প্রিয়তার প্রণয়সন্ধ্যা পর্ব -০৭

#প্রিয়তার_প্রণয়সন্ধ্যা
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_০৭

প্রিয়তা আর ঈশিতা দুজন বাবা-মায়ের সামনে চুপচাপ বসে আছে। মনে মনে ভয় পাচ্ছে, কি বলবে তাদের বাবা, কে জানে!

প্রিয়তার বাবা বেলাল সাহেব ও নিরবতা ভাঙলেন, এত বড় একটা বিষয়ে তো চুপচাপ থাকা যায় না।

” ঈশিতা…” (বেলাল)

” হ্যাঁ বাবা।”

” তোমার পছন্দের ছেলেকে এখানে আসতে বলো।”

” হ্যাঁ? ”

” হ্যাঁ আসতে বলো, আমরাও দেখি সে কেমন!”

” কেন বাবা, তোমরাই তো জোর করে আমার বিয়ে দিতে চাইছো এখন আবার তাকে ডাকতে বলছো যে?”

” ডাকতে বলেছি ডাকবে।”

” আমার তো ইয়াশ ভাইয়ার সাথে বিয়ে হয়েই যাচ্ছে, তাকে ডেকে আর কি হবে বলো?”

” তুমি অন্যকাউকে পছন্দ করো, আমি এটা খুব বেশি সময় হয়নি জেনেছি। আমি তোমার বাবা, আমি যে সিদ্ধান্ত নেব সেটাই সঠিক।”

” এখন বলো ওকে ডেকে কি করব, পরে যদি তোমাদের পছন্দ না হয়?”

” কেন তোমার পছন্দের ওপর নিজের ভরসা নেই? তুমি বুঝে দেখো তুমি তার কাছে ভালো থাকতে পারবে কি না, তুমি খুশি থাকলে আমি আর তোমার মা খুশি।”

ঈশিতার যেন কথাগুলো বিশ্বাস হচ্ছে না। সব যেন স্বপ্ন দেখছে আর এখনই সেই স্বপ্ন ভেঙে যাবে। ঈশিতা আবার মায়ের দিকে তাকিয়ে মাকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,

” মা, বাবা কি সত্যি বলছে?”

” তোর কি মনে হচ্ছে?”

” মনে হচ্ছে ভুল শুনছি আমি।”

” ভুল শুনছো না, ছেলেটার ছবি দেখাও আর সে কবে আসবে?”

” বাবা সে এই সপ্তাহের মধ্যেই চলে আসবে।”

ঈশিতা ফোন থেকে তার প্রিয় মানুষটার ছবি দেখায়, কলে কথাও বলায় সে সাহস করে। ঈশিতা পরিবেশ দেখে বুঝতে পারে তার বাবারও পছন্দ হয়েছে। একটা জিনিস ভাববার বিষয় আর তা হচ্ছে ইয়াশ কি সব বলে দিয়েছে! তাহলে তাদের বাবা রাগ না করে মেনে নিলো! অবিশ্বাস্য ব্যাপার যেন এটা।

” প্রিয় মা, তোর সাথে কিছু কথা ছিল।”

বাবার এমন কথায় প্রিয়তা তার বাবার দিকে তাকায়। সে ভাবছে তাকে আবার কি বলবে এখন। ঈশিতা মনে মনে হয়তো কিছু আন্দাজ করতে সক্ষম হয়েছে তাই সে মিটিমিটি হাসছে।
প্রিয়তার হাত ধরতেই প্রিয়তা বাবার দিকে থেকে বোনের দিকে তাকায়।

” এবার তোর পালা।” (ঈশিতা)

” কিসের পালা?”

” হয়তো আমার পরিবর্তে ইয়াশ ভাইয়ের সাথে তোর বিয়ের কথা বলবে।”

” পাগল নাকি তুমি!”

” হ্যাঁ দেখ না কি বলে।”

” তুমি এত কথা বলা বন্ধ করো, তোমার ব্যবস্থা হচ্ছে তুমি বাড়ি থেকে বিদায় হও।”

” আমার তো মনে হচ্ছে আমার সাথে তোর ও ব্যবস্থা করা হবে।”

” দুজন কথা বলা বন্ধ করলে আমি কিছু বলব।” ( বেলাল)

” হ্যাঁ বাবা বলো।” ( প্রিয়তা)

” আমরা বড়রা চাচ্ছিলাম ঈশিতা যাকে পছন্দ করে তাকে আগে দেখি, পছন্দ হলে ছেলে ভালো হলে আমরা আলহামদুলিল্লাহ রাজি। তোমাদের ফুপু, ফুপার কোন আপত্তি নেই। তবে আমরা আরেকটা বিষয়ে রাজি হয়েছি আর সেটা হচ্ছে ইয়াশের সাথে প্রিয়তার বিয়ে দিতে। তোমাদের ফুপি নিজেই মুখ ফুটে বলেছে কথাটা। আগেই বিয়ের দিকে না এগিয়ে প্রিয়তা তোমাকে জানালাম। আমার মনে হয় না তোমার আপত্তি থাকতে পারে, তবুও যেন তুমি তোমার বোনের মতো কাজ না করো তাই আগেই জানিয়ে দিলাম। ইয়াশ কত ভালো ছেলে সেটা নিশ্চয়ই আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না। তোমার বিষয়টা জানতে চাই।”

বাবার কথা শুনে ঈশিতার মুখে হাসি ফুটে যায়। তার মানে সে যা ভেবেছিল তাই হতে যাচ্ছে। তবে প্রিয়তার মুখে আর কোন কথা নেই। আগের মতো উত্তেজনা কাজ করছে না। হয়তো দুইদিন আগে হলেও এরকম খবরে সে লাফিয়ে উঠতো কিন্তু এখন তার এরকম হচ্ছে না। মেলা বা না মেলার বিষয়টা চলে আসছে। কারণ ইয়াশ যেমন ছেলে তার তুলনায় প্রিয়তা একদম বিপরীত। সে মাঝে মাঝে বোঝে ইয়াশ তাকে একদম পছন্দ করে না। ভার্সিটিতে উঠে যখন প্রথমে তার ফুপি তাদের বাসায় থাকার কথা বলেছিল তখন ইয়াশ নিজেই না করেছিল, আবার সেদিন ও ইয়াশ তার মাকে বলছিল প্রিয়তাকে বাসায় পাঠিয়ে দেওয়ার কথা সেটা সে স্পষ্ট শুনেছে এরপর সে ইয়াশের ব্যাপারে সিরিয়াস হওয়া ছেড়ে দিয়েছে।

বেলাল সাহেব শান্ত পরিবেশ দেখে প্রিয়তার দিকে আবার প্রশ্ন ছুড়ে দেন-

” প্রিয় মা, আমি তোকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি।”

প্রিয়তা এবার নিরবতা কাটিয়ে বাবার দিকে তাকায়। নিজে যা জানে সেটা তার বাবাকে জানানো প্রয়োজন, তা না হলে তার বাবা তাকে ভুল বুঝতে পারে।

” বাবা আমার মনে হয় ইয়াশ ভাইয়া আমাকে খুব একটা পছন্দ করেন না।”

” তুমি কীভাবে জানলে ইয়াশ তোমাকে পছন্দ করে না?( রমেলা)

” মা আমি ছোট নই, আমি ব্যবহারে বুঝি কে আমাকে পছন্দ করে নাকি করে না!”

” কিভাবে বুঝলে ইয়াশ অপছন্দ করে তোমাকে?” (বেলাল)

” বাবা তোমারও তো বোঝা উচিৎ, ভার্সিটি থেকে দশ মিনিট দূরে ফুপির বাসা তবুও কেন আমাকে হোস্টেলে থাকতে হয়? ইয়াশ ভাইয়া নিজেই নিষেধ করেছিলেন আমি যেন ওখানে না থেকে হোস্টেলে উঠি। আমি এই যে গতদিন ফুপির বাসা থেকে এলাম তখন আমি নিজে স্পষ্ট শুনেছি আমি থাকলে উনার সমস্যা হয়। একদিন দুদিনেই এত সমস্যা তাহলে উনি আমাকে বিয়ে করবেন কীভাবে?”

” এখন তো তোকেই বোকা মনে হচ্ছে প্রিয়….” ( ঈশিতা)

” কেন?”

” তুই তো জানিস উনি একটু অন্যরকম স্বভাবের, উনি মেয়েদের এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন সবসময়। তাহলে উনার বাড়িতে অন্য একটা মেয়ে থাকবে এখানে উনার সমস্যা হবে না?” (ঈশিতা)

” হ্যাঁ ঈশু একদম ঠিক বলেছে।” ( রমেলা)

” জানি না তবে আমার মনে হয় উনি আমাকে পছন্দ করেন না।”

” আমি ইয়াশের সাথে কথা বলে দেখব?” ( বেলাল)

” বাবা বিষয়টি একটু কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে না? প্রথমে বড় আপুর সাথে বিয়ে ঠিক করলে ওটা হচ্ছে না বিধায় আমার সাথে বিয়ের কথা বলছো, উনি তো মনে করতেই পারেন যে তুমি উনার ঘাড়ে আমাকে গছিয়ে দিচ্ছো।”

” তুই একটু বেশিই ভাবছিস, এরকম কিছুই ভাববে না প্রিয়। ( রমেলা)

” আমার মনে হলো তাই বললাম, আমার আলাদা কোন পছন্দ নেই যে তার কথা জানাবো। তোমাদের ওপর আমার ভরসা আছে তবে আমি যা বললাম তা একটু ভেবে দেখো তোমরা।”

প্রিয়তা রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে আসে।একদিক দিয়ে তার ভালো একটা অনুভূতি কাজ করছে আরেকদিকে খারাপ ও লাগছে কারণ ইয়াশের কোন ব্যবহারে সে কখনও পছন্দের আভাস পর্যন্ত পায় নি।
___________

কয়েকদিন কেটে গিয়েছে, বাড়িতে প্রিয়তার সামনে ইয়াশের সাথে বিয়ের ব্যাপারে আর কোন কথা বলে নি কেউ কিন্তু প্রিয়তা ঠিকই জানতে পেরেছে ইয়াশ বিয়েতে না করে দিয়েছে। ইয়াশ বলেছে সে এখন ব্যস্ত হয়ে পড়েছে, বিয়ের ঝামেলাতে আর জড়াতে চাইছে না। তাই কেউ আর এ কথা প্রিয়তাকে আলাদা করে বলে নি।
সকাল থেকে বাসায় নানারকম রান্না হচ্ছে, আবির গতকাল দেশে ফিরেছে আজকে বাবা-মাকে নিয়ে ঈশিতার বাসায় আসবে। দুইপক্ষের একে অপরকে পছন্দ হলে কয়েকদিনের মধ্যেই বিয়ে হয়ে যাবে।

ঈশিতা কয়েকদিন ধরেই নিজের যত্ন নিচ্ছে, প্রতিটা মেয়েই হয়তো চায় প্রিয় মানুষের সাথে তার পরিবার ও তাকে পছন্দ করুক। এ কয়েকদিনে ঈশিতা দেখতেও কেমন অদ্ভুত সুন্দর হয়ে গেছে, মন ভালো থাকলে হয়তো লাবণ্য ফিরে আসে।

বিকেলে আবির এবং আবিরের পরিবার ঈশিতার বাসায় আসে। আকাশীরঙা একটা শাড়ি পরে ঈশিতা সবার সামনে আসে। বসার ঘরেই ছিল সবাই। শাড়ি পরে খুব কমই দেখেছে আবির ঈশিতাকে। আজ যেন নতুন বউ নতুন বউ লাগছে তাকে, চোখ ফেরানো দায় হয়ে যাচ্ছে। এত মানুষের মধ্যে তাকে তো মন ভরে দেখাও যাবে না তাই চোখ নামিয়ে নেয় সে।

ঈশিতাকে দেখার পর্ব শেষ হলে তাকে রুমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। প্রিয়তাও রুমেই ছিল, সে আর সবার সামনে যায় নি। রুম থেকেই উঁকি দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছিল।

ঈশিতা এসে বিছানায় বসে পড়ে।

” আপু, আবির ভাইয়ার মাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে। এই বয়সেও কত স্মার্ট! ”

” আবিরকে পছন্দ হয় নি?”

” তোমার হবু বরকে পছন্দ করে আমার লাভ আছে?”

” তাহলে আমার হবু শাশুড়ীকে পছন্দ করে তোর কি লাভ? তার কিন্তু আর ছেলে নেই।”

” ভালো লাগলেই কেন শাশুড়ী বানাতে হবে?”

” কে জানে!”

দুজন কথা বলে হাসাহাসি করতে থাকে। ঈশিতা যেন আজকের পরিবেশ দেখেই একটু নিশ্চিন্ত হতে পারলো। সে ভয়ে ছিল আবিরকে তার বাবা পছন্দ করবে কি না এটা ভেবে কিন্তু সে মনে মনে জানতো আবিরকে কোনভাবেই অপছন্দ করা যায় না। অতঃপর সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আরও একটা ভালোবাসা এক হতে যাচ্ছে।

চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here