#প্রিয়তার_প্রণয়সন্ধ্যা
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_০৯
কিছু সময় পেরিয়ে গিয়েছে, বাড়ির পরিবেশ এখন থমথমে। ইয়াশের মা কান্না করে যাচ্ছে, কি এমন হয়েছে কিছুই বুঝতে পারছে না।
ইলিয়াস সাহেব কান্না থামাতে বলেন কারণ খবর শুরু হতে যাচ্ছে এবারে হয়তো কিছু একটা জানা যাবে। তারা ইয়াশকে এবং তার সাথে সবাইকে কল দিয়েছিল ফোন বন্ধ আছে।
সবাই আবার টিভি দেখায় মনোযোগী হয়, ইয়াশের বাবা ততক্ষণে শহরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেওয়ার জন্য তৈরি তবে তিনি মনে করছেন যেকোনভাবে ইয়াশের সাথে কথা বলে নিতে পারলে ভালো হতো। রাতের খবর শুরু হয়, সবাই এবার নড়েচড়ে বসে। শিরোনামের প্রথমেই ইয়াশের ওখানকার ঘটনা, খবর শুরু হয়ে যায়।
ফ্ল্যাশব্যাক —
বিকেল পাঁচটা সম্মেলন শেষ করে ইয়াশ এবং তার সাথে যারা গিয়েছিল সবাই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেবে সেই উদ্দেশ্যে গাড়ি নিয়ে বের হয়। আজ প্রথম ভয় কে জয় করে এতগুলো মানুষ এবং মিডিয়ার সামনে ইয়াশ দেশ এবং দেশের অবস্থা কথা বলেছে।
জনগণের থেকে ফিডব্যাক অনুযায়ী যা পেয়েছে তাতে বোঝা যায় তারা ইয়াশের কথা খুব ভালোভাবে শুনেছে এবং পছন্দ করেছে।
গাড়ি নিয়ে গেট দিয়ে বের হওয়ার সময় একজন ছুটে এসে সামনে দাঁড়ায়।
লোকটা ইশারা করে গাড়ি থেকে নামতে বলে। গাড়ি থামানোর পর ইয়াশ গাড়ি থেকে নেমে আসে। লোকটা জোরে দৌড়ে আসায় তখনো হাঁপাচ্ছিল। ইয়াশ গাড়ি থেকে পানির বোতল টা নিয়ে লোকটার হাতে ধরিয়ে দেয়।
” একটু স্থির হন আরে যে পানিটা একটু খান গরমের সময় অনেকটা দৌড়ে এসেছেন। ”
লোকটা ইয়াশের হাত থেকে পানির বোতল টা নিয়ে ঢক ঢক করে খেয়ে নেয়। পানি খেয়ে বোতলটা আবার ইয়াশের হাতেই ধরিয়ে দেয়। ইয়াশ বোতলটা গাড়িতে রেখে বলে, “হ্যাঁ বলুন কিছু বলবেন, দৌড়ে আসছিলেন কেন? ”
” স্যার আপনাকে ডেকে পাঠিয়েছে। ” (লোকটা)
” আমাকে? কোন স্যার? ”
” আহমাদ স্যার আপনাকে ডেকে পাঠিয়েছেন।” (নামটিও কাল্পনিক)
” আহমাদ স্যার আমাকে দেখে পাঠিয়েছেন! এখনই? ”
” জি, নইলে আমি দৌড়ে আসবো কেন? ”
” আমাকে একা ডেকে পাঠিয়েছেন? ”
” জি,তবে আপনি কাউকে সাথে নিয়ে আসতে চাইলে আসতে পারেন। ”
ইয়াস গাড়ি এক পাশে রেখে সবাইকে তার সাথে যেতে বলে। গাড়ি এক পাশে রাখা হলে সবাই ইয়াশের পাশে এসে দাঁড়ায়। লোকটা সবাইকে ভেতরের দিকে নিয়ে যায়।
ভেতরের দিকে একটা বিল্ডিং রয়েছে, সেখানে ভিতরের দিকে লোকটা সবাইকে নিয়ে যায় । ভেতরের একটা রুমে আহমাদ সাহেব চার পাঁচ জনের সাথে বসে কথা বলছিলেন। দরজার সামনে গিয়ে লোকটা ভিতরে ঢোকার অনুমতি চায়। আহমদ সাহেব ইশারায় দুই মিনিট বাহিরে দাঁড়াতে বলে।
তারা সবাই বাহিরে অপেক্ষা করতে থাকে। ওখানে দাঁড়ানো কেউ বুঝতে পারছে না এত বড় মাপের একজন লোক তাদের কেন ডেকে পাঠিয়েছে! ইয়াশ চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে তার মাথাতে কিছুতেই আসছে না কেন তাকে ডাকা হয়েছে!
অতঃপর কয়েক মিনিটের মধ্যে অপেক্ষার সমাপ্তি ঘটে। ভেতর থেকে বসে থাকা চার-পাঁচজন বেরিয়ে চলে যায়। তখন আহমাদ সাহেব ইয়াশকে ভেতরে ডাকে বাকি সবাই ইয়াশের সাথে ভেতরে চলে যায়। ইয়াশ সামনে গিয়ে উনাকে সালাম দিতেই তিনি সালামের জবাব দিয়ে সবাইকে বসতে বলেন।
” কি যেন নাম তোমার? ইয়াশ?”
আহমাদ সাহেবের প্রথম প্রশ্নই ছিল এটা, চোখ থেকে চশমাটা নামিয়ে টিস্যু দিয়ে মুখটা মুছে নিলেন।
” জি স্যার আমি ইয়াশ।”
” বাসা কোথায় যেন?”
“……. ” (নামটা উল্লেখ করা হবে না)
” আচ্ছা আচ্ছা, দেশকে নিয়ে ভালো একটা চিন্তা আছে তোমার মাথায়, আমি যদি তোমাকে তোমার স্বপ্নের দিকে দুই পা এগিয়ে দিতে সাহায্য করি তাহলে কেমন হবে?” (আহমাদ)
” আমি কৃতজ্ঞ থাকব স্যার।”
” দেশ পরিচালনায় কোন একটা ক্ষমতা পেলে কি করার ইচ্ছে?”
” দেশের যে যে খাত বা যে জায়গা গুলোতে সমস্যা রয়েছে সেগুলো সমাধান করে নতুন একটা পরিবেশ এদেশের মানুষকে উপহার দেওয়ার ইচ্ছে আছে।”
” তার মানে বলতে চাইছো, কোথাও সমস্যা আছে? তোমার নজরে পড়েছে সেগুলো?”
” জি স্যার, দেশের সাধারণ নাগরিক আমি, আমার বাকস্বাধীনতা আছে। দেশের কোন কিছু খারাপ লাগলে আমার বলার অধিকার আছে বলে আমি মনে করি।” (ইয়াশ)
” শুধু তোমার মনে করলে তো চলবে না, সেটার পেছনে যথার্থতা থাকতে হবে। শুধু তোমার কোনকিছুতে খারাপ লাগলেই যে সেটা খারাপ এমন তো নয় হতে পারে সেটা অন্যদের কাছে ভালো। ধরো, তুমি কোন বাসায় চু*রি করলে সেটা তোমার পছন্দ কিন্তু অন্য সবার কাছে বিষয়টা অপছন্দের তাই না?”
” স্যার খারাপ লাগাগুলোতে আমার ব্যক্তিগত কোন স্বার্থ নেই।”
” আমি তোমার মাঝে একটা অন্যরকম কিছু খেয়াল করেছি, তুমি যদি চাও আমি তোমাকে তোমার স্বপ্নপূরণে সাহায্য করতে পারি কিন্তু তাতে আমি কি পাবো?”
” আমার কাছে থেকে ভালোবাসা আর কৃতজ্ঞতা ছাড়া কিই বা দেওয়ার আছে স্যার!”
” তোমার থেকে তেমন কিছু চাই না, তোমার কাছে একটা জিনিসই চাইবো।”
” জি স্যার?”
” ভালো একটা ভবিষ্যৎ, দিতে পারবে? ”
” স্যার আমি আমার সবটা দিয়ে চেষ্টা করব।”
” আজ আর আধা ঘণ্টা পর একটা মিটিং আছে সেখানে তুমি আমার পরিবর্তে যাবে।”
” স্যার আপনার পরিবর্তে! ”
” পরিবর্তে বলতে, আচ্ছা চলো আমিও যাব, তুমি আমার সাথেই যাবে। ওখানে বড় বড় ব্যাক্তিবর্গ থাকবেন, আলোচনাসভা মূলত কিছু সমস্যা বা ভালো কিছু হয়েছে এমন কিছু বিষয় সম্পর্কে। বাকি কথা গাড়িতে আলোচনা হবে চলো সময় হয়ে যাচ্ছে। ”
এক প্রকার তাড়াহুড়ো করে সবাই বেরিয়ে পড়ে, ইয়াশ এবং তার সাথে যারা আছে তার কেউই জানে না তারা কোথায় যাচ্ছে কেন যাচ্ছে এবং গেলে কি হবে! সবার মাথায় একটাই চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে আদৌ কি ওখানে যাওয়া ঠিক হচ্ছে!
এত এত চিন্তা মাথায় নিয়ে সবাই গাড়িতে গিয়ে ওঠে, আহমাদ সাহেবের গাড়িকে অনুসরণ করে ইয়াশদের গাড়ি চলতে থাকে।
সন্ধ্যা সাতটায় মাগরিবের নামাজের কিছুক্ষণ পর আলোচনা সভা শুরু হয়। সেখানে অনেক জায়গার অনেক মানুষ এসে অংশ নিয়েছে। একে একে কয়েকজনকে তাদের চোখে পড়া বা মনে হওয়া সমস্যা তুলে ধরতে মনে হয় যেন সরকার বা যারা দেশ পরিচালনার কাজে আছে তারা যেন সেই বিষয়গুলোতে লক্ষ্য রাখতে পারে।
শেষের দিকে ইয়াশকেও সুযোগ দেওয়া হয় কিন্তু তার কথা বলা শুরু করলে কয়েকজন শান্ত পরিবেশ অশান্ত হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে পরিবেশের অশান্ত অবস্থা দেখে ইয়াশকে বসিয়ে দেওয়া হয়।
সেখানে সাংবাদিকসহ অনেকেই ছিলেন।! তাদের মধ্যে একজন কোন কিছুর পরোয়া না করে অশ্রা*ব্য ভাষায় গা*লি দিয়ে ফেলে। ইয়াশের সাথে থাকা ছেলেগুলোর দুজন জবাব দিলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যায়।
এক পর্যায়ে কোনমতে আলোচনা সভা বন্ধ রাখা হয়। সবাই যার যার মতো বেরিয়ে যায়। বেরোনোর সময় একজন ইচ্ছে করে ইয়াশকে ধা*ক্কা দেয়, ইয়াশ টাল সামলাতে না পেরে দেয়ালের সাথে গিয়ে আরেকবার ধাক্কা খায়, কপাল গিয়ে একদম দেয়ালের সাথে লাগে, র*ক্ত দেখা যায়।
ইয়াশের সাথে থাকা একজন গিয়ে ধাক্কা দেওয়া লোকটা হাত ধরে, ছেলেটা তাকেও ধাক্কা দেয় এভাবে দুজনের মধ্যে হাতা*হাতি লেগে যায় ইয়াশ এবং পাশে থাকা বাকি সবাই থামাতে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যে থেমেও যায় কিন্তু ততক্ষণে বাহিরে থেকে পুলিশ এসে কয়েকজনকে নিয়ে যায় সাথে ইয়াশকেও। এগুলো প্রতিটা টিভি চ্যানেলে সরাসরি দেখানো হয়।
ইয়াশের সবগুলো কথা আলোচনা সভায় কয়েকজন পছন্দ না করলেও দেশের অধিক মানুষ তা পছন্দ করে। ইয়াশ কথায় কথায় বলেছিল তার ইচ্ছের কথা, সমস্যা সমাধানের কথা যে কথাগুলো মানুষের মনে দাগ কে*টে যায়।
_____________
ইয়াশের বাসা থেকে শহরের উদ্দেশ্যে বের হবেন ঠিক তখনই ইয়াশের নম্বর থেকে কল আসে। তিনি সাথে সাথে কল রিসিভ করেন।
” আসসালামু আলাইকুম বাবা।” (ইয়াশ)
” ওয়ালাইকুমুস সালাম, কি অবস্থা তোমার? কিছুক্ষণ আগে টিভিতে সব দেখলাম। প্রিয়তা এসে খবরের চ্যানেলে না দিলে তো জানতেই পারতাম না। আমি কি আসব তোমার কাছে? কোথায় আছো এখন তুমি?”
” বাবা শান্ত হোন। আমি একদম ঠিক আছি, থানায় নিয়ে আসা হয়েছিল আমাদের। যারা ঝামেলা করেছে তারা ক্ষমা চেয়েছে। আমরা খুব তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরব।”
” আচ্ছা, আছো কোথায় এখন?”
” আমরা থানা থেকে বের হলাম।”
” এখন কি অন্য কোথাও যেতে হবে?”
” না বাবা, সামনে সাংবাদিক আছে তাদের সাথে সাক্ষাত করে তারপর যেতে হবে।”
” আচ্ছা সাবধানে চলে এসো।”
ইয়াশের সাথে কথা বলে ইলিয়াস সাহেব সবাইকে আশ্বাস দেন যে সবকিছু ঠিক আছে চিন্তার কোন বিষয় নেই।
প্রিয়তা নামাজ শেষ করে মাত্রই ড্রয়িংরুমে আসে আর এসেই ইলিয়াস সাহেবের কথা শুনে স্বস্তির একটা নিঃশ্বাস ফেলে। তার মোনাজাত বিফলে যায় নি, ইয়াশ ঠিক আছে। সে আল্লাহকে শুকরিয়া জানায়, আল্লাহ চাইলে কি না করতে পারে! সবাই এখন ইয়াশের অপেক্ষায় সময় পার করা শুরু করে।
চলবে……
গল্পটা আমি আমার কল্পনা থেকে লিখছি, দয়া করে কেউ বাস্তবের সাথে মেলাবেন না এটা আমার অনুরোধ। হয়তো কোন কোন ক্ষেত্রে আমাদের বাস্তব পরিবেশের সাথে মিল পেতে পারেন, আমি এখানে কোন দেশের নাম ও উল্লেখ করব না কারণ ক্ষমতা পাওয়ার বিষয়টা কোথাও এমন হয় না। এখানে পরিবেশ পরিস্থিতি বদলানোটা শুধু শিক্ষনীয় বা ভালো লাগার হতে পারে, রাজ*নৈতিক ব্যাপারগুলো প্লিজ মেলাবেন না বাস্তবের সাথে।