তোর শহরে রেখেছি পা পর্ব -২৫

#তোর_শহরে_রেখেছি_পা
#পর্ব_২৫(বোনাস পর্ব)
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

আরহাম ও তার পরিবার প্রায় একদিন ধরে নিখোঁজ। কাল রাতেই তারা নিখোঁজ হয়েছে। কোথায় আছে কিভাবে আছে কিছুই জানা যাচ্ছে না। সি আই ডির পুরো ফোর্স নেমে করেছে তাদের খুঁজতে। কিন্তু দুর্ভাগ্য বশত এখন A.K কেও কোথাও পাচ্ছে না তারা।পাবে কি করে তারা তো আর জানেনা আরুহিই A.K. এদিকে নাহিয়ান খান সবাই কে যেভাবেই হোক খুঁজতে বলছে। কারন তার মেয়েটা এখন প্রেগন্যান্ট তারওপর তার ছেলে, মেয়ের জামাই, হবু বউ মা বাবা মায়ের সমতুল্য কাকা কাকি! সবাইকে চাপ দিচ্ছে নাহিয়ান খান। এদিকে নাসরিন খান এর কান্না করতে করতে অবস্থা খারাপ।হলেই খুব চিন্তিত আনোয়ার খানের বাড়ির সবাই ঢাকায় চলে এসেছে। আজিম আহমেদের পরিবার ও। কেউ কিছু বুঝতে পারছে না হুট করে এভাবে কেউ কি করে সবাইকে উঠিয়ে নিয়ে যেতে পারে।

_________________

ওদিকে আরহাম, আরুহি, আবরার, আফরিন আনোয়ার খান ও তার স্ত্রী সকলেই একটা গোডাউনে বন্দি। সকল কে চেয়ারে বেঁধে রাখা হয়েছে। আরুহির কপালে কেটে রক্ত জমে গেছে। সকলে আপাতত অজ্ঞান হয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর সবার জ্ঞান ফিরলেও আরুহির জানান ফিরছে না। মাথায় ভালো চোট পেয়েছে সে। আরহাম বোনের অবস্থা দেখে চিৎকার করে ডাকছে,,

“আরু বোন আমার চোখ খোল। বোনু কি হয়েছে তোর চোখ খুলছিস না কেন?’

তখন আবরার বলল,,

“কাল রাতে উনি মাথায় চোট পেয়েছে এই জন্য বোধহয় ওনার জ্ঞান ফিরতে দেরি হচ্ছে।”

“আবরার আমার বোনের কিছু হবে না তো!”

“চোটটা বেশি গাঢ় নয়। ইনশাআল্লাহ তেমন বেশি ক্ষতি হয় নি।”

“কিন্তু কোথা থেকে কি হলো কিছুই তো বুঝতে পারলাম না।”

ফ্ল্যাশব্যাক,,,

সন্ধ্যার পর আবরার আফরিন কে ওর চাচি রুবিনা খানের একটা স্পেশাল তেল দিতে আসে। তখন ওরা পাঁচজন মিলে ড্রয়িংরুমে কথা বলছিল। আবরার আসতে ও নিজেও ওদের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে। হুট করে রুমের সব লাইট অফ হয়ে যায়। তার কিছুক্ষণ পরেই আবার লাইট ফিরে আসে তখন সবার পেছনেই একজন করে লোক ছিল। ওদের সবার হাতে রুমাল ছিল। লোকগুলো ওদের সবার মুখে রুমাল চেপে ধরে আফরিন আনোয়ার খান আর তার স্ত্রী সহজেই অজ্ঞান হয়ে যায়। কিন্তু আরুহিরা নিজেদের শ্বাস আটকে রাখে। আর সেটা নিয়েই কিছুক্ষন ধস্তাধস্তি হয়। তখন একটা লোক আরুহিকে দেয়ালে ধাক্কা মারে। আরুহির কপাল ফেটে রক্ত বের হয় আর ও ফ্লোরে পরে যায়।আর ফ্লোরে কিছুটা রক্ত লাগে। আরহাম আর আবরার ওদের সঙ্গে ফাইট করছিল কিন্তু আরুহির অবস্থা দেখে ওরা দাঁড়িয়ে পরে আর তখন সুযোগ পেয়ে বাকি লোকেরা ওদের দুজনকে ধরে ফেলে। তখন ও আরুহির জ্ঞান ছিল। ওদের সবাইকে এই গোডাউনে আনা হয়। এখানে আনার পর ওদের তিনজনকেও অজ্ঞান করা হয়। তারপর আর কিছু মনে নেই।

বর্তমান,,

“আরে সবাই উঠে পরেছে দেখছি। তা মিস আরুহির কি একটু বেশি ঘুম নাকি?”

কারো শব্দে সবাই তার দিকে তাকালো। মহিলাটি কালো রঙের কাপড় পড়া চুল গুলো খোঁপা করা।NS মুচকি হেসে ওদের সামনে রাখা চেয়ারে বসে পরলো। তার পাশেই নেহমাত শেখ দাঁড়িয়ে আছে। আপতত রুমে আর কেউ নেই।NS এর মুখে মাস্ক আর চোখে সানগ্লাস। তাকে দেখে কেউ ধরতে পারবে না আসলে মাস্ক এর আড়ালে কে। তখন আরহাম বলল,,

“আমাদের এখানে কেন আনা হয়েছে?”

তখন NS বলল,,

“তুমি একজন সি আইডি অফিসার তোমার মুখে এরকম কথা মানায় না। তুমি সব জেনে শুনেও এরকম কথা বলছো। তোমাদের এখানে এনেছি মারার জন্য।’

তখন আনোয়ার খান বললেন,,

“তোমার শত্রুতা তো আমার সাথে তাহলে ওদের কেন মারবে আমাকে ফেলে ফেলো!”

এ কথা শুনে আবরার আফরিন আর আনোয়ার খানের স্ত্রী অবাক হলো কারন এরা তিনজন কিছুই জানে না এর। তখন নয়না শিকদার হেসে বলল,,

“আপনাকে তো আমি মারতে আনিনি দেখাতে এনেছি চোখের সামনে প্রিয়জন হারানোর কি যন্ত্রনা।”

“যতটুকু যন্ত্রনা দিয়েছো তোমার কি মনে হয় ততটুকুতে হয় নি। নিজের ছেলের মৃত্যুর সংবাদ শুনেছি। এতো বছর পর শুনলাম নিজের মেয়েটাও মারা গেছে। একটা বাবার কাছে এর থেকে বেশি যন্ত্রনার কি হতে পারে।”

“আমার কাছে এটুকুতে হয় নি। আমি আপনাকে পৃথিবীর সমস্ত দুঃখ কষ্ট দিতে চাই।”

এদিকে আনোয়ার খানের স্ত্রী কিছুই বুঝতে পারছে না। তার মেয়েটা নেই মানে। তার মেয়ে তো বেঁচে আছে। তখন আনোয়ার গিন্নি বললেন,,

“এসব কি বলছেন আপনি আমাদের মেয়ে নেই। আর এর সাথে আপনার কি শত্রুতা?”

“না নেই আমাদের মেয়েও আমাদের ছেলের মতো আজ থেকে পাঁচ বছর আগে মারা গেছে। এই নয়না আমার মেয়েকে মেরে ফেলেছে।”

“বাহ আপনি আমার নামও জেনে গেছেন এই না হলে বাবা ঠিকই তার মেয়েকে চিনতে পেরেছে!’

এ কথা শুনে আনোয়ার গিন্নি ওখানেই থমকে গেল। কি শুনছে উনি। তখন আওয়াজ আসলো,,

“তা ফুপুমনি আপনার সোনার চাঁদ বদন মুখ খানা আমার দাদি জান কে একটু দেখান।”

“গুড মর্নিং এতক্ষন এ ঘুম ভাঙলো তোমাকে ছাড়াই তো সব কথা হচ্ছিল।”

NS এর কথায় আরুহি হাসলো আর বলল,,

“আপনি আমায় অনেক ভালোবাসেন তাই আপনার কন্ঠ পেয়েই ঘুমটা ভেঙে গেল।”

“তোর ভাই তোকে এত ডাকাডাকি করলো তখন শুনতে পেলি না। আর আমার কথা শুনেই ঘুম ভেঙে গেল!”

“ঐ যে বললাম আপনি আমায় খুব ভালোবাসেন তাই।”
আপাতত আমার ভাবির জন্য নাস্তা আনুন আমার ভাতিজা ভাতিজি না খেয়ে আছে। ”

“তোর ভয় করছে না। একটু পরেই তোদের সব কটা কে মেরে ফেলবো আর তুই এখন আফরিনের জন্য খাবার চাইছিস। ”

“মরবে যখন একটু খেয়ে দেয়েই মরুক। আপনার কথা শুনে তো আর তাদের পেট ভরবে না।”

“আমার মাথা গরম করাবি না কিন্তু!”

“আপনার বদন খানি এখনো কিন্তু আমার দাদি জান দেখলো না। একটু দেখান। দাদিজান ইনি হচ্ছে তোমার সৎ মেয়ে নয়না শিকদার ওরফে NS আগে তার চেহারা অন্যরকম ছিল আপাতত সে তোমার আপন মেয়ের আখি খানের চেহারা নিয়ে আছে।”

এ কথা শুনে নয়না শিকদার মুখের মাস্ক সরিয়ে হেসে বলল,,

“সব জেনে বসে আছিস দেখছি। তারমানে তোর মা তোদের কাছে সব রেখেই গিয়েছিল। অথচ আমি ভাবতাম তোরা কিছুই জানিস না। এই জন্যই তোদের এতকাল বাচিয়ে রেখেছি। নাহলে যেদিন জানলাম মাহামুদের ছেলেমেয়ে আছে সেদিনই তোদের মেরে ফেলতাম। যাগ গে কিন্তু যখন জানলাম নেহমাত কে তোরা পুলিশে ধরিয়ে দিলি তখন বুঝতে পারলাম তোরা সব জানিস। তাই একটু সময় নিলাম সব স্বাভাবিক করতে নাহলে সেদিন ই তোদের উরিয়ে দিতাম।”

“ওহ আচ্ছা!”

“তোকে যতই দেখি ততই অবাক হই তা তোদের বন্ধু A.K কোথায় ও আসা না পর্যন্ত যে তোদের মেরেও শান্তি পাব না। ও আমাকে থ্রেট দিয়েছিল। আমাকে নাকি ধরবে। তোদের মারার পর আসবে নাকি।”

“A.K তার সময় হলে আসবে। আপনার ওতো টেনশন করতে হবে না। মনে করুন সে আমাদের আশেপাশেই আছে। ততক্ষনে আপনি আমার ভাবির জন্য নাস্তা আনুন।”

“এই তোরা কি হোটেলের এসেছিস নাকি যে খাবার চাইলেই তোদের খাবার দেব।”

এদিকে আফরিন আনোয়ার গিন্নি অবাক চোখে নয়না শিকদার এর দিকে তাকিয়ে আছে। তখন আনোয়ার গিন্নি বলল,,

“তারমানে তুমি উনার প্রথাম ভালোবাসার মেয়ে। যাকে এই মানুষটা এখনো ভালোবাসে!”

“কি বললেন ভালোবাসে। ভালোবাসে উনি মাঝরাস্তায় আমার মাকে ফেলে গেল কেন? আমার মা তো তার হাত ধরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছিল। কিন্তু সে কেন মাঝপথে আমার মায়ের হাত ছেড়ে দিলো।”

“বিশ্বাস করো তোমার বাবা আজও তোমার মাকে ভালোবাসে। সে আমাকে দায়িত্ব এর জন্য কখনো অবহেলা করেন নি। আমাকে আমার প্রাপ্য টুকু দিয়েছেন। কিন্তু আজও তার মনে তোমার মা আছে!”

“হাসালেন আমাকে কাউকে ভালোবেসে আরেকজনের সাথে সংসার করা যায়।”

তখন আরুহি বলল,,

“সেটা তো আমি আপনার মাকেও বলতে পারি। আপনার মা ও তো দাদুভাই কে ভালোবেসে আপনার ভাইয়ের বাবাকেও বিয়ে করেছে। এবং এর পরে নওশাদ শিকদার ও আসতো না।”

এ কথা শুনে নয়না শিকদার চুপ মেরে গেলো। তখন আরুহি মুচকি হেসে বলল,,

“সত্যি কথা সবসময় তিক্তই হয় বুঝলেন ফুপুমনি।”

“তাহলে তো বলবো নেহমাত ও তোমার ফুপিকে ভালোবাসেনি। নেহমাত কে আমি আমার সব বলেছি। সে আমাকে মেনে নিয়েছে। এটাও বলেছি আমি ওর ভালোবাসা আঁখিকে মেরে ফেলেছি তবুও ও আমাকে ভালোবাসে এখন এই পাঁচবছর এ নাকি ও আমার সাথে থাকতে থাকতে আমাকে ভালোবেসেছে।”

আরুহি মুচকি হেসে নেহমাত শেখের দিকে তাকালো। নেহমাত শেখ ও ওকে দেখে হাসলো। তখন নয়না শিকদার বলল,,

“তোমাদের যখন মেরেই ফেলবো তার আগে একটা গেম খেলি ঠিক আছে। আমি এখানে দুটো রিভলবার রাখবো খুলে তুমি আর আমি গেমটা খেলবো যে আগে রিভলবার ঠিক করতে পারবে সে একটা গুলি করতে পারবে। আর ঠিক করেই গুলি করতে হবে।”

আরুহি রিভলবারের দিকে তাকালো। কিন্তু কিছু বলল না। তখন আরহাম বলল,,

“গেমটা আমি খেলি!”

“আরে আমি পাগল নাকি। তুই তো সি আইডি অফিসার তুই তো সহজেই রিভলবার ঠিক করতে পারবি তোর বোন তো এগুলো জানেনা।”

তখন আরুহি বলল,,

“আমিই খেলবো।”

আসলে আরহাম একটু ট্রিক খাটালো।আরুহির হাতের বাঁধন খুলে দেওয়া হলো। আরুহিই যে A.K সেটাতো নয়না শিকদার জানেনা। আরুহি আর নয়না শিকদার মুখোমুখি চেয়ারে বসে আছে তাদের সামনে একটা টেবিল রাখা আর তাতেই রিভলবার রাখা। নয়না শিকদার বলল,,

“আমাদের সময় শুরু এখন ” আরুহি প্রথমে ভুলভাল করছিল তা দেখে নয়না শিকদার হাসলো। আর নিজে আস্তে আস্তে এক এক করে রিভলবার লাগাতে লাগলো। নয়না শিকদার বলল,,

“একজন পুলিশ অফিসার এর মেয়ে, একজন সি আই ডি অফিসার এর বোন হয়ে এটা খুব সহজেই করে ফেলা উচিৎ ছিল।এখনি তো আমার হাতের গুলি,,,

নয়না শিকদার আর কিছু বলতে পারলো না। তার আগেই আরুহি ওনার হাতে গুলি করে দিয়েছে। নয়না শিকদার হাত ধরে আরুহির দিকে তাকালো। তখন আরুহি মুচকি হেসে বলল,,

“সামনের জন একটু ভুল করছে দেখে কখনোই তাকে দূর্বল ভাবা উচিৎ নয়। আর একটা কথা কনফিডেন্স ভালো ওভার কনফিডেন্স একদম ভালো নয়।”

“সামনের জনকে আহত দেখে তাকে দূর্বল ভাবা উচিৎ নয়।”

নয়না শিকদার রিভলবার ওঠালো। তখন আরুহি দৌড়ে গিয়ে তাকে ধরলো। তার হাত থেকে রিভলবার ফেলে দিল। গুলির আওয়াজ পেয়ে বাইরে থেকে কতো গুলো গার্ড এলো। তখন আরহাম আর আবরার উঠে নিজেদের রিভলবার বের করে তাদের গুলি করলো। তারপর বাইরে গিয়ে দেখে দেখে সব কটাকে গুলি করলো। ওদের রিভলবার ওদের কাছেই ছিল। আর গিয়ে দরজা আটকে দিয়েছিল যাতে বাইরের কেউ ভেতরে ঢুকতে না পারে। আসলে ওরা শুধু হাত দুটো পেছনে রেখেছিল। ওদের বাঁধন নেহমাত শেখ আগে এসেই খুলে দিয়েছিলেন। নয়না শিকদার কে আরুহি চেয়ারে বেঁধে ফেললো। আরুহি তার সামনে বসল। তারপর কানে কানে ফিসফিস করে বলল,,

“আপনার A.K কে খুব দেখার ইচ্ছা ছিল তাই না। আমিই হলাম A.K তোকে জানতে দেয় নি তাই । তুই গভীর জলের মাছ হলেও আমি তার থেকেও গভীর জলের মাছ। তোর কথা মতো একজন পুলিশ অফিসার এর মেয়ে হয়ে সি আই ডি অফিসার এর বোন হয়ে কোন কিছু হবো না তাই হয় নাকি।”

আরুহি মুচকি হেসে ওনার থেকে সরে এলো। তখন নয়না শিকদার চিৎকার করে বলল,,

“আমি তোকে ছাড়বো না।”

“আগে নিজে তো ছাড়া পা তারপর বলিস। জানিস তোকে কেন এখানে মারলাম না। কারন তোকে এখনো অনেক জিনিস জানানোর বাকি আছে। তাছাড়া তুই কতো মানুষের ক্ষতি করেছিস। আমার প্রিয়জনদের মেরেছিস। তোর মৃত্যু কি এতো সহজে দেব নাকি। তুই কি যেনো বলেছিলি নেহমাত শেখ ফুপি কে ভালোবাসেনি এখন তোকে ভালোবাসে এটা তোর ভুল ধারণা ফুপা আজও তার ভালোবাসা আখি খান কে ভালোবাসে। তোকে না আর তুই যে আখি খান কে মেরেছিল এটাও জানে। তোকে ধরার জন্যই তোর সব কথায় সেই রাজি হয়েছে। ”

নেহমাত শেখ নয়নার সামনে দাঁড়িয়ে একটা চড় মারলেন। আর বললেন,,

“তোর জন্য আমার জীবনে অভিশাপ নেমে এসেছে আর তুই ভাবলি আমি তোকে ভালোবাসি। আমার জীবনের সবথেকে নিকৃষ্ট মানুষ হচ্ছিস তুই। তোকে আমি ঘৃনা করি তোর জন্য আমার সব শেষ হয়ে গেছে। তুই আমার অফিসে ড্রাগ ঢুকিয়েছিলি আর ব্ল্যাকমেইল করে ছিলি যদি তোর কথা মতো যদি না চলি তাহলে তুই পুলিশ কে সব জানিয়ে দিবি। তোর একটা জিনিস আমার ভালো লেগেছে তুই আমার সাথে রাত কাটাস নি। তুই অন্য ঘরে থাকতি আর আমি অন্য ঘরে। তুই যে আমাকে ভালোবাসিস সেটা A.K আমাকে আরো কয়েকমাস আগেই বলেছে।

ফ্ল্যাশব্যাক,,

মিস্টার নেহমাত শেখ আপনার আরেকটা ভুল,হলো NS কলেজ জীবনে আপনাকে ভালোবাসাতো। সে আপনাকে প্রপোজ ও করেছিল কিন্তু আপনি তা গ্ৰহন করেন নি। কারন আপনি আখি খান কে ভালোবাসতেন। সেই জন্য তিনি আরো আপনাকে বেছে নিয়েছে। আর আজ থেকে পাঁচবছর আগে আঁখি খানের যে এক্সিডেন্ট হয়েছিল সেই এক্সিডেন্ট টা তিনিই করেছিল। সেখানে আঁখি খান না মারা গেলেও হাসপাতালে ঢুকে তাকে মেরে ফেলে। আর তখনি NS তার মুখ পাল্টিয়ে আপনার সাথে থাকতে শুরু করেন। তার কয়েকদিন পরেই আপনার এক্সিডেন্ট হয়। তারপর আপনি বিদেশে চলে যান।

বর্তমানে

সব শুনে আমরা প্ল্যান করি তোকে ধরার। ওরা জানতো তুই আমাকে জেল থেকে বের করবি। তুই বের করলি কিন্তু অনেক দেরি করে কিন্তু আমরা অপেক্ষা করেছি প্ল্যান চেন্জ করিনি। ওদের প্ল্যান মোতাবেক আমি তোর সব কথা মানি। তুই ও তোর সব কথা আমাকে বলিস আমি সেগুলো রেকর্ড করে ওদের পাঠিয়ে দিয়েছি। সেগুলো হয়তো বা আজ লাইভ টেলিকাস্ট হচ্ছে। আমি এসে আগে আমার মেয়েকে জানাই। তুই আমার ভালোবাসা কে মেরেছিস আমি কি করে তোকে ভালোবাসবো রে।আর এখন যে তুই এখানে ওদের আটকে রেখেছিস সেটাও হয়তো টের পেয়ে গেছে সি আই ডি। এই তো এলো বলে।”

“তোরা আমার ওপর দিয়েও গেম খেলেছিস।”

তখন আরুহি বলল,,

“তবে একটা কথা মানতেই হবে। তুই ফুপাকে অনেক ভালোবাসিস এই জন্যই তো কোনদিন কাউকে বিয়ে করিস নি। যাই হোক তুই যে আজ এখানে আমাদের কিডন্যাপ করবি সেটা তোর গুনধর কন্যা রুহানি আগেই জানিয়ে দিয়েছে। রুহানিকে ফুপা জানালে পরের দিন আমার সাথে দেখা হয়। সব বলে আমি ওকে বলি তোমার ওপর নজর রাখতে কি করো না করো পরবর্তী প্ল্যান কি সব। আমার কথা মতো রুহানি তোমার ওপর নজর রাখে। তাছাড়া আরেকজন তোমার ওপর নজর রাখছিল। দ্যা গ্ৰেট স্পাই অফিসার N.A ওরফে নিশান আবরার। সে সব জেনে তেলের বাহানায় আমাদের বাড়িতে আসে যাতে সেও এখানে আসতে পারে আমাদের সাথে। তোর ওপর তার অনেক রাগ কারন তোর জন্য ওনার বাবার সাথে সম্পর্ক নষ্ট হয়েছে।

তখন আবরার বলল,,

“যাক ফাইনালি আমি আপনাকে পেয়েই গেলাম NS আপনাকে পাওয়ার জন্য আমি এত কষ্ট করেছি কি বলবো। ততটা কষ্ট আমি আমার বউকে পাওয়ার জন্য ও করিনি।”

তখন আফরিন বলল,,

“এই দারাও ভাইয়া আমিও একটু বলি। আমি কিছু না বলে কি আমি কিছু বলতে পারবো না। শুনুন সৎ ফুপি শাশুড়ি। আমি জানতাম আপনি আমাদের ধরে আনবেন। এই জন্যই ফুপাকে দিয়ে আমার জন্য খাবার এনে রেখেছিল। আপনি এখানে আসার অনেক আগেই আমাদের সবার জ্ঞান ফিরে এসেছিল তখন আমরা সবাই সকালের নাস্তা খেয়ে নিয়েছি। আর আপনি বোকা কিছুই ধরতে পারেন নি।”

“হয়েছে এবার এখন নেওয়াজ আহমেদ কে ফোন করো আর এটাও বলো আমরা কোথায় আছি!”

তখন আরহাম বলল,,

“আমাদের ফোন তো সবগুলো বাড়িতে ফেলে এসেছি।”

তখন নেহমাত শেখ বলল,,

‘আমার কাছে আছে !এই নাও!”

“আপনি পালাবেন না।”

“জীবনে অনেক পাপ করেছি। সেটার শাস্তি তো পেতেই হবে। আমি পালাতে চাই না আর। জীবনে অবশিষ্ট আর কিছুই নেই। শুধু রুহানি কে তোমরা একটু দেখে রেখো। মেয়েটার মে কেউ নেই একদম এতিম।”

আরহাম ফোন নিয়ে নেওয়াজ আহমেদ কে ফোন দিল। প্রায় আধাঘণ্টা ঘন্টা পর সবাই সেখানে পৌঁছে গেল। আজ সবাই খুব খুশি NS কে ধরতে পেল। একটা অফিসার NS কে নিতে লাগলো হুট করে একটা রিভলবার নিয়ে আরুহির দিকে তাক করলো। তখন নেহমাত শেখ নয়না শিকদার কে তিনটা গুলি করলো।নয়না শিকদার ওখানেই মারা গেল। কারন সে নয়না শিকদার কে পর্যবেক্ষণ করছিল। যখন দেখলো সে শাড়ির ভাঁজ থেকে রিভলবার বের করছে। তখন সে পুলিশের থেকে একটা রিভলবার নিয়ে তাকে গুলি করে। একটা কথা আছে পাপ তার বাপকেও ছাড়ে না।
সবাইকেই তার কৃতকর্মের শাস্তি ভোগ করতে হবে।

হুট করে এসব হওয়াতে সবাই হতভম্ব হয়ে গেল। তখন নেহমাত শেখ বলল,,

“আরহাম তোমাদের বলেছিলাম না। আমি তাকে মারতে চাই। দেখো আল্লাহ তায়ালা আমার শেষ ইচ্ছা টা পূরন করেছে। আমি নিজ হাতেই তাকে মারতে পেরেছি। এবার আর কেউ তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না।”

তখন আরুহি বলল,,

“ফুপা আরো একজন বাকি আছে। তাকে ধরতে পারলেই সব শেষ। আমাদের আর কেউ কোন ক্ষতি করতে পারবে না।”

“মানে?”

পুলিশ, সি আই ডি প্রেস সব এখন এখানেই। সবাই সেটাকে লাইভ টেলিকাস্ট করেছে। সবার পরিবারের সকলেই সেখানে আছে তখন আরুহি আহমদ খানের সামনে গিয়ে বলল,,

একজন আদর্শ সন্তান, একজন আদর্শ ভাই। আপনাকে একটা স্যালুট মারতে ইচ্ছে করছে।

~চলবে,

বিঃদ্রঃ দিয়ে দিলাম বোনাস পার্ট। যদিও একটু ছোট হয়েছে। তবে যেটুকু পেরেছি সেটুকু দিয়েছি। কাল আবরার আর আরুহির বিয়ে হতে পারে। আপনাদের সবার দাওয়াত রইল। আর NS এর পতনটা কেমন লাগলো সেটাও জানাবেন। ভুল ত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here