“অদ্ভুত মুগ্ধতা ”
পর্ব ১৭
মিশু মনি
.
মৈত্রীর ফোন বেজে উঠল। মর্ম’র নাম্বার থেকে কল।ও রিসিভ করে কথা বলার পর শুকনো শুকনো মুখে তাকিয়ে রইলো মিশুর দিকে।মিশু জিজ্ঞেস করলো, কি হয়েছে? মুখটা কালো হয়ে গেলো কেন?
– মিশু,আমাদের ফিরে যাওয়া দরকার একটু।
– কেন?
– মর্ম’র এক্সিডেন্ট হয়েছে।
কথাটা শুনেই মিশু বড়সড় একটা ধাক্কা খেলো। মর্ম’র এক্সিডেন্ট হয়েছে সেটা উনি এত স্বাভাবিক গলায় বলছে কিভাবে?
মৈত্রী বলল,এক্ষুনি আমাকে হসপিটালে যেতে বললো।
– তাহলে চুপ করে আছেন কেন? গাড়ি ঘুরান।
– তুমি বেড়াতে যাবেনা?
– মেজো ভাইয়া এক্সিডেন্ট করেছে আর আমি বেড়াতে যাবো?
মিশু রেগে উঠল। মৈত্রী দ্রুত গাড়ি ঘুরিয়ে ফেললো।ওর মনটা কেমন যেন খারাপ হয়ে গেলো।যদিও মর্ম বলেছে টেনশনের কিছু নেই,খুব বড় ইনজুরি হয়নি।তবুও ফিরে যেতে হচ্ছে বলে ভালো লাগছে না।মিশুর সাথে একটা দিন ঘুরে আসার সুযোগ পেয়েও যাওয়া হলোনা।
মিশু খবর টা শুনে একটু অন্যমনস্ক হয়ে গেছে।এখনো বিশ্বাস হচ্ছেনা কথাটা।এক্সিডেন্ট বড় হোক কিংবা ছোট হোক,তবুও এক্সিডেন্ট তো।মৈত্রী কিভাবে এত স্বাভাবিক আছে কে জানে! মিশুর কান্না পেয়ে যাচ্ছে।মর্মকে ওর এত ভালো লাগে,এত ভালো ছেলেটা,সে কিভাবে এক্সিডেন্ট করলো? ধেৎ কিছুই ভালো লাগেনা।
.
তাড়াতাড়ি হাসপাতালে পৌছে গেলো ওরা।মর্মকে দেখেই মিশুর চোখে পানি এসে গেলো।বেডে শুয়ে আছে,চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে একদম।মর্ম মিশুকে দেখে অবাক হয়ে বলল,মিশু! আমিতো শুধু ভাইয়াকে আসতে বললাম।
মিশু রেগে বলল,এক্সিডেন্ট কিভাবে হয় শুনি? দেখে চলতে পারো না?
মর্ম এ কথা শুনে হাসলো।হাসতে হাসতে জবাব দিলো, অনেক সময় হয়ে যায়।
– কেন হবে? কেন?
মিশুর রাগ দেখে মর্ম’র হাসি পেয়ে গেলো। ও হাসতে হাসতে বলল,আরে আমার কিছু হয়নি।
– তাহলে হাসপাতালে আছেন কেন?
– ডক্টর যেতে দিচ্ছিল না তাই।
– কেন দিবেনা? কি হয়েছে? কোথায় ব্যথা পেয়েছেন? দেহের কোথাও তো কোনো ব্যান্ডেজ দেখছি না।
মর্ম হেসে বললো,আর কোথাও কিছু হয়নি।শুধু মনে হচ্ছে বাম পা টা কেটে বাদ দিতে হবে।
কথাটা শুনে চমকে উঠল মৈত্রী।মিশুও চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো।এই কথাটা মর্ম হাসতে হাসতে বলছে! এও কি সম্ভব! দুনিয়ায় কত আজব সব মানুষ দেখা যায়!
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
মর্ম বলল,আমি একটা গাড়ির সাথে ধাক্কা খেয়েছিলাম।এখানে সৌভাগ্য হচ্ছে,আমি বেচে গেছি।আর দূর্ভাগ্য হচ্ছে গাড়ির চাকা পায়ের উপর দিয়ে গেছে।
মিশু ভাবল মর্ম বোধহয় ইয়ার্কি করছে।এমন কঠিন সত্য কেউ কখনো হাসতে হাসতে বলতে পারেনা।ও এগিয়ে এসে মর্ম’র গায়ের উপর থেকে চাদর টা সরিয়ে ফেললো।সরানো মাত্রই দেখলো ওর বাম পায়ে মোটা করে ব্যান্ডেজ করা,আর সেই ব্যান্ডেজ ও রক্তমাখা! দৃশ্যটা দেখেই মিশু ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল।মৈত্রী তৎক্ষণাৎ মিশুকে ধরে ফেললো।তারপর মর্মকে বলল,ডাক্তারের সাথে কথা বলে আসছি।আচ্ছা আব্বু আম্মু কোথায়?
– কেউ জানেনা আমার এক্সিডেন্ট হয়েছে।প্রথম তোকেই বললাম।তুই ওদের বলিস না প্লিজ।
– মানে! কেন বলবো না?
– এই প্রথম বাড়িতে একটা বিয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছে।সবাই কত্ত মজা করছে।আমি ওদের আনন্দ টাকে মাটি করে দিতে চাইনা।তাই কাউকে জানাই নি।
– কবে হয়েছে এটা?
– দুদিন হলো।দুদিন থেকে আমি এখানে,বেডে শুয়ে।
মিশু কাঁদছে আর অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মর্ম’র দিকে।এরা দুই ভাই এমন কেন! এক ভাই এক্সিডেন্ট এর কথা শুনেও উদ্বিগ্ন হয়নি।আরেক ভাই এক্সিডেন্ট করে বেডে শুয়ে আছে দুদিন ধরে,তবুও কাউকে জানায় নি।সবার আনন্দ নষ্ট হবে ভেবে! এরা সত্যি মানুষ তো! নাকি কোনো এলিয়েন?
মৈত্রী আর কথা না বাড়িয়ে দ্রুত ডাক্তারের কাছে চলে গেলো।মর্ম মিশুকে ডেকে বলল,আমার পাশে এসে বসো।অনেক দিন বাদে আমাদের দেখা হলো তাইনা?
মিশু অভিমানী গলায় বলল,আমি দুইদিন ই অপেক্ষা করেছি আপনার জন্য।ভেবেছিলাম একসাথে ঘুরতে যাবো বাইকে করে।কিন্তু আপনি আসেন নি,খুঁজে ও পাইনি।আমি কি জানি আপনি এখানে এভাবে পড়ে আছেন? আমাকে জানান ও নি।কেন?
মর্ম হেসে বলল,আমি অন্যের আনন্দ নষ্ট করতে চাইনা।অন্যের কষ্ট দূর করতে আমার ভালো লাগে,কিন্তু আমার জন্য কারো কষ্ট হোক সেটা মানতে পারিনা।
মিশু অবাক হয়ে বলল,তাই বলে জানাবেন না একবার ও? আজব!
মর্ম আবারো শব্দ করে হাসল।মিশুর অভিমান খুব ভালো লাগছে ওর।দুদিন পর মিশুকে দেখতে পেয়ে মনটা ভালো হয়ে গেছে।আসলে বাসা থেকে ফোন দিলেই মর্ম জানিয়েছে সে ফিল্মের কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছে তাই বাড়ি ফিরতে পারেনি।কিন্তু কেউ ধারণাই করতে পারেনি ওর এই অবস্থা হতে পারে!
মিশু অভিমান করেই অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে আছে।মর্ম’র দিকে তাকালেও ওর কষ্ট হচ্ছে ভীষণ!
মৈত্রী ডাক্তারের সাথে কথা বলে জানতে পারলো,পা কেটে বাদ দেয়ার প্রয়োজন নেই।শুধু কিছুদিন হাটাচলা বন্ধ রেখে শুয়ে থাকতে হবে।দিনে অন্তত ১০ ঘন্টা শুয়ে থাকা জরুরি।কিছুদিন রেস্ট নিলে আর চিকিৎসা করালে দ্রুত পা সেরে উঠবে আশা করা যায়।
ডাক্তারের কথা শুনে মৈত্রী একটু ভরসা পেলো।তবুও ওর কিছুই ভালো লাগছে না।ডাক্তারের চেম্বার থেকে বেড়িয়ে আসতেই ওর বাবা কল দিলো।এই অসময়ে বাবার ফোন কেন?
মৈত্রী রিসিভ করতেই সাফায়েত উল্লাহ সাহেব জিজ্ঞেস করলেন,তোমরা কি রাত্রে ফিরবে?
– আব্বু,আমরা যাইনি।
সাফায়েত উল্লাহ সাহেব অবাক হয়ে বললেন, যাস নি মানে!
মৈত্রী বেশ স্বাভাবিক গলায় বললো,আমরা যাইনি বেড়াতে।একটা কাজ পড়ে গেলো বলে যাওয়া হয়নি।
– এখন কোথায় তুই? বাসায় আসবি কখন?
– আমি ঢাকাতেই আছি।বাসায় কি কোনো দরকার?
– হ্যা,তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে বাসায় আয়।
– আমার তেমন কোনো কাজ নেই,আসছি এক্ষুনি।
কল কেটে দিয়ে সাফায়েত উল্লাহ সাহেব চিন্তায় পড়ে গেলেন।একটা কাজ পড়ে গেছে বলে ওরা ঘুরতে গেলো না,আবার বলছে তেমন জরুরি কিছু নয়! ব্যাপার টা কি তাহলে?
মৈত্রী মর্ম’র কাছে এসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,একজন কে ফোন দিয়েছিলাম।সে খাবার দিয়ে যাবে।মিশু সহ খেয়ে নিবি।আমাকে একটু বাসায় যেতে হবে।এক্ষুনি ফিরে আসবো চিন্তা করিস না কেমন?
মর্ম মাথা নেড়ে বলল,আচ্ছা।কিন্তু বাসায় কাউকে কিছু বলিস না।প্লিজ ভাইয়া?
মৈত্রী কিছু না বলে চলে আসলো সেখান থেকে।মনটা খুবই বিক্ষিপ্ত লাগছে ওর।
★
বাসায় ফিরেই দেখলো মিশুর বাবা মা এসেছেন।ও ওনাদের দেখে সালাম জানিয়ে জিজ্ঞেস করলো কেমন আছেন?
ওনারা হেসে জবাব দিলেন, ভালো।
সাফায়েত উল্লাহ সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, মিশু কোথায়?
– ওকে একটু হসপিটালে রেখে এসেছি।এক্ষুনি যাবো তো আবার।আমি তো জানিনা ওনারা এসেছেন।
সাফায়েত উল্লাহ সাহেব ভাবলেন মৈত্রী হাসপাতালে নিজের চেম্বারে ওকে রেখে এসেছে।এদিকে উনি নিজেই মিশুর আব্বুকে ফোন দিয়ে জানিয়েছিলেন জরুরী কথা আছে,বিকেলে ওনার বাসায় যাবেন।মিশুর বাবা মা ভেবেছেন মিশু হয়ত উলটা পাল্টা কিছু করে বসেছে।যা পাজি হতচ্ছাড়া মেয়ে ওটা! তাই ছুটে এসেছেন ওনারা। কিন্তু এসে দেখেন সেসব কিছুই ঘটেনি বরং সাফায়েত উল্লাহ সাহেব মৈত্রির সাথে মিশুর বিয়ের প্রস্তাব টা দিয়ে বসলেন ওনাদের।মৈত্রীকে ওনারা খুবই পছন্দ করেন।সরাসরি মৈত্রীর সাথে কথা বলে একটা সিদ্ধান্ত জানাবেন বলেছেন।
মৈত্রী ভালোভাবে ওনাদের বুঝিয়ে বললেন মিশুর ব্যাপার টা।এ বাড়িতে বিয়ে হলে ওর পক্ষে কতটা ভালো হবে বুঝতে সমস্যা হলনা ওর মা বাবার।তবুও নানান বিষয় নিয়ে আলোচনা চললো অনেক্ষণ।সাফায়েত উল্লাহ সাহেবের স্ত্রী,মাত্রা, খুজিন্তা,তানিন সকলেই মিশুর অনেক প্রশংসা করলো।সেসব শুনে ওর বাবা আর আপত্তি করতে চাইলেন না।মৈত্রীর মামাও অনেক ব্যাপার নিয়ে কথা বললেন সবার সাথে।সবমিলিয়ে বিয়েটা পাকা হয়েই গেলো।
মিশুর বাবা জানালেন, মেয়েটা যখন এ বাড়িতেই থেকে যেতে চাইছে তাহলে আর আপত্তি কিসের।ও যখন মৈত্রীকে পছন্দই করে আমরা আর কি বলবো? কিন্তু বিয়েটা মিশুর ইচ্ছেনুযায়ী হবে।অর্থাৎ মিশু যেদিন চাইবে,সেদিন ই হবে।তার আগে কোনোভাবে ই যেন ওকে চাপ দেয়া না হয়।
কাজী পরিবারের সকলে অনেক খুশি হলেন।মাত্রার বিয়ের পরপর ই তাহলে মৈত্রীর বিয়ে হতে চলেছে! মৈত্রী লজ্জায় মাথা নিচু করে রইলো।
মিশু মর্ম’র মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে আর নিজেও খাচ্ছে।
মর্ম খাবার খেতে খেতে বললো,একটা কথা বলবো মিশু?
– হ্যা বলুন।
এমন সময় মিশুর ফোন বেজে উঠল।ও স্ক্রিণে তাকিয়ে দেখলো ওর আম্মু ফোন দিয়েছে।কল কেটে দিয়ে ফোন রেখে দিলো।মর্ম ব্যাপার টা খেয়াল করে তাড়াতাড়ি খাবার শেষ করে বললো,মায়ের সাথে কথা বলো।কেটে দিলে কেন?
মিশু হাত ধুয়ে এসে ফোন নিয়ে বাইরে এলো।তারপর মাকে কল দিতেই শুনতে পেলো ওর মায়ের উচ্ছ্বসিত কণ্ঠ! মিশু অবাক হয়ে বলল,কিগো এত ফুর্তি কেন?
ওর আম্মু হেসে হেসে বললেন, ফুর্তি হবেনা? মেয়ের বিয়ে বলে কথা।
মিশু হেসে বললো,তোমার আরেকটা মেয়ে কবে হলো? আব্বুর কি আরেকটা বউ আছে নাকি?
মা ক্ষেপে গিয়ে বললেন,ধুর তুইও না।সবসময় ফাজলামো।হ্যা রে মিশমিশ,তুই যে ডাক্তারকে ভালোবাসিস আমাকে তো জানাস নি।
মিশু হেসে বললো,আমি নিজেও তো জানতাম না ওনাকে ভালোবাসি।তোমার মুখেই প্রথম শুনলাম।কে আবিষ্কার করলো কথাটা? তুমি নিজে?
ওর আম্মু বাচ্চাদের মত ন্যাকা ন্যাকা গলায় বললেন,তলে তলে কতদূর চলে গেছিস আর জিজ্ঞেস করলে বলবি আমিতো পানি ছুঁই নি।পাজি কোথাকার।
মায়ের কথা শুনে মিশু হাসিতে ঢলে পড়লো। হাসতে হাসতে বলল,কি বলার জন্য ফোন দিচ্ছো বলোতো? তাড়াতাড়ি বলে রেখে দাও।
– বাবারে বাবাহ! এখন আবার কি কাজ করছিস? ডাক্তারের পেশেন্ট দের সামলে রাখছিস নাকি?
– হ্যা রাখছি।পেশেন্টকে তুলে খাওয়ালাম এইমাত্র।
– হইছে,আর ফাজলামো করবি না তো।
– আচ্ছা করবো না।আর কিছু বলবা?
– আসল কথাটাই তো বলা হয়নি।আমরা মৈত্রীদের বাড়িতে এসেছিলাম।তুই শুনেও এলিনা কেন?
মিশু অবাক হয়ে বলল,আমি শুনিনি।শুনলে যেতাম।কেন এসেছিলে?
– বাপ রে! এমন ভাবে বলছিস যেন আমি তোর কেউনা।
মিশু হেসে বলল,তোমার সাথে আমি এভাবেই কথা বলি।এ আর এমন নতুন কি? তা এসেছিলে যখন এখনি চলে যাচ্ছো কেন? আর কিচ্ছুক্ষণ বসতে পারতে।
মা বললেন, সাফায়েত উল্লাহ সাহেব বারবার জেদ করছিলেন থাকার জন্য।কিন্তু উনি বলছেন একেবারেই থেকে যেতে।মাত্রার বিয়ের পরে বাসায় ফিরতে বলছেন।আমিও তাই জোর করে বাসায় আসলাম।বাসার সব কাজ সেরে কাল একেবারে বিয়েবাড়ির প্রস্তুতি নিয়ে যাবো।কাল তো গায়ে হলুদ,একটা প্রিপারেশনের ব্যাপার আছেনা?
মিশু বলল,হুম বুঝলাম।বিয়ের দাওয়াত পেয়েছো বলে এত খুশি? নাকি ওনাদের খাতির দেখে খুশি হয়েছো?
– সেকিরে! মৈত্রী তোকে জানায়নি কিছু?
– কই না তো।কি হয়েছে এত আনন্দ করার মত?
মিশুর মা খুশি খুশি গলায় বললেন,ওনারা মৈত্রির সাথে তোর বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন।এত ভালো একটা ছেলে,তোর কত কেয়ার করে।কি করে না করি বল? আর সবচেয়ে বড় কথা,তুইও নাকি ওকে ভালোবাসিস?
মিশু একেবারে থ হয়ে গেছে।মুখ দিয়ে কথা বেরোচ্ছে না।মা অনেক্ষণ বকবক করার পর ও সম্বিৎ ফিরে পেলো।তারপর খুবই লজ্জা করতে লাগলো ওর।মৈত্রীকে ও ভালোবাসে কিনা জানেনা,তবে অনেক ভালোলাগে ওকে।তাছাড়া বাড়ির বড়রা যখন বিয়ে ঠিক করে ফেলে,সেটাতে অমত হতে নেই।মৈত্রী সত্যিই মিশুর অনেক খেয়াল রাখে।এজন্যই সকালে উনি ওভাবে প্রশ্ন করেছিলেন এতক্ষণে বুঝতে পারলো মিশু।
কল কেটে দিয়ে লাজুক ভঙ্গীতে কেবিনে এসে ঢুকলো।মৈত্রীর চেহারা টা চোখে ভেসে উঠছে আর লজ্জা লাগছে ওর।মর্ম চেয়ে দেখলো মিশুকে খুবই লাজুক দেখাচ্ছে।লজ্জায় লাল হয়ে গেছে মেয়েটা! এত লজ্জা পাচ্ছে কেন? লজ্জা পেলে মিশুকে আরো মিষ্টি দেখায়!
মর্ম বলল,মিশু একটা কথা বলতে চেয়েছিলাম।
মিশু মুখ তুলে বলল,হ্যা বলুন।
– এদিকে আসো।
মিশু এগিয়ে গেলো মর্ম’র কাছে।মর্ম ওকে কাছে টেনে নিয়ে ওর পাশে বসালো।তারপর মিশুর ডান হাতটা ওর হাতের মুঠোয় নিয়ে ধরে রইলো।ব্যাপার টা অন্যসময়ে হলে মিশু হয়ত কিছুই বলতো না।কিন্তু এখন ও মৈত্রীর হবু স্ত্রী, এটা কিছুতেই করা ঠিক না।মিশু হাত ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করতেই মর্ম আরো শক্ত করে চেপে ধরে বলল,এত অস্থির হচ্ছো কেন? বলছি।
– হ্যা বলুন।
– I love you mishu…
কথাটা শুনে ইলেট্রিক শক লাগার মত চমকে উঠল মিশু।এটা কি মর্ম’র মুখ থেকে বের হয়েছে? নাকি আশেপাশে মৈত্রী আছে? মিশু চারিদিকে তাকালো।ছোট্ট এই ঘরটাতে তো,এক টাই বেড ছাড়া আর কিছুই নেই।মানুষ তো দূরের কথা।তাহলে মৈত্রী আসেনি।কিন্তু এ কথাটা তো এখন মৈত্রীর মুখ থেকে শোনার কথা।তাহলে মর্ম বললো কেন?
মিশু চোখ মিটমিট করে তাকালো মর্ম’র দিকে।মর্ম ওর চোখে চোখ রাখলো।মিশু দেখল সেই চোখে ওর জন্য অসম্ভব মায়া! কতটা ভালোবাসলে একজন মানুষ অন্যের দিকে এত মায়াভরা চোখে তাকাতে পারে! তাহলে কি মর্ম সত্যিই মিশুকে….
মিশুর শরীর টা কেঁপে উঠল।এটা কিভাবে সম্ভব? একইসাথে দুদিক থেক দু ধরণের কথা ওর কানে আসলো।একদিকে ভালোবাসি, অন্যদিকে বিয়ে! নিজের কানকেই বিশ্বাস হচ্ছেনা মিশুর।ও চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে বলল,সিরিয়াসলি?
মর্ম মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, হুম মিশু।প্রথম দিন সেই অন্ধকার ঘরে আবছা
আলোয় তোমাকে দেখেই আমার কি যেন হয়ে গেলো।সাধারণ ভালোলাগা ভেবে মনকে সান্ত্বনা দিয়েছিলাম।কিন্তু প্রতিমুহুর্তে তোমাকে যেভাবে মনে পড়তো, তাতে মনে হতো এটা কোনো সাধারণ ভালোলাগা নয়।আমি বোধহয় সত্যিই তোমার প্রতি দূর্বল হয়ে যাচ্ছি।তবুও নিজেকে বুঝানোর চেষ্টা করেছি অনেক।তবুও কেবল ই মনে হচ্ছিলো এটা ক্রাশ নয়,আমি তোমাকে পাশে চাই সবসময়ের জন্য।আর এই দুইটা দিন বেডে পড়ে থাকা অবস্থায় আমি সবচেয়ে বেশি মিস করেছি তোমাকে।আমার পা ভেঙেছে তাতে আমার নিজের জন্য কোনো কষ্ট নেই।আমার কষ্ট হচ্ছিলো এটা ভেবে যে,আমি তোমাকে নিয়ে আর বাইকে বের হতে পারবো না।ডাক্তার বলেছে অনেক দিন আমাকে রেস্টে থাকতে হবে।নো হাটাচলা,বাইক চালানো দূরের কথা।তোমাকে নিয়ে আর হাতিরঝিলে যাওয়া হবেনা,আর রাত্রিবেলা ল্যাম্পপোস্ট এর আলোয় হাটা হবেনা,আর ওই ক্যাফেতে গিয়ে কফি খেতেও পারবো না।
মর্ম এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো।কিন্তু এতে যে মিশুর দম বন্ধ হয়ে মরে যাওয়ার মত অবস্থা হয়ে গেলো! মর্ম’র সাথে কাটানো মুহুর্ত গুলো সত্যিই অনেক ভালোলাগার ছিলো।মর্ম একজন নামকরা ড্রামাটিস্ট হয়েও মিশুকে অনেক গুরুত্ব দেয়।কিন্তু মৈত্রীও যে মিশুর অনেক যত্ন নেয়,একমাত্র মৈত্রীই মিশুর কষ্টে সমানভাবে আঘাত পায়।মিশুকে কাঁদতে দেখলে ডাক্তার হয়েও নিজের কান্না থামাতে পারেনা।দুজনেই এত ভালোবাসে কেন? এ কোন বিপদের আশংকা?
মিশুর সমস্ত শরীরে কাটা দিয়ে উঠল।আম্মু বলেছে সাফায়েত উল্লাহ সাহেবের সাথে মোটামুটি পাকা কথা হয়ে গেছে ওদের।এতে অভিভাবক দের কোনো সমস্যা নেই।যেকোনো এক ভাইয়ের সাথে বিয়ে দিতে পারলেই ওরা খুশি।কিন্তু এখানে যে দুজন ছেলেই মিশুকে অনেক ভালোবাসে সেটা কে জানে?মৈত্রীর কেয়ারনেস,অসংখ্যবার ফোন দেয়া,মিশুর ঘুম না এলে ঘুম পাড়িয়ে দেয়া,ওষুধ খাওয়ানো, ভরসা দেয়া সবকিছুই ও করেছে কত ভালোবেসে! আর মর্ম শত চেষ্টা করেও নিজের মনকে আটকাতে পারেনি,এতটাই ভালোবেসে ফেলেছে! এবার কি করবে মিশু? দুজনকেই ওর অনেক ভাললাগে।কাকে আপন করে নিয়ে কাকে আঘাত দেবে? এমন কঠিন পরীক্ষায় কেন পড়তে হলো?
চলবে..
(ব্যস্ততার কারণে লিখতে দেরি হওয়ায় আন্তরিক ভাবে দুঃখিত)