মিস্টার সিনিয়র পর্ব -১৫

#মিস্টার__সিনিয়র
#পর্বসংখ্যা_১৫
®ফিহা আহমেদ

ভার্সিটির মাঠে বসে বসে আড্ডা দিচ্ছে জোভান, নিহান আর নয়ন।আড্ডার মাঝে অরিন এসে হাজির।অরিনকে দেখে জোভানের মুখে বিরক্ত ভাব ফুটে উঠলো।অরিন জোভানের কাছে এসে গলা জড়িয়ে ধরে গালে চুমু খেল। অরিনের কান্ডে জোভানের রাগ উঠে গেল।ঠাস করে অরিনের গালে থাপ্পড় মেরে দিল।অরিন থাপ্পড় খেয়ে জোভানের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।অরিন ভাবছে সে কি এমন করলো যে জোভান তাকে থাপ্পড় মারলো।

“জোভান তুমি আমায় থাপ্পড় মারলে ,,,,, (অরিন গালে হাত দিয়ে বললো)

“থাপ্পড় দেওয়ার মতো কাজ করলে থাপ্পড় দিব নাতো সালাম করবো তোমায়” । (জোভান রেগে বললো)

জোভানকে রাগতে দেখে নিহান জোভানের হাত ধরলো।জোভান রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে।
.

“ইচ্ছে করছে এই অরিন কে ফড়িং বানিয়ে ছেড়ে দিতে।আমার জোভান ভাইকে চুমু খাওয়া। ঠোঁট গুলো কেটে রাস্তার কুকুরকে খাওয়ানো উচিত। কত বড় সাহস এই মেয়ের”। (পরশি)

ভার্সিটিতে প্রবেশ করতেই পরশি চুমুর দৃশ্যটা দেখতে পেল।

অরিন গালে হাত দিয়ে মন খারাপ করে সেখান থেকে চলে গেল।

“আমি কি এমন ভুল করলাম জোভান আমায় থাপ্পড় মারলো।আমি জোভানকে ভালোবাসি আর জোভান ও আমায় ভালোবাসে।তাহলে এমন বিহেভ করলো কেন জোভান।আমি নিশ্চিত ওই পরশির জন্য জোভান এমনটা করেছে। ওই থ্রার্ড ক্লাস মেয়ের জন্য জোভান আমায় থাপ্পড় মারলো। আমি ও দেখে নিব ওই মেয়ে কিভাবে সুখে থাকে।আমার সুখ তুই কেড়ে নিয়েছিস আমি ও তোকে সুখে থাকতে দিব না এক দন্ড”। (অরিন রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বললো)

_____

পরশি মন খারাপ করে ক্লাসে বসে টেবিলে আঁকিবুঁকি করছে।হঠাৎ কেউ এসে পরশিকে জড়িয়ে ধরে। হঠাৎ এমন হওয়াতে পরশি কিছুটা ভয় পেয়ে যায়।

“ভয় পাচ্ছিস কেন পরশি আমি সিমি”।

“ওহ্ তুই। হঠাৎ জড়িয়ে ধরাতে ভয় পেয়েছি”। (পরশি)

“চল ছাঁদ থেকে ঘুরে আসি”। (সিমি)

“কিন্তু ,,,,, (পরশি)

“কোনো কথা নয় চল”। (সিমি)

সিমি একপ্রকার জোর করে পরশিকে ছাঁদে নিয়ে যায়।দু’জন এই প্রথম ভার্সিটির ছাঁদে এসেছে। অনেক সুন্দর করে সাজানো ছাঁদটি।চারদিকে বিভিন্ন ফুলের সমারোহ।

“অনেক সুন্দর” ! (সিমি)

“হুম। প্রেমে পড়ার মতো”। (পরশি)

পরশির কথায় সিমির ব্রু কুঁচকে উঠলো।

“এখানে প্রেম আসলো কোথা থেকে পরশি”। (সিমি)

পরশি থতমত খেয়ে গেল সিমির কথায়।

“আরে আমি তো ফুলগুলোর কথা বললাম।ফুলের প্রেমে পড়ে গেছি”। (পরশি আমতাআমতা করে বললো)

“সত্যি তো ,,,,, (সিমি)

“পাক্কা” (পরশি)

জোভান গাছের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হালকা বাতাসে জোভানের চুলগুলো কপালে এসে ঠেকছে।জোভানকে অন্য রকম সুন্দর লাগছে। চোখ ফেরানো ই মুসকিল। তার ওপর সুন্দর মুখশ্রীতে চোখের নিচে কালো কুচকুচে তিলটি জোভানের সৌন্দর্য কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। পরশি ওপর থেকে নিচে তাকাতেই থমকে গেল জোভানের সৌন্দর্যে।তাই ঘোরের মধ্যে বলে ফেলেছে ,,,,,

“প্রেমে পড়ার মতো” !

জোভান কপালে আসা চুলগুলো হাত দিয়ে পিছনে দিতে দিতে ওপরে চোখ পড়লো।পরশিকে দেখেই জোভানের ব্রু কুঁচকে আসলো।অর্থাৎ কালকের কথা মনে পড়তেই জেভানের ব্রু কুঁচকে আসলো। জোভান ভাবছে পরশিকে এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করবে। কিন্তু পরশির সাথে আলাদা করে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে না।

পরশির ও জোভানের সাথে চোখাচোখি হয়ে গেল।পরশি সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নিল।হঠাৎ করে লজ্জারা পরশিকে ঘিরে ধরলো। পরশিকে লজ্জা পেতে দেখে সিমি হাবার মতো তাকিয়ে রইলো।সিমি পরশির পেটে গুঁতো দিয়ে বলে ,,,,,

“এই সত্যি করে বল তো তোর কি হলো। হঠাৎ এমন লজ্জা পাচ্ছিস কেন? কাহিনি কি বল তো? আমার থেকে কি লুকাচ্ছিস?

“আরে না তেমন কিছু না। চল ক্লাসে যাই স্যার চলে আসবে”। (পরশি)

সিমির বিশ্বাস হলো না পরশির কথা।সিমি আর কথা বাড়ালো না।পরশির হাত ধরে ক্লাসে চলে আসলো।

দু’টো ক্লাস শেষ করে পরশির খুব তেষ্টা পেল।পরশি সিমিকে বলে ক্লাস থেকে বেরিয়ে পড়লো পানি খেতে।পরশি সামনে এগোতেই কেউ হেঁচকা টান মেরে পরশিকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো। পরশি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো।ধীরে ধীরে চোখ খুলে দেখে জোভান এক দৃষ্টিতে পরশির দিকে তাকিয়ে আছে। জোভানকে দেখে পরশি চোখ বড় বড় করে জোভানের দিকে তাকালো।

“আপনি” (পরশি)

“কেন অন্য কাউকে আশা করেছ নাকি ,,,,, (জোভান)

“এভাবে এখানে নিয়ে আসলেন কেন আমায়? (পরশি)

“জিজ্ঞেস করতে” (জোভান)

“কি ? (পরশি)

“তুমি তো বেশ ভালো মার জানো দেখছি”। (জোভান)

জোভানের কথায় পরশি অবাক হলো।

“আপনার কি মাথা খারাপ কি সব উল্টাপাল্টা বলছেন।আমি মারামারি ভালো জানি মানে ,,,,, (পরশি)

“দেখো ভনিতা করো না আমার থেকে লুকাবে না। আমি সব জানি। স্পর্শি তুমি আর কেউ না”। (জোভান)

পরশি কিছু না বলে চুপ করে আছে।পরশিকে চুপ থাকতে দেখে জোভান হেসে বলে ,,,,,

“আমি তোমায় দূর থেকে অনুভব করতে পারি৷ আর কাল তোমার হাত ধরে ই আমি বুঝেছি তুমি পরশি। মিথ্যে বললে কেন আমায় ?

পরশি চুপ হয়ে আছে। কোনো কথা বলছে না। পরশিকে চুপ থাকতে দেখে জোভান পরশির কানের কাছে মুখ নিয়ে ধীর গতিতে বলে উঠলো ,,,,,

“মিষ্টি পরী” !

পরশি চমকে তাকালো জোভানের দিকে।পরশির যেন বিশ্বাস ই হচ্ছে না জোভান তাকে মিষ্টি পরী বললো।সে কি ভুল শুনলো।পরশি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো ,,,,,,

“কি বললেন আরো একবার বলবেন প্লিজ ,,,,,

জোভান হালকা হেসে আবার বললো ,,,,,

“মিষ্টি পরী ভালোবাসি” !

জোভান পরশির কানের কাছ থেকে মুখ এনে পরশির দিকে তাকালো।পরশির চোখে পানি টলমল করছে। জোভান পরশির মায়াবী মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ করে ই পরশি জোভানকে জড়িয়ে ধরে কান্না করা শুরু করলো।

“আ ,,,,, আপনি আমায় ভুলেননি জোভান ভাইয়া।আমি তো ভেবেছি আপনাকে আর কোনোদিন আমি নিজের করে পাব না”। (পরশি কান্না করতে করতে বললো)

জোভান পরশির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো ,,,,,

“কয়েকদিন হলো আমার আগের সবকিছু মনে পড়লো।কিন্তু কাউকে বিষয়টি বুঝতে দেই নি”।

পরশি জোভানকে ছেড়ে দিয়ে বললো ,,,,,

“কেন ?

জোভান পরশিকে লাইব্রেরীতে নিয়ে আসলো।পরশি আর জোভান বেঞ্চিতে বসলো।

“এবার বলেন” (পরশি)

“বলছি আগে পানিটুকু খেয়ে নেও। দেখে মনে হচ্ছে খুশিতে গলা শুকিয়ে গেছে তোমার”। (জোভান হেসে বললো)

পরশি জোভানের বুকে হালকা করে কিল মেরে জোভানের হাত থেকে পানির বোতলটি নিয়ে পানি খাওয়া শুরু করলো।জোভান তাকিয়ে তাকিয়ে পরশির পানি খাওয়া দেখছে আর মুখ টিপে হাসছে।

“ডাক্তার আয়ানকে বলেছি মিথ্যে রিপোর্ট দিতে দাদাজানকে। যদি সবাই জেনে যায় তাহলে আসলে গুরুকে ধরতে পারব না।তাই ডাক্তার আয়ানের সাহায্য আমি সবকিছু করি”। (জোভান)

“আসলে আমি ই ওই স্পর্শি”। (পরশি আমতাআমতা করে বললো)

জোভান মুচকি হাসল পরশির কথায়। জোভানকে হাসতে দেখে পরশি অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে ফেললো।

“কি মারটা ই না আমায় মারলে তুমি।এখনো ও ব্যথা করছে পেটে”। (জোভান পরশিকে ভয় লাগাতে কথাটি বললো)

পরশি মাথা উঁচু করে অসহায় ভাবে তাকালো জোভানের দিকে।তারপর নিচু কন্ঠে বললো ,,,,,

“সরি”

“ইট’স ওকে মিষ্টি পরী”! (জোভান)

জোভানের মুখ থেকে মিষ্টি পরী কথাটি শুনে পরশি লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো।

“এমন মারপিট কোথা থেকে শিখলে তুমি” ।

পিছন থেকে কারো কন্ঠ শুনে দু’জন চমকে পিছনে তাকালো। নিহান দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পরশির ভীতু মুখ দেখছে।

“নিহান ভাই কি সব শুনে ফেললো” । (পরশি ঢোক গিলে মনে মনে বললো)

“ভয় পেয়ো না জোভানের সব সিক্রেট আমি জানি। আর তুমি যে জোভানের সেই ছোটবেলার মিষ্টি পরী সেটা ও জানি”। (নিহান)

নিহানের কথায় পরশির চোখ বড় বড় হয়ে গেল।

“এই বজ্জাত লোকটা নিহান ভাইকে সব বলে দিল। কিছু পেটে রাখতে পারে না।ইচ্ছে করছে পেটে আরেকটা ঘুসি দিতে”। (পরশি মনে মনে বললো)

চলবে…..
_____

(বানানে ভুল-ক্রটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)

(গল্প পড়ে সবাই লাইক – কমেন্ট করবেন। নাইচ,নেক্সট না বলে গল্প সম্পর্কে গঠনমূলক মন্তব্য করবেন প্রিয় পাঠক-পাঠিকাগণ।পাঠক-পাঠিকাদের ভালো রেসপন্স ফেলে পরবর্তী পর্ব দেওয়া হবে।)
[❌কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ❌]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here