#মিস্টার__সিনিয়র
#পর্বসংখ্যা_১৭
®ফিহা আহমেদ
জোভান মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। উপস্থিত সবাইকে সিফাত চৌধুরী বের করে দিলেন বাড়ি থেকে। মিসেস স্বর্ণা নিচে বসে কান্না শুরু করে দিল।জোভান মাকে কান্না করতে দেখে মায়ের কাছে যাবে মিসেস স্বর্ণা হাত দিয়ে কাছে আসতে মানা করলো। তারপর জোভানের দিকে কান্নারত চোখে তাকিয়ে বললো ,,,,,
“তুই তোর মাকে কে বেঁচে নিবি এই মেয়েকে ?
“মম তুমি ,,,,, (জোভান)
জোভানকে কথা বলতে না দিয়ে মিসেস স্বর্ণা বললো ,,,,,
“যেটা বলেছি সেটার উওর চাই আমি”।
জোভান মায়ের সামনে থেকে উঠে এসে পরশির হাত ধরলো।মিসেস স্বর্ণা এই দৃশ্য দেখে জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে।কয়েক সেকেন্ড পর জ্ঞান হারিয়ে ফেললো মিসেস স্বর্ণা। জোভান মায়ের কাছে আসলো। মাকে কোলে তুলে নিয়ে গাড়িতে উঠলো। মাকে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে চলল।
_____
সবাই হাসপাতালে দাঁড়িয়ে আছে। জোভান নীরবে চোখের পানি ফেলছে।চৌধুরী সাহেব(সিফাত) দাঁড়িয়ে আছে নাতবউয়ের পাশে। জিহা হেঁচকি তুলে তুলে কান্না করছে। নয়ন জিহাকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে।হঠাৎ সবার মাঝে একজন চিৎকার করতে করতে প্রবেশ করলো। সবাই পিছনে তাকালো লোকটির চিৎকারে।
“বাবা রিফাত” (চৌধুরী সাহেব ভীতু কন্ঠে বললো)
“বাবা আমার স্বর্ণা ঠিক আছে তো”,,,,,, (রিফাত)
(ছেলের বিয়ের কথা শুনে রিফাত লন্ডন থেকে কাউকে না জানিয়ে চলে এসেছে। সবাইকে সারপ্রাইজ দিবে বলে।কিন্তু এখানে রিফাত তার চাইতে ও বড় সারপ্রাইজ পেল।রিফাত তার স্রী স্বর্ণাকে অনেক ভালোবাসে।স্বর্ণার কিছু হলে ই পাগলের মতো অবস্থা হয়ে যায় রিফাতের।)
জোভান বাবাকে দেখে জড়িয়ে ধরতে যাবে তার আগেই রিফাত জোভানের গালে চড় বসিয়ে দিল।
“তুই আমার সামনে আসবি না।এই অপয়া মেয়ের জন্য আজ আমার স্বর্ণার এই অবস্থা। এই মেয়েকে ছেড়ে দিতে পারলে আমার আর স্বর্ণার সামনে আসবি”। (রিফাত)
এইসব দেখে পরশি নিরবে কান্না করছে।জোভান পরশির কাঁধে হাত রেখে বললো ,,,,,
“চলো” ।
চৌধুরী সাহেব টলমল চোখে নাতি আর নাতবউয়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো কিন্তু তিনি তাদের আটকাতে পারলেন না।
“এটা তুই ঠিক করলি না রিফাত৷ তুই দাদুভাইকে মারতে পারলি”। (চৌধুরী সাহেব)
“মেরেছি বেশ করেছি। ওর জন্য আমার স্বর্ণার এই অবস্থা”। (রিফাত)
চৌধুরী সাহেব আর কিছু না বলে বেঞ্চে চুপ করে বসে পড়লেন।জিহা বসা থেকে ওঠে ভাইয়ের পিছনে পিছনে গেল।
_____
“ভাই দাঁড়া কোথাও যাবি না” । (জিহা)
“জিহা তুই ,,,,, (জোভান)
“কোথাও যাবি না তুই। ভাবিকে নিয়ে বাড়িতে চল”। (জিহা চোখের পানি মুছে বললো)
“জিহা পরিস্থিতি খুব খারাপ আমি এখানে পরশিকে নিয়ে কিভাবে থাকি বল” । (জোভান অসহায় ভাবে বললো)
জিহা পরশির কাছে এসে পরশির চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো ,,,,,,
“কান্না করো না মিষ্টি পরী। সব ঠিক হয়ে যাবে।তোমাকে বিয়ে করার আইডিয়া আমি ভাইকে দিয়েছি”।
পরশি একটু ভালোবাসার ছোঁয়া পেতেই জিহাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলো।
“ভাই চল বাড়ি যাবি।ভাবিকে ওদের থেকে দূরে দূরে রাখব তাহলেই হবে। আর যদি তুই কথা না শুনিস তাহলে আমি ও তোর সাথে যাব তুই যেদিকে যাবি”। (জিহা)
জিহার জোড়াজুড়িতে জোভান বাধ্য হয়ে পরশিকে বাড়িতে নিয়ে আসলো।
_____
এইদিকে বড়সড় সর্বনাশ হয়ে গেছে। মিসেস স্বর্ণা হার্ট অ্যাটাক করে বসেছে। সবাই থমকে গেল ডাক্তারের কথা শুনে। রিফাত দাঁড়ানো থেকে ধপ করে নিচে বসে গেল। রাগে মাথার রগ ফুলে গেছে রিফাতের।ইচ্ছে করছে পরশিকে গলা টিপে মেরে ফেলতে। ওই মেয়ে আমার ছেলের মাথা খেয়ে বিয়ে করে নিয়েছে সাথে আমার বউকে ও মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিল। অপয়া মেয়ে একটা নিজের পরিবারকে ও রাখতে পারেনি। সামনে ফেলে সেদিনই এই মেয়ের মৃত্যুর কারন হবো আমি।
_____
মিসেস স্বর্ণাকে বাড়ি নিয়ে আসা হলো।কারো সাথে কোনো কথা বলছেন না তিনি। এমনকি নিজের স্বামী রিফাতের সাথে ও না।সবাই চুপচাপ তাকে ঘিরে বসে আছে। অনেকক্ষণ পর তিনি মুখ খুলে বললেন ,,,,,
“জোভানকে আমার কাছে নিয়ে আসো”।
মিসেস স্বর্ণার কথায় সবাই অবাক হলো।রিফাত রেগে কিছু বলতে যাবে চৌধুরী সাহেব বাঁধা দিলেন কিছু না বলতে।জিহা জোভানকে নিয়ে আসলো মায়ের কাছে আসলো।জোভানকে দেখে মিসেস স্বর্ণা বলে উঠলো ,,,,,
“এখন ও সময় আছে কাকে বেঁচে নিবে তুমি বউ নাকি মা? এক সাপ্তাহ সময় দিচ্ছি তোমায়।যদি বউকে বেঁচে নেও তাহলে তুমি সারাজীবনের মতো আমায় হারাবে”।
মায়ের কথা শুনে জোভানের কলিজা কেঁপে উঠল। সে তার মাকে অনেক ভালোবাসে।তার বউয়ের ও প্রয়োজন মায়ের ও প্রয়োজন। দু’জনকে তার লাগবে।কিন্তু মাকে সে কিভাবে বুঝাবে এইসব।জোভান মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে সেখান থেকে চলে গেল।পরশি দরজার আড়াল থেকে সবটা দেখছে। পরশির এখন নিজেকে ঘৃনা লাগছে। কেন সে জোভানকে বিয়ে করতে গেল।তার জন্য মা-বাবার সাথে দ্বন্দ্ব লেগে গেছে জোভানের।পরশি মনে মনে এক বিশাল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে।
(সিদ্ধান্তটি কি না জানাই থাক।সময় হলে জেনে যাবেন আমার প্রিয় পাঠক-পাঠিকারা)
_____
অরিন চোখ খুলে বুঝার চেষ্টা করছে সে কোথায় আছে।অরিন শোয়া থেকে ধীরে ধীরে উঠে বসলো। তারপর তার বিয়ের কথা মনে পড়লো। মাথায় রাগ চড়ে বসলো সবকিছু মনে পড়তেই। অরিন টেবিলের কাছে এসে আপেলের ঝুড়ি থেকে ছুরি নিয়ে চিৎকার করে বলা শুরু করলো ,,,,,,
“রিহানের বাচ্চা পালিয়ে আছিস কোথায় সামনে আয় বলছি।আজ তোকে খুন করে ফেলবো আমি।কত বড় সাহস তোর আমার চোখে ধুলো দিয়ে তুই আমায় বিয়ে করেছিস।সামনে আয় বলছি।তোকে মেরে তোর ভালোবাসা ছুটিয়ে দিব আমি”।
অরিনের চিৎকারে রিহান ছুটে আসলো অরিনের কাছে।
“কি হলো জান এমন চিল্লাচিল্লি করছো কেন?
“এই একদম জান বলবি না আমায় তোকে কুঁচি কুঁচি করে খেয়ে ফেলবো”। (অরিন রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বললো)
অরিন রিহানের কাছে এসে ছুরি দিয়ে আঘাত করতে যাবে রিহান হাত ধরে ফেলে অরিনের। অরিনের হাত দু’টো পিছনে মুচড়ে ধরে। অরিন ব্যথা পেয়ে হালকা আওয়াজ করে বলে ,,,,,,,
“রিহানের বাচ্চা ছাড় আমায়।আমার লাগছে হাতে”।
“এত ঝাঁজ কেন তোর”। (রিহান রেগে বললো)
বলেই রিহান পিছন থেকে বাম হাত দিয়ে অরিনের কোমড় চেপে ধরে। ডান হাত দিয়ে ছুরিটি জানালার দিকে ছুঁড়ে মারলো।তারপর অরিনকে জোরে করে কোলে তুলে নিয়ে খাটে শুইয়ে দিয়ে অরিনের ঠোঁটে ঠোঁট বসিয়ে দিল ।
‘
চলবে…..
_____
(বানানে ভুল-ক্রটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)
‘
(গল্প পড়ে সবাই লাইক – কমেন্ট করবেন। নাইচ,নেক্সট না লিখে গল্প সম্পর্কে গঠনমূলক মন্তব্য করবেন প্রিয় পাঠক-পাঠিকাগণ।)
[❌কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ❌]