#কাঞ্চাসোনা_২
#পর্ব_০৬
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
শাহীন স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে।তার ধারণা অনুযায়ী ধ্রুব ঠিক টোপ ফেলে দিয়েছে।কিন্তু তার যে সকালের পাশে অন্যকাউকে একদম সহ্য হচ্ছে না।সকালের জন্যই তো তোহার সাথে ব্রেকাপ করে ফেলেছে।আর এখন এই পাখি তার খাঁচায় না এসে অন্য খাঁচায় যাচ্ছে।এটা হতে দেয়া যাবে না।শাহীনের উপস্থিতি সকাল বা ধ্রুব কেউই আশা করেনি।হঠাৎ তার আগমনে দুজনে দূরে সরে যায়।ধ্রুব শাহীনের দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করে বললো,
“আর বলো না মিতু নাকি চন্দ্রগ্রহণ দেখবে তাই এতো রাতেই ছাদে এলাম।”
শাহীন আসার পথেই মিতুকে রান্নাঘরে দেখেছে তারপরও আবার জিজ্ঞেস করলো,
“মিতু কই?”
ধ্রুব একপলক সকালের দিকে তাকিয়ে বললো,
“মিতু চা বানাতে গিয়েছে।”
শাহীন সকালের দিকে তাকিয়ে বললো,
“সকাল গেলে না যে?”
সকাল ঢোক গিলে ধ্রুবর দিকে তাকায়।এই শাহীনের চোখের দৃষ্টি তার ভালো লাগে না আবার কেমন খোঁচা দিয়ে কথা বলে।ধ্রুব সকালের চোখের দিকে তাকায় সকালের মনের ভাব বুঝে শাহীনের দিকে তাকিয়ে বললো,
“সকাল যায় নি।চা বানাতে দুজন লাগে নাকি?”
শাহীন দাঁতে দাঁত চেপে সকালের দিকে তাকিয়ে থাকে।তার ইচ্ছে করছে সকালের গালে ঠাস করে থা/প্পড় মে/রে দিতে।কতোবড়ো সাহস এতো রাতে একা একটা ছেলের সাথে ছাদে দাঁড়িয়ে কথা বলছে।ধ্রুব আর সকাল যে খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে ছিলো এটা তার চোখের দৃষ্টি এড়ায়নি।ফর্সা টকটকে মাখনের মতো শরীরটা দেখলেই শাহীনের ইচ্ছে করে ছুঁয়ে দিতে।কতোগুলো গালফ্রেন্ডকেই তো ছুঁয়ে দিয়েছে কিন্তু সকালের সুন্দর নিটোল গায়ের দিকে তাকালে মন বি/ষিয়ে যায়।কাছে পাওয়ার অদম্য ইচ্ছা গলা চে/পে ধরে।কেউ কিছু বলার আগে মিতু এলো সেও এই সময় শাহীনকে দেখে অবাক হয়।সে তিন কাপ চা এনেছে আরেক কাপ আনতে আবার নিচে ছুটে যায়।শাহীন ধ্রুবদের থেকে কিছুটা দূরেই দাঁড়ায়।চুপচাপ দাঁড়িয়ে আড়চোখে দুজনকে পর্যবেক্ষণ করে।তিন চার দিন হয়ে গেছে তার মাকে সকালের কথা বলেছে কিন্তু উনি এখনো কিছুই যানায়নি।শাহীন সিদ্ধান্ত নেয় সকালেই মাকে আবার বলবে।সকালকে তার থেকে ধ্রুব কেড়ে নেবে তা হতে পারেনা।
ধ্রুব আর সকাল আড়ষ্ট হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।পরের একঘন্টা শাহীন এক জায়গায় দাঁড়িয়ে চন্দ্রগ্রহণ দেখার নাম করে দুজনকে দেখেছে।শাহীন উপস্থিত থাকায় সকাল আর ধ্রুবর মাঝে কোনো কথা হয়নি কিন্তু চোখে চোখ পড়েছে হাজার বার।চন্দ্রগ্রহণ দেখার পরে সবাই নেমে গেলে শাহীন নামে।সকালের লম্বা বেনুনি কোমড় ছাপিয়ে গেছে।শাহীন লোলুপ দৃষ্টিতে সকালকে দেখে।মেয়েটার হাটাও এতো সুন্দর!উফ সে তো পুরো পা/গল হয়ে যাচ্ছে।
সকাল বিছানায় শুয়ে মনে হলো ধ্রুব তাকে পছন্দ করে।আর তারও ধ্রুবকে ভিষণ ভালো লাগে।দুজনের চোখের তারায় একি উপন্যাসের সূচনা বার্তা।সকাল মনে প্রাণে চাইছে ধ্রুব সকালকে বিয়ে করে নিক।ধ্রুবর কাছে গেলে নিজেকে এতো পাগ/ল পা/গল লাগে!সকাল তো গ্রামে থাকতে এমন ছিলো না তাহলে এখন এসব কি হচ্ছে?সকাল এতো কিছু ভাবতে চায় না তার বয়সটাও তো এমন,এই বয়সে প্রেমের বাতাস বয়,উত্তাল প্রেম ঢেউয়ে কিনারা ছাপিয়ে কিশোরীর নরম মন ছুঁয়ে দেয়।আহা কি আনন্দময় প্রেম,কি আনন্দময় মূহুর্ত।
সামির মোবাইল হাতে নিয়ে সময় দেখে,প্রায় দুইটা বাজতে চললো।হাতের কনুই টেবিলে ঠেকিয়ে তালুতে মাথা রাখে।সামনে বইয়ের স্তুপ।প্রায় সব প্রশ্নই সামির পারে তবুও কেনো জানি চাকরিটাই হচ্ছে না আর চাকরি না হলে তার কিচ্ছুই হচ্ছে না।পড়তে পড়তে সামিরের চোখে মিতুর কান্নাভেজা চেহারাটা ভেসে উঠে।মেয়েটা এতো কাঁদে কেনো?সে বোধহয় জানে না তার কান্না সামিরের সহ্য হয় না আর জানবেই বা কি করে তাকে জানানোর কোনো যোগ্যতাই যে সামিরের নেই।সামির চুপচাপ টেবিলে মাথা রাখে।বিরবির করে কিছু অপ্রকাশিত কথা বলে যায় যে কথাগুলো স্বয়ং সামির ছাড়া কেউ শুনে না জানে না।আর যার উদ্যেশ্য করে কথাগুলো বলে সে আদৌ জানবে কিনা সন্দেহ।
মিতুর ঘুম আসছেনা।এপাশ ওপাশ করে সোজা হয়ে শোয়।চোখজোড়া ড্রিম লাইটের উপরে স্থির।সকাল আর ধ্রুবর মিষ্টি খুনসুটি দেখলে তার খুব ভালো লাগে আর তখন চোখের তারায় সামিরের হাসিহাসি মুখটা ভেসে উঠে।নিঝুম রাতে হিম বাতাস গায়ে মাখিয়ে মিতুর সামিরকে খুব মনে পরে।আলতো ঠোঁটের কাঁপন কাছে পাওয়ার অদম্য ইচ্ছা জানিয়ে যায়।মিতু ভাবে সামির কি ঘুমিয়ে গেছে?ঘুমাবেই তো এতো রাতে কেউ জেগে থাকে।তারপরেও মিতু মোবাইল হাতে নিয়ে নি/লজ্জ হয়ে সামিরের নাম্বারে মেসেজ পাঠায় তার ধারনা সকালে হলেও তো দেখবে।মেসেজিটি ছিলো এমন,
“এই ছেলে!আজকে যে চাঁদ লুকিয়ে গেছে তার খবর কি রাখেন?এমন লুকোছাপের মুহূর্তে রমনীর লোকানোর মানুষ চাই।চাঁদের মতো হতে তার বড়ো সাধ।”
মেসেজটি পাঠিয়ে মিতু চোখ খিচে পড়ে থাকে।পাঠানোর পর ভিষণ লজ্জা লাগছে।ইশ সামির কি ভাববে?খারাপ ভাববে নিশ্চয়ই?তাতে কি সামিরের চোখে সে এমনিতেও নি/লজ্জ বেহায়া।
সামির তখন টেবিলে মাথা রেখে শুয়ে আছে।মোবাইলের কাঁপনে মাথা উচু করে তাকায় মিতুর মেসেজ দেখে নড়েচড়ে বসে।মেয়েটা ঘুমোয় নি?এতো রাতে মেসেজ দিচ্ছে কেনো?সামির মেসেজটা পড়ে হাসে।টেবিলে মাথা রেখে মিতুকে মেসেজ লিখে,
“চাঁদের গায়ে হাজারো ক/লঙ্ক!বালিকা যে চাঁদের মতো লুকিয়ে চাঁদের মতোই হতে চায় তাহলে কিন্তু চাঁদের মতো তারও ক/লঙ্ক লাগতে পারে।অবুজ মেয়েটা কি এমনটাই চায়?”
সামির মেসেজটি পাঠিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে।চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর বৃথা চেষ্টা করে।
মিতু এতো রাতে সামিরের মেসেজ আশা করেনি সে ভেবেছিলো সামির ঘুমিয়ে গেছে কিন্তু তাকে সম্পূর্ণ ভুল প্রমানিত করে সামির মেসেজ পাঠিয়েছে।সে দুরুদুরু বুকে মেসেজটা পড়ে তারপর চোখবন্ধ করে নিজেকে লুকাতে চায়।সামিরের জন্য চাঁদের মতো একটু আধটু কলঙ্কিত হতে দোষের কী?কাঁপা কাঁপা হাতে লিখলো,
“চাঁদের গায়ে ক/লঙ্ক থাকা সত্বেও কতো সুন্দর,ক/লঙ্ক গায়ে মেখেও যদি এতো সুন্দর থাকা যায় আমি কল/ঙ্কিত হতে রাজি।বাকিটা আপনি যানেন।”
সামির চুপ করে তাকিয়ে থাকে,তার শ্বাস ঘন হয়ে আসছে।সে মেসেজ পাঠায়।
“তুমি পা/গল।বদ্ধ উন্মা/দ।”
মিতু ফোন করে।সামির রিসিভ করে বললো,
“পা/গলদের সাথে কথা বলবোনা।”
মিতু সত্যিই কথা বলেনা।চুপচাপ মোবাইল কানে ধরে প্রিয় পুরুষের নিঃশ্বাসের গাঢ় শব্দ শুনে।সামির আবার বলে,
“কথা না বললে রেখে দেই?”
মিতু ফট করে বললো,
“না।”
সামির হাসে।মিতু তার সাথে কথা বলছে তার মানে মিতুর মুখে মুচকি হাসির রেশ ফুটে উঠেছে সে চোখ বন্ধ করে মিতুর হাসি মুখটা দেখার চেষ্টা করে।
“এতো রাতে ফোন দিয়েছো কেনো?”
“কোনো ফোন দিতে মানা নাকি?”
“হ্যাঁ।”
মিতু ভ্রু কুঁচকে বললো,
“কিসের মানা শুনি!”
“প্রাপ্তবয়ষ্ক ছেলেকে এতো রাতে ফোন দিতে নেই।”
“কেনো?”
“কারণটা তোমাকে বলা যাবেনা।”
মিতুর অভিমান হয়।অভিমানে গাল ফুলিয়ে বললো,
“কাকে বলা যাবে?”
সামির সোজা উত্তর দেয়,
“আমার বউকে।”
মিতু শ্বাস আটকে বললো,
“বউ কে?”
“যাকে বিয়ে করবো সে।”
মিতু আস্তে করে বললো,
“আমি চাঁদ হতে চাই।”
“হবে।”
মিতু খুব আস্তে করে বললো,
“আপনার চাঁদ।”
সামির চোখ বন্ধ করে রাখে।মিতুর কথায় সাড়া দিতে ইচ্ছে করছে।
“পা/গল নাকি!”
“আপনার পা/গল।”
সামির মৃদু গলায় বলে,
“চাঁদের দাম অনেক আমার মতো বেকার,এতীম ছেলের কাছ চাঁদ দিবে কে?”
“কেউ দিতে হবে না চাঁদ স্বয়ং আপনার অপেক্ষায়।”
“পা/গলামি করোনা তো।”
মিতু কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে তারপর ফিসফিস করে বললো,
“সামির ভাই।”
“হুম।”
মিতু আস্তে অথচ স্পষ্ট করে বললো,
“ভালোবাসি,খুব বেশী।”
সামির দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে।হাত দিয়ে চুল টেনে ধরে।বুকের মাঝে টনটনে ব্যাথা অনুভব করে।গলার স্বর শক্ত করে বললো,
“আমাকে আর কখনো ফোন দেবেনা।”
মিতু কিছু বলার আগেই খুট করে ফোনটা কেঁটে যায়।মিতু কিছুক্ষণ মোবাইলটার দিকে তাকিয়ে ঝরঝর করে কেঁদে দেয়।সামির কবে বুঝবে,তার কান্নার দিন কবে শেষ হবে?
সকালে শাহীন তাছলিমা কে বললো,
“আম্মা দাদীকে সকালের ব্যাপারে বলেছো?”
“না।”
তাছলিমার কথায় শাহীন রে/গে যায়।দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
“আমি সকালকে খুব শীঘ্রই বিয়ে করতে চাই।দাদীকে জানাও এখনি।”
তাছলিমা বিরক্ত হয়।চোখ ছোট করে বললো,
“এতো তাড়া কিসের?”
“এতো কথা বলো কেনো?যাও না।”
তাছলিমা ছেলের উপরে অসন্তুষ্ট।ধীর পায়ে শাশুড়ির রুমের দিকে এগিয়ে যায়।নুরজাহান পানের বাটা থেকে পান খাচ্ছেন।তাছলিমা গিয়ে নালিশের সুরে বললো,
“আম্মা এই মেয়ে বাড়ি যাবে কবে?”
নুরজাহান ভ্রু কুঁচকে বলেন,
“কোন মেয়ে?”
“সকালের কথা বলছি।মনোয়ারা তো তার গুষ্ঠিসুদ্ধু মানুষ আনতে পারলে বাঁচে।ঘরে যে দুই দুইটা জোয়ান ছেলে আছে সে ব্যাপারে কোনো চিন্তা আছে?”
নুরজাহান কথাটা ভাবে।তারপর অনুসন্ধানী দৃষ্টিতে তাছলিমার দিকে তাকিয়ে বললো,
“কি হয়েছে খুলে বলো।”
“আপনার নাতী তো এই মেয়েকে পছন্দ করে ফেলেছে।গ্রামের মেয়ে আমার ছেলের বউ হবে ভাবা যায়?”
“শাহীন যেহেতু পছন্দ করেছে তাহলে তুমি এতো লাফাও কেনো?আর সকাল তো দেখতে শুনতে ভালোই।আর যথেষ্ট সুন্দরী।”
তাছলিমা মাথা নেড়ে বললো,
“না না এটা অসম্ভব।”
“বিয়ে যে করবো তাকে এসব সম্ভব অসম্ভব ভাবতে দাও।”
“আপনি কি বলেন?”
“আমার কলিজার নাতী দামী কিছু তো চায় নাই সামান্য একটা মেয়েই তো চাইছে।এটা অপূর্ণ রাখবো?”
তাছলিমা মাথা নেড়ে বললো,
“আম্মা…”
তাছলিমার কথা শেষ হবার আগেই নুরজাহান বললো,
“যা করার আমি করবো তুমি যাও।”
তাছলিমা মুখ কালো করে বেরিয়ে যায়।
ধ্রুবর অফিসে আজকে রাতে পার্টি আছে।তার উপর মেনেজমেন্ট এর দায়িত্ব পড়েছে বিধায় এতো তাড়াতাড়ি চলে গেছে সন্ধ্যায় মিতু আর সকালকে নিয়ে যাবে।সকাল আর মিতু খুব খুশী।কিভাবে সাজবে তারও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ে গেছে।
ধ্রুব বাসায় নেই বিধায় তাকে ছাড়াই সবাই দুপুরে খেতে বসেছে।
তার নুরজাহান গলা খাকারি দিয়ে বললো,
“মনোয়ারা সকালের বিয়ে নিয়ে কিছু ভেবেছো?”
শাহীন বিয়ের কথা শুনে বুঝতে পারে তার কথাই বলবে।সকাল ল/জ্জায় মাথা নিচু করে রাখে।মনোয়ারা হেসে বললো,
“ভাবার কি আছে আম্মা?ভালো বিয়ে পেলে মেয়ে দিতে ক্ষ/তি কি?”
নুরজাহান সকালের দিকে তাকিয়ে বললো,
“আমার নাতীরে কেমন লাগে গো সুন্দরী?রাজি আছো তো নাকি?”
সকাল মনে করলো নুরজাহান ধ্রুবর কথাই বলছে যেহেতু আরো আগেও ধ্রুব আর তার বিয়ের কথা হয়েছে।লাজুক হেসে মাথা নিচু করে ফেলে।নুরজাহান সকালের লাজুক হাসির দিকে তাকিয়ে বললো,
“ছোট বউ,সকালের মা বাবাকে খবর দাও।আমার নাতীর খুবই পছন্দ হয়েছে,খুব শীঘ্রই বিয়ের আয়োজন শুরু হবে।”
সকালের মনে আতশবাজি ফোটে।লাল নীল স্বপ্নে হৃদয় দুলে উঠে।অথচ সে বুঝতেও পারে না বর ধ্রুব নয় বর শাহীন।আহা নিয়তি!মানুষের জীবন এমন কেনো?যাকে চায় তাকে পায় না যাকে পায় তাকে চায় না।
চলবে…….
“সবার রেসপন্স পেয়ে আমি ভিষণ খুশী।এভাবে রেসপন্স করে পাশে থাকুন।কমেন্টে নিজের মতামত লিখে আমাকে জানিয়ে যান আপনার সুক্ষ্ম অনুভূতির কথা।”