#ঘর_বাঁধিব_তোমার_শনে
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব-১৪
ইঁদুর গুলো মিহির শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বিচরণ করছিলো সাথে তাদের ছোট ছোট দাঁত দিয়ে মিহির শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাটছিলো।প্রাণের ভয়ের কাছে বাকি ভয় যেনো তুচ্ছ। যে মেয়ে সামান্য টিকটিকি দেখলে ভয়ে চেঁচামেচি করে পুরো বাড়ি মাথায় তুলে নেয়। আজ ইঁদুরের অত্যাচর চুপচাপ সহ্য করছে। চোখে থেকে গড়িয়ে পরছে নিরব অশ্রু। এভাবে কতক্ষণ ছিলো জানা নেই মিহির।
চোখ খুলে নিজেকে কোন অপরিচিত জায়গায় আবিষ্কার করলো। চারপাশে ভালো ভাবে চোখ বুলিয়ে চিৎকার দিয়ে বলে বাঁচাও।
ফাহিন ঔষধ নিয়ে এদিকেই আসছিলো মিহির আওয়াজ পেয়ে দ্রুত মিহির কাছে এসে বলে, রিলাক্স মিহি এটা আমার বাসা।
– ভীত কন্ঠে বল, আমি এখানে কি ভাবে আসলাম?
– তুই আগে শান্তহ আমি তোকে সব বলছি। ফাহিন একজন সার্ভেন্টকে ডেকে খাবার আনতে বললো।
সার্ভেন্ট খাবার নিয়ে আসতেই ফাহিন মিহিকে উদ্দেশ্য করে বলে , খাবার টা খেয়ে নে।
মিহি অল্প কিছু খাবার খেয়ে, ঔষধ খেয়ে নিলো। মৃদু স্বরে ফাহিনকে বললো,এবার বল আমি এখানে কি ভাবে আসলাম?
– কাল রাতে মনটা খুব খারাপ ছিলো তাই বারে গিয়েছিলাম। ফোনটা ছিলো সাইলেন্ট। টাইম দেখার জন্য মোবাইল হাতে নিতেই দেখি তোর আশি প্লাস মিসড কল। সাথে তোকে কল ব্যাক করি কিন্তু তুই রিসিভ করছিলি না। কোন উপায় না পেয়ে সোজা তোদের বাসায় চলে আসি। এসে দেখি কালো পোশাক পরা কিছু লোক তোর আর শাফিনের রুম থেকে বের হচ্ছে। সাথে সাথে দরজার পেছনে লুকিয়ে পরি। তারা আরো কিছু সময় কিছু খুঁজছিলো। জানিনা কি? তবে যাওয়ার সময় এতোটুকু শুনতে পারি তাদের মধ্যে কেউ একজন বলছিলো। না থাকবে বাঁশ আর না বাজবে বাঁশুরি। ওই শাফিনকে উপরে পাঠিয়ে দিলেই লেটা চুকে যায়। ওরা চলে যেতেই তোর ফোনের লোকশন অন করা ছিলো তাই সহজেই তোর কাছে পৌঁছতে পারি। তোকে নিয়ে তৎক্ষনাৎ চলে আসি।
মিহি বলে, শাফিন শাফিনের কোন খোঁজ পেলি?
– না কোন খোঁজ পাইনি। তোদের বাড়িটা পুলিশ কোন কারণে সিল করে দিয়েছে।
-উদয় ভাইয়াকে কল কর দেখ শাফিন কোথায়?
– উদয়কে পুলিশ গ্রেফতার করছে ড্রা*গ*স সাপ্লাইয়ার হিসেবে।
– তুই এসব কি বলছিস উদয় ভাই আর ড্রা*গ*স। কিছুতেই না। আমাকে একবার নিয়ে চল। যে ভাবেই হোক শাফিনকে খুঁজে বের করতে হবে।
– তুই নিজে তো অসুস্থ। আগে নিজে সুস্থহ আমি খোঁজ লাগাচ্ছি।
– আমি যথেষ্ট সুস্থ তুই আর কথা না বাড়িয়ে আমাকে নিয়ে চল।
______________________________________________
সাথী বেগম রুবেল সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বললেন,আমার মনটা কেমন কু ডাকছে তুমি মেয়েটার একটা খোঁজ নাও। এমন করে মেয়েটাকে ছেড়ে আসলাম। বুকের ভেতর কেমন যেনো অস্থির অস্থির লাগছে। রুবেল সাহেব বললেন, মনটা তো আমারো কেমন আনছান করছে। একটা কল দিয়ে দেখি। নিজের ফোন বের করে কল দিলেন মিহির নাম্বারে রিং হয়ে কেটে যাচ্ছে রিসিভ হচ্ছে না। রুবেল সাহেব আরো ঘাবড়ে গেলেন। তবুও কানে ফোন তুলে মিথ্যে অভিনয় করলেন। যেনো তিনি মিহির সাথে কথা বলছেন।
সাথী বেগম বললেন,আমার কাছে দাও মেয়েটার সাথে দুটো কথা কই।
ফোন কেটে দেওয়ার ভান করে বলে,কি যে বলো সাথী মেয়ে এখন ব্যস্ত। পরে কথা বলে নিও। এখন যাও তো একটু চা করে নিয়ে আসো। সাথী বেগম চলে গেলেন চা করতে। রুবেল সাহেব মনে মনে ভিষণ চিন্তিত। তবুও কত সুন্দর ভাবে পরিস্থিতি সামলে নিলেন। একেই বলে পুরুষ মানুষ। যত ঝড় ঝাপটা আসুক নিজের মাঝে অনায়াসে তা গোপন করে রেখে পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে পারে। বুক ফাটলেও সহজে তাদের মুখে তা প্রকাশ পায়না।
______________________________________________
মিহি অনলাইনের ড্রেস অর্ডার করলো, ড্রেস আসতে আধা ঘণ্টা লাগবে। নিজেকে কিছুতেই শান্ত করতে পারছে না মিহি। মনের মধ্যে হাজারটা প্রশ্ন যার কোনটার উত্তর এই মূহুর্তে জানা নেই মিহির। নিজের মোবাইল নিয়ে শাফিনকে কল করবে তখন চোখে পরলো তার বাবার নাম্বার থেকে বেশ কিছু মিসড কল মিহি সাথে সাথে কল ব্যাক করলো।
মন খারাপ করে রুবেল সাহেব গভীর চিন্তায় মগ্ন এমন সময় ফোনটা বেজে ওঠে, সাথে সাথে রিসিভ করে বলে,তুই ঠিক আছিস তো মা?
মিহি নিজেকে সামলে নিয়ে বলে, হ্যা বাবা আমি ঠিক আছি,তোমরা ঠিক ভাবে পৌঁছতে পেরেছো।
-হ্যা মা, আমরা ঠিক আছি। তুই নিজের খেয়াল রাখিস।
– আচ্ছা বাবা ভালো থেকো পরে কথা হবে।
রুবেল সাহেব কিছু বলার আগেই মিহি কল কেটে দিলো। কল কেটে শাফিনকে কল করতে লাগলো।এখনো বন্ধ বলছে শাফিনের ফোন। কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। এই ড্রেস পরে বাহিরেও বেড় হতে পারবেনা। ড্রেসে প্রচুর ধুলো ময়লা। হাতে পায়ে ইঁদুরের কামড়ের দাগ। অপেক্ষার প্রহর কাটিয়ে সেলসম্যান ড্রেস নিয়ে আসলো। বিল পেমেন্ট করে। মিহি ঝটপট। ড্রেস চেঞ্জ করে নিয়ে। পানি দিয়ে হাত মুখ ধুয়ে নিলো।
ফাহিনের কাছে এসে বললো, আমাকে কিছু টাকা দে,
– ফাহিন হাজার দশেক টাকা মিহির হাতে দিয়ে বলে, এখন কি করবি?
– শাফিনের খোঁজ করবো।
– আমিও তোর সাথে যাবো।
– তোকে দেখলে রেগে যাবে।জানিস তো তোকে সহ্য করতেই পারেনা।
– সেটা জানি। আর কারনটাও জানি। ভুল ধারণা।
– সেসব কথা বাদ দে আমি আসি।
– আমাকে সাথে নাই নিতে পারিস,কিন্তু গাড়ি আর ড্রাইভারকে নিতে তো সমস্যা নেই। দেখ এটা না করতে পারবিনা।
– হুট করেই মিহি বললো,তুই এতো তাড়াতাড়ি এতো টাকার মালিক কি করে হয়ে গেলি?
মিহির কথা শুনে ফাহিনের চেহারার রঙ পাল্টে গেলো। নিজে সামলে নিয়ে বলে, বলতে কি চাইছিস তুই?
– বাদ দে ভাই আমার মাথা ঠিক নেই। আচ্ছা আমি গাড়ী নিয়ে বেড় হচ্ছিে।
মিহি বাসায় আসলেও বাসার ভেতরে প্রবেশ করতে পারলো না। সেখানে পুলিশি পাহারা।
মিহি বললো, আমার বাসায় আমি কেন প্রবেশ করতে পারবো না কারণ জানতে পারি?
-কারণ বলতে বাধ্য নই। আপনি পুলিশ স্টেশনে যেয়ে জেনে নিন অথাবা অনুমতি নিয়ে আসুন।
মিহি দারোয়ানের সাথে কথা বললো, কিছুই জানতে পারলো না। মিহি বুঝতে পারছে না তার সাথে এসব কি হচ্ছে। একদিনে পরিচত সব কিছু কেমন যেনো অপরিচিত হয়ে গেছো। মনে হচ্ছে ভুল করে কোন ভিন্ন গ্রহে চলে এসেছে। মাথা কাজ করছে না।
গেটেথেকে বের হবে এমন সময় দেখা হলো একটা মেয়ের সাথে। যে গেট দিয়ে প্রবেশ করছো। খুব তাড়াহুড়ো করে, মিহি পেছন থেকে ডেকে বলে, ম্যাম আপনার সাথে কিছু কথা ছিলো। প্রথমবার না শুনলেও পরপর কয়েকবার ডাকার ফলে, আয়রা। পিছু ফিরে বলে, সরি আপনার সাথে আমার কোন কথা নেই।
– কথা নেই বললেই তো হবে না। আমার তো আপনার সাথে কথা আছে।ইনফেক্ট অনেক কথা জানার আছে আপনার থেকে।
– আয়রা একটা কার্ড বের করে মিহির হাত দিয়ে বলে, এখন আপনার কথা শোনার মতো সময় আমার নেই।তিনদিন পরে এই ঠিকানায় চলে আসবেন। বলেই লিফটে উঠে পরলো। মিহিও উঠার আগেই লিফট বন্ধ হয়ে গেলো, এই অবস্থায় সিঁড়ি বেয়ে দ্রুত উঠাটা বাচ্চার জন্য রিক্স।
মিহি অপেক্ষা করলো লিফটের জন্য কিন্তু জানবে কি করে কত নাম্বার ফ্লোরে গেছে মেয়েটা। কিছুক্ষণ লিফটের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে চলে আসলো দারোয়ানের কাছে।এসে বলল,চাচা একটু আগে যেই মেয়েটা ভেতরে প্রবেশ করলো, সে কত নাম্বার ফ্লোরে থাকে?
– আমি তো জানিনা ম্যাডাম আজ প্রথম দেখলাম।
মিহি বের হয়ে এসে গাড়ীতে বসলো, ড্রাইভারকে বললো, পানির বোতল দিতে।
ড্রাইভার রতন বললো,পানি তো শেষ। আমি সামনে কোন দোকান থেকে মিনারেল ওয়াটার কিনে দিচ্ছি।
– তার কোন দরকার নেই তুমি গাড়ী সাইডে রাখো। আমি চায়ের দোকান থেকে পানি পান করে আসছি।
গাড়ী থেকে বেড় হয়ে চায়ের দোকানে এসে এক গ্লাস পানি নিলো, পানিটা মুখের সামনে ধরতেই সামনে থাকা টিভির নিউজটা দেখে হাত থেকে পানির গ্লাসটা পরে গেলো।
#চলবে#ঘর_বাঁধিব_তোমার_শনে
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব -১৫( রহস্যের শুরু)
টিভিতে নিউজে কোন একজন সংবাদ পাঠিকা সংবাদ পড়ছেন, রাতের একটা থেকে চারটা পর্যন্ত টানা চার ঘন্টা ব*ন্ধু*ক যু*দ্ধে*র পরেও আসল অপরাধী কে আটক করতে সক্ষম হয়নি পুলিশ ফোর্স। হামলাকারীরা ছিলো শক্তিশালী পজিশনে। এই ব*ন্ধু*ক যু*দ্ধে*র ফলে,বেশ কিছু পুলিশ কর্মকর্তা আহত। আর চারজন পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে সিক্রেট আফিসার এসিপি শাফিন মাহমুদও নিহত হয়েছেন। যানা যায়। আগামী দু’বছর যাবত এই মিশনে কাজ করছিলেন তিনি। তার সহকর্মী ছিলেন তার নিজের ওয়াইফ আয়রা মাহমুদ। আমাদের সহকর্মী আবুল বশার ভাই ঢাকা মেডিকেল থেকে এখন সরাসরি বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরবেন।
আবুল বশার ভাই, জ্বি আমি এখন আছি ঢাকা মেডিক্যালের মর্গে সেখানে নিজেদের প্রিয় মানুষের লাশ নিতে আশা স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে হাসপাতাল প্রাঙ্গণ।
মিহির হাত থেকে গ্লাসটা পরে গেলো। চোখ দু’টো ঝাপসা হয়ে আসছে। আশেপাশে সব কিছু ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। মিহি পরে যাওয়ার আগেই মধ্য বয়স্ক একজন লোক মিহিকে আগলে নিলো। জ্ঞান হারানোর আগে স্পষ্ট স্বরে বললো, আমার শাফিনের কিছু হতে পারে না।
______________________________________________
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে বিরক্ত হয়ে নুহাস বলে,আপাতত আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে চাইছিনা। তদন্ত চলছে। পূর্ণ নথি হাতে আসলে আমরা আপনাদের ডেকে সবটা জানিয়ে দেবো।
একজন রিপোর্টর প্রশ্ন করলা, আমরা শাফিন মাহমুদ সম্পর্কে কিছু জানতে চাই।
– এই মূহুর্তে আপনাদের কোন প্রশ্নের উত্তর দেয়া হবে না।
আয়রা শাফিনের বাসায় এসে তন্নতন্ন করে শাফিন আর মিহির সমস্ত কাপল পিক সরিয়ে নিলো। শাফিনের বলা জায়গা থেকে ডকুমেন্টস সংগ্রহ করলো। শাফিনের ব্যক্তিগত ডায়েরি। কাবিন নামা। সাথে মিহির ডায়েরিও আয়রার হাতে চলে গেলো।
আয়রা নুহাস কে কল করলো,নুহাস মিডিয়া থেকে অনেক দুরে যেয়ে কল রিসিভ করলো,আয়রা বললো, নুহাস স্যারের বাসা থেকে সব তথ্য সরিয়ে ফেলেছি। আর আমার আর স্যারের কাপল পিক রেখে এসেছি। সাথে ম্যারেজ সার্টিফিকেট। আর কি করতে হবে?
– তুমি এখন ওগুলো সেফ জোনে রেখে। বিধবা হওয়ার শোক পালন করো। আপাতত এটাই সবচেয়ে বড় কাজ।কিছুদিন পর থেকে আমরা মেইন মিশন শুরু করবো।
– স্যারের ওয়াইফের সাথে দেখা হয়েছিলো।
– কোথায় আছে মিহি? ওর এখন কি অবস্থা ওকে তুমি সাথে রাখোনি কেন?শাফিন কিন্তু বারবার মিহিকে দেখে রাখার কথা বলেছে।
– আমার ছোট একটা ভুল হয়ে গেছে নুহাস। আমি ম্যাডামের সাথে রুড ব্যবহার করে ফেলেছি।
– কাজটা একদম ঠিক করোনি।তুমি এবার অভিনয়টা ঠিকঠাক করো। আমি মিহির খোঁজ করছি। না জানি এই সংবাদ দেখার পর ওর মনের উপর দিয়ে কি যাচ্ছে।
আয়রা কল কেটে দিয়ে নিচে এসে মিহির খোঁজ করে কিন্তু খুঁজে পেলো না। বাসায় এসে নিজের ড্রেস চেঞ্জ করে সাদা শাড়ী পড়ে নিয়ে সোজা চলে গেলো ,হসপিটালে চোখে পানি আর মুখের ভঙ্গিতে দেখে বোঝার উপায় নেই এটা পুরোটাই নাটক।
পুলের উপ কমিশানার রমিজ রাজ। বললো,আমাদের কাজটা খুব সুক্ষ্ম ভাবে করতে হবে। কারণ মিডিয়ার নজর এখন আমাদের উপরে তাই প্রত্যেককে এলার্ট থাকতে হবে। সমান্য ভুল বড় বিপদ বয়ে আনতে পারে।নুহাস বলল স্যার কাজটা খুব রিস্কি তবুও চেষ্টা করবো নিখুঁত ভাবে করার।
রমিজ রাজ বললো, আয়রা মাহমুদের জন্য সব রকম সুবিধার ব্যবস্থা করো। আর আমাদের অফিসারদের লাশ তাদের স্বজনের কাছে হস্তান্তর করো। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাদের দাফনের ব্যবস্থা করো। আর প্রত্যকে নিহত পরিবারের সমস্ত দায়িত্ব সরকারি কোষাগার থেকে নেয়া হবে। সেই ব্যবস্থা করো। ডেথ সার্টিফিকেট গুলো নিজ দায়িত্বে রাখবে। যখন চাইবো সাথে সাথে দেবে।
নুহাস বললো,জ্বি স্যার সব হয়ে যাবে।
______________________________________________
জ্ঞান ফিরতেই মিহি নিজেকে হাসপাতে আবিষ্কার করলো। দ্রুত উঠে কাউকে কিছু না বলে বেড় হবে, এমন সময় ফাহিন বলল,কোথায় যাচ্ছিস?
মিহি ফাহিনের দিকে ঘুরে বলে,আমার শাফিনের কাছে আমাকে যেতেই হবে।
– পাগলামো করিস না।তোর কোন অস্তিত্ব এখন নেই।
মিহি কোন কথা না বলে একটা সিএনজি নিয়ে সোজা চলে আসলো হসপিটালে। এসে শাফিনের খোঁজ করতেই একজন বললো,এসিপি শাফিন মাহমুদের লাশ তার ওয়াইফ আয়রা মাহমুদের হাতে হস্তান্তর করা হয়েছে দুপুরে। মিহি নার্সের গলা চেপে ধরে বলে,আর একবার যদি আমার শাফিনকে মৃত বলেছিস তাহলে তোকে আমি মে*রে ফেলবো। সুমু মিহির হাত থেকে নার্সকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,এমন করিস না। এখন ধৈর্য ধরতে হবে যে।
মিহি সুমুকে জড়িয়ে ধরে বলে, ওরা আমার শাফিনকে মৃত বলছে,অন্যের হ্যাসবেন্ড বলছে। কি করে ধৈর্য ধরবো বল?
সুমি চল আমার সাথে পুলিশ স্টেশনে। মিহি পুলিশ স্টেশনে এসে সবার কাছে শাফিনের কথা জিজ্ঞেস করছের,কেউ কোন উত্তর দিচ্ছেনা। তবে একজন পুলিশ অফিসার বললো,আপনাকে আমরা চিনিনা। অযথা ঝামেলা করলে একদম লকআপে আটকে রাখবো। এমন সময় নুহাস আসলো। নুহাসকে দেখে মিহি নুহাসের কলার ধরে বলে,বল আমার শাফিন কোথায়? কি করেছিস আমার শাফিনের সাথে?
– এখানে সিনক্রিয়েট করবেন না ম্যাডাম এটা পুলিশ স্টেশন।
– আর কেউ না জানুক তুই তো জানিস আমি শাফিনের কে? আমার শাফিনকে আমি দেখতে চাই।
শুধু কিছু কথা বলেই চলে যাবে। ডিস্টার্ব করবো না।তোদের এসপি সাহেবকে। কথা দিচ্ছি।
নুহাস মিহির হাত ছাড়িয়ে মিহির কানের কাছে মুখ এনে বলে,যদি সত্যি শেষবারের মতো শাফিনের দেখা পেতে চাও। তাহলে ভদ্র মেয়ের মতো এই এড্রেসে চলে যাও পনেরো মিনিটের মধ্যে আমি আসছি।
মিহি নিমিষেই যেন চুপসে গেলো,রওনা হলো নুহাসের দেয়া ঠিকানায়। দু’হাতে মাথা চেপে ধরে আছে মিহি। কি হচ্ছে তার সাথে এসব? এগুলো কি কোন বাজে স্বপ্ন। কিছুই বুঝতে পারছে না। সব কিছুই ধোঁয়াশা। কেমন যেনো এক রহস্য জ্বালে আটকে পরেছে মিহি। এতোদিনের সম্পর্ক কখনো জানতে পারলো না শাফিন কি করে?আজ যখন জানতে পারলো ততক্ষনে সব শেষ। শাফিনের লাইফে সে এক অস্তিত্বহীন প্রানী। যার কোন অস্তিত্ব নেই শাফিনের লাইফে।কি করে নিজেকে শান্ত রাখবে? কি বলেই বা সান্ত্বনা দেবে। তবে কথায় আছে অল্প শোকে কাতর।অধিক শোকে পাথর। মিহির অবস্থা এখন ঠিক সেরকম।
নুহাসের দেয়া ঠিকানায় পৌঁছে, মিহি স্তব্ধ হয়ে যায়। একটা কবর স্থান। এক পা,সামনে এগেতেই দু’পা পিছিয়ে আসে। সুমুকে ফাহিন খবর দিয়ে নিয়ে এসেছিল। সুমু মিহিকে ধরে বলে,সামনে চল।
মিহি এলোমেলো পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে কবরের সামনে। আধারে সূর্য ডুবে সেই কখন ধরণী অন্ধকারে ছেয়ে গেছে। আসে পাশে ল্যাম্প পোস্টের আধো আলো। অসমায়ের মেঘে ঢেকে আছে দূর আকাশের তারা।থেমে, থেমে,মেঘের গর্জনে কেঁপে উঠছে শহর। কবর স্থানের গেটের সামনে এসে হাঁটু মুড়ে বসে পরলো মিহি।
কি করে নিজেকে ক্ষমা করবে,আজ শেষ মূহুর্তে ও দু’জনের মধ্যে ঝগড়া হলো। এতো কিছুর পরেও হুট করে শাফিন মিহিকে জড়িয়ে ধরে ছিলো। সেই স্পর্শ এখনো শরীরে লেগে আছে। অথচ মানুষটা আর নেই।
কেউ মিহির কাঁধে হাত রাখলো, সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই মিহির। চোখ থেকে বিরামহীন অশ্রু ঝরছে। চোখের সামনে বারবার শাফিনের চেহারাটা ভেসে উঠছে। মাটিতে দু’হাত দিয়ে চিৎকার করে বলে, কেন ছেড়ে গেলে আমাকে? কেন? জোড়ে জোড়ে বিলাপ করে বলে, তুমি মরতে পারোনা। কিছুতেই না।
কাঁধে হাত রাখা ব্যক্তি মিহিকে বলে, এখানে এরকম করতে পারবেনা। মিডিয়ার লোকজন যখন তখন চলে আসতে পারে। তাদের কি জবাব দেবো।
মিহি কান অব্দি হয়তো কোন আওয়াজ পৌঁছচ্ছে না।
নুহাস উপায় না পেয়ে মিহির হাত ধরে টেনে নিয়ে আসে একটা কবরের পাশে,কবরটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে নতুন কবর। নুহাস মিহির হাত ছেড়ে দিয়ে বলে তোমার কাছে পাঁচ মিনিট সময় তারপর এখান থেকে বের হতে হবে।
#চলবে
ভুলত্রুটি মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন।
স্যাড রিডিং 😥