অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ১৬

#অবেলায়_ভালোবাসি
#লেখনিতে_সাবরিন_জাহান
#পর্ব_১৬

“হ্যালো সীমা!”

“হুঁ বল আয়ু!”

“তোর দেয়া অ্যাড্রেস এ তো আসলাম!কিন্তু এরপর কই যাবো?”

“তুই ফোন দে ওদের!আমাকে কেন দিস!”

“আমার ভয় করছে!”

“তাইলে তোর টিউশনি করা লাগবে না!আমি ওদের নিউ টিচার দেখতে বলি!আমি এখন বের হবো… এয়ারপোর্ট যাচ্ছি।নাহিম ভাইয়াকে আনতে!তুই রাখ ওদের আমি মানা করে দেই!”

“আরে না না,আমি দিচ্ছি!”

বলেই কেঁ’টে দিলো।সীমার দেয়া নাম্বারে ফোন দিলো!সালাম দিয়ে বলতেই স্টুডেন্ট এর মা বললো,”আমি আমার দেবরকে পাঠাচ্ছি!আপনি একটু ওর সাথে আসুন!”

আয়ুশী সম্মতি দিল।বেশ কিছুক্ষণ দাড়ানোর পর একটা ছেলে আসলো।

“এক্সকিউজ মি?”

আয়ুশী ঘুরে তাকাতেই ছেলেটি চমকে গেলো!

“আয়ুশী!”

“আপনাকে ঠিক চিনলাম না তো!”

ছেলেটি কোনো মতে নিজেকে সামলে বললো,”ইয়ে,ওই যেই বাসায় যাবেন,মানে পড়াবেন আরকি!”

“ওহ,আপনি আমার নাম জানলেন কিভাবে?”

“ভাবি ওই মানে ভাবি বলেছে!”

“ওহ,চলুন!”

“জি জি!”

বলেই ওকে নিয়ে গেলো।আলাপ আলোচনা শেষে আয়ুশী নিজের কাজে লেগে পড়লো।একটা মেয়েকে পড়াতে হবে।ওকে পড়াচ্ছে এমন সময় ওই ছেলেটা আসলো!

“হ্যালো!”

“জি কিছু বলবেন?”

“না কিছু না,একটু কথা বলতাম আরকি!”

আয়ুশী বিরক্ত হলো।এমনেই মন মেজাজ ভালো থাকে না, তার উপর পড়াতে এসে এই উদ্ভট লোকের পাল্লায় পড়েছে।

“আমার কাজ টিউশনি করা,করো সাথে গল্প করা না!দুঃখিত,কিন্তু আমি এই পড়ার মাঝে বাড়তি কথা চাচ্ছি না!আসতে পারেন..”

ছেলেটি মুখ কালো করে চলে গেলো।আয়ুশী লম্বা শ্বাস নিয়ে পড়াতে লাগলো।

__________________________________

“ফ্লাইট ল্যান্ড কখন হবে মামা?”

“আরো ১০ মিনিট আছে!”

“ত্রিশ মিনিট আগেই ল্যান্ড হয়েছে!”,পিছন থেকে কারোর গলার স্বর শুনে দুইজনই ঘুরে তাকালো!

“আরে নাহিম তুই?কিন্তু ফ্লাইট তো তিনটায়!”

“বাজে কয়টা?”

নিজের হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো,”তিন টা!”..

নাহিম মাতব্বরের হাত টেনে নিয়ে ঘড়ির টাইম ঠিক করে বললো,”এবার দেখেন মাই দিয়ার ফাদার!”

মাতব্বর টাইম দেখে বললো,”সাড়ে তিনটা?”

“জি!”

“আরে বাদ দে! ওয়েলকাম টু বাংলাদেশ মাই সন!”

নাহিম হেসে বাবাকে জড়িয়ে ধরলো।

“ওই পাকা বুড়ি,ব্যাগ তোল!”(সীমাকে উদ্দেশ্য করে)

“আমাকে বললে?”(সীমা)

“তুই ছাড়া কে আছে এখানে?”

“আরে ওকে কেন বলছিস!দে আমি নিচ্ছি!”(মাতব্বর)

“আরে না না,ওকে দেও! এমনেই দেখেই বোঝা যাচ্ছে কাজ না করে করে মুটি হয়ে গেছে!”

বলেই ব্যাগ ওর হাতে দিয়ে,নিজে ট্রলি ঠেলে বাবাকে নিয়ে এগিয়ে গেলো!সীমা হতভম্ভ হয়ে নিজেকে পরখ করলো।অতঃপর নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করলো,”সিরিয়াসলি?আমি মুটি?আমি মুটি হলে চিকন কারা?”

“এই যে মিস ভাবুক কুমারী!আসবেন?নাকি আমরা চলে যাবো?”

প্রশ্নটা নিজের মধ্যেই দমিয়ে রেখে এগিয়ে গেলো ওদের দিকে!মাতব্বর ড্রাইভারের সাথে বসেছে।সীমা আর নাহিম পিছনে।আড়চোখে একবার নাহিমের দিকে তাকালো ও! ও তাকানোর সাথে সাথে নাহিমও তাকাতেই চোখ ফিরিয়ে নিলো ও।নিজেকে নিজেই গাল মন্দ করলো।এভাবে দেখলে কেউ কি ভাববে?

__________________________________

ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আছে আয়ান।তার পাশেই ইহরা বসে বসে সিরিয়াল দেখছে।আসার পর থেকে আয়ুশীকে দেখেনি ও।কোথায় আছে কাউকে জিজ্ঞেস ও করতে পারছে না।তখনই নাহার এলো।

“তোমার কাছে আয়ুর নাম্বার আছে আয়ান?”

“হুমম,কেনো বলোতো?”

“একটু কল দিয়ে দে তো,সন্ধ্যা হয়ে গেছে।এখনও আসছে না কেনো?”

“কোথায় গেছে ও?”

“টিউশনিতে!”

“মানে কি?”

“মেয়েটা নিজের টুকিটাকি খরচ নিজেই চালাতে চাচ্ছে।আমরা মানা করেছি।কিন্তু তাও শুনতে চায় নি!তারপর বললো একটাই টিউশনি করবে,আমরাও ভাবলাম মেয়েটা একা একা থাকার চেয়ে কিছু করে মাইন্ড ডিসট্র্যাক্ট করুক!তাই আরকি!”

“তাই বলে তুমি রাজি হয়ে যাবে?”

“আরে করুক তো!তুই কল দে!”

আয়ান বিরক্ত হয়ে কল দিল।

“কোথায় তুমি?”

“এইতো স্যার বাসার কাছেই!”

“ওকে!”

বলেই রেখে দিল।নাহারকে বললো,”ও বাসার কাছেই!আসতেছে..”

তার কিছুক্ষণের মাঝেই আয়ুশী এলো।নাহার ওকে দেখে এগিয়ে গেলো।শাড়ির আঁচল দিয়ে ওর মুখ মুছতে মুছতে বললো,”এত দেরি হলো যে?”

“ওই আসার সময় একটু আগের বাসায় গিয়েছিলাম!”

“কেনো?”

“উনাদের ভাড়া বাকি ছিল,বলেছিলাম দিয়ে দিবো!”

“টাকা কোথায় পেলি?”

আয়ুশী নার্ভাস হলো।কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,”আমার কাছে কিছু জমানো টাকা ছিল!”

নাহার আর প্রশ্ন করলো না।

“যা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়!”

“হুমম!”

বলেই উপরে গেলো। সাইড ব্যাগ বিছানার উপর রেখে দিলো।

“টাকা কোথায় পেলে?”

আয়ুশী চমকে তাকালো।দরজায় হেলান দিয়ে আয়ান তাকিয়ে আছে!

“বললাম তো জমানো টাকা!”

“তোমার কানের দুল আর আংটি কই?”

আয়ুশী আমতা আমতা করে বলল,”আছে কেনো?”

“নিজের মায়ের জিনিস বেঁচে দিলে?”

বিস্মিত নয়নে তাকালো ও।

“আপনি..”

পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে বললো,”মাকে দেখে কাগজটা লুকিয়ে ব্যাগে ঢোকানোর সময় নিচে ফেলে দিয়েছিলে!মানে মানি রিসিট!”

আয়ুশী নিরুত্তর!

“তোমার মায়ের স্মৃতি এভাবে হারিয়ে দিলে?”

“উহু,ওগুলো বন্দক রেখেছি!পড়ে নির্দিষ্ট সময়ে ছাড়িয়ে আনবো!”

“তোমার এত আর্জেন্ট ভাড়া মেটানোর কি প্রয়োজন হলো?”

“যাতে ওরা বলতে না পারে,’ ম’রে গিয়ে আমার মা বাবা ওদের টাকা মে’রে দিয়েছে!আমার মা বাবার অসম্মান না করে!আফসোসের সুরেও যাতে না বলে।”

“আমাকে বললেই পারতে!”

“কেনো?”

“কি কেনো?তুমি এখন আমাদের দায়িত্ব আয়ুশী!”

“প্লিজ স্যার,সবসময় আমি অন্যের নির্ভর হয়ে থাকতে চাই না।কারোর দায়িত্ত্ব হিসেবেও না।আপনারা থাকতে দিয়েছেন।মেনে নিয়েছি !পড়াশোনার খরচ দিবেন বলেছেন,তাও মেনে নিয়েছি!আর কত মানতে বলেন?”

“আজব তো,মা বাবা তোমাকে ভালোবেসে দিচ্ছে।”

“আমি জানি স্যার!কিন্তু আমার নিজের আত্মসম্মান আমাকে এতটাও দায়হীন থাকতে দিচ্ছে না!”

“আত্মসম্মান দিয়ে কি পানি খাবে?”

“মানে?”

“তো এত পাকনামি কেন করো?”

লোকটার ত্যাড়া ত্যাড়া শুনে আয়ুশীর রাগ হলে।

“আমার মর্জি আপনার কি?”

“ছোট মানুষ ,ছোটদের মত থাকা উচিত!”

“আমার যথেষ্ট বুদ্ধি জ্ঞান আছে!”

“হ্যাঁ,ঢেঁড়স মার্কা!”

“স্যার!”

“কি?”

“আমার মাথা কিন্তু গরম হয়ে যাচ্ছে!”

“আমার মাথা তোমার থেকেও গরম হয়ে আছে!”

“আমার তারও বেশি!”

“তাই?”

“হ্যাঁ!”

“ওকে চলো!”

বলেই টেনে নিয়ে গেল ওয়াশরুমে!বালতি থেকে এক মগ পানি ঢেলে ওর মাথায় ঢেলে দিল!

“ঠাণ্ডা হয়েছে?”

এমনেই বর্ষাকালে বৃষ্টির কারণে বেশিরভাগ সময় ই ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা থাকে।তার উপর এই সন্ধ্যায় এক মগ ঠাণ্ডা পানি মাথায় ঢালায় আয়ুশী কি রিয়েকশন দিবে বুঝছে না! ভ্যাবাচেকা খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আয়ান বেরিয়ে আসতে নেয়,তখনই আয়ুশী আরেক মগ পানি নিয়ে আয়ানের দিকে ছুঁড়ে মারে!

“হোয়াট দা!এটা কি করলে?”

“আপনারও তো মাথা গরম!আপনারও তো ঠাণ্ডা হওয়া প্রয়োজন!রাইট?”

“তাই বলে রুমে এভাবে পানি ছুড়বে?”

“বেশ করেছি! টিট ফর ট্যাট!”

“তোমাকে আমি….”

বলেই আবার ভিতরে গিয়ে ঝর্না ছেড়ে দিল।আয়ুশী ঝর্নার নিচে থাকায় ওর উপর পানি পড়লো। ঝট করে সরে এলো ও।রাগে দুঃখে আয়ানকে ধাক্কা দিয়ে ঝর্নার নিচে ফেলে দিল।এদিকে আয়ান মৃদু ব্যাথা পেলো।

“আহ..”

আয়ুশীর হুশ হলো।বাঘ খেপিয়ে দিয়েছে ও আজ!

“সরি স্যার!”

“রাখো তোমার সরি, ঝর্না বন্ধ করো!”

আয়ুশী চটপট ঝর্না বন্ধ করলো!

“ফাজিল মেয়ে!এভাবে কেউ ধাক্কা দেয়?”

“আপনি আমাকে এই ঠাণ্ডায় ভিজিয়েছে কেনো?”

“বেশ করেছি!”

আয়ুশী আবার চটে গেলো।
“তাহলে আমিও বেশ করেছি!”

আয়ান রাগী দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালো।রুমের ভিতর থেকে হাসির আওয়াজ আসতেই দুইজন তাকালো। ইহরা পেট ধরে হাসছে!

“সো গুড! কন্টিনিউ প্লিজ…দেখতে বেশ লাগছিল!”

আয়ুশী আর আয়ান চোখ ছোট ছোট করে তাকালো।আয়ুশীর ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসি ফুটে উঠলো।মগে পানি নিয়ে দিলো ইহরার দিকে ছুঁড়ে!এদিকে রুমের ভিতর থাকা অবস্থায় পানি পড়ায় ইহরা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।ওদের কথার আওয়াজ শুনে এখানে এসেছিল।আর ওদের পানি ফাইট দেখে মজা নিচ্ছিলো!কিন্তু এটা কি হলো?

“এটা কি করলে?”

“তুমি হাসছো,তাই তোমাকেও দিলাম!”

“আরে রুমেও পানি ফেলে দিয়েছো!”(আয়ান)

“কিছু হবে না!”

বলতে না বলতেই ওর মুখে পানি পড়লো আবার!সামনে তাকাতেই দেখলো ইহরা পানির জগ নিয়ে দাড়িয়ে আছে!

“আর দিবে পানি?”

আয়ুশী আবার মগ পানি নিতে গেলে আয়ান বলে উঠলো,”প্লিজ প্লিজ,এবার থামো!আর না..পানি ফেলে দেও।”

আয়ুশী আর ইহরা চোখ ছোট ছোট করে তাকালো।দুইজন নিজেদের মাঝে কিছু ইশারা করলো।হুট করেই ইহরা নিজে জগের বাকি পানি আর আয়ুশী মগের পানি সবটুকু আয়ানের উপর ফেলে দিল!অতঃপর একসাথে বলে উঠলো ,”ফেলে দিলাম!”

আয়ান ক্ষুব্ধ দৃষ্টিতে দুইজনার দিকে তাকালো।মিনিটের মাঝেই তিনজন একসাথে হাচি দিলো!একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিল!বাইরে থেকে নাহার এসব দেখে নিজেও হাসলেন!বেশি ভালো লাগলো এটা দেখে,আয়ুশী অনেকটা সামলে উঠেছে!আর ইহরা , আয়ানও ওর সাথে বেশ মিশে গেছে।ওদের মাঝে আর না থেকে রুমে গেলেন!বেলাল সাহেব একটু কাজে বাইরে গেছেন।কালকে সকালেই চলে আসবেন!আসলেই এই নিয়ে গল্প করবেন ভেবে রেখেছেন।বয়স বাড়লেও,রোজকার মত নিজের জমিয়ে রাখা কথা শুনানোর অভ্যাস উনার গেলো না।দিন শেষে নিজের প্রিয় মানুষটার সাথে সারাদিনের কথা বলার মাঝে এক অন্যরকম শান্তি।আর প্রিয় মানুষটা মন দিয়ে এসব শুনে দেখে আরও শান্তি লাগে তার!অপেক্ষা শুধু সকাল হওয়ার!

#চলবে

(গল্পে নায়ক নায়িকা নিয়ে কনফিউসন থাকুন একটু!সব বলে দিলে মজা পাবেন না!তবে এতটুকু বলতে পারি জুটি অনেক গুলো আছে!)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here