#প্রিয়তার_প্রণয়সন্ধ্যা
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_০৩
” মা প্রিয়তাকে বাসায় পাঠিয়ে দাও।”
ইয়াশ আর মিসেস বেলা কথা বলছিলেন, ইয়াশের এমন কথা শুনে বাহিরে দাঁড়িয়ে যায় প্রিয়তা। সে সকাল সকাল তার ফুপিকে এই কথাটা বলতেই যাচ্ছিলো যে সে আজকেই বাড়ি ফিরে যাবে আর বলতে এসে শুনলো ইয়াশ নিজেই তার মাকে এই কথাটা বলছে। প্রিয়তা বাহিরে দাঁড়িয়ে যায়।
” কেন কি হয়েছে? মেয়েটা এসেছে কয়েকদিন থাকবে বলে।”( মিসেস বেলা)
” ও এখন বড় হয়ে গেছে এভাবে অন্য বাড়িতে থাকা কেমন দেখায় না? ”
” নিজের ফুফুর বাড়িতে আছে, অন্য কোন বাড়ি না তো।”
” মা বাসায় বাহিরের কেউ থাকলে আমি স্বাভাবিকভাবে থাকতে পারি না বাসায়। যতক্ষণ বাসায় থাকবো একটু ভালোভাবে না থাকতে পারলে কেমন লাগে বলো?”
” তোর রুম তো একপাশে ওদিকে কেউ যায় না তোকে বিরক্ত ও করে না তাহলে?”
” কিছু না, থাক বাদ দাও।”
” হুম শোন তোর মামা রাতে তোর বাবাকে কল দিয়েছিল।”
বাবা কল দিয়েছিল শুনে আরেকটু ভালো করে শুনতে চায় প্রিয়তা। কি বলেছে তার বাবা! সত্যিই কি বিয়ের তারিখ ঠিক হয়ে গেল!
ভালোবাসা প্রকাশের সুযোগটাই হলো না তার। প্রিয়তা মন শক্ত করে নেয় ইয়াশকে গন্তব্য ভাবা বন্ধ করে দিতে হবে, আর না। ইয়াশকে নিয়ে ভাবা অন্যায়, ঘোর অন্যায়। নিজেকে নিজেই বোঝাতে চেষ্টা করে, ” নাহ প্রিয় একদম না, এই লোকটাকে নিয়ে আর একটুও ভাবা উচিত হবে না এই লোকটা তোর বোনের হবু বর। তাকে নিয়ে ভাবা অপ*রা*ধ। এই অপ*রা*ধের শা*স্তি পরিবারের কাছে ছোট হওয়া, নিজের কাছে অপরা*ধী হওয়া। তুই নিজেকে এত নিচে নামাতে পারিস না প্রিয়। ভালোবাসার মানুষকে সবসময় পেতে হবে এমন তো না, পাওয়াতেই সবসময় ভালোবাসা বেঁচে থাকে না।”
মায়ের কথা শুনে উৎস্যুক চোখে তাকায় ইয়াশ। কি কথা হয়েছে জানতে চায় ইয়াশ।
” হুম, কি বলেছে?”
” এই সপ্তাহের মধ্যেই যদি বিয়ের কাজ সেরে ফেলি তাহলে কি তোর অসুবিধে হবে? না মানে দুই থেকে তিনদিন বাড়িতে সময় দিতে হবে অনেক কাজ। এই সপ্তাহ বাড়িতে সময় দিতে পারবি?”
এই সপ্তাহেই বিয়ের কথা শুনে একটু অবাক হয় ইয়াশ। সে ভেবে রেখেছিল সপ্তাহের শেষের দিকে তার কাছের কিছু ছেলেদের নিয়ে বাইক রাইডে বের হবে। সে ভেবেছিল এই সপ্তাহটা নিজের জন্য রাখবে, তারপরই তো বড় একটা দায়িত্বে দিকে পা বাড়াতে চলেছে সে কিন্তু নিজের জন্য রাখা এক সপ্তাহ এভাবে কাজে লাগবে ভেবে অবাক হচ্ছে আর তাছাড়া ঈশিতার সাথে কথা বলাও জরুরি, ফোনে কথা বলাটা দৃষ্টিকটু দেখায়। সব বিষয় নিয়ে ফোনালাপ ও মানায় না।
” এত তাড়াহুড়ো কেন মা আমি কি পালিয়ে যাচ্ছি নাকি?”
” কে বলতে পারে তোর বিয়েতে রাজি হওয়ার মনোভাব কয়েকদিন পর পাল্টে যাবে না?”
” যেভাবে বিয়ে দিতে চাচ্ছো এমনিতেও মনে হচ্ছে ধরে বেধে জে*লখা*নায় পাঠাচ্ছো।”
” কি জিজ্ঞেস করেছিলাম তার উত্তর দে, কথা বাড়াস না।”
” আমি ভেবেছিলাম এই সপ্তাহ নিজের জন্য রাখব, দলের ছেলেগুলোকে নিয়ে একটু ঘুরব। তারা অনেকদিন ধরে ব্যস্ত সময় পার করছে। কাজে কাজে জীবনটা তলিয়ে যাচ্ছে তাই ভাবলাম তাদের একটু বিনোদনের প্রয়োজন আছে আর তাছাড়া আর কিছুদিন পর থেকে তো নতুন কিছু শুরু হবে ইনশাআল্লাহ তখন তো জীবন একদম পাল্টে যাবে। আর তুমি তো জানোই মা আমার জীবনে দায়িত্ব কখনো কমবে না দিনের দায়িত্ব আরো বাড়ছে আমি চাই এই দায়িত্ব আরো বাড়ুক। আমি যেটা স্বপ্ন দেখছি সেই স্বপ্নটা যদি পূরণ হয়ে যায় তাহলে দেখো আমি চেষ্টা পরিবর্তন করে দেব। কেউ কখনো ভাবেও নি এই দেশটা এমন হতে পারে আমি ঠিক সেরকম করে দেবো। আর নিজেকে শুধরে নেওয়া ও অনেকটা বাকি। ”
” বাহিরে যাওয়া বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাওয়া দলের ছেলেদের নিয়ে ঘুরতে যাওয়া এটার জন্য তুই অনেক সময় পাবি বাবা, নিজের বয়সের দিকে একটু খেয়াল রাখ। ”
” জীবনের মুখ্য উদ্দেশ্য তো বিয়ে নয়। ”
” তুই এই কথা কীভাবে বলতে পারলি, বিয়ে করা জীবনের উদ্দেশ্য নয় ঠিকই কিন্তু জীবনের অংশ তো তাই না?”
” আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে। বুঝেছি আমি, তোমার কথায় তাল না মেলালে তুমি কথা বাড়াতেই থাকবে। তার চেয়ে ভালো বিয়ের বন্দোবস্ত করো আমার কোন আপত্তি নেই।”
ব্যাস প্রিয়তার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থা। অতঃপর তাদের বিচ্ছিন্ন হওয়ার সবরকম ব্যবস্থা হয়েই গেল! এখানে আর এক মুহূর্ত ও নয় আর এখানে থাকলে প্রিয়তা হয়তো দম বন্ধ হয়ে মারা-ই যাবে। কে সহ্য করতে পারবে তার প্রিয় মানুষ অন্য কারও হয়ে যাচ্ছে তা দেখা! প্রিয় মানুষ অন্য কারো হয়ে চোখের আড়াল হলে তবুও একটু সহ্য করা যায়, কিন্তু সে তো প্রতিনিয়ত চোখের সামনে আসতেই থাকবে! প্রিয়তা আর কোন কথা শোনার অপেক্ষায় না থেকে সোফায় গিয়ে বসে পড়ে। দাঁড়িয়ে থাকার শক্তিটাও যেন হারিয়ে গেছে তার।
ইয়াশ তার মায়ের সাথে কথা বলা শেষ করে রুম থেকে বের হয়েই দেখে প্রিয়তা বাহিরে সোফায় বসে আছে। পাশেই অবনী বসে বসে ফোন দেখছিল। এই মেয়েটার খুব বাজে অভ্যাস হয়ে গিয়েছে সবসময় হাতে ফোন থাকবেই। ফোনে এত কি পেয়েছে কে জানে!
ইয়াশ গিয়ে অবনীর হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নেয়। ইয়াশের হঠাৎ এমন আচরণে অবনী চমকে যায়।
” এটা কি হলো ভাইয়া? ফোন কেন নিয়ে নিলে?”
” আজকে থেকে তোর ফোন ব্যবহার করা বন্ধ, অতিরিক্ত বাজে নেশা হয়ে গিয়েছে তোর? ”
” এটা কেমন কথা! পরিক্ষা শেষ বাসায় এমনি এমনি কি করব বসে বসে?” (অবনী)
” আমার বুকসেলফ ভর্তি বই আছে কি করতে? ওখানে নিম্নেও চার/পাঁচশ বই আছে, ওগুলো পড়তে পারিস না? ”
” ভাইয়া সবার সবকিছুর প্রতি নেশা থাকে না, সবকিছুর প্রতি ভালোবাসা ও থাকেনা আমার বই পড়তে ইচ্ছা করে না। আমি বই পড়ব না, দাও ফোন দাও।”
” বই পড়তে ইচ্ছে করে না তো কি ইচ্ছে করে সারাদিন ফোন নিয়ে বসে থাকতে ইচ্ছে করে?”
” হ্যাঁ ইচ্ছে করে, আমি তো তোমার মতো সবসময় বাহিরে থাকি না যে আমার সময় এমনিতেই পার হয়ে যাবে।”
” তোমার ভাইয়া এমনি এমনি বাইরে থাকে না বোন, তার অনেক কাজ সেটা নিশ্চয়ই আলাদা করে তোমাকে বলতে হবেনা! ”
” বুঝেছি বুঝেছি আপনার অনেক কাজ এবার আমার ফোনটা দিন। ”
প্রিয়তা চুপ করে দুই ভাই বোনের কথা শুনছিল। প্রিয়তা নিজেও একটু উশৃঙ্খল টাইপের। তবে ইয়াশ কখনো তাকে কোন বিষয় নিয়ে কিছু বলেনি। শুধু একদিন এ বাসায় এসে টি-শার্ট পরে থাকায় অপমান করেছিল। তারপর থেকে প্রিয়তা ইয়াসকে দেখানোর জন্য হলেও ফুপির বাসায় আসলে মাথায় কাপড় দিয়ে থাকে বাহিরে গেলে বোরখা পড়ে যায় সে অন্য সময় এটা করে না।
” আমার সামনে যদি কোনদিন আমি তোকে ফোন টিপতে দেখেছি তাহলে ওই দিনই তোর ফোনের জান শেষ হয়ে যাবে। ”
” মনে থাকবে এবার দাও আমাকে ফোন দাও। ”
ইয়াশ ও অবনীকে ফোনটা দিয়ে চলে যাবে এমন সময় প্রিয়তা পিছন থেকে ডাক দেয়। ইয়াশ আর সামনের দিকে পা না বাড়িয়ে পিছনের দিকে তাকায়।
” হ্যাঁ বল, কোন দরকার? ” (ইয়াশ)
” আসলে ভাইয়া আমি বাড়ি যেতে চাচ্ছিলাম।”
” কে, মা তো বলল তুই কয়েকদিন থাকবি এখানে!”
” না আমি বাড়ি ফিরে যাব। আমার আর এখানে ভালো লাগছে না। ” (প্রিয়তা)
অবনী ভ্রু কুচকে প্রিয়তার দিকে তাকায়। প্রিয়তা কি বলল সেটা হয়তো তার বোধগম্য হলো না।
” কি বললি তুই, তোর এখানে ভালো লাগছে না? এই কথাও এখন আমার শুনতে হলেও! আমি থাকতে তোর ভালো লাগছে না! (অবনী)
” না আসলে শরীরটা ভালো লাগছে না। আর ইয়াশ ভাইয়ার সাথে তো ঈশু আপুর বিয়ের কথা চলছে এ সময় আমি এখানে কিভাবে থাকবো বাড়িতে অনেক কাজ আছে না! ” (প্রিয়তা)
” আচ্ছা তুই মা’র সাথে কথা বলে দেখ আমি বিকেলে রেখে আসব।” (ইয়াশ)
” ঠিক আছে।” (প্রিয়তা)
ইয়াশ বেরিয়ে যায়, প্রিয়তাও সেখানে আর বসে না থেকে রুমে চলে যায় ব্যাগ গুছাতে হবে ভেবে। এখানে যে দম বন্ধ হয়ে আসছে তার, এমন দম বন্ধকর পরিবেশ কোনদিন সৃষ্টি হয় নি। বাসায় গিয়ে গান চালিয়ে দরজা বন্ধ করে চিৎকার করে কান্না না করলে তার মনটা যেন হালকা হবে না।
চলবে…..
যারা পড়ছেন তারা কমেন্ট করে কেমন লাগছে জানাবেন প্লিজ। ❤️