#অবেলায়_ভালোবাসি
#লেখনিতে_সাবরিন_জাহান
#পর্ব_৩৩
চোখে সূর্যের আলো পড়তেই পিট পিট করে তাকালো আয়ান।বেশ কিছুক্ষণ আগেই ইহরা এসেছিল খাওয়ানোর জন্য!কিন্তু ফেলে দিয়েছে।চোখের সামনে সাদা গোল কামিজ পরিহিত আয়ুশীকে দেখে ওর মুখে হাসি ফুটলো!আয়ুশী গিয়ে আয়ানের পাশে বসলো! আয়ান মলিন কণ্ঠে বলল,”আজও স্বপ্নে এসে ফাঁকি দিয়ে চলে যাবে!”
আয়ুশী কিছু বললো না!
আলতো হাতে আয়ানকে টেনে তুললো!চমকে উঠলো আয়ান!কই এতদিন তো ছোঁয়ার আগেই অদৃশ্য হয়ে যেতো আয়ুশী! আয়ান পুতুলের মত উঠে দাড়ালো!আয়ুশী ওর হাতে টাওয়াল,ট্রাউজার আর টিশার্ট দিয়ে বললো ,”ফ্রেশ হয়ে আসুন!”
“তুমি সত্যি এসেছো আয়ু?”
“ফ্রেশ হয়ে, গোসল করে তারপর আসুন!”
বলেই ওকে ওয়াশরুমে পাঠালো!আয়ান ঘোরের মাঝেই ফ্রেশ হয়ে আসলো!গোসল করে বের হতেই আয়ুশী আয়ানের হাত থেকে টাওয়াল নিয়ে ওকে বিছানায় বসিয়ে দিলো। আয়ান এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে! ও চাইছে এই স্বপ্ন না ভাঙুক!এভাবেই আয়ুশী ওর কাছে থাকুক!আয়ুশী আয়ানের মাথা মুছিয়ে দিতে লাগলো!দরজায় টোকা পড়তেই আয়ানের ঘোর ভাঙলো!
“আয়ান,দরজা লাগিয়েছিস কেনো? খোল!!”
বাইরে থেকে চিন্তিত হয়ে ডাকছে ফাহিন।কখনো আয়ানের দরজা কখনো বন্ধ পায় নি!আজ এভাবে বন্ধ দেখে চিন্তিত হলো!
আয়ুশী বলে উঠলো,”দরজা খুলুন!”
আয়ান উঠে দরজা খুললো। দরজা খোলার সাথে সাথে ফাহিন কিছু বলতে নেয়ার জন্য মুখ খুলতে নিলেও বলতে পারে না!অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে!আয়ানের মুখে মুচকি হাঁসি!
“আয়ান তুই?”
“আয়ুশী এসেছে!”
“হোয়াট?কোথায়?”
“এইতো…”
বলেই পিছে তাকাতে দেখলো আয়ুশী নেই!
আয়ান তড়িঘড়ি ভিতরে এসে আশেপাশে ওকে খুঁজলো!না নেই ঘরে কেউ!
“কোথায় আয়ুশী?”
“এখানেই ছিল ও!আমার মাথা মুছে দিচ্ছিলো!”
ফাহিন দীর্ঘশ্বাস ফেললো!
“তুই আয়ুকে ইমাজিনেশন করেছিস আয়ান!”
“আরে না ও সত্যি ছিল!”
“আয়ান! আয়ুশী এখানে নেই…তোর আজও হিলিউসন হয়েছে!”
“কিন্তু ও যে আমার মাথা মুছে দিচ্ছিলো!”
“সব হিলিউশন আয়ান!আয়ু আসেনি এখানে…”
বিছানায় মাথা চেপে বসে পড়লো আয়ান!আজও ফাঁকি দিয়ে চলে গেলো আয়ুশী? ফাহিন দীর্ঘশ্বাস ফেললো!ছেলেটার অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে!
“আরে ডাক্তার!কেমন আছেন?”
আয়ুশীর আওয়াজে দুইজনই চমকে তাকালো! ফাহিন অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো!
“তুমি?”
“একটু আগেই এসেছি!দুপুর টাইম , কেউ ছিলো না বসার ঘরে!তাই এখানে আসলাম… স্যার এর অবস্থা দেখে ফ্রেশ করালাম!”
“তুমি সত্যি এসেছো?”
আয়ুশী হাসলো!
“ছোট আম্মু কি ঘুমাচ্ছে?*
ফাহিন কিছু না বলেই জোড়ে জোড়ে ইহরা , নাহারকে ডাকতে লাগলো! ফাহিনের এমন হাঁকানো শুনে দৌড়ে আসলো ইহরা ,তার পিছু পিছু নাহার আর ডেইজি!
“এভাবে চিল্লাচ্ছো কেনো…”
বলতে বলতেই ওর আয়ুশীর দিকে চোখ যায়,!ওখানেই থমকে দাড়িয়ে থাকে…কিছুক্ষণ যেতেই এক দৌড়ে আয়ুশীকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে!
“আপু?”
“চুপ কথা বলবে না,স্বা’র্থপর কোথাকার!”
আয়ুশী হাসলো!
“সরি আপু…”
“ফাজিল মেয়ে!কেমনে ছিলে আমাদের ছাড়া?”
“চলে এসেছি তো!”
নাহার গম্ভীর গলায় বললো,”এখানে আসতে কে বলেছে ওকে?”
আয়ুশী ইহরাকে ছেড়ে নাহারের সামনে গিয়ে বললো,”ও ছোট আম্মু!এই দেখো,কানে ধরছি!এখনও রাগ করে থাকবে?”
“আমি তোমায় চিনি না!”
“বেশ,তাহলে চলে যাচ্ছি!”
বলে পা বাড়াতে নিলেই নাহার ওর হাত ধরে টান দিলেন!ওর কান টেনে বললেন,”খুব পেকে গেছিস তাই না?”
“লাগছে ছোট আম্মু!সরি সরি…”
নাহার হেসে জড়িয়ে ধরলেন ওকে!
মাঝে ডেইজি গলা ঝেড়ে বললো,”আমাকে তো কেউ পাত্তাই দিচ্ছে না!”
আয়ুশী নাহারকে ছেড়ে ওর সামনে গিয়ে বললো,”বেশ মোটা হয়ে গেছো…”
মুখটা ডেইজির কানের কাছে নিয়ে বললো,”ডা’ইনি আপু!”
ডেইজি মেকি রাগ দেখালো!পর মুহূর্তেই ওকে জড়িয়ে ধরলো ও!
“তোমার এই ডাকটা ভীষণ মিস করেছি!”
আয়ুশীকে পাওয়া মাত্রই সবাই রাজ্যজুড়ে আলাপ জুড়ে দিল। আয়ান নিষ্পলক তাকিয়ে রইলো!
__________________________________
নিজের রুমে গোসল করে বেরিয়ে আসতেই ডেইজিকে বিছানায় বসে থাকতে দেখলো!!কিছু না বলেই বারান্দায় কি তোয়ালে মেলে দিলো!
“আয়ানের সাথে কথা বলেছো?”
“হুমম!এসেই তো ওখানে গেলাম!”
“সেই কথা বলার কথা বলছি না!তুমি বুঝতে পারছো কি বলছি আমি!”
“ইহরাপু আর ছোট আম্মু কি করে?”
“আয়ু!”
আয়ুশী উত্তর দিলো না।ডেইজি ওর সামনে দাড়িয়ে বললো,”জানো রাগ ,জেদ ভালো!তবে এতটাও না!শেষ একটা সুযোগ দিয়েই দেখো না!রাগ মানুষকে ধ্বংস করে ফেলে! আয়ান তো সাজা পেয়েছে…প্লিজ আর রেগে থেকো না!”
“নিচে চলো!”
“আবারও এড়িয়ে গেলে!আয়ু,একটা সম্পর্কে রাগ থাকা ভালো।কিন্তু এতটাও না !সম্পর্ক টিকাতে একটু কম্প্রোমাইজ করতে হয়!”
আয়ুশী কিছু না বলে নিচে গেলো!
__________________________________
বিকেলে ছাদে গাছে পানি দিচ্ছিলো আয়ুশী। সেই সময় এলো আয়ান!
“এতদিনে গাছ গুলো তার অরজিনাল মালিককে পেলো!”
আয়ুশী কিছু না বলেই পানি দেয়া শেষ করে নিচে যেতে নিলেই আয়ান হাত ধরে আটকালো!
“কিছু বলবেন?”
“এখনও রেগে থাকবে?”
“রেগে নেই তো আমি!কোন অধিকারে রাগ করবো?যেখানে আপনি আফসোস করেন আমাকে ভালোবেসে!সেই অধিকারে?”
“সরি আয়ুশী,তুমি জানোই তো আমার রাগ..”
“আর কত রাগের দোহাই দিবেন আপনি?আর কতবার মেনে নিবো আমি?একটা সম্পর্কে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ভালোবাসা আর বিশ্বাস!সেখানে আপনি বিশ্বাস তো দুর,আমাকে আমার পক্ষে বলার সুযোগটাও দেননি!”
আয়ান নিরুত্তর!
“আমি এখানে শুধু ছোট আম্মুর জন্য এসেছি! আপনার জন্য নয়!”
আয়ান হেসে বললো,”তাহলে এসে সবার আগে মায়ের কাছে যেতে,আমাকে দেখতে আসতে না!”
আয়ুশী নিচের দিকে তাকিয়ে আছে! আয়ান আয়ুশীর আরেকটু কাছে গিয়ে চোখের কোণে থাকা জল আঙ্গুল দিয়ে মুছে বললো,”আমার জন্য না আসলে,এই চোখে জল থাকতো না!”
আয়ুশী ঘুরে চলে যেতে নিলেই আয়ান আবার আটকে নিজের দিকে ঘুরালো!ওর সামনে দুই হাঁটু গেরে কান ধরে বললো,”আমি কথা দিচ্ছি আর কখনো রাগ দেখাবো না!খুব শিক্ষা হয়েছে আমার..এবার থেকে রাগের আগে দুইবার ভাববো!তাও এভাবে থেকো না!প্লিজ!ভীষণ ভালোবাসি তোমায়…ভীষণ!”
আয়ুশী গম্ভীর গলায় বললো,”যদি আবার এমন করেন?”
আয়ান আয়ুশীর ডান হাতটা নিজের বাম বুকে রেখে বললো,”আবার এমন করলে দরকার পড়লে মে’রে দিও,তবে ছেড়ে যেও না!সইতে পারবো না!একদম না….হয় একেবারে মে’রে দিও,কিন্তু ছেড়ে দিয়ে জীবন্ত লা’শ করে দিও না!প্লিজ…”
আয়ুশী নাক টেনে বললো,”মাত্র আট মাসে দেবদাস হয়ে গেছেন!আমি তো ভেবেছিলাম এক বছরের আগে ফিরবোই না…কিন্তু এই পাগলের এমন পাগলামি শুনে না এসে পারলাম না!মানলাম আমি চলে গেছি!তাই বলে এমন উন্মাদ হবেন?”
“প্রাণভোমরা হাত ছাড়া হলে পাগল তো হতেই হয়!”
“আর এমন করলে আসলেই জানে মে’রে দিবো!”,বলেই হেসে দিলো!
আয়ান উঠে আয়ুশীর কপালের সাথে কপাল ঠেকালো!
“ভালোবাসি,মিস ঝামেলা!তুমি ছাড়া তোমার মিস্টার খারুশ যে ভালো থাকবে না!একদম শে’ষ হয়ে যাবে!এই খারুশের খারুশগিরি যে তোমার সাথেই চলে!”
আয়ুশী ফিক করে হেসে চলে!
“আমিও ভালোবাসি!”
দুইজনার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়লো!প্রাপ্তির কান্না এটা!মূল্যবান প্রাপ্তির…আয়ান চট করে আয়ুশীকে ছেড়ে কাঠগোলাপ গাছ থেকে একটা ফুল নিলো!আয়ুশীর কানে গুঁজে দিয়ে বললো,”ভালোবাসি আমার কাঠগোলাপ!যেই ফুল দিয়ে আমার অনুভূতি তৈরি হয়েছিল!সেই ফুল দিয়েই আজ তোমায় স্বীকার করলাম!আবারও ভালোবাসি আমার কাঠগোলাপ!”
আয়ুশী সেই দিনের মত আজও লজ্জামাখা হাসি দিল! যা দেখে আবার মুগ্ধ হলো আয়ান।অপলক তাকিয়ে রইলো!
ছাদের দরজায় দাড়িয়ে ওদের মিলন দেখে খুশি হলো ডেইজি!এই কয়দিনে গাছের যত্ন নিতো ও!ভেবেছিলো আজ আসবে না!কারণ আয়ুশী তো এসে গেছে!ওরাও ওদের মালিককে পেয়ে গেছে..কিন্তু তাও মায়া জন্মে গিয়েছিল!তাই চলে এলো..এসেই ওদের মিলন দেখলো!একটু কষ্টও হচ্ছে,তাও নিজে নিজেই বললো…”খুব খুব খুশি থাকো তোমরা!আর যেনো কোনো বাঁধা না আসে!”
চোখের জল মুছে নিয়ে আবার বললো,”আমার সময় ফুরিয়ে গেছে,এবার যাওয়া দরকার!”
বলেই নিচে চলে গেলো!
#অবেলায়_ভালোবাসি
#লেখনিতে_সাবরিন_জাহান
#পর্ব_৩৪
সময় বহমান! দেখতে দেখতেই কেঁ’টে গেলো আরো কতগুলো দিন! আয়ুশীর ফাইনাল এক্সাম চলছে!ভার্সিটি না গেলেও সীমা আর ইভার থেকে পড়া নিয়ে নিতো ও!এখন এক্সাম দিলেই চলবে!আজকেই লাস্ট এক্সাম…বাড়ি ফিরতেই দেখলো নাহার রান্না করছে!
“কি ব্যাপার ছোট আম্মু?এত এত রান্না যে আজ?”
নাহার মন খারাপ করে বললেন,”ডেইজি চলে যাবে আজ!তাই ওকে শেষবারের মত ওর পছন্দের রান্না করে খাইয়ে দেই!”
“মানে?কোথায় যাবে?”
“কোথায় আবার?লন্ডন ব্যাক করছে ও!”
“আগে তো কিছু বলেনি!”
“আমাকেও বলেনি! আজই বললো,বলে আমরা মন খারাপ করবো তাই আগে বলেনি!”
আয়ুশী কিছু না বলেই উপরে গেলো!ডেইজি নিজের ব্যাগ গুছিয়ে রাখছিল!
“আরে আয়ু!এসে গেছো?পরীক্ষা কেমন হলো?”
“কোথায় যাচ্ছো তুমি?”
“কোথায় আবার?নিজের আসল ঠিকানায়!”
আয়ুশী ডেইজিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললো,”কেনো যাচ্ছো?”
“আর কত থাকবো?পাসপোর্টের মেয়াদ ও তো শেষ হয়ে যাবে!”
“আপু,আমি জানি তুমি লম্বা সফরে এসেছো! সো এসব অজুহাত বাদ দিয়ে বলো কেনো যাচ্ছো?”
ডেইজি মলিন হেসে বললে,”আর কয়েকদিন পর তোমাদের বিয়ে! আশা করি এটাই যথেষ্ট তোমার বুঝার জন্য!”
আয়ুশী অসহায় হয়ে তাকালো!
“আরে আরে!তুমি মন খারাপ করছো কেনো?এমনটা নয় আমি খুশি না!আমি খুব খুশি তোমাদের বিয়ের জন্য,কিন্তু কি বলোতো?আমি এতটাও না শক্ত নই যে,ভালোবাসার মানুষকে অন্য কারো হতে দেখবো!”
বলতে বলতেই মুখ ঘুরিয়ে নিলো ডেইজি!চোখের পানি যেনো বাঁধ মানছে না!চোখ ঝাপটা দিয়ে পানি আটকানোর চেষ্টা করলো ও!হুট করেই আয়ুশী ওকে জড়িয়ে ধরলো!
“আমি তোমার মত এত সুন্দর মনের অধিকারী হতে পারিনি কেনো আপু?নাহলে আজ আমিও পারতাম ভালোবাসার বিসর্জন দিতে!”
ডেইজি ওর পিঠে আস্তে চর দিয়ে বললো,”পাগলী!তুমি পারোনি কারণ তোমার ভালোবাসা এক তরফা নয়!তোমরা একে অপরকে ভালোবাসো!তাইতো এত ভুল-বোঝাবুঝি, মান – অভিমান এর পরেও তোমরা একে অপরকে ভালোবেসে গেছো!”
আয়ুশী ডেইজিকে ছেড়ে দাড়ালো!ডেইজি আয়ুশীর গালে হাত রেখে বলল,”আয়ান যেমন তোমার বিরহে কষ্ট পেয়েছে,আমি জানি তুমিও সেই একই কষ্ট পেয়েছো ওর থেকে দূরে থেকে!তোমাদের মধ্যে একটা জিনিস খুব কম মিললো!সেটা হলো অনুভূতির প্রকাশ…তুমি সরাসরি অনুভূতির প্রকাশ করলেও,কষ্ট গুলো কখনো প্রকাশ করতে পারো না!আয়ানের থেকেও বেশি কঠোর তুমি!কিন্তু ভালোবাসার ক্ষেত্রে সেই কঠোরতা আনতে পারবে না! কারণ আয়ানও তোমাকে পাগলের মত ভালোবাসে! মাঝে তৃতীয় ব্যাক্তি হয়ে গেলাম আমি!কোনো এক অবেলায় আমিও ভালোবেসেছিলাম !শুধু পূর্ণতা পায়নি…অপূর্ণতায় এক ধরনের মোলায়েম স্নিগ্ধতা ও সৌন্দর্য্য থাকে, যা আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না৷ এমনকি পূর্ণতাতেও না।ভালোবাসাই হোক বা অন্য যে কোন অনুভূতি , জোর করে আদায় করার চেয়ে বরং সেটি না পাওয়াই অধিক শ্রেয়।অন্তত মনকে বুঝানো যায়,’ সে আমায় ভালোবাসেনি!’…”
বলেই ডেইজি ব্যাগ গুছাতে লাগলো!
“আপু!”
“হুমম…”
“থেকে যাও না!”
ডেইজি মলিন চোখে তাকালো!আয়ুশী ওর হাত দুটো ধরে বললো,”বলো তো আমায় ছোট বোন ভাবো!তাহলে তাকে ছেড়ে চলে যাবে?”
“ছেড়ে যাচ্ছি কোথায়?ওখানে গেলেও তো কথা হবে!”
“কার কাছে যাবে তুমি?”
“মা বাবা!”
“ওরা তো ব্যাবসা নিয়েই ব্যাস্ত!”
“না এবার ভেবেছে!আমার বিয়ে ঠিক করছে…আর কত ওদের বোঝা হয়ে থাকবো?বয়সতো কম হলো না…আর কেউ কি বিয়ে করতে চাইবে?”
“আমি আয়ানের জীবনে না আসলে হয়তো সবটা অন্যরকম হতো!তুমি কষ্ট পেতে না!”
“কিছু কিছু সময় অপূর্ণতাই ভালো!সব কিছু পূর্ণতা পেয়ে গেলে,আনন্দের ছন্দ টাই হারিয়ে যায়!”
আয়ুশী আর কিছু বললো না!
“রুমে গিয়ে ফ্রেশ হও,রাতের ফ্লাইট আমার! সন্ধ্যায় বের হবো..”
আয়ুশী চুপচাপ ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হলো!বাড়ির প্রায় সবার মন খারাপ!
__________________________________
বিকেলে
বসার ঘরে ডেইজি সবার সাথে গল্প করছে!কিন্তু এই আসরে আয়ুশী মিসিং!তাই আয়ান আয়ুশীর খোঁজে ওর রুমে গেলো!বিছানায় উদাস মনে বসে আছে আয়ুশী। আয়ান গিয়ে ওর পাশে বসলো!
“তো মিস ঝামেলার আজকে দেবদাসী হওয়ার শখ উঠলো নাকি?”
“আমি একদম মজার মুডে নেই!”
“আজব,সিরিয়াস কথা বলছি!তাও তোমার মজা লাগছে?”
“আপনার সিরিয়াস কথা আপনার পকেটে রাখুন!”
“আচ্ছা কি হয়েছে এটা তো বলো?”
আয়ুশী আয়ানের এক জড়িয়ে ওর কাঁধে মাথা রাখলো!তারপর মলিন কণ্ঠে বললো,”নিজেকে অপরাধী লাগছে!মনে হচ্ছে আপনার জীবনে না এলে আজ ডেইজি আপু এইভাবে কষ্ট পেতো না!জানেন আপু কেনো যাচ্ছে?শুধু নিজের ভালোবাসার মানুষটার বিয়ে অন্য কারো সাথে দেখতে পারবে না!ভীষণ অপরাধবোধ হচ্ছে!”
আয়ান দীর্ঘশ্বাস নিলো।
“আচ্ছা আমাদের তকদীরের মালিক কে?”
“আল্লাহ!”
“আমাদের সাথে যা যা হয় সব কার ইচ্ছায়?”
“আল্লাহ তায়ালার!”
“তাহলে?”
“কি?”
“তুমি আমার জীবনে আসার মাঝে তোমার কোনো হাত নেই!সব আমাদের সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছেতে হয়!তিনি যা চান তাই ই হয়!আমার ভাগ্যে তুমি ছিলে!তাই এসেছো!এখানে নিজের দোষ কেনো খুজছো?”
আয়ুশী নিরুত্তর!
“ডেইজি ভালোবেসেছে,এটা অন্যায় না!তবে ও ভুল মানুষকে ভালোবেসেছে!”
“ডেইজি আপুর বিয়ে নিয়ে কথা বলছে ওর ফ্যামিলি!”
“স্বাভাবিক,আর কত এভাবে চলবে?”
“আপু হয়তো রাজি না!”
আয়ান উত্তর দিলো না!
“আমি না চাই যে আপুর জীবনে নতুন কারোর আগমন হোক,যে আপুর অতীত ভুলিয়ে নতুন ভবিষ্যতের সূচনা করবে!তার বয়স কোনো আওতায় নিবে না!”
আয়ান হাসলো!
“হাসছেন কেনো?”
“ভাবছি!”
“কি?”
“যেই মেয়েটা ডেইজিকে প্রথমে সহ্যই করতে পারতো না,সে এখন তার জন্য কত ভাবছে!”
আয়ুশী আয়ানের থেকে দূরে সরে বললো,”আবার পুরোনো কথা টানেন?”
“আচ্ছা সরি সরি!”
“আপুকে থাকতে বলুন না!”
“বলেছিলাম,শুনলো না!বাট তুমি একটা কাজ করলে পারো!”
“কি কাজ?”
“ডেইজিকে আটকানোর জন্য থিওরি এপ্লাই !”
“কিসের থিওরি?”
“কেনো সীমার প্রপোজের থিওরি!”
সঙ্গে সঙ্গে আয়ুশী ওর দুই গালে হাত দিলো!তাই দেখে জোড়ে জোড়ে হাসলো আয়ান!
_________________________________
এয়ারপোর্ট এ বসে আছে ডেইজি!ওরা কেউ আসেনি ওর সাথে। ব্যাপারটায় অবাক হলেও পাত্তা দেয় নি!মোবাইলে আয়ান আর আয়ুশীর হাস্যজ্বল ছবি ভেসে আছে!আয়ানের ছবিটা জুম করে দেখলো ও!মনে মনে আওরালো,
“না পাওয়ার জ্বালা যে কী ভীষণ; তা যে বোঝে কেবল সে-ই তা জানে । পাবোনা তোমায় জেনেও ভালোবেসেছি অফুরান ;দেখেছি তোমায় দূর থেকে, চাইনি কখনো ভালোবাসার প্রতিদান।আজও ভালোবেসে যাবো! নীরবে, নিভৃতে!”
চোখ মুছে নিলো ও!বেশ কয়েকজন ওকে দেখছে।উঠে ভিতরে যাবে তখনই ফোন বেজে উঠলো। আয়ুশীর ফোন দেখে রিসিভ করলো!কিছু বলবে তার আগেই আয়ুশী ভীত কণ্ঠে বলল,” আপু হেল্প…”
ডেইজি বিচলিত হয়ে বললো,”কি হয়েছে আয়ু?”
আয়ুশী কিছু বললো না!লম্বা লম্বা শ্বাস নিচ্ছে।
“আপু…”
“আয়ু,কি হয়েছে?তুমি কোথায়?”
“বাসায়…আপু…”
আর কিছু বললো না!চুপ করে গেলো।ডেইজি বেশ কয়েকবার হ্যালো হ্যালো করলো!কিন্তু কোনো উত্তর পেলো না…কোনমতে হাত ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে সিএনজি নিলো!ভীষণ চিন্তা হচ্ছে তার…কি হলো আয়ুর?
বাড়িতে ফিরেই অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেলো ও! আয়ুশী বসে বসে চিপস খাচ্ছে আর মুভি দেখছে।
“আয়ু?”
“ওহ এসে গেছো!দেখো দেখো মুভির এই সিনটা কত কষ্টের!”
“তুমি যে ফোনে বললে হেল্প?”
আয়ুশী আমতা আমতা করতে লাগলো!অতঃপর আবার দাত কেলিয়ে বললো,”সারপ্রাইজ!”
ডেইজি এবার অবাক হওয়ার সীমা পার করে ফেললো।প্রচন্ড রাগ উঠলো ওর।এই মেয়ে ওর সাথে মশকরা করছিল,আর ও ভাবলো কি না কি হয়েছে!
“তুমি আমার সাথে মজা নিচ্ছিলে?”
“ঐরকমই!”
বলতে না বলতেই চর পড়লো ওর গালে!ডান গালে হাত দিয়ে চোখ বড় বড় তাকিয়ে রইলো ও!
“তোমার কোনো ধারণা আছে আমি কতটা চিন্তিত ছিলাম?”
“সীমার প্রপোজাল থিওরিতে আগের বারও থা’প্পড় পড়েছিল!সেইটা পরিমাণে দ্বিগুণ ছিল!বাট ব্যাথা ভাগে ভাগে পেয়েছি!এইবার এক থা’প্পড়েই গাল জ্বলছে!”
তখনই আয়ান আর ইহরার হাসির আওয়াজ পাওয়া গেলো!আড়াল থেকে ওরা বেরিয়ে এলো!এতক্ষণ ডেইজির অপেক্ষাই করছিল ওরা!ডেইজি কোমরে হাত দিয়ে বললো,”মানে তোরাও যুক্ত ছিলি?”
“শুধু ওরা না ,আমিও!”
বলতে বলতেই নাহার রুম থেকে বেরিয়ে এলেন!সাথে বেলালও!ডেইজি আফসোসের সুরে বলল,”শেষ মেষ তুমিও?”
“কি করবো?তুমি থাকতে রাজি ই হচ্ছিলে না!”
ডেইজি আয়ুশীর পাশে বসে বললো,”তোমাদের জন্য আমার জামা কাপড়ের ব্যাগ এয়ারপোর্টেই ফেলে এসেছি!”
তখনই ফাহিন ঢুকতে ঢুকতে বললো,”যাব ফাহিন হো সাথ,তো ডারনে কি কেয়া বাত?নে তোর ব্যাগ!”
“কোথায় পেলি?”
“আমি তো তোর সাথেই ছিলাম!শুধু এসেছি আলাদা আলাদা!তুই ব্যাগ ফেলে দৌড়াচ্ছিলি,তাই ভাগ উঠিয়ে আমি আসলাম!রাস্তায় জ্যাম থাকায় একটু দেরিতে এসেছি আরকি!”
ডেইজি দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললো,”সব পা’গল!”
বেলাল সাহেব বলে উঠলেন,”এটা একদম ঠিক বলেছো!কিন্তু আমি বাদে!”
নাহার ফুঁসে উঠে বললেন,”তুমি তো পা’গলেরও পা’গল!”
মুহূর্তেই হাসির রোল পড়ে গেলো! ডেইজিও হাসলো…মনে মনে চিন্তা করলো,”দরকার কি একজনের জন্য কষ্ট পেয়ে এদের থেকে দূরে যাওয়ার?থাকি ই না এখানে…অন্তত সুন্দর একটা পরিবার পাবো!”
#চলবে
#চলবে
(একটু ফুফির বাসায় এসেছি!এখন মানুষের বাসায় তো ফোন নিয়ে থাকা যায় না… ফুফিও আমায় পেয়ে গল্প জুড়ে দিছে…এসবের মাঝে আর লিখা হয়নি!তাও অল্প করে লিখে রেখেছিলাম!আর এখন কিছুটা লিখে দিলাম!ছোট পর্ব আর দেরির জন্য দুঃখিত)