#কি_ছিলে_আমার
-রূবাইবা মেহউইশ
পর্ব-২৭
ল্যাপটপে কিছু জরুরি ইমেইল চেক করতে বসে খুব অবাক হলেন আবরার খন্দকার। সিলেটে নিজেদেরই পৈতৃক সম্পত্তির পাশেই বড় এক চা বাগান। সেই বাগানের মালিক ঢাকার স্থানীয় বাসিন্দা এবং আবরারের খুব কাছের বন্ধু ফয়সালের। ইমেইলটা এসেছে ফয়সালের চা বাগানের ম্যানেজারের পক্ষ থেকেই তারমানে ফয়সাল অবগত বলেই এসেছে এটা। ইমেইলের মূল বার্তা, ইরশাদ শাহরিয়ার চাকরি জন্য ইন্টারভিউ দিয়েছে তাদের কোম্পানিতে এবং সে সিলেক্টেড। তার ভাগ্নে চাকরি করবে এটা কোন মজার ব্যাপার কিংবা ভুলভাল কোন ব্যাপারও নয় তবে বন্ধুর কাছ থেকে ইমেইলটা এসেছে খোঁ-চাস্বরূপ, টি-প্প-নীমূলক। এটাই খুব গায়ে লাগলো আবরারের। ফয়সালের খোঁচা এই তোর বোনকে নাকি খুব বড় জায়গায় বিয়ে দিয়েছিস তাহলে তোর ভাগ্নে চাকরি জন্য ঘুরছে কেন? আবার খোঁচা আরও একটা হতে পারে, তার নিজের একটা কোম্পানি, শো-রুম এবং নতুন করা গার্মেন্টস থাকতেও ভাগ্নে কেন চাকরি খুঁজছে! কিছু মানুষ নামে বন্ধু হলেও কাজেকর্মে সে শ-ত্রুকেও ছাড়িয়ে যায়। ফয়সাল ঠিক তেমনই বন্ধু সে বরাবরই শ-ত্রুতা করে এসেছে আবরারের সাথে। ইরিনের জন্য এ জীবনে কোনদিন বিয়ে থা করেনি আর আজ ইরিনের ছেলে তারই কাছে চাকরির জন্য গেছে মানে তার ভেতরকার শ-য়-তান চিত্ত এখানেই জেগে উঠেছে। আবরারের খুব ইচ্ছে করছিলো ফয়সালকে এই মুহুর্তে কল দিয়ে কিছু বি-শ্রী ভাষায় গালি দিতে কিন্তু কি লাভ! এখন বয়সটা তাদের অনেক বেড়ে গেছে, বোনের সংসারে পুত্রবধূ এসেছে এ বয়সে ফয়সালের মত পঁচা গলাকে ঘাটিয়ে দূ-র্গ-ন্ধ বের করার মানেই হয় না। নিজেকে ক-ড়া-ভাবে সা-ব-ধান করে বন্ধুর নম্বরটাতে কল বসালো। ওপাশে রিসিভ হলেও ফোনটা তুলল ফয়সালের ম্যানেজার। ফয়সালকে ফোন দিতে বলে আবরার মনে মনে কিছু বাক্য গুছিয়ে নিলো।
“হ্যালো, ফয়সাল খান বলছি।”
“আমি আবরার।”
“ওরে বন্ধু আজ কত দিন পর কল দিলি! এতদিনে মনে পড়লো আমাকে।”
‘সব নাটক’ মনে মনে উচ্চারণ করলো আবরার।
“মনে তো পড়ে কিন্তু জীবনের ব্যস্ততাই এমন অবস্থানে এনেছে যে, কারো সাথেই দু দন্ড কা-টা-নো-র সময় মিলছে না।”
“হু কত বড় বিজনেসম্যান হয়ে গেছিস, বউ, বাচ্চা সংসার সময় কি করে পাবি। তারওপর তোর ছেলেটাও তো ইরিনের কাছে। গতবছর তো ময়ূখদের ভার্সিটিতে এক অনুষ্ঠানে ছিলাম আমি দেখলাম তোর ছেলেটা গিটার বাজিয়ে গানবাজনা করছে। কি লাভ বন্ধু এতবড় ব্যবসা গড়ে ছেলেকে গায়ক বানাচ্ছিস। তারওপর যে জন্য তোকে আমার ম্যানেজার ইমেইল করলো তোর ভাগ্নের কথা জানিয়ে। বুঝলি আবরার আমার তো সম্পদের বড় পাহাড় হয়েছে সব ভাই-ভাতিজারাই খাবে তাই তুই বললে আমার চা- কারখানাটা ইরিনের ছেলেকে দিতে পারি কি বলিস?”
‘আসল রূপে চলে আসছিস শালা জা-নো-য়ারের বাচ্চা। এক কথা থেকে দশ কথা ঘেটে তবেই না তোর সুখ হয়’ মনে মনে এটা বললেও রাগ লুকিয়ে মুখে বলল, “কি বলছিস ফয়সাল। ইরশাদ কি টাকার অভাবে চাকরি খুঁজছে নাকি! সে স্বভাবে একটু সাধারণ তার বাবার মত। কোটি কোটি টাকা পয়সা পে-রে-শানি নিয়ে জীবনযাপন তার পছন্দ না। তাইতো ফখরুল নিজেও পৈতৃক ব্যবসা-বানিজ্য ছেড়ে চাকরি করলো এখন ছেলেটাও তেমন চায়। এইতো সপ্তাহে বিয়ে করালাম ভাগ্নেকে এবার চমৎকার সংসার করবে। ও আমাদের মত টাকা পয়সার খেলা পছন্দ করে না আর ইরিনও এসব চায় না।”
“বিয়ে করে ফেলেছে! ওহ কি বললি রে বন্ধু আর আমি তো ছেলের ছবি দেখে ভাবছিলাম আমার ভাতিজীর বিয়ের প্রস্তাব রাখব। কি সুন্দর হয়েছে ইরিনের ছেলেটা চোখে, মুখে একদম তারই ছাপ।”
এবার ভীষণ ক্ষেপছে আবরার। এই হারামিটা এত বছরেও তার বোনের নামধাম জড়িয়ে কথা বলে। দাঁতে দাঁত চেপে আবরার বলল, ” ইরশাদকে কি সিলেকশন লেটার দিয়ে ফেলেছিস? না দিয়ে থাকলে দেওয়ার দরকার নেই। ও চা বাগানে কি চাকরি করবে? আমি কথা বলে তাকে আমার ব্যবসা দেখতে বলবো। তুই অন্য কাউকে হ্যান্ডওভার করে দে৷”
ফয়সাল এ কথার জবাবে কোন উত্তর না দিয়ে বলল, “ফোন রাখছি দোস্ত একজন গেস্ট এসেছে পরে কথা বলছি।”
আবরার খন্দকার বুঝতে পেরেছেন বন্ধুর মিথ্যেটা৷ কিন্তু বুঝে পেলেন না ফয়সাল কি করে ইরশাদকে চিনলো সে ইরিনের ছেলে! নিজেই ইন্টারভিউ নেয় নাকি অফিসে বসে! আর ইরশাদ কিসের চাকরি করবে চায়ের কারখানায়!
ময়ূখের পাসপোর্ট রিনিউ না করে কোথাও যেতে পারবে না। তার ইন্ডিয়া ট্যুর ক্যা-ন্সে-ল হয়ে গেছে সেই সাথে তার জীবনের বড় ভুলটাও সে করে ফেলেছে ঝোঁকের ব-শে। বাড়িতে কাউকে কিছু না বলে নোরাকে বিয়ে করে ফেলেছে। সে কথা বাড়িতে জানাজানি হওয়ার পর আর ময়ূখ চোখ তুলে কারো দিকে তাকাতে পারছে না। কাল যখন নোরার সাথে কথা-কা-টা-কা-টি হলো মৈত্রীকে নিয়ে তখন কি এমন হলো এখনও ময়ূখ বুঝতে পারছে না শুধু বুঝতে পারছে নোরার সাথে কথা বলতে বলতেই এক পর্যায়ে কেমন ঘোরে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল। শুধু মনে হচ্ছিল নোরা তার গাইড নোরা যা বলছে তাই যেন করা দরকার। তার কথা শুনলেই এ মুহূর্তে সকল দুঃখ ক-ষ্ট কর্পূরের মত মিলিয়ে যাবে। নোরা যখন বলল, “আমাকে বিয়ে করবে? আমি তো তোমাকে ভালোবাসি ময়ূখ। আমার ভালোবাসাকে একটু মূল্যায়ন করতে পারো না!”
কি এক আকুলতা তার মনে গেঁথে গেল সে মুহূর্তে। সে সত্যিই নোরার কথা মানলো। মাত্র ঘন্টা দুয়ের মাঝেই তারা কাজী অফিসে বিয়ে করে বাড়ি এলো। আবরার খন্দকারকে ফোন করে সে কথা বলতেই তিনি উ-ত্তে-জি-ত হয়ে পড়লেন। যেখানে নোরার মাকে কোনদিন বাড়ির বউ হিসেবে মেনে নেননি সেখানে নোরাকে ছেলের জীবনে মানার প্রশ্নই আসে না। যতই হোক সে তার ভাইয়ের মেয়ে কিন্তু এই মেয়ের মাঝে অন্য ধর্মেরও রক্ত বইছে। তাঁর ধারণা এই মেয়ের মা যেমন কখনো তার ভাইয়ের হয়ে থাকতে পারেনি এই মেয়েও তা পারবে না। তারওপর ইরিনকে যখন জানানো হলো ঘটনা তিনি একদম ভে-ঙে পড়লেন। বিগত দিনে তিনি টের পাচ্ছিলেন ময়ূখের কিছু একটা হয়েছে কিন্তু সেই কিছু নোরা সম্পর্কিত একদমই নয়। তাই নোরাকে ময়ূখের বিয়ে করা তাও কিনা কাউকে না জানিয়ে! এ যেন চোখের পলকে দূ-র্ঘট-না ঘটে গেল। নিজ বাড়িতে যখন ছেলে আর বউ নিয়ে তার আনন্দ করার কথা তখন সে ময়ূখের শোকে ঘরে দোর বন্ধ করে বিছানায় পড়ে আছে৷ মানসিক আ-ঘা-ত বুঝি ময়ূখের করা অন্যায়ে পেলেন তিনি৷ অন্যায়ই বটে! যাকে বুক দিয়ে আগলে বড় করলো সে এমন হঠাৎ কোন কারণ ছাড়াই হঠকারী কাজ করলে আ-ঘা-ত তো লাগবেই৷ কষ্ট তো ফখরুল সাহেবও পেয়েছেন। আবরার জন্মদাতা হলেও ফখরুল ছিলো ময়ূখের আরেক পিতা। সকল আনন্দে ভাটা পড়ে গেছে যখন থেকে জানলো সবই নোরা আর ময়ূখের কীর্তি। শান্ত, গ-ম্ভী-র ইরশাদ হঠাৎই ভীষণ অশান্ত হয়ে গেছে। কাল মৈত্রীদের বাড়ি থেকে ফেরার পর শারীরিক অবস্থা কিছুটা ভালো বোধ করলেও রাতটা তার মানসিক অ-সুস্থ-তায় কে-টে-ছে মৈত্রীর প্রশ্নে। সায়রা-ইমরানও গিয়েছিলো তাদের আনতে আর সেখানেই মৈত্রী খেয়াল করেছিলো সায়রা কোন কথা বলেনি ইরশাদের সাথে৷ এমনিতেও বিয়ের রাতে সব জা, দেবর, ভাসুর, চাচা শ্বশুর, চাচী শ্বাশুড়ি সবাই যখন তাদের ফ্ল্যাটে থাকছে, রাতে খাচ্ছে সেখানে শুধুমাত্র সায়রা নামের মানুষটিই অনুপস্থিত ছিল। মৈত্রীদের বাড়িতে সবাই যখন ইরশাদের পেট খারাপ নিয়ে রসিকতা করছিলো তখন সায়রা চুপচাপ বসেছিলো এক কোণে ইমরানের পাশে। যখন ভাইরা সবাই একটু বাইরে ঘোরাঘুরি করছিলো মূলত বড় ভাইয়া, ইমরান ভাইয়া সিগারেট খেতে, অন্তু তার স্ত্রীর জন্য চকলেট আনবে বলেই বেরিয়েছিল ইরশাদের সাথে তখন ভাবীরা বসে মৈত্রীর সাথে গল্প করছিলো। কথাবার্তা চলাকালীন মৈত্রী যখন বলল, ইরশাদের জন্য আলু ভর্তা, পেপে ভর্তা ভেবেছিলো বাদাম ভর্তাও করবে সেটাই যখন বলল তখন মুখ ফসকে সায়রা বলে ফেলল, “বাদামে এলার্জি আছে ইরশাদের।”
মৈত্রী অবাক তাকিয়েছিল সায়রার দিকে, তাকিয়েছিল জুয়েনাও। সায়রা যখন নিজের ভুলটা বুঝতে পারলো তখন জুয়েনা ব্যপারটাকে সামলাতে বলল, ” ইরশাদের তো প্রচুর এলার্জি বাদামে। চাচী আম্মা তো তার জন্যই কখনো বাদামভর্তা খায় না ”
“ওহ!” ভাবীরা দেবর সম্পর্কে অনেক কিছুই জানে এটা বোধহয় স্বাভাবিক ব্যাপার। মৈত্রী তখন এ নিয়ে কিছু না বললেও মনে মনে কৌতূহলবোধ করলো পুরোটা সময়। এমনকি তার অবচেতন মন তারপর থেকেই লক্ষ্য করলো সায়রাকে পুরোটা সময়। তাদের বাড়ি থেকে ফেরার আগ পর্যন্ত দেখেছে সে সায়রা কেমন দৃষ্টি লুকিয়ে পুরো সময় ইমরানের সাথে সাথেই ছিল আর তাই সে রাতে ফিরে কথার ছলে ইরশাদকে সায়রার কথা জিজ্ঞেস করেছিলো। ইরশাদ কথাটা এড়িয়ে গেলেও মনে মনে অ-স্ব-স্তি-বোধ করলো। তার পরিণত বুদ্ধিমত্তা জানে মৈত্রীর মনে যে প্রশ্ন তা সে আজ না করলেও কোন একদিন করতোই। একই বাড়ির সদস্য হয়ে অতীতকে পা-থ-র-চা-পা রাখা অসম্ভব। কিন্তু হুট করে অতীত সামনে এলে যেকোন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষই ভড়কাবে, শক্ত মনের মানুষ না হলে শুরুতেই ভে-ঙে পড়বে৷ ইরশাদ শুধু ওপরওয়ালার কাছে একটু সময় চায়। সম্পর্ক সে সততার সাথে পালন করবে তার জন্য একটু সময় অবশ্যই দরকার। বিয়ের তৃতীয় রাতটা কা-ট-লো সবচেয়ে অস্বস্তিপূর্ণ। সকালেই ইরশাদ মাকে বলল ঢাকায় যাবে৷ ইরিন নির্বিকার তার কোন জবাব ছিলো না এ কথার প্রেক্ষিতে। ফখরুল সাহেব বাঁধ সাধলেন, কোন দরকার নেই। কি করবে গিয়ে তোমার কি সেখানে? ওর বিয়ের বয়স হয়েছে, “ইচ্ছে হয়েছে বিয়ে করেছে এ নিয়ে তোমাদের বলার কিছু থাকতে পারে না।”
সকল প্রকার বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ, আত্মীয়-স্বজন সকলেই চলে গেছে যার যার মত। মৈত্রী তার স্বভাবসুলভ আচরণ থেকে কিছুটা বেরিয়ে এসেছে তিন দিনেই। সংসার মানেই খুব বড় একটা ‘দ্বায়িত্ব’ এমনটা বলেছিলো তার নানী। আজ মনে হলো দ্বায়িত্ব তার ওপর ন্যস্ত হয়েছে অলৌকিক ভাবে। সে সকালেই নিজে থেকে নাশতা তৈরি করেছে সবার জন্য তারপর শ্বশুরকে নাশতা খাইয়ে শ্বাশুড়ির জন্য নিয়ে গেল রুমেই। মৈত্রী রুটি বানাতে পারে না তাতে সহযোগিতা করেছে ইরশাদ নিজেই৷ মৈত্রী অনেক জোর করেও যখন শ্বাশুড়িকে কিছু খাওয়াতে পারলো না তখন সে মুখ খুলল, “আন্টি, ময়ূখ ভাইয়ার সাথে একটু কথা বলুন। আপনি এভাবে চুপ করে থাকলে সবাই চিন্তিত হচ্ছে।” ইরিন শুনলো কিছু বললো না। মৈত্রী কথা বলে খুব কম, মেপে মেপে কিন্তু আজ তার খা-রা-প লাগছে তাই চেষ্টা করলো আরও কিছু বলতে। কিন্তু তার চেষ্টা সফল হয়নি। ইরশাদ দূর থেকে দেখলো মৈত্রীর চেষ্টা মনে মনে খুশি হলো। কিন্তু বাবার নারাজ মুখ দেখে সে এবার জোর করেই বলল, ঢাকা সে যাবেই এবং আজই। ইরিন সেটা শুনলেন আর মুখ খুললেন, “মৈত্রীকেও নিয়ে যা সাথে দু তিন থেকে ঘুরে বেরিয়ে আসিস।”
বাড়ির পরিস্থিতি ভেবে মৈত্রী রাজী হচ্ছিলো না। ইরিনের পাশে তার থাকা জরুরি বলেই মনে হলো। ইরিন শুনলো না তাই মৈত্রীও বসলো যাওয়ার জন্য গোছগাছ নিয়ে। মৈত্রী লাগেজে কাপড় গোছাচ্ছিলো তখন ইরশাদ ল্যাপটপ খুলে বসলো। জবের জন্য সে রাজশাহীতেও একটা অফার পেয়েছিল সেটাই চেক করার উদ্দেশ্য ছিল। তখনই চোখে পড়লো, কংগ্রাচুলেশনস মেইল। তারপরই একটা অনলাইন এপয়েন্ট লেটার। রিসেন্ট ডেট দেখেই তার মাথা ন-ষ্ট হলো। বাড়ির পরিস্থিতি যা তাতে এখন এ কথা কি করে জানাবে সে! সিলেটে গিয়ে চাকরি করা তারমানে এখন বউ নিতে হবে সঙ্গে। সেখানে থাকার ব্যবস্থা করতে হবে আম্মু- আব্বু এখানে থাকতে চাইলে তখনইবা কি করবে! আব্বুর রিটায়ারমেন্টে এখনও বছরখানেক সময় বাকি! ইরশাদের একদম মাথায় হাত। এসব কি হচ্ছে তার সাথে একসাথে এতদিকের ভালো-মন্দ!
রাতে রওনা হওয়ার আগে ইরশাদ মৈত্রীকে জিজ্ঞেস করলো, “কিসে যেতে চাও বাসে যাবে না ট্রেনে?”
” যদি বলি প্লেনে?”
“তবে তাই হবে বেগম সাহেবা।” বিড়াল দুটো চোখের পাতা ফেলে জবাব দিলো ইরশাদ। মৈত্রীর ভালো লাগলো সেই সেকেন্ডের পলক ফেলা দৃশ্যটা। কারো পলক ফেলার দৃশ্যও কি মনে লাগতে পারে এমন করে! মৈত্রীর কেমন লজ্জা লজ্জা লাগছে নিজের এমন ভাবনাতে। ইরশাদ সেদিকে লক্ষ্য করেনি সে আবারও বলল, “তবে এ রাতে সম্ভব নয় কাল করতে হবে ব্যবস্থা।”
“মজা করেছি। বাসে যেতে চাই।”
“উহুম প্লেনেই নেবো ভাবছি।”
“আমি বাসেই যাবো।”
“কেন?”
“বাসে একসাথে দুটো সিটে দুজন পাশাপাশি…. ” উচ্চারণ করলেও শব্দের উচ্চতা ক্ষীণ হওয়ায় ইরশাদ শুনতে পায়নি কথাটা। কিন্তু যাওয়ার সময় বাসে চড়েই সে বলে বসলো, “দুজন পাশাপাশি বসে যাওয়ার জন্য একমাত্র বাসই পারফেক্ট, কি বলো!”
লং জার্নি, পাশাপাশি দুজন, বাতাসে শীত আর গায়ে কাঁপন৷ রুক্ষ মনের ভেতরও কোমল আবেগ আপনাতেই জড়িয়ে নেয় দুজনকে। মৈত্রী বসেছে জানালার পাশের সিটে। শীতের তীব্রতা টের পেয়েও জানালার কাঁচ আধখোলা। ইরশাদের গায়ে মোটা জ্যাকেট, মৈত্রীর গায়ে শাল। বাসের বাতি নেভানো থাকায় কেউ কারো মুখটি দেখার জো নেই৷ ইরশাদ আচমকা তার জ্যাকেট খুলে কোলের ওপর রেখে দিলো৷ ফিসফিসিয়ে মৈত্রীর কানে বলল, “শীত লাগছে খুব একটু জড়িয়ে ধরবে?”
চলবে
(আপনাদের মন্তব্যে আমি হয়ত আমার গল্পের থিম বদলাবো না তবে আমি লেখার কিছু কমতি, ভুল সম্পর্কে জানতে পারছি এবং তা শুধরানোর সুযোগ পাচ্ছি। তাই প্লিজ আপনারা মন্তব্যে এক্টিভ থাকার চেষ্টা করবেন)