#একই_সুতোয়_বাঁধা
পর্ব-১৩
সপ্ত শীখা
— সিট ডাউন ! সাইকা, মামনি তুমি বাসায় ফিরে যাও কেমন ? আমার সায়নের সাথে কিছু পারসোনাল কথা আছে।
— বাপি… আমি ভাবছিলাম একটু বসুন্ধরা সিটি যাব শপিং এ…
— অফকোর্স যাবে ! যা খুশি কিনে নিও। ক্রেডিট কার্ড টা রাখো আমার… দরকার হয় যদি !
— থ্যাঙ্কস বাপি। টাটা জানু ! হ্যাভ আ গুড টাইম !
সায়ন চরম ক্ষেপে আছে। বিড়বিড় করল…
— ছাতার গুড টাইম ! তোর বাপের সাথে কিসের গুড টাইম আমার ! শালা চামার !
— সো… মিস্টার সায়ন ! কাজের কথায় আসার আগে কি খাবে বলো। চা কফি অর কোল্ডড্রিঙ্ক ?
— নো থ্যাঙ্ক ইউ স্যার !
— আমি জানি তুমি কোল্ড কফি ভালবাসো। আনাচ্ছি।
সায়ন আবারো রেগে উঠল।
— আমি কি খাব তাও তুই চয়েজ করে দিবিরে শালার বুইড়া ? আমার মা আজ পর্যন্ত আমার না বলার পরে খাবার দেয়নাই !
— সায়ন হিয়ার ইট ইস !
— থ্যাঙ্কস।
— আচ্ছা বলো… তোমরা এঙ্গেজমেন্ট টা কবে করছ ? ডেট কবে ফেলব বলো !
সায়ন কফিতে চুমুক দিয়েছিল কেবল, এক বিষম খেয়ে ওর নাকমুখ দিয়ে কফি বেরিয়ে এল। কাশতে কাশতে অস্থির।
— কিসের এঙ্গেজমেন্ট ?
— ওহ কাম অন ! তোমরা একে অপরকে লাইক করো… একসাথে স্বামী স্ত্রীর মতই তো-
— হোল্ড অন ! আমি মোটেও সাইকার সাথে কখনই স্বামী স্ত্রীর মত ছিলাম না !
— আহা আমি কি মিন করছি তাই ? যেহেতু তোমরা রিলেশনে আছ সেহেতু সেটাকে তো এগুতে হবেই ! এঙ্গেজমেন্ট টা করিয়ে দেই তোমাদের…
— আর ইউ ম্যা-
— হোল্ড ইওর টাং সায়ন।
— আরে যা খুশি বল্লেই চলবে নাকি ! আশ্চর্য তো ! আমার বয়েস কেবল বাইশ… আমি কেবল অনার্স ফাইনাল দিচ্ছি ! পুরো লাইফটা পড়ে আছে আমার সামনে ! এখন কেন আমি বিয়ে করতে যাব ?
— সায়ন জাস্ট এঙ্গেজমেনটের কথা বলছি আমি ! বিয়ে যত পরেই করো সমস্যা নেই। এঙ্গেজমেন্ট টা করিয়ে রাখতে চাই। তোমার বাবা মা কেও খবর দিতে হবে।
— না।
— কি না ?
— আমি এঙ্গেজমেন্ট ফেণ্ট করব না। আপনি কেন বুঝছেন না… সাইকার সাথে আমার বনে না ! আমরা ইন আ রিলেশনশিপ ছিলাম ঠিক আছে… কিন্তু রিলেশন কি ব্রেক আপ হয়না ? আমি আর পারছি না এই জোর জবরদস্তির সম্পর্ক টা বইতে ! আপনার আজেবাজে হুমকি ধমকির জন্য এতদিন চুপ ছিলাম কিন্তু আর নয়। আপনি বলেছিলেন আমার বাবা মায়ের উপর হামলা করবেন আর আমিও বোকার মত মেনে নিয়ে চুপ করে ছিলাম… শেম অন মি ! আমি পারছিনা আর সাইকার সাথে এই ভালবাসাহীন সম্পর্ক চালিয়ে যেতে। প্লিজ আমাকে মুক্তি দিন।প্লিজ !
— বাপি ! ছি ছি ছি !
সাইকা ঝড়ের বেগে ঘরে ঢুকে পড়েছে। ওর চোখ ভরা জল টলমল করছে। সায়নের দিকে হাত বাড়িয়ে থেমে যাবার ইঙ্গিত করে সাইকা তার বাবার দিকে তাকাল। অত প্রতাপশালী লোকটার মুখে অপরাধের ছাপ ! কি অদ্ভুত !
— বাপি তুমি সায়ন কে থ্রেট দিয়ে আমার সাথে রেখেছ ! আর আমি এতদিন ভাবছি আমার প্রতি ওর ফিলিংস ফিরে এসেছে ! বাপি… ওকে যদি আমি বিয়েও করি ওর কি আমার প্রতি সেই ফিলিং টা আসবে ? উল্টা সারাজীবন আমাকে ঘেন্না করে যাবে ও। সেটা নিয়ে আমি বাঁচতে পারব না বাপি !
সায়ন… আই এম সরি। বাপির পক্ষ হয়েও সরি বলছি। বাপি আমাকে অনেক বেশিই আদর করে তো তাই আমি কারুর জন্য সুইসাইড করতে গেছি এটা সহ্য করতে পারেনি। আমি আর এসব করব না। তুমি… ইউ আর ফ্রি ! আমি আর আসব না এর মাঝে আর বাপিও আসবে না। আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি। সায়ন… যাও এখন !
সায়ন হতভম্বের মত বেরিয়ে এল। সাইকা ওর বাপির বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে কেদেঁ ভাসাতে লেগেছে ততক্ষনে।
— বাপি… তুমি ভেব না আমি ভাল থাকব ওকে ছাড়া ! একটা ফিলিংলেস রিলেশনের চেয়ে একা থাকা অনেক ভাল…
— আচ্ছা মামনি। তোমার জন্য এরচে কত ভাল ছেলে এনে দেয় তোমার বাপি খালি দেখো। আহহ মা… কাদেঁনা!
💛💛💛💛💛
সায়ন আজ ও উদ্ভ্রান্তের মত রাস্তায় হেঁটে বেড়াচ্ছে। ও ভেবেই পাচ্ছেনা যে ও মুক্তি পেয়ে গেছে ! সাইকা যে এতখানি বুঝদার মেয়ে তাই ও ভাবতে পারেনি কখনো। সব মেয়েরই অন্তত এটুকু বুঝ থাকে হয়তো যে ঘৃণার মধ্যে জীবন কাটানর চেয়ে একা থাকাটা ভাল। সাইকা হয়ত সেজন্যেই…
টং এ চা খাচ্ছে সায়ন। বিকেল হয়েছে। পিছনের মাঠে ছেলেরা ক্রিকেট খেলছে। দেখতে ভাল লাগছে। আসলে যা দেখছে তাই ভাল লাগছে আজ। কিছুক্ষন খেলে আসলে কেমন হয় ? সাত-পাঁচ না ভেবেই ছেলেগুলোর কাছে খেলার অনুমতি চেয়ে বসল সায়ন। এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত খেলে সব ছেলেদের টং এর চা ট্রিট দিয়ে সাড়ে আটটায় মেসে ফিরল।
গোসল করে এসে বিছানায় চিত হতেই মাথায় একটা চিন্তা খেলে গেল ওর। পুষ্প ! লাকি চার্ম !
সায়ন ছোটবেলা থেকেই পুষ্পকে লাকি চার্ম বা ও ধরনেরই কিছু একটা ভেবে এসেছে। সায়নের যেকোন পরীক্ষায় বা প্রতিযোগিতায় পুষ্প ছিল অপরিহার্য। আজ সেই কত দূর থেকেও পুষ্পিটা আগের মত কাজ করে ফেলল ! এতদিন ধরে যে সমস্যাটা নিয়ে যুদ্ধ করছে , কাল পুষ্পকে সব বলে পাঠাল আর আজই সমস্যা গায়েব। মনে মনে পুষ্পকে হাজার কোটি থ্যাঙ্কস দিলো সায়ন। এমন ফ্রেন্ড যেন সবার হয় !
আস্তে আস্তে সময় পেরোলো। সকলের ব্যস্ততা বাড়ল… সায়ন ও পুষ্পকে নিয়ে সারাদিন ভাবাটা কমিয়ে দিয়েছে। ওর অনার্স ফাইনাল পাস হয়ে গেছে ফার্স্ট ডিভিশনে। এখন মাস্টার্সের ক্লাস শুরু হয়েছে আর সেই সাথে যেকোন প্রকার একটা চাকরির খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরছে ও।
আর পুষ্পের ও ইন্টারমিডিয়েট শেষ। রাজশাহী ইউনিভার্সিটি তে চান্স পেয়ে সেখানেই পড়তে চলে গেছে ও আর নীরা। আগের মতই ভাল ফলাফল করছে সে।
কিন্তু মনের ভেতর যে গভীর ভালবাসা সায়নের জন্য লালন করে চলেছে পুষ্প… তা দিন দিন যেন বেড়েই যাচ্ছে ! আর সেইসাথে বাড়ছে সায়নের প্রতি অভিমান। কেন আর যোগাযোগ করল না ও ! ফোন নম্বরটাই নাহয় দিয়ে দিত চিঠির সাথে ! আজীবন পুষ্পকে মানসিক যন্ত্রণাই দিয়ে গেল এই ছেলেটা !
আর তিল তিল করে দিন গুনছেন সায়ন আর পুষ্পর বাবা মা। ছেলে মেয়েদের সত্যিটা জানাবার সময় এসে গেছে প্রায়। সায়ন যখন বিয়ের জন্যে রাজি হবে তখনই সব জানাবেন তারা। আর কটি বছরের অপেক্ষা !!
[