#মিস্টার__সিনিয়র
#পর্বসংখ্যা_২২
®ফিহা আহমেদ
মুখে কালো রঙের কাপড়ের টুকরো বাঁধা আর হাত বাঁধা অবস্থায় চেয়ারে অজ্ঞান হয়ে মাথা কিছুটা ডান দিকে হেলে বসে আছে জিহা। জিহার পাশেই তিয়াসকে লোহার শিকলে বেঁধে রেখেছে। তিয়াসের কপাল থেকে টপটপ করে রক্ত ঝরছে।
জিহা ধীরে ধীরে চোখ খুললো। চোখ খুলতেই জিহা নিজেকে অন্ধকার কক্ষে দেখতে পেল। কক্ষটি সম্পূর্ণ অন্ধকার। হালকা আলোর ছিটেফোঁটা রয়েছে। জিহা অন্ধকার ভয় পায় ছোটবেলা থেকে। অন্ধকার দেখে জিহা চিৎকার শুরু করলো।
“কেউ আছো।আমাকে এখান থেকে বের কর। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমায় কেউ বের করো এখান থেকে”৷ (ভয়ে জিহা চিৎকার করতে করতে বললো)
কিছুক্ষণ এভাবে চিৎকার করার পর জিহা জ্ঞান হারিয়ে ফেললো। জিহার চিৎকারে তিয়াস ধীরে ধীরে চোখ খুললো। পাশে তাকাতেই দেখে জিহা অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। মাথায় প্রচুর আঘাত লেগেছে তিয়াসের।ব্যথায় মুখ দিয়ে কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। তারপরও অতিকষ্টে মুখ দিয়ে বললো ,,,,,,
“জিহু ভয় পেয়ো না আমি তোমার সাথে আছি।আমি থাকতে তোমায় কেউ কিছু করতে পারবে না”৷
(জিহা-তিয়াস আলাদা গাড়ি করে বাড়ি ফিরছিলো। হঠাৎ করে তাদের গাড়ির চাকা নষ্ট হয়ে যাওয়াতে তিয়াস গাড়ি থেকে নেমে গাড়ির চাকা চেক করতে মাথা নিচু করতেই কেউ পিছন থেকে লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করে। জিহা গাড়ির লুকিং গ্লাস দিয়ে এই দৃশ্য দেখে চিৎকার দিয়ে গাড়ি থেকে নামতেই কেউ তার মুখে স্প্রে করে দেয়। জিহা অজ্ঞান হয়ে যায়।)
_____
“তুমি কি বলছো এইসব রিফাত।পরশিকে মেরে ফেললে জিহাকে ছেড়ে দিবে তারা। আমি পরশিকে মেরে ফেলব”। (মিসেস স্বর্ণা ভয়জড়িত কন্ঠে বললো)
“তুমি কি পাগল হয়ে গেলে স্বর্ণা। পরশিকে মারবে কেন? মেয়েটা কি করেছে? (রিফাত)
“দেখলেনা তারা কি বললো ,,,
পরশিকে মারলে তারা আমার মেয়েকে ছেড়ে দিবে।ওই অপয়া মেয়ের জন্য আমার সুখের সংসার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আমি আমি নিজ হাতে ওই অপয়া মেয়েকে মেরে ফেলবো”৷ (মিসেস স্বর্ণা)
বলে মিসেস স্বর্ণা পাশে টেবিলে থাকা ফলের ঝুড়ি থেকে চাকু হাতে নিয়ে দৌঁড়ে জোভানের রুমে আসলো।
এসেই তিন-চার বার চাকু দিয়ে আঘাত করলো পরশির পেটে। চাকুর আঘাতে রক্তে বিছানা ভিজে গেছে।পরশিকে মারতে পেরে মিসেস স্বর্ণা জোরে জোরে হাসতে শুরু করলো। রিফাত আসার আগেই মিসেস স্বর্ণা পরশিকে মেরে ফেললো।রিফাত পরশিকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে থমকে গেলেন। স্রীর দিকে তাকিয়ে দেখলেন পাগলের মতো হেসে যাচ্ছে। এমন ভাবে হাসছে যেন সে যুদ্ধ জয় করেছে। রিফাত ধীরে ধীরে স্বর্ণার কাছে এসে স্বর্ণার গালে ঠাস ঠাস করে দু’গালে দু’চড় বসিয়ে দিল।
স্বর্ণা গালে হাত দিয়ে রাগী দৃষ্টিতে তাকালো রিফাতের দিকে।
“তুমি এই অপয়া মেয়েটার জন্য আমায় মারলে।নিজের মেয়ের কথা ভাবলে না তুমি। মেয়েটা কি অবস্থায় আছে সে কথা ভেবেছো একবার। কিসের এত দরদ উতলে পড়ছে ওই অপয়া মেয়েটার জন্য”। (মিসেস স্বর্ণা রেগে বললো)
“মেয়েটাকে মেরে তুমি সবকিছুর সমাধান করে ফেললে।তোমার মেয়েকে যে এখন দিয়ে দিবে তুমি নিশ্চিত। ওরা এতো সহজে দিবে না।আমরা অন্যভাবে আমাদের মেয়েকে নিয়ে আসতে পারতাম। আর তুমি এটা কি করলে একটা নিষ্পাপ মেয়েকে মেরে দিলে। সেদিন তুমি অসুস্থ ছিলে তার জন্য আমার মাথা ঠিক ছিল না তখন আমি মেয়েটাকে যা নয় তাই বলেছি।আল্লাহ আমায় ক্ষমা করুক। এখন আমার মনে হচ্ছে তোমায় ভালোবেসে বিয়ে করে সব থেকে ভুল কাজটি আমি করেছি। তোমায় আমার স্রী বলতে ঘৃনা লাগছে আমার।ছিঃ স্বর্ণা এমন জঘন্য একটা কাজ তুমি করতে পারলে। সেকেন্ডের মধ্যে মেয়েটিকে মেরে ফেললে তুমি”। (রিফাত কান্না করতে করতে বললো)
সেই মুহুর্তে আবার সেই অপরিচিত নম্বর থেকে কল আসলো।মিসেস স্বর্ণা দ্রুত ফোন রিসিভ করলো।
“চল্লিশ মিনিটের মধ্যে বিশ লাখ টাকা নিয়ে ভার্সিটি থেকে এক মাইল দূরে একটি পুরোনো গুদামঘর আছে সেখানে আয়।এক সেকেন্ড দেরি হলে তোর মেয়ে আর মেয়ের জামাই এর লাশ যাবে তোর বাড়িতে”।
বলে ফোন কেটে দিল। রিফাত ও মনোযোগ দিয়ে কথাটি শুনেছে। অপরিচিত লোকটির কন্ঠ রিফাতের চেনা চেনা লাগছে। মনে হচ্ছে সে কোথাও এই কন্ঠস্বর শুনেছে।
রিফাত আর এক মুহূর্ত দেরি না করে টাকা নিয়ে রওনা হলো পিছনে পিছনে স্বর্ণা ও গেল। সারা রাস্তায় গাড়িতে রিফাত একবার ও স্বর্ণার সাথে কথা বলেনি।স্বর্ণা করতে বলতে চেয়েছে কিন্তু রিফাত বলেনি।
_____
চল্লিশ মিনিটের মধ্যে টাকা নিয়ে রিফাত পুরোনো গুদামঘরের সামনে আসলো।সেখান থেকে একজন লোক বেরিয়ে আসলো। লোকটির পুরো শরীর কালো রঙের হুডি দিয়ে জড়ানো।চোখে সানগ্লাস মুখে মাস্ক। লোকটিকে চেনা যাচ্ছে না।লোকটি রিফাতের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো ,,,,,,,,
“টাকা নিয়ে এসেছেন ,,,,
“হ্যাঁ”। (রিফাত)
“পুরোটাই ,,,,,,, (লোকটি)
“দেখে নিলে বুঝতে পারবেন”। (রিফাত)
“তাহলে দেন ,,,,,,, (লোকটি)
“আগে আমার মেয়ে আর মেয়ের জামাইকে নিয়ে আসেন তারপর টাকা পাবেন”। (রিফাত)
“ঠিক আছে তাই হবে। ও হে আরেকটা কথা।পরশিকে শেষ করে দিয়েছেন তো ,,,,,,
রিফাতে পাশ থেকে স্বর্ণা বলে উঠলো ,,,,,,
“আমি নিজ হাতে মেরেছি”।
“গুড জব”। (লোকটি হেসে বললো)
স্বর্ণার কথা শুনে রাগে রিফাতের পুরো শরীর কাঁপা শুরু করলো। রিফাতের ইচ্ছে করছে স্বর্ণাকে ঠাসিয়ে চড় মারতে।
লোকটি পিছনে ফিরে একজন রক্ষীকে বলে উঠলো ,,,,,
“দু’জনকে নিয়ে আয়”।
রক্ষীটি মাথা নাড়িয়ে ভিতরে প্রবেশ করতেই জোরে চিৎকার দিয়ে উঠলো।লোকটি চিৎকার শুনে দৌঁড়ে ভিতরে গেল।
ভিতরে আসতেই লোকটি রেগে বললো ,,,,,,
“তোর সাথে আমাদের কোনো ঝামেলা নেই জোভান। মাঝখানে ঝামেলা হয়ে আসিস না।ভালোয় ভালোয় বলছি এখান থেকে চলে যা”।
“আর কত লুকোচুরি খেলবেন মিস্টার আহাদ সিকদার”। (জোভান বাঁকা হেসে বললো)
আহাদ সিকদার নাম শুনতেই পিছনে থাকা রিফাত আর স্বর্ণা দু’জনে চমকে উঠলো।
“চমকাচ্ছেন। মাএ তো নামটা ই বললাম।এখন ও তোর জঘন্য অপরাধ গুলো বলিনি।তোকে পুলিশে দেওয়া ও ভুল হবে।তোকে তো আমি কুঁচি কুঁচি করে নদীতে ভাসাতে পারলে শান্তি পাব।পরশির জীবনটা তুই নরক করে দিয়েছিস”। (জোভান রেগে শক্ত কন্ঠে বললো)
“বাহ্ তাহলে তুই আমায় ধরে ই ফেললি জোভান।তোর বুদ্ধির তারিফ না করে পারলাম না আমি। ভালো গেম খেলেছিস তুই আমার সাথে।তবে তোর বউকে তো বাঁচাতে পারলি না”। (আহাদ সিকদার উচ্চস্বরে হেসে বললো)
আহাদ সিকদারকে হাসতে দেখে রাগে রিফাতের শরীর কাঁপছে।
“মনে পড়ে দু’দিন আগে তোর সাথে দেখা করার কথা ছিল। সেদিন আমি ঠিক ই এসেছিলাম কিন্তু এসে তোর রহস্য উদঘাটন করেছি তোর সাথে দেখা না করে চলে এসেছি।দু’দিন পর দুপুরে তোর বাড়ি এসে দেখি সম্পূর্ণ পরিবার উধাও। শেষে লোক দিয়ে আমায় আর পরশিকে মারতে চেয়েছিলি তুই”। (জোভান)
“তাহলে দু’দিন আগেই তুই সব জেনে গেছিস জোভান। ভালো। কিন্তু তোর বউকে তো বাঁচাতে পারলি না”। (আহাদ সিকদার উচ্চস্বরে হেসে বললো)
আহাদ সিকদারের কথা শুনে জোভান মুচকি হাসলো।
“কেন এমন করলি তুই। তোর সম্পদ এর কি অভাব আছে ? (জোভান)
“টাকার অভাব নেই আমার”। (আহাদ সিকদার)
পিছন থেকে রিফাত বলে উঠলো ,,,,
“তাহলে আজ টাকা কেন চেয়েছিলি আমার কাছ থেকে ?
“যাতে কেউ আমায় সন্দেহ না করতে পারে। কিন্তু আপসোস আমায় ধরে ই ফেললো তোর ছেলে জোভান। এত কষ্ট সব বিফলে গেল। কিন্তু এখন সবটা শেষ হয়নি।তোদের সবাইকে এখানেই শেষ করে দিব”। (আহাদ সিকদার উচ্চস্বরে হেসে বললো)
“তুই পরশিকে কেন এত কষ্ট দিলি ? (রিফাত)
“মনে পড়ে পরশির যখন তিন বছর ছিল তখন আমি ই লিসাকে দিয়ে তাদের মেরে ফেলি।ভাগ্যক্রমে পরশি আর জোভান বেঁচে যায়।আমি ভেবেছি জোভান মরে গেছে তাই জোভানকে রেখেই সেখান থেকে চলে আসি।কিছুদিন আগে সবকটাকে মেরে ফেলি। লিসা, মিসেস শিখাকে বিশ খাইয়ে মেরে ফেলি। সবকিছুর মূল আমি। আমার অপরাধ সম্পর্কে যারা যারা জেনে গেছে তাদের সবাইকে মেরে ফেলেছি আমি। কেউ বাঁচেনি।পরশি আমার লাইফে বড় বাঁধা।ও থাকার কারনে সব সম্পওি আমার হচ্ছে না।আমি চাই সিকদার বাড়িটা সম্পূর্ণ আমার হয়ে যাক। আর একটা কথা। আমার মানুষ মারার সূচনার আরেকটি কারন আছে। আমি একটা মেয়েকে ভীষণ ভালোবাসতাম।কিন্তু মেয়েটা আমায় ভালোবাসেনি অন্য কাউকে ভালোবেসেছে। তখন আমি রেগে মেয়েটিকে মেরে ফেলি। মেয়েটিকে মারার সময় আমার ভাই আর ভাইয়ের বউ দেখে ফেলে।তারা কি একটা কাজে এসেছিল সেখানে তখন তারা দেখে ফেলে।ভয় হলো যদি তারা সবাইকে বলে দেয় আমায় পুলিশে দিয়ে দেয়। তাই তাদের এক্সিডেন্ট করিয়ে মেরে ফেলি। সেই এক মেয়ের জন্য অনেকগুলো জীবনকে আমি শেষ করে দিলাম। এখন তোরা ও মরবি”। (আহাদ সিকদার)
বলে আহাদ রিভলবার বের করে জোভানের সামনে ধরলো।রিভলবার থেকে গুলি বের হয়ে জোভানের কাছে আসার আগেই কেউ জোভানের সামনে এসে দাঁড়ালো। গুলিটি সেই ব্যক্তির বুকে এসে প্রবেশ করলো। পরপর তিন-চারটি গুলি করলো। সাথে সাথে জোভানের সামনে থাকা ব্যক্তিটি চোখ বন্ধ ফেললো। তার মুখে জয়ের হাসি সে জোভানকে বাঁচাতে পেরেছে।
‘
চলবে…..
_____
(বানানে ভুল-ক্রটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)
(গল্প পড়ে সবাই লাইক – কমেন্ট করবেন। নাইচ,নেক্সট না লিখে গল্প সম্পর্কে গঠনমূলক মন্তব্য করবেন প্রিয় পাঠক-পাঠিকাগণ।)
[❌কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ❌]