তোর শহরে রেখেছি পা পর্ব -২৬

#তোর_শহরে_রেখেছি_পা
#পর্ব_২৬
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

“একজন আদর্শ সন্তান, একজন আদর্শ ভাই আপনাকে আমার একটা স্যালুট মারতে ইচ্ছে করছে। আসলে আপনি যেমন দেখান আদোও কি আপনি তাই চাচাজান।”

সবাই আরুহির কথা শুনে অবাক। আনোয়ার খান নির্লিপ্ত ভাবে আরুহির দিকে তাকিয়ে আছে। আনোয়ার গিন্নির যেনো কোন অনুভূতিই নেই। ওনার মেয়ে মারা গেছে শোনার পর উনি অনুভূতিশূন্য হয়ে পরেছে। ওনার আশেপাশে কি হচ্ছে উনি কিছুই বুঝতে পারছেন না। আনোয়ার খান ওনাকে ধরে আছে। আরহাম আর আনোয়ার খান ছাড়া কেউ আরুহির কথার মানে বুঝতে পারছে না। এদিকে আহমদ খান এমন ভাব করছেন যেনো কিছুই জানেন না। আহমদ খান বললেন,,

“আরুহি তুমি কি বলছো আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।”

“এতদিন যে সবাই জানতো মেন ভিলেন NS আদও কি তাই। মেন ভিলেন তো ছিলেন আপনি। হ্যা যদিও অবৈধ কিছুর সাথে জড়িত ছিলেন না। কিন্তু বাবা ফুপির মৃত্যুর কারন আপনি ছিলেন। আপনার এত সম্পত্তির লোভ আমার বাবাকে বলতেন ফুপিকে বলতেন তারা আপনাকে দিয়ে দিত। আপনার ভয় ছিল বাবাকে আর ফুপি কে আনোয়ার খান বেশি ভালোবাসেন তাই সম্পত্তির বেশি টুকু না তাদের দিয়ে দেয়। তার জন্য বাবাকে বুদ্ধি করে বাড়ি থেকেই বের করে দিলেন। তারপর বাবাকে আর ফুপি কে দুনিয়া থেকেই । আমার বাবার সাথে দাড়িয়ে ছিলেন একজন আদর্শ ভাই হয়ে। আমার বাবা আপনাকে কতটা শ্রদ্ধা করতো ভালোবাসাতো আপনি নিজেও জানেন না। আমার বাবা জানালো আপনি তার সাথে আছেন। অথচ আপনি বাবার সাথে ছিলেন যাতে বাবা দাদুভাই এর থেকে আলাদা হয়ে যায়। আর সম্পত্তির মালিক আপনি হয়ে যান। যখন জানতে পারলেন NS আপনাদের ক্ষতি করতে চায় তখন আপনি NS এর সাথে হাত মেলালেন আর কেউ NS কে না দেখলেও আপনি তার দেখা পেয়েছিলেন। তার খান বাড়িতে একজন দরকার ছিল তাই সে আপনার সাথে যোগাযোগ করে। আপনিই এতদিন ওনাকে বুদ্ধি দিয়েছিলেন কিভাবে বাবাকে আর ফুপি কে মারা যায়। আর এটাও বুদ্ধি দিলেন আখি খানের চেহারা নিয়ে বাঁচলে কেউ কোনদিন তাকে আর আপনাকে ধরতে পারবে না। এই জন্য NS এর থেকে মোটা অঙ্কের টাকাও পেতেন। সবসময় আনোয়ার খানের কাছে একটা আদর্শ সন্তান হয়ে ছিলেন। যাতে সবকিছু আপনার হয়ে যায়। যখন আমাদের কথা জানতে পারলেন তখন ভালো মানুষের নাটক করলেন আমাদের আপনি কতো ভালোবাসেন যদিও এখানে সত্যতা ছিল না। এতো ভালোবাসার পরও আপনি আমাদের বললেন এখানে থাকা তোমাদের জন্য সেফ হবে না‌। তোমরা নিজেদের জায়গায় ফিরে যাও। অথচ আমরা আমাদের পরিবারের কাছেই সেফ ছিলাম। এই জন্যই আমি আর ভাইয়া আবার ঢাকায় ফিরে এসেছিলাম। আপনাকে যতই দেখতাম ততই অবাক হতাম কারন সবার ওপর অ্যাটাক হলেও আপনার ওপর কেন হলো না। তারপর দেখা গেল ঢাকায় আঁখি খানের চেহারা NS এর সাথে কথা বলতে। আপনার দূর্ভাগ্য আপনি আমাদের দেখতে পান নি। সেদিনই বুঝতে পেরেছিলাম সবকিছুর সাথে আপনি ছিলেন। আল্লাহ তায়ালা আল কোরআন এ বলেছেন,,
তোমরা তো প্রাধান্য দাও কেবল পৃথিবীর এই (বৈষয়িক) জীবনটাকে অথচ পরকালীন জীবনটাই উত্তম এবং স্থায়ী— অনন্তকাল
— সূরা আল ‘আলাঃ১৬-১৭”

আপনি পৃথিবীটাকে দেখলেন কিন্তু পরকালের কথা ভাবলেন না। এখনো সময় আছে নিজেকে শুধরে নিন রবের কাছে তওবা করুন ফিরে আসুন। ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তায়ালা আপনাকে সঠিক পথ দেখাবেন।

সব শুনে আহমদ খান ভয় পেয়ে গেল। তিনি আনোয়ার খানের সামনে গিয়ে বলল,,

“বাবা আরুহি সব মিথ্যে বলছে আমি এসব কিছুই করি নি। আর আমি তো নয়না কে চিনিও না।”

তখন আরহাম হেসে বলল,,

“NS এর নাম যে নয়না সেটা আপনি জানলেন কিভাবে?”

আহমদ খান হকচকিয়ে গেল। আর বলল,,

“বাবা আমি,,

আর কিছু বলার আগেই আনোয়ার খান সজরে একটা থাপ্পর মারলো। আর বলল,,

‘আর কতো মিথ্যে বলবে আহমদ। তুমি যে আমার সংসার শেষ করার পেছনে আছো সেগুলো আমি সেদিনই বুঝতে পেরেছিলাম। তাই তো আমি ঢাকায় এসেছিলাম। তুমি ফোনে নয়নাকে বলছিলে আরহাম আরুহিকে মেরে ফেলতে যার জন্য তুমি আঁখি কে মাহমুদ কে মেরে ফেলতে বলেছিলে। এখন আমি ওদের খুব ভালোবাসি তাই ওদের কে সম্পত্তির ভাগ দেব। তাই ওদের মেরে ফেলার দরকার। সে বলেছিল আমাকে আর তোমার মাকে তার কাছে পৌঁছে দিতে কিন্তু তুমি না করেছিলে। তোমার সব কথাই আমি শুনেছি আহমদ। আমি এখানে এসেছিলাম আমার নাতি নাতনিকে বলতে আর বাঁচাতে।এবার বলো তুমি কি বলবে। অফিসার ওকে নিয়ে যান। হ্যা ও নিজ হাতে খুন করে নি কিন্তু খুন করতে বলেছিল আর আজ এখানে যা হলো সব প্ল্যান এই আহমদের। কেন করলে এসব এসব কি করে কি লাভ হলো তোমার এখন তো সারাজীবন ঐ গাড়দের পেছনে থাকতে হবে।

আহমদ খান আর কিছু বললেন না। মাথা নিচু করে ফেলল।সব তো জেনেই গেছে। তখন শিহাব গিয়ে ওর বাবাকে বলল,,

“কেন করলে বাবা এসব!”

“শিহাব আমি তোর ভালোর জন্যই করেছি এসব। তুই যাতে সবকিছুর মালিক হোস। আমার ভয় হতো বাবা আমার থেকে বেশি ওদের ভালোবাসতো সম্পত্তির বেশি টুকু ওদের দিয়ে দেবে।তাই আমার পথ থেকে ওদের সরিয়েছি এর আর আরুহি আর আরহাম কেও বাবা অনেক ভালোবাসে তাই আমি ওদের সরিয়ে দিতে চেয়েছিলাম যাতে সব সম্পত্তি তোর হয়। ”

” তুমি দাদুভাইয়ের ওদের প্রতি ভালোবাসা দেখলে। আমার প্রতি দাদুভাই এর ভালোবাসা দেখলে না। দাদুভাই কি আমাকে ভালোবাসে না। আমার ভালো করতে কে বলেছিল তোমায়‌। আমি তো যা ছিল তাই নিয়ে ভালোই ছিলাম আমার তো কোন চাহিদা ছিল না তাহলে। ”

আহমদ খান কিছু বললেন না। পুলিশ ওনাকে নিয়ে চলে গেল। তখনি আরুহির মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো। আরহাম আরুহির পাশেই ছিল ও ওকে ধরে ফেলল। আর বলল,,

“বোনু ঠিক আছিস?”

“মাথাটা ভার লাগছে!”

তখন আবরার একটা ফার্স্ট ট্রেড বক্স নিয়ে এলো। আরহাম আরুহিকে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিল। আবরার খুব যত্ন করে আরুহির কপাল পরিস্কার করে ব্যান্ডেজ করে দিল। আর বলল,,

“সরি মিস আমি নিজেকে কথা দিয়েছিলাম সেদিনের পর আপনাকে আর ব্যাথা পেতে দেব না। কিন্তু আমি আমার কথা রক্ষা করতে পারি নি।”

“এখানে আপনার তো কোন দোষ নেই। এটা যাস্ট একটা এক্সিডেন্ট।”

“আমার আরো সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। আপনাকে বলে বোঝাতে পারবো না আপনার এই ছোট চোট টাই আমাকে অনেক পীড়া দিচ্ছে।”

আরুহি কিছু বললো না মুচকি হাসলো। আর উঠে গিয়ে আনোয়ার খান ও তার স্ত্রী কে জরিয়ে ধরে বলল,,

“আজ থেকে আপনারা আমাদের সাথে থাকবেন। আপনার ছেলের বাড়িতে থাকবেন। আমাদের বাড়িতে বড় কেও নেই কয়েকদিন পর আমাদের বাড়িতে নতুন দুজন অতিথি আসবে। তাদের তো আপনাদেরকেই দেখতে হবে। দাদিজান তুমি মনে করবে তোমার ছেলে বউমা আবার ফিরে আসছে।”

আনোয়ার গিন্নির চোখ থেকে দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পরল। তিনি বললেন,,

“হুম থাকবো তোদের সাথেই থাকবো। সব তো হাড়িয়েছিই এবার না হয় শেষ বয়সটা আরহামের ছেলে মেয়ের সাথে কাটিয়ে দেব।আপনি কি বলেন?”

তখন আনোয়ার খান বললেন,,

“আমার কিছুই বলার নেই। আমার এখন ও বাড়িতে যেতে ইচ্ছে করছে না। তুমি বলেছিলে না তাকে ভালোবেসেও কেন তোমাকে এত আপন করে সংসার করছি। কারন তুমি এমন একজন মানুষ যার ব্যক্তিত্ব দেখে আমি দ্বিতীয় বারের মতো প্রেমে পরেছিলাম। তোমাকে যখন সব জানালাম তখন তুমি আমাকে বলেছিলে তুমি তার জায়গা নেওয়ার চেষ্টা করবে না। তুমি নিজে আমার কাছে জায়গা করবে। তুমি তোমার ব্যক্তিত্ব দিয়ে সহজেই আমার কাছে জায়গা নিতে পেরেছো। হ্যা প্রথম প্রথম তোমায় মানতে আমার একটু কষ্ট হয়েছিল তোমায় আমি মেনে নিয়েছিলাম তার জন্য একটু দুঃখ ছিল একটু অনুতপ্ত ও ছিলাম। কিন্তু যখন শুনলাম সে বিয়ে করে নিয়েছে। তারপর নিজের অনুতপ্ত তা থেকে বেরিয়ে এসেছি তারপর থেকেই আমি আর তোমার থেকে দূরে থাকি নি।তোমার প্রাপ্যটুকু ভালোভাবেই পালন করেছি।”

তখন শিহাব এসে বলল,,

“আমার বাবা এরকম একটা কাজ করেছে বলে তোমরা আমাদের ছেড়ে থাকবে দাদুভাই?”

“আমরা বাড়ি যাবো তো? এখন আরহামদের আমাদের প্রয়োজন। ”

তখন আরহাম বলল,,

“শিহাব ভাইয়া তোমরাও আমাদের সাথে থাকো না?”

“না আরহাম সেটা হয় না। ওখানে অনেক কাজ আছে। বাবা তো এখন নেই পুরো খান ইন্ড্রান্টিজ এর দায়িত্ব আমার ওপর। দাদুভাই আর দাদিজান তোদের এখানে থাকুক যখন তাদের ইচ্ছা হয় আমাদের সাথে থাকবে।”

তখন শায়লা খান আরুহিদের কাছে মাফ চাইলো। কিছুক্ষণ মেলোড্রামা হলো। আরহাম সকল কে ওদের বাড়ি নিয়ে এলো। আপাতত সকলে আরহামদের বাড়িতে নাসরিন খান মেয়েকে দেখেই জরিয়ে ধরে কান্না করছিলেন। আবরার কেও জরিয়ে ধরতে চেয়েছিল কিন্তু আবরার আগেই ওনার থেকে সরে গিয়েছেন। নাসরিন খান অসহায় দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে ছিল কিন্তু তাতে যেনো ওর কিছু যায় আসে না। আরুহি সবাইকে পর্যবেক্ষন করে বলল,,

“সবাই যখন এখানেই আছেন তাহলে আমি একটা কথা বলি। যা হওয়ার ছিল তা হয়ে গেছে। এখানে আমাদের কোন হাত ছিলো না। আমাদের তকদিরে যা লেখাছিল তাই হয়েছে। তাই সবাই মনে করুন আমাদের জীবনে এটা একটা দূর্ঘটনা ছিল। আমি জানি চাইলেই সব ভোলা যায় না। তবুও আমরা চেষ্টা করলে এটা থেকে বেরিয়ে আসবো।”

তখন আনোয়ার খান বললেন,,

“তুমি আসলে কি বলতে চাইছো?”

“আজ থেকে ঠিক পনেরো দিন পর আমার আর মিস্টার নিশান আবরার এর বিবাহ। ”

তখন আরহাম বলল,,

“নিজের বিয়ের কথা বলতে একটুও লজ্জা পাচ্ছিস না।”

“সবার মুড দেখে নিজেই নিজের বিয়ের কথা বললাম। আর এই পনেরো দিন সবাই এখানেই থাকবে। শুধু শিহাব ভাইয়া কুমিল্লায় গিয়ে তার বিজনেস। ম্যানেজার আংকেল কে বুঝিয়ে দিয়ে আসবে।”

সবাই আরুহির কথায় সম্মতি জানালো। তখন আবরার বলল,,

“আমি একটা কথা বলতে চাই?”

তখন নাহিয়ান খান বললেন,,

“হুম বলো কি বলতে চাও।”

“আমি আমার বিয়েটা ঘরুয়া ভাবে করতে চাই। শুধু আমাদের আত্মীয় স্বজন দের নিয়ে। আমি চাইনা বাইরের কেউ আমাদের বিয়েতে থাকুক। ”

“আমার একমাত্র ছেলে তুমি আমি এভাবে সাদামাটা ভাবে তোমার বিয়ে দেব!আমি তো চেয়েছিলাম ধুমধাম করে তোমাদের বিয়ে দিতে।

“সরি আপনার কথা রাখতে পারলাম না। আমি সিম্পল ভাবেই আমার বিয়েটা করতে চাই। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,,
“যে বিয়েতে খরচ কম এবং সহজ হয়, সে বিয়ে বরকতময় হয় ।”
— মিশকাত ২৬৭”

নাহিয়ান খান এ কথার উত্তরে কিছুই বলতে পারলেন না। সবাই আবরার এর কথায় সম্মতি জানালো। আরুহি বেশ খুশি এই বিষয়ে । অতঃপর সবাই দুঃখ ভুলে আরুহি আর আবরারের বিয়ে নিয়ে আলোচনা করলো। নাহিয়ান খানরা সকলে সন্ধ্যার পর বাড়িতে চলে গেল। আবরার আজ অনেক খুশি অবশেষে তার প্রিয়জন কে সে হালাল ভাবে পাবে । শিহাব আর রুপা বাড়িতে চলে গেছে শায়লা খান ও জোর করে চলে গেছেন কারন তিনি আরহাম দের সাথে থাকতে লজ্জা বোধ করছে। সবাই ওনার অবস্থা বুঝতে পেরে আর না করেনি। তবে তিনি তিনদিন আগে এসে পারবেন বলে জানিয়েছে। আবরার যাওয়ার আগে আরুহির সাথে ছাদে কথা বলেছে বিকেলে। হুট করে আবরার আরুহিকে বলল,,

“মিস একটু ছাদে চলুন আপনার সাথে কথা আছে!”

আরুহি ছাদে আসতেই আবরার বলল,,

“ধন্যবাদ মিস এতো তাড়াতাড়ি আমার অপেক্ষার অবসান ঘটানোর জন্য।”

“আসলে আমি আরো দুই মাস সময় নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পরিস্থিতির জন্য একটু এগিয়ে আনলাম। পরিস্থিতি দেখে মনে হলো এখন একটা কিছু করা উচিৎ যাতে সবার মন ভালো হয়ে যায়। তাই আমাদের বিয়ের কথা মাথায় এলো।”

“ভালো করেছেন। কিছু কিছু জিনিস আমাদের হাতে থাকে না। সময়ের সাথে আমরা সেই জিনিসের সাথে জরিয়ে যাই। ”

“হুম!”

“ধন্যবাদ মিস আমার জীবনে এতো সুন্দর ভাবে আসার জন্য। তা আজকের এই মুহূর্তে আপনার আমায় নিয়ে অনুভূতি কি মিস?

“আপনি সবসময় আমার আপনার প্রতি অনুভূতি কি সেটাই জানতে চান কেন?”

“মানসিক শান্তির জন্য। আপনার আমার প্রতি কি অনুভূতি সেটা আমার মস্তিষ্ক জানতে চায় ।আজ তো আমাদের বিয়েও ঠিক হয়ে গেছে।”

“আপনি আর আপনার মস্তিষ্কের অদ্ভুত চাওয়া তা বেশ বলছি।
পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষের ভালোলাগার কিছু অনুভূতি রয়েছে যে অনুভূতি গুলোর মাধ্যমে মানুষ নিজের ভালো লাগা বা ভালোবাসা প্রকাশ করে থাকে। পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষের ভালোলাগার অনুভূতি গুলো তাদের প্রিয় জনদের জন্যই হয়। প্রতিটি মানুষের মনের মধ্যে প্রিয় জনদের জন্য একটি টান বা মায়া তৈরি হয় যেখান থেকে তাদের প্রতি ভালো লাগা ও ভালোবাসার সৃষ্টি হয়। ভালো লাগার অনুভূতি থেকেই ভালোবাসার সৃষ্টি হয়। ভালোলাগার অনুভূতি আছে বলেই পৃথিবীতে আজও সম্পর্কগুলো এত সুন্দর ভাবে টিকে আছে।

“আপনি সরাসরি ভাবে কিছুই বলতে পারেন না। ভালোলাগা থেকে ভালোবাসার সৃষ্টি হয় এখানে এতো বড় রচনা না বলে দু লাইনেই তো বলে দিতে পারেন আমি আপনাকে ভালোবাসি।”

“সঠিক সময় এলে সব হবে!”

“আমি কিন্তু আমার অনুভূতি প্রকাশে হেঁয়ালি করিনি কিন্তু আপনি করছেন!”

“মাঝে মাঝে হেয়ালি করতে মন্দ লাগে না।”

“ওকে রহস্যময়ী কন্যা আমি সঠিক সময়ের অপেক্ষায় থাকবো।”

“অপেক্ষার ফল মিস্টি হয় ইনশাআল্লাহ।”

________________________

দেখতে দেখতে আরুহির বিয়ের দিন এগিয়ে এলো। বিয়েটা ঘরুয়া ভাবে হবে দেখে কারোরি কোনরকম চাপ নেই। আরহাম নিজের বোনকে আজকাল শুধুই দেখেই যায়। একমাত্র বোন তারওপর সবচেয়ে কাছের বেস্ট ফ্রেন্ড। আরুহি আববার পরের দিনই তাদের কাজ ছেড়ে দিয়েছে। নেওয়াজ আহমেদ তো কিছুতেই তাদের ছাড়তে চাইছিল না। তবে আরুহিরটার উনি কিছুই করতে পারেন নি। আবরার এর টা রাখতে চেয়েছিল কারন আবরার অনেক গুলো গ্যাংএর সন্ধান বের করেছিল। তবুও আবরার কোন ঝামেলা নিতে চায় না। তাই বেরিয়ে এসেছে। আপাতত সি আইডি তে তাদের কোন পোস্ট নেই। আরহাম সি আই ডি তেই রয়েছে।কারন সে ছোটবেলা থেকেই এরকম কিছু একটা হতে চেয়েছিল। আরহাম বরাবরই ওর বাবাকে ফলো করেছে আর আরুহি ওর মাকে। এখন রোজ নিয়ম করে আরহাম আরুহি সকালে আর রাতে খায়িয়ে দেয়। একসাথে দুইজনকে সামলাচ্ছে। ওর দাদুভাই আর দাদিজান অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে গেছে। তারা পুরোনো কিছু ভাবতে চায় না। এতকিছুর মাঝেও আবরারের সাথে ওর বাবা মায়ের সম্পর্কের উন্নতি হয় নি। হ্যা কথা বলে কিন্তু মন খুলে নয়। ঐযে আবরার বলেছিল ওর মস্তিস্ক ওকে বাঁধা দেয়।

কাল আরুহির বিয়ে। আরহাম রাতে বোনের রুমে দেখলো আরুহি কি একটা পরছে। আরহাম বলল,,

“ভেতরে আসবো বোনু!”

“এতো ফর্মালিটিজ করছো কেন?ভেতরে আসো!”তোমার হাতে কি ওগুলো?”

“ঐ কাল তো আমার বোনের বিয়ে হয়ে যাবে তাই আমি তার ফ্রেবারিট ফুচকা নিয়ে এসেছি। আজ আমি হবো তোর ফুচকাওয়ালা।”

আরুহি আরহাম এর দিকে তাকালো দুজনের চোখেই পানি চিকচিক করছে। এতো গুলো বছর দুজনে দুজনকে সামলে রেখেছে। পৃথিবীর সবথেকে মধুর সম্পর্ক হলো ভাইবোনের সম্পর্ক। তারা যতই মারামারি কাটাকাটি করুক না কেন একে অপরের কিছু হলে মনে হয় দুজনেই আঘাত পেয়েছে। একটা ভাই এতগুলো বছর বোনকে আগলে রেখেছে কষ্ট তো হবেই। আরুহি মুচকি হেসে বলল,,

“তা ফুচকা ওয়ালা ভাইয়া আমারটায় ঝাল একটু বেশিই দেবেন। আর ভাইয়ের টাও বেশি দেবেন কারন আমরা দুজন ঝাল খেতে ভালোবাসি।”

“সরি আফা ভর্তাটা এক ফুচকাওয়ালা মেখে দিয়েছে অবশ্য সে বেশি করেই ঝাল দিয়েছে। আমি তো শুধু ফুচকার ভেতরে ভর্তা দিয়ে সার্ভ করবো।”

“ওহ আচ্ছা। তাহলে আমার প্রেগন্যান্ট ভাবিকে দিয়ে এসেছেন কি?”

“হুম তাকে দাদুভাই আর দাদিজান কে দিয়ে এসেছি। দাদুভাই বলেছে সে তাদের দুজনকে বানিয়ে খাওয়াবে।বাকি সবাইকেও দিয়ে এসেছি। আর আমাকে তোর কাছে পাঠালো।”

“তাহলে আজ তো পুরো দোকানটাকেই কিনে এনেছো?”

“মানুষ -ই তো অল্প কয়জন। আমরা তিনজন দাদুভাই শিহাব ভাইয়ারা পাঁচজন। আরশি ওর হাজব্যান্ড দুজন ভালোবাবারা দুজন।আর রুহানি এই তো এই কয়েকজন।”

“হুম!”

আরহাম আর আরুহি একসাথে ফুচকা খেল। সাথে আরো কতোরকম গল্প দুই ভাই-বোন নিজেদের সময়টাকে ইনজয় করছে। আজ আরুহির ক্যামেরাটা বের করলো সেখানে ওদের অনেক স্মৃতি রয়েছে। আরহাম আরুহি ল্যাপটপ নিয়ে বসলো। আজ সবাই ওদের দুই ভাই-বোন কে ছেড়ে দিয়েছে। সবাই ওদের ভাইবোনের ভালোবাসা জানে। আরুহি আর আরহাম ওদের নিজেদের ভিডিও দেখে হাসছে। আরুহি কোন ভিডিও কান্না করছে তো আরহাম কে দৌড়ানি দিচ্ছে। আবার কোন ভিডিও তে আরহাম কাদা মাখা অবস্থায় রয়েছে মা কান ধরে বকা দিচ্ছে। ওরা চারজন খুব ভালো সময় কাটাচ্ছে। দুজনের চোখে পানি চিকচিক করছে কিন্তু ঠোঁটে রয়েছে মুচকি হাসি। দরজার আড়াল থেকে এসব দেখছে আফরিন আনোয়ার খান ও তার স্ত্রী। তাদের ঠোটের কোনায় মুচকি হাসি ফুটে এসেছে। হুট করেই আরুহি আরহাম কে জরিয়ে ধরলো আর কেঁদে উঠলো আর বলল,,

“ভাইয়া আমি তোমাকে ছাড়া থাকবো কি করে? আমি তো তোমাকে ছাড়া আমার জীবনটাকে কোনদিন ভাবিই নি।তুমি আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু।”

আরহামের চোখেও পানি পরছে। আরহাম বলল,,

“এটা প্রত্যেকটা মেয়ের ভবিতব্য। এটাই নিয়ম আমি জানি আমার বোন সব ভালো মতোই পারবে।”

কিছুক্ষন দুজন কেঁদে কেটে নিজেদের সামলে নিল। এখন হ্যাপি টাইম। আরহাম বলল,,

“চল পাঁচ গুটি খেলবো। যে জিতবে ,,

“যেই জিতুক না কেন কাল তুমি আমাকে রান্না করে খাওয়াবে?”

আরহাম মুচকি হেসে বলল,,

“আচ্ছা ঠিক আছে। কাল আমার বোন হবে সম্রাজ্ঞী আর আমি হবো তার প্রজা সে যা বলবে আমি তাই করবো।”

আরুহি আরহাম ওদের মতো সময় কাটিয়ে নিল। আরহাম হাসতে হাসতে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। তখন আরুহি কান্নায় ভেঙে পরলো। আরহাম রুমে গিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইল। তখন আফরিন আরহামের কাঁধে হাত রেখে বলল,,

“আরুহি কাল আপনাকে ছেড়ে যাবে দেখে খুব কষ্ট হচ্ছে তাইনা।”

আরহামের কানে এটা পৌছানোই যথেষ্ট ছিল যে কাল তার বোন তাকে ছেড়ে চলে যাবে। আরহাম আফরিন কে জরিয়ে ধরে কেদে উঠল। আর বলল,,

“কাল থেকে আমার বোনটা আমাকে ছাড়া থাকবে। জানো ও আমাকে বলছিল আমাকে ছাড়া তো ও কখনো ওর জীবনই ভাবে নি। কাল থেকে আমার সাথে কে গেম খেলবে। জিতলে তোমার রান্না করতে হবে নাহলে রেস্টুরেন্টে খাওয়াতে হবে সেগুলো কে বলবে। আমি কার সাথে খুনসুটি করবো। কার দৌড়ানি খাবো কে আমাকে বলবে ভাইয়া আমার কথা শুনো কে ধমকিয়ে শাসন করবে বলবে ভাইয়া ন্যাকামোটা বেশি হয়ে যাচ্ছে না। আমার বোন আমার গার্ডিয়ান ছিল আফরিন আমি কিভাবে থাকবো।”

আরহামের কথা শুনে আফরিন ও কেঁদে ফেললো। কতটা বোনকে ভালোবাসে এভাবে কাউকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে পারে। ওদিকে আরুহি করছে কে জানে। আফরিন আরহামকে সামলিয়ে আরুহির রুমে গেল ও গিয়ে দেখলো আরুহি নামাজ পরছে। ওর নামাজ শেষ হওয়ার অপেক্ষা করলো। কিছুক্ষণ পর আরুহির নামাজ পড়া শেষ করলো। আফরিন কে বলল,,

“আরে তুই ঘুমাস নি এখনো?”

“আরে না ঘুম আসছিল না। তুই এখন কিসের নামাজ পরলি।”

নফল নামাজ পরলাম। মনটা অশান্ত হয়ে উঠছিল খুব কষ্ট লাগছিল নিজেকে খুব অসহায় লাগছিল তাই‌

আমি বললাম: ওহ আল্লাহ! আমি কষ্ট পাচ্ছি!
আল্লাহ বললেন: “আমার রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না।”
[আয্-যুমার ৩৯:৫৩]

আমি বললাম: আমি বিষণ্ণ!
আল্লাহ বললেন: “আমাকে স্মরণ করো, তুমি তোমার হৃদয়ে প্রশান্তি খুঁজে পাবে।”
[আর-রাদ ১৩:২৮]

এইজন্য নামাজটা পরে এখন অন্তরে প্রশান্তি অনুভব করছি। ভাইয়া ঘুমিয়েছে?

“হ্যা একটু আগেই শুলো।”

“তুই গিয়ে ঘুমিয়ে পড় । আমিও এখন ঘুমাবো?”

“আচ্ছা!…….. আরু?

“হুম! কিছু বলবি?”

আফরিন কিছু বললো না। আরুহিকে গিয়ে ওর গালে হাত দিয়ে বলল,,

“আল্লাহ তায়ালা তোকে পৃথিবীর সব খুশি দিক। তোর ভাইয়া আর আমি এটাই চাই। জীবনে খুব সুখী হ তুই।”

“আমিন ভাবি আমিন!”

______________________

পরের দিন আরহামদের বাড়িতে জমজমাট অবস্থা। অল্প কয়েকজন মানুষ এলেও আরহাম আরুহির বিয়েতে কোন ত্রুতি রাখতে চায় না। আবরারদের বাড়ি থেকে সবাই চলে এলো। আবরার সুন্দর একটা ক্রীম কালারের পাঞ্জাবি আর সাদা পায়জামা পড়েছে। মাথায় একটা টুপি মাশাআল্লাহ আবরার কে অনেক স্নিগ্ধ আর সুন্দর লাগছে। আবরার আরুহির জন্য একটা লেহেঙ্গা অর্ডার করেছিল ক্রিম কালারের। সাথে সাদা হিজাব। আরুহিকে সেগুলোই পড়ানো হয়েছে। ক্রিম কালারের লেহেঙ্গা সাদা রঙের হিজাব মুখে হালকা মেক আপ মাশাআল্লাহ আমাদের আরুহিকেও অনেক সুন্দর লাগছে ! এখন বিয়ে পড়ানো হবে দেখে আরহাম আর আফরিন গিয়ে আরুহিকে আনতে গেল। আরহাম বোনের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“মাশাআল্লাহ আমার বোনটাকে আজ একেবারে রানী লাগছে! কারো নজর না লাগে!

“আজ আমার বিয়ে ভাইয়া কারো নজর লাগলেও আমার জামাইয়ের সাথেই আমার বিয়ে হবে।”

“পুরো আমার ডায়লগ ঝেঁপে দিলি তো?”

“দেখতে হবে কার বোন!”

আরুহি আরহাম কে জরিয়ে ধরে বলল,,

“ইউ আর বেস্ট ব্রাদার ইন দি ওয়ার্ল্ড!”

তখন আরহাম মুচকি হেসে বলল,,

“সেম ডায়লগ সবসময় দিস।”

আরুহির চোখে পানি চিকচিক করছে। আরহামের ও তাই। কিছুক্ষণ পর দু ভাই-বোন নিজেদের সামলিয়ে ড্রয়িংরুমে গেল। আবরার এতক্ষন আরুহির জন্য অপেক্ষা করছিল। আরুহিকে দেখেই আবরার বলে উঠলো,,

“মাশাআল্লাহ আমার হাবিবীকে অনেক সুন্দর লাগছে।”

ওরা আসতেই বিয়ে পড়ানো শুরু করা হলো। বিয়ের সকল নিয়ম মেনে তিন কবুলের মাধ্যমে আরুহি আর আবরার একে অপরের জীবনসঙ্গী হয়ে গেল। আল্লাহর রহমতে দুজনে বৈধ সম্পর্কে আবদ্ধ হয়ে গেল। আবরার যে মনে মনে কতোবার আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেছে তার হিসাব নেই। অতঃপর এলো বিদায়ের পালা। সবাই ভাবলো আরুহি বোধহয় অনেক কাঁদবে কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে আরহাম আর আরুহি একটু কান্না করেই একে অপরকে বিদায় দিল। কারন ওরা ওদের দূর্বলতা প্রকাশ করবে না। এটা ওদের মা বলে গিয়েছিল। আরহাম আরুহিকে গাড়িতে উঠিয়ে দিল। আবরার আরুহির হাত শক্ত করে ধরলো ওদের গাড়ি চলতে লাগলো। আবরার হুট করে আরুহিকে বলল,,

“মিস আপনাকে আমার শহরে নতুন করে স্বাগতম। এই শহরে আপনার জন্য রয়েছে অফুরন্ত ভালোবাসা আর মায়া। এখানে মন খারাপের গল্প নেই। চাইলেও আপনাকে মন খারাপ করতে দেব না। আমি আর আপনি মিলে আমাদের শহরটাকে নতুন করে রাঙিয়ে তুলবো।”

আরুহি মুচকি হেসে বলল,,

“ইনশাআল্লাহ জনাব!”

~চলবে,,

বিঃদ্রঃ আসসালামু আলাইকুম! ওদের বিয়েটা দিয়ে দিলাম। কালকে গল্পটা সমাপ্ত হবে। জানিনা আজকের পর্বে কতটুকু কি লিখেছি। শেষ এ এসে কেমন এলোমেলো লাগছে। ভুল ত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন। আজকের পর্ব কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here