরা আবার বলতে শুরু করলো,”জানো ছোট থেকে ইচ্ছে ছিল,একটা বোন হবে! যাকে নিজের সব কথা বলবো…কিন্তু ভাগ্য!তার আগেই বাবা মা ফুস।আর এখন তোমায় পেলাম!তাই তোমাকে সব বলবো!তুমিও বলবে কিন্তু…!”
আয়ুশী মাথা নাড়লো..
“তুমি কি টেম্পোরারি ডাম্ব?”
“এহহ?”
“মানে তুমি কি সাময়িক বো’বা?”
আয়ুশী চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো।এমন না ও বুঝে নি!কিন্তু হঠাৎ এমন প্রশ্নের মানে খুঁজে পেলো না!
“কি হলো বলো?”
“আমি কেনো বো’বা হতে যাবো?”
“তাহলে এত চুপচাপ কেনো?আমি এতক্ষন ধরে বক বক করছি।তুমি নিরীহ বিল্লির মত ঘাপটি মে’রে বসে আছো!”
“না না ,তেমন কিছু না!”
“বুঝি বুঝি,খাই না তো সুজি!একটু হলেও বুঝি!আচ্ছা ঘুরতে যাবে?”
“এই সকালে?”
“সকাল বলছো কেনো? সাড়ে এগারোটা বাজে!আর এখন যাবো না!বিকেলে।”
“আচ্ছা!”
“আচ্ছা তুমি আমার হাতের স্পেশাল কফি ট্রাই করবে?দারুন টেস্ট! ওয়েট এখনই আনছি!”
বলেই দৌড়!আয়ুশী হাসলো…প্রথমে ভালো না লাগলেও এখন ভীষণ ভালো লাগছে ওর ইহরাকে।মানতে বাধ্য,এরকম মেয়ে রেখে আয়ান তাকে কেনো পছন্দ করবে?দীর্ঘশ্বাস নিলো।বেশ কিছুক্ষণ বসে থেকে ভাবলো নিচে গিয়ে দেখা যাক ইহরা কি করছে দেখতে যাওয়া যাক!
ওদিকে ইহরা কফি বানাচ্ছে।কফি মগ নিয়ে আসতে যাবে তখনই কেও মগটা নিয়ে গেলো।
“আরে…”
“থ্যাংকস ফর দি কফি!”,মুচকি হেসে বলল ফাহিন।
কফি নিয়ে সোফায় বসে গেলো ও।এদিকে ইহরা তব্দা খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।তখনই নিচে নেমে এলো আয়ুশী।
“আরে ডাক্তার আপনি!”
“কেমন আছো মিস রোগী!”
আয়ুশী হাসলো! ফাহিনের পাশের সোফায় বসলো।
“এইতো আপনি!”
“তোমার চেক অ্যাপ করতে এলাম!বেলাল আঙ্কেলের কড়া নির্দেশ!ঠিক মত সুস্থ না হওয়া অব্দি প্রতিদিন যেনো চেকাপ করি!”
“আমি এখন একদম সুস্থ!আব… ইহরা আপু?তুমি এভাবে দাড়িয়ে আছো কেনো?”
ফাহিন মজার ছলে বললো,”আয়ানের চিন্তায় বিভোর হয়তো!”
বলেই কফিতে চুমুক দিলো!আয়ুশী মেকি হাসলো। ইহরার এতক্ষণে হুশ এলো।
“এই এই আপনি আমার কফি নিলেন কেনো?”
“তুমি তো আমার জন্য বানালে!”
“আমি কই আপনার জন্য বানাইলাম?আমি তো আয়ুশীর জন্য বানালাম!আপনি খেলেন কেনো?”
ফাহিন মুচকি হেসে বলল,”যা আয়ুশীর তাই আমার!তাই না আয়ু?”
আয়ুশী হালকা হাসলো!কিন্তু আয়ানের এটা মোটেও ভাল্লাগলো না।ভার্সিটি থেকে ফিরলো মাত্র।আজ আর ক্লাস করাতে মন চাচ্ছিলো না ওর।তাই চলে আসলো।কিন্তু বাড়িতে ঢোকা মাত্রই ফাহিনের এমন কথা ওর মোটেও পছন্দ হলো না।
“যার জিনিস সেটা একমাত্র তারই থাকে!”(আয়ান)
“কিরে তুই কখন এলি?”
“মাত্র!”
“আয় বস!”
আয়ান ফাহিনের সাথে বসলো।আয়ুশী চেয়েও উঠতে পারছে না! ও চায় না আয়ান ভাবুক ওকে এড়িয়ে চলছে ও। ইহরা আয়ুশীর সাথে বসলো।
“তো শুনো এবার আমার প্ল্যান!”(ইহরা)
তিনজন ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
“এভাবে তাকানোর কিছু হয় নি!আমার প্ল্যান শুনো!আজকে আমরা বিকেলে ঘুরতে যাব ।সো রেডি থেকো!আয়ু,উপরে চলো!গল্প করবো!”
বলে আয়ুশীকে টেনে নিয়ে গেল।ওদের যাওয়ার পানে ফাহিন মুচকি হাসলো! আয়ান তা দেখে বললো,”তোর মনে হচ্ছে না বিকেলে তোর কাজ আছে?”
“না তো! যাই হোক তোরা রেডি থাকিস!আমি এসে পিক করবো..!”
বলেই চলে গেলো।
রাজ্যের গল্প নিয়ে বসেছে আয়ুশী আর ইহরা!তখনই আয়ুশীর ফোনে কল এলো।সীমা ফোন করেছে।হুট করেই মন হলো এতদিন সীমা খোজ নেয় নি! ও তো এমন না! ঝট পট ফোন রিসিভ করলো।
“হ্যালো! শিম..কেমন আছিস?”
“আলহামদুলিল্লাহ,তুই?”
“ভালো!কি হয়েছে তোর?গলাটা এমন কেনো?”
ওপাশে নিরবতা!
“শিম!”
“ভার্সিটি আসবি কবে থেকে?”
“কাল!”
“বেশ , দেখা হবে…আমিও কাল আসছি!”
বলেই রেখে দিল!
“আয়ু?এনি সমস্যা?”
“না আসলে আমার বান্ধবী সীমা! ও ফোন দিয়েছে!”
“তো এত চিন্তিত কেনো?”
“ওর কিছু হয়েছে হয়তো!এরকম চুপচাপ শান্ত ও না!আর যেখানে আমার এই পরিস্থিতি, সেখানে ও কোনোদিন এভাবে খোজ না নিয়ে থাকে না!আর এরকম ভাবে কথা তো বলে না!”
“কি বললো ও?”
“কাল দেখা করবে,ভার্সিটি যেতে!”
“বেশ কালকে জিজ্ঞেস করে নিও!”
“হুমম!”
বিকেলে…
হাঁটতে হাঁটতে বাড়ি থেকে বেশ দুর এসে পড়েছে ওরা।
“ইহরাপু?”
“হুমম?”
“কোথায় যাচ্ছি আমরা?”
“কে জানে?”
আয়ান ভ্রু কুঁচকে বললো,”ঘুরতে যেতে চাও,অথচ কই যাবে জানো না?”
ইহরা কোমরে হাত রেখে বলল,”তোমাদের মত সিনিয়র মানুষকে এনেছি কি আমাদের জিজ্ঞেস করে ঘুরানোর জন্য?”
“আইডিয়া কার ছিল?”
আয়ুশী বলে উঠলো,”প্রত্যেক বিল্ডিং তৈরিতে আইডিয়া মেইন একজনের থাকে,তাই বলে কি কাজ সে করে ?”
ফাহিন অসহায় হয়ে বললো,”ভাই যতই কর,মেয়েদের সাথে কথায় জিততে পারবি না!বাদ দে…আজকে আপাতত আরেকটু সামনে যাই.. পরে কোনো এক সময় দূরে যাওয়া হবে!”
সেদিনের মত ফিরে এলো ওরা!
রাতে ইহরা আয়ুশীর সাথে ঘুমাবে বলে সিদ্ধান্ত নিলো।
“কখনও কাউকে ভালোবেসেছো আয়ু?”(ইহরা)
আয়ুশী ঘুরে তাকালো!
“হ্যাঁ,এখনও বাসি তো!মা বাবা সবাইকে!”
“উফফ,আয়ু!এই ভালোবাসা সেই বাসা না!”
“ওহ যেই বাসায় ভালো সুযোগ সুবিধা থাকে তাকে বলে তো?”
“ধুর,ঘুমাও তুমি!”
বলেই উল্টো হয়ে শুয়ে পড়লো।আয়ুশী হাসলো! ও বুঝেছে ঠিকই,কিন্তু এই মেয়েটার সাথে এখন এতটাই জড়িয়ে গেছে এখন না পারবে মিথ্যে বলতে আর না পারবে সবটা বলতে! ও জানে যদি বলে বাসে,তাহলে কে সে জানতে চাইবে ! যা ও কখনোই বলতে পারবে না…
নিজের রুমে বিছানায় শুয়ে ইহরার ছবির দিকে তাকিয়ে আছে আয়ান।কিন্তু মন ওর সেই ছবিতে নেই! নাহ,চেয়েও পারছে না মুগ্ধ হয়ে সেই ছবিতে তাকিয়ে থাকতে!চেয়েও পারছে না ভালোবেসে সেই ছবিটাকে বুকে জড়িয়ে ধরতে।হুট করেই মোবাইলটা ওর মুখে পড়লো।বিরক্তিতে উফফ করে উঠলো ওর।মুখ থেকে ফোন তুলতেই আয়ুশীর সেদিনের ছবি ভেসে উঠলো!কালো রঙের জমা,কানে সাদা কাঠগোলাপ গুঁজে রেখে লজ্জা মাখা হাসিতে আরেকবার হারিয়ে গেলো ও।বুকের উপর ফোনটা রেখে চোখ বুজে রইলো ও।
“আমি জানি না আমার কি হচ্ছে!আমি জানি না আমি কি চাই!জানি না আমি,কোনটা ঠিক আর কোনটা বেঠিক!জানি না আমি ,কিছু জানি!শুধু জানি তোমার মাঝেই হারিয়ে যাচ্ছি আমি!কিন্তু এটা যে অন্যায়!কেনো অনুভূতি গুলো নিজ থেকে তোমার প্রতি নিজের মনের উথাল পাতাল ঝড় তুলছে।কেনো আয়ুশী?নিজেকে এতটা অসহায় তো আগে লাগে নি!আমি ঠিক কি করবো? যার প্রতি অনুভূতি আনতে চাইছি, জোড় করে এক চিলতি পরিমাণও অন্য অনুভূতি জন্মালো না তার প্রতি!আর তোমার থেকে নিজের অনুভূতি যতই ঠেলে দিচ্ছি,মনে হচ্ছে সব ঝেকে বসছে!আমি কি করবো?কে আমায় বলবে?কে বলবে কোনটা ঠিক কোনটা বেঠিক?জাস্ট বিরক্ত আমি!নিজের উপর!নিজের ফিলিংস এর উপর! কার কাছে বলবো আমি?কাকে বলবো আমি অসহায়!ভীষণ অসহায়!অসম্ভব রকমের !”
#চলবে
(ডোন্ট সে বড় করে দেন!বাসায় আরো মেহমান আসছে…আগামীকাল আরো আসবে…আমার পা’গল হওয়ার উপক্রম!তাও এতটুকু লিখি!কালকে কি করবো ভেবে পাচ্ছি না আমি!লিখবো কখন কিছু বুঝতেছি না!অপেক্ষা করবেন…দেয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো!)