কি ছিলে আমার পর্ব -৩৭ (শেষাংশ)

#কি_ছিলে_আমার
-রূবাইবা মেহউইশ
পর্ব-৩৭ (২য় অংশ)

ঝকঝকে লন্ডনের আকাশে কোথাও যেন এক ফোঁটা মেঘের বাস নেই। এয়ারপোর্ট থেকে গাড়িতে উঠেই নোরা উৎফুল্ল হয়ে বলল, “চেক ব্যাক সিট।”

ময়ূখ সবে সিট বেল্ট বেঁধেছিল। নোরার কথায় ‘হু!’ বলে পেছনে তাকালো। চমৎকার সাদা আর কমলা রঙের এক গুচ্ছ তাজা, সতেজ টিউলিপ। ময়ূখের চোখ হেসে উঠল লম্বা সফরের ক্লান্তি ভুলে। হাত বাড়িয়ে পেছন থেকে ফুলগুলো নিয়ে চুমু খেলো আলতো স্পর্শে। ড্রাইভিংয়ের ফাঁকে নোরা সেটা দেখেই হেসে ফেলল, ” এই চুমুটা তো উপহারদাত্রীর পাওনা তাইনা!”

“সে তো আগেই নিয়ে নিয়েছে নিজেরটা।”

নোরা এবার সশব্দে হেসে উঠলো। গাড়ি চলছে সাথে চলছে দুজনের মধ্যে কথপোকথন বাড়ির সবাই কে কেমন আছে এ নিয়ে৷ কথার মাঝেই তারা পৌঁছে গেছে গন্তব্যে। নোরা গাড়ি পার্কিংয়ে নিয়েই থামাল। ব্যাগপত্র আর ময়ূখকে নিয়ে এগিয়ে গেল লিফটের দিকে ততক্ষণে ময়ূখ আশপাশটা দেখে নিয়েছে। ঝকঝকে সুন্দর লন, কার পার্কিং আর সবচেয়ে আকর্ষণীয় জিনিস হলো পার্কিংয়ের বিপরীতে থাকা লম্বাটে করে লাগানো কয়েক রকম ফার্ন গাছ আর বেগুনিরঙা অর্কিড। মনোমুগ্ধকর এই ফুল বাহারি জায়গাটুকু ময়ূখের ভীষণ ভাল লাগল এবং এই প্রথম সে এমন গাছ লতাপাতাতে আকৃ-ষ্ট হল। নোরাদের এপার্টমেন্টটা আটতলা আর নোরার ফ্ল্যাট পাঁচতলায়। এলিভেটরে উঠে দুজনে নিঃশব্দে কয়েক সেকেন্ড কা-টা-তেই নোরা চোখে চোখ রেখে কিছু বলল। ময়ূখ চোখের ভাষায় আনাড়ি তবুও যেন বুঝলো তার স্ত্রীর আবেদন। পায়ে পায়ে এগিয়ে এসে মুখোমুখি হলো। সময় ব্যয় না করে একটুখানি ঝুঁকে এলো নোরার দিকে সেকেন্ড অতিক্রম হতেই নোরা দু হাতে গলা জড়িয়ে ধরল ময়ূখের। ঠোঁটের ছোঁয়ায় আদিম উন্মাদনায় ছেয়ে গেল দুজনের দেহ মন। লিফট যখন পঞ্চম তলায় থামলো তখন নোরার হুঁশ ফিরলো ময়ূখের ছিটকে পড়ায়। প্রিয় মানুষের প্রতি যে আ-স-ক্তি প্রেম থেকে তৈরি হয় তার রেশ হয় তিরতিরিয়ে বয়ে যাওয়া কোমল হাওয়ার মত কিন্তু যে আসক্তির শুরুটা কোন বাধ্যবাধকতা কিংবা দৈ-হি-ক চাহিদা থেকে তৈরি তা বোধহয় উগ্র উদাসীন হয়। ময়ূখের অন্তত তেমনটাই মনে হচ্ছে। এই যে, নোরার সাথে মিট করতেই ঠোঁটচুমু খেলো মেয়েটা তাতে ময়ূখের ভালো লাগলেও আলাদা কোন আবেগী অনুভূতির টান নেই। প্রথমবার দৈ-হি-ক মিলনমুহূর্তেও ঠিক এমনটাই হয়েছে৷ নোরা কাছে টেনেছে সেও গেছে খুব কাছে যতোটা গেলে দেহ তৃপ্ত হয়, মস্তিষ্কের উ-ত্তে-জিত নিউরন শীতল হয় ঠিক ততোটাই৷ এখন লিফটের এই সময়টুকুও তার কাছে সেই তৃপ্ততার বাইরে কিছু কি! হয়তো না, বিপরীত জেন্ডারের আবেদন ফেলতে পারা মু-শকি-ল তাই উপেক্ষার চেয়ে টেনে নেওয়াটাই যেন সহজবোধ্য ছিল। লিফট থেকে বেরিয়ে নোরার ফ্ল্যাটে ঢুকে পড়লো দুজন। বড় একটা অংশ জুড়ে ড্রয়িংরুম, একপাশে কিচেন লাগোয়া ডাইনিং আর দুটো রুম একটা বাথরুম। শুভ্র সাদা দেয়াল জুড়ে বর্গাকৃতির এক পেইন্টিং তার ঠিক নিচে সোফা, পাশেই চমৎকার কিছু ইনডোর প্লান্টস সাজানো৷ একপাশের দেয়াল সম্পূর্ণ কাঁচ-ঘেরা হওয়ায় উপরে খোলা আকাশ নিচের দিকে সরু পথের দৃশ্য স্পষ্ট৷ ময়ূখ দু চার পলকেই পুরো ফ্ল্যাটটাকে দেখে নিলো। মন্দ নয় দুজন মানুষের জন্য এমন একটা ফ্ল্যাট তবুও তার কেমন দ-ম-ব-ন্ধ লাগল৷ এখানে তার পরিচিত বাতাস আর বাতাসে মিশে থাকা অক্সিজেন নেই৷ পরিচিত, আপন মানুষগুলোও কেউ নেই পাশে এক নোরা ছাড়া৷ নোরা কি তার আপন মানুষ! এ ব্যাপারে বোধহয় ময়ূখ পুরোপুরি দ্বিধান্বিত। নোরাও বুঝতে পারলো ময়ূখের অবস্থা তবুও ক্লান্ত ময়ূখকে বলার মত কিছু খুঁজে পেলো না সে৷ আজ সে ক্লাসে যায়নি, প্রফেসরের সাথে দেখা করার কথা থাকলেও সেখানে যাওয়ার ইচ্ছে হচ্ছে না৷ নোরা তার বেডরুমটায় নিয়ে গেল ময়ূখকে৷ আজ থেকে সেটা ময়ূখেরও বেডরুম হলো৷ কিং সাইজ বেডরুম যার চারদিক সফেদ রঙের দেয়াল৷ বেডের মাথার দিকে বড় এক ফটো আছে নোরার। কোন এক পড়ন্ত বিকেলে পা মেলে বিচে বসা। ছবিতে গায়ের পোশাকটি নামমাত্র বলা যায়। ময়ূখের সেদিকে আর দৃষ্টি রইলো না বাকি তিন দেয়ালের একটি জুড়ে দেয়ালসম ক্লোথ কেবিনেট তা দেখেই বোঝা গেল। বাকি দু দেয়ালের একটি দরজা আর তার পাশেই ছোট্ট লাগোয়া বুক শেলফ যেখানে মাত্র তিনটি ছোট্ট খোপ। তাতে বইয়ের সংখ্যা হাতে গুণে পাঁচটি। অন্য দেয়ালটি সম্পূর্ণ ফাঁকা সে পাশে উইন্ডো আছে বলেই হয়ত। ময়ূখ চারপাশে নজর বুলিয়ে এবার বিছানায় বসে গায়ের কোটটা খুলে ফেলল। বাইরে ওয়েদার যতোটা শীতল ফ্ল্যাটের ভেতর ঠিক ততোটাই যেন উষ্ণ। নোরাও ঝটপট কিচেনে ঢুকে কফি মেকারে কফি করে নিয়ে এলো এক মগ৷ তার গায়েও একটু আগে ছিল ট্রেঞ্চ কোট এখন খেয়াল করলো ময়ূখ মেয়েটা কোট খোলার পর দেখা যাচ্ছে সাদা শার্ট ওপর থেকে কয়েকটা বোতাম খোলা। পুরুষ দৃষ্টিকে আকর্ষিত করতে এই এতটুকু বুক দেখানো পোশাক নিঃসন্দেহে যথেষ্ট বলা যায়। নোরার দৈহিক গঠন আর আধুনিক পোশাক সত্যিই নজর কাড়বে পুরুষদের ময়ূখেরও কাড়ল। সে চাইল সংযত থাকতে কিন্তু মেয়েটা কি তাকে থাকতে দেবে! নাহ, নোরা চাইছে অন্যকিছু তাই বুঝি কফি মগটা নিয়ে বসল ময়ূখেরই গা ঘেঁষে। নিজেই কফিটা মুখের কাছে ধরলো তার। স্ত্রীর আদুরে আচরণ কোন পুরুষেরই বোধহয় অগ্রাহ্য করার শক্তি থাকে না। প্রথম সিপেই ময়ূখ ক্লান্তিক-র সময়টাকে সতেজ অনুভব করল। পরের সিপ দেওয়ার আগেই সে নিজ নারীটির স্তনের স্প-র্শ টের পেল বাহুতে। ধীরে ধীরে ঠোঁটের স্পর্শও পেল ঘাড়, গলা বুকের মাঝে৷ এই স্পর্শের আধিক্য যত বাড়ছে ততোই ময়ূখ রক্তচ্ছ্বাস, উত্তেজনাও টের পাচ্ছে নিজের মাঝে। হুট করেই সে নোরাকে সরিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।

“আই নিড হট শাওয়ার” কথাটা বলেই ময়ূখ এদিক সেদিক তাকালো যেন খুব গুরুত্বপূর্ণ জিনিস খুঁজছে সে। নোরাও তৎক্ষনাৎ দাঁড়িয়ে গেল মুখোমুখি, “বাট আই ওয়ান্না কিস ইউ সো ব্যাড নাউ ।”

“লেট মি শাওয়ার ফার্স্ট দ্যান….”

ময়ূখ কথাটা শেষ করার আগেই নোরা দু হাতে জাপটে ধরে চুমু খেতে শুরু করল। সে চুমুতে উইয়ার্ড কোন ফিলিংস ছিল ময়ূখ উপেক্ষা করতে পারল না।

সূর্য ঢলেছে পশ্চিমে; কুয়াশারা দল বেঁধে দক্ষিণ থেকে উত্তরে, পশ্চিম থেকে পূর্বে ওড়ে ওড়ে এসে বসছে গাছের ডালে, পাতার ফাঁকে। পাহাড়ের চকচকে দিন অস্তমিত এখন রাতের চাদর নামবে বলে। ইরশাদ মৈত্রীর সারাটা দিন কে-টে গেল খাবার খেয়ে, ঘুমিয়ে আর বাড়িটির ফুলেল লনের পাশে মাদুর বিছিয়ে। দারোয়ানটা নাকি তাদের থাকার কয়েকটা দিন শুধু দিনেই থাকবে গেইটে রাতটা কাটাবে নিজের বাড়িতে এটাই ছিল রিশাদের আজ্ঞা। বাড়ি দূরে নয় দারোয়ান কিংবা পাহাড়ি ছেলে উকাচুংয়ের তাই সকল প্রয়োজনে গেইটে দাঁড়িয়ে হাঁক ছাড়লেই নাকি তারা চলে আসবে। মৈত্রী অবশ্য শুনে প্রথমেই আপত্তি করল এই নির্জন বাড়িতে তারা একা থাকবে বলে। ইরশাদ বোঝালো এখানে কোন সমস্যা নেই রিশাদ ভাই জেনেশুনেই তাদের এমন একলা ছাড়ল। হানিমুন যদি লোক সমাগমেই করবে তবে এই পাহাড়ে আসার কি দরকার ছিল! এ কথার প্রেক্ষিতে মৈত্রী আর কিছুই বলেনি৷ পাহাড়ে আঁধার যেন সমতলের আগেই নামল বলে মনে হলো মৈত্রীর৷ সে রাতের জন্য কি করবে জানতে চাইলে ইরশাদ বারণ করল, “কিছু করতে হবে না।”
“রাতে খাব না?”

“অবশ্যই খাব।”

“কি?”

“দুজন দুজনাকে ” কথাটা শেষ করেই হো হো করে হেসে উঠল ইরশাদ। মৈত্রী বিড়বিড় করল, “দিনকে দিন অসভ্য হয়ে উঠছেন আপনি।”

“রাতের জন্য খিচুড়ি করব আমি তোমাকে কিছু করতে হবে না।”

“কেন!” ভীষণ অবাক হলো মৈত্রী। ইরশাদ রান্না ঘরের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলল, “তুমি শুধু সেজেগুজে বসে থাকো আমার পাশে। মধুচন্দ্রিমা করতে এসে বউকে দিয়ে রান্না করানো ঠিক নয় এতে রোম্যান্সে বিঘ্ন ঘটতে পারে।”

“কিসব যাচ্ছেতাই কথা। আচ্ছা আমরা কাল ঘুরতে বেরবো না!”

“নিশ্চয়ই ম্যাম৷ ভোরেই উঠে দক্ষিণের পাহাড়ি পথে হাঁটতে হাঁটতে সূর্যদয় দেখব। রিশাদ ভাই বলল সে পাহাড়ে বুনো ফুলের সম্রাজ্য আছে৷ আর নাশতার পর আমরা ওপাশে ওই যে ছেলেটা এলো দুপুরে উকাচুং তাদের পাড়ায় ঘুরতে যাব। আপাতত প্ল্যান এইটুকুই বাকিটা কাল ঠিক করব।” কথা বলতে বলতে ইরশাদ রান্নাঘরের কেবিনেট খুঁজে খুঁজে হাঁড়িপাতিল, বোল নামালো। এ বাড়িতে বাজারসদাই বলতে কিছুই ছিল না কেউ থাকে না বলেই। আনতুংকে দিয়ে যে বাজার করিয়েছে সবটাই সামনে রাখা সেগুলো দেখে নিয়ে ইরশাদ প্রথমেই বোলে মুরগিটা রাখল৷ ভাগ্যিস এ বাড়িতে ইলেকট্রিসিটি, ফ্রিজ সবটাই আছে। মশলাপাতিও একে একে সবটা দেখে নিয়ে রান্নার কাজ শুরু করলো ইরশাদ৷ মৈত্রী বার দুয়েক চেষ্টা করল কাজে সাহায্য করতে কিন্তু তার পতি মহোদয় পাকা রাঁধুনির মত একা হাতে সবটা করতে করতেই পত্নীকে তাড়া দিলো সেজেগুজে তৈরি হতে৷ তবে এই তাড়ার মাঝেই সতর্কতা জারি করল, লিপস্টিক দেওয়া বারণ বলে৷ মৈত্রীর ভালোলাগায় মন ফুরফুরে হয়ে গেল। খুব ভাগ্য করে মানুষটাকে পেয়েছে সে৷ এ জীবনে সকল চাওয়া নিয়ে উপরওয়ালার ওপর সে যতবেশি অভিযোগ করেছে সবটা যেন এক বারেই পুষিয়ে দিল আল্লাহ্ তায়ালা। কোথাও কোন কমতি রাখেননি তার জীবনে। একটা চাওয়ার মাঝেই সকল পাওয়ার প্রাপ্তি দিলেন। মৈত্রীও চলে গেল ঘরে। লাগেজ খুলে বেছে বেছে সুতির মাঝে সুতার কাজ করা শাড়ি বের করে নিলো একটা৷ ইরশাদ বলেছিল পাহাড়ে যাব শাড়ি, কামিজ এগুলো লাগবে না। তবুও মৈত্রী জোর করেই দুটো শাড়ি নিয়েছিল৷ এখন মনে হচ্ছে শাড়ি আনাটাই তার করা চমৎকার কাজ ছিল। হিম হিম কুয়াশা ওড়ে ওড়ে জমাট বেঁধেছে যেন রিশাদেরই বাড়িটা জুড়ে। ইরশাদ আগুনের পাশে থেকেও টের পাচ্ছে শীতল হাওয়ায় কাঁপন লাগা৷ খিচুড়ি আর ঝাল করে রান্না মাংস দু চুলোয় দুটো বসিয়ে দিয়ে শশা, লেবু কেটে নিলো। কাজের ফাঁকেই একবার ঘরে ঢুকে দেখে এলো মৈত্রী কি করছে তারপর গিয়ে বাইরেটাও দেখলো। গেইটের তালাও ঠিকঠাক লাগানো কিনা দেখে এলো৷ রান্না প্রায় শেষ হয়ে এলেও যখন মৈত্রী এলো না বেরিয়ে তখন ইরশাদ ভাবলো শীতে হয়তো মেয়েটা কম্বল জড়িয়ে শুয়ে পড়েছে। পুরো রান্না শেষ করে সব গুছিয়ে সে মৈত্রীকে ডাকতে গেল৷

সাদার মাঝে খয়েরির মিশ্রণের শাড়ির ওপর টকটকে লাল শাল পেঁচিয়ে বিছানা ঝাড়ছে মৈত্রী৷

“বিছানা এখনই কেন গুছিয়ে নিচ্ছো?”

” কাজ কমিয়ে রাখছি যেন পরে আর করতে না হয়।”

“আচ্ছা! চলো রান্না শেষ।”

“কোথায় যাব?”

“ডাইনিং টেবিলে।”

“উহুম ওই খোলা ডাইনিংয়ে খাব না।”

ইরশাদ বাঁকা চোখে তাকালো৷ চোখ কাজল কালো, ঠোঁটেও গাঢ় লিপস্টিক। কত করে বলল লিপস্টিক লাগাবে না তবুও শুনলো না! চুলগুলো হাত খোঁপায় পড়ে আছে কাঁধের ওপর৷ অতি চেনা মৈত্রীর মুখশ্রীতে আজ কিছু একটা ভিন্ন চোখে পড়ছে কি! এক মুহূর্ত ভেবে কিছুই ভিন্ন খুঁজে পেল না তবুও মনে হল আজ কোথাও কিছু ভিন্নতা আছে।

“এখানে খাবে!” জানতে চাইলো নাকি শুধাল ঠিক নিজেই বুঝল না। মৈত্রীই এবার বলে দিল, “বাইরে বসব লনের ফাঁকা জায়গায়, আগুন জ্বালিয়ে, মাদুর বিছিয়ে খোলা আকাশের নিচে।”

“ওহহ ম্যাম আগে বলবেন তো!”

“এখন বললাম তো!”

“আচ্ছা জ্বী” কথাটা টেনে টেনে বলল ইরশাদ। তারপরই সে আবার গেল রান্নাঘরে সেখানে জমা করা লাকড়ি আছে, কেরোসিনের বোতলও ছিল হয়ত রিশাদরাও সেখানে শীতের আমেজ উপভোগের আয়োজন করত! ইরশাদ সত্যিই ব্যবস্থা করল আগুন জ্বালানোর, মাদুর বিছিয়ে খাবার সাজিয়ে মৈত্রীকে বসিয়ে নিজেও বসল। চমৎকার এই আয়োজনকে স্মৃতির পাতায় বেঁধে রাখতে ফোন বের করে কিছু ছবিও নিলো নিজেদের। মৈত্রীর কিছু একক ছবিও তুলে দিলো জোর করেই। এক পাশে আগুন অন্যপাশে তার সামনেই খাবার সাজিয়ে রাখা। ইরশাদ এ রাতের আয়োজনের একটা নাম দিল, উডফায়ার ডিনার। লোকে ক্যান্ডেল লাইট ডিনার করে সে তার স্মৃতিকে নিয়ে করছে কাঠের আগুনের আলোয় ডিনার। তবে শুধুই কাঠের আগুনে ডিনার করতে গিয়ে বুঝতে পারল জংলা পোকামাকড় সব তাদের খাবারের আশপাশে ওড়ে ওড়ে ঘুরছে৷ সাধের খাবার বেশিদূর খাওয়া হলো না এই খোলা আসমানকে সাক্ষী রেখে তাই দ্রুত হাতে কিছুটা খেয়েই সব গুছিয়ে নিয়ে রাখতে হলো ঘরে৷ তাড়াহুড়ায় সব নিয়ে ঘরে ঢুকতেই চোখাচোখি হলো দুজনে তাতেই মৈত্রী হেসে ফেলল। ইরশাদের লাগল খুব সে হাসি তাই শাস্তিস্বরূপ মৈত্রীকে নিয়ে আবারও বসল বাইরে। না এবার আর খাওয়াদাওয়া নয় পাশাপাশি বসে নির্জনতা ছাপিয়ে বন পাহাড়ের ঝিঁঝি আর বন্যপাখির ডানা ঝাপটানোর আওয়াজ শোনাই যেন উদ্দেশ্য ছিল। ইরশাদ বসেছিল পেছনে দু হাত রেখে মাটিতে ভর দিয়ে। তার সামনেই বসা মৈত্রী তারই বুকে পিঠ এলিয়ে। হিম বাতাসে বুনো ঘ্রাণ সাথে বুঝি মৈত্রীর চুলের শ্যাম্পুর সুবাস মিশে গেল৷ মিশ্র অথচ মিষ্টি সে সুবাস ইরশাদের বুকের ভেতর উষ্ণতা মিশিয়ে দিল তীব্র শীতের মাঝেই। মৈত্রীর গায়ের শাল সরে গেছে বাহু আর কোমর ছাড়িয়ে। শীতে গায়ে কাঁ-টা দিচ্ছে, থেকে থেকে কাঁপন তুলছে৷ ইরশাদ কি টের পেল সেই কাঁপুনি! পুরুষালি শ-ক্তপো-ক্ত একটা হাত আলগোছে উঠে এলো মৈত্রীর পেটের কাছে। খোলা অংশ আলতো ছুঁয়ে ছুঁয়ে আদর দিল। অন্যহাত ঘাড় টেনে নিয়ে এলো মুখের কাছে ঠোঁটের পাশে৷ “বলেছিলাম লিপস্টিক দিও না শুনলে নাতো এবার এগুলো আমি খেয়ে ফেলব” বলেই সে চুমু খেলো উগ্রভাবে। মুহূর্ত কয়েকের ব্যবধানে ঢেউ খেলল দেহ থেকে দেহে ঠোঁটের স্বাদে মত্ত হলো মানুষদুটো৷ কোন এক সময় তাদের আদিম নেশায় পেয়ে বসলো, সাঙ্গ হলো অগ্নিউৎসব। এরপর আর থাকা চলে না ঘরের বাইরে৷ ইরশাদও দু হাতে তুলে কোলে নিলো অর্ধাঙ্গিনীকে। ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করলো না, বাতি নেভানোর প্রয়োজনও বোধ করল সে! উহুম, নেশায় পাওয়া মানুষের হুঁশ থাকে না। তীব্র শীতের রাত, নির্জনতার আব্রু যখন পাহাড়ঘেরা তখন আর হুঁশ থাকার নয় কোন কপোত-কপোতীর। সময় তখন তাদের নিরাবরণের উন্মাদনায় মত্ত হয়ে পেরুতে থাকে আপনগতিতে।

চলবে

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here