তোর শহরে রেখেছি পা পর্ব -২০

#তোর_শহরে_রেখেছি_পা
#পর্ব_২০
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

A.K এর কথা শুনে নেহমাত শেখ অবাক চোখে ওর দিকে তাকালো। আর বলল,,

“মানে?”

“মানে হলো এটাই NS হচ্ছে সেই ব্যক্তি যে আনোয়ার খান কে নিজের সবটুকু দিয়ে ঘৃনা করে। আর তাদের ছেলে মেয়েকেও। আপনার ভুল আপনি সেই আনোয়ার খানের মেয়ে আঁখি খানকেই ভালোবেসেছেন সাথে বিয়েও করেছেন। ”

“আনোয়ার খান কে আমি একজন ভালো মানুষ হিসেবেই জানি। উনি তো কারো ক্ষতি করতে পারে না। আজীবন আমি ওনাকে অন্যের ভালো করতেই দেখেছি। তাহলে উনাকে কেউ কি করে এতটা ঘৃনা করতে পারে?”

“পারে উনি সেরকম একটা ভুল -ই জীবনে করে ছিলেন। আপনি জানেন তিনি মাহমুদ খান কে অনেক ভালোবাসতেন। তবুও তিনি এত সহজে তাকে বাড়ি থেকে চলে যেতে বললেন সেটা আপনি ভাবলেন আপনার কথায় সে এরকম কাজ করেছে কিন্তু না সে আপনার জন্য করে নি। সে এই জন্য করেছে যেটা আনোয়ার খান তার বাইশ বছর বয়সে করতে পারে নি। তার ছেলে সেটা করতে চাইছে তাই তাকে বাড়ি থেকে বেরুনোর সময় বাধা দেয় নি। কারন সে চেয়েছে তার ছেলে তার মতো যেনো কষ্ট না পায়। সে যেনো তার ভালোবাসাকে নিয়ে সংসার করতে পারে।তাকে নিয়ে একসাথে বাঁচতে পারে।”

“তুমি কি বলছো আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।”

“আনোয়ার খান একজন কে নিজের জীবন দিয়ে ভালোবাসতেন আজও বাসে তবে নিরবে নিভৃতে। সে কথা কেউ জানেনা তার মনে এখনো তার ভালোবাসার মানুষ রয়েছে। তার নাম ছিল রোজিনা তার কথা বাড়িতে বলতেই তার বাবা নাকচ করে দেয়। তিনি রোজিনা নামক রমনী টিকে কিছুতেই পুত্রবধূ হিসেবে মানবেন না। কারন তার বিয়ে অনেক আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। আনোয়ার খান তাকে হারাতে চান নি তাই গোপনে রোজিনার সাথে বিয়ে করেন তিনি ভেবেছিলেন বিয়ে করলে হয়তো তার বাবা রোজিনা কে মেনে নেবেন কিন্তু আনোয়ার খানের বাবা তাকে তাও মেনে নেয় নি। তাই তিনি তাকে নিয়ে সবার অগোচরে রোজিনার সাথে সংসার করতে চায়। কিন্তু তার আগেই আনোয়ার খানের বাবা সব জানতে পেরে যায়। তাকে বাড়ি নিয়ে আসে আর তাকে বাড়িতে বন্দি করে রাখে। আর এটাও বলে যদি রোজিনা কে চায় তাহলে তাকে তার বাবার লাশের ওপর দিয়ে যেতে হবে বাবার এরকম কথা শুনে আনোয়ার খান আর এগোয় নি। আর বাবার কথা মতো অন্য একজন কে বিয়ে করে নেয়। কারন তিনি তার বাবা মাকে খুব ভালোবাসতেন আর মানতেন। বিয়ের পর তাদের মিলন হয়েছিল সেখান থেকে তাদের একটি কন্যা সন্তান জন্ম হয়। রোজিনা আনোয়ার খানের ওপর অনেক ঘৃনা জমা করে রেখেছিলেন। কারন আনোয়ার খান ওনাকে ছেড়ে অন্য একজন কে নিয়ে সংসার করছিল।সেই জন্যই তিনি তার মেয়েকে নিজের শক্ত হাতে গড়ে তুলেন আর খান পরিবার কে শেষ করার জন্য উঠেপড়ে লাগেন। তবে আনোয়ার খান কে তিনি না মেরে সকলের থেকে দুর করতে চেয়েছিলেন তাই তো সবার ওপর দিয়ে কিছু না কিছু হলেও ওনার ওপর দিয়ে কিছু হয় নি‌। আনোয়ার খান ছিলেন অনেক প্রভাবশালী তাই সেরকম বড় কিছু হওয়ার জন্য রোজিনা মেয়ে অন্ধকার জগতের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন । রোজিনা তাকে যা বোঝাতেন তাই বুজতেন। খারাপ পথে চলতে চলতে NS নিজেই সবার কাছে ট্রাস হয়ে উঠে। আর এই ট্রাস-ই অন্ধকার জগতের বস NS. অবশ্য রোজিনা এখন আর বেঁচে নেই। তিনি বেঁচে থাকলে হয়তো দেখতে পেতেন তার মেয়ে তার লক্ষ্যের থেকেও উচ্চ পর্যায়ে চলে গেছে। তবে আপনাকে বেছে নিয়েছে আরেকটা কারনে!

“কি কারন?”

A.K নেহমাত শেখ কে সব খুলে বলল তার সাথে তার অগোচরে কেন আর কি কি করেছে এখনো কি কি করছে। সবার শেষে NS এর ছবিও দেখাল। সব শুনে নেহমাত শেখ স্তব্ধ হয়ে গেলেন। A K বলল,,

“সব আপনাকে জানালাম কেন জানেন আমার মনে হলো আপনাকে জানানো টা প্রয়োজন কারণ এই সবকিছুর মধ্যে আপনার সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে।

নেহমাত শেখ কিছু বললেন না। ওনাকে দেখতে অনুভুতি শূন্য মানুষ মনে হচ্ছে। হুট করে বললেন,,,

“তোমাদের কাছে আমি একটা সাহায্য চাই করবে?”

তখন আরহাম বলল,,,

“কি সাহায্য?”

“আমি NS কে নিজ হাতে মারতে চাই ! তোমরা আমাকে তাকে মারতে দেবে। আমি জানি খুব তাড়াতাড়ি তোমরা তাকে ধরতে পারবে।”

এ কথা শুনে A.k বলল,,

“ইম্পসিবল আমরা আইনের লোক হয়ে এরকম বেআইনি কাজ করতে পারবো না।”

“বেআইনি কাজ হবে কেন কেউ জানবে না। তোমরা আমাকে সাহায্য করছো! জীবনে তো অনেক খারাপ কাজ করেছি এখন তাকে মেরে একটা ভালো কাজ করতে চাই।”

“সরি আপনাকে আমরা তাকে মারার জন্য সাহায্য করতে পারবো না। তবে****” ”

A K আর আরহাম নেহমাত শেখ এর সাথে আরো কিছু প্রয়োজনীয় কথা বলে। আর সেখান থেকে চলে যায়। তারা আজকে প্ল্যান করে এখানে এসেছে যাতে NS জানতে না পারে নেহমাত শেখ তার ব্যাপারে জেনে গেছে সে কে।

_________________

আরহাম আর আরুহি বাড়িতে গিয়ে দেখলো আফরিন খাবার নিয়ে বসে আছে। এখন রাত দশটা বাজে। আরহাম এগিয়ে গিয়ে বললো,,,

“আফরিন তুমি এখনো ঘুমাও নি? তুমি না টায়ার্ড ছিলে।”

“আরে আরু যাওয়ার পর আমি ঘুমিয়েছিলাম। হুট করে ঘুমটা ভেঙে যায়। উঠে দেখলাম এটুকু ঘুমেই হালকা লাগছে তারপর ঘড়িতে দেখি সারে আটটা বাজে। আরুকে ফোন দিলাম ও বললো রাত দশটা বাজবে। আপনার নাকি আরো কাজ আছে তাই ভাবলাম বাড়িতে তো রান্না হয় নি আজ আমি রান্না করি। একটু আগেই রান্না শেষ করে ফ্রেশ হলাম নিচে এসে দেখছিলাম সব ঠিক আছে কিনা তখনি আপনারা চলে আসলেন।”

“তারমানে এই রাতে বউয়ের হাতে গরম গরম খাবার! একেবারে জমে যাবে। এই বোনু তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আয় তোর ভাবি শুশুরবাড়িতে প্রথম রান্না করেছে।”

তখন আরুহি মুচকি হেসে বলল,,,

“তাই তো দেখছি ভাবি আমার প্রথম দিনেই সব করে ফেলবে দেখছি।”

” আরু তোরাও না যা ফ্রেশ হয়ে আয়। আমি খাবার বাড়ছি সবার জন্য।”

“এই যাবো আর আসবো।”

আরহাম আর আরুহি ফ্রেশ হয়ে আসলো আর আরহাম আর আরুহি দুই জন খেতে বসলো। আরহাম আফরিন কে খেতে বললে ও বলে আজ আমি আমার শুশুরবাড়িতে প্রথম রান্না করেছি। আপনারা দুই লুকমা খেয়ে বলেন কেমন হয়েছে তারপর আমি খেতে বসছি। এক লুকমা খেয়ে আরহাম বলল,,

“মাশাআল্লাহ আমার বউয়ের হাতের প্রথম রান্না ভালোই হয়েছে তবে আরেকটু ঝাল হলে আরো বেশি ভালো লাগতো একদম পারফেক্ট।”

একথা শুনে আফরিন অবাক চোখে আরহাম এর দিকে তাকিয়ে বলল,,,

“আপনি কি আমার রান্নার প্রশংসা করলেন নাকি ভুল ধরলেন।”

তখন আরহাম মুচকি হেসে বলল,,,

“দুটোই করলাম। আমার মনে হয় তুমি ঝাল কম খাও তাই কম দিয়েছো। কিন্তু আমি আর আরুহি আরেকটু বেশি ঝাল খাই। তোমার রান্না ভালোই হয়েছে। এখন আমি যদি বলি তোমার রান্না অনেক ভালো হয়েছে সেটা ঠিক আছে কিন্তু আরেকটু ঝাল হলে আমাদের আরো ভালো লাগতো। এখানে ভুল ধরার কিছু নেই। এটা বলেছি কারন এর পরে রান্না করলে তুমি এটা মাথায় রাখবে। তখন পারফেক্ট হবে। আসলে খাবারের ব্যাপারে রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খারাপ বলতে নিষেধ করেছেন। ভালো না লাগলে রেখে দিতে বলেছেন।” কারন একটা মানুষ যখন রান্না করে তখন তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাতে রান্না টা ভালো হয়।তবে যদি কাউকে শেখানোর ব্যাপারে বলা হয় তাহলে এটা বলা উচিৎ যেভাবে আমি বললাম এটা আমাকে আমার এক বড় ভাই বলেছিলেন তিনি ও কোথা থেকে শুনেছিলেন আমার মনে নেই। এবার বুঝতে পেরেছো?’

আফরিন মুচকি হেসে বলল,,

“হুম বুঝতে পেরেছি।”

তখন আরুহি বলল,,,

“হুম অনেক হয়েছে এখন ভাবি খেতে বসেন।”

আফরিন খেতে বসলো। ও খাবার টা মুখে দিয়ে দেখলো ও ঝাল কম খেলেও সত্যিই ঝালটা অনেক কম হয়ে গেছে।ও নিজেই খেতে পারছে না। ও আরুহির আর আরহাম এর দিকে তাকালো ওদের দেখে মনে হচ্ছে ওরা তৃপ্তি সহকারেই খাচ্ছে। আফরিন অবাক এভাবে কারো প্রশংসা করেও ভুল শুধরে দেওয়ার কথা বলা যায় আজ আরহাম এভাবে না বললে বুঝতেই পারতো না। যদি সরাসরি বলে দিতো খাবার ভালো হয় নি ঝাল কম হয়েছে। তাহলে নিশ্চয়ই আফরিনের খারাপ লাগতো। এই জন্যই রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই তরিকা বলে দিয়ে গেছে। আফরিন খাচ্ছে না দেখে আরহাম বলল,,,

“কি হয়েছে তুমি খাচ্ছো না কেন?”

“ঝালটা সত্যিই কম হয়ে গেছে।”

“আজ তুমি প্রথম রান্না করেছো! ভুল একটু হবেই ভুল করে করেই তো শিখবে। ভুল না করলে কেউ শিখতে পারে না। ”

“আসলে আমি বাড়িতেও রান্না করেছিলাম কোনদিন ও পারফেক্ট হয় নি। তবে আজ চেষ্টা করেছিলাম পারফেক্ট করার জন্য।”

“আরে এটা ব্যাপার না। একদিন তুমিও পারফেক্ট বাবুর্চি হয়ে যাবে। ভাবছি তখন আমরা একটা হোটেল দেব। তুমি রাঁধবে আমি সবাইকে সার্ভ করে দেব।আহা কি মধুর দৃশ্য।”

আরহাম এর কথা বলার ভঙ্গিতে আফরিন আর আরুহি হেসে উঠলো। আরুহি আফরিনের খাওয়া দেখে বলল,,

” খেতে না পারলে একটা ডিম ভেজে দেই তোকে!”

তখন আফরিন বলল,,

“না তার দরকার নেই। আমি খেতে পারবো।”

তখন আরহাম বলল,,

“আমাদের ঘরের রানী হচ্ছে আফরিন মানে আমার বউ। সে যখন খেতে পারছে না। তাহলে আরুহি যাও আমার বউয়ের জন্য ডিম ভেজে নিয়ে এসো।”

“তা রাজা সাহেব আপনার কি কিছু লাগবে।”

আরুহির কথা শুনে আরহাম হেসে বলল,,

“আমার তেমন কিছু লাগবে না। কিন্তু এ বাড়ির রাজকন্যা আরুহি মাহমুদ খান এর জন্য আরেকটা ডিম ভেজে আনলেই হবে।”

“তাহলে রাজার জন্যও একটা ডিম ভাজি করে আনতে হবে। রানী আর রাজকন্যা রাজা কে ছেড়ে তো আর খেতে পারবে না।”

“তা অবশ্য ঠিক কথা বলিয়াছেন।”

“ন্যাকিমি ছেড়ে পাঁচ মিনিট বসো আমি আসছি।”

আরুহি কিচেনে গেল। কিছুক্ষণ পর আরুহি ডিম ভাজি এনে রাখলো। আর তিন জনে একসাথে খেল। আফরিন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকালো। ও ভিশন খুশি আর বলতেও পারবে আমি খুব সুখী।
“পৃথিবীতে ওই নারীই মনে হয় সবচেয়ে সুখী যে দিনশেষে বলতে পারে আলহামদুলিল্লাহ আমি একজন ভালো স্বামী পেয়েছি ভালো পরিবার পেয়েছি !!”

খাওয়া শেষে আরহাম বলল,,

“বোনু আমি ঠিক করেছি কাল আমরা যাওয়ার আগে তোকে আফরিন দের বাড়িতে রেখে যাবো। আর আমরা যে পাঁচ দিন কক্সবাজার বাজার থাকবো তুই ঐ কয়েকদিন ওদের বাড়িতে থাকবি। এটা কিন্তু না করতে পারবি না আমি বলেছিলাম আমাদের সাথে যেতে। আমি ওনাদের সাথে কথা বলে এসেছি। আর আমার টেনশন ও হবে না। এমনিতেও তোকে আমি কখনো একা ছাড়িনি।

“আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি ওতো চিন্তা করো না। তোমরা এখনি গিয়ে সব গুছিয়ে নাও। ভাবি তোর সব প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আছে না থাকলে কাল সকালে শপিং করতে যাবো। তোমরা তো বিকেলে যাবে। ”

তখন আরহাম বলল,,

“তার দরকার নেই আমি শপিং করেছি বিয়ের আগে আমার বউয়ের সব প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে রেখেছি আলমারিতে।”

“ওহ আচ্ছা তাহলে তো কথাই নেই। আমি এখন শুতে যাচ্ছি আল্লাহ হাফেজ।”

বলেই আরুহি রুমে চলে গেলো। আরহাম আর আফরিন ও গেল।রুমে গিয়ে আফরিন বলল,,

“আচ্ছা আপনারা বেছে বেছে এই সময়টাকেই বিয়ের জন্য ঠিক করলেন কেন?”

“কারন এখন তোমাদের কলেজ ছুটি। তোমার যাতে পড়াশোনায় কোন প্রব্লেম না হয় তাই। আমরা আসার পরেই তোমাদের ক্লাস শুরু হবে। তখন কিন্তু পড়াশোনায় গাফিলতি করা চলবে না। আর হ্যা কলেজে অবশ্যই পর্দা করে যাবে।”

“হুম যাবো।”

“আচ্ছা চলো এখন শুয়ে পড়ি।”

__________________________

পরের দিন,,

আরহাম আর আফরিন আরুহি কে আবরার দের বাড়িতে রেখে হানিমুনে চলে গেল। আরুহিকে সবাই ভালোভাবেই স্বাগত জানালো। তবে এতকিছুর মধ্যেও দুজন মানুষ খুব খুশি এক মিষ্টি আরেকজন হলো আবরার। আরুহি যখন বাড়িতে ঢুকলো তখন আবরার ওর পাশ থেকে বলেছিল,,

“মিস আপনাকে স্বাগতম আমাদের বাড়িতে!”

তখন আরুহি মুচকি হেসে বলছিল,,

“ধন্যবাদ মিস্টার নিশান আবরার।”

সন্ধ্যার পর আরুহি ওর জন্য রাখা বরাদ্দকৃত রুমে বসে পরছিল। এমন সময় নাদিয়া আর মিস্টি আসে ওর রুমে। নাদিয়া নক করল,,

“আরুহি আসবো?’

“হ্যা ভাবি আসুন!”

নাদিয়া আর মিস্টি ভেতরে ঢুকলো। নাদিয়া বলল,,

“কি করছো?”

“এই তো একটু পরছিলাম।”

“তোমাকে ডিস্টার্ভ করলাম না তো?”

“আরে বসুন না ডিস্টার্ভ এর কি আছে। আমার একা একা ভালো লাগছিল না তাই বই নিয়ে বসেছিলাম। তা মিষ্টি চকলেট খাবে আমার কাছে আছে।”

তখন মিস্টি বলল,,

“মা বেশি চকলেট খেতে দেয় না শুধু বকে। বলে চকলেট খেলে দাঁতে পোকা হবে।”

‘মা বকে এই জন্যই যে বেশি চকলেট খেলে পোকা হয় তাই আমাদের সিমীত ভাবে সবকিছু গ্ৰহন করা উচিৎ বুঝতে পারলে মিস্টি।”

“হুম আন্টি মিস্টি বুঝতে পেরেছে।”

“গুড গার্ল!”

ওরা তিনজন আরো কিছুক্ষণ গল্প করলো।

___________________________

রাতে খাবার টেবিলে নাহিয়ান খান আরুহিকে,,

“আরুহি তোমার কোন সমস্যা হচ্ছে না তো। সমস্যা হলে আমাদের জানিও।”

” আংকেল কোন সমস্যা হচ্ছে না। আপনারা এতো ব্যস্ত হবেন না।”

“এই বাড়িটা তোমার নিজের বাড়ি মনে করে থাকবে। কোন কিছু দরকার পরলে তোমার আন্টি কিংবা নাদিয়া কে বলবে।”

তখন মিস্টি বলল,,

“বড়দাদু তুমি চিন্তা করো না। আমি আন্টির খেয়াল রাখবো।”

“আরে বা আমার দিদিভাই অনেক বড় হয়ে গেছে এটা মানতে হবে।”

“হুম হয়েছেই তো এখন আর মিস্টি ছোট নেই সব বুঝে।’

“হুম তা তো দেখতেই পাচ্ছি।”

তখন নাসরিন খান বললেন,,

“অনেক হয়েছে এবার কথা বাদ দিয়ে খাবার খাও তোমরা খাওয়ার সময় এতো কথা বলতে হয় না।”

নাসরিন খানের কথা শুনে সবাই খাওয়ায় মনোযোগ দিলো।

রাতে আবরার দোলনায় বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল। আরুহির ঘুম আসছিল না দেখে ও ছাদে গেল। আর আবরার কে দেখে বলল,,

“রাতের আকাশে তারা গুনছেন নাকি মিস্টার নিশান।”

“আরে মিস আপনি এলেন কখন।”

“এই তো কিছুক্ষন আগে! তবে মাঝেমধ্যে তাঁরা গোনাটা কিন্তু মন্দ নয়। জীবনের একঘেয়েমি কাটাতে তাঁরা গুনতে ভালোই লাগে। ”

“আপনি গুনেছেন কখনো?”

“আকাশে যত তারা আছে ততগুলো গুনিনি তবে তাঁরা গোনার ফিলটা নিয়েছি। তাঁরা গুনতে গেলে আপনার ভুল হবেই হবে। তখন নিজেকে বোকা মনে হবে। কিন্তু আলাদা আনন্দ লাগবে।”

“আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেন? বসুন না আমি উঠছি!

“না আপনি বসুন আমি বসবো না। আমি ছাদে একটু হাঁটাহাঁটি করতেই এসেছি। আসলে ঘুম আসছিল না তাই এখানে এলাম।”

“ওহ আচ্ছা। ”

“তা আপনি এখানে কি করছেন তাঁরা গুনছিলেন নাকি?”

“না আপনার তাঁরা গোনার ফিলিং টা এখনো নেওয়া হয় নি। তবে আপনি যখন বললেন তখন একদিন নেব।আর আমি তো আকাশ দেখছিলাম। রাতের আকাশ দেখতে আমার বেশ লাগে।”

“সবকিছুর সৌন্দর্য আছে যদিও সেটা সবাই দেখতে পায় না। সবার মানসিকতার ওপর তার পছন্দ ডিপেন্ড করে।”

ঠিক বলেছেন মন মানসিকতার ওপর ডিপেন্ড করে।

“তবে জানেন তো রাসূল (সাঃ) বলেছেন,
“ভালো চিন্তা ও উত্তম ধারণা করাও ইবাদত!
__[মিশকাত:৪৮২৭]
তাই সবকিছুর ব্যাপারে উত্তম ধারনা করা প্রয়োজন ।”

“হুম। তবে মানুষের মাঝে ভালোলাগার অনুভুতির ব্যাপারে আপনার কি মত মিস।’

“আমি বুঝিনা আপনি হঠাৎ করে কোথা থেকে কোথায় চলে যান। কথা হয় একটা নিয়ে কিন্তু আপনি চলে যান অন্য জায়গায়।”

“আরে বলুন-ই না।”

“আপনি বলুন সবসময় তো আপনি প্রশ্ন করেন আমি উত্তর দিই আজ না হয় আপনি বলুন।”

“আচ্ছা ঠিক আছে আজ নাহয় আমিই বলছি! মানুষের মাঝে অনুভূতি বলতে আমি মনে করি,,,

প্রতিটি মানুষের মাঝেই ভালোলাগার অনুভূতি রয়েছে। হোক সেটা বন্ধুত্ব কিংবা ভালোবাসা সবক্ষেত্রেই ভালোলাগার অনুভূতি রয়েছে। যে সম্পর্কে কোনো অনুভূতি কাজ করে না সে সম্পর্কের কোনো মূল্য থাকে না। পৃথিবীতে অনুভূতিহীন সম্পর্ক গুলো দিন দিন মরে যায়। ভালোলাগার অনুভূতি গুলো প্রিয়জনদের নিকট প্রকাশ করলে প্রিয়জনেরা খুশি হয় এবং নিজেকে অনেক হালকা মনে হয়। ভালোলাগার এই অনুভূতি গুলো প্রকাশ করার মাধ্যমে সম্পর্ক অনেক মিষ্টি হয়ে উঠে।”

“ভালোলাগার অনুভূতি প্রকাশ করলে সম্পর্ক মিস্টি হয় তা আপনি কখনো প্রকাশ করেছেন আপনার বাবা মাকে যে আপনি তাদের অনেক ভালোবাসেন!”

আরুহির এই কথায় আবরার থমকে যায়। আরুহি এরকম একটা কথা বলবে ও ভাবতেই পারেনি। আবরার বলল,,

“এই বিষয় নিয়ে আমরা না কথা বলি।”

“আচ্ছা আপনি সবার সাথে কথা বললেও আপনার মা বাবার সাথে কথা বলেন না কেন?”

“কিছু জিনিস আমাদের জীবনে অপত্যাশিত ভাবে হয়ে যায়। আমরা চাইলেও এটাকে নিজের আয়ত্তে আনতে পারি না। তাদের সাথে আমার মন কথা বলতে চাইলেও আমার মস্তিষ্ক কথা বলতে দেয় না। সবজায়গায় মন উর্ধ্বে থাকলেও কিছু জায়গায় মন মস্তিষ্ক কে হারাতে পারে না।”

“তারমানে আপনি তাদের ভালোবাসেন!”

“প্রত্যেকটা সন্তান -ই তার বাবা-মাকে ভালোবাসে।”

তখন আরুহি মনে মনে বলল,

“আপনি সোজা মুখে ভালোবাসি বলতে না পারলেও আপনি আপনার কথার মাঝে ঠিক বুঝিয়ে দিচ্ছেন আপনি তাদের ভালোবাসেন। তবে আমি জানিনা আপনাদের মাঝে কি হয়েছে। তবে এটা বুঝতে পারি তারা আপনাকে ভালোবাসে আর আপনিও তাদের ভালোবাসেন।”

তখন আবরার বলল,,

” অনেক রাত হয়েছে। এখন রুমে যাওয়া উচিৎ এমনিতেও এখন এভাবে আমাদের একসাথে এখানে থাকা উচিৎ না।”

“হুম ঠিক বলেছেন আমিও এটাই ভাবছিলাম এখন। অবশ্য আমি প্রথমে বুঝতে পারিনি আপনি এখানে আছেন পরে এগিয়ে এসে দেখলাম।”

“বুঝতে পারলে হয়তো আপনি এখন ছাদেই আসতেন না।”

আরুহি কিছু বললো না। শুধু বলল,,

“শুভ রাত্রি আল্লাহ হাফেজ।”

বলেই আরুহি চলে গেল। আবরার ওর দিকে তাকিয়ে বলল,,

“আমি জানি আপনি আমার ব্যাপারে আমার মা বাবার সম্পর্কের অবস্থা অবশ্যই অবলোকন করেছেন। অবশ্য এটা যে কেউ করতে পারবে আমাদের সম্পর্ক আর পাঁচটা সম্পর্কের মতো নয়। তবে আমিও খুব করে চাই তাদের সাথে আমার সম্পর্কটা সহজ হোক। কিন্তু ঐ যে মস্তিস্ক বারবার বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়।”

__________________

পরের দিন,,

আজানের ধ্বনি কানে আসতেই আরুহির ঘুম ভেঙ্গে যায়। প্রতিদিনের ন্যয় ফজরের নামাজ আদায় করে নিল । নামাজ পরে সূর্যদয় দেখে নিতে নামলো। নিচে এসে দেখলো কেউ নিচে আসে নি ওর তো সকালে আরহাম এর সাথে চা খাওয়ার অভ্যাস। কিন্তু এটা তো ওর বাড়ি না এভাবে হুট করে কারো বাড়িতে এসে এরকম করাটাও ভদ্রতার খাতিরে পরে না। ও সোফায় বসে রইলো। কিছুক্ষণ পর নাদিয়া নিচে নামলো আর আরুহিকে দেখে বুঝতে পারলো ও নামাজ পরেই নিচে এসেছে। ওর মাথায় এখনো খুব সুন্দর করে ঘোমটা দেওয়া। নাদিয়া মুচকি হেসে বলল,,

“আরে আরুহি তুমি এখানে কখন এসেছো?”

“এই তো একটু আগেই!”

“ওহ আচ্ছা চা খাবে আমি এখন সবার জন্য বানাবো?”

“আচ্ছা ঠিক আছে আনুন।”

কিছুক্ষণ পর নাদিয়া চা নিয়ে এলো। সবাইকে দিয়ে এসে আরুহির পাশে বসলো। এই সময় কেউ রুম থেকে বের হয় না। একেবারে ব্রেকফাস্ট করার সময় আসে শুধু নাদিয়া নাসরিন খান আর রুবিনা খান নিচে আসে। তবে তারা একটু পর আসবে। নাদিয়া আরুহির পাশে বসে বলল,,

“আচ্ছা আরুহি তুমি বোধহয় ইসলামকে আর আল্লাহ তায়ালা কে খুব ভালোবাসো। না মানে আল্লাহর সকল কাজ করো মানে তিনি মুসলিমদের জন্য করতে বলেছে। সর্বদা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করো তার ওপর ভরসা করো।”

তখন আরুহি মুচকি হেসে বলল,,

“প্রত্যেক মুসলিম-ই ইসলাম কে এবং আল্লাহ কে অনেক ভালোবাসে। তবে আমাদের থেকে আমাদের আল্লাহ আমাদের হাজার গুণ বেশি ভালোবাসে। আর আল্লাহ তায়ালা সবরকারী কে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন। আর আমাদের প্রত্যেকের উচিত আল্লাহর আদেশ নিষেধ মেনে চলা। তার আনুগত্য করা এবং তাকে অনেক অনেক ভালোবাসা।

রাসুল সা.বলেছেন-

আল্লাহ তা’আলা বলেন; আমার বান্দা আমার সম্পর্কে যেমন ধারণা করে আমি ঠিক তেমন ধারণা করি।সে যখন আমাকে স্মরন করে তখন আমি তার সাথে থাকি।যদি সে মনে মনে আমাকে স্মরন করে আমিও আমার মনের মধ্যে তাকে স্মরন করি।আর যদি সে কোন সমাবেশে আামাকে স্মরন করে,তাহলে আমি তাকে এর চাইতে উত্তম সমাবেশে স্মরন করি।আর সে যদি আমার দিকে অর্ধ হাত এগিয়ে আসে আমি এগিয়ে আসি তার দিকে এক হাত। আর সে এক হাত এগিয়ে এলে, আমি তার দিকে দু’হাত এগিয়ে আসি।সে যদি আমার দিকে হেঁটে আসে, আমি তার দিকে দৌড়ে যায়।(বুখারী৮/১৭১;মুসলিম ৪/২০৬১)

আরুহির কথা শুনে নাদিয়া হাসলো। ততক্ষনে নাসরিন খান আর রুবিনা খান নিচে আসলো। আর নাদিয়া তাদের সাথে কিচেনে চলে গেল।
________________

দেখতে দেখতে আরুহির বাড়ি যাওয়ার সময় চলে এলো। কাল আরুহি বাড়ি চলে যাবে। এ কয়েকদিনে আরুহি এই পরিবারের সদস্য হয়ে উঠেছে। মিষ্টি তো একয়েকদিন রাতে আরুহির সাথেই থাকতো। ও কাল বাড়ি যাবে বলে সবারই মন খারাপ। এ কয়েকদিনে আরুহি আর আবরার অনেক ভালো সময় কাটিয়েছে । কখনো কখনো একসাথে বাগান বিলাস করেছে কখনো কখনো চন্দ্রবিলাস। দুজন এ মিলে একসাথে কোন টপিক ডিসকাস করেছে। আরুহিকে পড়াশোনার ব্যাপারে সাহায্য করেছে। কিন্তু এতকিছুর মাঝে অবক্ত্য অনুভূতির কথা জানানো হয় নি। আবরার ঠিক করেছে আজ রাতেই আবরার তার মনের অবক্ত্য কথা বলবে। আবরার খাবার শেষ এ একা আরুহিকে বলল,,

“মিস আজকে সন্ধ্যার পর চন্দ্রবিলাশ করতে আসবেন।”

আরুহি বলল,,

“এখন তো পুরো চাঁদটা নেই। তবে বাগানে অনেক ফুল ফুটেছে তাই বাগানবিলাস করতে যাওয়া যায়। ”

“আজকে আপনাকে কিছু কথা বলবো।তাই চাইছিলাম যদি আজকেই বলে দেওয়া যায় তাহলে হয়তো বা ভালো হবে।”

“ওহ আচ্ছা।”

“আসবেন তো?”

“হ্যা আসবো।”

“ধন্যবাদ!”

“”তাহলে ছাদে দেখা হচ্ছে ইনশাআল্লাহ।”

“ইনশাআল্লাহ!”

~চলবে,,

বিঃদ্রঃ আসসালামু আলাইকুম। কাল আরহাম তার মনের অবক্ত্য কথা তার প্রিয়সী কে বলবে যেটার অপেক্ষায় অনেকেই ছিলেন। আজকের পর্ব কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন। ভুল ত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন! ধন্যবাদ!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here