মিস্টার সিনিয়র পর্ব -১৩

#মিস্টার__সিনিয়র
#পর্বসংখ্যা_১৩(১)
®ফিহা আহমেদ

জোভান লোকটির শার্টের কলার ধরে দাঁড়িয়ে আছে। লোকটি ভয়ে কাচুমাচু হয়ে আছে।

“বল আমাকে বালিশ চাপা দিয়ে মারতে চেয়েছিলি কেন? (জোভান রেগে কিছুটা চিৎকার করে বললো)

লোকটি ভীতু চোখে জোভানের দিকে তাকিয়ে আছে।জোভান লোকটির গালে থাপ্পড় মারলো।ভয়ে লোকটি কান্না করে দিল।

“আমাকে মারার সময় মনে ছিল না এখন কান্না করছিস কেন? (জোভান লোকটির গালে আরেকটা থাপ্পড় দিয়ে বললো)

“আমি কি করেছি ভাই আমায় মারছেন কেন? (লোকটি কান্না করতে করতে বললো)

লোকটির কথা শুনে যেন জোভান আকাশ থেকে পড়লো। জোভান চেঁচিয়ে বলে উঠলো,,,,,

“হোয়াট”

একজন লোক আপনার বাড়ি থেকে বের হয়ে আমায় রাস্তায় দেখে বললো এইখানে নাকি চৌধুরী সাহেব আমায় যেতে বলেছে।

জোভান বুঝতে পারলো এই লোকটা সেই লোকটা নয়। বরং সেই লোকটা জোভানকে বোকা বানিয়ে চলে গেল। জোভান সামনে থাকা লোকটাকে জড়িয়ে ধরে সরি বললো। লোকটার ভয় কিছুটা কমে গেল জোভানকে জড়িয়ে ধরতে দেখে।

“আপনি যেতে পারেন এখানে কেউ আপনাকে ডাকেনি। যেই লোকটা বলেছে সে আপনাকে বোকা বানিয়েছে সাথে আমাকে ও। আপনি লোকটার চেহারা দেখেছেন? (জোভান)

“না মুখে মাস্ক ছিল” ।

“আচ্ছা ঠিক আছে যেতে পারেন” । (জোভান)

জোভানের এখন নিজের চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে। অল্পের জন্য হাতছাড়া হয়ে গেল লোকটি।

(~ “ফ্ল্যাশব্যাক”

বেলকনি দিয়ে কারোর আসার শব্দ শুনে জোভানের ঘুম ভেঙ্গে গেল। জোভান ঘুমের ভান ধরে ছিল।লোকটিকে বুঝালো সে ঘুমাচ্ছে। লোকটা বালিশ চাপা দিতেই জোভানের প্রথম কষ্ট হচ্ছিল পড়ে জোভান নিজ থেকে নিশ্বাস বন্ধ করে দিল।আর মরে যাওয়ার অভিনয় করলো। লোকটি চলে যেতেই জোভান শোয়া থেকে ওঠে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলো।আর একটু হলে সে নিশ্চিত মারা যেত।জোভান শোয়া থেকে ওঠে লোকটাকে ধরার আগেই লোকটা জোভানকে বোকা বানিয়ে চলে গেল।)

_____

জোভান ধীর পায়ে নিজের রুমে আসলো। খাটের ওপর বসে চোখ বন্ধ করে বসে রইলো জোভান।হঠাৎ জোভান মাথায় দু’হাত চেপে ধরে চিৎকার শুরু করলো। জোভানের চিৎকারে বাড়ির সবার ঘুম ভেঙ্গে গেল।

জিহা,সিফাত চৌধুরী আর মিসেস স্বর্ণা জোভানের রুমে আসলো।জোভান মাথায় হাত দিয়ে চটপট করছে আর চিৎকার করছে।মিসেস স্বর্ণা জোভানের কাছে এসে কান্না করতে করতে বলে,,,,

“কি হয়েছে বাবা এমন করছিস কেন?

“মম আমার চোখের সামনে ঝাপসা ঝাপসা কিছু ভেসে উঠছে এতে আমার প্রচন্ড মাথা ব্যথা করছে”। (জোভান)

জোভানের কথায় মিসেস স্বর্ণা আঁতকে উঠলো।জোভান জ্ঞান হারিয়ে ফেললো। জোভানকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করলেন মিসেস স্বর্ণা।

_____

পরশি ঘুমন্ত অবস্থা থেকে লাফিয়ে উঠলো।পরশির পুরো শরীর ঘামছে।

“এমন লাগছে কেন আমার মনে হচ্ছে খারাপ কিছু হয়েছে কারো সাথে কিন্তু কার সাথে। ভিতরটা এমন চটপট করছে কেন।আচ্ছা মিস্টার সিনিয়রের কিছু হয়নি তো ,,,, (পরশি চিন্তিত হয়ে বললো)

পরশি মোবাইলটা হাতে নিয়ে নয়নকে ফোন করলো।এতো রাতে পরশির ফোন নম্বর মোবাইলের ওপর জ্বলজ্বল করতে দেখে নয়ন বেশ অবাক হলো।

“এতো রাতে পরশি ফোন দিল কেন কোনো সমস্যা হয়নি তো? (নয়ন)

নয়ন দ্রুত ফোন রিসিভ করলো।নয়ন ফোন রিসিভ করতেই পরশি বিচলিত হয়ে বলে উঠলো,,,,

“আপু মিস্টার সিনিয়র ঠিক আছে তো?

“এত রাতে এই কথা জিজ্ঞেস করার জন্য ফোন দিলে আমায় তুমি৷ এটা তুমি তোমার মিস্টার সিনিয়রকে ফোন দিয়ে বলতে পারতে”। (নয়ন)

“ফোন ধরছে না দেখে তো তোমায় ফোন দিলাম”। (পরশি)

“ওয়েট আমি আন্টিকে ফোন করে দেখছি”। (নয়ন)

“জ্বি আপু” । (পরশি)

নয়ন মিসেস স্বর্ণার সাথে কথা বলে একরকম থমকে গেল। নয়ন পরশিকে ফোন দিয়ে সব বললো।সব শুনে পরশির বুকে চিনচিন করে ব্যথা শুরু হলো।খুব কান্না পাচ্ছে পরশির।মা-বাবাকে হারিয়েছে এখন যদি জোভান ভাই ও হারিয়ে যায় তাহলে তার কি হবে।মা-বাবার পর পরশি তার জোভান ভাইকে ভালোবাসতো।একটা এক্সিডেন্টে সব হারিয়ে গেল পরশির। পরশির জোভানকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু এতো রাতে কিভাবে যাবে?

পরশি বসা থেকে ওঠে পানি খেল।কিভাবে সে জোভানের কাছে যাবে এটা নিয়ে রুমের পায়চারি করতে লাগলো।

_____

নয়ন নিহানকে ফোন করে জোভানের অসুস্থতার কথা বললো। নিহান নয়নের বাড়ি এসে নয়নকে নিয়ে হাসপাতালে চলে আসলো।হাসপাতালে জোভানের মা – বোন কান্না করছে আর দাদু মন খারাপ করে বেঞ্চের এক কোনে বসে আছে।

নয়ন আর নিহান দৌঁড়ে তাদের কাছে আসলো।

“জিহা কান্না করো না জোভান ঠিক হয়ে যাবে। তুমি কান্না করলে আন্টির কি হবে বলো”। (নয়ন জিহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো)

“তুমি তো জানো নয়ন আপু ভাইয়ার মাথায় ব্যথা উঠলে ভাইকে বাঁচানো খুব কঠিন”। (জিহা নয়নকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বললো)

নয়ন কিভাবে সান্ত্বনা দিবে বুঝতে পারছে না।

কিছুক্ষণ পর ডাক্তার আসলো।ডাক্তারকে দেখে সবাই দাঁড়িয়ে পড়লো।ডাক্তার সিফাত চৌধুরীর সামনে এসে বললো,,,,,

“চৌধুরী সাহেব আপনার নাতির ঠিক আছে কিন্তু ,,,,

“কিন্তু কি ডাক্তার আয়ান ,,,, (সিফাত চৌধুরী)

“ও আগে যে স্মৃতি গুলো হারিয়ে ফেলেছে মনে হচ্ছে সেগুলো তার মনে পড়ছে”৷ (আয়ান)

এই কথা শুনে মিসেস স্বর্ণা আর সিফাত চৌধুরী স্তব্ধ হয়ে গেল।

“আগের সবকিছু মনে পড়লে জোভানের বিপদ দ্বিগুণ বেড়ে যাবে।আমার ছেলেকে আমি কিভাবে বাঁচাবো? (মিসেস স্বর্ণা মনে মনে বললো)

চলবে…..
__#মিস্টার__সিনিয়র
#পর্বসংখ্যা_১৩(২)
®ফিহা আহমেদ

জোভান চুপ করে বসে আছে। জোভানকে ঘিরে সবাই দাঁড়িয়ে আছে। সবার জানামতে জোভানের আগের স্মৃতিগুলো মনে পড়েছে। কিন্তু জোভানকে দেখে মনে হচ্ছে না জোভানের আগের সবকথা মনে পড়েছে। নীরবতার মাঝে সিফাত চৌধুরী বলে উঠলো,,,,,

“দাদুভাই তোমার কি কিছু মনে পড়ছে ?

দাদার কথায় জোভান অবাক হলো।

“আমি কি কিছু ভুলে গেছি যে মনে করব”। (জোভান)

জোভানের কথায় সবাই চমকালো। সবার মাথায় একটা কথাই ঘুরছে ডাক্তার আয়ান তো বলেছিল জোভানের আগের স্মৃতিগুলো মনে পড়ছে।

সিফাত চৌধুরী সবাইকে ইশারায় শান্ত হতে বললো।কেউ আর কিছু বললো না জোভানকে এই বিষয়ে। ডাক্তার আয়ান কেবিনে এসে সবাইকে বেরিয়ে যেতে বললো সবাই বের হয়ে গেল।ডাক্তার আয়ান জেভানের কাঁধে হালকা করে থাপ্পড় দিয়ে বলে,,,,,

“মাথা কেমন লাগছে এখন জোভান ?

জোভান মিষ্টি হেসে বললো,,,,,

“ঠিক লাগছে”।

ডাক্তার আয়ান জোভানকে আবার দেখল সব ঠিক আছে কিনা।সব ঠিকঠাক দেখে ডাক্তার আয়ান চলে যেতে নিবে জোভান পিছন থেকে বলে উঠলো,,,,,

“ধন্যবাদ” !!

“ধন্যবাদ দেওয়ায় মতো এমন কিছুই আমি করিনি।আমি তো শুধু তোমায় একটু ই সাহায্য করলাম” (ডাক্তার আয়ান হাত দিয়ে দেখিয়ে হালকা হেসে বললো)

ডাক্তার আয়ানের কাজে জোভান মুচকি হাসল।

ডাক্তার আয়ান কেবিন থেকে বের হতেই সবাই দাঁড়িয়ে পড়লো।ডাক্তার আয়ান সিফাত চৌধুরীর কাছে এসে বললো,,,,,

“তেমন কিছু হয়নি চৌধুরী সাহেব। তখন জোভান মাথা চেপে ধরে গোঙাচ্ছিলো তাই আমি ভাবলাম হয়তো আগের কিছু মনে পড়ছে। কিন্তু না তার কিছুই মনে পড়েনি”।

ডাক্তার আয়ানের কথা শুনে মিসেস স্বর্ণা আর সিফাত চৌধুরীর ভয় কেটে গেল। মনে হচ্ছে অনেক বড় বিপদ থেকে জোভান বেঁচে গেল।

_____

ইয়ানার গায়ে হলুদের তোড়ঝোড় চলছে। পরশির কিছু ভালো লাগছে না জোভানকে দেখার জন্য মনটা ব্যকুল হয়ে আছে।ইয়ানা বিষয়টি খেয়াল করলো।ইয়ানা পরশির কাছে এসে দাঁড়ালো।

“কিরে এমন চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন তোর কিছু হয়েছে? (ইয়ানা)

পরশি কি বলবে বুঝতে পারছে না। চুপ করে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে আছে। ইয়ানা পরশি দুই বাহু ধরে বলে,,,,

“কোনো সমস্যা হলে বল পরশি। সাহায্য করার মতো হলে করব”।

পরশি সবটা খুলে বললো ইয়ানাকে।সব শুনে ইয়ানা হাসল।ইয়ানা পরশির মাথা হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,,,,,

“তুই যা আমি এইদিকটা সামলে নিব”।

পরশি ইয়ানাকে জড়িয়ে ধরে বলে,,,,

“তোমায় অসংখ্য ধন্যবাদ আপু”।

“আচ্ছা যা এবার।তাড়াতাড়ি চলে আসবি”। (ইয়ানা)

“ঠিক আছে দেখেই চলে আসব আপু”। (পরশি)

_____

পরশি জোভানের কেবিনে বসে আছে আর জোভান ঘুমাচ্ছে। পরশি জোভানের ঘুমন্ত চেহারার দিকে অপলক তাকিয়ে আছে। হঠাৎ করেই পরশির অশান্ত মন শান্ত হয়ে গেল জোভানকে দেখতে পেয়ে। পরশির কি হলো পরশি নিজে ও জানে না।পরশি ধীরে ধীরে জোভানের মুখের কাছে নিজের মুখ নিয়ে আসলো। জোভানের কপালে অধর চুইয়ে দিল।এমতাবস্থায় জোভান চোখ খুলে পরশির দিকে তাকালো।

হঠাৎ জোভানকে চোখ খুলতে দেখে পরশি ভয় পেয়ে গেল। পরশি দ্রুত মুখ সরিয়ে নিয়ে আসলো। প্রচুর ভয় পেয়ে আছে পরশি।

“তার মানে মিস্টার সিনিয়র জেগে ছিল। ছিঃ ছিঃ পরশি তুই এটা কি করলি।কি ভাববে এখন মিস্টার সিনিয়র। নিশ্চয়ই বাজে মেয়ে ভাববে”। (পরশি মনে মনে বলছে)

“মিস জুনিয়র”

জোভান শোয়া থেকে ধীরে ধীরে ওঠে বসলো।পরশি ভয়ে ভয়ে জোভানের দিকে তাকালো।

“জ,,,,জ্বি”

“তুমি আমায় দেখতে এসেছ? (জোভান মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো)

“ন,,,না মানে” (পরশি)

“ভয় পেয়ে আছো কেন কেউ কিছু বলেছে? (জোভান)

“তাহলে কি ওনি দেখতে পাননি আমি যে কপালে চুমু দিয়েছি। কিন্তু আমি এটা কেন করলাম।ওই মুহূর্তে আমার এটা ই করতে ইচ্ছে করছিল।যাক বাবা বেঁচে গেছি ওনি দেখেননি”। (পরশি মনে মনে বললো)

“কি হলো চুপ যে” । (জোভান)

“আপনার শরীর কেমন এখন?

“ভালো” (জোভান)

পরশি চুপ করে বসে আছে আর কি বলবে জোভানকে সেটাই ভাবছে।জোভান পরশিকে চুপ থাকতে দেখে হাসল।

“আমায় আর কি বলবে তা ভাবছো? (জোভান ঠোঁটের কোনে হাসি রেখে বললো)

“আসলে আমি,,,, (পরশি)

তখনি পরশির ফোন বেজে উঠল পরশি দ্রুত ফোন রিসিভ করলো।

“পরশি তাড়াতাড়ি বাড়ি আয় লিসা খালামনি তোকে খুঁজতাছে”। (ইয়ানা)

পরশি বসা থেকে ওঠে দাঁড়িয়ে বললো,,,,

“আ,,,,আমি আসছি”।

“চলে যাবে মিস জুনিয়র”,,,, (জোভান)

“আসলে বাড়িতে আমায় খুঁজ করছে”। (পরশি আমতাআমতা করে বললো)

জোভান কয়েক সেকেন্ড চুপ করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,,,,,

“ঠিক আছে যাও৷ সাবধানে যাবে”।

পরশি মুচকি হেসে মাথা নাড়িয়ে বের হয়ে গেল কেবিন থেকে।

______

পরশি যেতেই জিহা, নয়ন, নিহান জোভানের কাছে আসলো।জোভান তাদের দেখে ব্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো।

“পরশি কি করছিলো তোর সাথে? (নিহান দুষ্ট হেসে বললো)

নিহানের কথা শুনে জোভান চোখ বড় বড় করে ফেললো।

“এই তোর কি মাথায় কোনো সমস্যা আছে এইসব কি বলছিস”। (জোভান হালকা রেগে বললো)

তখন নয়নের ফোন আসে। নয়ন মুচকি হেসে ফোন নিয়ে বাহিরে চলে গেল। নিহানের বুঝতে বাকি রইলো না কার ফোন এসেছে। নিহান হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেললো। রাগে নিহানের মাথার রগ ফুলে গেল। নিহান নয়নের পিছনে পিছনে গেল।নয়ন মুচকি মুচকি হেসে কথা বলছে। এইসব দেখে নিহানের রাগ আরো দ্বিগুন বেড়ে গেল। নিহান নয়নকে সোজা কোলে তুলে নিলো। হঠাৎ এমন হওয়ায় নয়ন ভয় পেয়ে গেল।নয়ন বুকে থুথু দিয়ে নিহানের দিকে তাকিয়ে রেগে বলে,,,,

“সমস্যা কি নিহান এসব কোন ধরনের ফাজলামো।নিচে নামা বলছি আমায়”।

নিহান কোনো কথা না শুনে হেঁটে ই চলেছে নয়ন এবার বেশি রেগে গেল। নয়ন নিহানের বুকে কামড় বসিয়ে দিল। নিহানের রাগের মাএা ছাড়িয়ে গেল।নিহান নয়নকে একটা পুকুরের সামনে নিয়ে আসলো। নয়ন কিছু বলার আগেই নিহান নয়নকে পুকুরে ফেলে দিল।

চলবে…..
_____

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here