#সেদিন_বসন্ত_ছিল
#রাহনুমা_রাহা
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
পর্বঃ০১
শুভ্র ত্বকে শুভ্র রঙা কাপড়ে মুড়ে নীরব, নিভৃতে বয়ে চলা আর্নো নদীর পানে দৃষ্টি নিপতিত করে রয়েছে ইভানা। সামনে প্রবাহমান আর্নো নীরবে বয়ে গেলেও তার হৃদয়ে বয়ে যাওয়া নদের ঢেউগুলো উত্তাল। কলকল শব্দে বয়ে চলেছে অবিরত। থামার কোনো ইয়ত্তা নেই। হয়তো থামবেও না কখনো। অথবা থামবে কোনো এক নিশীথে। ঠিক যে সময়টাতে তার প্রাণপাখিটা খাঁচা ছেড়ে মুক্ত বিহঙ্গের ন্যায় উড়বে। রোধ হবে শ্বাস, ঝিমিয়ে যাবে শরীর। ক্লান্ত আঁখির ক্লান্ত দৃষ্টি কিছু পাওয়ার আনন্দে বিমোহিত হবে। এই তো পাবে তাকে, ছুঁয়ে দেবে সকল দ্বিধা ভুলে, ওই দূর সীমানায়, পরপারে।
সূদুর ইতালির এক নান্দনিক শহর ফ্লোরেন্স। রাজধানী রোম থেকে প্রায় দু’শ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে এর অবস্থান। ১০২.৪১ বর্গকিলোমিটার এ শহরের গোড়াপতন হয় জুলিয়াস সিজারের রাজত্ব কালে। সময় তখন খ্রিষ্টপূর্ব ৫৯ সাল। বিশ্বের প্রায় সব শহরের ন্যায় এ শহরকে ঘিরেও রয়েছে এক স্রোতস্বিনীর গল্প। আর্নো নদী। ফ্লোরেন্স শহরের বুকে নিজের আভিজাত্য ফুটিয়ে বয়ে যাচ্ছে বহুকাল ধরে। দিগন্ত জুড়েও তারই সৌন্দর্যের অনাবিল দৃশ্য।
শান্ত, স্নিগ্ধ আর্নোর দিকে মলিন, নির্নিমেষ দৃষ্টির বিচ্ছেদ ঘটল ইভানার ডান কাঁধের সাথে ঝুলিয়ে রাখা ব্যাগের ভেতর বাজতে থাকা ফোনের শব্দে। ইভানা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। সন্তর্পণে গাল বেয়ে গড়িয়ে যাওয়া বিরহ বৃষ্টি ফোঁটাটুকু মুছে কণ্ঠ স্বাভাবিক করে ফোন হাতে নিল। সেই একটা নাম্বার। একটাই গন্তব্য, একটাই পিছুটান।
স্কিনে প্রেস করতেই সদাহাস্যজ্বল এক মুখশ্রী ভেসে উঠল পর্দা জুড়ে। শান্তির পরশ বয়ে গেল ইভানার ভুবনে। বছর দুয়েকের এক ফুটন্ত পদ্মফুল। সৌন্দর্যে, সৌরভে মাতিয়ে রাখছে গোটা পৃথিবী। ইভানা স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল কিছু প্রহর। পদ্ম ফুলটি নড়েচড়ে উঠে। ফোকলা দাঁতে হাসে। আধোআধো বুলিতে ডাকে,
“মা!”
ইভানার অক্ষিকোটরে পুনরায় বৃষ্টি নামে। গাল গড়িয়ে পড়ে সেই শীতল বৃষ্টিধারা। ইভানা মুছে না, চেষ্টাও করে না লুকোনোর। দীর্ঘ সময় পর বিষন্নতার মেঘ কেটে দেখা দেয় মিঠে রোদের।এক চিলতে হাসি। শত দুঃখের পর এক টুকরো সুখানুভূতি। চোখে জল মুখে হাসি নিয়ে ভেজা গলায় বলল,
“মা। এই তো মা। মা এখানেই আছে।”
অপর প্রান্তে ছোট্ট পদ্মফুলটি খিলখিল করে হেসে উঠল। ইভানা অনিমেষ চেয়ে থেকে বলল,
“আরাবী মা আমার। কে আছে তোমার কাছে? মামনি কোথায়? নোভা; নোভা আছো?”
ক্যামেরার পেছন থেকে নোভা সামনে এসে দাঁড়াল। স্পষ্ট মা মা ছাপ দেখতে পাচ্ছে ইভানা নোভার মুখশ্রীতে। ইভানা মলিন হাসল। স্নেহভরা কণ্ঠে বলল,
“বাচ্চা টা বড় হয়ে গেল তবে!”
নোভা আরাবীর দিকে তাকাল। মৃদু হেসে বলল,
“হ্যা ভাবী। আধোআধো বুলিতে অনেক কথাই বলে।”
ইভানা শব্দহীন হেসে বলল,
“আমি আমার নোভা বাচ্চাটার কথা বলেছি। দিব্যি মায়ের দায়িত্ব পালন করছে সে। সেই ছোট্ট পিচ্চিটা আমার।”
নোভার চোখ চিকচিক করে উঠল। ইভানার চেহারায় আজ আবরারের ছায়া দেখতে পাচ্ছে সে। দাদাভাইয়ের কথা যে খুব করে মনে পড়ছে তার। আদর আদর কণ্ঠে বলা কথাগুলো খুব করে শুনতে ইচ্ছে করছে। নোভা নিজের আবেগাপ্লুত চেহারা লুকোতে সরে দাঁড়াল ক্যামেরার সামনে থেকে।
গলা বাড়িয়ে বলল,
“মা; ভাবী আছে ফোনে। কথা বলবে?”
ইভানা আরবীর দিকে তাকিয়ে রইল মলিন মুখে। অপলক নয়নে চেয়ে দেখল আবরারের আদলে গড়া মুখটার দিকে। সেই হাসিমুখ, সেই তীক্ষ্ণ চেহারা। ইভানা মুচকি হাসে। চলে গিয়েও যেন রয়ে গেছে সে, সবটা জুড়ে। দিয়ে গেছে বেঁচে থাকার অবলম্বন। আঁকড়ে ধরার একটা শক্ত খুঁটি।
হঠাৎ আরাবী অস্ফুটে আওয়াজ তুলে থেমে থেমে বলল,
“বা বা।”
ইভানা চমকে তাকাল। হৃদয় নিংড়ে বেরিয়ে আসতে চাইলে চাপা কান্নারা। ছাঁই চাপা আগুন পুনরায় দাউদাউ করে জ্বলতে আরম্ভ করলে ঢোক চেপে নিজেকে সামলানোর প্রবল চেষ্টা চালাল সে।
বিধ্বংসী এক মা এসে নিজেকে ধরা দিল ইভানার সামনে।ইভানা মিহি গলায় সালাম বিনিময় করে কিছু বলার আগেই ফাহিমা করিম নিজের স্নেহময় কণ্ঠের পরিবর্তে কঠিন গলায় বললেন,
“কি দরকার বলো।”
ইভানা নীরবে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নরম গলায় বলল,
“মা।”
ফাহিমা করিম কঠোর হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করলেন। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে ভেজা গলায় বললেন,
“আমি আর হারাতে চাই না ইভানা। হারাতে হারাতে আমি বড্ড ক্লান্ত। তুমি চলে এসো মা। সন্তান আঁকড়ে ধরে নতুন করে বাঁচো। মেনে নাও নিয়তি। এটাই সবার জন্য ভালো হবে।”
ইভানা সময় নিল না। তৎক্ষণাৎ মিহি গলায় বলল,
“আর আবরার? আপনার ছেলের? আপনার ছেলের ভালো কে দেখবে মা? আপনার কি সত্যি মনে হয় মা,আপনার ছেলে সত্যি আত্মহত্যা করতে পারে? পারে না মা। সে পারে না এমন নিষ্ঠুর হতে। আপনাকে মাতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত করতে, আমার সন্তানকে বাবার ভালবাসা থেকে বঞ্চিত করতে, আমাকে স্বামী সোহাগ থেকে বঞ্চিত করার মত স্বার্থপর সে নয় মা। সে পারে না এমন হীন কাজ করতে। পারে না সে। তার সাথে অন্যায় হয়েছে মা। এই অন্যায় আমি মেনে নিতে পারব না মা।”
ফাহিমা করিম দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। নরম গলায় বললেন,
“তোমার যদি কিছু হয়ে যায়? আরাবীর কি হবে মা? বাবা মা ছাড়া বাচ্চাটা বাঁচবে কি করে? ওর কথাও তো ভাবো। যে চলে গেছে তাকে ভাবতে গিয়ে ভবিষ্যৎ নষ্ট করো না মা।”
ইভানা ভঙ্গুর হয়ে আসা মনটা শক্ত খোলসে মুড়িয়ে ফেলল। শক্ত গলায় বলল,
“আপনার ছেলে আছে মা। আমাদের আশেপাশেই আছে। তার সাথে হওয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়ার শক্তি সে-ই যোগাচ্ছে মা। আমার কিছু হবে না। আর হয়ে গেলেও আপনি, নোভা, রিফাত ভাই তো আছেন। ঠিক সামলে নেবেন আমার আরাবী কে।”
“দুইমাস তো হয়ে গেল ইভানা। আর কত? আর কত সময় নেবে তুমি? আর কতদিন পরে থাকবে ওই বিদেশ বিভূঁইয়ে? কবে দিবে তুমি ন্যায় বিচার?”
ইভানা চুপিসারে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
“সবে তো জাল বিছাচ্ছি মা। গোটাতে ঢের দেরি।”
আকাশের দিকে তাকিয়ে ভেতরে চেপে রাখা বিষাক্ত নিঃশ্বাস নিঃশব্দে ছেড়ে দেয় ইভানা। তা মূহুর্তেই ছড়িয়ে যায় অন্তরীক্ষের ওই দূর সীমানায়। বিষন্নতা ছড়াছড়ি হয় শুদ্ধতম অনিলে। যা একে একে অক্সিজেনের সাথে গ্রহণ করে অগুনতি মানুষ। ক্রমশ বেড়ে যায় বিষন্নতার মাত্রা। একসময় ধরার বুকে নতুন করে রচিত হয় আরও কোটি কোটি বিষন্নতার গল্প।
চলবে….#সেদিন_বসন্ত_ছিল
#রাহনুমা_রাহা
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
পর্বঃ০২
ইউনিভার্সিটি অফ ফ্লোরেন্স। ইতালির সমৃদ্ধ নগরী ফ্লোরেন্সের প্রাণকেন্দ্র। হাজার হাজার শিক্ষার্থীর সমারোহে গমগমে পরিবেশ। বিশ্ববিদ্যালয় এরিয়ায় বহুতল ভবনের দ্বিতীয় তলার সবটা জুড়ে রয়েছে আধুনিক গবেষণাগার। সেখানে চলছে নিপুন পরীক্ষা নিরীক্ষার কার্যক্রম। সৃষ্টি করার চেষ্টা চলছে নতুন কিছুর।উদ্ভাবনের অপেক্ষায় হাজারো প্রযুক্তি।
গায়ে সাদা এপ্রন, হাতে গ্লাবস, মুখে মাস্ক এবং চোখে নিরাপদ চশমা লাগিয়ে অভিনিবিষ্ট হয়ে ব্যুরেট থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় তরল পদার্থ বিকারে নিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে ইভানা। ল্যাবে এসেছে ঘন্টা তিনেক সময় ধরে। এসে থেকেই মনোনিবেশ করেছে হাতের কাজটার দিকে। সাথে রয়েছে আরও তিনজন সিনিয়র সাইনটিস্ট। ইভানা নজর বিকারে রেখেই গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
“মিস্টার বিশ্বাস! একটু দেখবেন?”
গৌতম বিশ্বাস। বয়স ৩৫। জন্মসূত্রে ভারতীয় নাগরিক। বছর সাতেক আগে দেশ ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছেন ইতালির এই সমৃদ্ধ শহর ফ্লোরেন্সে। ইউনিভার্সিটি অফ ফ্লোরেন্সের সহকারী অধ্যাপক এবং গবেষণাবিদ তিনি।
ইভানার ডাকে নিজ কার্য ফেলে এগিয়ে এসে বলল,
“জ্বি! কিছু বললেন?”
ইভানার মনোযোগ তখনো দ্রুত রং ও প্রকৃতি বদলে যাওয়া দ্রবণের উপর সীমাবদ্ধ। শান্ত গলায় বলল,
“আমার ক্লাসে যেতে হবে মিস্টার বিশ্বাস। আপনি কাইন্ডলি বাকিটা দেখে নিন।”
গৌতম বিশ্বাস অবিশ্বাস্য চোখে তাকাল। কণ্ঠেও বিশ্বাস ঢেলে বলল,
“আমি! আমি কিভাবে?”
ইভানা স্মিত হাসল। শব্দহীন হাসি। হাতের গ্লাবস খুলতে খুলতে বলল,
“আপনি আমার সিনিয়র মিস্টার বিশ্বাস। যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতা দু’টোতেই আপনি এগিয়ে।”
গৌতম বিশ্বাস মুচকি হেসে বলল,
“আপনার অদম্য জেদ আর সাহসের কাছে আমার অভিজ্ঞতা নস্যি।”
ইভানা এ নিয়ে দ্বিরুক্তি করল না। সে নিজেও জানে সে জেদি। মাত্রাতিরিক্ত জেদি। নইলে সাধারণ একটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস আউট একজন মোটামুটি লেবেলের ছাত্রী যার কোনো ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নেই, সে এসে রাজ করছে ইতালির মাটিতে। দু-মাসেই নিজের আয়ত্ত্বে এনেছে ইউনিভার্সিটি অফ ফ্লোরেন্সের বিশাল পরিধির এই গবেষণা কেন্দ্র। এতে অবশ্য ক্রেডিটটা আবরার কে দেওয়া যায়। তার জন্যই তো ব্যাপারটা সহজ হয়েছে। মেইল; একটা মেইল জীবনের মোড় ঘুড়িয়ে দিল। দেশ ছাড়তে না চাওয়া মেয়েটার দেশের বাইরে আসাটাই নিয়তিতে লিখে ফেলল।
ল্যাব থেকে বেরিয়ে ইভানা দ্রুত পা চালায়। ক্লাস টাইম শুরু হয়ে গেছে। অথচ তার পৌঁছাতে সময় লাগবে আরও মিনিট পাঁচেক। বায়ো কেমিস্ট্রির একজন গম্ভীর প্রজাতির লেকচারার ইভানা আফরোজ। সদা বিরাজমান থমথমে মনোভাব। চেহারায়ও তা ফুটে থাকে আজকাল।
“মিস আফরোজ!”
কিছুদূর পেরোতেই পেছন থেকে ভরাট কন্ঠের শব্দে পায়ের গতি কমিয়ে ঘাড় বেঁকিয়ে পেছনে তাকাল ইভানা। মৃদুমন্দ গতিতে চলতে চলতেই বলল,
“মিসেস ফাইয়াজ! কতদিন বলব মিস্টার সরকার? মনে রাখতে শিখুন।”
আহনাফ সরকারের হাস্যজ্বল মুখে তৎক্ষনাৎ শ্রাবণের মেঘ জমা হলো। ফর্সা মুখশ্রীতে ভেসে বেড়াতে লাগল কালো কালো মেঘেদের দল। ময়মনসিংহের ত্রিশালে তার পৈতৃক নিবাস হলেও ছোট বেলা থেকেই জন্মসূত্রে ফ্লোরেন্সে বসবাস তার। একরোখা, জেদি, আপসহীন ব্যক্তিত্বের একজন মানুষ। ইভানার ইতালিতে পা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তার সাথে সখ্যতার পণ নিয়েছে যেন। কাজে অকাজে সারাক্ষণ পিছু ডাকছে।
কিয়ৎক্ষণ পর থমথমে ভাব কাটিয়ে শরতের মিঠে রোদের মত হাসি ছলকে উঠল তার অবয়বে। হাসি মুখে বলল,
“আপনাকে মিসেস ঠিক মানায় না মিস আফরোজ। আমি তো মিস-ই বলব। যাইহোক ক্লাসে যাচ্ছেন?”
ইভানা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। পাগল কে বুঝানোর সাধ্যি কার! থাকলেও কি দায় পড়েছে তার বুঝানোর!
ইভানা প্রথম ইতালির মাটিতে পা রাখার পর দিশাহীন বোধ করে। এয়ারপোর্টে এসে মুখোমুখি হয় নানা দ্বিধাদ্বন্দের। সম্পূর্ণ অচেনা একটা জায়গায় এসে ভীষণ ভাবে মনে পড়তে থাকে প্রিয় মুখখানা। লাল গালিচায় মোড়ানো রাস্তায় রাণীর বেশে স্বীয় নিবাসে শুভেচ্ছা জানাতে চাওয়া মানুষটার অনুপস্থিতি ভেতরটা নাড়িয়ে দেয় ইভানার। তবুও শত কষ্ট গিলে যখন এদিক ওদিক তাকায়, তখন চোখ পড়ে ইংরেজি গোটাগোটা অক্ষরে লেখা ইভানা নামটির দিকে। পায়ে পায়ে এগিয়ে গিয়ে জানতে পারল তারই অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে ভদ্রলোকটি। নাম তার আহনাফ সরকার।
সেদিন থেকেই আহনাফ সঙ্গ দিতে চাইছে তাকে।চাইছে একাকীত্বের দাবানল থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করতে। কিন্তু ইভানা সেসব চায় না। সে তো চায় এই অগ্নি লার্ভায় নিজেকে তিলে তিলে জ্বালিয়ে অঙ্গার করে দিতে। প্রতি মূহুর্তে তার উপস্থিতি অনুভব করতে। স্মৃতিচারণ করতে মাত্র সপ্তাহ তিনেকের কাছাকাছি থাকার গল্প।
পন্টে বেকিও ব্রিজ বা গোল্ডেন ব্রিজ। আর্নো নদীর উপর বহু বছর ধরে সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে এই ব্রিজ। সাধারণ হয়েও যেন অসাধারণত্বে মোড়ানো। এক সময় এই সেতুর দুইপাশে ছিল অসংখ্য মাংশের দোকান। এখন সেগুলোর দেখা মেলে না৷ তার পরিবর্তে দেখা যায় সারি সারি সোনার দোকান এবং কিছু বাড়িঘর। বিশ্বের প্রথম এবং একমাত্র ব্রিজ। যার উপর ঘরবাড়ির দর্শন পাওয়া যায়।
পড়ন্ত বিকেলে কনে দেখা আলোয় আলোকিত সেতুর রেলিং এ হাত রেখে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওই দূর নীলিমার দিকে। সাদা কালো মেঘের ভেলা থেকে নজর সরিয়ে রেলিং এ ঝুলে থাকা অসংখ্য তালার পানে চাইল। মুহূর্তেই মৃদু হাসিতে ভুবন জুড়িয়ে দিল সে। আশেপাশে নজর বুলাতেই চোখে পড়ল ছোট্ট একটা তালার দোকান।
স্বর্ন রঙা একটা তালা এনে প্রিয় মানুষটার মুখ মনে কটে আঁটকে দিল রেলিঙের সাথে। চোখ বন্ধ করে আর্নোর জলে চাবিটা ছুঁড়ে ফেলে উপরের দিকে তাকাল। ঐ তো আকাশ পানে দেখা যাচ্ছে সদা হাস্যজ্বল মুখশ্রী। ফিসফিস করে বলছে-ভালবাসি কাঁচাগোল্লা। খুব খুব ভালবাসি।
কথিত আছে প্রেমিক প্রেমিকা বা স্বামী স্ত্রী আর্নোর ব্রিজে তালা লাগিয়ে চাবি জলে ফেলে দিলে প্রেম অমর হয়। দীর্ঘস্থায়ী হয়।
সন্ধ্যার ঠিক আগ মূহুর্তে চলে আসার জন্য পা বাড়াতেই চোখে পড়ল ছিমছিমে গড়নের এক মেয়ের দিকে। এক পলক তাকাতেই চিনতে পারল সে। মৃত্তিকা! তার ইউনিভার্সিটির-ই ছাত্রী। তবে কাঁদছে কেন সে এভাবে?
দ্রুত পা চালিয়ে কাঁধে হাত রেখে নরম গলায় বলল,
“মৃত্তিকা ; কাঁদছো কেন তুমি?”
পাতলা চেহারায় ফুটফুটে মেয়েটি আহ্লাদী হয়ে ঠোঁট বেঁকিয়ে আরও জোরে কেঁদে ফেলল। ইভানা বাহুতে হাত রেখে দাঁড় করিয়ে আদুরে গলায় বলল,
“কান্না থামাও। তারপর আমাকে বলো কি হয়েছে?”
মৃত্তিকা কান্না থামাল। কিন্তু হেঁচকি তুলতে লাগল অনবরত। কিঞ্চিৎ সময় পর মাথা নিচু করে বলল,
“আমি প্রেগন্যান্ট।”
ইভানা চমকাল। তবুও নিজেকে সামলে বলল,
“প্রেগন্যান্ট? তোমার স্বামী?”
মৃত্তিকা মাথা নিচু করে ফেলল। করুণ গলায় বলল,
“বিয়ে হয় নি আমার। যাকে বিশ্বাস করে সব দিয়েছি সে আমায় ঠকিয়েছে ম্যাম। হোস্টেল থেকেও আমায় বের করে দিয়েছে। আমি এখন কি করব! কোথায় যাব!”
ইভানা কিছুক্ষণ ভাবল। অতঃপর শান্ত গলায় বলল,
“আমার সাথে যাবে? থাকবে আমার সাথে?”
মৃত্তিকা কান্না ভেজা চোখে তাকাল। অবিশ্বাস্য গলায় বলল,
“আপনার আমাকে ঘেন্না লাগছে না?”
ইভানা মুচকি হেসে বলল,
“ভালবাসা পাপ নয়। ভালবাসা পবিত্র। তুমি ভুল মানুষ কে ভাল বেসেছো সেটা ভুল এবং ভালবেসে নিজেকে তার হাতে তুলে দেওয়াটা সবচেয়ে বড় ভুল। কিন্তু এর জন্য আমি তোমাকে ঘৃণা করতে পারি না।”
ঘর ভর্তি লোকজন। চারদিকে কান্নার রোল। বহু মানুষের সমাগমে আলোড়িত চারপাশ। এহেন সময় লাশ বাহী গাড়ির আওয়াজ কানে এলেই মানুষগুলো তটস্থ হয়ে দাঁড়াল। অপেক্ষা করল একজনকে শেষবার দেখার। লাশ বাহী ফ্রিজিং গাড়ি থেকে নেমে এলো তিনজন মানুষ। এবার নামার পালা তার। যিনি পরম শান্তিতে ঘুমোচ্ছেন। শুয়ে আছেন চিরনিদ্রায়।
কফিন নামিয়ে ঢাকনা খুলতেই বেরিয়ে এলো ধোঁয়া সাথে ভ্যাপসা গন্ধ। একে একে দেখানো হলো আপন লোকূজন কে। ইভানা কে দু’জনে আগলে ধরে কফিনের কাছে নিয়ে যেতেই তার চোখে পড়ল সেই মুখটা। সাদা ব্যান্ডেজের ভেতর লুকিয়ে রাখা সদা হাস্যজ্বল মুখটা। প্রাণচঞ্চল মুখটা ভীষণ ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে যে। ইভানার ইচ্ছে করল হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিতে। ঠোঁটের ছোঁয়ায় প্রাণ ফেরাতে ওই রক্তশূণ্য মুখটায়।
নিচু হয়ে বসে হাত বাড়াতেই ঝড়ো হাওয়া এসে আঁটকে দিলো কফিনের ঢাকনা। অন্ধকারে ছেয়ে গেল ধরণী। কেঁপে উঠল গোটা শরীর। শ্বাস নিতে না পারায় দম বন্ধ হয়ে এলো। বিকট চিৎকারে ঘর কাঁপিয়ে দিয়ে ওঠে বসল তৎক্ষণাৎ। গা ঘামে ভিজে জবজবে হয়ে গেছে। জোরে জোরে শ্বাস টেনে নিজেকে সামলানোর আপ্রাণ চেষ্টা করল।
মৃত্তিকা চিৎকার শুনে ছুটে এসে বিছানার একপাশে বসে বলল,
“ম্যাম কি হয়েছে? ঠিক আছেন?”
ইভানা প্রতিত্তোর করল না। নির্নিমেষ তাকিয়ে রইল সামনের দেয়ালটায়। যেখানে এখনো ভাসছে সেই প্রাণহীন ফ্যাকাসে মুখ।
চলবে….
নোটঃ তালা লাগানোর ব্যাপারটা এখন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এখন তালা লাগালে জরিমানা করা হয়। ভাল লেগেছে ব্যাপারটা, তাই লিখে ফেলেছি।#সেদিন_বসন্ত_ছিল
#রাহনুমা_রাহা
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
পর্বঃ০৩
হালকা হলুদাভ দেয়ালে টাঙানো দু’টো ছবি। ইভানা তীক্ষ্ণ দৃষ্টি মেলে অবলোকন করছে ছবিতে দৃশ্যমান অবয়ব দুটি। হাস্যজ্বল মুখদুটোর একটা মুখ ভীষণ পরিচিত হলেও অন্যটি সম্পূর্ণ অচেনা।
মৃত্তিকা ইভানার দৃষ্টি পর্যবেক্ষণ করে নিজেও দেয়ালে নজর দিল। আহনাফ সরকারের সুশ্রী মুখের ঠিক বাম পাশে শোভা বর্ধন করছে আরও একটি অতীব সুদর্শন যুবকের আলেখ্য। নাম ‘এহসান সরকার’। বয়স চব্বিশ। পেশায় একজন সফল ছবিয়াল। ফ্লোরেন্সের একটি বিখ্যাত ফ্যাশন হাউসের বরাদ্দকৃত ছবিয়াল সে।
আহনাফ সরকার মানানসই গোছের হলেও এহসানের যেন ঠিক তার বিপরীতে বসবাস। তীক্ষ্ণ ধারালো চেহারার সাথে সাথে রয়েছে কুরুচিপূর্ণ আচরণ এবং এবং জঘন্যতম ব্যক্তিত্ব। মেয়েবাজি তার নেশা। নিয়মিত সুন্দরীদের সংস্পর্শে থাকাই তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। তবে ছেলে আমাদের হীরের টুকরো। মদ সিগারেট ছুঁয়েও দেখে না। একমাত্র এবং একমাত্র নেশা নারীদেহ। তরুণীগুলোও যেন তাকে পেয়ে সোনায় সোহাগা।
ইভানা মৃত্তিকার দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় ছবি দেখিয়ে বলল,
“চেনো?”
মৃত্তিকা মাথা নাড়াল।
ইভানা পুনরায় বলল,
“আহনাফ সরকার?”
মৃত্তিকা তৎক্ষণাৎ মাথা নাড়িয়ে তাড়াহুড়ো করে বলল,
“না না ম্যাম, স্যার নয়। স্যারের ছবি এখানে কেন সেটাই তো জানিনা আমি। পাশের ছবির মানুষটা। এহসান নাম তার।”
ইভানা পুনরায় দৃষ্টি ফেলল দেয়ালে। দুটো ছবির সাদৃশ্য খুঁজায় ব্যস্ত থাকাকালীন পরিচিত কণ্ঠে নিজের নামের সম্বোধন শুনতেই চমকে পেছনে তাকাল সে।
“মিস আফরোজ!”
কিছুটা দূরেই বুকে হাত গুঁজে আশ্চর্যান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আহনাফ। ইভানা কিঞ্চিৎ সময় বিলম্ব না করে নিজেকে সামলে বলল,
“মিসেস ফাইয়াজ।”
আহনাফ মুচকি হাসল। বুকে গুঁজে রাখা হাত পকেটে মুড়ে এক হাঁটু ভেঙে দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বলল,
“সে যাই হোক, আপনি হঠাৎ এই অধমের গৃহে! কিভাবে সেবা করতে পারি? যদি একটু সুযোগ দিতেন!”
ইভানা না চাইতেও মাথা নিচু করে মৃদু হাসে। পরক্ষণেই ভণিতা না করে বলল,
“দেয়ালে লাগানো ছবির মানুষটা কে মিস্টার সরকার?”
আহনাফ চকিতে তাকাল। এহসানের ছবির উপর দৃষ্টি দিয়ে পুনরায় ইভানার দিকে তাকিয়ে বলল,
“এহসান। আমার ভাই। কেন মিস আফরোজ? কিছু হয়েছে?”
চমকপ্রদ হলো ইভানা। সাথে মৃত্তিকাও। এত বড় সত্যিটা এহসান দিব্যি লুকিয়ে গেল তাকে। কি হতো এটা জানালে যে আহনাফ সরকার তার ভাই! ভাইয়ের সামনে গিয়ে বেইলী ডান্স করতে বলতো নাকি সে! আশ্চর্য!
কথার মারপ্যাচে ইভানা এহসানের খুটিনাটি সব জেনে নিল। মিনিট দশেক পর স্থির গলায় ধীরে ধীরে বলল,
“এহসান সরকার এখন কোথায় মিস্টার সরকার?”
আহনাফ বেশ বিস্মিত হয়ে চেয়ে রইল। এসে থেকে কেবল এহসান এহসান করছে মেয়েটা। কই একবারও জানতে চাইল না সে কেমন আছে! অথচ যাকে দেখে নি তাকে নিয়েই পড়ে আছে!
হালকা গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
“এহসান ওর ঘরে ঘুমাচ্ছে। ডেকে দিতে হবে?”
ইভানা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। একজনের জীবন বরবাদ করে সে আয়েশ করে ঘুমাচ্ছে! হায়, দুনিয়া! হায়, প্রেম।
মৃত্তিকা ইভানার হাত আঁকড়ে ধরে বলল,
“ম্যাম আমরা চলে যাই আজ।”
আহনাফ এতক্ষণে মৃত্তিকার উপর দৃষ্টি ফেলল। ছোট ছোট চোখে তাকিয়ে চেনার চেষ্টা করে বলল,
“আই থিংক আমি তোমাকে চিনি। কিন্তু মনে করতে পারছি না। কোথায় দেখেছি বলো তো? মিস আফরোজ, ইনি কে? আপনার কি হয়?”
ইভানা মুচকি হেসে বলল,
“আমার বোন। আর আপনিও তাকে চেনেন। আপনার ইউনিভার্সিটিরই শেষ বর্ষের ছাত্রী সে।”
আহনাফ কিছু মনে পড়ার মত করে বলল,
“হ্যা হ্যা এটাই। এজন্যই চেনা চেনা লাগছিল।”
কিয়ৎক্ষণ পর ইভানা আমতা আমতা করে বলল,
“মিস্টার সরকার আপনার বাড়িতে কোনো মহিলা নেই? আই মিন টু সে আপনার মা অথবা স্ত্রী? বোন হলেও চলবে।”
আহনাফ ভ্রু কুঁচকে তাকাল। মিনিট খানেক তাকিয়েই রইল। ইভানার মনোভাব বুঝার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে বলল,
“মা আছে। বউ নেই কারণ বিয়ে করি নি। আর বোন নেই কারণ আমার মা বাবার দুটোই ছেলে সন্তান। কিন্তু ্ি হয়েছে মিস আফরোজ? আমাকে বলতে পারেন সমস্যা না হলে।”
ইভানা মৃত্তিকার দিকে তাকাল। সে মাথা নিচু করে হাত কচলাতে ব্যস্ত। ইভানা হাত ধরল। সাহস দেওয়ার ভঙ্গিতে হালকা করে চেপেও দিল। স্পষ্ট অনুভূত হলো মেয়েটার শরীরের মৃদু কম্পন।
আহনাফ তাকিয়ে আছে উৎসুক দৃষ্টিতে। ইভানা গলা ঝেড়ে জড়তা হীন কণ্ঠে বলল,
“আপনার ভাই মৃত্তিকা কে ঠকিয়েছে মিস্টার সরকার। ভালবাসার ফাঁদে ফেলে এখন নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে।”
আহনাফ ভ্রুকুটি করে তাকিয়ে রইল কিছু সময়। পরক্ষণেই বিদ্রুপের সুরে বলল,
“আপনি কি তার নালিশ জানাতে এসেছেন মিস আফরোজ? হাসালেন। ওরা এডাল্ট। ওরা নিশ্চয়ই ভেবে চিন্তেই এগিয়েছে। এখানে আমি আপনি বলার কে? আর এখানে এসব অহরহ হচ্ছে। কে দেখে এসব?কার সময় আছে এত?”
ইভানা অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকাল। এই মানুষটার ভেতরেও এত কুৎসিত মন আছে ঘুণাক্ষরেও টের পায় নি তো সে। কি সহজে বলে দিল-এখানে এসব অহরহ হচ্ছে। একবার মেয়েটার মায়াবী মুখটার দিকে তাকাল না!
ইভানা দমে গেল না। বরং গলায় তীক্ষ্ণতা ঢেলে বলল,
“আপনার মা কে ডাকুন। আপনি তার সাথে কথা বলতে চাই।”
আহনাফ অগ্যতা গলা বাড়িয়ে মা মা বলে চিৎকার করল। আওয়াজ শুনে পঞ্চাশোর্ধ প্রৌঢ়া ভদ্রমহিলা এগিয়ে এলেন। দুজনের ওপর নজর পড়তেই অমায়িক হেসে বললেন,
“বাঙালি! বাংলাদেশী তোমরা?”
ইভানা সৌজন্যমূলক হাসল। সালাম বিনিময় করে কথা আগানোর আগেই সিঁড়ি বেয়ে ঢুলতে ঢুলতে নেমে এলো ঢিলেঢালা সাদা টিশার্ট এবং হাঁটু অবধি শর্টসে মোড়ানো এক টুকরো চাঁদ। যার পুরোটাই কলঙ্কে ভরা। মাকাল ফলও বলা যায়। ঘুম ঘুম চোখে মৃত্তিকার দিকে তাকাতেই হেসে বলল,
“আরে মাটি ডার্লিং! তুমি এখানে? না ডাকতেই চলে এলে.আমাকে মিস করছিলে বুঝি? আগেই বলেছিলাম পারবে না থাকতে। তখন তো তেজ দেখিয়ে চলে গেলে। এখন কেন এলে আবার?”
মৃত্তিকা ঘেন্নায় মাথা নিচু করে অন্য দিকে তাকাল। ওই সুশ্রী মুখের আড়ালের জঘন্য পুরুষটির দৃষ্টি থেকে নিজেকে বাঁচাতে চাইল।
ইভানা একবার এহসানের দিকে তাকিয়ে মৃত্তিকার দিকে নজর দিল। মেয়েটা জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে চুপচাপ। ইভানা নড়েচড়ে বলস।
ভদ্রমহিলার দিকে তাকিয়ে নরম গলায় বলল,
“ম্যাম আপনি একজন বাঙালি নারী। আপনাকে নিশ্চয়ই একজন মেয়ের সম্মানের বিষয়টা বুঝিয়ে বলতে হবে না। বাঙালি হওয়ার আগেও আপনি একজন মা। হতে পারতো এই অসহায় মেয়েটি আপনার সন্তান। আর এই লম্পট স্বৈরাচারী লোকটা বাইরের কেউ। তখন কি করতেন আপনি? নিজের মেয়ের এই কষ্ট সহ্য করতে পারতেন?”
এহসান ভ্রু কুঁচকে তাকাল। ছিমছাম গোছের এই সুন্দরী তাকে লম্পট স্বৈরাচারী বলল! কিছু বলার জন্য এগিয়ে আসতে চাইলে আহসান হাত দিয়ে বাঁধা দিয়ে বলল,
“বাড়াবাড়ি করিস না। চুপচাপ হজম কর।”
ভদ্রমহিলা বিনয়ের সহিত বলল,
“কি হয়েছে মা? তুমি কি বলছো আমি বুঝতে পারছি না। একটু বুঝিয়ে বলবে?”
ইভানা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। চোখ বন্ধ করে নিজেকে ধাতস্থ করে বলল,
“এই যে মেয়েটিকে দেখতে পাচ্ছেন, সে প্রেগন্যান্ট এবং তার সন্তানের বাবা আপনার ছোট ছেলে। আশা করছি বাকিটা আমাকে আর বুঝিয়ে বলতে হবে না।”
ভদ্রমহিলা অবাক হলেন না। তবে রুষ্ট হলেন। এহসানের দিকে তাকিয়ে বললেন,
“এতবার করে বলেছি যাই করিস কোনো মেয়ের সম্মান নিয়ে খেলিস না। অথচ তুই আর কোনো পাপ না করলেও এটা তো তোর নেশা হয়ে যাচ্ছে দিনদিন। আর কত এহসান? কত মেয়ের বদদোয়া নিয়ে বাঁচবি তুই? এবার তো ধ্বংস হয়ে যাবি। মায়ের জাতের অভিশাপ কত ভয়ঙ্কর তা নিজের বাবাকে দেখেও শিক্ষা হয় নি? কবে হবে তোদের এই বোধশক্তি? আর কবে?”
ইভানা এবং মৃত্তিকা কে অবাক করে দিয়ে এহসান গমগমে গলায় বলল,
“আই হেট ওমেন। যে নারী আমার বাবার জীবন অসময়ে শেষ করে দিয়েছে সেই নারী জাতিকে আমি ধ্বংস করে দিব। রাখব না কাউকে। কাউকে না।”
ভদ্রমহিলা সামনে এগিয়ে এসে বললেন,
“তবে আমাকে দিয়েই শুরু কর তোর ধ্বংসের বীজ বপন।”
চলবে….