#কি_ছিলে_আমার
-রূবাইবা মেহউইশ
পর্ব-২৩
বিয়ের পর কনের বিদায় পর্ব হবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ইরশাদ মৈত্রীর ক্ষেত্রে তা হলো না। তারা দুজনে চমৎকার ভাবে গৃহপ্রবেশ করলো উপরতলা থেকে নিচতলায় আর বুদ্ধিটা ছিলো ময়ূখের। সন্ধ্যেলগ্নে ইরশাদের বড় চাচা যখন তাড়া দিলেন বিদায়ের তখন হুট করেই মৈত্রী কান্না করে দিলো। যেন তেন কান্না নয় সবাইকে অবাক করে দিয়ে হেঁচকি তোলা কান্না। ইরশাদকে তখন সবে তার রুমে নিয়ে আসা হয়েছিলো আয়না দেখা আর মিষ্টিমুখ করার রীতি পালন করতে। মৈত্রী এমন কান্না দেখে উপস্থিত প্রত্যেকেই ভ-ড়-কে গিয়েছিল। যে মেয়েকে কেউ হাসি কান্নায় কখনো দেখেনি তার এমন রূপ সত্যিই আশ্চর্যজনক ছিলো পরিচিতদের কাছে। ইরশাদ নিজেও ভীষণরকম চমকেছে যখন দেখলো ঘোমটার আড়ালে মৈত্রী গা কাঁপিয়ে কাঁদছে। সে কপাল কুঁচকে চি-ন্তি-ত চোখে ময়ূখ আর অন্তুর দিকে তাকাতেই অন্তু বলল, “টেনশন নট ভাইয়া মেয়ে মানেই ক্রাইং সিন। দু দিনেই অভ্যাস হয়ে যাবে তোমার মত ফ্যামিলিম্যানের ।”
“তোর খুব অভ্যাস আছে অন্তু!” সন্দেহি চোখে চেয়ে ফিসফিস করে প্রশ্ন করলো ময়ূখ। অন্তু তখন চারপাশে তাকিয়ে তার বউকে দেখলো আছে কিনা। তারপর সেও ফিসফিসিয়ে বলল, “ভীষণ প্যারায় আছি রে ময়ূখ।”
ইরশাদ ঘর ভর্তি মানুষের দিকে একবার তাকিয়ে বলে বসলো, ওকে বোধহয় একটু স্পেস দেওয়া দরকার। কা-ন্না-কা-টির মাঝে আবার ঘরভর্তি মানুষে হয়তো বেশিই অ-স্থি-র হয়ে পড়বে।”
সদ্য বিয়ে হওয়া বরের মুখে এমন কথা শুনে সকলের চোখজোড়া তী-রে-র মত গেঁথে গেল তার দিকে। ইরশাদ অবশ্য শান্ত স্বভাবের হলেও স্পষ্ট কথা বলার অভ্যাসও আছে। লোকচক্ষু দেখে সে এবার কণ্ঠস্বর আগের চেয়ে সরল করে বলল, ” মৈত্রীকে একটু স্বাভাবিক হতে দেওয়া দরকার।”
ইরিন আর তার বড় দুই জায়ের কেউ আসেনি বরযাত্রীতে। শুধু মাত্র ছোট চাচী মানে অন্তুর মা এসেছেন বাড়ীর মহিলাদের মধ্যে আর সাথে এসেছে বাড়ির বড় বউ জুয়েনা, ছোট বউ নিপা। অন্তুর মা এতক্ষণ এখানে ছিলেননা ময়ূখ গিয়ে উনাকে মৈত্রীর কথা বলতেই তিনি আর রোকসানা বেগম উপস্থিত হন সেখানে। তারাও মৈত্রীর কা-ন্না দেখে সবাইকে বুঝিয়ে ঘর খালি করে মৈত্রীকে সামলানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছুতেই কাজ হলো না তা দেখে ঘরেই দাঁড়িয়ে থাকা ইরশাদ হঠাৎ ময়ূখকে ডেকে বলল, “ছাঁদে কি অনেক লোকজন?”
“হ্যাঁ ভাই। ছাঁদে প্যান্ডেলে প্রায় অনেক মেহমানই আছে।”
“মৈত্রীকে আমি একটু আলাদা রাখতে চাচ্ছিলাম৷ ওকে থামানো জরুরি।”
মৈত্রীর খালা হঠাৎ করে কোথা থেকে এসে উপস্থিত হলেন রুমে। মৈত্রীকে একহাতে জড়িয়ে রাখা রোকসানাকে দেখে যেন একটু রে-গে গেল। কিছুটা রুক্ষ স্বরেই তিনি রোকসানাকে সরিয়ে নিজে বসতে চাইলো তার পাশে। ইরশাদ, ময়ূখ আর অন্তুর মা তিনজনেরই খুব বাজে লাগলো ব্যাপারটা। ইরশাদ কখনোই হুট করে মেজাজ দেখায় না কারো ওপর কিন্তু মৈত্রীর খালার আচরণ তাকে প্রচণ্ড ক্ষু-ব্ধ করলো। সে এবার অনেকটা জোরেই বলল, “দ্যাখ তো এখনই যাওয়ার ব্যবস্থা হয় কিনা! নয়তো ফালতু কিছু চোখে পড়লে লোক সমাগমেই আমি ভুল কিছু বলে বসবো।”
ইরশাদের কথার অর্থ যেন একমাত্র মৈত্রীর খালারই বোধগম্য হলো। মহিলা ভ্রু জোড়া বক্র করে চেয়ে আছেন ভাগ্নি জামাইর দিকে। ময়ূখ তখনই বলল, “ভাই তোমার কাছে স্পেয়ার চাবি আছে না নিচের ফ্ল্যাটের?”
ইরশাদের কাছে আগে থেকেই চাবি ছিল এক্সট্রা কিন্তু আজ বিয়ের আসরে তো সেসব আনা হয়নি। তখনই মনে পড়লো আব্বুর কাছেও আছে চাবি। সে বলল আছে আব্বুর কাছে। মৈত্রীর কান্না ততক্ষণে থেমে গিয়ে ফোঁপানো চলছে। ইরশাদ কিছুটা অধৈর্য্য হলো এত কান্না দেখে। বিড়বিড় করে বলেই ফেলল, ” এত কান্নার কি আছে ভাই বিয়েই তো হয়েছে খু-ন থোড়াই না করেছি!”
“তুমি একটু বোসো না বাবা।” ইরশাদকে সেই ঘরে ঢোকা অবধি দাঁড়িয়ে থাকা দেখে রোকসানা বলল বসতে। কিন্তু ইরশাদ কিছুতেই সহ্য করতে পারছে না এত কা-ন্নাকা-টি। সে খুব একটা কান্না-কা-টি কখনোই নিতে পারে না। মনে পড়ে বছর দুই আগে আম্মু কোমরের ব্যথায় সেকি কান্না! ময়ূখ সে কা-ন্না-কাটির জন্য একাই থাকতো আম্মার পাশে আর ইরশাদ অন্যান্য কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতো যেন কান্নাটুকু এড়ানো যায়। সেদিন মেহেরকে ধম-কানো আর বকাঝকার পেছনে কিছুটা কারণ এই কা-ন্না-ই ছিল। আর আজ মৈত্রীর এমন কান্না! সে ভেবেই পায় না মেয়েরা এমন করে কাঁদে কেন? বিয়ে একটা পবিত্র সম্পর্ক এখানেও কেন কা-ন্না-র আসর জমাতে হবে!
ময়ূখ চাবি এনে সেটা এগিয়ে দিলো ইরশাদকে, ” ভাই তোমরা নিচে তোমার ঘরে একটু বসতে পারো। কেউ সেখানে ডিস্টার্ব করতে পারবে না।”
ময়ূখের কথা শুনে ইরশাদও ভাবলো এটাই করা উত্তম এই মুহুর্তে।
রোকসানার দিকে তাকিয়ে অনুমতি চেয়ে ইরশাদ বলল, “আন্টি, মিষ্টি খাওয়া আর আয়না নাকি দেখার একটা নিয়ম আছে আমরা কি সেটা স্কিপ করতে পারি? যদি স-ম-স্যা না হয় আমি ওকে নিয়ে নিচে যেতে চাই।”
রোকসানা আবেগী হলেন ইরশাদের আচরণে। ছেলেটা তাকে মৈত্রীর অভিভাবক হিসেবে সম্মান দিচ্ছে এটা সত্যিই আনন্দের। রোকসানা মাথা নেড়ে সম্মতি দিতেই ইরশাদ আর এক মুহূর্তও দেরি না করে মৈত্রীর সামনে গেল। চাচী আর শ্বাশুড়ির মাঝে এলিয়ে পড়া মৈত্রীকে প্রায় এক হাতে টেনেই দাঁড় করিয়ে দিলো। ময়ূখ বসার ঘরের সবাইকে খেয়াল রাখছিলো যেন কেউ বর কনেকে মাঝপথে না আটকায়। ইরশাদ মৈত্রীকে নিয়ে সোজা নিচে নিজের ঘরে চলে গেছে। সিঁড়িতে নোরা, নিপা, জুয়েনার সামনে পড়তেই তারা কিছু বলতে শুরু করতেই ময়ূখ উপর থেকে তাদের থামিয়ে দিলো। বলে দিলো একটু ছে-ড়ে দাও তাদের মৈত্রী মোটামুটি অসু-স্থ আছে৷ সত্যিই মৈত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছে আকস্মিক কান্না-কাটিতে। ইরশাদ নিজের ঘরে নিয়ে মৈত্রীকে সোজা বেলকোনিতে চেয়ার রেখে বসিয়ে দিলো। শীতের শেষ মুহূর্ত বাতাসে বসন্তের আগমনী বার্তা মিশ্রিত। মৈত্রীর অস্থিরতা কা-টা-তেই বদ্ধঘরের চেয়ে বেলকোনি ঠিক মনে হলো তার। ঘরে ফ্রিজে খুঁজে খুঁজে কোল্ড কিছু না পেয়ে আইস কিউব নিলো সে। মৈত্রীকে কিছুটা ঠান্ডা লাগানোর জন্য ইরশাদ এক গ্লাস শরবত করে তাতে আইস ছেড়ে দিলো৷ চেয়ারে মাথা এলিয়ে দিয়ে নি-স্তে-জ বসেছিল মৈত্রী। ভারী লেহেঙ্গাটাই হয়তো তাকে আরও বেশি অ-সু-স্থ করে দিচ্ছে মনে হতেই ইরশাদ মায়ের ঘরে ঢুকে একটা শাড়ি খুঁজলো। আম্মু শাড়ি খুব একটা পরেন না অনেক সময় হলো তবুও আলমারিতে থাকার কথা শাড়ি। কিন্তু এই মুহূর্তে আলমারির চাবি পাওয়া মু-শ-কি-ল বুঝতে পেরে ইরশাদ পুনরায় ময়ূখকে কল দিলো। বরযাত্রী খুব বেশি ছিলো না তবুও মুরুব্বি যারা ছিলো প্রায় সকলেই মাগরিবের আগে চলে গেছে। ফখরুল সাহেব বিদায়ের সময় হয়তো অভিভাবক হয়ে কথাবার্তা বলবেন সে কারণেই তিনি এবং তাঁর বড় ভাই থেকেছিল। কিন্তু ইরশাদের এই হঠাৎ করা আচরণে তারা বুঝলেন যুগ বদলেছে৷ ছেলেরাও যথেষ্ট সমঝদার তাই তারা আর ছেলে মেয়েদের মাঝে না থেকে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো৷ মৈত্রীর বাবার সাথে সব রকম আনুষ্ঠানিক কথাবার্তা শেষ করে তারাও চলে গেলেন সকলে। রয়ে গেল বর কনে সাথে ময়ূখ, নোরাও৷ ইরশাদ ময়ূখকে বলল নোরা যেন রোকসানা আন্টির থেকে একটা শাড়ি নিয়ে নিচে যায়৷ দশ মিনিটের মাঝেই নোরা আর অরুণিমা গেল নিচে। ইরশাদ বসার ঘরে গিয়ে অপেক্ষা করলো ততক্ষণে অরুণিমা লেহেঙ্গা বদলে মৈত্রীকে আটপৌরে ভাবে শাড়ি পরিয়ে দিয়েছে৷ এতেই যেন দেহ জুড়ে প্রশান্তি নামলো মৈত্রীর। সময়ের সাথে তার হিঁচকি তোলাও বন্ধ হয়ে এলো। ঘড়ির কাটা যখন রাত আটটা তখন ইরশাদ বলল, এবার তাদের বাড়ি ফেরা উচিত। ময়ূখকে ডাকা হলো ফেরার জন্য ময়ূখ বলল তারা যেন চলে যায় সে একটু পর আসবে৷ ইরশাদ কেমন করে যেন তাকালো একবার ময়ূখের দিকে আর তাতেই ময়ূখের মনে হলো ভাই বুঝি তার ভেতরটা পড়ে নিচ্ছে সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে। কিন্তু না ইরশাদ আর কিছু বলেনি৷ মৈত্রীকে এক হাত বাড়িয়ে বলল, “এবার ফেরা যাক আপন নীড়ে!”
ফোলা ফোলা চোখ, লেপ্টানো কাজল, লিপস্টিকহীন ঠোঁট আর লাল হয়ে ওঠা নাকের ডগায় এবার লজ্জারা এসে ভীড় জমালো মৈত্রী। সকল কান্না যেন আগেই শেষ করেছে নিবিড়ে বসে লজ্জায় ডো-বার জন্য। ইরশাদ -মৈত্রী বাড়ির সকলের কাছে বিদায় নিতেই ময়ূখ এসে গাড়ির চাবি এগিয়ে দিলো। সাজিয়ে আনা গাড়িটা ছিলো ইরশাদের বড় চাচার। ড্রাইভারই তো ছিলো গাড়িতে কিন্তু ময়ূখ বলল সে নিজেই ড্রাইভারকে পাঠিয়ে দিয়েছে। ইরশাদ যেন নিজেই ড্রাইভ করে আর মৈত্রী চাইলে একটু কোথাও ঘুরেও যেতে পারে। বাড়িতে ইরিনকে আগেই সে বিষয়ে জানিয়ে রাখা হয়েছে। ইরশাদ যখন গাড়িতে উঠলো মৈত্রীকে নিয়ে নোরাও তখন উঠে বসলো পেছনের সিটে। ময়ূখ বাইরেই দাঁড়িয়ে জানালো সে আরও পরে যাবে। ইরশাদ হ্যাঁ না কিছুই না বলে গাড়ি স্টার্ট দিলো। মিনিট পাঁচেক পরে গাড়ি থামলো নোরা নামলো গাড়ি থেকে৷ ইরশাদ চোখের ইশারায় সম্মতি জানিয়ে দিলো নোরাকে, “যাও।”
সারাদিনের গমগম করা বাড়িটা তখন নি-স্ত-ব্ধ-তার ভ-য়ংক-র রূপে সজ্জিত। আকাশ জুড়ে অষ্টাদশীর চাঁদের শুভ্র হাসিতে ভূলোক ভাসছে। দোতলায় টুকটাক জিনিসপত্রের টুংটাং আওয়াজ থাকলেও নিচ তলাটা ভূতুরে নীরবতায় ডুবে আছে। ঘরের দরজা ভেতর থেকে লক ছিলো না বলেই হয়ত নোরা বিনাশব্দে ভেতরে গেল। আঁধার ঢাকা ফ্ল্যাটে একটুখানি আলো উঁকি দিচ্ছিলো বেলকোনির দরজা দিয়ে। পা টিপে টিপে আলতো পায়ে আলোর রেখায় চোখ রেখেই নোরা ঢুকে পড়লো ইরশাদের ঘরটাতে। পিনপতন নিরবতায় ভেসে এলো কারো মুখ আটকে রাখা কান্নার শব্দ। সে কা-ন্না কারো নিঃ-স্ব হওয়ার, পাওয়ার আগেই হারিয়ে ফেলার নীরব য-ন্ত্র-ণা প্রকাশের কান্না, সে কান্না কারো ভেতর বাহির ভে-ঙে চূর্ণ হওয়ার। এ কা-ন্নার আওয়াজ নোরার মত কঠিন মনের মেয়েটাকে ঘরের মাঝে আচমকাই থমকে দিলো। ফিসফিস করে কানের কাছে যেন কেউ স-ত-র্ক করলো, যেওনা ওপাশে। সইতে পারবে না ভা-ঙা-র যন্ত্রণা৷ যেও না তুমি শুনে সইতে পারবে না ভেঙে পড়ার কারণ! মন আর মস্তিষ্কের যে তার আগেই থেকেই মালুম ছিলো ময়ূখের কা-ন্নার কারণ আর তার আ-র্তনা-দের উপলক্ষ। তবুও এখন ভয় হচ্ছে খুব থমকে গেছে পা৷ একটু আগেই ইরশাদ যখন গলির মোড়ে গাড়ি থামিয়ে বলল, “নোরা, তুমি কি একা ফিরতে পারবে বাড়িতে?”
মৈত্রী বলেছিলো রাত হয়েছে ও এখন একা কেন আবার আমাদের বাড়ি যাবে? ইরশাদ সে কথার জবাব না দিয়ে শুধু বলেছিলো, লক্ষী বোন আমার রাগ কোরো না তুমি ফিরে যাও সেখানে৷ ময়ূখের সাথে এসো কেমন!
নোরার মন বলছিলো সে যা ভাবছে সেই একই ভাবনা ইরশাদও ভাবছে। সে এক বাক্যও খরচ না করে নেমে এসেছে গাড়ি থেকে৷ মৈত্রীদের বাড়ি ফিরে যখন দেখলো নিচতলার দরজা খোলা তখনই ভয়টা শুরু হলো। কোন এক অজ্ঞাত কারণে অরুণিমাও তখন নিচে এসেছিলো। সেও যেন ভেবেছিলো নিচে কিছু একটা হবে৷ নোরাকে দেখতেই কেমন স্বস্থির নিশ্বাস ফেলল।
” মনের ডাক্তারি শিখছো তুমি তাইনা নোরা! আজ তোমার সুযোগ এসেছে নিজের শিক্ষা কাজে লাগানোর।”
“কি বলছো বৌদি!”
“তোমার ওই চা-লা-ক চোখ দুটোকে পড়ে নিয়েছিলাম কিছুদিন আগেই। ময়ূখের যন্ত্রণায় মলম হও শেষটা সুন্দর তোমারই হবে। ভালোবাসলে কখনো কখনো সুযোগ নিতে হয়।” অরুণিমা কথার ছলে ইঙ্গিত দিয়ে গিয়েছিল যেন মৈত্রীকে৷ আর সেও তাই সে পথেই পা বাড়িয়েছে। ঘরে ঢুকে যখন ময়ূখের কান্নার আওয়াজ কা-নে এলো তখনই যেন দম ব-ন্ধ হয়ে আসছিলো তার। কিন্তু নোরার মন তো এত দূর্বল নয়! সে বেলকোনিতে যাওয়ার আগেই ময়ূখ টের পেয়ে গেল ঘরে কেউ ঢুকেছে। সে কণ্ঠ রোধ করে রাখলো যেন ঘরে আসা মানুষটি জানতে না পারে এ ঘরে কোন পুরুষের আর্তনা-দ গর্জেছিল। নোরা চুপচাপ যখন বেলকোনির দরজায় এসে দাঁড়ালো তখন ময়ূখ বুঝে গেল কে এসেছে। খুব স্বাভাবিক স্বরে প্রশ্ন করলো, “যাওনি কেন?”
“তোমাকে দেখতে আর একটু একটু করে শিখতে।”
নোরার কথায় হেয়ালি ছিল।
“কি?”
” ভালোবাসাকে অন্যের হওয়া চোখের সামনে দেখে নিজেকে কেমন করে গুছিয়ে রাখা যায়!”
নোরার কথাটাতে প্রশ্ন ছিলো নাকি নিজেই সে নিজেকে শুধাচ্ছিলো বুঝলো না ময়ূখ তবে তার কথার মাঝে থাকা ছোট্ট ইঙ্গিতটা যেন ঠিকই বুঝলো। তবুও নোরা আরেকটু স্পষ্ট করে বলেই ফেলল, “আজকের তোমার মত আমিও তো একদিন এমন দিন চোখে দেখব। তুমি অন্য কাউকে কবুল বলবে আমি দমব-ন্ধ করে তা দেখে যাব।”
নোরার কথাটা শেষ হতেই দু চোখ বুঁজে নিলো ময়ূখ। আজ প্রায় পৌনে এক মাস ধরে সে নির্ঘুম রাত, স্বস্তিহীন দিন কা-টা-চ্ছে৷ যে অনুভূতিকে সে মোহ ভেবে এড়িয়ে গেছে সে অনুভূতিই তাকে ক-রা-তের মত কে-টে ব্যবচ্ছেদ করে গেছে বিগত দিনগুলোতে৷ যার মুখে হাসি নেই বলে সে পেঁচীমুখী খেতাব দিয়ে মজা করতো সে মুখের হাসিতেই সে এখন নিজের ম-র-ণ দেখে৷ যে ভাইকে সে রক্তের চেয়েও আপন ভাবতো সে ভাইয়ের হাতের মুঠেয় মৈত্রীর বাঁধা হাত দেখে সে আজ বি-ষ বাণে বি-দ্ধ হচ্ছে৷ এ যে নিয়তির চ-র-ম শা-স্তি কি করে বোঝাবে মনকে! নোরা ক্ষণে ক্ষণে যখন নিজের অনুভূতির বিশ্লেষণ করছো ময়ূখের তখন মায়া হলো নিজের জন্য, মায়া হলো নোরার জন্যও। কিন্তু তার কি করার আছে? সে যে আজ বুঝতে পারছে মন তার কতোটা ভুল করে বসেছে! রাত বাড়ছে সেই সাথে বাড়ছে যন্ত্রণার দেয়াল। হঠাৎ আঁধার ঘেরা ঘর আলো করে বেজে উঠলো ইরশাদের ফোন৷ টেবিলের ওপরই ফেলে গেছে সেটা। নিজের পাহাড়সম য-ন্ত্রণা-কে পাত্তা না দিয়ে নোরা, ময়ূখ দুজনেই ঘরে ঢুকলো৷ ময়ূখ হাত বাড়িয়ে ফোনটা দেখতেই হাত মুষ্ঠি করে ঘু-ষি মা-রলো দেখালে। অকস্মাৎ এমন কান্ডে চমকে গেল নোরা। ভয়ার্ত চোখে ময়ূখের দিকে তাকিয়ে আবার ফোনে দেখল।
“মৈত্রী শাহরিয়ার” নামটা জ্বলজ্বল করছে ফোনের পর্দায় তার সাথে ভাসছে তাদের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকার ছবি। নোরা বুঝতে পারলো মৈত্রীর ফোন দিয়ে হয়তো ইরশাদই কল দিচ্ছে৷ সে রিসিভ করতেই ইরশাদ জানতে চাইলো, “ময়ূখ কোথায় স কি ঠিক আছে?”
মনের গোপন চেনা মানুষ গুলোকে মনের ভাবনা থেকে আলাদা করা যে মু-শ-কি-ল তা আজ নোরা প্রমাণ পেল৷
চলবে
(